#বুকের_বা_পাশে 🌿🌿
#written_by_Nurzahan_Akter_Allo
#Part_40(last part)
— “আমার প্রিন্স চার্মিং কি করছে হুম? সেকি খেয়েছে, নাকি এখনো না খেয়ে আছে, শুনি?” (প্রিয়ম হাসি হাসি মুখে)
— “বাবা আমি শুধু দুইটা কথা বলবো। তুমি কি দুইদিনের মধ্যে দেশে আসতে পারবে?” (প্রাণ)
— “হঠাৎ এমন কথা বলছো কেন সোনা বাবাটা?”
— “হ্যা আর নাহলে না বলে দাও। আর তাও বলতে না পারলে আমি এখন রাখছি।” (প্রাণ)
— “এই না না বাবা। আমি আসবো তো বাংলাদেশে।দুইদিনের মধ্যেই আসবো।” (প্রিয়ম)
— “সত্যি?” (লাফিয়ে উঠে)
— “হুম।”
— “ইয়াহু।” (প্রাণ)
প্রাণ খুশি লাফাচ্ছে। আর প্রিয়ম প্রাণের মুখ পানে চেয়ে আছে। এই প্রাণ এখন প্রিয়মের বেঁচে থাকার অবলম্বন। এই ছয় বছরে অনেক কিছু বদলে গেছে। আরো কত সত্যির উন্মোচন ঘটেছে। প্রিয়ম যে জারজ সন্তান না, এটা প্রিয়মের মা নিজের মুখে স্বীকার করেছে। স্বার্থের লোভে আর অহংকারের বশিভূর্ত হয়ে উনি প্রিয়মকে জারজ সন্তান বলেছিলো। কিন্তু এটা সম্পূর্ন মিথ্যে। প্রিয়ম ওর ফুপির সন্তান না। প্রিয়মের ফুপির ছেলে ১ মাস বয়সে মারা গেছে। আর সেই ছেলেকে উদ্দেশ্য করে প্রিয়মের ফুপি ওই চিঠিটা লিখেছিলো। আর এই চিঠিটাকেই প্রিয়মের মা তুয়াকে দেখিয়েছিলো। পরে প্রিয়মের ফুপি এসে সব সত্যিটা সবাইকে জানিয়েছিলো।
এত কিছুর পরেও প্রিয়ম ওর আব্বু আম্মুকে কিছু বলেনি। রশ্মির সাথে প্রিয়মের বিয়ে দেবে বলে উনারা রশ্নির বাবার থেকে অনেক টাকা নিয়েছিলো। ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে বিজনেস বাড়াতে চেয়েছিলো। ভাগ্যের পরিহাসে বিসনেসে লস গেল। আর প্রিয়মের সাথে রশ্নির বিয়ে হলো না। তাই রশ্নির বাবা প্রিয়মের বাবার নামে কেস ফাইল করে। আর এভাবে চারদিকে থেকে ধস নেমে প্রিয়মের বাবা রাস্তায় এসে দাঁড়ায়। ব্যাংক থেকে লোকেরা এসে ওদের বাড়িটাও দখল করে নেয়। উনারা এখন সেই “জান্নাতের বাগান” নামক বৃদ্ধাশ্রমে থাকে। একটা সময় উনারাই সেই বৃদ্ধাশ্রমের মানুষগুলোকে ছোটলোক বলে অখ্যায়িত করেছিলো। প্রিয়ম সবটাই এখন ফিরিয়ে দিয়েছে। ওর বাবা মায়ের হারিয়ে যাওয়া সম্পদ। কিন্তু উনারা এখন অনুশোচনা নামক আগুনে দগ্ধ। এত সম্পদ ফিরে পাওয়ার পরেও উনারা ইচ্ছে করেই বৃদ্ধাশ্রমে থাকে। এটাও ওনাদের অনুশোচনার ফল বলা যেতে পারে। আর অনুশোচনার থেকে বড় শাস্তি আর পৃথিবীতে নেই। মিশি আর সাদের বিয়ে হয়ে গেছে।
প্রিয়ম এটাও জেনেছে যে ওর গাড়ির ব্রেক ফেইল করেছিলো আকাশ। আর গাড়িতে ধাক্কা দিয়ে এক্সিডেন্ট করিয়েছিলো ওর আম্মুর ভাড়া করা লোকেরা। আগের সব রহস্যের উন্মোচণ ঘটেছে। আর এত সব মিথ্যের আড়ালে এখন সব সত্যির সূর্য উদয় হয়েছে। ওদের জীবনে এসেছে নতুন এক সকালের আগমন। প্রিয়ম এখন সুইজারল্যান্ডেই থাকে। ওখানেই নতুন করে ওর নিজের পরিচিতি তৈরি করেছে। আল্লাহর রহমতে যশ আর খ্যাতির কোন কিছুর অভাব প্রিয়মের নেই। আর পাওয়া না পাওয়ার হিসেবের খাতা প্রিয়ম অনেক আগেই চুকিয়ে ফেলেছে। আগের অতীত নিয়ে প্রিয়ম আর ভাবে না।
এর মধ্যে প্রিয়ম একবার দেশে ফিরেছিলো; তুয়ার ডেলিভারির দিন। সেদিন প্রিয়ম নিজেকে ধরে রাখতে পারেনি। সেদিন তুয়ার জন্য ছুটে এসেছিলো বাংলাদেশে। তুয়ার ডেলিভারির দিনে কয়েক মুহূর্তে আগে প্রত্যয়ের ইর্মাজেন্সী হার্টের একটা পেশেন্ট আসে।তুয়ার কপালে আদর দিয়ে তুয়ার অনেক সাহস জুগিয়েছে প্রত্যয়। এরপর তুয়াকে ওটিতে ঢুকিয়ে প্রত্যয় সেই পেশেন্টের অপারেশন করতে চলে যায়। প্রত্যয় একজন ডক্টর; সে ওর দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারে না।আল্লাহর উপর ভরসা আর প্রিয়মের উপর সব দায়িত্ব দিয়ে প্রত্যয় চলে গিয়েছিলো। সেদিন প্রত্যয় উপর উপরে শক্ত থাকলেও কতটা যে অসহায় বোধ করেছিলো, এটা কেউ না বুঝলেও, প্রিয়মের চোখে প্রত্যয় ফাঁকি দিতে পারেনি। প্রত্যয় যাওয়ার ৩০ মিঃ পর একটা নার্স কোলে করে ছোট্ট চাঁদের কণা নিয়ে আসলো। শুভ্র টাওয়ালে পেঁচানো একটা চাঁদের কণা। প্রত্যয়ের কথা মত নার্স প্রিয়মের হাতেই ছোট্ট প্রাণকে তুলে দিয়েছিলো। প্রিয়ম সেদিন খুব কেঁদেছিলো। উপস্থিতি সবাই প্রিয়মের কান্না দেখে কেঁদেছিলো। প্রিয়ম যে ঠিক কতটা খুশি হয়েছিলো, সেটা ওর মুখের হাসি আর চোখে খুশির অশ্রু দেখেই সবাই বুঝেছিলো। আর সেদিনই প্রিয়ম ছোট্ট বাবুর নাম রেখেছিলো “প্রাণ”।
৪ ঘন্টা পরে প্রত্যয় কোনমতে ড্রেস বদলে দৌড়ে আসে তুয়ার কাছে। তুয়াকে কেবিনে দেওয়া হয়েছে। সবাই তুয়ার সাথে কথা বলছে। আর প্রিয়ম কেবিনের এক কোণে বসে প্রাণের দিকে তাকিয়ে আছে। প্রত্যয় তুয়ার কাছে গিয়ে নিজে একবার চেকআপ করে নিলো। কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না জিজ্ঞাসা করলো। এরপর বাবুর কাছে গেল। প্রিয়মের কোলে থেকে প্রত্যয় যখন বাবুকে নিলো। প্রিয়মের তখন কেন জানি খুব কষ্ট হচ্ছিলো। মনে হচ্ছিল প্রাণ প্রিয়মের নিজের ছেলে। আর সেই কলিজার টুকরো ছেলেকে প্রত্যয় নিয়ে যাচ্ছে।প্রত্যয় ছেলের কপালে আদর দিলো। আর বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলো। এরপর প্রিয়মের দিকে তাকিয়ে বললো,
— “প্রিয়ম আমাদের এই প্রিন্সের নাম কি দেওয়া যায় বলো তো?” (প্রত্যয়)
— “ও তো আপনাদের প্রাণ। ওর নাম ‘প্রাণ’ রাখলে কেমন হয়?” (প্রিয়ম)
— “ওর নাম রাখি ওয়াসিক সাফায়েত প্রাণ। আমার নাম ওয়াসিক রায়হান প্রত্যয়। আর তোমার নাম তাশফিক সাফায়েত প্রিয়ম। আমার নামের থেকে ‘ওয়াসিক’ নিলাম। আর তোমার নাম থেকে ‘সাফায়েত’ নিলাম। আর আমাদের দুজনের নিকনেইম ‘প্র’ থেকে নিলাম ‘প্রাণ’। আমি একা জ্বালাতন সহ্য করবো তা তো হবে না।তোমাকেও ওর সব অত্যাচার সহ্য করতে হবে। এটা আমাদের দুজনেরই ছেলে। তাই না বাবাটা?” (প্রত্যয়)
এরপর থেকে প্রাণের প্রতি প্রিয়মের এক অদ্ভুত টান তৈরি হয়েছে। সুইজারল্যান্ড যাওয়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত প্রিয়ম প্রাণকে অনেকক্ষণ বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে রেখেছিলো। সুইজারল্যান্ড যাওয়ার পর প্রিয়ম ল্যাপটপের সামনে বসে প্রাণকে দুচোখ ভরে দেখতো। কত কথা বলতো। এভাবেই দিন যেতে যেতে ছয় টা বছর কেটে গেল। আগে প্রিয়ম একা কথা বলতো। আর এখন ছোট্ট প্রাণ প্রিয়মের সাথে হাজার হাজার কথার ঝুলি খুলে বসে। প্রিয়মের প্রতি প্রাণেরও অদ্ভুত একটা টান আছে। কয়েক ঘন্টা দুজনে কথা না বললে যেন পাগল হয়ে যায়। বেশ কয়েকদিন ধরে প্রাণ বায়না ধরেছে প্রিয়মকে দেশে আসতে হবে। আর প্রিয়মকে রাজি করানোর জন্য প্রাণ না খেয়ে আছে। আর প্রিয়ম ছেলের আবদার মেটাতে এবার দেশে ফিরতে রাজি হয়েছে।
দুইদিন পর প্রিয়ম বাংলাদেশে আসলো। তুয়া আর প্রাণ এয়ারপোর্টে এসেছে প্রিয়মকে নিতে। প্রিয়ম হাতে ট্রলি নিয়ে সামনের দিকে এগোতেই প্রাণ দৌড় দিলো প্রিয়মের দিকে। প্রাণকে দেখে প্রিয়ম হাটু গেঁড়ে বসে পড়লো। আর প্রাণ প্রিয়মের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়লো। প্রিয়মের মরুভূমিতে পরিণত হওয়া বুকের হাহাকারটা যেন নিমেষই মিটে গেল। প্রিয়ম প্রাণের কপালে আদর দিয়ে বললো,
— “আমার বাবাটা কেমন আছে?”
— “আমি এখন অনেক ভাল আছি। চলো, চলো আগে বাসায় চলো ।তোমার সাথে আমার কত কথা আছে, তুমি কি জানো?” (প্রিয়মের হাত ধরে টেনে)
— “ওকে সোনাবাবা টা চলো।”
প্রিয়ম প্রাণকে কোলে তুলে নিলো। আর এক হাতে ট্রলি নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে গেল। তুয়া এতক্ষণ দাঁড়িয়ে ওদের কান্ড দেখছিলো। প্রিয়ম তুয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,”কেমন আছিস?” তুয়া বললো,”হুম ভালো আছি।” এরপর ওরা গাড়িতে গিয়ে বসলো। প্রিয়ম ঘাড় ঘুরিয়ে তুয়াকে বললো,”ভাই কি হসপিটালে?” তুয়া পেছনের সিটে আর প্রিয়ম ড্রাইভারের পাশে। আর প্রাণ প্রিয়মের কোলের উপর। তুয়া প্রিয়মের কথা শুনে,”হ্যা” বললো। প্রিয়ম আর কিছু বললো না। তাই তুয়াও আর কোনো কথা বাড়ালো না। প্রাণ তো প্রিয়মকে পেয়ে খুশিতে আটখানা। এরপর বাসায় ফিরে ওরা ফ্রেশ হয়ে নিলো। প্রিয়মের সাথে প্রাণও আছে ওর রুমে।
একটু পরে কলিংবেশ বেজে উঠলো। তুয়া গিয়ে দরজা খুলে দিলো। আর মুখ ভেংচি দিলো। প্রত্যয় মুচকি হেসে জুতো খুলে রাখলো। তুয়া প্রত্যয়ের গলা জড়িয়ে ধরে প্রত্যয়ের পায়ের উপর পা রেখে উঠে দাঁড়ালো। প্রত্যয় আশেপাশে তাকালো। তারপর তুয়ার কোমর ধরে ওই ভাবে তুয়াকে নিয়ে গুটিগুটি পায়ে হেঁটেই রুমের দিকে নিয়ে গেল। রুমে এসে তুয়া নেমে গেল। প্রত্যয় তুয়াকে ধরে বললো,
— “আমার পারিশ্রমিক কে দিবে শুনি?”
তুয়া মুচকি হেসে প্রত্যয়ের কপালে একটা আদর দিয়ে দিলো। প্রত্যয় প্রিয়মের সাথে দেখা করলো। প্রত্যয়কে দেখে প্রান প্রত্যয়কেও একটা আদর দিলো। প্রিয়মকে আবার আদর দিতে ভুল করে নি প্রাণ। এরপর সবাই একসাথে খেতে বসলো। প্রান প্রিয়মের হাতে একবার খাচ্ছে। আর একবার প্রত্যয়ের হাতে খাচ্ছে। প্রান প্রিয়মকে বাবা ডাকে। আর প্রত্যয়কে বাবাই ডাকে।প্রত্যয় খেতে খেতে প্রিয়মকে জিজ্ঞাসা করলো,”প্রিয়ম দেশে আসতে চাও না কেন?” প্রিয়ম বললো সে এখানে আসলে নাকি প্রাণকে রেখে যেতে ওর কষ্ট হয়। তাই প্রিয়ম দেশে ফেরে না। এই কথা শুনে প্রত্যয় বললো,
— “মন চাইলে তোমার সাথে প্রাণকে নিয়ে যেতেও পারো। তুমিও ওর বাবা। ওর প্রতি তোমারও অধিকার আছে। আমি আগেই বলেছি, প্রাণ তোমারও ছেলে।”
— “বাবাই আমি তাহলে এবার বাবার সাথে যাবো?”
(প্রাণ)
— “তুমি যেতে চাইলে অবশ্যই যাবে বাবা।” (প্রত্যয়)
প্রিয়ম কিছু বললো না। তবে প্রত্যয়ের কথা শুনে প্রত্যয়ের বাবা মা নারাজ হলো। তুয়াও কিছু বললো না।কারণ তুয়া জানে প্রত্যয় কোন কিছু না ভেবে কিছু করবে না। সবাই খাওয়া দাওয়া শেষ করে যে যার রুমে চলে গেল। আর প্রত্যয় গেল ওর বাবা মায়ের রুমে। প্রত্যয় ওর বাবাকে বললো,
— “বাবা তোমার মনে আছে? প্রথমবার আমি প্যারিসে যাওয়ার সময় বলেছিলাম ফিরে এসে আমি যা চাইবো, আমাকে তাই দিতে হবে? আজকে আমি সেই চাওয়াটাই তোমার চাইতে এসেছি।” (প্রত্যয়)
— “তোমার কি চাই আব্বু, আমাকে বলো?” (আব্বু)
— “আমি প্রাণকে প্রিয়মের কাছে একেবারে দিয়ে দিতে চাই। প্লিজ তুমি দ্বিমত করো না।” (প্রত্যয়)
— “আব্বু এটা তো টাকায় কেনা জিনিস না। প্রাণ হলো তোমার সন্তান, তোমার রক্ত।”
— “আমরা যাকে ভালবাসি তাকে আমাদের বুকের বা পাশে জায়গা দেয়। মন প্রান উজাড় করে ভালবাসি। তাকে এতটাই ভালবাসি, যে তাকেই বেঁচে থাকার অবলম্বন করতে চাই। বাবা একটা সময় প্রিয়ম চাইলে ও কিন্তু তুয়াকে ওর কাছে নিয়ে যেতে পারতো। আজকে প্রিয়মের জায়গায় আমিও থাকতে পারতাম। প্রিয়মের বাঁচার একমাত্র অবলম্বন ছিলো তুয়া। কিন্তু প্রিয়ম তুয়া আর আমার ভালোর জন্য নিজে আমাদের মাঝে থেকে সরে গিয়েছে। বাবা আমি মহৎ হওয়ার জন্য এসব বলছি না। আমি প্রিয়মকে বাঁচার একটা অবলম্বন দিতে চাচ্ছি। আমি আর তুয়া চাইলে আবার বেবি নিতে পারবো। কিন্তু প্রিয়ম বিয়ে নামক সম্পর্কে আবদ্ধ হতে রাজি না, ওকে আমি রাজি করাতে পারিনি। ওকে আমি অনেক বুঝিয়েছি। বাবা প্রিয়ম আমার কেউ না,আবার ও আমার অনেক আপন কেউ।”
— “প্রাণ যদি থাকতে না চাই ওখানে?”
— “প্রাণ প্রিয়মকে ছাড়া কিছু বুঝে না। আমি জানি প্রাণ পারবে থাকতে। কারণ আমি প্রাণকে প্রিয়মের প্রতি একটা টান অনুভব করতে দেখছি। আর প্রিয়ম প্রাণকে খুব ভালবাসে; একদম নিজের ছেলের মতো। বাবা আমি তোমার থেকেই তো শিখেছি, সবসময় হাত চিৎ না করে উপুড়ও করতে হয়।সব সময় পাওয়ার আশা না করে কিছু দেওয়াও শিখতে হয়।” (প্রত্যয়)
প্রত্যয় ওর বাবা মাকে বুঝালো। প্রতিবারে মতো এবারও উনারা প্রত্যয়ের যুক্তির কাছে হেরে গেল। আর প্রত্যয় সবার সামনে এটাই বললো, প্রাণ এবার প্রিয়মের সাথে সুইজারল্যান্ড যাচ্ছে। এই কথাটা শুনে প্রাণ তো খুব খুশি। তুয়া কেঁদেছিলো; একমাত্র ছেলে বলে কথা। কিন্তু প্রত্যয় তুয়াকেও অনেক যুক্তি দেখিয়েছে। তুয়া দুই মাসের পেগনেন্ট। প্রত্যয় প্রিয়মকেও ওর মতো বুঝিয়েছে। তাই প্রিয়ম না করতে পারেনি। প্রিয়ম মনে মনে খুব খুশি। কারণ এবার প্রিয়মও সত্যি প্রাণকে চায়। দুই সপ্তাহ পর বাংলাদেশে থেকে প্রাণ আর প্রিয়ম সুইজারল্যান্ড চলে যাচ্ছে। এয়ারপোর্টে সবাই দাঁড়িয়ে আছে। তুয়া প্রাণকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলো।প্রত্যয়ও প্রাণকে আদর করে দিলো। এরপর প্রত্যয় প্রিয়মকে জড়িয়ে ধরে মনে মনে বললো,
“কলিজায় জায়গা দেওয়া প্রিয় মানুষটাকে অন্য কাউকে দিলে যে বুকের ভেতর কতটা রক্তক্ষণ হয়, আমি আজ বুঝতে পারছি। তুয়াকে আমার কাছে রেখে যাওয়ার সময় তোমারও সেদিন এমনটাই হয়েছিলো।আমিই একদিন তোমার বেঁচে থাকার অবলম্বন টাকে তোমার থেকে নিয়েছিলাম। আর আজকে আমি আমার কলিজাটাকে তোমার বাঁচার অবলম্বন করে দিলাম।দোয়া করি, খুব ভাল থেকো।”
এরপর প্রিয়ম প্রাণকে কোলে নিয়ে ভেতরে চলে গেল।আর প্রাণ প্রত্যয় আর তুয়াকে হাত নাড়িয়ে টাটা দিচ্ছে আর হাসছে। অর্থাৎ আমি চলে যাচ্ছি, তোমরা আর আমাকে বকা দিতে পারবে না। প্রিয়মের মুখে বিশ্বজয় করা হাসি। প্রিয়ম এবার ভাল থাকবে তার প্রাণকে নিয়ে।এবার প্রিয়মও পেলো নতুন করে বাঁচার অবলম্বন। বাবা আর ছেলে মিলে নতুন করে ভালো থাকার শক্তি উদয় করবে। তুয়া ছলছল চোখে প্রাণের দিকে তাকিয়ে আছে।প্রত্যয় ওর চোখের পানিটা সর্তকতার সাথে মুছে নিলো। আর তুয়াকে নিয়ে এয়ারপোর্ট থেকে চলে এলো।
ওরা বাসায় ফিরে এলো। তুয়া ওয়াশরুম থেকে বের হলো। আর দেখলো প্রত্যয় চোখের উপর হাত রেখে শুয়ে আছে। তুয়া জানে প্রত্যয় কাঁদছে। প্রত্যয়ের যে কলিজা ছিলো প্রাণ। কতটা কষ্ট বুকে নিয়ে প্রত্যয় এমন পদক্ষেপ নিয়েছে, এটা শুধু প্রত্যয়ই জানে।
তুয়া ওখানে দাঁড়িয়ে ধরা গলায় বললো,
— “প্রাণ তো চলে গেল। আমি তো আছি তাই না?আমাকে কি একটু ভালবাসা যায় না? আমাকে কি একটা নিরাপদ আশ্রয় দেওয়া যাবে? আমাদের কি আগের মত আগলে রাখা যায় না? সব কষ্ট ভুলে আমার জন্য কি ভাল থাকা যায় না? যেখানে কোন রহস্য নেই, মিথ্যে নেই, চাওয়া পাওয়ার হিসেবে নেই।আমাকে কি এমন একটা জায়গা স্থান দেওয়া যায়না?” (তুয়া)
তুয়ার কথা শুনে প্রত্যয় উঠে বসলো। তুয়ার দিকে তাকালো, কিন্ত কিছু বললো না। তবে প্রত্যয় ওর ডান হাতটা ওর বুকের বা পাশে রাখলো। তুয়া ওর উত্তর পেয়ে গেছে। এজন্য তুয়া দৌড়ে এসে প্রত্যয়ের বুকের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো। আর প্রত্যয় তুয়ার মাথাটা ওর বুকের বা পাশে রাখলো। এই একটা জায়গা, যেখানে শুরুতেই তুয়ার বসবাস আর শেষটাতেও। তুয়া কাঁদছে খুব কাঁদছে প্রত্যয়ের শার্ট খামছে ধরে। যত যাই হয়ে যাক প্রত্যয়ের বুকে তুয়া আছে। আর তুয়াই থাকবে।তুয়ার দুচোখ থেকে ঝরে যাচ্ছে সুখের অশ্রু।ওর ভাগ্যতে যে এত সুখ ছিলো। তুয়ার জানা ছিলো না।প্রত্যয় মৃদ্যু সুরে বললো,”ভালবাসি”।এটা শুনে তুয়ার মুখে হাসি ফুটলো।আজকে তুয়ারও চিৎকার করতে বলতে ইচ্ছে করছে,
“হ্যা আমি একদিন আমার ভালবাসার মানুষটাকে হারিয়েছি। কিন্তু আজ আল্লাহ আমাকে সব দিয়ে আবার পরিপূর্ণ করে দিয়েছে। প্রত্যয় ওর ভালবাসা দিয়ে প্রমান করে দিয়েছে। ওর বুকের বা পাশে আমিই আছি। হ্যা আমি আছি প্রত্যয়ের বুকের বা পাশে। আর আমিই থাকবো, এইটা শুধু আমার স্থান। আর কারো না,আমি কাউকে দিতেও দিবো না। আমি আজ গর্ব করে বলবো।আমি খুব ভাগ্যবতী, আমি পেরেছি প্রত্যয়কে ভাল রাখতে। আমি একবিন্দু না, আমি প্রত্যয়কে এক সিন্ধু ভালোবাসা দিতে পেরেছি।আমার আর কোনো চাওয়াও নেই, পাওয়াও নেই।আমি সুখী,খুব খুব সুখী। কারণ আমার স্থান শুধু প্রত্যয়ের
#বুকের_বা_পাশে।🌿🌿
#সমাপ্ত।
#আলোমনি___
০৪/১০/২০