#হৃদস্পন্দনের_টানে___
#written_by_Nurzahan_akter_Allo
#part_5
❤❤
আর যখন এটা ঘটে তখন নুর দুই তলার জানালার পাশে রান্না বাটি খেলছিলো….।কিছু পড়ার শব্দে তাকিয়ে আবার সেই রক্তমাখা মুখ দেখে ভয়ে পেয়ে সেন্স হারায়……
–
জুবিন আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া জানায় যে নুরের ব্রেনে রক্ত ক্ষরণ হয়নি!ভয়ে পেয়ে এমন হয়েছে।এখন জুবিন অন্য কারনে ভয় পাচ্ছে কারন এখন দুইটা ঘটনা ঘটতে পারে।
১.হয় নুর আগের কিছু মনে করতে পারবে!
২.আর না হয় সারাজীবনের জন্য মানসিক রুগী হয়ে যাবে।
–
এখন অনেক মনে মনে ভাবছেন বাংলা সিনেমার মত কাহিনী হচ্ছে! তাদের বলি মনে করেন, কোন পড়া আপনার ব্রেন থেকে আউট হয়ে গেছেে!কিছুতেই মনে করতে পারছেন না! দেখবেন কোথাও যদি সেটা আবার একপলক দেখেন আবার আপনার ব্রেন সেটা ক্যাচ করবে! কারন সেই পড়া আপনি আগেও পড়েছিলেন বা আপনার জানা ছিলো।সেইরকম কিছু কিছু জিনিস ব্রেন থেকে আউট হয়ে গেলেও আবার যদি সেটা চোখের সামনে পড়ে তো সেটা পুরোপুরি আবার মনে পড়ে যায়!যেমন নুরের হয়েছে….নুর সেদিন উৎস আর পরীর এমন রক্ত মাখা মুখ দেখেই সেন্স হারিয়েছিলো।
–
আর আগেই তুলনায় যেহেতু নুর ডেভেলপ করছে তাহলে মনে পড়াটাও স্বাভাবিক!সাইকোলজির দিক থেকে বলতে গেলে আরো অনেক জটিল ব্যাখা আছে। তবে আমি আমার মত করে আপনাদের সহজ করে বোঝাতে চেয়েছি….
–
জুবিন প্রাণপণ চেষ্টা করছে নুর যাতে এবার সুস্থ হয়ে যায় কারন কোন ডাক্তারই চাই না তার রুগীকে সুস্থ না হোক।প্রায় ২৪ ঘন্টা পর নুর সেন্স আসে আর উৎস আর পরী বলে চিৎকার করে উঠে। জুবিন তখন কেবিনেই বসে ছিলো।নুরের চিৎকার শুনে জুবিন দৌড় নুরের কাছে যায় বাট নুর হাউমাউ করে কান্না করেই যাচ্ছে!নুর এখন জুবিনকে চিনতে পারছে না…
–
নুরের বাবা-মা নুরের সুস্থ হওয়ার খবর পেয়ে ওনারা ছুটে আসে!জুবিন বুকের ভেতর তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে কারন নুর তো আর এখানে থাকবে না। নুর ওর বাবা -মাকে পেয়ে ওদের জড়িয়ে ধরে কান্না করছে আর একটু দুরে দাড়িয়ে সেটা দেখে জুবিনের বুকে কাটার মত বিঁধছে। নুরের বাবা জুবিনের কাছে গিয়ে বলে উনারা আর নুরকে আর এখানে রাখবে না!জুবিন যেন সব কিছু বুঝিয়ে দেয়…জুবিন মাথা নেড়ে হ্যা বলে।
–
নুরের সব কিছু গোছগাছ করে নেয়!নুরের ব্যাগ পএ ওর বাবা-মা গাড়িতে তুলছে! নুরকে কেন জানি বেডে থাকা পুতুলটা ওকে খুব টানছে এজন্য পুতুলটা নিয়েই নুর বেরিয়ে আসে।নুরের বাবা মা বলে জুবিনের জন্য নুর সুস্থ এখন জুবিনকে ধন্যবাদ দিয়ে আসতে!নুর জুবিনের কেবিনে গিয়ে দেখে জুবিন মাথা টেবিল ঠেকিয়ে বসে আছে…
–
নুরঃ আসবো স্যার!!!
জুবিনঃ হুমম এসো এসো! (এখন স্যার হয়ে গেলাম!মনে মনে)
নুরঃ আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।আমার জন্য আপনি অনেক কষ্ট করছেন।
জুবিনঃ থাক ধন্যবাদ দিতে হবে না!ঠিক খাওয়া -দাওয়া করবে,আর মেডিসিন যেন মিস না যায় কেমন…নিজের খেয়াল রাখবে।আর যে কোন সমস্যা হলে আমাকে ফোন দিবে!এই নাও এটা আমার পারসোনাল নাম্বার (একটা নাম্বার দিয়ে)
নুরঃহুমম!আপনার চোখ কি হয়েছে??এমন লাল হয়েছে আছে কেন??
জুবিনঃ আসলে খুব কাছের কাউকে হারিয়ে ফেলছি তো এজন্য একটু মনটা খারাপ।
নুরঃ ওহহ!আচ্ছা ভালো থাকবেন….আমাদের বাসায় বেড়াতে আসবেন।আল্লাহ হাফেজ..
জুবিনঃ হুমমমম! আল্লাহ হাফেজ..
–
নুর গাড়িতে উঠে যাচ্ছে আর জুবিন ওর কেবিনের জানালা দিয়ে দেখছে!জুবিনের মনে হচ্ছে কেউ শরীর থেকে আত্মাটা বের করে নিয়ে যাচ্ছে। ছেলেদের নাকি কাঁদতে মানা তারপরেও আজকে জুবিন নিঃশব্দে কাঁদছে!মায়া জিনিসটা সত্যি ভয়ংকর!জুবিন নিজে নিজেকে অনেক বোঝাচ্ছে বাট বার বারই ব্যথ হচ্ছে। ভালবাসা কি মানুষ আর দিন ঠিক করে হয়??ভালাবাসা টা অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে হয়!আর কখন কাকে ভালবেসে ফেলে এই অবুজ মনটাও জানে না?জুবিনেও তাই নুরের সাথে থাকতে থাকতে নুরকে এত টা ভালবেসে ফেলেছে….
–
এভাবে বেশ কয়েকদিন কেটে যায়!জুবিনের হসপিটালে আসলে কেমন জানি ফাকা ফাঁকা লাগে!কিছুই যেন ভালো লাগে না!থ্যাথোস্কোপটা,অ, আ লিখার খাতাটা,নুরের সেই আবদার সিভিট নিয়ে,জানলা ধরে ঝুলে থাকা,নুরের চেয়ারে পা তুলে বসা টা এসব কিছু জুবিনকে মনটাকে খুব পোড়ায়।
–
নুর বাসায় গিয়ে উৎস আর পরীর কবর দেখে!তারপর জিয়ারত করায়। নুর নিজেকে শক্ত রাখার চেষ্টা করে বাট কাছের মানুষ হারানোর কষ্ট টা যে হারায় সেই বুঝে…নুর এখন কাজের মধ্যে নিজেকে বিজি রাখতে চাই।এজন্য নুর চিন্তা করছে জব করবে..কারন কাজের মাঝে থাকলেই এসব চিন্তা থেকে ও দুরে থাকবে…
–
পরের দিন সকালে…
নুর জুবিনকে ফোন করে জানায় ওর মাথা ব্যাথা করছে দুইদিন ধরে।জুবিন নুরকে দেখা করতে বলে! নুর জুবিনকে ওর বাসার এড্রেস দেয় আর জুবিনকে বাসায় আসতে বলে।জুবিন মন চাচ্ছে এখুনি এক দৌড়ে নুরের কাছে চলে যায়!একটা বার নুর কে দেখার জন্য জুবিনের মনটা যে কতটা ব্যাকুল হয়ে আছে সেটা যদি কাউকে যদি দেখানো যেত।জুবিন হসপিটালের কাজ শেষ করে বাসায় চলে যায়….
–
সন্ধ্যার দিকে জুবিন নুরের দেওয়া এড্রেস অনুযায়ী পৌঁছে যায়। নুরকে দেখে জুবিনের বুক কাঁপছে কারন এই নুর আর আগের নুরের মধ্যে অনেক তফাত। এখন নুর কতটা গোছালো,সুন্দর করে চুল বাধা,ড্রেস আপ কত মার্জিত। এ্যাশ কালারে একটা থ্রীপিস পড়ে আছে নুর! খুব মানিয়েছে এই কালারটা তে ওকে…
নুর জুবিনে ওর সমস্যার কথা বলে তারপর জুবিন আবার নুরের রানিং মেডিসিন গুলো দেখাতে বলে।নুর জুবিনকে মেডিসিন গুলো দেখায়.. জুবিন নুরের দিকে তাকিয়ে বলে।
–
জুবিনঃনুর কালকে আমার সাথে একবার অন্য কোথাও দেখা করবে?প্লিজ..
নুরঃ কেন?? (ভ্রু কুচকে)
জুবিনঃ হয়তো কোন কারন আছে?প্লিজ
নুরঃ ওকে! কালকে….. পার্কে আসবেন।
জুবিনঃ আর শোন আজকে আর মেডিসিন নেওয়ার দরকার নাই কেমন!এই ডোজ কমপ্লিট….
–
পরেরদিন বিকালবেলা জুবিন পার্কে গিয়ে দেখে নুর আনমনে আকাশের দিকে তাকিয়ে,ঘাসের উপর বসে আছে!আকাশি কালারের একটা থ্রী পিস পড়ে এসেছে আজকে!জুবিন মুচকি হেসে এক গুচ্ছ লাল গোলাপ নিয়ে নুরের পাশে বসে পড়লো…আর নুরের দিকে গোলাপ গুলো এগিয়ে দিল।নুর ভ্রু কুচকে জুবিনের দিকে তাকিয়ে আছে।জুবিন তখন…
–
জুবিনঃ আ আ ম মা মানে আসার সময় ফুল গুলো দেখে ভালো লাগলো তাই নিলাম।আর ফুল তো পবিএ জিনিস তাই এই ফুল দিয়েই তোমার সুস্থতার জন্য অভিনন্দন জানালাম….. (আমতা আমতা করে)
–
নুর কিছু বললো না! জুবিন নুরের দিকে তাকিয়ে বললো।
জুবিনঃ আমি কি তোমার বন্ধু হতে পারি?? আই মিন এখানে আমার কোন বন্ধু নাই।প্রতিটা মানুষের একটা করে বন্ধু থাকা দরকার! যাকে মনের সব কথা বলা যায়….
নুরঃ বন্ধু বানিয়ে আপনিও আবার ছেড়ে চলে যাবেন তাই।এই হারানোর কষ্ট টা আমি আর সহ্য করতে পারবো না…
জুবিনঃ একবার বিলিভ করে দেখো!কথা দিচ্ছি কষ্ট দিবো না। (মায়াবি দৃষ্টিতে তাকিয়ে)
নুরঃ সবাই তো এই কথায় বলে! বাট কেউ কথা রাখে না সবাই আমাকে দুরে ঠেলে দেয়।আমারও একটা বন্ধু দরকার তাই আপনার কথায় রাজি হলাম!
জুবিনঃ ধন্যবাদ (অনেক খুশি হয়ে)
–
জুবিনের তো খুশির শেষ নেই!আর নুর রাজি হয়েছে একটা বন্ধু থাকলে মনের কথা গুলো শেয়ার করলে মনটা হালকা হবে।জুবিন নুরের দিকে তাকিয়ে হুট করে বললো….
জুবিনঃ নুর তুমি বাসায় থাকা ওই মেডিসিন গুলো আর খাবে না…কেন?এই কেন এর উওর আমি এখন দিতে পারবো না।তবে আমি তোমার খারাপ চাইবো না এই বিশ্বাস টুকু রাখো…
চলবে…