কাঠগোলাপ🍁
তৃধা মোহিনী(মৃন্ময়ী)
পর্ব পাঁচ
🍁
“পরীপু কেমন করে ধ্রুভ ভাইয়ার সাথে ধাক্কা খেয়ে পরেছো??উঠো জলদি?” নিভ দূর থেকে দৌড়ে এসে বললো।।
“ধ্রুভ কে?” রাহি নিজের শরীর ঝাড়তে ঝাড়তে উঠলো।।
“আরে ধ্রুভ ভাইয়াকে চিনো না??উনি আমার ফুফাতো ভাই হয়..পারভীন ফুফির ছেলে” নিভ ঠোট উল্টে বললো।।
“ওহ!”রাহি নিঃশব্দে বললো।।
” তুমি একটু ভাইয়ার কাছ থেকে দূরে থাকবে?”নিভ আস্তে করে রাহির কানের কাছে গিয়ে বললো।।
“কেন?” রাহি ভ্রু কুচকিয়ে জিজ্ঞেস করলো।।
“আসলে আপু মা ও আমাকে ভাইয়ার সাথে কথা বলতে না করে তবুও আমি কথা বলি ভাইয়ার সাথে মাঝেমধ্যে ভিডিও কলে,আসলে ভাইয়া ত এখানে থাকে না..ভাইয়া ত থাকে লন্ডনে..বিয়েতে আসছে আর ধ্রুভ ভাইয়া অনেক রাগী,রাগ উঠেলে কেমন বিড়বিড় করে আর জিনিসপত্র ভাঙচুর করে” নিভ আস্তে করে বললো।।
রাহি আর কথা বাড়ালো না,নিভের হাত ধরে ঘরের ভিতরে রওনা দিলো..যাওয়ার পথে নিভের মায়ের সাথেও দেখা হলো..বেশ রসিক মহিলা উনি..ভালো কথা বললেন..আমি নিভকে ওর মায়ের কাছে দিয়ে ওয়াশরুমে গেলাম গোসল করতে।।
গোসল সেরে এসে হালকা রঙের একটা জামা পরে বের হয়ে গামছ নিয়ে চুল মুছছি,বারান্দার দিকে একটু এগোলে দেখলাম প্রান্ত ভাইয়া খুব আয়েশ করে তার কাজিনের সাথে এক কোনায় কথা বলছে..মনে হচ্ছে খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা চলছে তাদের মাঝে,প্রান্ত ভাইয়া কেমন আঙ্গুল নাচিয়ে নাচিয়ে বলছে কথাগুলো..আসলে প্রান্ত ভাইয়াও দেখতে সুন্দর ধবধবা ফর্সা মরহুম ফুফার মতো,চুল পাতলা হওয়ার কারনে সামনে এসে পরছে উনার চুলগুলো।।
রাহি এতোক্ষন ওদের দেখছিলো,চোখ একটু সোজা করে তাকালে দেখলো সামনের বারান্দায় সকালের ছেলেটা দাড়িয়ে তার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে..তার চাহনিতে রাহির কেমন জানি অস্বস্তি লাগছে..নিজের দিকে তাকালে দেখে ওড়না নাই,তার টনক নড়লো..আবার ছেলেটার দিকে তাকালে দেখে সে এখনো তাকিয়ে আছে..রাহি এক দৌড়ে রুমের ভিতরে যেয়ে ওড়না আগে নিলো।।
আজকে নাকি বাড়িতে সঙ্গীত আর মেহেদী হবে বাড়িতে,তাই বাড়ির মেয়েরা সবাই সবুজ কালার সিলেক্ট করেছে..যে যাই পরুক কালার সবুজ হতে হবে..রাহি যাবে না ভাবছে কিন্তু নিভ সবুজ পাঞ্জাবি পরে এসে রাহিকে জোর করে পাঠালো রেডি হতে..ভাবছে সালোয়ার কামিজ ত সে পরে থাকেই যে কয়দিন অনুষ্ঠান হবে দেশি স্টাইলে শাড়ি পরবে শুধু।।
সন্ধ্যাবেলা,
বাড়িতে প্রচুর লাইটিং দেয়া হয়েছে যদিও বিয়ে দুইদিন বাদে কিন্ত বাড়ির পরিবেশ এখন থেকে ঝলমল করছে..রাহি কলাপাতা রঙের একটা শাড়ি পরেছে ফর্সা গায়ে কেমন যেন উপচে পরছে কালার টা..চুল খোপা করে সামনে কিছু ছেড়ে দিয়েছে..আর যেহেতু কাঠগোলাপ তার প্রিয় ফুল..সেটা দিয়ে খোপা সেট করে দিয়েছে সে..নথ তাইর বালি সিস্টেম যা সে সবসময় পরে..কানে সিম্পল দুল,টিপ তার ভাল্লাগেনা তাই পরে নি..আঙ্গুলে এনটিক আংটি পরেছে..এতোক্ষন নিভ বসে বসে রাহির এইসব দেখছিলো।।
“সবুজ পরী!!আমি বড় হলে তোমাকে বিয়ে করবে কিন্তু” নিভ বললো।।
“আচ্ছা তখন আমার দাঁত না উঠে গেলে হলো” রাহি হাসতে হাসতে বললো।।
নিভ রাহির হাত ধরে বাহিরে নিয়ে গেলো,চারপাশে কত মানুষ..অথচ কাওকে চেনে না সে..প্রান্তকে দেখলো সে তার কাজিন রাশনার সাথে আবার সকালের মতো চিপকে কি কথা বলছে..রাহি নিচে আসাতে প্রান্তর চোখগুলো তার দিকে গেলো,এক মুহূর্তের জন্য চোখ আটকে গেলেও তার আবার রাশনার দিকে তাকালো..রাশনাকেও সবুজ লেহেঙ্গাতে পরীর মতো লাগছে..রামিশার মেহেদী সবাই কত আনন্দ ফুর্তি করছে।।
রাহিকে একজন মেহেদী আর্টিস্ট নিয়ে গেলো মেহেদী দেয়ার জন্য,রামিশা ডেকে পাঠিয়েছে তাকে..এখানে এসে রামিশার সাথে যদিও কথা হয় নি কিন্তু মেহেদী দিতে বসে অনেক কথা হলো..মনে হচ্ছিলো সে নতুন এখানে..কেমন মিশুক সব মেয়েরা এখানকার..এক ঘন্টার মধ্যে রাহির দুই হাতের উপর নিচ একদম কব্জি পর্যন্ত মেহেদী দিয়ে ভরিয়ে ফেলেছে..রাহি না করেছিলো অনেকবার এতো করে না দিতে কিন্তু রামিশার জন্য দিতে হলো..রাহি ওখানে বসে মেহেদী শুকাতে লাগলো।।
রাশনা এসে মিউজিক চালু করে একটা ডান্স দিলো..রাহিকে অনেকবার ডাকলো কিন্তু সে এইসব পছন্দ করে না তাই গেলো না…রাহির মেহেদী শুকানো হয়ে গেছে অলমোস্ট, সে শাড়ি সামলে উঠে মেহেদী উঠার জন্য নিজের ঘরের দিকে রওনা দিচ্ছে।।
রাহি হাটতে হাটতে নিজের ঘরের দিকে রওনা দিচ্ছে,লাইটিং এর কারনে পুরা বাড়ির লুক চেঞ্জ..হুট করে ঘরে যাওয়ার রাস্তার লাইট অফ হয়ে গেছে..রাহির হাতের কাছে ফোন নাই যে লাইট অন করবে..একটু একটু করে আগাচ্ছে,অন্ধকারে কিছু দেখা যাচ্ছে না।।
রাহিকে কে পিছন থেকে হ্যাচকা টান দিয়ে দেয়ালে চেপে ধরলো..এরকম আকস্মিক আক্রমণে রাহি মুখ দিয়ে একটু মৃদু চিৎকার বের হলো..হালকা আলো শুধু ওই ব্যক্তির চোখে পরছে,চোখের রঙ ছিল ধূসর।।
“হুসস!!ইটস মি মীরা” ছেলেটি অন্ধকারে ফিসফিস করে বললো,তার এমন করে ফিসফিসিয়ে বলাটা কেমন এই ভয়ংকর পরিবেশকে আরো ভয়ংকর করে তুলছে..রাহির পিঠের উপর মনে হচ্ছে হালকা শীতল বাতাস বয়ে গেলো ছেলেটার এমন আওয়াজে কথা বলায়।।
“দে..দেখুন!!আমি কোন মীরা খিরা না?আপনি ভুল মানুষকে ধরেছেন!!” রাহি উত্তর দিলো।।
“উহুম!!(রাহির গলার স্মেল নিয়ে)আমি আমার মীরা কে চিনতে ভুল করতে পারি না?তুমি জানো?তোমাকে দেখার পর থেকে আমার মধ্যে কোনকিছু ঠিক নেই আর” ছেলেটা আরেকটু চেপে ধরে বললো কথাটা রাহিকে।।
রাহি এই গরমের মধ্যেও ঠকঠক করে কাঁপছে,সামিরকে এতো কাছে আসা ত দূরে থাক কখনো হাত ধরতে দেয় নি..এই লোক কেমনে করে সাপের মতো পেচিয়ে জাপটে ধরেছে..দুই হাত দিয়ে ঠেললেও তার বলিষ্ঠ শরীর টা একটুও নড়াতে পারছে না।।
লাইট চলে আসছে,এই আলোতে প্রথম আমি তাকে দেখলাম..তার চেহারা কি সুন্দর একটা মায়াভরা ভাব, তার ঠোট টা কেমন যেন জীর্ন দেখাচ্ছে..চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে।।
“ধ্রুভ ভাইয়া কি করছো??পরীকে ছাড়ো??” নিভ কোথা থেকে দৌড়ে এসে ধ্রুভকে তার ছোট ছোট হাত দিয়ে সরিয়ে দিচ্ছে..কিন্তু ধ্রুভ এক চুল সরছে না,সে এক ধ্যানে রাহির দিকে তাকিয়ে আছে।।
নিভ আসাতে রাহির মনে হচ্ছে এখন নিঃশব্দের কান্নাটা প্রবল বেগে ধারন করলো।।
“মীরা তুমি কাদছো কেন??দেখো আমি তোমাকে হার্ট করছি কি বলো??মীরা তুমি প্লিজ কেদো না” এইভাবে ধ্রুভ রাহির চোখ মুখ মুছতে লাগলো,রাহির কান্নার গতি আরো বেড়ে গেলো..এদিকে নিভ কি কি বলছে ধ্রুভ কে কিন্তু সে রাহির কান্না মুছতে ব্যস্ত..রাহি যখন দেখলো ধ্রুভের হাত আলগা তখন সর্বশক্তি দিয়ে ধ্রুভকে এক ধাক্কা দিলো,ধ্রুভ কিছুটা সরে ছিটকে পরলেও থামিয়ে দিলো..আবার রাহির দিকে এগোলে রাহি এক দৌড়ে নিজের ঘরে যেয়ে দরজা লাগালো..এদিকে ধ্রুভ ও তার পিছনে দৌড় দিলো..দরজার কাছে যেয়ে দরজা ধাক্কাতে লাগলো।।
“মীরা দরজা খুলো??এইভাবে দরজা বন্ধ করে কেন আছো মীরা??ভালো হবে না বলছি??” এরকম নানান কথা ধ্রুভ বলে যাচ্ছে।।
রাহি ত ঘরের দরজা লাগিয়ে ভয়ে ঠকঠক করে কাপছে,দরজা মনে হচ্ছে ভেঙ্গে যাবে..অনেক্ষন এরকম ধস্তাধস্তি চলার পর,এক সময় বন্ধ হয়ে গেলো..রাহি ওইভাবে গুটিসুটি মেরে বিছানার চাদর ধরে বসে রইলো।।
চলবে🍁
গঠমূলক কমেন্ট করুন যাতে আমি নেক্সট পার্ট দ্রুতভাবে দিতে পারি,ভুল ত্রুটি ক্ষমার নজরে দেখবেন।।