#হৃদ_মাঝারে_তুমি,পর্বঃ- ২৬
#লেখকঃ- Tamim Ahmed
ঘড়ির কাঁ*টায় ১১ টা ছুই ছুই। ফারহানদের বাসার সবাই ড্রয়িংরুমে ঝিম মে*রে বসে আছে। কারও চোখে ঘুম নেই। তাদের সাথে রয়েছেন রফিক আহমেদের ছোটবেলার বন্ধু মোস্তফা হোসেন আর রাবেয়া বেগমের নেয়ে নীলা। বর্তমানে সবাই রাবেয়া বেগমের মৃত্যুর শোক পালন করছেন। রাত ৮ টার দিকে রাবেয়া বেগমের জানাজা পড়িয়ে উনাকে দাফন করে আসা হয়েছে। তার আগে রফিক আহমেদ নীলাকে নিজেদের বাসায় নিয়ে আসেন আর উনার স্ত্রী রোকসানা বেগমকে নীলার দিকে খেয়াল রাখতে বলে ওরা রাবেয়া বেগমের কাফন দাফনের ব্যবস্থা করেন। রাবেয়া বেগম আর রফিক আহমেদ দু’জন ক্লাসমিট ছিলেন। রাবেয়া বেগমের স্বামী ইকবাল হোসেনও রফিক আহমেদের বন্ধু ছিলেন।
কলেজে থাকাকালীন সময়ে ইকবাল হোসেন আর রাবেয়া বেগমের প্রেম শুরু হয়। তারপর তারা যখন ভার্সিটিতে উঠে তখন সংসারে অভাবের জন্য পরিবার থেকে রাবেয়া বেগমকে বিয়ে দেওয়ার জন্য ঠিক করে। রাবেয়া বেগমের বিয়ের কথা শুনে ইকবাল হোসেন অনেকটা ভেঙে পরেন। তখন উনার সকল বন্ধুরা মিলে একরাতে রাবেয়া বেগমকে উনার বাড়ি থেকে উঠিয়ে এনে ইকবাল হোসেন আর উনার বিয়ে করানো হয়। দুই পরিবারের মধ্যে বিষয়টা জানাজানি হলে দুই পরিবার থেকেই তাদেরকে তাদের মা-বাবা বাড়ি ছাড়া করেন। তখন উনার সকল বন্ধুরা মিলে উনাকে কিছু টাকা দিয়ে তাদেরকে অন্য একটা শহরে পাঠিয় দেন। সেখানে গিয়ে ইকবাল হোসেন একটা ছোটখাটো চাকরি করতে আরম্ভ করলেন। তারপর ২ বছর পর রাবেয়া বেগমের কোল আলোকিত করে নীলার জন্ম হয়। তারপর নীলা আস্তে আস্তে বড় হতে লাগলো। নীলাকে নিয়ে তাদের ছোট্ট সংসারটা ভালোই চলছিল। কিন্তু নীলা যখন ইন্টার ফাস্ট ইয়ারে উঠে তখনই একটা রোড এক্সিডন্টে ইকবাল হোসেনের প্রাণ চলে যায়। তারপর রাবেয়া বেগম আবার উনার নিজ শহরে চলে আসেন। এসে রাবেয়া বেগম আর উনার পরিবারের কারও কাছে না গিয়ে রফিক আহমেদের খুঁজ নিয়ে উনার কাছে চলে আসেন আর ইকবাল হোসেনের মৃত্যুর সংবাদও জানান। সবশেষে উনি রফিক আহমেদকে অনেক আকুতি মিনতি করেন নীলাকে একটা কাজ দেওয়ার জন্য। তখন উনার অফিসের একটা পোস্ট খালি ছিল তাই উনি কোনোকিছু না ভেবেই নীলাকে সেই পোস্টে চাকরি দিয়ে দেন।
-“রফিক, নীলাকে এখন কোথায় রাখবি?”
রফিক আহমেদ সেই ২০ বছর আগের কাহিনীতে ডুব দিয়েছিলেন। আচমকা মোস্তফা হোসেনের কথা শুনে উনার ধ্যান ভাঙলো। কপাল কিছুটা ভাঁজ করে মোস্তফা হোসেনের দিকে তাকিয়ে রফিক আহমেদ বলে উঠলেন, “নীলাকে কোথায় রাখবো মানে? ও তো আমাদের সাথেই আমাদের বাসায় থাকবে।”
-“বাসায় থাকবে ঠিক আছে, কিন্তু এটা কেমন দেখায় না?”
-“কেমন দেখাবে আবার?”
-“তুই একটু এদিকে আয়, তোকে বুঝিয়ে বলছি।”
মোস্তফা হোসেনের কথায় রফিক আহমেদ সোফা থেকে উঠে মোস্তফা হোসেনের পিছু পিছু ড্রয়িংরুম থেকে বেরিয়ে আসলেন। এরপর দু’জনে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে পরলেন।
-“এবার বল কি বলবি?” রফিক আহমেদ বললেন।
-“দেখ নীলার কিন্তু এখন এই পৃথিবীতে কেউ নেই, মেয়েটা এখন এতিম। একটা এতিম মেয়েকে তুই নিজের বাসায় রাখবি ভালো কথা। কিন্তু বাসায় যে তোর একটা যুবক ছেলেও আছে সেটা কি তোর খেয়ালে নেই?”
-“মানে তুই কি বলতে চাচ্ছিস?”
-“দেখ বাসায় তোর একটা যুবক ছেলে আছে, এখন আবার তুই একটা এতিম মেয়েকে নিজের বাসায় রাখতে চাচ্ছিস। বিষয়টা যদি বাহিরে জানাজানি হয় তাহলে মানুষ কি ভাববে আর কি বলবে ভাব তো একটু। মানে বিষয়টাকে মানুষ অন্যভাবে নিতে পারে আরকি। তবে মানুষের কথায় যদি তোর কিছু যায় না আসে তাহলে আমি বলবো তোর যেটা ভালো লাগে সেটাই কর। তা ছাড়া তুই তো রাবেয়াকে কথাও দিয়েছিস তুই নীলাকে নিজের মেয়ের মতো করে রাখবি। তাহলে তোর যেভাবে ইচ্ছা সেভাবেই নীলাকে রাখ। আমি তাহলে এবার চলি, আমার জন্য হয়তো এখনো রুমির মা না খেয়ে রয়েছে।” কথাগুলো বলেই মোস্তফা হোসেন সদর দরজা খুলে বেরিয়ে গেলেন।
মোস্তফা হোসেন চলে যাওয়ার পর রফিক আহমেদ বেশ কিছুক্ষণ ওইখানে দাঁড়িয়ে থেকে উনার বলা কথাগুলো ভাবলেন। মোস্তফা হোসেনের কথাগুলো একদমই ফেলে দেওয়ার মতো নয়। বর্তমান যুগে চলতে গেলে চারদিকেই নজর রেখে চলতে হয়। তাদের কাছে নীলা মেয়েটা চেনা হলেও সমাজের মানুষদের কাছে নীলা অচেনা একজন। সেই মানুষটাকে যদি এখন রফিক আহমেদ উনার বাসায় রাখেন তাহল সমাজের লোকেরা অবশ্যই বিষয়টাকে অন্যভাবে ভাবতে পারে। তবে এ নিয়ে রফিক আহমেদ আর বেশি কিছু ভাবলেন না। সেখান থেকে উনি আবার ড্রয়িংরুমে চলে এলেন আর কিছুক্ষণ নিরব থেকে রোকসানা বেগমকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন,
-“অনেক রাত হয়েছে, নীলা মা’কে এবার কিছু খাইয়ে দিয়ে ওর রুমটা দেখিয়ে দাও ও ঘুমিয়ে পরুক।”
-“তাহলে টেবিলে খাবার বেড়ে দেই? সবাই একসাথে খেয়ে নিবে।”
-“যেটা ভালো লাগে কর।”
তারপর রোকসানা বেগম নীলাকে রেখে রান্নাঘরে চলে গেলেন। এরপর একে একে সব খাবার টেবিলে এনে সাজিয়ে সবাইকে ডাক দিলেন। সবাই বলতে শুধু রফিক আহমেদ, ফারহান আর নীলা। আজ সকালেই ফারহানের খালা-খালু, তানিশা আর সাকিব ওরা নিজেদের বাড়িতে চলে গেছে। সবাই খাবার খেতে আসলেও নীলা আসলো না। তাই রোকসানা বেগম নিজে এসে নীলাকে টেনে খাবার টেবিলে নিয়ে এসে একটা চেয়ারের মধ্যে বসিয়ে দিলেন। সবাই খাবার খাচ্ছে কিন্তু নীলা মনমরা হয়ে বসে আছে। এ দেখে রোকসানা বেগম একটা প্লেটে করে একটু খাবার নিয়ে নীলাকে জোর করে খাইয়ে দিতে গেলেন। কিন্তু দু লুকমার বেশি নীলা খেল না। শেষে রফিক আহমেদ রোকসানা বেগমকে ইশারায় বললেন তাকে যেন আর খাওয়ার জন্য জোর না করেন। রোকসানা বেগমও আর নীলাকে খাওয়ার জন্য জোর করলেন না। এরপর তিনি নীলাকে নিয়ে একটা রুমে এসে তাকে ঘুমিয়ে যেতে বললেন।
-“আমি ঘুমানোর সময় কেউ আমার মাথায় হাত বুলিয়ে না দিলে আমার ঘুম আসে না।” ভাঙা গলায় বললো নীলা।
নীলার কথাটা শুনে রোকসানা বেগমের বুকটা কষ্টে ফেটে উঠলো যেন। মা হারা মেয়েটার কষ্ট উনি বুঝতে পারছেন। কেননা তিনিও ছোটবেলায় নিজের মা’কে হারিয়েছেন। ভাগ্যিস উনার বাবা তখন বেঁচে ছিলেন নাহলে উনি হয়তো আজ এই স্থানে থাকতেন না। এরপর তিনি নীলাকে বিছানায় নিয়ে শুইয়ে দিয়ে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন। এইভাবে বেশ কিছুক্ষণ হাত বুলিয়ে দেওয়ার পর একসময় নীলা ঘুমিয়ে পরলো। এরপর তিনি সেখান থেকে উঠে ডাইনিং টেবিলে চলে আসলেন। ততক্ষণে সবার খাওয়া শেষ হয়ে গিয়েছে। রাবেয়া বেগমের শোকে রফিক আহমেদ বেশি খেতে পারেননি। আর ফারহানও কোনো একটা কারণে কয়েক লুকমা খেয়েই হাত ধুয়ে উঠে পরে। এদিকে কোনো এক অজানা কারণে রোকসানা বেগমও আর খাবার খেলেন না। সবকিছু গুছিয়ে তিনি ঘুমানোর জন্য চলে গেলেন।
.
পরেরদিন সকালবেলা নাস্তা করেই ফারহান অফিসে চলে গেল। ফারহানের সাথে নীলাও অফিসে আসতে চেয়েছিল কিন্তু রফিক আহমেদ নীলাতে যেতে দেননি। এদিকে ফারহান অফিসে এসে কিছুটা মন ভার করে বসে আছে। গতকাল সে যদি নীলাকে ওইসময় ছুটি দিয়ে দিত তাহলে হয়তো মেয়েটা তার মা’য়ের সাথে আরও কিছুক্ষণ কথা বলতে পারতো। কিন্তু মেয়েটার মা’য়ের যে ব্রেইন ক্যান্সার হয়েছে সেটা সে কাউকে কখনো বলেনি কেন এটাই ফারহান মনে মনে ভাবছে। বেশ কিছুক্ষণ এইসব নিয়ে ভাবার পর ফারহান অফিসের কিছু ফাইল চেক করতে লেগে পরলো। এইভাবে দেখতে দেখতে একসময় লাঞ্চ টাইম চলে আসলো। লাঞ্চ করে ফারহান আরও কিছুক্ষণ ফাইল দেখার কাজ করতে লাগলো। এইভাবে বেশ কিছুক্ষণ কাজ করার পর ফারহান একসময় ক্লান্ত হয়ে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে রইলো। একেবারে সন্ধ্যা হলে ফারহান অফিস বন্ধ করে বাসায় ফিরলো।
.
.
Loading…….
বিঃদ্রঃ ইদানীং সকল রিডার্সরা কমেন্টে একটা কথাই বলে যাচ্ছেন ফারহান আর আরশির মিল কবে হবে? ওদের মিল কি মূহুর্তের মধ্যেই করিয়ে ফেলা যাবে আপনারাই বলেন? এমন তো নয় যে দু’জন দু’জনকে মনে মনে পছন্দ করে। এমনটা হলে একসময় দু’জনের মধ্যে যেকোনো একজনকে দিয়ে অন্যজনকে প্রপোজ করিয়ে তাদের মিল করিয়ে দেওয়া যেত। বাট এমনটা তো করা যাবে না। তাহলে আপনারাই বলেন কীভাবে তাদের মিল দিব?
আরেকটা কথা, ফ্যামিলিতে ছোটখাটো সমস্যা চলছে তাই সেরকম লিখার মন-মানসিকতা মিলছে না। আর এ নিয়ে কিছুটা মানসিক চাপেও আছি। তাই গল্প ছোট হওয়াতে কেউ মাইন্ড করবেন প্লিজ 🙂
~সবাই নিয়মিত নামায আদায় করবেন আর নামাযের লাভ জানিয়ে অন্যদেরকে দাওয়াত দিবেন~