মেঘবৃষ্টির গল্পকথা -(পার্ট:১৮+19)

0
947

#মেঘবৃষ্টির_গল্পকথা
#লেখনীতে_সাবরিন_জাহান
পার্ট:১৮+19

একটা রেস্টুরেন্টে বসে আছে বৃষ্টি,উমা আর আসিফ।বৃষ্টি আর আসিফ বুঝতে পারছে না হুট করে এখানে ডাকার কারণ কি।

উমা:আসিফ,তোমাকে কিছু প্রশ্ন করবো,সেগুলোর উত্তর দিতে হবে।

আসিফ:কিসের প্রশ্ন ম্যাডাম!

উমা:অয়ন কোথায়?

বৃষ্টি:কেনো উনি বাড়িতে নেই?

উমা:তুমি প্লিজ এখন চুপ থাকো!আমি বুঝিয়ে বলছি।আসিফ বলো অয়ন কোথায়?

আসিফ আমতা আমতা করে বলল,
আসিফ:কেনো ম্যাডাম?উনার তো এখন বাসায়..

আর কিছু বলার আগে,
উমা:আমি জানি তুমি সবটা জানো আসিফ,ডোন্ট টেল লাই!আমার সাথে যার বিয়ে সে অয়ন না!

বৃষ্টি আর আসিফ চমকে তাকালো,
আসিফ:কি বলছেন!

উমা:আসিফ প্লিজ,এখানে তিনটে জীবনের প্রশ্ন!

আসিফ চুপ রইলো।
উমা:আসিফ!

আসিফ: হ্যাঁ উনি অয়ন স্যার না!

বৃষ্টি এবার চমকে গেলো,উমা স্বাভাবিকভাবেই বললো,

উমা:তাহলে এ কে?

আসিফ:ছয় মাস আগে, ইমান আর সৈকত স্যার বাড়ি ফিরছিলেন তখন রাস্তায় এক ব্যাক্তিকে আহত দেখে উনাকে গাড়িতে তুলে নিয়েছিলেন।তখন উনার ফেস এ রক্ত ছিলো,কিন্তু হসপিটালে নেওয়ার পর রীতিমত আমরা চমকে গেছিলাম।হুবহু অয়ন স্যার এর মত দেখতে উনি।তখনই খবর আসে..

উমা:কি?

আসিফ চুপ রইলো।

উমা:আসিফ বলো!

আসিফ:অয়ন স্যার মারা গেছে,আপনি ভেঙ্গে পড়বেন এই চিন্তা করে আপনার বাবা আর ইমান স্যার মিলে অয়ন স্যার এর মত দেখতে লোককে অয়ন হিসেবে নিয়ে যায়।আর এতে সুবিধা হলো যে উনার স্মৃতি চলে গেছে।

উমা কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল,
উমা:বাবার কথা বাদ দিলাম,তুমি তো সত্যিটা বলতে পারতে।

আসিফ: স্যার মানা করেছিলো,আর আপনার কথা ভেবে চুপ ছিলাম।

উমা এবার নিজেকে সামলে নিলো,বৃষ্টির দিকে ঘুরলো।বৃষ্টি জিজ্ঞাসাসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।চোখে মুখে কিছু শোনার তীব্র আকাঙ্ক্ষা,হয়তো অয়নই মেঘ এটা শুনতে চাচ্ছে।

উমা:বিকেলে আমার সাথে একটু বেরোবে বৃষ্টি?

বৃষ্টি আশাহত হলো,তবুও কিছু না বলে মাথা নাড়লো।

বিকেলে উমা বৃষ্টিকে নিয়ে ডক্টর মামুনের চেম্বারে গেলো।চেম্বারে বসে আছে বৃষ্টি,উমা আর মামুন।

উমা:আংকেল,আপনিও বাবা আর ইমান আংকেল কে সাপোর্ট করলেন?

মামুন:মামনি দেখো, এছাড়া উপায় ছিল না আমার।

বৃষ্টি ওদের কথার মাথা মুন্ডু বুঝছে না।
উমা:বৃষ্টি এই অয়ন তোমার মেঘ!

বৃষ্টি চমকে তাকালো।

উমা:হুমম,এই অয়ন তোমার মেঘ!

মামুন: ইমান আর তোমার বাবা জানতে পারলে?

উমা: যার কাছে আমার থেকে সম্পত্তি ইম্পর্ট্যান্ট তাকে আমার বাবা বলবেন না আংকেল।

বৃষ্টি:মানে?

উমা:আমার অয়নকে আমার বাবা আর ইমান আংকেল মেরেছে।

বৃষ্টি: হোয়াট? ইমান আংকেল নিজের ছেলেকে কেনো মারবে?

উমা:সম্পত্তি বৃষ্টি!

বৃষ্টি:সম্পত্তি?

উমা: ইমান অয়নের আসল বাবা না,অয়নের মামা।ওর মা বাবা মারা যাবার পর সব সম্পত্তি অয়নের হয়ে যায়। ইমান আংকেল ওকে নিয়ে আসে সম্পত্তি হাতাবে বলে,কিন্তু দলিলে এমন শর্ত ছিল যে অয়ন মারা গেলে ওর সম্পত্তি হয় অনাথ আশ্রম নয় ওর স্ত্রী সন্তান পাবে।এতে করে ইমান আংকেল কিছুটা ক্ষুব্ধ হলেও পরবর্তীতে আমার বাবার সহায়তা নেয়।আমার আর অয়নের বিয়ে হলে ওরা অয়নকে মেরে ফেলবে আর অয়নের সব সম্পত্তি আমার হবে।আর অয়নের শোকে আমি নিজের মধ্যে থাকবো না তখন ওরা সম্পত্তি নিজের করে নিবে আর আমাকে রাস্তা থেকে সরিয়ে দিবে।

বৃষ্টি:তোমার নিজের বাবা না উনি?

উমা:বাঘ যখন ক্ষুধার্ত হয় তখন নিজের সন্তানকেও ছাড় দেয় না।

বৃষ্টি:তুমি এত কিছু জানলে কিভাবে?আর অয়নকে কেনো মারলো তোমাদের বিয়ের আগে?

উমা:নাদিমের থেকে অয়নের পুরনো ল্যাপটপটা আনিয়েছি।ওখানে অয়ন আগেই সবটা জানতে পেরে গেছিলো।তাই আমাকে সবটা জানিয়ে এখান থেকে নিয়ে যেতো।আর সাম হাও এটা বাবা জানতে পারে আর তখন তিনি বাংলাদেশ ছিলেন।লোকজন দিয়ে অয়নকে আটকাতে গিয়ে ওরা অয়নকে হত্যা করে।বাবা এতে টেনশনে পড়ে যায়।কারণ এখন ওর সম্পত্তি তো অনাথ আশ্রম পাবে।তখনই পেলো মেঘকে,আর ওকেই গুটি বানিয়ে কার্যসিদ্ধি করছে।বিষয়টা দেখার জন্যই দুপুরে আমি এখানে আসিনি।এখন আমাদের প্রথম কাজ মেঘের স্মৃতি ফিরানো।তারপর এই প্রমাণ পুলিশ কে দেওয়া আর ওদের মুখে স্বীকার করানো আমার অয়নকে ওরাই মেরেছে।

বৃষ্টি:একটা কথা বলবো?

উমা:হুমম

বৃষ্টি:তুমি চাইলেই তো মেঘকে অয়ন হিসেবে রাখতে পারতে।

উমা হাসলো,
উমা:আমি অয়নকে ভালোবাসি,অয়নের চেহারা কে না।আমি আগে ভাবতাম অয়ন তো এমন ছিল না।পড়ে বুঝতে পারলাম এটা আমার অয়ন হতেই পারে না। যাই হোক,আংকেল মেঘের স্মৃতি ফিরানো কিভাবে সম্ভব?

মামুন: দেখো,স্মৃতি হারিয়ে যাওয়া! ইংরাজীতে মেমরি লস বলে। মস্তিষ্ক সম্পর্কিত রোগের কারণে মস্তিষ্ক প্রভাবিত হতে পারে এবং এর কারণে স্মৃতিশক্তি দুর্বল হতে পারে। যদি কোনও ব্যক্তি আলজামির বা ডিমেনশিয়াতে মারাত্মকভাবে ভুগে তবে তাদের ভুলে যাওয়ার সমস্যা রয়েছে। অনেক লোকের মধ্যে, স্মৃতিশক্তি হ্রাসের সমস্যাটি প্রায়শই কোন এক দুর্ঘটনার কারণে ঘটে যার মধ্যে একজনের মাথার গুরুতর জখম হয়। চরম উদ্বেগের মধ্যে থাকা ব্যক্তি তার স্মৃতি হারিয়ে ফেলেন। তবে কিছু লোকের মধ্যে স্মৃতিশক্তি হ্রাসের মতো সমস্যাগুলি কিছু সময়ের জন্য দেখা দেয় এবং কিছু লোকের মধ্যে দীর্ঘ সময় ধরে থাকে। চিকিৎসকরা মেমরির লসের সমস্যার কারণ এবং লক্ষণগুলি জানতে মস্তিষ্ক অনেক পরীক্ষা করেন। কারণের উপর নির্ভর করে ওষুধ এবং অন্যান্য চিকিৎসার পরামর্শ দেওয়া যেতে পারে। স্মৃতিশক্তি হ্রাসের প্রথম লক্ষণটি ভুলে যাওয়া । যদি কারোর স্মৃতি হ্রাস হয় তাহলে সে পুরোনো দিনের কথা ভুলে যায় । স্মৃতি হারিয়ে যাওয়ার সমস্যাটি কিছু লোকের মধ্যে দ্রুত সমাধান হয় এবং কখনও কখনও কিছু লোকের মধ্যে কোনদিন নিরাময় হয়না। এ ছাড়া সময়ের সাথে লক্ষণগুলি আরও বাড়তে পারে।যেহেতু মাথায় গুরুতর আঘাতের কারণে ওর ব্রেনে আঘাত হানে তবে সেটা সাময়িক।ওকে পুরনো স্মৃতি মনে করাতে হবে।তাহলেই ওর মনে পড়বে।

উমা:বুঝলাম,ওকে আংকেল।আজ তবে আসি।

মামুন: সিওর!

উমা আর বৃষ্টি বেরিয়ে গেলো।

উমা:কিভাবে কি করবে ভেবেছো?

বৃষ্টি:উহু!

উমা:আমার কাছে যাবার দাস্ত আইডিয়া আছে।

বৃষ্টি:কি রকম?

উমা বাঁকা হাসলো।

আসিফ অয়নের সাথে একটা ফাইল নিয়ে আলোচনা করার জন্য ওর রুমে যেতেই দেখলো অয়ন মাথায় হাত দিয়ে কিছু ভাবছে।

আসিফ:স্যার?

অয়ন:হুমম!

আসিফ:কি হয়েছে স্যার?বড্ড টেন্সড দেখাচ্ছে!

অয়ন:বৃষ্টি..

আসিফ:মানে?

অয়ন: কাল বৃষ্টি যখন বললো ওর মিস্টার ক্যাবলা কান্ত আর বৃষ্টির ফোঁটা।এই দুইটা নাম কে শুধু আমার আবছা স্মৃতিতে দেখতে পেতাম।আচ্ছা এর আগে কি আমি এখানে এসেছি।

আসিফ আমতা আমতা করে বলল,

আসিফ:জি স্যার,হয়তো ওখানে শুনেছেন।তাই এমন

অয়ন কিছু বললো না।আসিফ অয়নের দিকে তাকিয়ে আপন মনেই বললো,”আসলে কাওকে মন থেকে ভালোবাসলে স্মৃতির প্রয়োজন হয় না। মনই জানান দেয়,ভালোবাসি!”

আজ তিশা আর অর্কের মেহেন্দি।স্টেজে উমা মাইক হাতে ঘোষণা দিলো,

উমা:এখন একটু খুনশুটি পারফরম্যান্স হবে,সবাই রেডী তো!

সবাই রেডী ,বড়রা উপরে চলে গেছে এখন ছোটরা আছে।সব লাইট বন্ধ হয়ে স্টেজের লাইট জ্বললো,একটি মেয়ে তার সামনে দাড়িয়ে একটি ছেলে প্রপোজ করলো,মেয়েটির চোখে বিরক্তি স্পষ্ট।মেয়েটি তিশা আর ছেলেটি অর্ক।ওরা পারফর্ম করছে মেঘ বৃষ্টির প্রথম আলাপের।সাথে উৎস,আভি,আদিল,বিভোর আর তানহা,নুরি,রাইসা,আয়েশা।বৃষ্টি আর উমা এককোনায় দাড়িয়ে। আস্তে আস্তে ওদের কাটানো প্রতিটা মুহূর্তের প্রতিচ্ছবি তুলে ধরছে ওরা।মাঝরাস্তায় হাটা,বাচ্চাদের সাথে আনন্দ ফুর্তি সব।মেঘ এসব দেখে কিছু মনে করতে পারছে,কিন্তু আবার সব মিলিয়ে যাচ্ছে।

উমা:এবার ফাইনাল ডোজ তোমাকে দিতে হবে বৃষ্টি!

বৃষ্টি:হুমম!

এবার বৃষ্টি স্টেজে উঠলো,মেঘ পলকহীন তাকিয়ে আছে,বৃষ্টির পরনে ওদের এনগেজমেন্টের লেহেঙ্গা।

#চলমান

(😐লিখতে বসলেই মাদার বাংলাদেশের সুস্পষ্ট ভাষণ শুনতে শুনতে আর লিখা হয় না।তাই দিতে পারি নাই)#মেঘবৃষ্টির_গল্পকথা
#লেখনীতে_সাবরিন_জাহান
পার্ট:১৯(অন্তিম)

বৃষ্টি দীর্ঘশ্বাস ফেলে ওর সাইডে থাকা প্রজেক্টরটি অন করলো, প্রজেক্টর অনের সাথে সাথে চমকে গেলো মেঘ,ওর আর বৃষ্টির পুরনো দিনের কিছু প্রতিচ্ছবি।সব গুলা না থাকলেও কিছুটা আছে,আদিল তুলেছিলো।

হসপিটালের করিডোরে বসে আছে বৃষ্টি।তখন আবছা থেকে সব কিছু স্পষ্ট হতে লাগলো মেঘের,ব্রেনে অতিরিক্ত প্রেসার এর ফলে জ্ঞান হারালো।কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত টি টেবিলের কোনায় মাথায় আঘাতে রক্ত ক্ষরণ হলো কিছুটা।আর এতে সবাই কিছুটা ভয় পায় আর হসপিটালে আনে।ডক্টর বলেছে টেনশনের কিছু নেই!

প্রায় মধ্য রাতের শুরু,হুট করে উমার ফোন থেকে মেসেজ আসলো বৃষ্টির ফোনে।
“নিচের কলোনিতে দেখা করো”
বৃষ্টি মেসেজটি কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে বেরিয়ে গেলো।

বৃষ্টি আর উমার সামনে বসে আছে ইমান আর সৈকত।দুইজনের মাঝেই ক্ষোভে ভরপুর।কিন্তু তাতে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই বৃষ্টি আর উমার।তখন উমার ফোন থেকে ইমানের লোকজন মেসেজ দিয়েছে বৃষ্টিকে। ব্যাস আর তুলে এনেছে।

ইমান:আমার এতদিনের সাজানো প্ল্যান তোরা এক নিমিষেই নষ্ট করে দিতে চাচ্ছিস?দেখ প্রাণে বেঁচে যেতে চাইলে প্রমাণ গুলো দিয়ে দে।

বৃষ্টি ওর সামনে থাকা টি টেবিলের উপর থেকে পেপার ওয়েট নিয়ে খেলতে লাগলো।এরকম খাপ ছাড়া ভাব দেখে আরো ক্ষুব্ধ হলো ইমান আর সৈকত।

সৈকত:উমা,কি বলা হয়েছে?

উমা:সরি মিস্টার সৈকত!প্রমাণ গুলো অলরেডী পুলিশ হেফাজতে।ভেবেছিলাম অয়নকে আপনারা মেরেছেন এই প্রমাণ সহ সব ট্রান্সফার করবো! বাট পরে ভাবলাম,ভাগ্য বদলাতে টাইম লাগে না।তাই আগেই দিয়ে দিলাম পুলিশ কে সব দারুন না?

ইমান ফোঁস করে শ্বাস ছাড়লো,

ইমান:একে ওই অয়নকে মারলাম ,কারণ ও সব কিছু জেনে গেছিলো!কিন্তু পরে খেলাটাকে নতুন করে সাজালাম মেঘের মাধ্যমে!আর তোরা আবার সব ভেস্তে দিলি!

বৃষ্টি আর উমা অবাক নয়নে তাকিয়ে রইলো, দুইজন দুইজনার দিকে তাকিয়ে হুট করে হাই ফাইভ দিলো।ওদের কান্ড বুঝলো না ।

বৃষ্টি:আংকেল,আমি ভেবেছিলাম আপনি আরো ওই ফিল্মি ভিলেনের মত ঝুপাং মুপাং ডায়লগ ঝারবেন,আর তারপর আমরা আপনাকে কথার প্যাচে ফেলে অয়নকে যে আপনি মেরেছেন সেটার প্রমাণ সহিত ভিডিও পুলিশ কে দিবো।কিন্তু আপনি দেখছি একদম প্রথম বলেই ছয় মেরে দিলেন।মানে এক উত্তরেই প্যাচ এ পড়ে গেলেন।সো স্যাড!

ইমান:এখানে ভিডিও কে করবে?পাগল নাকি?

বলেই হাসিতে ফেঁটে পড়লো!

আসিফ:কেন স্যার,আমি আছি না?

বলেই পিছন বত্রিশ দাতের অ্যাড ওয়ালা হাসি দিলো আসিফ।

সৈকত:আসিফ!

আসিফ: যে স্যার!

সৈকত:তুই বিশ্বাসঘাতকতা করলি!

আসিফ:অন্যায় কে সামনে আনার জন্য বিশ্বাসঘাতকতা করলে সমস্যা নেই!

ইমান রিভলবার আসিফের দিকে তাক করে বললো,

ইমান:আর বিশ্বাসঘাতকের মৃত্যুতেও কোনো সমস্যা নেই!

বৃষ্টি:আরে কি প্যান প্যান শুরু করছে এরা!শালা..
বলেই পেপার ওয়েটটা ইমান এর হাতের দিকে মারলো,আর নিশানা ঠিক জায়গায় আবর্তিত হলো🥴কেয়া বাত হ্যাঁ!
রিভলবার পরে গেলে সেটা তুলতে যায় ইমান কিন্তু তার আগেই হাজির হয় পুলিশ।পুলিশ দেখে পালাতে যেয়েও পালাতে পারেনি কেও।(এত অ্যাকশন সিন আমার দ্বারা হবে না🥺- লেখিকা)
তখন মেসেজ দেখেই বুঝেছিল এটা উমা দেয়নি,কারণ ও নিজেই বলে গেছে ওর ফোন বাড়িতে।ব্যাপারটি বুঝতে পেরে আসিফকে মেসেজে ওর কাজ জানিয়ে দিলো। ব্যাস কাহিনী খতম।

এভাবেই দিন যেতে লাগলো, মেঘও আস্তে আস্তে সুস্থ হয়ে গেলো।গোধূলি লগ্নে তিন অক্ষরের কবুল আর পবিত্র কালিমা পরে বিয়ে হলো আজ মেঘ ও বৃষ্টির।

নির্জন রাতে ছাদের রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে উমা।মনটা বড্ড উদাস।কখন যে আসিফ পাশে এসে দাঁড়িয়েছে বুঝতেই পারেনি।

আসিফ: ছোট ম্যাডাম!

উমা:তোমাকে কত বার বলেছি আসিফ, আমাকে নাম ধরে ডাকবে?আর তুমি করে বলবে!

আসিফ:অভ্যাস আরকি!

উমা:বদলে ফেলো।ছোট ম্যাডাম ডাকটা শুনলেই ওই জঘন্য লোকের কথা মনে পড়ে, যার কাছে নিজের মেয়ের কোনো মূল্য নেই! টাকাটা ইম্পর্ট্যান্ট,সম্পত্তি ইম্পর্ট্যান্ট।না আছে মেয়ের প্রতি নূন্যতম ভালোবাসা।ভাবতেই অবাক লাগে,সবাইকে গর্ব করে বলতাম আমি আমার বাবার প্রিন্সেস!আজ আমাকে বলতে হচ্ছে,ওই জঘন্য লোকের মেয়ে আমি না।

আসিফ কিছু বললো না।

উমা:আমার ভালোবাসাটাকেও মেরে ফেললো ওরা।ওরা যদি একবার বলতো সম্পত্তি ওদের দিয়ে দিতে..দিয়ে দিতাম।আমি আর অয়ন সব দিয়ে দিতাম।কিন্তু ওরা!আজ ওদের কারণে আমার অয়ন নেই আমার কাছে..হারিয়ে ফেলেছি ওকে!

আসিফ দীর্ঘশ্বাস ফেললো।

উমা:এমনটা কেন করলো?

নিরবে অশ্রু বিসর্জন দিতে লাগলো উমা।

আসিফ:উমা!

চমকে তাকালো উমা,এই প্রথম আসিফ ওকে নাম ধরে ডাকছে।

আসিফ:জানি আপনি অয়ন স্যার কে খুব ভালোবাসেন ।কিন্তু ভাগ্যের লিখন কেও বদলাতে পারে না যে।ভাগ্য কে মেনে নিয়েই আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে।চলার পথে অনেক বাঁধা আসে,আর সব বাঁধা অতিক্রম করে টিকতে পারলেই আপনি জয়ী!

উমা নিষ্পলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।

আসিফ:ভালোবাসি আপনাকে!

উমা এবার বিস্ফোরিত চোখে তাকালো।

আসিফ:অনেক আগে থেকেই,কিন্তু যবে জেনেছি অয়ন স্যার কে আপনি ভালোবাসেন তবে থেকে নিজেকে সংযত করেছি।আমি বলবো না অয়ন স্যারকে ভুলে আমার হাতে হাত রেখে বাকিটা পথ চলুন,শুধু বলবো হৃদয়ের কোণে আমার একটু জায়গা দিলেই হবে।ভালো না বাসুন কিন্তু চলার পথে সাথী হতে চাই আপনার। হ্যাঁ,হয়তো আপনার মনে হবে আপনি এখন অসহায় বলে সুযোগ নিচ্ছি,,কিন্তু আমি সত্যি আপনাকে ভালোবাসি উমা।যদি কখনো মনে হয় আমার সাথে আপনার বাকিটা পথ চলবেন, নির্দ্বিধায় বলবেন।আপনার জন্য এই অবাধ্য মন সব সময় খালি থাকবে।

বলেই এক মুহুর্ত না দাড়িয়ে চলে গেলো।উমা এখনও একই ভাবে দাড়িয়ে আছে।মনে অদ্ভুত শিহরণ বয়ে যাচ্ছে, হৃদপিণ্ডের প্রতিটা স্পন্দন যেনো বলছে,”একটা সুযোগ দে না ওই পাগল প্রেমিক কে!”
মুচকি হাসলো উমা। হ্যাঁ চলবে বাকিটা পথ এই পাগলের সাথে।

বারান্দায় মেঝেতে বসে মেঘের বুকে মাথা রেখে জোৎস্না রাতকে উপভোগ করছে বৃষ্টি।ওর মাথায় হাত বুলাচ্ছে মেঘ!

বৃষ্টি:এই মিষ্টার ক্যাবলা কান্ত!

মেঘ: হুমম।

বৃষ্টি: আমাদের গল্পকথা তাহলে সমাপ্ত হলো তাই না?

মেঘ:উহু!

বৃষ্টি মেঘের দিকে তাকিয়ে বললো,

বৃষ্টি: কেনো?

মেঘ বৃষ্টির গালে হাত রেখে বলল,

মেঘ: মেঘ বৃষ্টির গল্পকথা যে শেষ হবার নয়। যত দিন বেঁচে থাকবে মেঘ আর বৃষ্টি ,ততদিন থাকবে তাদের গল্পকথা।

বলেই বৃষ্টির কপালে গভীর ভাবে ভালোবাসার পরশ এঁকে দিলো।
আনমনেই আওরালো,

“আকাশের ঐ মেঘের গর্জনে
বৃষ্টির ফোঁটার বর্ষণ,
রাতের অন্ধকারে
বেজে চলেছে ধ্বনি,
যত দিন রবে মেঘ বৃষ্টির প্রথা
অসমাপ্তই রয়ে যাবে
মেঘ বৃষ্টির গল্পকথা”

(~সাবরিন জাহান~)

[টাটা সবাইকে,আবার হয়তো দেখা হবে পাঁচ মাস পড়😐।ভালো থাকবেন। আসসালামু আলাইকুম।কিন্তু এবার মন্তব্য না করলে আমি রাগ করবো😒]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here