#বন্ধ_দরজায়_তুমি🖤
#Written_By_Mêhèriyâr_Mêhèr
#Part: 16…….
,
সকালে ঘুম ভাঙতেই অসহ্য ব্যাথায় মাথা চেপে ধরে উঠে বসে তুর। মাথাটা ছিড়ে পরে যাচ্ছে। মাথার চুল গুলো ছিড়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে তুরের……
হঠাৎ করেই মাথা ছেড়ে নিজের দিকে নজর যায়। তুরের সমস্ত জামাকাপড় এলোমেলো বয়ে আছে। হঠাৎ করে এমন কিছু দেখবে তার আশা করেনি তুর। সবটা বোঝার চেষ্টা করতে গলাটা যেন শুকিয়ে আসছে তুরের। কি হয়েছে, কেন হয়েছে না ও বুঝতে পারছে না। আর না বুঝতে চাইছে। কিন্তু শরীরের অসহ্য ব্যাথা সবটা ওকে জানান দিয়ে যাচ্ছে কি হতে পারে…..
সবটা বুঝে উঠার আগেই তুরের গলাটা আটকে আসে। কালকের কথা মনে পরতেই শুধু এতটুকু মনে পরে তীব্র যখন ওর কাছে আসছিল তখন তুর জ্ঞান হারায়। তারপর…… আর ভাবতে পারল না তুর। না চাইতেও প্রচন্ড বেগে কেদে উঠে তুর…. তার মানে তীব্র সেদিন যা বলেছিল তা সত্যি করে দিল। সত্যি ও….. আর কিছু বলতে পারল না তুর….. প্রচন্ড জোরে কান্না করে দিল…..
তখনি ওর সামনে তীব্র এসে দাড়ায়। তুর উপরের দিকে তাকাতেই দেখে তীব্র শান্ত চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে….. তীব্রকে দেখে নিজের চোখ নামিয়ে গায়ে জড়ানো চাদরটা আরো জড়িয়ে নেয় তুর।
এটা দেখে তীব্র ওর পাশে বসে। তুর তীব্রের দিকে না দেখেই নিচে তাকিয়ে কাদতে থাকে। বুকটা ফেটে যাচ্ছে ওর। তীব্র তো জানত ও তীব্রকে ভালোবাসে তাহলে কেন করল এমন? তীব্র ওর কাধে হাত রাখতেই ও সরতে চায় কিন্তু পারে না। চাদরে আটকে যায়। তীব্র বুঝতে পারে তুর হয়তো এটা স্বপ্নেও ভাবেনি। একটা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে তীব্র……
আর তুরের কান্নার বেগটা বেড়ে যায়। তীব্র তুরের মাথাটা ধরে নিজের বুকের মধ্যে রাখে। তুর নিজেকে ছাড়াতে আরো জোরে আকড়ে ধরে তীব্র…..
— যেই বুকে রাখতে চেয়েছি সেইখান থেকে পালাতে চাইছ।
তুর কোনো কথা বলল না। আর এটাও বুঝল তীব্র ওকে ছাড়বে না। তাই ওখানেই চুপচাপ তীব্রের বুক ভেজাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল তুর। তীব্র ও কোনো রিয়েক্ট করল না। দেয়াল গেশে বসে তুরের মাথায় হাত বুলাতে লাগল…… একসময় তুর নিজেও তীব্রের বুকে মিশে গেল….. কান্নার বেগ বেড়ে হিচকি উঠে গেল….
এবার তীব্র বলে উঠল…..
— কিহল কাদছ কেন?
নিরব হয়ে গেছে তুর।
— আমাকেও বলবে না কাদছ তুমি? যাকে ভালোবাস তাকে নিজের কান্নার কারনটা বলতে পারছ না। তাহলে কেমন ভালোবাস….
এবার তুর কেদে কেদে বলেই উঠল….
— কেন করেছেন এমন আপনি না আমাকে ভালোবাসেন?
— কোনো সন্দেহ আছে? তোমাকে ভালোবাসি না।
— তাহলে কেন করলেন এমনটা? এটা তো ভালোবাসা নয়? ভালোবাসার মানুষের সাথে কেউ এরকম করে…..
হালকা হাসল তীব্র… আচ্ছা তোমার আর আমার সম্পর্ক কি অন্য মানুষের মত। সেটা কি অন্য সবার মত করে ঠিক করা হয়েছে…
— জানিনা….
— তোমাকে বলেছিলাম না তোমাকে ভালোবাসার মানে বলব। মানে Definition of love….
— হুমম….
— আচ্ছা তুর আমাদের মধ্যে কি কোনো প্রেমের সম্পর্ক ছিল।
— নাহহহ…. কিন্তু কেন?
-_ তুমি কি আমাকে আগে থেকে চিন্তে বা আমাদের মধ্যে কি আগে সম্পর্ক ছিল।
— না কিন্তু আপনি এসব কেন জিজ্ঞেস করছেন…..
— কারন তোমার সাথে আমার কোনো প্রেমের সম্পর্ক নেই যেটা আছে সেটা শুধু অনুভুতি আর সেটা শুধু ভালোবাসার।
তীব্রের এমন কথায় তুর চুপ হয়ে গেল কিন্তু তীব্র কি বুঝাতে চাইলো বুঝতে পারল না। তীব্র একহাত দিয়ে আরো শক্ত করে তুরকে বুকে জড়িয়ে আরেকহাত দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে……
— জানো মেডিক্যাল সাইন্সের মতে প্রেম আর ভালোবাসার অর্থ কি?
তুর চুপ করে বসে আছে। ভালোবাসতে গেলে ভালোবাসার ডেফিনেশন হয়তো কেউ জানতে চাইবে না। কিন্তু তীব্র তুরকে শোনাতে চায়.।।।।।
— মেডিকেল সাইন্সে মতে প্রেম আর ভালোবাসার ডেফিনেশন হচ্ছে… “শারীরিক আনন্দ কেটে যাবার পরে যদি কোন মানুষের সাথে তোমার আজীবন থাকতে ইচ্ছা করে তাহলে সেটা হচ্ছে ভালোবাসা আর যদি সেরকম ইচ্ছা না করে মানুষটির মোহ কেটে যায় তবে তা প্রেম। ”
কিন্তু তোমার আর আমার মধ্যে যেহেতু কোনো প্রেমের সম্পর্ক ছিল না তাহলে যেটা হলো সেটা নাম ভালোবাসা।
— বিয়ে ছাড়া তো তাহলে ভালোবাসা কোনোদিন বৈধ হতে পারে না। সেইজন্য তো ইসলাম ধর্মে বিয়ের ভালোবাসাকে শ্রেষ্ঠ আর বিয়ের আগে ভালোবাসাকে হারাম বলে গন্য করা হয়েছে…..
— হুমম….
— তাহলে কেন করলেন এমন? এর দ্বারা তো এটাই বুঝায় আমাদের ভালোবাসা বৈধ না অবৈধ…..
এই প্রশ্নের উওর আর দিতে পারল না তীব্র। কারন উত্তরটা ওর কাছে নেই।
— এই অনুভুতি যাই হোক না কেন তুর শুধু মনে রেখ তোমার আর আমার সম্পর্কটা সবার মত স্বাভাবিক নয়… [ গম্ভীর গলায় ]
— আপনি না বললেও আমি জানি তীব্র….
— কি জানো?
— এইটাই আপনি আমাকে বিয়ে করবেন না। আর সেইটা আপনি নিজেই বলেছেন। তাহলে আমি তো আপনার জন্য মোহ তাই না।
— তুমি আমার জন্য ঠিক কি তা এখন বুঝতে এসো না তুর। সেটা তুমি বুঝতে পারবে না আর না আমি তোমাকে বোঝাতে পারব।
— [ আর কিছু বোঝার নেই আমার তীব্র। আমি না আপনি আমাকে সব বুঝিয়ে দিয়েছেন আপনার লাইফে আমি ঠিক কি? কিন্তু আপনি হয়তো বুঝতে পারেননি আমি আপনাকে কি ভেবেছিলাম।]
নিজের মনে কথাগুলো ভেবে শুকিয়ে যাওয়া চোখের দু-ফোটা পানি ছেড়ে দিল। তারপর চোখ বন্ধ করে তীব্রের বুকের মাঝেই পরে রইল। কারন তুর এতদিনে বুঝে গেছে আর যাই হোক তীব্র না চাইলে ও কোনোদিন তীব্রের হাত থেকে ছাড়া পাবে না। আর না ও চিরকাল তীব্রের বুকে থাকতে পারবে। একদিন না একদিন হয় তীব্র ওকে ছুড়ে ফেলে দেবে নয়তো নিজেই তীব্রের কাছ থেকে চলে যাবে। তবে সেটা কবে তা জানে না।
এসব ভাবতে ভাবতে ক্লান্ত তুর তীব্রের বুকে মাথা রেখেই ঘুমিয়ে যায়। তীব্র বুঝতে পারে মেডিসিনের প্রভাব এখনো কাটেনি। আর তুর যা ভাবছে সেরকম কিছুই হয়নি। মেডিসিনের প্রভাবে ওর ওরকম লেগেছে। আর এইটা বিশ্বাস করানোর জন্য তীব্র ওসব করেছে।
— I am sorry tur… কিন্তু আমার কাছে কিছু করার নেই। আমি সবকিছুকে এমন একটা পর্যায়ে নিয়ে এসেছি না চাইতেও সবটা নিজের কাছেই উলট পালট হয়ে গেছে। চেয়েও সবটা ঠিক করতে পারব না। তাই আমি বাধ্য হলাম মিথ্যে একটা বিষয় ইয়ে তোমার মন ভাঙতে। জানি তোমার চোখে অনেকটা নিচে নেমে গেছি। কিন্তু তাতে সত্যি আমার কিছু আসে যায় না। আমার যা চাই তা তো আমি নিয়েই ছাড়ব…..
তারপর তুরকে শুইয়ে দিয়ে বাইরে বেড়িয়ে আসে…..
,
,
,
,
,
,
,
,
,
কয়েকঘন্টা পর তীব্র রুমে ফিরে এসে দেখে তুর শুয়ে আছে। তীব্র তুরের পাশে বসতেই তুর চোখ খুলে আবার বন্ধ করে নেয়। এইটা দেখে তীব্র বলে উঠে…..
— তুর আমাকে যেতে হবে….
এইটা শুনে তুর উঠে বসে। তারপর ঠোঁটের কোনে একটা মিষ্টি হাসির রেখা ফুটিয়ে তোলে। তুরের পুরো চোখ মুখ ফুলে আছে। বুঝতে পারল নিরবে কাদার ফল….
— আমাকে কয়েকদিনের জন্য যেতে হবে…
— এতে আমাকে বলার কি আছে। না মানে এর আগে তো কখনো বলেনি। আপনার ইচ্ছে হলে এসেছেন আপনার ইচ্ছে হলে চলে গেছেন.…….
তীব্র বুঝল চাপা কষ্ট গুলো তুরের মুখ থেকে অভিমান হয়ে ঝরছে…. কিন্তু ও আর কথা বাড়াল না।
— আসছি….
আসছি কথাটা শুনে তুরের বুকের ভিতর মোচর মারে। তীব্র চলে যাবে ভেবেছিল কিন্তু এখন চলে যাবে সেটা ভাবেনি। ও খুব করুন চোখে তীব্রের দিকে তাকায়। তীব্র উঠার আগেই তুর খুব জোরে তীব্রকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়। তুরের এমন করাটা আশা করেনি তীব্র। ওর হাত ঘামছে। আজ তুরের কান্নাটা ওর বুকের ভিতর ঝড় তুলেছে….নিজেকে চেয়েও শক্ত করতে লারছে না তীব্র…. আর না কিছু বলতে লারছে। তাই তুরকে জড়িয়ে ওভাবেই বসে থাকে ও। তুরকে দুর্বল করতে নিজেই যেন দুর্বল হয়ে পরছে মেয়েটার প্রতি…..
বেশ কিছুক্ষন পর তুর ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদতে থাকে…. এইটা দেখে তীব্র থুতনি ধরে তুরের মুখটা উচু করে।
— কি হয়েছে?
— কিছুনা….
— তাহলে কাদছ কেন?
— আমার একটা কথা রাখবেন?
কিছুক্ষন চুপ থেকে বলে উঠে…..
— কিহ??
— আপনি এই রুমের ক্যামেরা গুলো খুলে রাখবেন? প্লিজ…..
— কিন্তু…..
— প্লিজ….
আর না করতে পারল না তীব্র। ওর এই করুন সুর উপেক্ষা করার শক্তি নেই ওর। তাই নিজেই ঘরের ৪টি ক্যামেরা খুলে রাখল……
— যাও আজ তোমার কথাই রাখলাম।
তুর শুধু মাথা নাড়ল। আর তীব্র হালকা হাসল। তারপর তুরের কাছে গিয়ে ওর কপালে ভালোবাসার সিগ্ধ পরশ ছুইয়ে দিল। তুরের থেকে বিদায় নিয়ে বাইরে এসে বলল……
— ভালোবাসতে তুমিও শিখে গেছ… [ তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে ]
,
,
,
,
,
,
,
,
তারপর তীব্র এয়ারপোর্টে উদ্দেশ্য গাডিতে বসে পরে। গাড়িতে নিজের ল্যাপটপ অন করে। তুর রুমে ৪টি ক্যামেরার কথা জানলেও রোবো ক্যাটের মধ্যে যে ক্যামেরা লাগানো সেটা জানত না। তীব্র তুরের কথাও রাখল আর নিজের কাজ ও করল। কিন্তু কেন তুর ক্যামেরা খুলতে বলল সেটা জানা প্রয়োজন….
তীব্র ক্যামেরা অন করতেই তুরকে দেখতে পায়। আর দেখেই বুকের মাঝে একটা কামর মারে তীব্রের। বিছানায় বসে হাটুতে মুখ গুজে অঝোরে কাদছে তুর। তারমানে তুর নিজের কান্না আড়াল করতে….. ভাবতেই রেগে ল্যাপটপ টা বন্ধ করে দেয় তীব্র।
— তোমাকে আর এভাবে কষ্ট পেতে হবেনা তুর। যা যা তুমি সয়ে তার সম্পুর্ন আমি ফেরত দেব তোমায়।
৷
,
,
,
,
,,
,
পরের দিন তীব্র দেশে ফিরে সোজা হসপিটালে যায়৷ হাসপাতালে গিয়ে ডিরেক্ট তুষার কাছে যায়। বেশ বিচলিত তীব্র….
— কি হয়েছে তীব্র….এমন দেখাচ্ছে কেন?
— আমি ডিরেক্ট এয়ারপোর্ট থেকে আসছি। তাই এমন লাগছে…
— কিন্তু তুই বাড়ি না গিয়ে….
— আমি বাইরে থেকে যে মেডিসিন আনতে দিয়েছিলাম তা পৌঁছেছে?
— হুমম… কাল সন্ধ্যায় চলে এসেছ। তোর জন্য কিছু করিনি আমি।
— গুড…. রেডি কর। আমি আর অপেক্ষা করতে চাই না।
— ব্যাপারটা রিক্স হয়ে গেল না। আমি জানি এটা তায়ানের জন্য ভালো নাহলে এতটা এক্সপেন্সিভ মেডিসিন তুই আনতি না। কিন্তু যদি এটাতে কাজ না হয় তাহলে…..
— ৪ মাস তো দেখলাম আর কত? এবার এই রিক্সটা নিতেই হবে।
তুষা আর কিছু বলতে পারল না। তীব্র তায়ানকে ইনজেকশনটা দিতে গিয়েও পারছে না। ওর হাত কাপছে। হয় এতে ওর জ্ঞান ২৪ ঘন্টার মাঝে ফিরবে। কিন্তু যদি রিয়েকশন হয় তবে বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যাবে। কিন্তু এই রিক্সটা তীব্রকে নিতেই হব।
তীব্রের হাতের কাপুনি দেখে অরুন গিয়ে ইনজেকশনটা ধরে…
— আমি দিয়ে দিচ্ছি.…
তীব্র আর কিছু বলে না। তায়ানের শরীরে ইনজেকশনটা পুশ করায় অরুন। তুষার মেশিনে চেক করে বলে ওর বডি সেটা নিচ্ছে…. এইটা ভেবে স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়ে তীব্র…. তখনি অরুন বলে…
— এখনি নিশ্চিত হওয়ার কিছু নেই। সব কিছুর 50/50….২৪ ঘন্টার আগে কিছুই বলে যাবে না। তখনি তীব্র পরে যেতে নেয়। অরুন তুষা দুজনেই ওকে ধরে…. তারপর তুষার জোর করে রাতে ওকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়…
পুরো রাত তীব্রের নির্ঘুম কেটে যায়। কাল কি হবে সেটা ভেবে দুচোখের পাতা এক হয় না। একটা ভয় কাজ করছে সাথে তায়ানের ভালো হওয়ার আশা……. এভাবে থাকতে থাকতে কখন চোখ বুজে আসে তীব্রের নিজেও বুঝতে পারে না।
,
,
,
,
,
,
,
,
সকালে মোবাইলের রিংটনে তীব্রের ঘুম ভাঙে….. তুষার কল দেখে দ্রুত পিক করতেই তুষা ওকে যেতে বলে। আর কিছু না বলেই ফোন কেটে দেয়। দ্রুত এক গাদা টেনশন কোনো মতে হসপিটালে যেতেই তুষা ওকে জড়িয়ে কান্না করে দেয়। আরো ঘাবড়ে যায় তীব্র…. ও দ্রুত তায়ানের কেবিনে যেতেই অরুন বলে উঠে….
— ওয়েলকাম ড. রায়হান আপনার শত্রু জ্ঞান ফিরে পেয়েছে….
তীব্র ধীর পায়ে তায়ানের কাছে যেতেই তায়ান উঠে বসতে গিয়ে পরে যেতেই তীব্র ওকে জড়িয়ে ধরে….
— কিরে কেমন আছিস…..
— ভালো… [ খুশিতে তীব্রের চোখ জল জল করছে ]
— ভালো? কিভাবে মনে তো হচ্ছে বুড়ো হয়ে গেছিস….
তায়ানের মুখে বুড়ো কথাটা শুনে তীব্রের তুরের কথা মনে পরে যায়..
— কিরে কি ভাবছিস?
_- না কিছুনা।
তখনি তায়ান আবারো জড়িয়ে নেয় তীব্রকে।
— সেই আমাকে মরতেও দিলি না।
— কি করে দিতাম তুই আমার কলিজার একটা অংশ..
তায়ান তীব্রকে ছেড়ে দেয়। তারপর একটু নিচু স্বরেও জিজ্ঞেস করে….
— তায়্যিরাত কেমন আছে? ও কি নিজের ভুলটা বুঝতে পারেনি।
ওর কথা শুনে প্রচন্ড রেগে যায় তীব্র….
— ১ম কথা ও যা করেছে সবটা ইচ্ছে করে। আর ২য় তো তোর এই অবস্থার জন্য ও দায়ী।
— তুই ভুল ভাবছিস….
— আমার আর কিছু বলার নেই। আমি তোকে আগেও সাবধান করেছি। কিন্তু….
— আচ্ছা বাদ দে… তোর জন্য যে মেয়েটি দেখেছি এবার তোর সাথে তার বিয়ে দিয়ে ছাড়ব আমি। আমি তোর জন্য ওকেই ঠিক করে রেখেছি তুই তো নিজে আর….
তখনি তুষা বলে উঠে….
_- তোর কষ্ট করতে হবে না। সে নিজেই একটা মেয়েকে দেখে পা পিছলেসে….
— বাজে কথা বন্ধ কর তুষা [ তীব্র ]
— কথাটা সত্যি…. [ তায়ান ]
— একদম। কিন্তু দেখ মি. মুডি মানতেই চাইছে না।
— আরে ওরকম কিছু না।
— বললেই হলো কিভাবে মেয়েটাকে দেখছিল জানিস….
— তুষা… 😡😡😡
— আচ্ছা ঠিক আছে থাম তোরা… ওর যাকে ভালো লাগবে তার সাথেই বিয়ে দেব নাহলে আমার পছন্দের মেয়ের সাথে… [ তায়ান ]
তীব্র আর কিছু না বলে বেড়িয়ে যায়।
,
,
,
,
,
,
,,
তায়ানকে এখন সম্পুর্ন বেড রেষ্টে থাকতে হবে। কিন্তু ও তায়্যিরাতের সাথে দেখা করার জন্য পাগল হয়ে গেছে। তীব্র সব বুঝেও না বোঝার ভান করছে আর তায়ান বলতে পারছে না।
,
,
,
৷
,
,
,
,
,
,
এভাবে কেটে যায় কয়েকদিন…..
সকালে তীব্র হসপিটালে যায়। কিছু ফাইলের কাজে রিদ্ধ তীব্রের সাথে দেখা করতে হাসপাতালে যায়।
রিদ্ধ কেবিনে বসে আছে। তখনি তীব্র আসে…
— কি হয়েছে?
— স্যার এগুলোতে সাইন লাগবে….
তীব্র ফাইলে সাইন করতে থাকে তখনি রিদ্ধ বলে উঠে…..
— জানেন স্যার আপনি নাই তাই সবটা আমাকে হ্যান্ডেল করতে গার্লফ্রেন্ডটাকে সময় দিতে পারিনা। তাই ভাবতাসে আমি নাকি প্রেম করতাসি… 😥😥
— ভালো তো ব্রেক আপ করে নেও….
— কি বলেন স্যার🙄🙄।
তীব্র সাইন করে ফাইল রিদ্ধকে দেবে তখন রিদ্ধ বলে….
— আচ্ছা স্যার তায়্যিরাত কেমন আছে….??
তীব্র কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনি তুষা হাপিয়ে কেবিনে ঢুকেই বলে.।।।
_- রায়হান তায়্যিরাত এসেছে তায়ানের সাথে দেখা করতে….
কথাটা শুনেই রিদ্ধ বিস্ফোরিত চোখে তীব্রের দিকে তাকায়…..
— স্যার….
৪ মাস আগে যে মেয়েটাকে বিদেশ নিয়ে গিয়েছিল সে কিভাবে….. রিদ্ধের অবাক হওয়ার কারন তীব্র বুঝতে পারছে। কিন্তু তীব্রের শান্ত থাকার কারন বুঝতে পারল না রিদ্ধ….. কিন্তু রিদ্ধকে আরো অবাক করে দিয়ে তীব্র বলল….
— ওকে তায়ানের কাছে নিয়ে যা তুষা। তায়্যিরাতকে আমি নিজেই ডেকেছি। কারন তায়ান ওর জন্য পাগল হয়ে গেছে….
তীব্রের এমন কথায় রিদ্ধের জ্ঞান হারাবার উপক্রম। তায়্যিরাতকে ও ডেকেছে মানে। তাহলে কি ওকে ফিরিয়ে এনেছে। কিন্তু তা কিভাবে সম্ভব….. তুষা চলে যেতেই বাকা হেসে তীব্র রিদ্ধের দিকে তাকায় ….
— সারাদিন গার্লফ্রেন্ডের ব্রেক আপের ভয় করলে এমনি বুঝতে পারবে না।
বলেই তায়ানের কেবিনে যায় তীব্র। আর রিদ্ধ ওর পিছে পিছে…. তীব্রের এখন ওর জন্য একটা প্রশ্ন যার কোনো উত্তর নেই রিদ্ধের কাছে….
,
,
,
,
,
তীব্র কেবিনে ঢুকে দেখে একটা মেয়ে তায়ানকে জড়িয়ে ধরেছে। তীব্রকে দেখে মেয়েটা তায়ানকে ছেড়ে দিয়ে দুরে গিয়ে দাড়ায়,.. রিদ্ধ অবাক চোখে মেয়েটাকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে….. কিন্তু কিছুতেই তায়্যিরাতের সাথে মেলাতে পারছে না। এদিকে তীব্রের আচরন স্বাভাবিক যেন কিছু হয়নি। তখনি মেয়েটি বলে উঠল …..
— সরি ড. রায়হান। আমার করা একটা ভুলের জন্য তায়ানের এই অবস্থা….
তায়্যিরাতের কথায় হালকা হাসল তীব্র….
— আমাকে নয় তায়ানকে বলো। তুমি আর তোমার বাবা যা করেছে তা আমার না ওর সাথে।
_- হুমম কিন্তু তার জন্য আপনাকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে।।। তাই না। তবে আর কষ্ট করতে হবে না। এবার তায়ানের সব আমি দেখব।
মেয়েটির গলায় অদ্ভুত এক জোর দেখল তীব্র। আর সেটা কিসের ইঙ্গিত হতে পারে তাও বুঝে নিল।
— কষ্ট করব আর তার মূল্য নিব না।
— মানে….
-_ মানে [ হালকা হেশে ] আমার পারিশ্রমিক আমি এক দিক থেকে ঠিক উসুল করে নিয়েছি। এই যে আমার বন্ধুর মুখের হাসি….
কথাটা তীব্র বলল ঠিকি কিন্তু তায়্যিরাতের কেমন একটা লাগল….. কথা ঘুড়িয়ে তীব্র বলো উঠল….
— যার জন্য তায়ানকে মৃত্যুর দাড়ে পাঠালে সেই বিয়েটা কেন করলে না তায়্যিরাত ইসলাম তোয়া…..
কথাটা শুনে তোয়া থমকে গেল। তায়ানের ও একি প্রশ্ন….. তোয়া নিজেকে সামলে শুধু এটাই বলল….
— আমার লাইফের সবচেয়ে প্রিয় একটা জিনিস হারিয়ে ফেলেছি তাই নতুন জিবনে লা রাখতে পারিনি….
কথাটা শুনে তায়ান প্রিয় জিনিসটা নিজেকে মনে করলেও তীব্রের অন্য কিছু মনে হল। হালকা হাসল ও। আর ওদিকে রিদ্ধের মাথায় কিছুই ঢুকছে না। সেদিন কাকে তুলে আনতে গিয়েছিল আর কাকে এনেছে। আর এই মেয়েটি তায়ানের গার্লফ্রেন্ড হলে যে মেয়েটিকে নিয়ে গেছে সে কে? আর তীব্র যদি জানে তাহলে ওই মেয়েটার সাথে এমন করল কেন?
_- এসব বাদ দেও তোয়া… সবটা ঠিক হয়ে গেছে তাই অনেক… [ তায়ান ]
— সেইটাই…. [ তীব্র ]
— আচ্ছা তোয়া তুর কোথায় ওকে নিয়ে আসলে না কেন? অনেকদিন দেখিনা ওকে…. জানো আমি ঠিক করেছি তুরকে আমার এই ফ্রেন্ডের বউ বানাব….
এইটা শুনে তোয়া আড়ালে নিজের চোখের জল মুছে নেয় তারপর বলে…
— কি যে বলো। ও তোমার ফ্রেন্ডের চেয়ে বয়সে কত ছোট জানো। আর ওর সাথে কিভাবে…. [ ধরা গলায় ]
তীব্র তখনি বলে উঠে….
— আমারো ইন্টারেস্ট নেই ওনার বোনের উপর। শেষে দেখা যাবে আমাকেও ধোকা দিয়ে দেবে।
— তুইনা। তোয়া ওর কথায় কিছু মনে করো না।।
— আচ্ছা তোরা কথা বল আমি আসছি….
বলে তীব্র বেড়িয়ে যায় আর সাথে সাথে রিদ্ধ….. তীব্র নিজের কেবিনে ঢুকতেই রিদ্ধ তীব্রকে বলে উঠে…..
— এসবের মানে কি স্যার….
— কিসব?
— তুর তোয়া….
— মানের কি আছে…. ও তায়্যিরাত ইসলাম তোয়া তায়ানের গার্লফ্রেন্ড আর আমরা যাকে তোয়া ভেবে তুলে নিয়েছিলাম ও তোয়ার কাজিন তায়্যিরাত ইবনে তুর ছিল। ব্যাস আর কি? ওদের নামের অদ্ভুত মিলের জন্য তোমাদের কনফিউশান হয়ে গিয়েছিল..….
— আপনি কখন জানলেন আমরা ভুল মেয়েকে তুলে এনেছি…
— যখন প্রথম আমি তুরকে দেখেছিলাম ঠিক তখন…..
— তারমানে আপনি প্রথম থেকে জানতেন ওই মেয়েটি তায়ানের গার্লফ্রেন্ড নয়।
— হুমম জানতাম। আর জানতাম বলেই সেদিন আমি তুরকে ওই লোকগুলোর হাতে তুলে দেয়নি। কিন্তু তোমাদের একটা ভুলের কারনে মেয়েটা ওই লোকগুলোর কাছে চলে যায়। যার দাম দিতে আমাকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত যেতে হয়েছে।
—- তারমানে সেদিন যদি তোয়া থাকত…
— তাহলে যা বলেছিলাম তাই হত ওই মেয়েটার সাথে। এতদিনে কোথায় থাকত কেউ জানেনা।
— মানে আপনি জেনে বুঝে…
— আচ্ছা তোমার মাথার মধ্যে কি সামান্য কমন সেন্স নেই নাকি। আমার ফ্রেন্ডের গার্লফ্রেন্ডকে আমি নিজের কাছে কেন রাখব। আর কেনই বা নিজের প্রাইভেট বাডিতে নিয়ে যাব।
রিদ্ধের মাথায় কিছুই ঢুকছে না।
— আপনি কিভাবে বুঝলেন ওইটা সেই তুর না।
বাকা হাসল তীব্র… রিদ্ধের নকটা ধরল।
— একটা কথা বলো। তোমার নক একদিনে ১ সেঃমিঃ হবে…
— না…
— কিন্তু ১সেমি নক কি ছোট হবে…
—- হ্যা….
— ব্যাপারটা ওইরকম….. কারন ওকে যখন আমি প্রথম দেখি তখনি বুঝেছি ভুল হয়েছে তোমাদের কারন তায়ানের সাথে ওর রিলেশন ২-৩ বছরের। as a doctor ওই মেয়েটাকে দেখেই বুঝেছি মেয়েটার বয়স ১৮ বেশি হবে না। সো এই মেয়েটি সেই তায়্যিরাত নয়…..
অবাক হয়ে গেল রিদ্ধ….
— তাহলে ওই মেয়েটাকে এই ৪ মাস আটকে রেখেছেন কেন? কিসের প্রতিশোধ…..
— সেটা তোমার না জানলেও চলবে…
— কিন্তু স্যার…
— রিদ্ধ…
— ওকে স্যার…. [ রিদ্ধি চলে যায় ]
— সবকিছুর কারন প্রতিশোধ হয়না। দাবার গুটির চালে কি হয় কে বলতে পারে….
তারপর নিজের চোখ বন্ধ করে সবটা একবার দেখে নেয় তীব্র……
সেদিন তোয়ার বিয়েতে পার্লারের ওই মেয়েটাকে তীব্র পাঠিয়েছিল। কিন্তু ওরা যেহেতু তোয়াকে চিন্ত না তাই অনেকটা বিয়ের পোশাকে থাকা তুরকেই বউ ভেবে নিয়ে যায় ওরা। বিয়েটা সাদা মাটা হবে বলে ঠিক করা হয়েছিল। আর তোয়া তেমন সাজেনি। কিন্তু নামের মিল থাকার কারনে তীব্র তায়্যিরাতের কথা জানতে চাইলে তুর হাত তোলে। আর তুরকে রুমে আটকে রাখা হয়। রাতে যখন তীব্র যখন বাড়ি ফেরে আর তুরের তৃষ্ণায় কথা শুনে ওর কাছে গিয়ে ওকে দেখে বেশ অবাক হয় এতটা অল্প বয়সী একটা মেয়েকে দেখে। তীব্র কিছুতেই মেলাতে পারছিল না। কারন ও জানত তায়্যিরাত অর্নাস ৩য় বর্ষে পরে। যা এই মেয়েটার পক্ষে অসম্ভব। পরে তীব্র নিজেই তোয়ার বাড়িতে খবর নেয়। আর ওর ধারনাই ঠিক হয়। আর এটাও শোনে তোয়ার বিয়েটা ভেঙে গেছে। এটা শুনে প্রশান্তির নিশ্বাস ছাড়ে। কিন্তু এসে জানতে পারে যে মেয়েটিকে মানে তুরকে আনা হয়েছিল তাকে ওই লোকগুলো নিয়ে গেছে। পরে তীব্র ওকে নিয়ে আসে ঠিকি কাউকে জানতে না দিয়েই যে এই তুর সেই তায়্যিরাত নয়। ওকে ফিরিয়ে দিতে গিয়েও দেয়না তীব্র…… কিন্তু কিভাবে রাখবে কেন রাখবে বুঝতে পারে না। গাই তুরকে ও নিজের #বন্ধ_দরজার_তুমি🖤 করে রাখে…… ]
নিজের চোখ মেলে তাকায় তীব্র…..
— Sorry…. But I need this girl. তোমাকে আমার প্রয়োজন তুর। জানি অনেকটা অন্যায় হয়ে গিয়েছে…. বাট আমি হেল্পলেস……
,
,
,,
,
,
,
,
,
,
[ বাকিটা পরের পর্ব গুলোতে জানবেন ]
জানিনা কেমন হলো। আশা করি সবট ক্লিয়ার করতে পেরেছি। এখন কথা হলো তীব্র সব জেনেও এটা কেন করল😋😋 সেটা জানতে সামনের পর্ব গুলো পরতে হবে।
আরেকটা কথা স্টোরিটা সত্যি একটু রহস্যময়। তাই যাদের ভালো না লাগবে এবোয়েড করতে পারেন। আর যাদের এরকম স্টোরি পরতে ভালো লাগে এটা তাদের জন্য। তবে কোনো প্যাচ রাখব না।
আর যারা ভেবেছিলেন এইটা প্রতিশোধ মুলক তাদের জন্য একবালতি সমবেদনা। কারন ব্যাপারটা এগগুয়ে….
কেমন লাগল জানাবেন…
Åriyâñà Jâbiñ Mêhèr
#Åriyâñà_Jâbiñ_Mêhèr