অনুভূতির_শীর্ষবিন্দু 🍁🍁 #written_by_Nurzahan_Akter_Allo #Part_16

0
638

#অনুভূতির_শীর্ষবিন্দু 🍁🍁
#written_by_Nurzahan_Akter_Allo
#Part_16

মেলা থেকে ফেরার পর তিতিক্ষা শাওয়ার নিতে ওয়াশরুমে প্রবেশ করলো। হাতের ড্রেসগুলো ক্লোথ স্টানে রেখে চুলের কাটাটা খুলে ফেললো। ওর পরিহিত ড্রেসের উপরের পার্টটা খুলে ফেললো। সে আপাতত একটা ব্ল্যাক টেন টপ পড়ে আছে। শাওয়ার নেওয়ার জন্য সচরাচর যে ভুল গুলো আমরা করে থাকি। তিতিক্ষা মুখটা পানিতে ভিজিয়ে ওর ফেসওয়াস টা হাতে নিলো। তারপর কিছু একটা মনে করে চার সাইডে তাকালো। অদ্ভুত ভাবে ওর কেন জানি মনে হচ্ছে, ওকে কেউ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।

আশে পাশে কাউকে না দেখে তিতিক্ষা ওর মনের ভুল ভেবে মুখ ওয়াশ করছে। আসলে মেয়েদের সিক্সসেন্থ এতটাই প্রকট যে, দূর থেকে কোনো ছেলে তার উপরে দৃষ্টি রাখলে সেটা সে অনুভব করতে পারে। তিতিক্ষার সিক্সসেন্থ বলছে, ওর ওপরে কেউ দৃষ্টি রাখছে। তিতিক্ষা চারপাশে আবার তাকালো, কিন্তু সন্দেহজনক কিছু দেখতে পেলো না। হঠাৎ হুড়োহুড় করে কিছু পড়ে যাওয়ার শব্দে তিতিক্ষা চমকে উঠলো। শব্দটা আসছে ওয়াশরুমের ওপর পাশ থেকে। তিতিক্ষার হাত থেকে ফেসওয়াশটা পড়ে গেল। একটা অনাকাঙ্ক্ষিত ভয়ে ওর গলা শুকিয়ে গেলো। তাহলে কি কেউ সত্যিই ওকে দেখছিলো? এই ভাবনা ওর মাথাতে আসতেই ওর শরীর থরথর করে কাঁপছে। একটা মেয়ের কাছে এর থেকে লজ্জা আর কি ই হতে পারে। তিতিক্ষা কোনো রকম ওয়াশরুমে দরজা খুলে রুমের দরজার দিকে পা বাড়ালো। তিতিক্ষা এতটাই ভয় পেয়েছে, যে ওর সেন্সে নেই ও এখন কি ড্রেসআপে আছে।

নক্ষত্র তিতিক্ষার ফোনটা দেওয়ার জন্য তিতিক্ষার রুমে আসছিলো। রুমের দরজার কাছে পা রাখতেই নক্ষত্র তিতিক্ষার সাথে খুব জোরে ধাক্কা খায়। তাতেও তিতিক্ষার কোনো হুশই নেই। নক্ষত্র তিতিক্ষার অবস্থা দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। তিতিক্ষার পরিহিত ড্রেস দেখে নক্ষত্র ওর চোখ সংযত করে নিলো। তিতিক্ষা অন্য রকম এক ধ্যানে মগ্ন আছে। তার ধারণা কেউ তাকে খারাপ নজরে দেখছে। ওকে সেই নজর থেকে নিজেকে আড়াল করতে হবে। তিতিক্ষা আবার রুমের বাইরে পা বাড়াতেই নক্ষত্র তিতিক্ষার হাত ধরে টান দেয়। জোরে টান দেওয়াতে তিতিক্ষা নক্ষত্রের বুকে এসে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। নক্ষত্র তিতিক্ষাকে ধরে সাথে সাথে রুমের দরজা লাগিয়ে দেয়।

নক্ষত্র তিতিক্ষাকে কিছু বলতে যাবে। তার আগেই তিতিক্ষা নক্ষত্রের বুকে ঢলে পড়লো। এত দ্রুত এসব হচ্ছিল যে, সে কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না।
নক্ষত্র তিতিক্ষাকে যখন ধরেছিলো, তিতিক্ষা তখন কাঁপছিলো। নক্ষত্র বুঝতে পারলো তিতিক্ষা আবার কোনো কিছুতে ভয় পেয়েছে। এখন তো ঘুমায়নি যে খারাপ স্বপ্ন দেখবে। তাহলে এখানে ভয় পাওয়ার কি হলো? ভয় পেলে মস্তিষ্কে এন্ডোরফিন ও ডোপামিন নামের দুই ধরনের বিশেষ রাসায়নিক পদার্থ প্রবাহিত হয়। যার কারণে মানুষ সেন্স হারিয়ে ফেলে। যদিও এটা নক্ষত্রের জানা আছে। কিন্তু হঠাৎ করে তিতিক্ষার ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নক্ষত্র খুঁজে পেলো না। আপাতত এসব নিয়ে ভাবার কোন সময় নেই। নক্ষত্র দ্রুত তিতিক্ষাকে ধরে বেডে শুইয়ে দিলো। বার বার নক্ষত্র তিতিক্ষাকে ডাকছে। কিন্তু তিতিক্ষার কোনো সেন্স নেই। নক্ষত্র তিতিক্ষার মুখে পানির ছিটা দিবে এজন্য সে পানি আনতে পা বাড়ালো।

বিভা আর তনুকা বসে পেয়ারা মাখানো খাচ্ছে। আহান দৌড়ে এসে একটা পেয়ারা নিয়ে সোফাতে দুম করে বসে পড়লো। তিনজনের টিভি দেখছে আর পেয়ারা মাখানো খাচ্ছে। আহান হুট করে মন খারাপের সুরে বলে উঠলো,

–“তিতু আপুকে খুব মিস করছি। তিতু আপু ছাড়া বাসাটা কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। কবে আসবে তিতু আপু?”

–“কালকে পরশুতে চলে আসবে।” (বিভা)

বিভা আর তনুকাও তিতিক্ষাকে খুব মিস করছে। সত্যিই তিতিক্ষা ছাড়া বাসাটা প্রানহীন লাগছে। মামনি আহানকে ডাকতেই আহান দৌড়ে ওখান থেকে চলে গেল। বিভা আর তনুকা আবার ওদের মত টিভি দেখাতে মনোযোগ দিলো।

নক্ষত্র পানির ছিটা দেওয়াতে তিতিক্ষা হুড়মুড় করে উঠে বসলো। ওর সামনে নক্ষত্রকে দেখে তিতিক্ষার ডুকরে কেঁদে দিলো। নক্ষত্র তিতিক্ষাকে পানি খাইয়ে শান্ত করে নক্ষত্র বললো,

–“এত ভয় পাচ্ছো কেন? খারাপ কিছু দেখেছো? ”

তিতিক্ষা নক্ষত্রকে ওর ভয়ের কারণ বললো। নক্ষত্র এই কথাটা শুনে ওর ভ্রু কুঁচকে গেল। এই বাসায় কারো মন-মানসিকতা তো এত লেইম না। নক্ষত্র ছাড়া এখন বাসাতে কোনো ছেলেও নাই। তাহলে কার সাহস এত যে এই নোংরা কাজটা করবে?

তিতিক্ষা ভুল দেখেছে ভেবে নক্ষত্র তিতিক্ষাকে শান্ত করলো। ওয়াশরুমে থেকে ড্রেস এনে নক্ষত্র তিতিক্ষাকে পড়ে নিতে বললো। তিতিক্ষা ড্রেস পড়ে নেওয়ার পর, নক্ষত্র ওকে নিয়ে ওয়াশরুমের অপর পাশে গেল।

যদিও এদিকে তেমন কেউ আসে না। ঝোপঝাড়ে ভরা এই দিকটা। তিতিক্ষার মনে ভয় কাটাতেই নক্ষত্র তিতিক্ষাকে দেখাতে এনেছে। যাতে তিতিক্ষা নিজের চোখে দেখলে সহজেই ওর ভয়টা কেটে যায়। কিন্তু এখানে আসার পর নক্ষত্র আর তিতিক্ষা দু’জনেই চমকে উঠলো। এখানে পর পর ইট দিয়ে উঁচু করে রাখা। এই ইটের উপর দাঁড়ালে অনায়াসেই ওয়াশরুমে সবটা দেখতে পারবে। তিতিক্ষা এটা দেখার পর কেঁদে দিলো। নক্ষত্রের তো রাগে শরীর কিড়মিড় করছে। তিতিক্ষার ভাবনাটাই তাহলে সত্যি। নক্ষত্র নিজেকে স্বাভাবিক করে তিতিক্ষাকে বললো,

–“আমাকে ৪ টা ঘন্টা সময় দাও। আমি সেই ব্লাডি বিচকে খুঁজে নিবো। তারপর…।”

নক্ষত্র তিতিক্ষাকে স্বাভাবিক থাকতে বললো। ব্যাপারটা যাতে আপাতত কেউ না জানে, তাই ভেবে। রুমের দরজাতে নক্ষত্র যখন তিতিক্ষাকে টেনে ওর বুকে ফেলে, তখন নক্ষত্রের আম্মু তিতিক্ষাকে খেতে ডাকতে আসছিলো। নক্ষত্র রুমে দরজা বন্ধ করে দেওয়াতে উনি রং কিছু ভেবে বসেছে। আর রং কিছু ভাবার মেইন পয়েন্ট তিতিক্ষার ড্রেসআপ।
এজন্যই নক্ষত্র আর তিতিক্ষার সাথে নক্ষত্রের আম্মু রুড ব্যবহার করলো।

নক্ষত্র ওর আম্মুকে এই পুরো ঘটনাটা জানালো। এখন না জানালে উনি তিতিক্ষাকে খারাপ ভাবছে। আর এটা নক্ষত্র মানতে পারছে‌ না। নানু, বড় মামী, ছোট মামী সবাই এই কথা জানলো। উনারাও অবাক হলো কারণ এমন তো এর আগে হয়নি। নক্ষত্র আর কিছু না বলে রুমে থেকে চলে গেল। নক্ষত্রের আম্মু তিতিক্ষাকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে সরি বললো। পলক বাসাতে ঢুকতেই সাইফুলের সাথে ধাক্কা খেলো। সাইফুল কোনো রকম সরি বলে দ্রুত পায়ে চলে গেল। পলক বাসাতে ঢুকে ওর আম্মুকে জিজ্ঞাসা করলো,
–“আম্মু সাইফুল আমাদের বাসায় এসেছিলো কেন?
–“তা তো আমি জানি না?” (আম্মু)
–“ও ছেলে ভালো না। বাসায় মেয়েরা আছে, ওকে যেন আমাদের বাসাতে আর না দেখি। নিষেধ করে দিবা। তা না হলে মেরে পুঁতে দিবো।”

নক্ষত্র পলকের কথাটা শুনতে পেলো আর জিজ্ঞাসা করলো,
–“সাইফুল কে?

পলক বললো ওদের পাশের বাসার ছেলে। নক্ষত্র পলককে জরুরী কাজের কথা বলে দু’ভাই বাসা থেকে বের হলো। দুই ঘন্টা হতে চললো নক্ষত্র বাসার বাইরে। তিতিক্ষার মনটা খুব উশখুশ করছে। নক্ষত্রের আম্মুরও খুব টেনশন হচ্ছে। উনি উনার ছেলেকে খুব ভাল করেই চিনে। এর শেষ দেখে তবেই সে থামবে। ভুল বুঝে নক্ষত্রকে মেরে এখন ওর আম্মু চোখের পানি ফেলছে। তিতিক্ষাকে তো উনি আমানত হিসেবে এনেছে। নক্ষত্রের করা কোনো ভুলের কারণে সবাই তো উনাদের দায়িত্বহীন ভাবতো। তিতিক্ষার বাবা মায়ের কাছেও উনারা দায়িত্বহীনের পরিচয় দিতো। আর উনাদের তখন এই মুখটাই বা দেখাতো কোন বিবেক নিয়ে। এজন্য রাগের মাথায় আর কোন কিছু না ভেবে উনি নক্ষত্রকে মেরেছে। নিজের চোখে যা দেখেছে, সেটাই সত্যি ভেবেছে। সচারচর আমরা যেটা করি আর কি। তবে মা হিসেবে উনার বিবেকের জায়গাতে দাঁড়িয়ে উনি সঠিক বিচারকই ছিলেন।

একটু পরেই পলক একজনের কলার ধরে টেনে আনলো। ছেলেটার নাক মুখ রক্তাক্ত করা। দু’ভাই ইচ্ছে মতো মেরেছে ছেলেটাকে তা দেখেই বোঝা যাচ্ছে। ছেলেটার কলার ছাড়তেই ধপ করে সে মাটিতে পড়ে গেল। নক্ষত্রের চোখ মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না। সে প্রচন্ড রেগে আছে। নক্ষত্র ছেলেটাকে আবার মারতে গেলে পলক আটকালো। এই ছেলেটাই ওয়াশরুমে ভ্যান্টিলিটারের ফুটা দিয়ে তিতিক্ষাকে দেখছিলো। তিতিক্ষা ছেলেটাকে দেখে অবাক হয়ে মনে মনে বললো,

–“উনি তো খেলার সময় আমার পেছনেই
দাঁড়িয়ে ছিলো।”

সাইফুল মেলাতে থেকেই তিতিক্ষার উপরে নজর রাখছিলো। অদ্রিকেও বেশ কয়েকবার চোখ দিয়ে গিলে খেয়েছে। আর সুযোগ বুঝে ঝোপের পাড়ে গিয়ে ঘাপটি মেরে দাঁড়িয়ে ছিলো। তবে তিতিক্ষা বুঝতে পারায় ওর প্ল্যান সাকসেসফুল হয়নি।
নানু তখন রুম থেকে এসে রেগে গিয়ে বললো,

–“অগুরে মারিয়া খমর (কোমর) বাংগিলা। হালা খবিস।”

নক্ষত্র ওরে বাইরে থেকে ইচ্ছেমত ধোলায় করেই এনেছে। পলক না থামালে হয়তো ওকে মেরেই ফেলতো নক্ষত্র। প্রথমে নক্ষত্র ভালো ভাবে কথা বলে সত্যি জানতে চেয়েছিল। কিন্তু সে বলতে রাজি হয় নি। উল্টে সে নক্ষত্রকে এটিটিউড দেখিয়েছে। তাই নক্ষত্রও আর তেল না মেরে ইচ্ছা মত ধোলাই করেছে। মার খেয়ে আধমরা হয়ে, তারপর সবটা বলে দিয়েছে। পলককে নানু আবার বললো,

–“ইগুরে ফুলিশ ও দেওয়ার দরকার নাই। তুই তার বারোটা বাজা। তার অতো বড় সাহস।”

নক্ষত্র উঠে দাঁড়ালো। কারো দিকে তাকালো না। ওর আম্মুর সামনে গিয়ে বললো,

–“এয়ার টিকিট কেটে এনেছি। আর এক ঘন্টা পর ফ্লাইট। তারাতাড়ি রেডি হয়ে নাও।”

নক্ষত্র কথাটা বলে তিতিক্ষার হাত ধরে টেনে নিয়ে চলে গেল। বড় মামা, ছোট মামা তখন বাসায় আসলো। সবটা জেনে উনারাও রেগে গেছে। নক্ষত্রকে কিছু বলার মত ভাষা তারা খুঁজে পেলো না। তাকে কিছু বলেও এখন আর কোন লাভ হবে না।
নক্ষত্ররা রেডি হয়ে সবার থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে গেলো। তিতিক্ষা চুপ করে বসে আছে। কেউ নক্ষত্রের সাথে আগ বাড়িয়ে কথা বলার সাহস পাচ্ছে না। তবে নক্ষত্র প্রয়োজনীয় কথা সবার সাথেই বলেছে। যথা সময়ের ওরা পৌঁছে গেল। নক্ষত্র ওর বাবাকে ফোন দিয়ে ওদের দুইটা গাড়ি পাঠিয়ে দিতে বলেছিলো। ওরটা আর বাবার গাড়িটা। নক্ষত্রের আম্মু তিতিক্ষার কপালে আদর দিয়ে বললো,

–“আম্মু আমার উপরে আর রাগ করে থাকিস না।”

–“না আম্মু, আমি মোটেও তোমার উপরে রেগে নেই। তুমি মারলেও আমি রাগ করবো না। তুমি না বলেছো আমি আগে তোমার মেয়ে। পরে তোমার পুত্রবধু।”

তিতিক্ষা কথাটা বলে মুচকি হেসে নক্ষত্রের আম্মুকে জড়িয়ে ধরলো। এরপর অদ্রিকে জড়িয়ে ধরে বিদায় নিলো। নক্ষত্র একটা গাড়িতে অদ্রি আর ওর আম্মুকে চলে যেতে বললো। আর একটা গাড়িতে নক্ষত্র তিতিক্ষাকে বাসায় পৌঁছে দিতে গেল। নক্ষত্র চুপ করে ড্রাইভ করছে। কিছুক্ষণ পর তিতিক্ষা আমতা আমতা করে বললো,
–“র রেগে আছেন এখনো?”

নক্ষত্র তিতিক্ষার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। তিতিক্ষার এক হাতের আঙুলের ভাঁজে আঙ্গুল রেখে বললো,

–“নিজের খেয়াল রাখবে আর সাবধানে থাকবে। আমার তিতিক্ষা নামক মনোপ্যাথিকে তোমার কাছে আমানত রেখে যাচ্ছি। অযত্ন যেন না হয়।”

বাসার সামনে আসতেই গাড়িটা থেমে গেলো। তিতিক্ষার কেন জানি যেতে ইচ্ছে করছে না। নক্ষত্রের সঙ্গ ছাড়তে বেহায়া মনটা যে বড্ড নারাজ।

তিতিক্ষাকে মাথা নিচু করে থাকতে দেখে নক্ষত্র গাড়ির গ্লাসটা তুলে দিলো। এরপর তিতিক্ষাকে জড়িয়ে ধরলো। তিতিক্ষাও আজকে নক্ষত্রকে জড়িয়ে ধরলো। কয়েক মিনিট এভাবে থাকার পর,
নক্ষত্র শান্ত সুরে বললো,

–“বাসায় যাও।”

তিতিক্ষা নক্ষত্রকে ছেড়ে কান্নামাখা সুরে বললো,

–“সাবধানে যাবেন। আর অবশ্যই নিজের খেয়াল রাখবেন।”

নক্ষত্র মুচকি হেসে তিতিক্ষার কপালে আদর দিলো।
তিতিক্ষা গাড়ি থেকে নেমে গেল। নক্ষত্র এখন আর তিতিক্ষাদের বাসায় গেলো না। তিতিক্ষা বাসাতে ঢুকে গেলে নক্ষত্রও চলে গেল। নক্ষত্র একটানে অনেক দূরে এসে এক সাইডে গাড়ি থামিয়ে দিলো। স্টিয়ারিংয়ে মাথা রাখলো। তিতিক্ষাকে ছাড়া বুকটা বড্ড ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। যাওয়ার সময় তিতিক্ষার কান্না মাখা মুখটা বার বার ভেসে উঠছে। নক্ষত্র বেশ কিছুক্ষন ওভাবেই বসে রইলো।

তিতিক্ষা বাসায় ঢুকে সবার সাথে কথা বললো। সবাই ভালো মন্দ জিজ্ঞাসা করছে। তিতিক্ষা উত্তর দিচ্ছে। একটু পর সোফা থেকে উঠে মাথা ব্যথার অজুহাত দিয়ে ওর রুমে চলে গেল। আর মামনিকে বলে গেলো রাতে আর খাবে না; জার্নি করে এসেছে এখন সে ঘুমাবে। তিতিক্ষা ফ্রেশ না হয়ে শুয়ে আছে। ওর চোখের কোণা বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। রুমটা পরিপূর্ণ করে সাজানোর পরও খুব ফাঁকা ফাঁকা মনে হচ্ছে। হয়তো নক্ষত্রের উপস্থিতটাকে সে খুব মিস করছে। আচ্ছা এটা কেমন অদ্ভুত অনুভুতি, যে অনুভূতির অন্তরালে অবাধ্য মনটা বেহায়া হয়ে উঠলেও খারাপ লাগছে না? আগে তো কারো অনুপস্থিতিতে এতোটা খারাপ লাগেনি। মনটা তো কারো জন্য এতটা উতলা হয়নি। তাহলে এখন কেন বেপরোয়া নিষ্ঠুর মনটা নক্ষত্রের অনুপস্থিতির কথা বার জানান দিচ্ছে। কেন এত কষ্ট হচ্ছে? কেন মনটা নক্ষত্রের বাহুডোরেই সীমাবদ্ধ থাকতে চাইছে? কেন মন বলছে নক্ষত্রের শার্ট আঁকড়ে ধরে খুব কাঁদতে? তিতিক্ষা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে বলে উঠলো,

–“আপনি মানুষটা খুব খুব খারাপ। আর কোনো দিন আমি আপনার সাথে কথা বলবো না। নিষ্ঠুর, পাষাণ, লোক একটা। কি দরকার ছিলো আপনার অনুভূতি গুলোর সাথে আমার অনুভূতির পরিচয় করানোর। আপনার অনুপস্থিতিতে এখন যে আমি এতটা কষ্ট পাচ্ছি, এর দায়ভার কে নিবে? খুব খুব দুষ্টু লোক আপনি।”

তিতিক্ষা বালিশে মুখ গুঁজে কেঁদে দিলো। নক্ষত্র বাসাতে পৌঁছানোর পর তিতিক্ষার কাছে ভয়েজ মেসেজ করলো। তিতিক্ষার মেসেজটি ওপেন করে ওর মুখে হাসির রেখা ফুটলো। গানের ভয়েজের টোন টা চিনতে তিতিক্ষার একটুও সময় লাগেনি। কারণ এটা নক্ষত্রের কন্ঠ,

“ওহ তোর মন খারাপের দেশে,
যাবো প্রেমের খেয়ায় ভেসে।
তোর মনটা ভালো করে
দেবো অনেক ভালোবেসে।

ডাকলে কাছে আসিস,
পারলে একটু হাসিস।
বুকটা রাখিস পেতে,
ভালবাসা নিতে।
সব অভিমান ভেঙ্গে দিবো
তোর কাছে এসে।”

গানের প্রতিটা কথা নক্ষত্র তিতিক্ষাকে ডেডিকেট করেছে। এতটা আদুরে সুরে নক্ষত্র গাইছে যে, তিতিক্ষার মনটা জুড়িয়ে গেছে। গানের প্রতিটা লাইন যেন শুধু তিতিক্ষার জন্য তৈরী। নক্ষত্র যেন এই গানের মাধ্যমেই তিতিক্ষাকে অনেক কথা বুঝিয়ে দিলো। এই মুহূর্তটার জন্য এটা পারফেক্ট একটা গান। তিতিক্ষা ওর কানে ইয়ারফোন গুঁজে নিলো। নক্ষত্রের ছবির দিকে সারারাত নক্ষত্রের গাওয়া গানটা শুনেছে। তিতিক্ষা এই পুরো রাতে এক সেকেন্ডের জন্য চোখের পাতা এক করতে পারেনি। নক্ষত্রকে এখন কাছে না পাক, নক্ষত্রের জন্য জমিয়ে রাখা অনূভূতিরা তো ওর সাথে আছে। সেই অনুভূতি আর নক্ষত্রের আদুরে কন্ঠে গাওয়া গান তো ওর সাথে আছে। তাহলে ওর আর কি বা চাই? এই মুহূর্তের জন্য এটাই তিতিক্ষার কাছে এক পৃথিবী সুখের সমান।

To be continue…..!!

(গানটা অনেকেই শুনেছেন। আবার অনেকেই শুনেন নি হয়তো। শুনে নিবেন। খুব সুন্দর একটা গান।
গল্পে কোনো ভুল থাকলে বা আপনার কোনো অংশ ভালো লেগে থাকলে কমেন্টে জানান। ধন্যবাদ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here