অদ্ভুত প্রেমবিলাস পর্ব-৩০

0
1070

#অদ্ভুত_প্রেমবিলাস
#লেখিকাঃ সারজীন ইসলাম

|পর্ব-৩০|

রাত যত বাড়ছে বাড়িতে মানুষের আনাগোনা ততো কমছে। ধারা আর ইভান কে ওদের নতুন জীবনের জন্য শুভেচ্ছা জানিয়ে একে একে সবাই বাড়ির পথ ধরেছে। খাওয়া দাওয়া শেষ করতে করতে রাত সাড়ে বারোটার টার বেশী বেজে গেছে। প্রতিবেশীরা খাওয়া-দাওয়া শেষ করে চলে গেছে কিন্তু ধারার আব্বাজানের বন্ধু এবং গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা ইভান আর ধারার আব্বাজানের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে একটু আগে চলে গেছে। মিতা বেগম আর তার বড় ছেলে জুয়েল শাহেদা বানুদের সাথে তাদের বাড়িতে চলে গেছে। তার মেজ ছেলে এবং মেজ ছেলের বউ কে রেখে গেছে ধারা দের বাড়িতে ইভানের সাথে। ধারার আম্মা অনেক চেষ্টা করেছিল মিতা বেগম আর তার বড় ছেলে যেনো আজকের রাতটা তাদের বাড়িতে কাঁটায়। কিন্তু মিতা বেগম তাদের স্পষ্ট ভাবে না করে দিয়েছে। তিনি ইভান কেও সাথে করে নিয়ে যেতে চাইছিলেন কিন্তু ধারার দাদি আম্মার কথায় ইভান, লাবিদ আর রুমিকে এখানে রেখে যাচ্ছেন তিনি। একেতো হঠাৎ করে বিয়ের আয়োজন আবার নতুন করে তাদের কষ্ট দিতে চাইছে না মিতা বেগম। মিতা বেগম যাওয়ার আগে ধারার আব্বাজান কে বলে গেছে, কাল বিকেলে সে শহরে ফিরছে, সাথে তার বড় দুই ছেলে এবং মেজ ছেলের বউ ও ফিরছে। পরশুদিন ধারাদের সপরিবারে মিতা বেগমের বাড়িতে নিমন্ত্রণ করছেন তিনি। ইভান কালকে দিনটা এখানে থাকবে। পরশুদিন ইভান ধারার সপরিবার কে সাথে নিয়ে ইভানদের বাড়ির উদ্দেশ্যে শহরে রওনা দিবে। একথা বলেই মিতা বেগম তার বড় ছেলের সাথে শাহেদা বানুর বাড়ির পথ ধরে।

রাত দেড়টা বাজে বাজে অবস্থা। এমন শীতের রাতে খোলা আকাশের নিচে উঠানে চেয়ারে বসে গল্প করছে ইভান, লাবিদ, অভি আর হাবিব। সম্রাটের ব্যস্ততা এখনো শেষ হয়নি, সে তার চাচা জান আর আব্বাজানের সাথে বসে ধারার বিয়ে নিয়ে আলোচনা করছে। জোনাকি আর রুমি তারা ধারার সাথে আছে। ধারার আম্মা, চাচি জান, আরো পাশের বাড়ির কয়েকজন মহিলার মিলে এঁটো থালা বাসন পরিষ্কার করে নিচ্ছে। জোনাকি অবশ্য তাদের সাহায্য করতে চেয়েছিল কাজে কিন্তু ধারার চাচি জান জোনাকি কে ধারার কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে।

কিছুক্ষণ আগে ফোন ওপেন করেছে জুয়েল। লামিয়া কে এই মুহূর্তে ফোন দেবে কিনা এসব ভাবতে ভাবতেই তার সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। যদি কোনো ভাবে জানতে পারে ইভানের বিয়ে হয়ে গেছে, আর সেই বিয়েতে জুয়েল সাক্ষী হিসেবে ছিল তাহলে আর দেখতে হবে না। এসব ভেবে জুয়েলর বুকের ধুকপুকুনি বেড়ে যায়। তাও মনে সাহস যুগিয়ে লামিয়ার নাম্বারে ফোন করে। প্রথমবার রিং হতে হতে কেটে যায়। লামিয়া কি ঘুমিয়ে পড়েছ? উঁহু ও তো এত তাড়াতাড়ি ঘুমায় না কখনো। জুয়েল আবার ফোন করে লামিয়া কে। এইবার ফোন রিসিভ করে লামিয়া। ফোনের ওপাশ থেকে লামিয়া খানিকটা ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলল,

‘ এতক্ষণে তোমার আমাকে ফোন করার কথা মনে পরলো? কি দরকার ছিল এখন ফোন করার? একেবারে না হয় কাল সকালেই ফোন করতে।’

জুয়েল মিনমিন করে বলল,

‘ লামু আমি সরি। আমি কাজে আটকে গিয়েছিলাম। না হলে আমি তোমার ফোন অবশ্যই রিসিভ করতাম।’

লামিয়া ছোট নিঃশ্বাস ফেলে বলল,

‘ তা কি দরকার ছিল এখন আমাকে ফোন করার। তুমি তোমার কাজ নিয়েই থাকো। আর আমি পাগলের মত এতক্ষণ তোমার জন্য চিন্তা করছি।’

জুয়েল ছোট করে বলল,

‘ সরি লামু।’

লামিয়া চুপ করে থাকে। ভালোবাসে ভিশন মানুষটাকে। কিছুতেই চোখের আড়াল হতে দিতে চায় না। এই মানুষটার সঙ্গে একা সারাক্ষণ থাকার জন্য শ্বশুরবাড়ি থেকে আলাদা হয়েছে লামিয়া। লামিয়া মুখ খুলে বলল,

‘ কাজ কি শেষ হয়েছে? নাকি এখনো বাকি আছে? কবে ফিরবে তুমি?’

জুয়েল মৃদু স্বরে বলল,

‘ কাজ প্রায় শেষ। কাল বিকালে রওনা দিব আমরা। চিন্তা করো না এবার শুয়ে পড়ো তুমি। বেশি রাত জাগার দরকার নেই।’

লামিয়া ছোট করে বলল,

‘ ঠিক আছে, তুমিও শুয়ে পড়ো এখন। না হলে তোমার শরীর খারাপ করবে।’

লামিয়া ফোন কাটলে। জুয়েল ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে ছোট্ট স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। আপাতত সামলানো গেছে লামিয়া কে। না জানি ইভানের বিয়ের কথা শুনে কী করে, এসব ভেবে জুয়েলের মাথা খারাপ হয়ে যাবার জোগাড়।

গল্পের আসর জমে উঠেছে। হাসি ঠাট্টায় মুখরিত পরিবেশ। ইভান শুধু সবার কথার সাথে হ্যাঁ, হুম, না করছে। তার মন যে এখন আড্ডার আসরে নেই। তার মনে পড়ে আছে ধারার ঘরে। কখন সে দেখতে পাবে তার প্রিয়সি কে দুচোখ ভরে। তার প্রিয়তমার চোখের গভীরতা কখন সে উপলব্ধি করবে। সবার চোখের আড়ালে ধারার ঘরের দরজার দিকে আড়চোখে কয়েকবার তাকিয়েছে। কিন্তু দরজা লাগানো পর্দাটা মৃদু বাতাসে উড়া ছাড়া আর কিছু চোখে পড়েনি তার। কিছুক্ষণ আগে ধারার দাদি আম্মা আর চাচি জান কে ধারার ঘরে প্রবেশ করতে দেখছে। এখনো তারা বেরোয়নি ধারার ঘর থেকে। ইভান বসে থাকা অবস্থায় হাঁসফাঁস করছে। ঐতো তারা বের হচ্ছে ধারার ঘর থেকে। ইভান আড়চোখে তাকিয়ে সোজা হয়ে বসে। তাদের পিছন পিছন রুমি ভাবি আর ধারার ভাবির ও বের হচ্ছে ঘর থেকে। দুই ভাবি এসে ওদের সামনে দাঁড়ায়। জোনাকি ভাবি অভি আর হাবিবর দিকে তাকিয়ে বলল,

‘ এই যে আমার দুই দেওর, অনেক রাত হয়েছে তো এবার আপনারা আপনাদের ঘরে যান। কিছুক্ষণ গিয়ে ঘুমিয়ে নিন। সকাল থেকে আবার আপনাদের খাটাখাটনি শুরু হবে।’

দুজনে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ায়। হাবিব লম্বা হাই টেনে বলল,

‘ হ্যাঁ ভাবি, এখন আর না ঘুমালে কাল আর চোখ খুলে তাকাতে পারবো না। এখনই চোখ দুটো জ্বালা করা শুরু করে দিয়েছে। চল অভি শুয়ে পড়ি আমরা দু’জনে। সকালে আবার আমাদের দু’জনকেই বেশি খাটতে হবে।’

অভি ছোট করে বলল,

‘ হ্যাঁ চলো ভাইয়া।’

জোনাকি ওদের ডাক দিয়ে বলল,

‘ এই অভি দাঁড়া, তোরা ভাইয়া কে তোদের সঙ্গে নিয়ে যা। উনাদের থাকার জন্য যে ঘরে ব্যবস্থা করা হয়েছে সেখানে নিয়ে যা।’

রুমি লাবিদের দিকে তাকিয়ে বলল,

‘ তুমি গিয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নাও আমি ইভান কে ধারা ঘরে দিয়ে আসছি।’

লাবিদ আর কিছু না বলে মাথা নাড়িয়ে ক্লান্ত শরীর নিয়ে ওদের সঙ্গে চলে যায়। জোনাকি আর রুমি ইভানের দিকে তাকায়। দুজনের ঠোঁটে দুষ্টামির হাসি। তা দেখে ইভান মাথা নিচু করে নেয়। জোনাকি দুষ্টুমি করে বলল,

‘ ভাবি আমার ননদের বর টা লজ্জা পাচ্ছে।’

রুমি মুখ বাঁকা করে বলল,

‘ লজ্জা না ছাই। ও মতো নির্লজ্জ আর একটাও নেই। এরা তিন ভাই ই নির্লজ্জ ডিগ্রী প্রাপ্ত।’

রুমির কথা শুনে জোনাকি হেসে দেয়। হাসি থামিয়ে মুখ কালো করে বলল,

‘ ইভান ভাই তোমার সাথে আমার কিছু কথা ছিল। তুমি আমার থেকে বয়সে বড় কিন্তু আমার থেকে সম্পর্কে ছোট তাই তোমাকে তুমি বলে সম্মোধন করেছি। তাই কিছু মনে করো না।’

ইভান তাড়াতাড়ি করে বলল,

‘ আরে না, না ভাবি তুমি আমাকে, তুমি করে বলতে পারো সমস্যা নেই। বলো তুমি আমাকে কী বলবে।’

রুমি ওদের দিকে তাকিয়ে বলল,

‘ আচ্ছা তোমরা কথা বলো, আমি না হয় ওদিক থেকে ঘুরে আসি।’

জোনাকি মৃদু স্বরে বলল,

‘ তার দরকার নেই ভাবি, তুমি থাকতে পারো আমাদের কথার মাঝে। এসব কথা তোমারও জানার দরকার আছে।’

জোনাকির কথা শুনে ইভান আর রুমি তার দিকে তাকায়। কী এমন কথা বলবে জোনাকি ভাবি তাদের?

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here