‘সুদর্শন শঙ্খচিল’
[০৬]
লেখনীতে:- নূরজাহান আক্তার (আলো)
তুয়া কাঁদতে কাঁদতে বাসায় ঢুকল। প্রত্যয়ের আম্মু সহ কয়েকজন ভাবিরা মিলে তুয়াদের দরজার সামনে গল্প করছিলেন। তুয়াকে দেখে সবার কথা বন্ধ হয়ে গেল। তুয়া কাঁদতে কাঁদতে ওর আম্মুকে জড়িয়ে ধরল। তুয়া উচ্চশব্দে কেঁদে কেঁদে বলল, “আম্মু! আম্মু গো! আমার সাথে কেন এমন হলো? তোমার মেয়ে নোংরা হয়ে গেছে, আম্মু।”
তুয়ার আম্মু মেয়ের কথা শুনে থরথর করে কাঁপছেন। ওখানকার উপস্থিত সবাই হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে। তুয়ার ছেঁড়া জামা, কাটা ঠোঁট, এলোমেলো চুল, গলা-হাতে আঁচড়ের দাগ থেকে স্পষ্ট যে ওর সাথে কি ঘটেছে। তুয়ার আম্মু মেয়ের অবস্থা দেখে যেন ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন। তুরাগ কেবল অফিস থেকে বাসায় ফিরল। তুয়ার আম্মু মেয়ের অবস্থা দেখে সেন্সলেস হয়ে গেলেন। সবাই উনাকে ধরে রুমে নিয়ে গেল। তুরাগ বাসায় ঢুকে এত মানুষ দেখে আতংকে উঠল। সে ধীর পায়ে ওর আম্মুর রুমে গেল। প্রত্যয়ের আম্মু তুয়ার আম্মুর মুখে পানি ছিটাচ্ছেন, তবুও উনার সেন্স ফিরছে না। তুয়া কাঁদতে কাঁদতে ওর আম্মুর হাতে পায়ে মালিশ করছে। তুরাগ দ্রুত এসে ওর আম্মুকে ডাকতে লাগল। উনার কোনো সাড়াশব্দ নেই। পানি ছিটানো, হাতে-পায়ে মালিশ করার বেশ কিছুক্ষণ পর উনার সেন্স ফিরল। উনি তুয়ার দিকে তাকিয়ে ডুকরে কেঁদে উঠলেন। তুরাগ এবার তুয়ার দিকে খেয়াল করল। তুয়ার অবস্থা দেখে ওর মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল। বোনকে দেখে ওর কলিজা কেঁপে উঠল। তুয়া কাঁদতে কাঁদতে ওর রুমে চলে গেল।
এতটুকু সময়ের মধ্যে তুয়ার ধর্ষিত হওয়ার খবরটা চারদিকে ছড়িয়ে গেল। খারাপ খবর নাকি বাতাসের আগে ছড়ায়। এখানে ব্যাপারটা তাই ঘটল। এটা নিয়ে পুরো বিল্ডিং জুড়ে কানাঘুষা চলছে। বিল্ডিংয়ের অনেকে এসে ওদের শান্তণার বাণী দিয়ে যাচ্ছে। কেউ বা আকার ইঙ্গিতে কটু কথা শুনাচ্ছে। কেউ বা তুয়ার বিয়ে নিয়ে আপসোস করছে। তুয়া ওর রুমে বসে উচ্চ শব্দে কাঁদছে। প্রত্যয়ের আম্মু তুয়ার আম্মুকে বলছেন, “ভাবি কাঁদবেন না। আপনি ধৈর্য ধরুন। মেয়েটাকে তো আপনাকেই সামলাতে হবে।”
“আমার কপাল পুড়েছে, ভাবি। আমিই জানি আমার কি হচ্ছে। আজকে সবাই আমাকে সান্ত্বনার বাণী শুনাচ্ছে। কাল সবাই আমার মেয়ের দিকে আঙ্গুল তুলবে। তাকে উঠতে বসতে কথা শুনতে হবে। আমি মা হয়ে কিভাবে সহ্য করব? আমার মেয়েটার শরীরে যে ধর্ষিতার কালিমা লেগে গেছে। আমার কলিজার টুকরো মেয়েটার এবার কি হবে? আল্লাহ! আল্লাহ গো! আমি কি অপরাধ করেছিলাম? আমাকে কেন এমন বিপদে ফেললে? গো আল্লাহ?”
প্রত্যয়ের আম্মু আর কিছু বললেন না। তুয়ার আম্মু উচ্চশব্দে কাঁদছেন। উনি মা হয়ে মেয়ের এত করুণ অবস্থা কিভাবে সহ্য করবেন? উনার কলিজার টুকরো মেয়েটার লোকচক্ষুর সামনে কিভাবে দাঁড়াবে? সমাজের লোকদের কটু কথার হাত থেকে মা হয়ে উনি কিভাবে মেয়েকে রক্ষা করবেন? আমাদের সমাজে ধর্ষকের থেকে ধর্ষিতার শাস্তি হয় বেশি। তুয়াও এখন ধর্ষিতা। তার শরীরেরও লেগেছে ধর্ষিতার ট্যাগ। সমাজের মানুষ আদৌও স্বাভাবিক ভাবে ওকে বাঁচতে দিবে তো?
তুরাগ আর ওর বাবা সোফাতে বসে চোখের পানি ফেলছেন। বোনের এত করুণ অবস্থা তুরাগও মানতে পারছে না। বোনের চোখের পানি সে সহ্য করতে পারে না। বোনকে শক্ত করতে হবে, ওকে সাপোর্ট দিতে হবে, ভেঙ্গে পড়লে চলবে না। আর পাঁচজনের মতো সে বোনকে তিলে তিলে মরতে দিবেনা। সবার মতো সে বোনের দিক থেকে মুখ ফিরাবে না। সে তুয়ার সাপোর্টার হবে। ভাই হয়ে বোনের জন্য সব লড়াই করতে সে সর্বদা প্রস্তুত। এসব ভেবে তুরাগ উঠে তুয়ার রুমে গেল।
তুয়া বন্ধ রুমে ততক্ষণে ওর হাতের রগ কেটে ফেলেছে। তুয়া বিরবির করে বলল,” সরি! আমি খুব সরি।” কথাটা বলে তুয়ার নিভু নিভু চোখ বন্ধ হয়ে গেল। ওর রক্তে বেডশীট ভিজে গেছে। সে যে ধর্ষিতা নামক অভিশাপ অভিশপ্ত হয়ে গেছে। তুয়া ধর্ষিতার ট্যাগ নিয়ে বাঁচতে চায় না। কারো কটু কথা শোনার শক্তি তার নেই। বাবা-ভাইয়ের মাথা নিচু করাটা সে কিছুতেই সহ্য করতে পারবে না। সে সমাজের চোখে খারাপ হয়ে গেছে। রাস্তা দিয়ে আসার সময় অনেকে ওকে দেখে হেসেছে। কেউ বা অবাক চোখে ওর দিকে তাকিয়ে থেকেছে। তুয়ার নিজের প্রতি ঘৃণা লাগছে, প্রচন্ড ঘৃণা। আর এই ঘৃণা নিয়ে সে বাঁচতে চায় না, কিছুতেই না। এজন্য সে এই পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দু’বারও ভাবল না।
তুরাগ বোনের অবস্থা দেখে দৌড়ে বোনের কাছে গেল। সে তুয়াকে পাগলের মতো ডাকতে লাগল। তুরাগের চিৎকারে সবাই তুয়ার রুমে দৌড়ে এলো। তুয়ার হাত থেকে অনবরত রক্ত পড়েই যাচ্ছে। তুরাগ ওর রুমাল দিয়ে তুয়ার হাতটা বেঁধে নিল। তুয়ার অবস্থা দেখে সবার চোখে পানি। তুয়ার আম্মুর আহাজারি কান্নাতে বাসাটা থমকে গেছে।
তুরাগ দেরী না করে দ্রুত তুয়াকে নিয়ে হসপিটালে ছুটল। প্রত্যয়ের আম্মু তুরাগকে প্রত্যয়ের হসপিটালে যেতে বললেন। উনি বার বার প্রত্যয়কে ফোন করছেন। কিন্তু প্রত্যয়ের ফোন সুইচ অফ বলছে। প্রত্যয়ের আম্মু জামিলকে ফোন দিলেন। জামিল হলো প্রত্যয়ের সহকারী। জামিল ফোন ধরে জানাল, প্রত্যয় অন্য হসপিটালে সার্জারি করতে গেছে। তাকে তিন থেকে চার ঘন্টার আগে পাওয়া যাবে না। প্রত্যয়ের আম্মু প্রত্যয়কে না পেয়ে নিজেই হসপিটালে আসলেন। উনাকে এখানকার সবাই চিনে। কারণ উনি এই হসপিটালের মালকিন। প্রত্যয়ের আম্মু দ্রুত তুয়ার বেস্ট চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে বললেন। কয়েকজন ডাক্তার তুয়াকে নিয়ে দ্রুত ওটিতে ঢুকে গেল। তুয়ার আব্বু-আম্মু আর তুরাগ ওটির সামনে বসে চোখের পানি ফেলতে থাকল।
প্রত্যয়ের আম্মু তুয়ার আম্মুকে কিছু বলার ভাষা পাচ্ছেন না। উনিও চুপ করে বসে চোখের পানি ফেলছেন। তুয়ার প্রতি উনার মায়া জন্মে গেছে। তুয়ার আম্মু কাঁদতে কাঁদতে বলছে, “আল্লাহ! আমার কলিজাটাকে ফিরিয়ে দাও। আমার বুকটা খালি করে দিও না। আমি আমার মেয়েকে ছাড়া বাঁচব না। আল্লাহ! আল্লাহ গো! দয়া করো গো আল্লাহ!”
রনিত অফিস থেকে ফিরে ফ্রেশ হয়ে আসলো। পলক হাসি মুখে রনিতের জন্য লেবুর শরবত করে আনল। রনিত হেসে হাফ শরবত নিজে খেয়ে বাকিটা পলককে খেতে ইশারা করল। এটা রোজকার ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ এজন্য পলক বিনাবাক্যতে খেয়ে নিলো। রনিত আজকে ফিরতে একটু দেরী হয়েছে। কারণ ওর বন্ধু শিফাত কাতারে চলে গেল। তাকে বিদায় দিয়ে ফিরতেই দেরীটা হয়েছে। রনিত পলকের মুখে দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। পলক কেঁদেছে সে বুঝতে পারছে। তবে সে মুখে কিছু বলল না। পলকের সঙ্গে রনিতের সম্পর্কটা স্বাভাবিক হয়ে গেছে। পলকের মনে রনিতের প্রতি আর ভুল ধারণা নেই। বরং সে মনে প্রাণে বিশ্বাস করতে শুরু করেছে, ‘স্বামী নামক মানুষটাই একজন স্ত্রীর শক্তি।’
প্রত্যয় সার্জারি শেষ করে সোজা বাসায় চলে গেছে। ফোনটা বন্ধ হয়ে আছে তার খেয়াল নেই। প্রত্যয় বাসায় ফিরে ওর আম্মুকে না পেয়ে ভাবল হয়তো তুয়াদের বাসায়। কারণ এখানে আসার পর ওর আম্মু তুয়াদের বাসায় বেশি সময় কাটায়। দু’জনে মাঝে মাঝে শপিং করতেও বেরিয়ে পড়ে। এজন্য প্রত্যয় আর কিছু ভাবল না। নিজের কাছে থাকা চাবি দিয়ে বাসায় প্রবেশ করল। নিজের রুমে গিয়ে প্রত্যয় একেবারে শাওয়ার নিল। টানা কয়েক ঘন্টা সার্জারি করার পর ক্ষুধা লাগে। আর সার্জারির পর পর সে ভাত খেতে পারে না। এজন্য সাধারণত সে ফল খায়। প্রত্যয় ওর মনমতো কিছু ফল ধুয়ে কাটতে বসল। এক টুকরো আপেলে কামড় বসিয়ে প্রত্যয়ের ফোনটা অন করল। তখনই ওর ফোনটা বেজে উঠল। সে দ্রুত মুখের আপেলটুকু গিলে ফোনটা রিসিভ করল। জামিল বলল, “স্যার, ম্যম হসপিটালে এসেছেন। তুয়া নামের একটা মেয়ে রেপ হয়েছে, তাকে নিয়ে ম্যম হসপিটালে এসেছেন। আপনি কি আর হসপিটালে আসবেন না?”
কথাটা শুনে প্রত্যয়ের যেন নিঃশ্বাস আঁটকে গেল। সে জামিলকে আসছি বলেই পকেটে ফোনটা ঢুকিয়ে দ্রুত দরজা লক করে বেরিয়ে পড়ল। প্রত্যয়ের খেয়াল নেই সে নরমাল টি-শার্ট আর টাওজার পরিহিত। প্রত্যয় দ্রুত ড্রাইভ করে হসপিটালে ঢুকল। প্রত্যয় ওর আম্মুকে ফোন দিয়ে বলল, “আম্মু! তুয়া এখন কোথায়?”
ওর আম্মু বললেন, “দোতলার দুইশো পাঁচ নং ওটিতে।”
প্রত্যয় কল কেটে দ্রুত পায়ে সেখানে গেল। ওটির বাইরে সবাইকে বসে থাকতে দেখে সে কথা বাড়াল না। প্রত্যয় ওটির দরজা মৃদু ভাবে নক করল। একজন নার্স বিরক্ত হয়ে দরজা খুলে প্রত্যয় দেখে সরে দাঁড়াল। প্রত্যয় দ্রুত ওটিতে ঢুকে গেল।
প্রিয়ম এসবের কিছু জানে না। সে নিজের জগতে ডুবে আছে। কেউ ওকে কিছু জানায়ও নি। ইচ্ছের আম্মুরা এতক্ষণ বাসায় ছিল না। উনারা ইচ্ছের দাদুর বাসায় থেকে ফিরে এসব শুনে কষ্ট পেল। প্রত্যয় ওটিতে ঢুকে তুয়ার মুখের দিকে একবার তাকিয়ে ডক্টরদের সাথে কথা বলল। তুয়ার হাতের রগটা গভীরভাবে কাটেনি। এখন সে বিপদমুক্ত। তুরাগ বুদ্ধি করে তুয়ার হাতটা না বাঁধলে অন্য কিছু ঘটতে পারতো।
সত্যি কথা হলো হাত কাটলে মানুষ কখনো মরে না। বোকারা ভাবে হাতের রগ কাটলে মানুষ মারা যায়। এটা তাদের সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। কারণ হাতের রগই না একটা মানুষের পুরো হাত কেটে ফেললেও সে বাঁচে। আর রগ কেটে মানুষ মারা যায় রক্তশূন্যতা হয়ে। হাতের রগ কাটার ফলে শরীর থেকে রক্ত নির্গত হতে থাকে। যার ফলে সেই ব্যাক্তির শরীর রক্তশূন্য হতে থাকে, ফলে সে মানুষ মারা যায়। প্রত্যয় তুয়ার বিপদমুক্ত হওয়ার কথাটা নার্সকে বলল বাইরে জানতে। প্রত্যয় নিজে আরেকবার তুয়ার হাত চেক করে নিলো। এরপর তুয়াকে আইসিইউ’তে রাখার পারমিশন দিল। কয়েকজন মিলে স্টেচারে করে তুয়াকে ওটি থেকে আইসিইউ রুমে রাখতে গেল। তখন সবাই এক পলক তুয়াকে দেখে নিলো।
প্রত্যয় এসে সবার মুখের দিকে তাকাল। উপস্থিত সবার মুখে কষ্টের ছাপ স্পষ্ট। প্রত্যয় বলল, “আংকেল-আন্টি, তুয়া এখন বিপদমুক্ত। আপনারা এবার শান্ত হন। আর বাসায় গিয়ে একটু রেস্ট করুন।”
কথাটা শুনে তুয়ার আম্মু কান্নামাখা কন্ঠে বললেন, “আমার কলিজাটাকে ছেড়ে কিভাবে যাব? আমার সোনার টুকরো কত কষ্ট পেয়েছে! আমি কিছুতেই যাব না।”
তুয়ার আব্বু চুপ করে আছেন। মেয়ের এমন অবস্থায় উনি যেন জীবন্ত লাশে পরিণত হয়েছেন। তুরাগ দূরে দাঁড়িয়ে চোখের পানি ফেলছে। প্রত্যয় একপ্রকার জোর করে ওর আম্মুর সঙ্গে তুয়ার আম্মু আর আব্বুকে বাসায় পাঠাল। প্রত্যয় উনাদের শান্ত ভাবে বুঝাল সে হসপিটালেই আছে। তুয়ার কোনো সমস্যা সে হতে দিবে না। প্রত্যয়ের অনেক বুঝানোর পর উনারা মানল। তুরাগ আর প্রত্যয় হসপিটালে থেকে গেল। প্রত্যয় তুরাগকে ওর কেবিনে নিয়ে গিয়ে রেস্ট নিতে বলল। প্রত্যয় তুরাগকে কেবিনে রেখে বেরিয়ে গেল। তুরাগ প্রত্যয়ের কেবিনের বেডের উপর শুয়ে পড়ল। তখন ওর চোখের কোণা বেয়ে ঝরঝর করে অশ্রু গাড়িয়ে পড়ল।
প্রত্যয় তুয়ার কাছে গিয়ে দাঁড়াল। তুয়ার এই অবস্থা প্রত্যয় মানতেই পারছে না। ওর বুকের ভেতরে চিনেচিনে ব্যথা অনুভব করছে৷ ওর চোখ দু’টো বড্ড জ্বালা করছে। মনে হয় চোখ দু’টো থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়তে চাচ্ছে। সে কেন কষ্ট পাচ্ছে? ওর তো কষ্ট পাওয়া কথা না। প্রত্যয় তুয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকল। প্রাণবন্ত মেয়েটার মুখ থেকে হাসিটা হারিয়ে গেছে। চোখ দু’টো ফুলে আছে, মুখের কষ্টের ছাপ স্পষ্ট। প্রত্যয় চুপ করে বসে আছে। একটুপর তুয়া পিটপিট করে চোখ খুলে তাকাল। তুয়া প্রত্যয়কে ওর সামনে দেখে কেঁদে কেঁদে বলল, “আমি ধর্ষিতা! আমি অপবিত্র! আমি নোংরা হয়ে গেছি। আমি বাঁচতে চাই না। আমি খারাপ।”
কথাটা বলে সে চিৎকার করে উঠে হাতের ক্যানোলা খুলে ফেলল। আচানক এমন করাই হাতের ক্যানোলা খুলে হাত থেকে রক্ত পড়তে থাকল। তুয়ার চিৎকার শুনে দুইজন নার্স দৌড়ে আসলো। প্রত্যয় ইশারায় ওনাদের যেতে বলল। উনারা দরজা আটকে বাইরে চলে গেল।
তুয়ার কোনো দিকে খেয়াল নেই। সে দ্রুত নামতে গিয়ে কাটা হাতে বারি খেয়ে কঁকিয়ে উঠল। তুয়ার মাথায় নিজেকে শেষ করার জেদ চেপেছে। সে ধর্ষিতা নামক কালিমা থেকে মুক্ত হতে চায়। তুয়ার বেগতিক অবস্থা দেখে প্রত্যয় দ্রুত উঠে তুয়াকে জাপটে ধরল। তুয়া প্রত্যয়কে ওর থেকে সরাতে চাচ্ছে। কিন্তু সে জোর খাটিয়েও প্রত্যয়কে এক চুলও নড়াতে পারল না। তুয়া এখনো ছোটাছুটি করেই যাচ্ছে। ওর ছোটাছুটিতে কাটা হাত থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে।
তুয়া নিজেকে প্রত্যয়ের থেকে ছাড়াতে ব্যর্থ হলো। সে রেগে প্রত্যয়কে কিল ঘুষিও দিল, তবুও প্রত্যয় ওকে ছাড়ল না। অবশেষে তুয়া ক্লান্ত হয়ে প্রত্যয়ের বুকের টি-শার্ট খামচে ধরে কাঁদতে লাগল। ওর চোখের এক এক ফোঁটা অশ্রু প্রত্যয়ের টি শার্টে পড়ছে। তুয়ার আতনার্দ গুলো প্রত্যয়ের বুকে গিয়ে বিঁধছে। তবুও প্রত্যয় তুয়াকে ছাড়ল না। বরং সে আরো শক্ত করে ওর বাহুডোরে তুয়াকে যত্ন করে আবদ্ধ করে নিল। আর মনে মনে বলল,
“আমি আছি তো।”
To be continue…..!!