অনুভূতির_শীর্ষবিন্দু 🍁🍁 #written_by_Nurzahan_Akter_Allo #Part_01

0
1803

#অনুভূতির_শীর্ষবিন্দু 🍁🍁
#written_by_Nurzahan_Akter_Allo
#Part_01

–“যে ছেলের পেট টানটান হবে। যার পেটে কোনো মেদ থাকবেনা। আমি ভেবেছি এমন একটা ছেলেকে বিয়ে করবো। কারন ভুঁড়িওয়ালা বা বেশি স্বাস্থ্যবান অবিবাহিত ছেলের পেট মোটা থাকে। আর অতি সহজেই তাদের কোমর বেঁকে যায়। কোমর বেঁকে যাওয়ার প্রধান সমস্যা হলো’ টেস্টোস্টেরন হরমোনের’ সমস্যা। টেস্টোস্টেরন হরমোনের সমস্যার কারনেই দিন দিন তাদের কোমর বেঁকে যেতে থাকে,চুল পড়া শুরু করে, পেশি দূর্বল হতে থাকে,বদমেজাজী হয়ে যায়। অর্থাৎ যাদের পেট টানটান না সে সব ছেলে হরমোনজনীত রোগে ভোগে। তাই আমি ভেবে রেখেছি..।”

কথাটা বলে তিতিক্ষা নিজেই হো হো করে হেসে দিলো। বিভা হাঁটা থামিয়ে দিয়ে, তিতিক্ষার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে। একটুপর সে নিজেও হেসে ফেললো। বিভা তিতিক্ষাকে জিজ্ঞাসা করেছে,

–“এই বনু তোর কেমন ছেলে পছন্দ বল তো?”

বিভার এমন প্রশ্ন শুনে তিতিক্ষা মুচকি হেসে উপরের কথাটা বললো। বিভা তিতিক্ষার থেকে এমন উওর পেয়ে হাসতে হাসতে লুটোপুটি খাচ্ছে। দুইবোন একসাথে বের হয়েছে প্রাইভেট পড়তে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। ওরা সম্পর্কে কাজিন ।বিভা এবার এসএসসি দিবে আর তিতিক্ষা অনার্স ২য় বর্ষের ছাত্রী। দু’জনেই বাসায় থেকে একসাথে বের হয়। আর বেশ খানিকটা রাস্তা একসাথে যাওয়ার পর আলাদা হয়ে যায়।কারন দুইজন দুই টিচারের কাছে পড়ে। হালকা শীতের পাতলা লেডিস চাদর দুজনেই শরীরে জড়িয়ে নিয়েছে। ওরা একটু সামনে এগোতেই দেখলো শিউলি ফুল বিছিয়ে আছে পুরো রাস্তা জুড়ে। শুভ্র শিউলি ফুলের মাদুর বিছানো যেন রাস্তাটুকুতে। সুগন্ধ ছড়িয়ে চারদিকে মৌ মৌ করছে। তিতিক্ষা আর বিভা দুজনেই এক মুঠো করে শিউলি ফুল তুলে নিলো। এরপর আবার দু’বোন গল্প করতে করতে সামনের দিকে অগ্রসর হলো।

শীতের আগমন ঘটেছে। শুষ্ককাঠিন্য ও রিক্ততার বিষাদময় প্রতিমূর্তি রূপেই শীত আবির্ভাব ঘটে। তবুও শীতকালের প্রকৃতি ও মানুষের পরিবর্তনের বাস্তব লীলা অনেকেরই ভালো লাগে। বলা যায় যে, কবি সাহিত্যিক সংস্কৃতমনা মানুষের কাছে শীত কাল কাব্য সৃষ্টিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটাও বলতেই হয় যে, বিশ্বের যত মনোরম দৃশ্যের স্থান আছে। সেই গুলোর মধ্যে শীত প্রধান স্থান-ই বেশি। তাই শীতল সেই সকল এলাকা অনেকেরই মন ছুঁয়ে যায়। স্বাভাবিক ভাবেই এ দেশেও শীতকালীন আবহাওয়া অনেকের খুব পছন্দ। শীত এসে আমাদের কে যেন নতুন করে প্রকৃতির সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। শীতের ঠান্ডা বাতাস। আর শিশির ভেজা ঘাসের উপর মুক্তোর মতো দানা। সকাল-সন্ধ্যার কুয়াশার চাদর মুড়ে দেয় চারপাশ। ভোরের কাঁচা রোদ, হিমেল হাওয়া প্রাণে তুলে শিহরণ। পৌষ-মাঘ শীতকাল হলেও অগ্রহায়ণ থেকে শীতের শুরু। এসময় প্রকৃতিকে আমরা নতুন করে আবিষ্কার করি। কুয়াশায় আচ্ছন্নতা ঘিরে রাখা চারপাশে দিনের সূর্য ঢেলে দেয় মায়াবি রোদ। রাতের আকাশে রূপালি তারা খচিত শুভ্রতা ছড়িয়ে পড়ে। চাঁদের ধবধবে সাদা জোছনার পূর্ণিমা চাঁদ হয়ে ওঠে শিশির ধোয়া রূপার থালা।

তিতিক্ষা আর বিভা কেবল বাসায় ফিরলো। দুজনে বসে বসে সবার কার্যকলাপ গুলো পরিদর্শন করছে। বাসায় পুরোদমে গোছগাছের কাজ চলছে। সোফার কভার থেকে শুরু করে পাপোস পর্যন্ত সব বদলে ফেলা হচ্ছে। পরিপাটি করে সাজানো গুছানোর কাজ চলছে পুরো ফ্ল্যাট জুড়ে। বিভা উঠে রান্নাঘরের দিকে চলে গেল। তিতিক্ষাও বসে না থেকে ওর রুমে চলে গেল ফ্রেস হওয়ার জন্য। ফ্রেস হয়ে খেয়ে বেডে বসতে না বসতেই মামনির আগমন। মামনি কাজের মেয়ে জোসনাকে ডেকে তিতিক্ষার রুমের বেডশীট থেকে শুরু করে, জানালার পর্দা গুলোও বদলে ফেলার হুকুম দিলো। জোসনা গুনগুন করতে করতে তার কাজে লেগে গেল।

মামনি তিতিক্ষার সামনে সাথে এসে বললো,–

–“তিতিক্ষা মা তোর আব্বু আম্মু আজকে আমাদের বাসায় আসছে।”

তিতিক্ষা ভ্রু কুঁচকে মামনির দিকে তাকালো। কিন্তু ওর মামনি যেমন ঝড়ের গতিতে এসেছিলো। তেমনি তিতিক্ষাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে, ঝড়ের গতিতে রুম ত্যাগ করলো। তবে তিতিক্ষা ওর মামনির মতিগতি কোনদিন বুঝতে পারিনা। আজও কিছু বুঝতে পারলো না। তাই শুধু শুধু বৃথায় বোঝার অভিযান না চালিয়ে, তিতিক্ষা ওর ফোনটা নিয়ে বারান্দায় চলে গেল। বাসায় হয়তো কোন গেস্ট আসবে। সবার কাজ দেখে তো তেমনটাই মনে হচ্ছে। এজন্য তিতিক্ষা আর সেদিকে পাত্তা দিলো না।তবে একটা কথা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে,

— “আব্বু আম্মু আসছে তাহলে আমাকে কিছু জানালো না কেন?”

তিতিক্ষার বাবার বিজনেস আছে। আর ওর মা একটা কলেজের প্রফেসর। দুজনেই খুব বিজি মানুষ। তিতিক্ষা উনাদের একমাত্র মেয়ে। উনারা তিতিক্ষাকে একেবারেই সময় দিতে পারেনা। তিতিক্ষাও এক বাসায় মোটেও থাকতে চাই না। এজন্য সে এখানে ওর ভাই বোনদের সাথে মজা করে থাকতে চাই। তিতিক্ষার মনে হয় এটাই ওর নিজের বাসা। এখানেই সে খুব ভাল থাকে। ওদের ভাইবোনদের মধ্যে সবার সাথে গভীর ভালবাসাপূর্ন সম্পর্ক। এজন্য তিতিক্ষা ওর বাবা-মার কাছে বেশিদিন থাকতেও চাইনা।

তিতিক্ষা ওর খালামনি অর্থাৎ মামনির কাছে থাকে। মামনির চারজন ছেলে মেয়ে। সবচেয়ে ছোট ছেলে অাহান,(ক্লাস ৭ম)। যে দুষ্টুর শিরোমণি। নবীন বাসার বড় ছেলে (খুলনাতে ইন্জিনিয়ারিং পড়ছে)। তনুকা বাড়ির বড় মেয়ে(ডাক্তারী পড়ছে)আর বিভা সে এবার (এসএসসি) দিবে। মামনির হাজবেন্ড সারোয়ার জামান উনারও নিজের বিজনেস আছে।উনি ভোজনরাশিক, খোশ মেজাজী, রসিক টাইপের অমাইক একজন মানুষ।

আহান, নবীন, বিভা, ড্রয়িংরুমে কিছু একটা নিয়ে মারামারি করছে। আহানের গলার ফুল পাওয়ারের সাউন্ড ভেসে আসছে । জোসনা একটু পর পর তিতিক্ষার দিকে তাকিয়ে হাসি দিচ্ছে। তিতিক্ষা এই নিয়ে তিনবার জোসনাকে জিজ্ঞাসা করলো ওর এভাবে তাকানো আর হাসার কারন।কিন্তু জোসনা প্রতিউত্তরে কিছু বলেনি। শুধু বোকার মত হেসেছে। তিতিক্ষা বারান্দায় বসে কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে পছন্দ মত একটা গান শুনছিলো। তখনই আবার ওর মামনি দ্রুত পায়ে এসে তিতিক্ষার কানে থেকে ইয়ারফোন কান থেকে খুলে নিলো। তিতিক্ষা কিছু বলার আগেই মামনি টাওয়াল আর ড্রেস ওর হাতে ধরিয়ে দিয়ে ওয়াশরুমের ভেতর ঢুকিয়ে দিলো। তিতিক্ষার আর না দাঁড়িয়ে গিজার অন করে হট সাওয়ার নিলো। ওয়াশরুমে থেকে বের হয়ে দেখে তিতিক্ষার আব্বু আম্মু ওর রুমে বসে আছে। তিতিক্ষা উনাদের দিকে এগিয়ে গিয়ে কুশল বিনিময় করলো।তিতিক্ষার আব্বু আজমাইন ইয়াসির ও আম্মু আফিয়া ইয়াসির তিতিক্ষার সাথে কথা বলে চলে গেল। একটুপর মামনি একহাতে ওনার মাথায় আইস ব্যাগ। আর অন্য হাতে কলাপাতা কালার কাতান জামদানি শাড়ি নিয়ে তিতিক্ষার হাতে ধরিয়ে দিলো। শীতেও মামনি আইস ব্যাগ মাথায় নিয়ে ঘুরছে। কারন বাসায় স্পেশাল গেস্ট আসবে কিছুতেই যেন উনার মাথা গরম না হয়। আর এত টেনশন দৌড়াদৌড়ি মধ্যে মাথা ঠান্ডা রাখা সম্ভব হচ্ছে না। তাই উনি এই পন্থা অবলম্বন করেছে। তিতিক্ষা ওর মামনি দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো। তবে কিছু জিজ্ঞাসা করার আগেই ওর আব্বু রুমে প্রবেশ করলো। এজন্য তিতিক্ষা চুপ করে গেল। তিতিক্ষার আব্বুকে দেখে ওর মামনি রুম ত্যাগ করলো।

তিতিক্ষা ওর আব্বু দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিলো। তখন ওর আব্বু তিতিক্ষাকে ওনার পাশে বসিয়ে দিলো।আর তিতিক্ষার দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,

–“আম্মু আজকে তোমার এংগেজমেন্ট। আশা করি তুমি আমার পছন্দের উপর ভরসা করো?”

এই কথা শোনার সাথে তিতিক্ষা অবাক হয়ে ওর আব্বুর দিকে তাকালো। মনে হচ্ছে, পুরো আকাশটা ভেঙে ওর মাথার উপর পড়েছে। তিতিক্ষা ছলছল চোখে ওর আব্বুর দিকে তাকিয়ে থাকলো। আজকে ওর এংগেজমেন্ট। তারমানে ‘ওর আব্বু ওকে পর করে দিচ্ছে’। তিতিক্ষার মাথায় শুধু এই কথায় ঘুর পাক খাচ্ছে । মেয়ের চোখে পানি দেখে তিতিক্ষার আব্বু যতটুকু বলে মেয়েকে বোঝানো সম্ভব।
উনি তেমনভাবেই বোঝালো। এরপর রুম ত্যাগ করার জন্য দরজার কাছে পা বাড়াতেই তিতিক্ষা কান্না জড়ানো কন্ঠে বললো,

–“আমি কি এখন খুব বেশি তোমাদের কাছে আবদার করি আব্বু? আমি কি তোমাদের কাছে বোঝা হয়ে গেছি? এজন্যই বুঝি পর করে দেওয়ার জন্য এত তাড়াহুড়ো শুরু করেছো?”

তিতিক্ষার আব্বু মেয়ের অভিমান বুঝতে পারলো। উনি উনার চোখের জমে থাকা পানিটুকু আড়াল করে গলা পরিষ্কার করে বললো,

–“আলহামদুলিল্লাহ! আমি একটা মেয়ের বাবা। প্রতিটা বাবার দায়িত্ব সুপাত্রের হাতে তার রাজকন্যাকে তুলে দেওয়া।প্রতিটা বাবাই চাই তার কলিজার টুকরোকে কেউ একজন স্বযত্নে আগলে রাখুক। ছায়া হয়ে সব সময় তার পাশে থাকুক। কেউ একজন এসে তার দিকে ভরসার হাত বাড়িয়ে দিক। এক মুঠো সুখ দিয়েই বাবার রাজকন্যাদের সুখে রাখুক। আমিও তো একজন বাবা। তাই আমিও এসব খুব করে চাই। আম্মু আমার সোনা আম্মু কষ্ট পেও না। সব মেয়েদেরই একদিন শশুড়বাড়ি যেতে হবে। শশুড় শাশুড়িকে বাবা-মা হিসেবে মেনে নিতে হবে। একটা ছেলেকে ভাল রাখার সব দায়িত্ব নিতে হবে। আমি সব বাবাদের মত ছেলেকেই শুধু বলবো না, বাবা আমার মেয়েকে ভাল রেখো।আমি বলবো,’আম্মু তুমিও ভাল থেকো আর যার হাত ধরে পথচলা শুরু করবে তাকেও ভালো রেখো।’ আম্মু বিয়ে হলো যোগ বিয়োগের অদ্ভুত এক খেলা। নতুন কিছু আগমন আর অনিচ্ছাকৃতভাবে হলেও প্রিয় কিছু জিনিসের ত্যাগ স্বীকার করা। এটাই যে আমাদের সমাজের নিয়ম। উনারা আপাতত এংগেজমেন্টটা করে রাখবে। পরে তোমার অনার্স কমপ্লিট করার পর অনুষ্ঠান করবো। ততদিনে তোমরা দুজন দুজনাকে বুঝে নেওয়ার সময়ও পাবে।”

তিতিক্ষা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদেই যাচ্ছে। ওর আব্বু ওর চোখের পানি মুছে কপালে একটা আদর দিয়ে চলে গেল।তিতিক্ষার বাবার কথা গুলোও ফেলার না। তারপরেও ওর কেন জানি এত কষ্ট হচ্ছে। তনুকা ওর ক্লাস শেষ করে বাসায় চলে এসেছে। বিভা আর তনুকা মিলে তিতিক্ষাকে ওর রুমেই সাজিয়ে দিলো। একদম সিম্প্যাল সাজ যাকে বলে। চোখের পানিতে বার বার কাজল লেপ্টে যাচ্ছে। এজন্য তনুকা তিতিক্ষাকে বেশ কয়েকবার বকা দিলো। তিতিক্ষার কেন জানি চাইলেও ওর চোখের পানিকে আটকাতে পারছেনা।বুকের ভেতরে অদ্ভুত এক কম্পনের সৃষ্টি হয়েছে। নিঃশ্বাস আটকে যাচ্ছে। এ কেমন অঙ্গাতনামা ভয়ংকর অনুভূতি। এমন মারাত্মক ভাবে হৃদপিন্ডটা ধুকপুক করার কারনটাই বা কি?

গেস্টরা চলে এসেছে। আহান চিৎকার করতে করতে মিনি সাংবাদিক সেজে, এই তথ্যটা দিয়ে গেল। ড্রয়িংরুম থেকে অনেক জনের কথার আওয়াজ ভেসে আসছে। একটুপর খুব কিউট একটা মেয়ে রুমে ঢুকে বললো,

–“মাশাল্লাহ আমার ভাবিমনিকে দেখতে দারুন লাগছে।”

কথাটা বলে মেয়েটি মুচকি হাসি দিলো। তিতিক্ষাও সৌজন্যমূলক হাসি বিনিময় করলো। এরপর নিজে থেকেই মেয়েটি ওর পরিচয় দিলো। ও হচ্ছে পাত্রের ছোট বোন অদ্রি । তিতিক্ষাকে অদ্রি এটা ওটা জিজ্ঞাসা করছে। আর তিতিক্ষার অল্প কথায় সেগুলোর উওর দিচ্ছে। এরপর মামনি এসে তনুকা আর বিভাকে বললো তিতিক্ষাকে ওখানে নিয়ে যেতে। তিতিক্ষা খুব কাঁপছে। ওর শরীর যেন অসাড় হয়ে পড়ছে। বুকের ভেতর ধড়ফড় করাটা যেন দ্রুত গতিতে বেড়েই চলেছে। হৃদপিন্ডটা যেন আজকে বেইমানী খেলায় মেতে উঠেছে। অচেনা অজানা একটা ছেলেকে আজকে জীবনসঙ্গী হিসেবে গ্রহন করতে হবে। এটা ভাবলেই যেন গলা শুকিয়ে মরুভূমির হয়ে যাচ্ছে। সাথে হাত আর পা ঘেমে ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে ।

মৃদু পায়ে হেটে বিভা তিতিক্ষাকে নিয়ে গেল ড্রয়িংরুমে।মামনির শিখিয়ে দেওয়া কথা অনুযায়ী, তিতিক্ষা উপস্থিত সবাইকে সালাম দিলো। একজন মহিলা এসে তিতিক্ষাকে একটা ছেলের পাশে বসিয়ে দিলো। মহিলাটি তিতিক্ষার সাথে খুব সুন্দর করে কথা বলছে। উনি তিতিক্ষার কপালে আদর দিলো। তিতিক্ষা চোখ তুলে উনাররদিকে একবার তাকালো।উনি তিতিক্ষার থুতনী ধরে জিজ্ঞাসা করলো,

–“আম্মু তুই দেখতে একদম বারবী ডলের মত রে।এবার তোর পুরো নাম বলতো শুনি।”

তিতিক্ষার মৃদু স্বরে বললো,

–“তাবিয়া নুজহাত তিতিক্ষা।”

উনি নাম শুনে, মহিলাটি আবার তিতিক্ষার একটা কপালে আদর দিলো। মহিলাটির বচন ভঙ্গি আর ড্রেসআপ দেখে মনে হচ্ছে, সে যথেষ্ট স্মার্ট এ্যান্ড স্টাইলিশ। মহিলাটি তিতিক্ষাকে যে ছেলের পাশে বসিয়েছে । সেই ছেলেটিকে উদ্দেশ্য করে বললো,

–“এই আব্বু আমার মেয়েকে তোর পাশে বসালাম। খবরদার বলছি দুইবারের বেশি তাকাবি না। নাহলে আবার আমার আম্মুটার তোর নজর লেগে পিমপোল উঠতে পারে। তোর তো আবার বিড়াল মার্কা নজর।”

একথা শুনে সবাই হো হো করে হেসে দিলো। পাশে বসা ছেলেটিও যে নিঃশব্দে হাসছে। সেটা তিতিক্ষা বুঝতে পারছে।অদ্রি সবার সাথে তিতিক্ষার পরিচয় করিয়ে দিলো। স্মার্ট মহিলাটির হলো পাত্রের আম্মু মৃধা আবরার। আর উনার ডানপাশে বসে থাকা ভদ্রলোকটি আতিফ আবরার(পাত্রের বাবা)। সামনে বসে থাকা তিনটা ছেলে উনারা হলো পাত্রের বন্ধু আফান, রুহান,‌ সাফওয়ান। তিনটা ছেলেই যথেষ্ট ভদ্র আর সুর্দশনও বটে। পরিচিত হওয়ার সময় তিতিক্ষা সবার দিকে তাকিয়েই ভদ্রতাসূচক মুচকি হাসি দিলো। অদ্রি এবার হেসে বললো,

–“আর পাশে বসে থাকা ছেলেটি হচ্ছে তোমার হবু বর। আর আমার ভাইয়া। আমার ভাইয়ার জন্যই আমরা তোমাকে নিতে এসেছি হুম। তোমার বরের নাম হলো, ‘নাহিয়ান আবরার নক্ষত্র।’ নামটা আবার ভুলে যেও না কিন্তু।”

অদ্রির কথা শুনে রুমে ভেতর আরেক দফা হাসির রোল পড়লো। বর শব্দটা শুনে তিতিক্ষার মনের ভেতর অদ্ভুত এক অনুভূতি অনুভব করতে পারছে। সবার সাথে পরিচয় করার সময় তিতিক্ষা এক নজর সবার মুখের দিকে তাকিয়ে কথা বললেও, সে নক্ষত্রের দিকে তাকালো না। তিতিক্ষা মাথা নিচু করে বসে আছে। আর কিভাবেই বা এতগুলো গুরুজনদের সামনে বেহায়ার মত তাকাবে। ঘাড় ঘুরিয়ে তাকানোটা মোটেও শোভনীয় নয়। পাশের বসা ছেলে যে কেমন হবে? এটা নিয়ে তিতিক্ষার আপাতত কোন টেনশন নেই। কারন তিতিক্ষার ওর বাবার চয়েজের উপর ওর যথেষ্ট ভরসা আছে।

ড্রয়িংরুমে সবাই কথা বলছে। নক্ষত্রও মাঝে মাঝে দু’একটা কথা বলছে। তিতিক্ষা নক্ষত্রকে না দেখলেও, নক্ষত্রের পারফিউমের সুগন্ধটা তিতিক্ষার নাকে এসে বারি খাচ্ছে। আর ওর পারফিউমের মৃদু সুগন্ধটা মন ভাল করার মত।তিতিক্ষা এতটুকু বুঝলো, ছেলেটার পছন্দ রুচিসম্মত ।নক্ষত্রের আম্মু নক্ষত্রের দিকে একটা রিং এগিয়ে দিলো।নক্ষত্র রিং নিয়ে তিতিক্ষার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো।তিতিক্ষা বার বার ওর হাত মুচড়াচ্ছে। আর তিতিক্ষার চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে ওর হাতে পড়ছে। বারবার হাত মোচড়ানোর কারনে ওর হাত লাল হয়ে গেছে। নাকের ডগাটাও লাল বর্ণ ধারণ করেছে। নক্ষত্র তিতিক্ষার এমন করার মানেটা খুব সহজেই বুঝতে পারলো। আর এখানে না বোঝার মত কিছু নেই। আসলে তিতিক্ষা খুব নার্ভাস ফিল করছে। হয়তো ভয়ও পাচ্ছে। নার্ভাস হওয়াটাও অস্বাভাবিক কিছু নয়। তিতিক্ষার অবস্থা বুঝতে পেরে, তিতিক্ষাকে অভয় দেওয়ার উদ্দেশ্যে নক্ষত্র মৃদু কন্ঠে বললো,

–“এমন মায়াবী অনায়াসে কাউকে ঘায়েল করা কাজল কালো দু’নয়নে অশ্রুর ফোঁটা বড্ড বেমানান। প্রিয় থেকে প্রিয়তরও মানুষটার চোখে অশ্রু দেখলে, যে কোন একজনের কলিজাটাও যে কেঁপে ওঠে। এটা কি কেউ বুঝে?” (আদুরে সুরে ধীর কন্ঠে)

To be continue..!!
( এই গল্পটা কেমন হচ্ছে জানাবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here