হৃদয়ের_মাঝে_তুই(সিজন – ০২) #লেখিকা__ফিহা_আহমেদ #পর্বসংখ্যা_১৬

0
362

#হৃদয়ের_মাঝে_তুই(সিজন – ০২)
#লেখিকা__ফিহা_আহমেদ
#পর্বসংখ্যা_১৬
[❌কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ ❌]

সবাই চিন্তিত ঝিনুককে নিয়ে ওর যেন খারাপ কিছু না হয়। সৃষ্টিকর্তার কাছে সবাই মনে মনে প্রার্থনা করছে।
রওশান দেয়ালের সাথে পিঠ দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
ওদের সবার চিন্তার মাঝে হাসপাতালে কেউ কান্না করতে করতে ঢুকলো।

সবাই পিছনে ফিরতেই একজন ক্রন্দনরত মহিলাকে দেখতে পেলো সাথে দুই বছরের একটা ছোট্ট মেয়ে।
মহিলাটি কান্না করতে করতে ফিহার কাছে এসে
—— মা তুমি আমার মেয়েকে দেখেছো।
ফিহা কিছুই বুঝতে পারছে না। আসলে মহিলাটি কোন মেয়ের কথা বলছে।
মহিলাটি আবার লাবিবা কাছে এসে…..তোমরা কি কেউ আমার মেয়েকে দেখেছো।
মহিলাটির মেয়ের কথা শুনেই সবার কলিজা কেঁপে উঠল…… ওনি ওই মৃত মেয়ের মা নয়তো।
তখনই দুজন নার্স একটা সাদা কাপড় মোড়ানো মৃত দেহ নিয়ে মহিলার সামনে রেখে……
নার্সঃ আপনি কি এই মেয়ের কথা বলছেন।
মহিলাটি কাঁপা কাঁপা হাতে মৃত দেহটির মুখ থেকে কাপড় সরিয়ে…. এক গগনবিদারী চিৎকার দিয়ে দেহটিকে ধরে কান্না করতে থাকে।
সবার বুঝতে বাকি রইলো না এই মহিলাটি মেয়েটির মা।
মহিলার সাথে আসা দুই বছরের ছোট মেয়েটি মহিলার চিৎকারে ভয় পেয়ে মহিলার আঁচলটি শক্ত করে ধরলো।
ছোট্ট মেয়েটি খুব ভয় পেয়েছে চিৎকার করে কান্না করতে দেখে।

মহিলাটি কান্না করেই যাচ্ছে নার্স কেউই থামাতে পারছে না।
ছোট্ট মেয়েটি মহিলার সামনে গিয়ে…..মা তুমি কাদতোঁ তেন। আপপু তেন দুমিয়ে আতে।আজতে আপপু তেন আমাল দন্য চতলেত আনেনি।
মহিলাটি কোনো কথা না বলে কেঁদেই যাচ্ছে।
মেয়েটির মা কথা বলছে না দেখে মেয়েটি নিজের বোনের মুখের কাছে গিয়ে.রাগ দেখিয়ে .. এই আপপু উত।উত বলতি। মা তান্না করতে উত বলতি। দুমিয়ে আতিত তেন।তুই না আত সতালে অনেনেনেত দুমিয়েতিত।
মা তান্না করতে উত উত আপপু।পতাঁ। তুই পতাঁ।
ছোট্ট মেয়েটি বোনকে কথা বলতে না দেখে কান্না শুরু করে দেয়।
উপস্থিত সবার চোখ দিয়ে জল পরছে।
সত্যি এই ছোট মেয়েটিকি জানে তার বোন আর নেই।
সবাই কান্না করছে।

ফাহাদ ছোট মেয়েটির সামনে এসে মেয়েটিকে কোলে তুলে নিলো।
ফাহাদঃ মামনি কান্না করো না। তোমার চকলেট চাই তো এই নেও চকলেট।
ছোট্ট মেয়েটি রাগ দেখিয়ে… না না আমি তাব না আংতেল।দেত আপপু আমাল সাতে কতা বলে না।আপপু তুব পতাঁ হয়ে গেতে।
ছোট মেয়েটিকে ফাহাদ এইভাবে কথা বলতে দেখে বুকটা যেন ছিঁড়ে যাচ্ছে।

কিছুক্ষণ পর মহিলার বোন এসে মহিলাকে, ছোট মেয়ে আর মেয়েটির মৃত দেহটি নিয়ে গেলো।
যাওয়ার সময় ফাহাদ মহিলার বোনের হাতে কিছু টাকা দিয়ে দিলো।
ফিহার ফাহাদের এই কাজে খুব ভালো লাগলো।
ফিহা মনে মনে….. সত্যিই ওনি একজন ভালো মনের মানুষ। এই সময়ে মহিলার টাকাগুলো খুব প্রয়োজন।

কিছুক্ষণ পর ডাক্তার আসলো…
রওশানঃ ডাক্তার ঝিনুক…
ডাক্তারঃ আপনাদের ভাগ্য অনেক ভালো। সঠিক সময়ে চিকিৎসার জন্য রোগী এখন সুস্থ আছে।ঘুমের ওষুধ দেওয়া হয়েছে। জ্ঞান ফিরলে আপনাদের সাথে দেখা করানো হবে।
ডাক্তার চলে গেলেন।
সবাই স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো।
ফাহাদঃ যাক সব ঠিক হয়ে গেছে । এখন আর চিন্তার কোনো কারন নেই।

ঝিনুকের জ্ঞান ফিরতেই নিজেকে হাসপাতালের বেডে দেখতে পেলো।
নার্স ঝিনুকের জ্ঞান ফিরতে দেখে ডাক্তার কে কল করলো।
ডাক্তার এসে ঝিনুককে দেখে গেলেন।
ডাক্তার কেবিন থেকে বের হয়ে…… আপনাদের রোগী এখন সুস্থ। কালকে বাড়িতে নিয়ে যেতে পারবেন।ঠিক মতো ওষুধ গুলো খাইয়ে দিবেন।তাহলে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যাবে।
রওশানঃ ডাক্তার এখন দেখা করা যাবে।
ডাক্তারঃ কেন নয় অবশ্যই পারবে।
ডাক্তার রওশান এর কাঁধে হাত রেখে….. এইভাবেই প্রিয় মানুষটিকে ভালোবেসে যেও।
রওশান মুচকি হেসে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বললো।
সবার মুখে খুশির ঝিলিক।
একে একে সবাই ঝিনুকের সাথে দেখা করলো।শেষে রওশান গেল।
রওশানকে দেখে ঝিনুক মুখ ফুলিয়ে অন্য দিকে তাকালো।
ঝিনুককে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে দেখতে রওশানের খুব খারাপ লাগলো।
রওশানঃ মিস ধানিলংকা আমার সাথে একটুখানি কথা বলবেন কি…
ঝিনুক রওশান এর দিকে তাকালো…. কেন জানি আজ ধানিলংকা নামটা মধুর মতো লাগছে।
ঝিনুক গম্ভীর কণ্ঠে… কি বলবেন বলেন।
রওশানঃ আপনার শরীর এখন কেমন লাগছে।
ঝিনুকঃ ভালোই।
রওশান আর কিছু না বলে ঝিনুকের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
ঝিনুক রওশানকে এইভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে খুব বিরক্ত হলো।
ঝিনুকঃ আর কিছু বলবেন কি।
রওশান মিনমিন কন্ঠে বললো….. অনেক কিছুই বলতে চাই।
ঝিনুক ব্রু কুঁচকে,, মানে
রওশানঃ কি..কিছু না।

দুদিন পর ঝিনুককে ফিহাদের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হলো।
মিসেস রাজিয়া ঝিনুকের কোনো ত্রুটি রাখেননি।যথাসাধ্য ঝিনুকের সেবা করছেন।
ফিহার মায়ের ভালোবাসা পেয়ে ঝিনুকের নিজের মায়ের কথা মনে পরলো।
ঝিনুকঃ ফিহা এই ফিহা তুই কই।
ফিহাঃ এইতো আসছি দু মিনিট।
ফিহাঃ হ্যাঁ বল কিছু লাগবে।আম্মুকে বলে এখনই করে দিচ্ছি।
ঝিনুকঃ এত ব্যাস্ত হওয়ার কি আছে।মায়ের কথা মনে পরছে।তোর মোবাইল দে কথা বলবো।
ফিহাঃ এই নে কথা বল।
ঝিনুক মুচকি হেসে ফিহার হাত থেকে মোবাইল নিলো।
……………..***……………..
মীরা বেগম রান্না করছিলেন।তখনই মোবাইল বেজে উঠল।
মীরা বেগমঃ এখন আবার কে ফোন করলো।
মীরা বেগমঃ হ্যালো।
মায়ের কন্ঠ স্বর শুনে ঝিনুকের মনটা ভালো হয়ে গেল।
মীরা বেগমঃ কথা বলছেন না কেন।
ঝিনুকঃ মা……
মীরা বেগম চমকে উঠলেন….ঝিনুক।
মীরা বেগমঃ পড়াশোনার চক্করে মাকে তো ভুলেই গেলে তুমি।
ঝিনুক কান্নারত কন্ঠে…. সরি মা আর দু-তিন দিন তারপর চলে আসবো।প্লিজ আমার লক্ষি মা।
মীরা বেগমঃ আচ্ছা আচ্ছা বাবা ঠিক আছে কান্না করো না। কেমন আছো।
ঝিনুকঃ ভালো মা তুমি।
মীরা বেগমঃ মেয়েকে ছাড়া কিভাবে ভালো থাকা যায়।
ঝিনুকঃ কি করছো মা।
মীরা বেগমঃ রান্না করছি।
ঝিনুকঃ এই সময়ে কেন।
মীরা বেগমঃ তোর খালামনি আসবে ফোন করে বললো।তাই।
ঝিনুকঃ আচ্ছা। তুমি রান্না করো।পরে কথা বলবো।
মীরা বেগমঃ ঠিক আছে। সাবধানে থাকবে।

চলবে………
[ভুল হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here