হৃদ_মাঝারে_তুমি,০৯,১০

0
400

#হৃদ_মাঝারে_তুমি,০৯,১০
#লেখকঃ- Tamim Ahmed
#পর্বঃ- ৯
,,
,,
-“কিরে আরশি, তোর হাতে এইসব কি?” আরশিকে বাসায় ঢুকতে দেখে রোজিনা বেগম কথাটা বলে উঠলেন।

-“এইতো ফুচকা আর কিছু চকলেট।”

-“কে দিয়েছে এইসব তোকে?”

-“ফারহান ভাইয়া।”

-“ওহ আচ্ছা। তো এইসব রেখে এখন, আর হাত মুখ ধুয়ে খাবার খেতে আয়।”

-“আচ্ছা আসছি।” বলেই আরশি তার রুমে চলে আসলো।

.
এদিকে ফারহান তার বাসায় গিয়ে খাওয়া দাওয়া করে কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে তার আব্বুর অফিসে চলে গেল। অফিসের দরজা দিয়ে ভিতরে ঢুকতে যাবে তখনই একজনের সাথে তার ধাক্কা লেগে যায়। ফারহান খেয়াল করে দেখল যার সাথে তার ধাক্কা লেগেছে সে একটা মেয়ে।

-“মেয়ে দেখলেই শুধু ধাক্কা খেতে ইচ্ছা করে নাকি? এখন আবার ভদ্র সেজে বলতে আসবেন না যে আমি আপনাকে ইচ্ছা করে ধাক্কা দেইনি আমি সরি। আপনাদের মতো মানুষদের আমার ভালো করেই চিনা আছে।” মেয়েটা বেশ রেগেমেগে কথাগুলো বলে উঠলো।

-“ও হ্যালো মিস, আপনাদের ফেমাস ডায়লগ আপনার কাছেই রাখেন। আর আমার ঠেকা পরে নাই যে আপনাকে এইসব বলতে যাব। আপনিই দৌড়ে দরজা অবধি এসেছেন আমি না। তাহলে ধাক্কাটা কে দিয়েছে নিজেই বুঝে নেন।”

-“এক তো নিজ থেকে ধাক্কা দেন আবার আমার মুখের উপর কথা বলেন! আপনার তো সাহস কম না! আজ আমার হাতে টাইম নেই বলে আপনি বেঁচে গেলেন নাহলে আপনাকে যে আমি কি করতাম। দেখি সরেন আর আমায় ভিতরে যেতে দেন।” বলেই মেয়েটা রাগ দেখিয়ে ভিতরে চলে গেল।

মেয়েটা চলে গেলে ফারহানও ওখানে দাঁড়িয়ে না থেকে ভিতরে ঢুকে পরল। তারপর সেখান থেকে সোজা তার আব্বুর কেবিনে চলে আসলো। হঠাৎ কেউ একজন দরজায় নক না করে ভিতরে ঢুকতেই রফিক আহমেদ কিছুটা চমকে উঠলেন। কিন্তু তিনি যখন দেখলেন সেই মানুষটা তার ছেলে তখন তিনি আরেকটু চমকে উঠলেন।

-“আরে ফারহান তুমি!”

-“হ্যাঁ আমি। কেন দরজায় নক করে আসা উচিত ছিল নাকি?”

-“আরে তুমি কি এই অফিসের কর্মচারী নাকি যে নক করে আসবে? তুমি হলে এই অফিসের মালিকের ছেলে, তোমার আবার নক করে আসা লাগবে কেন? তুমি যে এইসময় অফিসে আসবে সেটা ভাবিনি তাই তোমাকে দেখে কিছুটা অবাক হলাম আরকি।”

-“ওহ আচ্ছা। যাইহোক, আমি এখন অফিসে আছি তুমি বাসায় গিয়ে খেয়ে আস যাও।”

-“তুমি থাকবে অফিসে এখন? মানে এইভাবেই কি তুমি অফিসে বসা শুরু করবে? আমি তো ভেবেছিলাম একদিন তোমাকে আমার সঙ্গে নিয়ে এসে অফিসের সবার সাথে তোমার পরিচয় করিয়ে দিয়ে তারপর থেকে নাহয়…”

-“আরে আব্বু এখন এইসব করার কি দরকার। এখন থেকেই তো আর আমি অফিসের দায়িত্ব নিয়ে ফেলছি না। আগে আমার পড়াশোনা শেষ হোক তারপর তোমার যদি রেস্ট নিয়ে নিতে ইচ্ছা করে তখন নাহয় একটা ছোটখাটো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সবাইকে জানিয়ে দিলে যে এখন থেকে অফিসের সমস্ত দায়িত্ব আমার উপর দেওয়া হলো। ততদিন পর্যন্ত নাহয় আমি একটু একটু অফিসে এসে টাইম দিয়ে অফিসের কাজকর্ম কিছুটা আয়ত্ত করে ফেলি।”

-“আচ্ছা তুমি যখন বলছ তাহলে এটাই হবে। ওকে আমি তাহলে বাসায় যাচ্ছি আর কোনো হেল্প লাগলে ম্যানেজারকে ডেকে নিও। আমি যাওয়ার সময় উনাকে তোমার ব্যাপারে বলে যাব।”

-“আচ্ছা।”

তারপর রফিক আহমেদ নিজের কেবিন থেকে বেরিয়ে গেলেন। উনি চলে যাওয়ার পর ফারহান তার আব্বুর চেয়ারে গিয়ে বসে পরল। যেহেতু তার অফিসের কাজকর্ম সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই তাই সে নিজের ফোনটা বের করে সময় কা*টানোর জন্য বসে বসে ফেসবুকিং করতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর হঠাৎ বাহির থেকে কেউ একজন দরজায় টুকা দিল।

টুক টুক…

-“May I Come In Sir?” বাহির থেকে একটা মেয়েলি কণ্ঠে বললো কথাটা।

-“Yes Come In.”

অনুমতি পেয়ে বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটা ভিতরে প্রবেশ করলো। কিন্তু ভিতরে ঢুকে রফিক আহমেদের চেয়ারে অন্য কাউকে বসে থাকতে দেখে অনেকটা চমকে উঠলো সে। একটু আগে যেই ছেলেটার সাথে সে ধাক্কা খেয়েছিল সেই ছেলেটাই বর্তমানে রফিক আহমেদের চেয়ারে বসে আছে। বিষ্ময়ের দৃষ্টিতে মেয়েটা রফিক আহমেদের চেয়ারে বসে থাকা ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আছে।
এদিকে রুমে ঢুকা ব্যাক্তিটার নিরবতা উপলব্ধি করে ফারহান এবার মাথা তুলে সামনে তাকাল। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটাকে দেখে ফারহান এক মূহুর্তের জন্য অবাক হলেও সেটা ওই মেয়েটাকে বুঝতে দিল না। ফারহান শুধু মনে মনে ভাবছে, “এই মেয়েটা এইখানে কি করছে?” নিজেকে নিজে প্রশ্ন করে কোনো উত্তর খুঁজে না পেয়ে ফারহান এবার মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বললো,

-“কিছু বলবেন?”

ফারহানের কথায় মেয়েটার যেন হুশ ফিরে আসলো। কিছুক্ষণ কি যেন ভেবে মেয়েটা বলে উঠলো, “আপনি এইখানে কি করছেন? আর স্যার কোথায়?”

-“আব্বু বাসায় গিয়েছেন। আপনার কিছু বলার থাকলে আমায় বলতে পারেন।”

-“আব্বু মানে! কে আপনার আব্বু?” মেয়েটা চমকে উঠে বললো কথাটা।

-“আপনাদের স্যার।”

-“আমাদের স্যারের কোনো ছেলে আছে বলে তো আমার জানা নেই। আপনি কে সত্যি করে বলেন তো?”

ফারহান কিছু বলতে যাবে তার আগেই টেবিলে থাকা একটা টেলিফোন বেজে উঠলো। ফারহান হাত বারিয়ে টেলিফোনটা উঠাতে যাবে তখনই মেয়েটা তাকে থামিয়ে দিয়ে বললো, “এই একদম ফোন ধরবেন না। কে না কে স্যারের ক্যাবিনে এসে বসে আছেন আর নিজেকে উনার ছেলে বলে দাবি করছেন। বলা যায়না এখন হয়তো স্যারের পরিচিত কেউ একজন কল দিয়েছে। আপনি চুপ করে বসে থাকেন আমি কথা বলে দেখি কে কল দিয়েছে।”
এই বলেই মেয়েটা ফোনটা তুলে কানে ধরলো আর বললো, “হ্যালো কে বলছেন?”

-“হ্যালো ফারহান আমি তোমার আব্বু বলছি।” ফোনের অপাশ থেকে।

-“ফারহান কে স্যার? আমি তো নীলা।”

-“নীলা! তুমি ফোন ধরেছ ফারহান কোথায়?”

-“ফারহান কে স্যার?”

-“আরে আমার ছেলে, যে এখন আমার চেয়ারে বসে আছে।”

-“ককিহ উনি আপনার ছেলে!” নীলা কিছুটা ভয়ার্ত গলায় বললো কথাটা।

-“আরে হ্যাঁ। কিন্তু তুমি আমার ক্যাবিনে কখন এলে? আর ফারহান কি ক্যাবিনে নেই তুমি ফোন ধরেছ যে।”

-“উনি আমার সামনেই বসে আছেন স্যার। আর আমি তো আপনার ক্যাবিনে এসেছিলাম একটা প্যাপারে সিগনেচার নেওয়ার জন্য।”

-“আচ্ছা যাক আমিও এই সিগনেচারের বিষয় নিয়ে কথা বলার জন্যই ফোন দিয়েছিলাম। শুন আমি এখন বাসায় খাবার খেতে এসেছি। আমি অফিসে আসলে তখন নাহয় সিগনেচার নিতে আস। এখন ফারহানের কাছে ফোনটাও দাও তো।”

নীলা মেয়েটা এবার ভয়ার্ত চোখে ফারহানের দিকে তাকিয়ে তার দিকে ফোনটা এগিয়ে দিল। ফারহানও কিছু না বলে খানিকটা রাগ দেখিয়ে নীলার থেকে ঝাপটি মে*রে ফোনটা নিয়ে নিল।

-“হ্যাঁ আব্বু বল?”

-“আরে তোমায় একটা কথা বলার জন্য ফোন দিয়েছিলাম। অফিসের কেউ যদি কোনো প্যাপারে সিগনেচার নেওয়ার জন্য আসে তাহলে তুমি সিগনেচার দিয়ে দিও না কিন্তু। কেন’না এখন প্যাপারে তোমার সিগনেচার পরলে সমস্যা হবে।”

-“আচ্ছা ঠিক আছে। কিন্তু তুমি আমার ফোনে কল না দিয়ে অফিসের এই টেলিফোনে কল দিলে কেন?”

-“আরে আমার ফোনটা আমি অফিসেই ফেলে এসেছি, দেখ টেবিলের উপরে রাখা আছে হয়তো। আর ছোট ফোনে তো তোমার নাম্বার নেই তাই অফিসের টেলিফোনেই ফোন দিতে হলো। আচ্ছা এবার রাখছি তাহলে।” বলেই রফিক আহমেদ কল কে*টে দিলেন।

রফিক আহমেদের সাথে কথা বলা শেষে ফারহান ফোনটা রেখে নীলা মেয়েটার দিকে তাকালো। নীলা মেয়েটা এখন কেমন জানি ভিতরে ভিতরে চটপট করছে, হয়তো লজ্জায় নয়তো ভয়ে। মেয়েটার অবস্থা দেখে ফারহান বলে উঠলো, “আব্বু আসলে সিগনেচার নিয়েন এখন আপনি আসতে পারেন।”

-“আপনি কি সত্যিই স্যারের ছেলে?” নীলা মেয়েটা আমতা-আমতা করে বললো কথাটা।

-“কেন আপনার কি মনে হয়?”

-“না মানে আপনাকে তো এর আগে কখনো…”

-“এর আগে কখনো দেখেন নি তবে এখন থেকে প্রতিদিনই দেখতে পাবেন। এখন আপনি আসতে পারেন।”

তারপর নীলা মেয়েটা আর কথা না বাড়িয়ে সেখান থেকে চলে যায়। নীলা মেয়েটা চলে যাওয়ার পর ফারহান একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চেয়ারের মধ্যে হেলান দিয়ে বসে পরল।
.
.
Loading…….

#হৃদ_মাঝারে_তুমি
#লেখকঃ- Tamim Ahmed
#পর্বঃ- ১০
,,
,,
-“কি ব্যাপার নীলা আপু, তোমার চেহারা এমন দেখাচ্ছে কেন?”

(গল্প পড়া শেষে সবাই নিচের লেখাগুলো পড়বেন প্লিজ)
রফিক আহমেদের ক্যাবিন থেকে বেরিয়ে নীলা নিজের ডেক্সে এসে ফারহানের সাথে করা কাজগুলো নিয়ে ভাবছিল। তখন সে যদি তাড়াহুড়া না করে অফিসে ঢুকত তাহলে হয়তো ফারহানের সাথে তার ধাক্কা লাগতো না। এইখানে তার নিজেরই দোষ, সেটা সে ভালো করেই উপলব্ধি করছে। কিন্তু তখন আচমকা কারও সাথে ধাক্কা লাগাতে তার মেজাজ কিছুটা খারাপ হয়ে গিয়েছিল যার দরুন সে ফারহানকে কিছুটা বকাঝকা করে ফেলে। এইসব কথা নীলা তার ডেক্সে বসে বসে ভাবছিল ঠিক সেই মূহুর্তে নীলার পাশের কলিগ মিতু নীলার বিষন্ন চেহারা দেখে তার কাছে এসে তাকে উপরোক্ত প্রশ্নটা করল। নীলা মাথা তুলে মিতুর দিকে তাকিয়ে বললো, “কই কেমন দেখাচ্ছে, ঠিকই তো আছে আমার চেহারা।”

-“নাহ একটু আগেও তো তোমার চেহারা অন্যরকম ছিল। কিন্তু স্যারের ক্যাবিন থেকে বেরিয়ে আসার পর থেকেই তোমার চেহারায় কেমন যেন বিষন্নতা দেখাচ্ছে। কি হয়েছে বল তো আমায়?”

-“আরে কি হবে কিছুই হয়নি। স্যার বলেছিলেন লাঞ্চের পর যেন এই ফাইলটা কমপ্লিট করে উনার থেকে একটা সিগনেচার নিয়ে আসি। আমিও তাড়াতাড়ি করে ফাইলটা কমপ্লিট করে উনার থেকে সিগনেচার নেওয়ার জন্য উনার ক্যাবিনে চলে গেলাম। আমি নিজে দুপুরের লাঞ্চ ঠিকমতো না করে হালকা কিছু খেয়ে তাড়াতাড়ি নিজের ডেক্সে এসে ফাইলটা নিয়ে কাজ করতে বসে পরেছিলাম। কিন্তু এখন উনার ক্যাবিনে গিয়ে দেখি উনি রুমে নেই, উনি নাকি খাবার খেতে বাসায় চলে গেছেন। এটা কোনো কথা হলো বল?” খানিকটা মন খারাপ করে কথাটা বললো নীলা।

-“ওহ আচ্ছা, তাহলে এই ব্যাপার। কিন্তু তুমি শুধু শুধু একটা ফাইল কমপ্লিট করার জন্য না খেয়ে কাজ করলে কেন? স্যার তো আর বলেনি যে লাঞ্চের পর পর-ই আমায় এই ফাইলটা জমা দিতে হবে বা আমাদের স্যারও তো তেমন রাগী টাইপের নয় যে একটা কাজ একটু দেরিতে করাতে স্যার তোমার উপর চিল্লাচিল্লি শুরু করে দিবেন।”

-“মানলাম স্যার ওই টাইপের মানুষ না। কিন্তু আমি তো আর এই অফিসে কয়েক বছর যাবত কাজ করছি না যে স্যারের কথা তোয়াক্কা না করে নিজের মতো কাজ করে যাব। কাজে জয়েন হয়েছি আমার এক মাসও হয়নি। নতুন নতুন এসেই যদি স্যারের আদেশ না মেনে নিজের নিয়মমাফিক কাজ করি তাহলে কি হবে? পরে দেখা যাবে মাস শেষ হতে না হতেই আমার এক মাসের স্যালারি ধরিয়ে দিয়ে আমায় এই চাকরি থেকে বরখাস্ত করে দিলেন। তখন আমি নতুন আরেকটা চাকরি জোগাড় করবো কীভাবে?”

-“আরে আপু তুমি এইসব বিষয় নিয়ে এতো গভীরে যাচ্ছ কেন? এমনটা কিছুই হবে না। আচ্ছা তুমি থাক আমার একটা ফাইল কমপ্লিট করা বাকি রয়েছে আমি গেলাম।” কথাগুলো বলেই মিতু মেয়েটা নিজের ডেক্সে চলে গেল।

.
সন্ধ্যাবেলা ফারহান তার আব্বুর অফিস থেকে বাসায় ফিরল। বাসায় আসতেই রোকসানা বেগম তাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন, “ভার্সিটি থেকে এসেই কোথায় চলে গেছিলি?”

-“আব্বুর অফিসে গিয়েছিলাম।”

-“বাব্বাহ, এখন থেকেই বাপের অফিস সামলানোর কাজে লেগে পরলি নাকি?”

-“আরে না, এমনিই গিয়েছিলাম। আব্বু না সেদিন বললো মাঝেমধ্যে অফিসে গিয়ে অফিসের কিছু টুকটাক কাজ শিখে নিতে, তাই গিয়েছিলাম আরকি।”

-“তার মানে তুই পড়াশোনা শেষ করে তোর আব্বুর অফিস দেখাশোনায় লেগে যাবি তাইতো?”

-“হ্যাঁ, এটা তো সেদিনই বললাম।”

-“আচ্ছা তাহলে তোর পড়াশোনা শেষ হলে আমরা কিন্তু তোর জন্য তানিশাকে নিয়ে আসবো।”

-“তানিশাকে নিয়ে আসবে মানে! এই তানিশা আবার কে? কাজের বুয়া নাকি? আমার জন্য আবার কাজের বুয়া আনবা কেন?”

ফারহানের কথাগুলো শেষ হতেই রোকসানা বেগম আস্তে করে ফারহানের গালে একটা চ*ড় মে*রে বললেন, “এই তুই বুয়া কাকে বলছিস? তানিশা তোর ছোট খালামণির মেয়ে। মানে আমার বোনের মেয়ে। ওকে আমরা তোর জন্য নিয়ে আসবো।”

-“বুঝলাম না, ওকে আমার জন্য আনবে মানে?” কপাল কুচকে কথাটা বললো ফারহান।

-“আরে তোর পড়াশোনা শেষ হলে তুই অফিসের হাল ধরবি সাথে এই সংসারেরও। তখন তোর বিয়েসাদী দেওয়া লাগবে না? তখন তোর জন্য আমরা তানিশাকে এই বাড়িতে তোর বউ করে নিয়ে আসবো।”

-“আম্মু কি বলছ এইসব! ওই পুচকি একটা মেয়েকে তুমি আমার বউ বানাবে? তা ছাড়া ও আমার খালাতো বোন হয়, ওকে আমি কীভাবে বিয়ে করবো?”

-“সে এখন আর ছোট নেই। অনেক বড় হয়েছে এখন। এইবার ইন্টারমিডিয়েটে পরীক্ষা দিবে। বলতে গেলে আমাদের আরশির সমান।”

-“তাহলে আরশিকেই নিয়ে এস ওকে আনার কি দরকার?” ফারহান আস্তে করে বললো কথাটা।

-“এই কি বললি?”

-“কই কি বললাম? বললাম যে এইসব পরে দেখা যাবে। এখন আমি রুমে গেলাম বাই।” বলেই ফারহান নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো।

-“দেখাদেখির কিছু নেই, আমার বোনের মেয়েকেই তোর বিয়ে করা লাগবে।” পিছন থেকে রোকসানা বেগম বললেন কথাটা।

এদিকে ফারহান তার রুমে এসে ভাবতে লাগলো, “আম্মুর মাথায় হঠাৎ তানিশাকে আমার বউ করে আনার ভুত জাগলো কি করে? জেগেছে সমস্যা নেই। আমার পড়াশোনা শেষ হতে আরও এক বছর লাগবে। ততদিনে যদি আম্মুর মাথা থেকে এই ভুতটা নেমে যায় তাহলে তো ভালোই। নাহলে আমাকেই আম্মুর মাথা থেকে এই ভুতটা নামাতে হবে।” কথাগুলো ভাবতে ভাবতে ফারহান ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে চলে গেল। ফ্রেশ হওয়া শেষে ফারহান ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে পড়তে বসে গেল।
ঘড়িতে যখন ৮ টা বেজে উঠলো তখন হঠাৎ ফারহানের ফোনে একটা মেসেজ আসলো। মেসেজটা ওপেন করে মেসেজের লেখাগুলো পড়েই ফারহান কিছুটা চমকে উঠলো। মেসেজটার লেখাগুলো ছিল এমন, “খুব শীগ্রই আমি তোর থেকে আমায় চ*ড় মা*রার প্রতিশোধ নিব। আর ওইদিন আমি তোর এমন হাল করবো যে তুই আর জীবনেও আমার দিকে চোখ তুলে তাকাতে পারবি না। জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ মিস্টার ফারহান।”
মেসেজটা মূলত একটা আননোন নাম্বার থেকে এসেছে। কিন্তু এই আননোন নাম্বারের মেসেজটা তার কাছে অনেক অদ্ভুত লাগছে। মেসেজটা পড়ে ফারহান ভালো করেই বুঝতে পেরেছে হয়তো তার পরিচিত কেউ একজন এই মেসেজটা দিয়েছে। কেন’না পরিচিত কেউ না হলে মেসেজটার মধ্যে ফারহানের নিজের নাম দেওয়া থাকতো না। আর সেই ব্যাক্তিটা জীবনে একবার হলেও তার হাতে চ*ড় খেয়েছে। হয়তো সেই ব্যাক্তিটা মজা করে তাকে এই মেসেজটা পাঠিয়েছে, ফারহান এটাই ধরে নিল। তবে একটা বিষয় ফারহানের মাথায় ঢুকছে না। জীবনে কত মানুষকে সে চ*ড় মা*রলো কিন্তু আজ অবধি কেউ তাকে এই টাইপের মেসেজ দেয়নি। তাহলে আজ হঠাৎ এই ধরণের মেসেজ দিয়ে মেসেজকারী ব্যাক্তি কি তাকে ভয় দেখাতে চাচ্ছে। প্রশ্নটা ফারহানের মনে থেকে গেলেও পরে আর সে বিষয়টা নিয়ে এতো মাথা ঘামালো না।

.
পরেরদিন সকালবেলা আরশি আর তার বান্ধবীরা ভার্সিটিতে এসে ক্লাসে বসে আড্ডা দিচ্ছিল এমন সময় রুহি বললো, “আচ্ছা আরশি, তোর জন্মদিন কবে যেন রে?”

-“এই মাসের শেষ দিকে, কেন?”

-“তুই তোর জন্মদিন সেলিব্রেট করবি না? মানে সেদিন কোনো পার্টির আয়োজন করবি না?”

-“উম দেখি করি কি না।”

-“দেখি মানে! আরে জন্মদিন কি আর প্রতিদিন আসে নাকি। বছরে মাত্র একদিন আসে এই দিনটা আর তুই কি-না এই দিনটা সেলিব্রেট করবি না।”

-“আচ্ছা ঠিক আছে করবো নে। যদি বাসায় না করি তাহলে তোদেরকে নিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে নাহয় পার্টি দিব নে। হবে তো নাকি?”

-“এমনটা হলে ঠিক আছে। অনেক মজা হবে ওইদিন।”

.
ভার্সিটি ছুটির পর আরশি আর রুহি বাসার দিকে যাচ্ছিল। এমন সময় কোথা থেকে জানি একটা কালো গাড়ি দ্রুতগতিতে তাদের সামনে এসে ব্রেক মারল। অতঃপর গাড়ি থেকে কয়েকজন মাস্ক পরা ছেলে বেরিয়ে এসে আরশিকে গাড়িতে উঠানোর জন্য জোরাজুরি শুরু করে দিল। আচমকা কিছু ছেলে সেই গাড়িটা থেকে বেরিয়ে এসে আরশিকে গাড়িতে উঠানোর জন্য জোরাজুরি শুরু করতেই আরশি আর রুহি কে আপনারা? বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার শুরু করে দিল। তখনই ওই ছেলেগুলো রুহিকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে আরশিকে জোরজবরদস্তির করে ধরে গাড়ির ভিতরে উঠিয়ে সেখান থেকে মূহুর্তের মধ্যেই আরশিকে নিয়ে পালিয়ে গেল। আর এদিকে আরশি কিছুটা আহত হয়ে সেখানেই পরে রইলো।

এদিকে ফারহান আর তার বন্ধুরা তখন সেই রাস্তা দিয়েই কোথায় যেন যাচ্ছিল। হঠাৎ রাস্তার ধারে রুহিকে পরে থাকতে দেখে ফারহান দৌড়ে গিয়ে রুহির কাছে দাঁড়ালো আর হাটু ঘেরে রুহির কাছে বলে বললো, “রুহি কি হয়েছে তোমার? তুমি এখানে পরে আছ কেন?”

-“ভাইয়া ওরা আরশিকে কোথায় যেন নিয়ে গেছে।” রুহি আস্তে করে বললো কথাটা।

-“ওরা কারা? আর আরশিকে কোথায় নিয়ে গেছে?”

রুহি এবার কিছু বলতে যাবে তার আগেই ফারহানের ফোনটা বেজে উঠলো। ফারহান পকেট থেকে ফোনটা বের করে দেখল একটা আননোন নাম্বার থেকে কল এসেছে। কোনো কিছু না ভেবেই ফারহান কলটা রিছিভ করলো।

-“তোর বোন আরশি আমার কাছে আছে। যদি তাকে স্বাভাবিক অবস্থায় দেখতে চাস তাহলে _____ এই জায়গায় চলে আয়। আর হ্যাঁ, আসার সময় কাউকে সাথে নিয়ে আসবি না, তুই একা আসবি নাহলে কিন্তু তোর বোনের বড় ধরণের ক্ষতি হয়ে যাবে।” কথাগুলো বলেই অপরপ্রান্তের ব্যাক্তিটা কল কে*টে দিল।
.
.
Loading…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here