হৃদ_মাঝারে_তুমি,০৭,০৮

0
446

#হৃদ_মাঝারে_তুমি,০৭,০৮
#লেখকঃ- Tamim Ahmed
#পর্বঃ- ৭
,,
,,
-“তোমার গালে এটা কীসের দাগ আরশি?”

বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে আরশি সবে খাবার খেতে ডাইনিং টেবিলে বসেছিল। এমন সময় পাশ থেকে আমজাদ হোসেন আরশিকে উদ্দেশ্য করে কথাটা বললেন। আচমকা এমন কথায় আরশি খানিকটা চমকে উঠলো বটে কিন্তু আমজাদ হোসেনের কথার মানেটা বুঝতে পারলো না। তাই আরশি সাথে সাথে আমজাদ হোসেনের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,

-“বুঝলাম না, আমার গালে আবার কীসের দাগ আসবে?”

-“আমি তো স্পষ্ট তোমার গালে কারও হাতের ছাপ দেখতে পাচ্ছি। মনে হচ্ছে তোমায় কেউ চ*ড় মে*রেছে আর তার আঙ্গুলের ছাপ’ই তোমার গালে বসে আছে।”

-“আরে আজব তো আমায় চ*ড় মা*রবে…” কথাটা বলেই আরশি থেমে গেল। চ*ড়ের কথাটা শুনে আরশির একটু আগের ঘটনাটা মনে পরে গেল। ফারহান যে তাকে একটা চ*ড় মে*রেছিল সেটার’ই দাগ হয়তো তার গালে ভেসে উঠেছে।

এদিকে আমজাদ হোসেনের কথা শুনে পাশ থেকে রোজিনা বেগম আরশির গাল দেখে বলে উঠলেন, “আরে সত্যিই তো তোর গালে কারও হাতের ছাপ লেগে আছে। এই তোকে কেউ চ*ড় মে*রেছে নাকি?”

-“কি হলো আরশি, কথা বলছ না কেন?”

আমজাদ হোসেন আর রোজিনা বেগমের কথা শুনে আরশি এবার ভাবনায় পরে গেল তাদেরকে কি বলবে এই নিয়ে। যদি তাদেরকে সত্যিটা বলে দেয় তাহলে তারা হয়তো চ*ড় মা*রার কারণ জানতে চাইবে। যখন সে কারণটা বলবে তখন হয়তো তার আম্মু-আব্বু ফারহানকে বকা-ঝকা না করে উলটা তাকেই বকা-ঝকা শুরু করে দিবেন। তাহলে এখন একটাই অপশন বাকি রয়েছে, মিথ্যা বলা। আরশিও অনেক ভেবে চিন্তে শেষ-মেষ এটাই ঠিক করলো।

-“আসলে আব্বু, ভার্সিটিতে থাকাকালীন গালে একটা মশা বসেছিল। সেই মশাটা মা*রতে গিয়েই হয়তো গালে আঙ্গুলের ছাপ পরে গেছে।”

-“মিথ্যা বলবা না একদম। ভার্সিটিতে মশা আসবে কোথা থেকে? তোমরা কি ঝোপঝাড়ের মধ্যে বসে ক্লাস কর নাকি যে মশা কামড়াবে।”

-“হ্যাঁ আব্বু। না মানে টিফিন পিরিয়ডে আমরা সব ফ্রেন্ডরা ভার্সিটির পিছনের দিকটায় গিয়ে একটু পড়তে বসেছিলাম। সেখানে একটা ঝোপের মধ্যে প্রচুর মশা। সেখানকার মশাই…”

-“এক মিনিট, পড়াশোনা করার জন্য ভার্সিটির পিছনে যাওয়ার কি দরকার? ক্লাস রুমে বসেই তো পড়াশোনা করা যায়। আর বাহিরে গিয়ে যদি পড়ার ইচ্ছাই হয় তাহলে এমন জায়গায় যাওয়ার কি দরকার যেখানে প্রচুর পরিমাণে মশা রয়েছে।”

-“ক্লাসে বসে পড়া গেলে তো পড়তাম’ই। কিন্তু ক্লাসে তো আমাদের মতো অন্যরা পড়ে না। কিছু মানুষ গল্প করে আবার কিছু মানুষ হৈহল্লা করে আড্ডা দেয়। এখন তুমিই বল এমন পরিবেশে বসে কি পড়া যায়? এর জন্যই আমরা ভার্সিটির পিছনের দিকটায় গিয়ে বসেছিলাম। ওইখানের পরিবেশ অনেক শান্ত, তেমন কেউ ওখানে বেশি যায়না।”

-“সবই বুঝলাম, কিন্তু আমার কেন জানি মনে হচ্ছে তুমি আমার কাছে মিথ্যা বলছ।”

-“আজব তো! আমি মিথ্যা বলবো কেন? আমি কি আজ অবধি কখনো তোমার কাছে মিথ্যা বলেছি বল?”

-“আচ্ছা ঠিক আছে, এসব এখন বাদ দাও আর খাবার শেষ কর।”

তারপর আরশি আর কিছু না বলে নিজের খাবার শেষ করে উঠে রুমে চলে আসলো। রুমে এসে আরশি প্রথমে আয়নার সামনে এসে দাঁড়ালো। এরপর নিজের ডান গালটা আয়নার কাছাকাছি নিয়ে গেল। আরশি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে তার ডান গালটায় ফারহানের চার আঙ্গুলের দাগ পরে গেছে।

-“ইশ চ*ড় মে*রে গালে একদম দাগ ফেলে দিয়েছে ব্যাটায়। প্রপোজ কি আমি করেছি যে আমায় চ*ড়টা মারলো? রুহির হয়েই তো আমি প্রপোজটা করেছিলাম। সব দোষ এই রুহিটার। এই রুহির জন্যই আজ আমায় ফারহান ভাইয়ার থেকে চ*ড় খেতে হয়েছে। আমারও অবশ্য ভুল হয়েছে ওর কথায় রাজি হয়ে। যদি আমি ওর কথায় রাজি না হতাম তাহলে আজ আমাকে এই চ*ড়টা খেতে হতো না। এই রুহিটাও কত বড় ফাজিল। আমাকে ওইখানে একা ফেলেই পালিয়ে গেছে। নাহলে তো ভাইয়াকে বোঝাতে পারতাম যে রুহি’ই আমাকে এইসব কথা বলতে বলেছে। ওয়েট রুহিকে একটা কল দেই।” আরশি মনে মনে কথাগুলো ভেবে রুহিকে কল দিতে যাবে সেই মূহুর্তেই আরশির ফোনটা বেজে উঠলো।

আরশি তার ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে রুহি কল করেছে। কোনো কিছু না ভেবে আরশিও সাথে সাথে কলটা রিছিভ করলো।

-“দোস্ত তুই বাসায় গিয়েছিস?” অপর পাশ থেকে রুহি বললো কথাটা।

-“কু*ত্তি তুই আমাকে একা ফেলে কোথায় পালিয়েছিলি তখন? জানিস তোর জন্য ভাইয়া আমায় কত জোরে একটা চ*ড় মে*রেছে। সেই চ*ড়ের কারণে আমার গালে উনার আঙ্গুলের ছাপ অবধি পরে গেছে।” ক্ষুব্ধ গলায় কথাগুলো বললো আরশি।

-“দোস্ত আমি Sorry. আসলে ফারহান ভাইয়া যখন তোকে চ*ড় মে*রেছিলেন তখন আমার মনে হলো আমি উনাকে ভালোবাসি এটা শুনে হয়তো উনি ক্ষেপে গিয়ে আমাকে না পেয়ে তোকে চ*ড় মে*রেছেন। তাই আমি সাথে সাথে ওখান থেকে পালিয়ে যাই। নাহলে বলা তো যায়না ফারহান ভাইয়া যদি আমাকে সেখানে লুকিয়ে থাকতে দেখে আমাকে মা*রার জন্য ধাওয়া করতেন।”

-“এই ভয়ে তুই আমাকে একা ফেলে সেখান থেকে পালিয়ে গেলি! এই আমাদের এতো বছরের বন্ধুত্ব? আমি তো প্রথমে উনাকে এইসব বলতেই চাইনি। কিন্তু তোর রিকুয়েস্ট করাতে না উনাকে গিয়ে এইসব বললাম। আর তুই আমায় এই প্রতিদান দিলি?

-“আরে তুই এমন ইমোশনাল হয়ে কথা বলছিস কেন? আমি…”

-“চুপ থাক কোনো কথা বলবি না। তোর সাথে আমার আর কোনো কথা নেই। শুন তোকে একটা কথা বলে রাখি। আমি ভাইয়াকে বলেছি তুই আমায় এইসব কথা বলতে বলেছিস দেখে আমি তোমাকে এইসব বলেছি। তখন ভাইয়া তোকে চারপাশে কোথাও খুঁজে না পেয়ে আমার কথার বিশ্বাস করেননি। ভাইয়া বলেছেন কাল ভার্সিটিতে আসলে তোকে এই ব্যাপারে জিজ্ঞেস করবেন। যদি তুই আমার কথার সাথে সায় দিস তাহলে ভাইয়া আমায় ছেড়ে দিবেন আর যদি তা না করিস তাহলে ওইদিন থেকে আমার আর তোর বন্ধুত্ব শেষ, মনে রাখিস কথাটা।” একদমে কথাগুলো বলেই আরশি কল কে*টে দিল।

এদিকে আরশির সাথে কথা বলা শেষে রুহি খানিকটা ভাবনায় পরে গেল। তার জন্য আজ আরশি ফারহানের হাতে চ*ড় খেয়েছে। আবার কাল যদি সে ফারহানকে বলে আরশির বলা কথাগুলো মিথ্যা তাহলে যে ফারহান আরশিকে কি করবে তা রুহির জানা নেই। কিন্তু এমনটা হলে আরশি বলেছে তাদের বন্ধুত্বটা ওইদিনই শেষ হয়ে যাবে। আরশির মতো একটা বন্ধু যদি তার জীবন থেকে হারিয়ে যায় তাহলে সেটা রুহির জন্য খুবই কষ্টকর ব্যাপার হবে।
আবার, রুহি যদি ফারহানের কাছে স্বীকার করে আরশির বলা কথাগুলো সত্য তাহলে ফারহান যদি ভার্সিটির সবার সামনে তাকে চ*ড় মে*রে বসে তাহলে রুহির মান-সম্মান বলতে কিছুই থাকবে না। রুহি অনেক্ষণ যাবত ভেবে সিদ্ধান্ত নিল সে কাল ফারহানের কাছে সত্যিটাই বলবে। এতে ফারহান তাকে একটা চ*ড় মা*রলেও তার কিছু আসে যাবে না। কিন্তু শুধু শুধু ফারহানের কাছে মিথ্যা বলে রুহি তার বান্ধবী আরশিকে হারাতে চায়না।

.
পরেরদিন সকালে ফারহান ভার্সিটিতে এসে গেইটের কাছে দাঁড়িয়ে থাকে। দাঁড়িয়ে থাকার উদ্দেশ্য হলো কবে রুহি আসবে আর সে তার সাথে গতকালের বিষয় নিয়ে কথা বলবে। প্রায় ১০ মিনিট পর আরশি আর রুহি ভার্সিটিতে চলে আসলো। ভার্সিটির কাছাকাছি আসতেই রুহি দেখতে পেল ফারহান গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ফারহানকে গেইটের কাছে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রুহির বুকটা ভয়ে কেঁপে উঠলো। হয়তো গতকালের ন্যায় আজকে তার গালেও ফারহান চ*ড় বসাবে। তবুও রুহি নিজেকে স্বাভাবিক রেখে আরশির সাথে সমানতালে হেঁটে ফারহানের সামনে এসে দাঁড়ালো।

-“রুহি একটু ভার্সিটির পিছন দিকটায় আস, তোমার সাথে কিছু কথা আছে।” ফারহান রুহিকে উদ্দেশ্য করে কথাটা বলেই ভার্সিটির ভিতরে চলে গেল।

-“আরশি আমার না একা যেতে খুব ভয় করছে। তুইও চল না আমার সাথে।” রুহি আরশির হাত চেপে ধরে কথাটা বললো।

-“আমার আর চ*ড় খাওয়ার কোনো ইচ্ছা নেই। তা ছাড়া ভাইয়া তোকে ডেকেছেন আমায় না। এখন আমি তোর সাথে যাই আর ভাইয়া গতকালের মতো আজকেও আমার গালে একটা বসিয়ে দেন তা আর হবে না তোকে একাই যেতে হবে যা।”

-“দোস্ত তুই…”

-“তাড়াতাড়ি যা, আমি তোর জন্য সিট রাখবো নে। দেরি করে আসলে কিন্তু পরে সিট পাবি না। আর হে, গতকাল কি বলেছিলাম মাথায় থাকে যেন।” বলেই আরশি হনহন করে ভার্সিটির ভিতরে চলে গেল।

তারপর রুহিও বাধ্য হয়ে একা একাই ভার্সিটির পিছনের দিকটায় চলে আসলো। এসে দেখলো ফারহান সেখানকার পুকুরপাড়টায় ধ্যান ধরে তাকিয়ে আছে। রুহি খানিকটা এগিয়ে গিয়ে হালকা করে কাশি দিয়ে ফারহানকে তার আসার জানান দিল। হঠাৎ কিছু একটার আওয়াজ শুনে ফারহান পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখে রুহি দাঁড়িয়ে আছে।

-“গতকাল আরশি ভার্সিটি শেষে আমায় প্রপোজ করেছিল তোমার কথা বলে। মানে সে তোমার হয়ে আমাকে ভালোবাসার কথা বলেছিল। তুমি নাকি আমাকে ভালোবাস কিন্তু এটা তুমি আমায় সাহস করে বলতে পারছ না তাই তুমি তাকে এইসব বলতে আমার কাছে পাঠিয়েছিলে। এখন বল এই কথাগুলো কি সত্যি?”

আরশি নিশ্চুপ।

-“কি হলো চুপ করে আছ কেন বল?”

-“আআসলে ভাভাইয়া হ্যাঁ আমিই গতকাল আরশিকে আপনার কাছে পাঠিয়েছিলাম এইসব কথা বলার জন্য।”

-“আচ্ছা ঠিক আছে তুমি তাহলে এবার যাও।”

-“আর আমার প্রপোজালের কি হবে?”

-“তোমায় আমি যেতে বলছি না।” চোখ রাঙিয়ে।

-“হ্যাঁ অথবা না যেকোনো একটা তো বলেন।”

-“এই মেয়ে তোমার এইসবের বয়স হয়েছে হে? তা ছাড়া আমি তোমার থেকে বয়সে ৪-৫ বছরের বড় সেটা কি তোমার জানা নেই?” রাগী কণ্ঠে কথাগুলো বললো ফারহান।

-“এইসব বয়স কোনো ফ্যাক্ট না ভাইয়া। তা ছাড়া এখন মেয়েদের বিয়ের সময় এমনিতেই তার থেকে ৪-৫ বছরের বড় ছেলে খোঁজা হয় তাহলে আমি নিজে কেন’না এখন থেকে…”

-“রুহি আমার মেজাজ খারাপ করবা না, যাও এখান থেকে বলছি।” ধমকের স্বরে।

-“ভাইয়া আপনি যদি আমার প্রপোজাল একচেপ্ট না করেন তাহলে আমি কিন্তু বিষ খাব বলে দিলাম।”

রুহির কথাটা শুনে এবার ফারহানের মেজাজ সত্যিই খারাপ হয়ে গেল। নিজের রাগটা আর নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পেরে ফারহান ঠাস করে রুহির গালে একটা চ*ড় বসিয়ে দিল।
.
.
Loading…….

#হৃদ_মাঝারে_তুমি
#লেখকঃ- Tamim Ahmed
#পর্বঃ- ৮
,,
,,
-“আমায় মা*রলে কেন ভাইয়া?” রুহি গালে হাত দিয়ে ফারহানের দিকে তাকিয়ে কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে বললো কথাটা।

-“আগেই বলেছিলাম মেজাজ খারাপ করবে না তারপরও তুমি এই বিষয় নিয়ে কথা বলেই যাচ্ছ। কিন্তু বিষ খাওয়ার কথাটা বলে মেজাজ আরও খারাপ করে দিয়েছ, তাই রাগ সামলাতে না পেরে চ*ড়টা মে*রে দিয়েছি, আমি সরি।”

-“আমি তো ফাজ…”

-“আর একটা কথাও বলবা না, এখন যাও এখান থেকে। নাহলে কিন্তু আরেকটা দিয়ে দিতে পারি।”

রুহি এবার কিছু না বলে চুপ করে সেখান থেকে চলে গেল। কেন’না আরেকটা কথা বললে যদি ফারহান সত্যি সত্যিই তার গালে আরেকটা চ*ড় বসিয়ে দেয়। সেই ভয়েই রুহি সেখান থেকে চলে যায়।
রুহি চলে যাওয়ার পর ফারহান মনে মনে ভাবে, “ইশ গতকাল আরশিকে শুধু শুধু চ*ড়টা মা*রলাম। এইখানে তো আরশির কোনো দোষ’ই ছিল না তারপরও সে দোষ না করে শাস্তি পেয়েছে। ওকে একবার সরি বলতে হবে আমার।”

.
-“কিরে রুহি তোর চেহারা এমন দেখাচ্ছে কেন? আমার মতো তুইও ভাইয়ার হাতে চ*ড় টর খেলি নাকি?” রুহি ক্লাসে ঢুকে আরশির কাছে এসে বসতেই আরশি কথাটা বলে উঠলো।

-“আরে নাহ উনি আমায় চ*ড় মা*রবেন কেন?”

-“তাহলে এইভাবে মুখ গোমড়া করে আছিস কেন? সত্যি করে বল তো কি হয়েছে?”

-“আরে কি হবে, কিছুই হয়নি। উনাকে বলেছিলাম যে গতকালের কথাগুলো আমিই তোকে বলতে বলেছিলাম। আমার কথা শুনে উনি তেমন রিয়েক্ট করেন নি তাই একটু…”

-“ভাইয়া যখন তোকে চ*ড় মে*রেছিলেন তখন আমি সেটা লুকিয়ে লুকিয়ে দেখেছি সোনা। তাই আমার কাছে বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যা বলা লাগবে না বুঝেছ?”

-“এই তুই কীভাবে দেখলি এটা! তুই কোথায় ছিলি তখন হে?” রুহি চমকিত কণ্ঠে কথাটা বললো।

-“আরে ভার্সিটির পিছনের দিকটায় তোরা দু’জন ছিলি না? আমি তখন সাইডেই লুকিয়ে ছিলাম। আচ্ছা শুরুতে তো ভাইয়া তোর সাথে ভালোভাবেই কথা বলছিলেন তাহলে আচমকা ভাইয়া তোকে চ*ড় মা*রলেন কেন?”

-“আরে ফারহান ভাইয়াকে বলেছিলাম আমার প্রপোজালের একটা উত্তর দিতে তখন তিনি আমায় রাগ দেখিয়ে সেখান থেকে চলে যেতে বললেন। আমিও তখন উনাকে হ্যাঁ অথবা না যেকোনো একটা বলতে বললাম। তখন উনি আমায় জ্ঞান দিতে শুরু করে দিলেন যে আমি তোমার চেয়ে বড়, তোমার এখনো এইসবের বয়স হয়নি হেন তেন। তাই আমি একটু ফাজলামি করে বলেছিলাম যে আপনি যদি আমার প্রপোজাল একচেপ্ট না করেন তাহলে আমি বিষ খাব। ব্যাস এই কথাটা বলতেই উনার মেজাজ গরম হয়ে গেল আর আমাকে প্রপোজালের উত্তরটা দিয়ে দিলেন।” কথাগুলো বলেই আরশি আবার মুখ গোমড়া করে ফেললো।

-“আরে তুই যে এটা ফাজলামি করে বলেছিস নাকি সিরিয়াসলি বলেছিস সেটা উনার ভেবে দেখার টাইম আছে নাকি? উনি হয়তো ভেবেছেন তুই সিরিয়াসলি এটা বলেছিস তাই উনি তোকে… থাক দোস্ত মন খারাপ করিস না। যা হবার হয়েছে এসব ভুলে যা, সাথে ভাইয়াকেও।”

-“আরে কি বলিস এইসব! একটা চ*ড় খেয়েই যদি দমে যাই তাহলে হবে নাকি? এই রুহি এতো সহজে দমে যাওয়ার পাত্রী না বুঝেছিস? দেখ না উনাকে আমি কীভাবে আমার ভালোবাসার জালে ফেলি। এমন কাজ করবো যে উনি নিজ থেকে আমায় ভালোবাসতে বাধ্য হবেন।”

-“এটা তুমি সপ্নতে ভাবিও বাস্তবে না। কেন’না বাস্তবে ভাইয়ার সাথে এইসব নিয়ে কথা বলতে গেলে তুমি চ*ড় ছাড়া আর কিছুই পাবা না বুঝেছ?”

-“আরে একটু ফাজলামি করার কারণেই তো উনি আমায় চ*ড় মে*রেছেন। তাই বলে কি এখন থেকে উনার সাথে কথা বলতে গেলেই আমায় চ*ড় মা*রবেন নাকি? জানিস আসার সময় উনি আমায় চ*ড় মা*রার কারণে আমায় সরিও বলেছেন। এতে কি বুঝা যায়? উনার সাথে একটু ভালোভাবে কথা বলতে পারলেই উনাকে বশে আনা যাবে।”

-“আচ্ছা তুই তাহলে উনাকে বশে এনে আমায় বলিস কেমন। এখন এই টপিক বাদ দে, ওই দেখ ফারিহা আর জেরিন ওরা ক্লাসের দিকেই আসছে। ওরা এসে যদি এই বিষয়ে কিছু জানতে পারে তাহলে আমার থেকে তোর নিজেরই মান-সম্মান বেশি যাবে।”

আরশির কথা শুনে রুহি বাহিরের দিকে তাকিয়ে দেখলো তাদের বান্ধবী ফারিহা আর জেরিন ক্লাসের দিকেই আসছে। ওদেরকে আসতে দেখে রুহি আর এ বিষয়ে কথা বাড়ালো না। কেন’না এই বিষয়ে যদি ওরা কিছু জানে তাহলে তার নিজেরই মান-সম্মান যাবে।

.
ভার্সিটি শেষে ফারহান গাড়ি নিয়ে ভার্সিটির গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ভার্সিটি থেকে একে একে সকল ছাত্র-ছাত্রীরা বাহিরে বেরিয়ে আসছে। এমন সময় আরশিও তার বান্ধবীদের সাথে ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে আসলো। ফারহান তখন আরশিকে গাড়িতে বসে থেকে ডাক দিল। আরশি কিছু ন ভেবে ফারহানের ডাকে সারা দিয়ে তার কাছে চলে আসলো।

-“গাড়িতে উঠ।” বললো ফারহান।

-“কেন?”

-“উঠতে বলছি না উঠ।” রাগ দেখিয়ে।

-“আমি ওদের সাথেই যেতে পারবো, তুমি চলে যাও।”

-“তোকে আমি গাড়িতে উঠতে বলেছি, বাড়তি কথা বলতে বলিনি।”

আরশি এবার বুঝতে পারলো ফারহান তাকে নিজের সাথে করে নিয়ে যাবে। তার কথার অবাধ্য হলে আবার যেকোনো সময় চ*ড় টর বসিয়ে দিতে পারে এটা ভেবে আরশি তার বান্ধবীদেরকে চলে যেতে বলে গাড়িতে উঠে বসলো। আরশি গাড়িতে উঠতেই ফারহান গাড়ি স্টার্ট দিয়ে এক টানে সেখান থেকে গাড়িটা কিছুটা দূরে নিয়ে আসলো। ফারহান আর গাড়িটা নিয়ে এগোলো না, সেখানেই গাড়িটা থামিয়ে ফেললো।

-“ভাইয়া কি হলো, গাড়ি থামালে কেন?”

-“তোর সাথে কিছু কথা আছে তাই গাড়ি থামিয়েছি।”

-“কি কথা?”

-“আরশি আমার গতকালের কাজটার জন্য আমি সরি। আসলে তুই যখন রুহির সাথে প্রেম করার জন্য আমায় জোর করছিলি তখন আমার মেজাজ খারাপ হয়ে পড়েছিল। তাই রাগের মাথায় তোকে চ*ড়টা মে*রে ফেলেছিলাম। তুই আমাকে মাফ করে দে প্লিজ।”

ফারহানের কথাগুলো শুনে আরশি মনে মনে ভাবতে লাগলো, “ভাইয়া নিজ থেকে আমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছেন, নিশ্চয়ই এখন উনার মন-মেজাজ ভালো আছে। দেখি এই উছিলায় উনাকে একটু বশে আনা যায় কি-না।”
আরশি চেহারাটা কিছুটা অপরাধীর ন্যায় করে বলতে লাগলো, “আসলে ভাইয়া আমিও সরি, আমারও এইখানে ভুল আছে। আমার তোমাকে ওইভাবে রুহির সাথে প্রেম করার জন্য জোর করা ঠিক হয়নি। তবে তোমার চ*ড় খেয়ে আমায় অনেক সমস্যায় পরতে হয়েছে কিন্তু।”

-“সমস্যা! কি সমস্যা?”

-“তোমার চ*ড় খেয়ে আমার গালে তোমার চার আঙ্গুলের দাগ পরে গিয়েছিল। আর সেটা দুপুরবেলা খাবার খাওয়ার সময় আব্বুর চোখে পরে যায়। তখন আব্বু আমায় এ নিয়ে নানা রকমের প্রশ্ন করা শুরু করে দেন। তখন আমি অনেক মিথ্যা বলে আব্বুকে একটা বুঝ দিয়ে দেই।”

-“এতো জোরেই মে*রেছিলাম তোকে! সরিরে আমি না আসলে বুঝতে পারিনি যে…”

-“শুধু সরি বললেই কাজ হবে না। তোমাকে এখন আমায় একটা কথা দিতে হবে সাথে আমার একটা আবদারও পূরণ করতে হবে। তাহলেই তুমি মাফ পাবে।”

-“সেগুলো কি?”

-“প্রথমটা হলো, আমাকে আর বিনা অপরাধে মা*রা যাবে না। সরি ভুল হয়েছে আমাকে আর তুমি কখনো মা*রতেই পারবে না। কারণ আমি এখন বড় হয়েছি, শাসন করার হলে মুখ দিয়ে করবা, হাত দিয়ে কেন করতে হবে? দ্বিতীয়টা হলো, এখন আমায় ফুচকা খাওয়াতে হবে, সাথে চকলেট আইসক্রিমও কিনে দিতে হবে। তাহলেই আমি তোমাকে মাফ করবো।”

-“আবদারটা পূরণ করতে পারি। কিন্তু প্রথমটার উপর কথা দিতে পারছি না। কারণ তুই যদি কখনো ভুল টুল করে বসিস আর আমি রাগের মাথায় তোকে চ*ড় মে*রে বসি তখন তো আমার কথা দেওয়াটা ভঙ্গ হয়ে যাবে।”

-“তাহলে আমিও তোমাকে মাফ করতে পারবো না যাও।”

আরশির ভাবভঙ্গি দেখে ফারহান খানিকটা ভেবে বলে উঠলো, “আচ্ছা ঠিক আছে, কথা দিচ্ছি আমি আর কখনো তোকে মা*রব না। এবার তো আমায় মাফ করা যাবে নাকি?”

-“সত্যি আর মা*রবে না তো?”

-“আরে হ্যাঁ, বললাম তো আর মা*রব না। এখন এই কথাটা কি কাগজে-কলমে লিখে দিতে হবে নাকি?”

-“লিখে দিলে তো ভালোই হতো। না থাক এটা করা লাগবে না। এবার গাড়িটা স্টার্ট দিয়ে একটা ফুচকার দোকানে নিয়ে চল।”

ফারহান কিছু না বলে আরশির কথামতো গাড়িটা স্টার্ট দিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে নিয়ে আসলো। সেখান থেকে আরশির জন্য ফুচকা, আইসক্রিম আর চকলেট কিনে এনে আরশির কাছে দিয়ে দিল। আরশিও এসব পেয়ে বেজায় খুশি হয়ে উঠলো আর গাড়িতে বসেই একটা আইসক্রিম খুলে খেতে আরম্ভ করলো। ফারহান আরশির খাওয়া দেখে একটা মুচকি হেসে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই আরশিকে নিয়ে তাদের বাসায় চলে আসলো। তারপর আরশিকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়ে ফারহান নিজের বাসায় চলে আসলো।
.
.
Loading…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here