হৃদ_মাঝারে_তুমি,০৫,০৬

0
637

#হৃদ_মাঝারে_তুমি,০৫,০৬
#লেখকঃ- Tamim Ahmed
#পর্বঃ- ৫
,,
,,
-“রুহি তুই ফারহান ভাইয়াকে দেখলেই এমন উদ্ভুটে আচরণ করিস কেন বলতো?” আরশির রুহির দিকে তাকিয়ে বললো কথাটা।

-“আমি আবার কবে উনার সাথে উদ্ভুটে আচরণ করলাম?” খানিকটা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল রুহি।

-“এই যে তুই একটু আগে উনাকে হুট করেই কফি খাওয়ার কথা বলে উঠলি, এটা কি উদ্ভুটে আচরণের মধ্যে পরে না?”

-“না পরে না, কারণ কোনো অপরিচিত ছেলেকে কফি খাওয়ার কথা বললে সেটা উদ্ভুটে আচরণের মধ্যে পরত কিন্তু ফারহান ভাইয়াকে তো আমি চিনিই, উনি তো আর অপরিচিত কেউ না।”

-“তাই বলে কি তুই…”

-“এই থাম তো, আগে আমায় একটা প্রশ্নের উত্তর দে। তুই তখন আমাকে ওখান থেকে ওইভাবে জোরাজুরি করে নিয়ে আসলি কেন বলতো? তুই যদি একবার আমার সাথে এক হয়ে উনাকে কফি খাওয়ার জন্য বলতি তাহলে কি উনি আমাদের কথা ফেলতে পারতেন?”

-“আরে উনার তখন মন মেজাজ ভালো ছিল না, যেকোনো সময় তোকে চ*ড় মে*রে বসতেন তাইতো তোকে ওখান থেকে জোরাজুরি করে নিয়ে আসলাম।”

-“তুই কীভাবে বুঝলি যে তখন উনার মন-মেজাজ ভালো ছিল না?”

-“আরে উনি তখন আমায় ইশারায় বুঝিয়ে ছিলেন আমি যেন তোকে নিয়ে এইখান থেকে চলে যাই।”

-“এইতো কি সুন্দর একটা মিথ্যা বলে ফেললি। আমিও তো তখন সেখানে উপস্থিত ছিলাম, কই আমি তো উনার চেহারায় কোনো বিরক্তির ছাপ দেখতে পেলাম না। দূর তোর জন্য আজ আমার প্লেনটাই নষ্ট হয়ে গেল।” মুখ গোমড়া করে।

-“প্লেন! কীসের প্লেন?” আরশি ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করল কথাটা।

-“না মানে ইয়ে মানে ভেবেছিলাম আমরা তিনজন মিলে আজ একটা কফিশপে গিয়ে কফি খাব কিন্তু সেটা তো আর হলো না। এটাই আরকি।” কিছুটা আমতা-আমতা করে বললো কথাটা।

-“ওহ আচ্ছা।”

-“আচ্ছা আরশি, আমি যদি কখনো তোর থেকে প্রেমের বিষয়ে হেল্প চাই তাহলে তুই আমায় হেল্প করবি?”

-“হঠাৎ এমন প্রশ্ন কেন?”

-“আরে বলনা।”

-“দেখ তুই তো জানিস’ই আমি এইসব প্রেম টেমের বিষয়ে অতটা পাকা নয়। কিন্তু তুই যদি কখনো আমার থেকে প্রেমের বিষয়ে হেল্প চাস তাহলে ফ্রেন্ড হিসেবে তোকে নিজের সাধ্যমতো হেল্প করার চেষ্টা করব।”

-“বাহ্ তাহলে তো হয়েই গেল।”

-“তাই না? তা কে উনি যার সাথে আপনার ইটিস পিটিস চলছে?”

-“আরে তেমন কেউ এখনো হয়নি। হলে তো তোকে সবার আগে জানাতাম’ই।”

-“আছে হয়তো কেউ একজন কিন্তু আমায় বলছিস না।”

-“আরে নাহ এমন কেউ নেই।”

-“ঠিক আছে দেখা যাবে।”

-“আচ্ছা দেখিস, আমি তাহলে এখন যাই আমার বাসার রাস্তায় এসে পরেছি।” বলেই রুহি রিক্সা থেকে নেমে পরল।

রুহি রিক্সা থেকে নেমে যাওয়ার পর আরশি রিক্সাওয়ালকে ডান দিকে মোড় নিতে বললো। রিক্সাওয়ালাও তার কথানুযায়ী ডান দিকে মোড় নিল।

.
ফারহান বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে দুপুরের খাবার খেতে বসেছে, এমন সময় রাশেদ আহমেদ (ফারহানের বাবা) ফারহানকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন, “তোমার পড়াশোনা কেমন চলছে?”

-“ভালোই।” খেতে খেতে বললো ফারহান।

-“তা পড়াশোনা শেষ করে কি করবে ঠিক করেছ কিছু?”

-“এসব নিয়ে তেমন কিছু ভাবা হয়নি, আর পড়াশোনা শেষ হতে তো এখনো অনেক সময় বাকি। তাহলে এখন এইসব নিয়ে ভাবতে যাব কেন?”

-“না বলছিলাম যে তোমার যদি কোনো প্লেন থাকে তাহলে পড়াশোনা করে সেই অনুযায়ী কাজ কর। আর নাহলে এখন থেকে প্রতিদিন কিছু সময় আমার অফিসে টাইম দাও তারপর পড়াশোনা শেষ হলে অফিসের সব দায়িত্ব তোমার উপর দিয়ে আমি একেবারে রেস্ট নিয়ে নিলাম। বয়স তো আমার কম হলো না, এই বয়সে এত বড় অফিস কীভাবে সামলাই বল।”

-“আচ্ছা আমি একটু ভেবে দেখি কি করবো।” কিছুক্ষণ ভেবে কথাটা বললো ফারহান।

-“আচ্ছা ঠিক আছে, ভেবে দেখ কি করবা।”

তারপর ফারহান নিজের খাবার শেষ করে উঠে রুমে চলে গেল।

দু’দিন পর…

আরশিদের সকল বান্ধবীরা মিলে ক্লাসে বসে আড্ডা দিচ্ছে এমন সময় তাদের এক বান্ধবী রিমি বললো, “আচ্ছা আরশি ভার্সিটির ফোর্থ ইয়ারের ফারহান ভাই তোর কি লাগেন?”

-“কেন তুই জানিস না? ওহ তুই তো আমাদের ফ্রেন্ড সার্কেলে নতুন এসেছিস তাই এইসব জানিস না। উনি আমার ফুফাতো ভাই হোন।” আরশি বললো।

-“তুই হঠাৎ ফারহান ভাইয়ার বিষয়ে জানতে চাচ্ছিস কেন রিমি?” রুহি বললো কথাটা।

-“আরে সেদিন দেখলাম উনি তোর আর আরশির সাথে ভার্সিটি গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছেন তাই একটু জানার আগ্রহ হলো যে উনি আরশির কিছু হোন নাকি। কেন’না উনাকে আরশির সাথেই একটু ফ্রিলি কথা বলতে দেখলাম।”

-“ওহ আচ্ছা।”

-“এই উনার কি কোনো গার্লফ্রেন্ড আছে নাকি রে আরশি?”

-“কেন তা জেনে তুই কি করবি?” পাশ থেকে রুহি ভ্রু কুচকে বললো কথাটা।

-“এই আমি তোকে কিছু জিজ্ঞেস করছি নাকি যে তুই বার বার মাঝখান দিয়ে কথা বলছিস?”

-“আমায় জিজ্ঞেস না করলে কি আমি মাঝখান দিয়ে কথা বলতে পারবো না? তা ছাড়া আরশিও এখন এই কথাটাই বলতো, তাইনা আরশি?”

-“উনার গার্লফ্রেন্ড আছে কি নেই তা আমি কীভাবে জানব? আর এসব জেনে তুই কি করবি?” আরশি বললো কথাগুলো।

-“আরে এমনিই জিজ্ঞেস করলাম আরকি।”

দু’দিন হলো রিমি মেয়েটা তাদের ফ্রেন্ড সার্কেলে এসেছে। এই রিমি সেই মেয়ে যাকে কিছুদিন আগে ফাস্ট ইয়ারের স্টুডেন্টরা রেগিং করেছিল। সেদিন ফারহানের সাথে আরশি আর রুহিকে কথা বলতে দেখে রিমি ভাবলো এদের কেউ হয়তো ফারহানের পরিচিত হবে। তাই সে পরেরদিন আরশিদের সাথে বন্ধুত্ব করে। আরশিদের বান্ধবীরা তাকে তাদের ফ্রেন্ড সার্কেলে সাদরে গ্রহণ করে নেয়। এই দু’দিনের মধ্যে রিমি লক্ষ্য করেছে ফারহান প্রায়ই আরশির সাথে টুকটাক কথা বলে, তাকে কেন্টিনে নিয়ে কিছু খাওয়ার কথা বলে আবার ভার্সিটি শেষে তাকে রিক্সায় উঠিয়ে দেয়। এসব দেখে রিমি ভাবলো হয়তো আরশি ফারহানের আত্নীয় হয় তাই সে আজ সবকিছু ক্লিয়ার করে বোঝার জন্য আরশিকে ফারহানের সম্পর্কে এই সেই জিজ্ঞেস করতে লাগলো। কিন্তু রিমি ফারহানের গার্লফ্রেন্ড আছে কি-না জিজ্ঞেস করার পর থেকে রুহির কেন জানি রিমিকে ভালো লাগছে। রুহি একটু পর পর-ই রিমির দিকে ত্যা*ড়া চোখে তাকাচ্ছে আবার কোনো একটা বিষয় নিয়ে ভেবে চলছে।

.
সেদিন রাতেরবেলা ফারহান ডাইনিং টেবিলে বসে খাবার খাচ্ছিল। পাশে তার আম্মু-আব্বুও বসে বসে খাবার খাচ্ছেন। হঠাৎ ফারহানের মনে হলো তার আব্বুকে তার একটা বিষয়ে জানানোর ছিল। সে তৎক্ষনাৎ তার আব্বুকে উদ্দেশ্য করে বললো, “আব্বু আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি। পড়াশোনা শেষ করে আমি তোমার অফিসে যোগ দিব।”

আচমকা ফারহানের এমন কথা শুনে রাশেদ আহমেদ কিছুটা অবাক হলেও বেশ খুশি হলেন। মুখে হাসির রেখা ফুটিয়ে তুলে বললেন, “এই সিদ্ধান্তটা ভেবে চিন্তে নিয়েছ তো?”

-“হ্যাঁ আব্বু।”

-“আচ্ছা তাহলে তুমি এখন থেকেই মাঝেমধ্যে আমার অফিসে গিয়ে একটু টাইম দিও তাহলে তোমার পড়াশোনা শেষ হওয়ার আগেই অফিসের সব কাজ-কর্ম বুঝে যাবা তখন আর আলাদাভাবে সময় নষ্ট করতে হবে না। পড়াশোনা শেষ করেই তুমি অফিসে ঢুকে যাবা আর আমিও তখন রেস্ট নিয়ে নিব।”

-“আচ্ছা আব্বু।”

.
পরেরদিন আরশি আর রুহি হেঁটে হেঁটে ভার্সিটিতে আসছিল। মাঝ রাস্তায় আসতেই হঠাৎ রুহি বলে উঠলো, “আচ্ছা আরশি তুই আমার হয়ে একজনকে প্রপোজ করতে পারবি? মানে আমি একজনকে ভালোবাসি, এখন তুই কি আমার ভালোবাসার কথাটা একজন মানুষকে জানাতে পারবি?”

আচমকা রুহির থেকে এমন কথা শুনে আরশি বেশ অবাক হলো। রুহি একজনকে ভালোবাসে আর এটা সে জানেই না। আবার এখন বলছে তার ভালোবাসাটার কথাটা একজনকে জানাতে হবে। আরশি রুহির কথার আগাগোড়া বুঝতে না পেরে বললো, “মানে কি? তুই একজনকে ভালোবাসিস আর বলছিস আমি তোর হয়ে ওই মানুষটাকে তোর ভালোবাসার কথা জানাব। তোর কথার আগাগোড়া তো কিছুই বুঝলাম না।”

-“আরে আমি একজনকে মনে মনে পছন্দ করি কিন্ত সেটা কখনো তাকে বলা হয়নি। কিন্তু এখন তাকে এই কথাটা জানাতেই হবে নাহলে যেকোনো সময় ওই মানুষটাকে কেউ একজন নিজের প্রেমের ফাঁদে ফেলে দিতে পারে।”

-“তাই নাকি? তা সেই মানুষটা কে শুনি?”

-“ইয়ে মানে আসলে উনি হলেন ফারহান ভাইয়া।”

-“কিহহ!”
.
.
Loading…….

#হৃদ_মাঝারে_তুমি
#লেখকঃ- Tamim Ahmed
#পর্বঃ- ৬
,,
,,
-“রুহি তুই কি পাগল হয়ে গেছিস? তুই ফারহান ভাইয়াকে ভালোবাসিস মানে! কি বলছিস তুই এইসব?”

-“আমি যা বলছি ঠিকই বলছি। আর ফারহান ভাইয়া কোনো বিবাহিত ছেলে নাকি যে উনাকে ভালোবাসা যাবে না।”

-“সেটা না, কিন্তু তুই…”

-“দেখ আরশি, আমি ফারহান ভাইয়াকে অনেক আগে থেকেই পছন্দ করি। কিন্তু সেটা কখনো তোকে বা আমাদের কোনো ফ্রেন্ডদের বলা হয়নি। ভেবেছিলাম আমি নিজেই ফারহান ভাইয়াকে ভাবভঙ্গির মাধ্যমে বুঝিয়ে দিব যে আমি উনাকে ভালোবাসি। কিন্তু আমি যতবারই উনার ক্লোজ হতে চেয়েছি উনি ততবারই আমাকে দূরে সরিয়ে দিয়েছেন। তাই এখন না পেরে আমায় তোর আশ্রয় নিতে হলো। আমি জানি এই কাজটা তুই ছাড়া আর কেউ করতে পারবে না। প্লিজ দোস্ত আমার হয়ে তুই ফারহান ভাইয়াকে আমার ভালোবাসার কথাটা বল না।” অনেকটা মিনতির স্বরে কথাগুলো বললো রুহি।

-“বুঝলাম তুই উনাক ভালোবাসিস। কিন্তু তোর হয়ে আমি কেন তোর ভালোবাসার কথাটা উনাকে বলবো? তুই নিজে গিয়ে উনাকে বল এসব কথা।”

-“আমি বলতে পারলে কি আর তোকে এইসব বলতে বলতাম? উনি যেই পরিমাণ রাগী স্বভাবের মানুষ, বলা তো যায়না আমার কথাগুলো শুনে উনি যদি আমার উপর ক্ষেপে গিয়ে দু-চারটা চ*ড় থাপ্পড় আমার গালে বসিয়ে দেন। তখন তো মান-সম্মান আর কিছুই থাকবে না।”

-“তুই ইদানীং উনার সাথে যা করছিস তাতে উনি এমনিতেই তোর উপর বিরক্ত। এখন আমি যদি তোর হয়ে উনাকে গিয়ে তোর ভালোবাসার কথাটা উনাকে বলি তাহলে উনি ক্ষেপে গিয়ে উলটা আমাকে চ*ড় থাপ্পড় মে*রে বসবেন। না বাবা আমি এই কাজ করতে পারবো না। তোর কাজ তুই নিজেই কর। আর উনি তোর থেকে বয়সে কত বড় তুই জানিস? তারপরও তুই কীভাবে উনাকে প্রপোজ করার কথা ভাবছিস?”

-“আরে কোথায় বড়, বড়জোর ৩-৪ বছরের বড় হবেন। আর বর্তমানে একটা মেয়ের বিয়ের জন্য তো ৪-৫ বছরের বড় বয়সী ছেলেই খোঁজা হয়। দোস্ত প্লিজ তুই আমাকে হেল্প কর। তুই তো উনার কাজিন হোস, তুই যদি উনাকে গিয়ে এইসব কথা বলিস তাহলে উনি তোকে কেন মা*রবেন বল?”

-“না আমি তোকে কোনো হেল্প করতে পারবো না। তুই নিজের কাজ নিজেই কর।”

-“আরে তুই এমন করছিস কেন? তুই তো উনার নিজেরই মানুষ, তাহলে উনি কেন তোকে মা*রবেন? শুন আমি তোকে বলি তুই কীভাবে…”

-“তোর কিছু বলা লাগবে না, তুই কিছু বললেও আমি শুনবো না। আমি তোর হয়ে উনাকে কিছু বলতে পারবো না, এটাই আমার শেষ কথা।” বলেই আরশি জোরে জোরে পা চালাতে লাগলো।

-“আরে আরশি আমার কথাটা তো একবার শুন না।” বলেই রুহি আরশির পিছনে পিছনে এগুতে লাগলো।

.
-“কিরে শুভ, আজ রনি ভার্সিটিতে আসেনি?” ফারহান বললো কথাটা।

-“আসবে কীভাবে, ওর তো গতকাল মিমের সাথে ব্রেকাপ হয়েছে। সেই কষ্টে ছেলেটা মনে হয় সারারাত ভর কেঁদেছে। হায়রে লাভার বয়।” বলেই শুভ ফিক করে হেসে উঠলো।

-“বলিস কি! কীভাবে ব্রেকাপ হলো?”

-“কি জানি একটা বিষয় নিয়ে দু’জনের মধ্যে ঝগড়া লেগেছে। রাত ১২ টার সময় রনি আমায় কল দিয়ে তাদের ব্রেকাপ হওয়ার কথাটা বলেছিল। কারণটা কি সেটা ক্লিয়ার করে বলেনি।”

-“এর জন্যই এইসব প্রেম ভালোবাসায় জড়াতে নেই। দু’দিন ভালো কা*টবে তো তৃতীয়দিন একটা না একটা বিষয় নিয়ে ঝগড়া লেগে যাবে। তা ছাড়া সারাক্ষণ একে অন্যের প্যারা তো আছেই।”

-“তা অবশ্য ঠিক বলেছিস। কিন্তু তোকে তো ভার্সিটির কম মেয়েরা প্রপোজ করেনি। তুই আজ অবধি কারও প্রপোজ একচেপ্ট করিস নি কেন বলতো? মেয়ে প্যারা দিবে এর জন্য?”

-“আমায় প্যারা দিতে আসলে একদিনেই চ*ড়িয়ে ঠিক করে ফেলবো। তবে এই কারণে আমি কারও প্রপোজাল একচেপ্ট করিনি এমনটা নয়। এখন অবধি যে কয়টা মেয়ে আমায় প্রপোজ করেছে তাদের প্রত্যেকেই আমার চেহারা দেখে, ভার্সিটিতে আমার ক্ষমতা আছে, বাপের অনেক টাকা আছে এইসব বিষয় দেখেই তারা আমায় প্রপোজ করেছে। মূলত ওরা নিজেদের স্বার্থ আদায়ের জন্য আমায় ব্যবহার করতে চেয়েছিল।”

-“তুই কীভাবে এতটা শিওর হয়ে এই কথাগুলো বলছিস?”

-“যারা আজ অবধি প্রপোজ করেছে তাদের প্রত্যেকেরই ডিটেইলস জানা আছে আমার।”

-“কীভাবে?”

-“সেটা অন্য একদিন বলবো নে, এখন আর সময় নেই বেল দিয়ে দিবে ক্লাসে যাওয়া যাক চল।”

তারপর ফারহান তার বন্ধুদেরকে নিয়ে ক্লাসে চলে গেল।

.
ভার্সিটি ছুটির পর আরশি আর রুহি ভার্সিটি থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে ফারহানের জন্য অপেক্ষা করছে। উদ্দেশ্যে হলো ফারহানকে প্রপোজ করার। প্রপোজ করবে আরশি তাও রুহির বদলে। টিফিন পিরিয়ডে রুহি অনেক রিকুয়েস্ট করে আরশির হাতে পায়ে ধরে তাকে এই কাজটা করার জন্য রাজি করিয়েছে। আরশিও রুহির জোরাজুরিতে রাজি না হয়ে পারলো না। কিছুক্ষণ পর ফারহানকে ভার্সিটি থেকে বের হতে দেখে রুহি আরশিকে ফারহানের কাছে যেতে বলে নিজে একটা গাছের আড়ালে গিয়ে লুকিয়ে পরল। আরশিও আস্তে আস্তে পা চালিয়ে ফারহানের কাছে যেতে লাগলো। যখন ফারহানের বন্ধুরা তার থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল তখনই আরশি ফারহানের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। আরশিকে দেখেই ফারহান বলে উঠলো,

-“কিরে তুই এইখানে! বাসায় যাসনি?”

-“ভাইয়া তোমাকে কিছু বলার ছিল।”

-“কি বলবি?”

-“আগে বল আমার কথা শুনে রাগ করবে না তো?”

-“রাগ করবো কেন আজব তো!”

-“তো বল রাগ করবে না।”

-“আচ্ছা ঠিক আছে, রাগ করবো না। এবার বল কি বলবি?”

-“আসলে ভাইয়া রুহি আছে না, সে তোমাকে…” বলেই আরশি থেমে গেল।

-“সে আমাকে কি? ওইদিনের মতো আজকেও কফি খাওয়ার জন্য বলেছে?”

-“আরে না।”

-“তাহলে কি ক্লিয়ার করে বল।”

-“আসলে ভাইয়া সে নাকি তোমাকে ভালোবাসে। কিন্তু ভয়ে এটা বলতে পারছে না। তাই আমার দ্বারা তোমাকে ওর ভালোবাসার কথাটা জানালো। ভাইয়া ও অনেক ভালো মেয়ে। তুমি রাজি হয়ে যাও প্লিজ।” নিচু কণ্ঠে কথাগুলো বললো আরশি।

আরশির কথাগুলো শুনে ফারহান কিছুটা চমকিত দৃষ্টিতে আরশির দিকে তাকিয়ে রইলো। অতঃপর হুট করেই ফারহানের চেহারা রক্তিম বর্ণ ধারণ করলো। তার পর মূহুর্তেই ফারহান সজোরে আরশির গালে একটা চ*ড় বসিয়ে দিল। আরশি সবে মাত্র মাথাটা তুলে ফারহানের দিকে তাকাতে যাচ্ছিল ওমনি তার গাল বরাবর একটা শক্ত হাতের চ*ড় লাগাতে আরশি কিছুটা দূরে গিয়ে ছিটকে পরল। ওদিকে দূর থেকে রুহি যখন দেখলো ফারহান আরশির গালে চ*ড় বসিয়েছে তখনই রুহি কোনোকিছু না ভেবে অপরদিকে ফিরে দ্রুত পা চালিয়ে হাঁটা শুরু করলো। কেন’না ফারহান যদি তাকে এইখানে দেখে তাহলে বলা যায়না তাকেও একটা বসিয়ে দিতে পারে।

-“অন্যের প্রপোজাল নিজে এসে দিয়েছিস ভালো কথা। কিন্তু রাজি হওয়ার জন্য আমায় এতো মিনতি করছিস কেন?” খানিকটা চিৎকার করে কথাগুলো বললো ফারহান।

আরশি নিশ্চুপ। শুধু মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।

-“কি হলো কথা বলছিস না কেন? আর তোর সেই তার ছ্যা*ড়া বান্ধবী কোথায়?”

ফারহানের কথায় আরশি এবার মাথা তুলে পিছনে ফিরে তাকালো। কিন্তু একি রুহি কোথায়! আরশি এদিক-সেদিক তাকিয়ে রুহিকে খুঁজতে লাগলো কিন্তু কোথাও রুহিকে দেখতে পেল না। রুহি কি তাহলে তাকে বিপদে ফেলে পালিয়েছে? নাকি সে ফারহানকে পছন্দই করে না, শুধু তাকে চ*ড় খাওয়ানোর জন্য এই নাটকটা করেছে। আরশির মাথায় যেন কিছুই ঢুকছে না।

-“পিছনে কাকে খুঁজছিস?” রাগী কণ্ঠে।

-“ভাইয়া রুহি ওই গাছটার পিছনেই দাঁড়িয়ে ছিল বিশ্বাস কর।”

-“কই আমি তো তাকে সেখানে দেখছি না। আরশি তুই কি আমার সাথে ফাজলামি করছিস? সত্যি করে বলতো রুহি কি তোকে এইসব কথা বলেছে নাকি তুই তাকে ফাঁসানোর জন্য…”

-“না ভাইয়া বিশ্বাস কর আমি…”

-“থাম কিছু বলা লাগবে না। কাল ভার্সিটিতে আসলে রুহিকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করে দেখবো। যদি সে বলে এইসব তারই কথা তাহলে তুই বেঁচে যাবি আর নাহয় তোর জন্য কঠিন শাস্তি অপেক্ষা করছে।” কথাগুলো বলেই ফারহান একটা রিক্সা ডেকে সেটায় উঠে বসলো আর আরশিকেও উঠতে বললো।

আরশি প্রথমে রিক্সায় উঠতে চাচ্ছিল না কিন্তু যখন ফারহান তাকে রিক্সায় উঠার জন্য ধমক দিল তখন সে ঠিকই রিক্সায় উঠে বসলো। তারপর ফারহান রিক্সাওয়ালাকে রিক্সা চালাতে বললো।
প্রায় ১০ মিনিট পর রিক্সা এসে আরশিদের বাসার সামনে থামলো। ফারহান আরশিকে রিক্সা থেকে নামতে বললে আরশিও রিক্সা থেকে নেমে পরল। তখন ফারহান আরশিকে উদ্দেশ্য করে বললো,

-“রুহি যদি তোর কথাগুলোর সাথে মত না দেয় তাহলে কিন্তু তোর কপালে দুঃখ আছে বলে দিলাম আরশি। যা এবার বাসায় যা।” কথাগুলো বলে ফারহান রিক্সাওয়ালাকে রিক্সা টান দিতে বললো।

আরশিও কিছুক্ষণ ওইখানে দাঁড়িয়ে থেকে বাসার ভিতরে চলে গেল।
.
.
Loading…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here