অদ্ভুত প্রেমবিলাস পর্ব-২৮

0
1030

#অদ্ভুত_প্রেমবিলাস
#লেখিকাঃ সারজীন ইসলাম

|পর্ব-২৮|

ধারা কে লাল টুকটুকে শাড়ি পড়িয়ে বসিয়ে রেখেছে জোনাকি। জোনাকি হালকা ভাবে সাজিয়ে দিয়েছে ধারা কে। শাড়ি টা ধারার আম্মার বিয়ের শাড়ি। খুব যত্ন করে তুলে রেখেছিল। এইভাবে যে কাজে আসবে শাড়িটা কখনো কল্পনাও করতে পারেননি তিনি। ধারা দের বাজারে কাপড়ের বিশাল দোকান থাকা সত্ত্বেও ধারার আম্মার অনুরোধে ধারা কে তার বিয়ের শাড়ি পড়ানো হয়। ধারার আব্বাজান চেয়েছিলো তার দোকানের সেরা শাড়ীটা তার মেয়ের জন্য নিয়ে আসতে। কিন্তু তার স্ত্রীর জন্য তা পূরণ হচ্ছে না। ঝড়ের গতিতে বিয়ের আয়োজন চলছে ধারার। একমাত্র মেয়ের বিয়ের জন্য যতটুকু সম্ভব আয়োজন করছে তারা। ইতিমধ্যে ধারার নানার বাড়িতে খবর পাঠানো হয়েছে। আপাতত ধারার বড় মামার বিয়েতে উপস্থিত থাকবে, কাল সকাল সকাল নানার বাড়ির সকলে বাড়িতে চলে আসবে। গ্রামের রাস্তা দিয়ে এত রাতে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের নিয়ে কেউ বিয়ে বাড়িতে আসার সাহস পাচ্ছে না। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা কাল সকালে এ বাড়িতে আসবে। ধারার আব্বাজান যখন এসে মিতা বেগম কে বলল, ‘তারা এই বিয়েতে রাজি আছে।’ তখন ই মিতা বেগম সঙ্গে সঙ্গে তার তিন ছেলে এবং ছেলের বউকে ধারার গ্রামের পাশে শহরে পাঠিয়ে দেয়, বিয়ের জন্য কেনাকাটা করে আনতে।

কেনাকাটা সেরে ইভানরা তাদের গাড়ির দিকে আসার সময় হঠাৎ করে লাবিদের ফোন বেজে ওঠে। লাবিদ প্যান্টের পকেট থেকে ফোন বের করে ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে কপাল কুঁচকে যায়। ভাঁজ পাড়া কপালে ফোন রিসিভ করে বলল,

‘ আসসালামু আলাইকুম, ভাবি। কেমন আছো তুমি?’

লামিয়া খানিকটা অস্থির গলায় বলল,

‘ ওয়ালাইকুম আসসালাম, ভাই। আমি এখন পর্যন্ত ভালো আছি। কিন্তু তোমার ভাইয়ের জ্বালায় মনে হয় না বেশিক্ষণ আমি ভালো থাকতে পারবো।’

লাবিদ জুয়েলর দিকে তাকিয়ে বলল,

‘ কেনো? ভাইয়া আবার কি করেছে তোমাকে?’

লামিয়া ধীর গলায় বলল,

‘ কি করে নি তাই বল? সেই দুপুরের পর থেকে ওকে ফোন দিয়ে যাচ্ছি আমি। প্রথম দিকে তো কয়েকবার ফোন বেজেছে, তারপরে যে ফোন বন্ধ করেছে এখন পর্যন্ত সেই ফোন বন্ধ। তার জন্য যে বাড়িতে কেউ একজন চিন্তা করছে তার কি সে খবর আছে? না জানি কোথায় বসে এখন বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছি। এদিকে তার চিন্তায় প্রাণ আমার ওষ্ঠাগত।’

লাবিদ ফোন হোল্ড করে রেখে জুয়েলের দিকে তাকিয়ে বলল,

‘ ভাইয়া তুই ভাবি কে কিছু বলে আসিস নি? ওদিকে তোর চিন্তায় ভাবির মরমর অবস্থা।’

জুয়েল ফিসফিসিয়ে বলল,

‘ আমাকে কি তোর পাগল মনে হয়। আমি ইভানের জন্য মেয়ে দেখতে এসেছি আর সেই কথা আমি তোর ভাবি কে বলে আসবো? তোর ভাবি তো দিনে দুই বেলা হোমিও ডোজ মত কানের পাশে বসে ঘ্যান ঘ্যান করে আমি কবে আম্মুর কাছে লিমা আর ইভানের এর বিয়ের কথা বলব। আর এই কথা তার কাছে বললে আমার অবস্থা কি হবে তুই বুঝতে পারছিস?’

জুয়েলর কথা শুনে লাবিদ আর ইভান শব্দ করে হাসতে শুরু করে। রুমি সে ঠোঁট চেপে হাসি আটকানোর চেষ্টা করছে। জুয়েল লাবিদের দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে বলল,

‘ আমাকে নিয়ে পড়ে খিল্লি উড়ায়, আগে ফোনে তোর ভাবি কে সামলা।’

লাবিদ হাসি থামানোর চেষ্টা করে ফোন কানের কাছে নিয়ে বলল,

‘ ভাবি তুমি একদম চিন্তা করো না ভাইয়া আমার সাথেই আছে। আসলে আমরা একটা কাজের জন্য শহরের বাইরের দিকে এসেছি। আর ভাইয়ার ফোনে চার্জ না থাকায় ভাইয়ের ফোন বন্ধ হয়ে গেছে। তুমি চিন্তা করো না আমি ভাইয়া কে বলে দিবো, সে ফ্রি হয়ে না হয় আমার ফোন থেকে তোমাকে ফোন করে নিবে।’

লামিয়া ছোট নিঃশ্বাস ফেলে বলল,

‘ ও যে তোমার সাথে আছে তা আমাকে একবার ফোন করে জানিয়ে দিলেই তো হতো। তাহলে তো আর আমি এত চিন্তা করতাম না। ঠিক আছে ওর কাজের শেষ হলে আমাকে তাড়াতাড়ি ফোন দিতে বল। রাখছি এখন আমি।’

লাবিদ ফোন রেখে বড় একটা নিঃশ্বাস ফেলে। জুয়েল ইভানের দিকে তাকিয়ে কর্কশ গলায় বলল,

‘ তোর জন্য আমার যত ঝামেলা পোহাতে হয়। কি দরকার ছিল তোকে এত হ্যান্ডসাম হওয়ার? কি দরকার ছিল তোকে লেখাপড়া এত ভালো হওয়ার? একটু তো খারাপ হতে পারি! তাহলে তো আর আমাকে প্রতিদিন দুই বেলা করে হোমিও ডোজ নিতে হতো না। না জানি তোর বিয়ের কথা শুনে আমার ওপর দিয়ে কত নম্বর সিডর, আইলা, ঘূর্ণিঝড়, টর্নেডো, সাইক্লোন, ভূমিকম্প যায়।’

রুমি এতক্ষণ ঠোঁটে চেপে হাসলেও জুয়েলর এমন কথা শুনে শব্দ করে হেসে দেয়। রুমির হাসির সাথ দিয়ে লাবিদ ও হাসতে শুরু করে। আর ইভান? সে তো অ্যাটিটিউড নিয়ে চোখে সানগ্লাস পড়ে, হাত দিয়ে চুল গুলো ঠিক করতে করতে বলল,

‘ মাই ডিয়ার বিগ ব্রো, তোমারে শালিকা যদি আমার অ্যাটিটিউড দেখে ক্রাশ খায় সেখানে দোষ নিশ্চয়ই আমার নয়। যে আমার উপর ক্রাশ খেয়েছে দোষ টা তার। সে কেনো ক্রাশ খাবে আমার উপরে? আমি কি একবারও তার কাছে যেচে গিয়ে বলেছি, এই যে হ্যালো, তুমি আমার উপরে ক্রাশ খাও। আমি এখন একদম ফ্রি আছি। বলিনি তো তাই না? তাই আমাকে খামাকা দোষ না দিয়ে যে আমার উপরে ক্রাশ খেয়েছে তাকে গিয়ে দোষ দাও।’

জুয়েল ইভানের কথা শুনে ওর দিকে বোকার মত তাকিয়ে থাকে। এই ছেলেটার সঙ্গে ওরা দুই ভাই কেউ কখনো কথা দিয়ে পারেনা। এই ছেলেটা ওদের দুই ভাইয়ের থেকে বড় নাকি এই ছেলেটা বড়, এ নিয়ে মাঝে মাঝে কনফিউজ হয়ে যায় লাবিদ আর জুয়েল। ইভানের কথা শুনে রুমির হাসতে হাসতে পেটে ব্যথা হয়ে গেছে। রুমি পেটে হাত দিয়ে হাসতে হাসতে বলল,

‘ ভাই তুই এখন আর কিছু বলিস না প্লীজ। তোর কথা শুনে আমাদের হাসতে হাসতে প্রাণ ওষ্ঠাগত। এখন চুপচাপ গাড়িতে উঠে বসে না হলে কিন্তু আমি হাত পা ছড়িয়ে এখনই রাস্তায় বসে হাসতে শুরু করব। ওদিকে যে তোর বিয়ের সময় এগিয়ে আসছে সেদিকে কোন খেয়াল আছে তোর। রাত দশটার আগেই আমাদের মেয়ের বাড়িতে পৌঁছাতে হবে। আসার সময় আম্মু বারবার করে বলে দিয়েছে রাত দশটার সময় কিন্তু কাজী বাড়িতে এসে যাবে।’

জুয়েল রুমির কথায় সম্মতি জানিয়ে বলল,

‘ রুমি একদম ঠিক কথা বলেছে। এখনই রাত আটটার টার বেশি বাজে। রাতে গ্রামের রাস্তা দিয়ে পৌঁছাতে না জানি কত সময় লাগবে। যে আঁকাবাঁকা পথে রে বাবা। আমার সাথে না হয় ঝগড়া পরে করিস এখন গাড়িতে উঠ। নে নে এবার সবাই গাড়িতে উঠে বস।’

জুয়েলর কথা মত একে একে সবাই গাড়িতে উঠে বসে। জুয়েল গাড়ি ড্রাইভ করছে।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here