-‘এলোকেশী কন্যা’-
[২২]
লেখনীতে:- নূরজাহান আক্তার (আলো)
সুজন এখনো রোদের দিকে অবিশ্বাস্য চাহনি নিয়ে তাকিয়ে আছে। ওর কাছে রোদকে বড্ড অচেনা লাগছে। সে কর্মচারি বাদেও রোদের মামাতো ভাই। মামার বিশেষ অনুরোধে রোদ চাকরিটা ওকে দিয়েছিল। ভাইয়ের সঙ্গে রোদ এমনটা করতে পারল? ওর বিবেকে বাঁধল না? সুজন রোদকে কিছু বলার ভাষা খুঁজে পেলো না। রোদ তখন ক্রোধ নিয়ে সুজনের দিকে একটা ফাইল ছুঁড়ে দিলো। আর ফাইলটা ছিঁটকে গিয়ে পড়ল সুজনের পায়ের কাছে।। সুজন সেটা তুলে দেখে মাথায় নিচু করে নিলো। ওর সব জারুজুরি ফাঁস হয়ে গেছে। উফ! এত পাক্কা খেলোয়াড় হয়েও ধরা পড়েই গেল। ধুর, চালে সামান্য ভুল করে ফেলেছে। রোদ তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে হেলান দিয়ে বসে ঘৃণিত কন্ঠে বলল,
” তিন দিনের মধ্যে আমার সব টাকা চাই-ই চাই। আর ওই’টা বেরিয়ে যাওয়ার দরজা।”
“ভাই, প্লিজ একটা সুযোগ দাও।”
রোদ মুখে আঙ্গুল দিয়ে চুপ থাকার ইশারা করে বেরিয়ে যেতে বলল। সুজন আর কিছু বলার মুখ না পেয়ে বেরিয়ে গেল। সুজনের প্রিয় মানুষটা অর্থাৎ সূচির কোনো অপারেশন হয় নি। সুজন সব মিথ্যা বলেছে। আর সেই টাকা নিয়ে সে নেশা করেছে। সুজন নেশা করে জেনে সূচির তিন মাসে আগে ওর সাথে ব্রেকআপ করেছে। কারণ এভাবে মিথ্যা বলে সুজন ওর থেকেও টাকা নিতো। সূচি ওকে সময়ও দিয়েছিল, নিজেকে এই পথ থেকে শুধরানোর। কিন্তু এর বিনিময়ে সুজন ওকে বিশ্রীসব গালাগাল করেছে, নোংরা অফারও অবধি দিয়েছে।
এসবে অতিষ্ঠ হয়ে সূচি সুজনের সঙ্গে আর যোগাযোগ করে না। সে সুজনের থেকে মুক্তি পেয়ে যেন হাফ ছেড়ে বেঁচেছে।রোদের ভাই বলে ওকে ছাড় দিলেও একজন নেশাখোরকে ছাড় দেওয়া যায় না। মিষ্টি কথায় মন ভুলালেও না। কারণ নেশাখোরদের কোনো জাত-ভাস নেই। আজ সে না জানিয়ে টাকা নিচ্ছে, নেশা উঠলে কাল চুরি করতে দু’বার ভাববে না। আর রোদ এটা কখনোই মানবে না। কারণ এসব ওর কঠোর পরিশ্রমের ফল। সে একটু একটু করে নতুন করে সব গড়ে তুলেছে, শুধুমাত্র বাবার কষ্ট বৃথা যেতে দিবে না ভেবে। আর
ভাইয়ের মতো ভাইয়ের জন্য প্রাণ দেওয়া যায়। কিন্তু একজন নেশাখোরের জন্য চুল পরিমাণ ছাড়ও দেওয়া যাবে না। সে যতই পরম আত্মীয় হোক। কালকে আকাশ প্রমানসহ এসব তথ্য রোদকে দেখিয়েছে। তাই রোদও আর ভাইরাস রাখল না। কারণ সে বেইমানী সহ্য করতে করে না। ওর কলিজায় জায়গা দেওয়া মানুষও যদি বেইমানী করে, তার দিকেও থুথু ফেলে দূরে সরাতে দু’বার ভাববে না। কেন জানি সে মানুষটাই এমন!
ওদিকে রিমি জুরুরি কল পেয়ে তখনই চলে গেছে। আলো মেঘকে দুপুরে গোসল করিয়ে খাইয়ে,আড্ডা দিয়ে, অনেকটা সময় কাটাল। তারপর বিকালে দু’জনে বাগানের আগাছা পরিষ্কার করে, গাছে পানি দিলো। রং বেরংয়ের ফুলগুলো আলতো করে ছুঁয়ে দেখল। মেঘ একটা লাল গোলাপ ছিঁড়ে আলোর খোঁপাতে গুঁজে দেওয়ার চেষ্টা করল। কিন্তু পারল না! তাই আলো নিজেই ফুলটা খোঁপাতে ফুল গুঁজে মুচকি হেসে বলল,
“মেঘবাবু আমাকে কেমন লাগছে?”
“ওয়াও লাগছে।”
আলোর খোঁপার ফুলটা আলতো করে ছুঁয়ে মেঘ সেকি খুশি।
নরম ঘাসের উপর দু’জনে খালি পায়ে হাঁটাল। একে অপরের সাথে ছোঁয়াছুঁয়ি খেলা খেলল। তারপর মাগরিবের আজান দেওয়াতে দু’জনেই বাসায় চলে এলো।মেঘ দৌড়ে যেতে যেতে আলোকে বলল ‘সে হিসু করে এখনই আসছে। খুব জুরুরি বিভাগ।’ মেঘের এমন কান্ড দেখে আলো হেসে ড্রয়িংরুমের সোফায় বসল। একটুপরে, মেঘ নাচতে নাচতে রুমে প্রবেশ করে, আলোকে কাঁদতে দেখে বেশ অবাক হলো। আলো বালিশে মুখ গুঁজে শব্দ করে কাঁদছে। হঠাৎ বউমনি কাঁদছে কেন? কষ্ট হচ্ছে? পেটে ব্যাথা, নাকি মাথাব্যথা? বউমনি পড়ে গিয়ে ব্যথা পেলো না তো? মেঘ কিছু জিজ্ঞাসা করার সাহসও পাচ্ছে না। আলোকে এভাবে কাঁদতে দেখে মেঘের চোখেও পানি জমে গেছে। মেঘের উপস্থিতি টের পায়নি বিধায় আলো এখনো কাঁদতে ব্যস্ত। মলিন মুখে মেঘ আলোর দিকে তাকিয়ে হঠাৎ ওর রোদের কথা মনে হলো। দাভাই! হ্যাঁ, দাভাইকে জানালে ভালো হবে ভেবে মেঘ দৌড়ে চলে গেল। ড্রয়িংরুমে গিয়ে মেঘ অন্য ফোন থেকে রোদকে কল দিলো।এখন বাজে সন্ধ্যা ছয়’টা পঁয়ত্রিশ।রোদ ফেরার পথে মাঝ রাস্তায় জ্যামে আটকে গেছে। প্রচন্ড বিরক্ত নিয়ে সে গাড়িতে বসে আছে। হঠাৎ বাসার নাম্বার থেকে কল পেয়ে রোদ রিসিভ করে কিছু বলার আগে মেঘ বলল,
“দা দাভাই, তাড়াতাড়ি বাসায় এসো। বউমনি মেলা কাঁদছে। ”কাঁদছে কেন?”
“জানি না আমি। তুমি তাড়াতাড়ি এসো।”
“এই তো আর কিছুক্ষণের মধ্যে আসছি।”
“আচ্ছা।”
কথাটা বলে মেঘ কল কেটে দৌড়ে আলোর কাছে চলে গেল। আলো ওয়াশরুমে থেকে হাত মুখ ধুয়ে চুলে চিরুণী করছিল। ওর এমন ভাব যেন কিচ্ছু হয় নি। মেঘকে দেখে আলো মুচকি হেসে ওর পাশে বসতে বলল। মেঘ গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে পাশে বসে আলোর মুখে দিকে তাকাল। বউমনি আর কাঁদছে না দেখে মেঘ মিষ্টি হাসল। আলোর মেঘের চুলগুলো আঁচড়ে নিজের চুলে চিরুণী করে খোঁপা করে নিলো। মেঘ আলোর মুখে মুখে তাকাচ্ছে, কিন্তু কিছু বলছেনা দেখে আলো অন্য গল্প জুড়ে দিলো। প্রায় আধা ঘণ্টা পর রোদ বাসায় ফিরে দেখে আলো মেঘকে কাতুকুতু দিচ্ছে। আর মেঘকে খিলখিল করে হাসছে৷ ওদের দেখে রোদ আর না দাঁড়িয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেল। দাদীমার কথা মনে করে আলো কাঁদছিল ভেবে রোদ আর ব্যাপারটা ঘাটলো না। সন্ধ্যায় হালকা নাস্তা সেরে মেঘকে কিছুক্ষণ পড়িয়ে ওরা রাতের খাবার খেয়ে নিলো। এখন বাজে রাত সাড়ে এগারো টা। মেঘ অনেকক্ষণ আগেই ঘুমিয়ে গেছে।
আলো চুপ করে ওর বেলকনিতে দাঁড়িয়ে রাতের ব্যস্ত নগরী দেখছে। এই শহরটা বড্ড অদ্ভুত! এত রাতেও গাড়ি চলছে, কত্ত মানুষের সমাগম, লাইটের ঝলকানি। অথচ পাহাড়ে সন্ধ্যার পর পরই আর কাউকে দেখা যায় না। সব ঘুটঘুটে অন্ধকার। পথ চেনারও উপায় নেই। আলোর মনে হঠাৎ প্রশ্ন জাগলো, এই শহরের মানুষগুলো কী ঘুমায় না? রাস্তার লাইট গুলো বন্ধ হয়ে কী নিশ্চুপ নগরী হয় না? অন্ধকার কী এই নগরীটাতে পুরোপুরি গিলে খেতে পারে না? এটা শহর বলেই কী সব মাফ! আলো উত্তর না পেয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে রোদের বেলকণিতে তাকাল। সেখানে নীল রংয়ের একটা লাইট জ্বলছে। সবকিছু নীল দেখাচ্ছে! শুভ্র রংয়ের টাওয়াল’টাও নীলে ডুবে রশিতে ঝুলছে। মৃদু বাতাসে কখনো নড়েও উঠছে।
তখন রোদ রুমের দরজা নক করে শব্দহীন পায়ে আলোর রুমে প্রবেশ করল। আলো রোদকে দেখে মাথা নিচু করে মৃদু কন্ঠে বলল,
“কিছু বলবেন?”
“ছাদে চলো।”
কথাটা বলে রোদ সিঁড়ির দিকে এগোতে লাগল। আলোর থেকে উত্তর জানার প্রয়োজন মনে করল না। আলো মলিন হেসে রোদের পিছু পিছু ছাদে গেল। ছাদে পা রাখতেই একটা দমকা বাতাস এসে পুরো শরীরে শিহরণ বইয়ে দিলো। মাথার ওড়নাটা এলোমেলো করে দিলো। নির্মল বাতাস আর ফুলের গন্ধে মনটা ক্ষণিকের জন্য ভালো হয়ে গেল। মুখে ফুটল মিষ্টি হাসি! রোদ রেলিং ঘেষে দাঁড়িয়ে দূর প্রান্তরে তাকিয়ে শান্ত কন্ঠ বলল,
“এখানে থাকতে কী খুব খারাপ লাগছে?
” জ জি না। ”
রোদ আলোর দিকে একবার তাকিয়ে দৃষ্টি সরিয়ে জানাল, আগামীকাল শুক্রবার! আর কালকেই দাদীমা, মকবুল আর মুনের মায়ের জন্য দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। যে মসজিদে রোদের বাবা মায়ের জন্য প্রতি শুক্রবার দোয়া করা হয়। সেখানেই মূলত এই আয়োজন করা হয়েছে। যদিও এই মসজিদটা রোদের টাকা এবং নিদর্শনায় বানানো। তবুও সে একথা কাউকে বলে না। মসজিদ হচ্ছে আল্লাহর ঘর! আর মুসলিমদের ইবাদত খানা। আল্লাহ ওকে সামর্থ্য দিয়েছে তাই মসজিদটা বানিয়ে দিয়েছে। তবে, এটা আমার! আমার তৈরীকৃত মসজিদ, আমার টাকার! এসব বলে বেড়ানোর মন মানসিকতা রোদের নেই। আর যাই হোক, সে কখনো বড়াই করা পছন্দ করে না। বড়াই করার জন্য মসজিদটাও গড়ে নি। সে মূলত করেছে, ওর বাবা মায়ের জন্য দোয়া কুড়াতে। বাবা মায়ের সাথে পরিস্থিতি মোতাবেক দাদীমা’রাও এখন জুড়ে গেছে। উনারা মারা যাওয়ার পর উনাদের জন্য কিছু করাও হয়নি।
আলো চুপ করে রোদের কথাগুলো শুনল। সে ভুলেও রোদের থেকে এতকিছু আশাও করে নি। অথচ রোদ এখন অবধি যা করেছে বা করে যাচ্ছে, সবটাই ওর কাছে অধিকতর পাওয়া। সচারচর আপন মানুষরাও তো এসব করে না। অথচ এই মানুষটা! আলোকে চুপ থাকতে দেখে রোদ ওর দিকে ঘুরে বলল,
“জানি, এখানে মানিয়ে নিতে কষ্ট হচ্ছে। তবে তুমি যতক্ষণ না নিজে এটা তোমার বাসা ভাববে, ততক্ষণ এখানে তোমার মন টিকাতে পারবে না। আমার আম্মুর পরে, এই সংসারটা যত্নে আগলে রাখার মতো কেউ আসেনি। আর আসবে কী না তাও জানি না। এখানে কেউ হাতে গড়ে কিচ্ছু শেখাবে না। সবকিছু নিজের ভেবে আপন করে নাও। আর দেখছোই তো, বর্তমানে সব কাজ সার্ভেন্টরাই করে। শুনে নাও,তাদের থেকে তোমার অধিকারটা কিন্তু সর্বদা বেশি। ওদের জন্য নিজেকে গুটিয়ে রেখো না। কারণ তুমি হচ্ছো মেঘের বউমনি! আর মেঘ হচ্ছে এই বাসায় প্রাণ! তুমি সামান্য মন খারাপ করলে মেঘ কাঁদতে শুরু করে। ঠিক আজকের সন্ধ্যার মতো। মানিয়ে নাও আর সংকোচ ত্যাগ করো।”
রোদের কথা শুনে আলো অবাক চাহনি নিয়ে রোদের দিকে তাকাল। ওর কান্নার কথা তাহলে রোদ মেঘ দু’জনেই জানে।
আলো একপ্রকার অপরাধবোধ নিয়ে মাথা নিচু করে নিলো। মূলত ওর জন্য দুই ভাই কত কিছু করছে। আর সে বোকার মতো কান্না করে ওদেরকেই কষ্ট দিচ্ছে। এই ব্যাপারটা সত্যিই দৃষ্টিকটু লাগছে। আলোর অস্বস্তি সরাতে রোদের যতটুকু যা বলার বলে দিয়েছে। দেখা যাক, আলো রোদের কথা ধরতে পারে নাকি? বুঝতে পারে নাকি রোদের ইঙ্গিত! রোদ সময়টা দেখে আলোকে নিচে চলে যেতে বলল। আলোও বিনাবাক্যে রোদের কথাগুলো ভাবতে ভাবতে নিচে নেমে এলো।
পরেরদিন পূর্বাকাশে সূর্য তার উপস্থিতি জানিয়ে নতুন দিনের সূচনা করল। মিষ্টি রোদের আলো ছড়িয়ে পড়ল পুরো শহর জুড়ে। সেই সাথে নতুন একটা সকালের উদয় হলো আলোর জীবনে। আলো সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়ে, ছাদে বেশ কিছুক্ষণ সময় কাটাল। এখানকার সকালের মৃদু বাতাসটা পাহাড়ের মতো না হলেও, মন্দ না! আলো চোখ বন্ধ করে আজকের সারাদিনের কার্যক্রম মনে মনে ভেবে নিলো।
তারপর গেল রান্নাঘরে। রাকার এক পাশে দাঁড়িয়ে কীভাবে কী করতে হয় বুদ্ধি খাঁটিয়ে জেনে নিলো। এই যেমন, গ্যাসের চুল, মিক্সার, ওভেন, কফি মেকার, প্রেসার কুকার, রাইস কুকারসহ ইলেকট্রনিক জিনিসের ব্যবহার আর কি। রাকাও খুব সুন্দর করে সবটা বুঝিয়ে দিলো। সকালে রোদ আর মেঘ নাস্তা করতে বসে সার্ভেন্টকে ডাকার আগে আলো খাবার বেড়ে দিলো। রোদ’রা সকালে সাধারণত, ব্রেড, জ্যাম, বাটার, ফলের জুস, ডিম সিদ্ধ, দুধ, অমলেট খায়। অথচ আজ সেদ্ধ আটার রুটি, মাংস, আলুর ভাজি, আর ডিম দেখে অবাক হলো। কারণ রোদ সকাল বেলায় এসব খাবার এড়িয়ে চলে। তবে আজ কেন জানি কিছু না বলে খাওয়াতে মন দিলো। আলো তখন মেঘকে খাওয়াতে খাওয়াতে বলল,
“জানো মেঘবাবু, সকালের খাবারটা পেট ভরে খাওয়া উচিত।”
“কেন?
“সারারাত না খাওয়ার ফলে শরীরের অঙ্গগুলো অচল হতে থাকে। আর প্রত্যকটা অঙ্গকে সচল করতেই খাওয়া উচিত।
সকালের খাবার রাজার, দুপুরের প্রজা, আর রাতের খাবার
ভিক্ষুকের মতো হওয়া উচিত। যদিও আমি তেমন কিছু জানি না, তবে আমার দাদীমা বলতেন। আমি উনার থেকে জেনেছি আর কি!”
কথাগুলো বলে আলো আড়চোখে একবার রোদের দিকে তাকাল। খাবার দেখে রোদ রেগে যায় নাকি এটাই ভাবছিল। কিন্তু তেমন কিছু হলো না দেখে হাফ ছেড়ে বাঁচল। সে একটু ভয়ে ভয়েই ছিল। তখন রোদ আলোর দিকে না তাকিয়ে গ্লাস রেখে বলল,
“আমার উদ্দেশ্যে বলছো ভালো করেই বুঝছি। নাস্তা সম্পর্কে সার্ভেন্টকে জানিয়ে দিও। আর আমরা বেশি ঝাল কিছু খেতে পারিনা। এটা শুধু মাথায় রেখো! পরবর্তীতে পিঞ্চ না করে, যা বলার সরাসরি বলবে। তোমার কাজে কেউ বাঁধা দিবে না। আর হ্যাঁ, একটুপর রবি তোমার কলেজের সব বই এনে দিবে। আজ সন্ধ্যার পর তোমরা দু’জন আমার কাছে পড়তে বসবে। আর মনে করিয়ে দিতে যেন নাহয়।”
পুরো কথা শুনে আলো হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়াতে গিয়ে থেমে গেল। ছাতার মাথা এই অভ্যাস ওর কবে যাবে, কে জানে! রোদ খেয়ে উঠে মাহফিলের আয়োজনের কাজ কতটুকু এগোলে দেখতে গেল। আজ বিকালে মসজিদেই আয়োজন করা হয়েছে। আলোও খেয়ে সব গুছিয়ে মেঘকে নিয়ে ওর রুমে চলে গেল।
ওদিকে মাতবর তার সহধর্মিণীর উপর প্রচন্ড রেগে বেধড়ক মারলেন। যতক্ষণ না উনার রাগ কমলো। উনার রাগের মূখ্য কারণ খাবার দিতে দেরী হয়েছে। কেন দেরী হবে? বাড়িতে কী এমন কাজ যে দেরী হবে? সাহসই বা কী করে হয় উনার কাজে বিলম্ব করার! তাছাড়া বিশ্রী গালাগালের সাথে উনার ভাষ্যমতে, ‘উনার বউয়ের শরীরে জং ধরেছে তাই মেরে জং ছুটালেন। মেয়ে মানুষকে সোজা করার জন্য মাইরের উপরে আর কিছু নেই।’
মতি অদূরে বসে বসে সব দেখল। না বাবাকে থামাল আর না কিছু বলল। বরং সম্পর্কে মায়ের মতো একজনকে ব্যাথায় ছটফট করতে দেখে মিটিমিটি হাসল। ব্যাপারটা ওর কাছে খুব মজা লাগল। সে প্রায়ই এই মজাগুলো উপভোগ করে।
আর ওই মহিলা মেহগুনির কাঁচা ডালের মার খেয়ে ছটফট করে মাটিতেই জ্ঞান হারালেন। তখন মতির এক চ্যালা দৌড়ে এসে জানাল, সকালে পাহাড়ে ঘুরতে আসা একটা মেয়েকে ওরা ধরেছে। মেয়েটা নাকি একা ছিলো। আর দেখতেও খুব সুন্দরী! মতি হেসে ওর চ্যালার কাঁধে চাপড়ে বলল,
“কেউ এঁতো কলিছ নি তো? আমি কুন্তু কালো এঁতো কিচু খাই না।”
মতির কথা শুনে চ্যালা সুন্দর একটা হাসি দিয়ে মাথা নাড়াল।
অর্থাৎ মেয়েটাকে ছুঁয়ে দেখে নি। মতি খুশি হয়ে সেদিকে পা বাড়াল। আহত হয়ে ওর শরীরটা বেশ অচল লাগছিল। যাক সচল করার কিছু পেয়ে গেল।
To be continue……..!!