#এলোকেশী_কন্যা২__
#written_by_Nurzahan_akter_Allo
#part_10
🍁🍁
মেঘঃ জিও বউমনি!যা দিলে না পুরাই জখাম!ওরে কেউ সিটি বাজাও রে!!!!______
–
রোদ মেঘের কাছে গিয়ে ওর এক কান টেনে ধরলো।
মেঘঃ আও আও আমি ব্যাথা পাচ্ছি দাভাই।ওরে আমার কান ছিঁড়ে গেল রে..!!
রোদঃ জিও বউমনি তাই না!তোদের দুজনকে যদি উচিত শিক্ষা দিতে না পারি! তো আমার নামও রোদ না..!!(রেগে গিয়ে)
–
রোদ ওর রুমে চলে গেল!আর মেঘ লাফাতে লাফাতে রকিকে নিয়ে আলোর রুমে গেল!তারপর আলো আর মেঘ বাগানে পানি দিলো আর আগাছা সাফ করলো।আলো আর মেঘ দুজনেই রকির সাথে দুষ্টুমি করছে আর খিলখিল করে হাসছে।রোদের আম্মুও ওদের সাথে যোগ দিলো!রোদের আম্মু, মেঘ আর আলো মিলে ঠিক করলো তিনজনে লুডু খেলবে।তারপর তিনজন লুডু খেলা শুরু করলো!মেঘ আর আলো মিলে রোদের আম্মুর গুটি কাটছে!মেঘ আর আলো কেউ কারো গুটি কাটছে না!রোদের আব্বু অফিস থেকে কেবল আসলো! আর উনি এসেই দেখে বাগানে এক প্রকার যুদ্ধ চলছে!আলো আর মেঘ রোদের আব্বুকে খেলতে বসিয়ে দিলো!রোদের আব্বু আর আম্মু, আলো আর মেঘ,আলো মেঘে মিলে ওর আব্বুদের গুটি কাটছে!কোথা থেকে রোদ এসে ওর আব্বু সাজেস্ট করতে লাগলো তখন রোদের আব্বু আম্মু মিলে আলো আর মেঘের গুটি কাটতে শুরু করলো।
–
আলো আর মেঘ আর পারছে না!মেঘ আর আলো রোদের দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে আছে মনে হচ্ছে ওকে গিলে খাবে!আর রোদের উদ্দেশ্য আলো আর মেঘের হেরে যাওয়ার পর ওদের পেঁচার মত মুখটা দেখার।আলো আর মেঘ দুজন দুজনার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো! তারপর কি যেন ভেবে ওরা খেলায় মন দিলো!আলো আর মেঘের বেশি ছয় পড়ছে এজন্য ওদের সব গুটি আবার বেরিয়ে গেল।মেঘ রোদকে কিছু বলতেই দিচ্ছে না রোদ কিছু বলতো গেলেই মেঘ তখন চিৎকার করে উঠছে! আর না হলে জোরে গান গাইতে শুরু করছে।ওদের কাহিনী দেখে মেঘের আব্বু আর আম্মু হাসছে..!!
–
শেষমেষ মেঘ আলো আর মেঘের জয় হলো!কারন সবার আগোচরে আলো আর মেঘ ওদের তিনটা গুটি চুরি করে আগেই রেখে দিয়েছিলো।রোদের ফোন আসাতে রোদ অনেক আগেই চলে গিয়েছে এজন্য আলো আর মেঘ চুরি করতে পেরেছে।মেঘ ওর আব্বুকে হারিয়ে ট্রিট চাচ্ছে….!!
–
সন্ধ্যার একটু আগে রোদ রেডি হয়ে বাগানে আসে!মেরুন কালার একটা শার্ট, কালো জিন্স,একহাতে ব্যাচলেট, আরেক হাতে কালো ওয়াচ,আর খোঁচা খোঁচা দাড়ি।রোদ ওর আম্মু কে বলে ও হাতিরঝিল প্রোগ্রামে যাচ্ছে! আর আসতে একটু লেট হবে।আলো আড়চোখে একবার রোদের দিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নেয়!রোদ চলে গেলে সবাই বাসায় যায় কারন একটু পরই মাগরিবের আজান দিবে।বাসায় গিয়ে যে যার রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেয়!আলো অজু করে একেবারে মাগরিবের নামাজ পড়ে তারপর নিচে আসে!
–
আলো রান্না ঘরে গিয়ে একটা পাতিলে চায়ের পানি বসায়!তারপর বাগান থেকে কয়েকটা তুলসি পাতা তুলে আনে আর পাতিলের সেই পানিতে তুলসি পাতা, দারুচিনি, এলাচি, তেজপাতা, লবঙ্গ, চিনি,আদা, আর একটু মধু দেয়! চুলের আচ না কমিয়ে পানিটা ভালো মত ফুটিয়ে চা দেয় আর নেড়ে নেয়!তারপর কড়াইয়ে তেল দিয়ে চিপ্স ভেজে নেয়। তখন রোদের আব্বু আম্মুও নামাজ পড়ে ড্রয়িং রুমে আসে!আলো ওদের চা দেওয়ার আগে রোদের আব্বু বলে উঠে…
–
রোদের আব্বুঃ আলো মামনি তুমি কি বানাচ্ছো?? চারদিকে এত সুন্দর ঘ্রাণে তো পুরো বাড়ি টাই মো মো করছে!
আলোঃ আব্বু আপনাদের জন্য চা বানালাম!আব্বু চা টা খেয়ে দেখেন তো কেমন হয়েছে??
মেঘঃ আমাকে তারাতারি দাও বউমনি!তারাতারি দাও ইয়াম কি খুশবু…!!! (জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে)
রোদের আম্মুঃ তুই এসব করতে গেলি কেন??
আলোঃ খেয়ে দেখো আর বলো কেমন হয়েছে…এই নাও (সবাইকে চা দিয়ে)
রোদের আব্বুঃ উমমম অসাধারণ হয়েছে!মামনি মন ভালো করার মত চা বানিয়েছো তুমি..!!
আলোঃ আব্বু আপনার ভালো লেগেছে??(খুশি হয়ে)
রোদের আব্বুঃ খুব খুব ভালো হয়েছে খেতে।আমি অফিস থেকে এসে প্রতিদিন তোমার হাতের এই চা টা খেতে চাই মামনি..!!
আলোঃ আচ্ছা আব্বু (অনেক খুশি হয়েছে)
মেঘঃ ইয়ামমম! উফফফ খুব গরম। তোমরা কেউ আমার চায়ে ফু দিয়ে দাও তো।
আলোঃ মেঘ বাবু আমাকে দাও আমি ফু দিয়ে দিচ্ছি।
রোদের আম্মুঃ চা টা আসলেই অনেক টেস্ট হয়েছে।
–
তারপর খেতে খেতে আড্ডা দেওয়া শুরু করে!খাওয়া শেষ করে আলো আর মেঘ পড়তে বসে!আলো ওর বই গুলো নেড়েচেড়ে দেখছে!কালকে থেকে কলেজ যাওয়া শুরু করবে!মেঘ ওর বই গুলো নিয়ে লাফাতে লাফাতে আলোর রুমে চলে আসে!আলো মুচকি হেসে মেঘকে ওর পড়া দেখিয়ে দেয়!তারপর নিজেও পড়া শুরু করে!মেঘ পড়তে পড়তে বলে…
–
মেঘঃ বউমনি কত গিয়ারে পড়বো আমি??
আলোঃ কত গিয়ার মানে??
মেঘঃ 2th, 4th গিয়ারে পড়বো! নাকি আরো গিয়ার বাড়াবো।
আলোঃ কোন গিয়ারে পড়তে হবে না!সুন্দর করে পড়ো যাতে পড়াটা মাথায় থাকে।
মেঘঃ বউমনি আমার পড়াশোনা ছাড়া সব কিছু করতে ভালো লাগে!আচ্ছা বউমনি যে পড়াশোনা বানিয়েছে সে কি মারা গেছে??
আলোঃ মারা গেছে মনে হয়..
মেঘঃ মরে গিয়ে ভালো করছে তা না হলে আমিই উনাকে মেরে ফেলতাম।উফফ কি যে একটা অশান্তি
আলোঃ আচ্ছা মেঘ তোমার অংক নাকি ইংরেজী কোনটা পড়তে বেশি ভালো লাগে??
মেঘঃ আমার কোনটাই ভালো লাগে না।
আলোঃ কেন???
মেঘঃ অংক বই দেখলে আমার পেটে মোচর দেয় আর ইংরেজী বই দেখলে বুকে আনচান করে।
আলোঃ এ তো দেখি অনেক বড় অসুখ।
মেঘঃহুমমম!এখন কি করা যায় বলো তো??
আলোঃ তোমাকে গরুর ইনজেকশন দিতে হবে।তাহলে ঠিক হয়ে যাবে।হা হা হা হা
–
তারপর দুজন দুষ্টুমি করতে করতেই পড়া শেষ করলো!রাত ১০ টার দিকে রাতের খাবার খেয়ে যার যার রুমে চলে গেল!আলো আর মেঘ দুজন একসাথে ব্রাশ করে নিলো!আলোর ঘরেই মেঘ শুয়ে পড়লো!আলো মেঘের সাথে গল্প করছে আর মেঘের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। মেঘের তো এত এত কথা বলছে!ওর যেন কথা শেষই হয়না। আর গল্প করতে করতে মেঘ বাবু ঘুমের একটা সময় দেশে পাড়ি জমায়!আলো মেঘের কপালে একটা আদর দেয় আর মনে মনে বলে…
–
আলোঃ রক্তের সম্পর্ক না থাকলে আপন হওয়া যায় না!এই কথাটা আমি ভুল প্রমান করবো!আমি আমার আপন ভাইয়ের মত ভালবাসি তোমাকে মেঘ।তোমার দাভাই আমাকে যত কিছুই বলুক আমি সব মেনে নিবে শুধু তোমার মুখের দিকে চেয়ে!মেঘবাবু তোমার কারনে আমি আবার বেঁচে থাকার নতুন আশা খুঁজে পেয়েছি!আমি জানিনা আমার ভাগ্য তে কি আছে!আমি এটাও জানিনা আমি কোনদিন তোমার বউমনি হতে পারবো কি না! তবে আমি তোমার পাশে আছি আর সারাজীবন থাকবো।আমার শরীরের শেষ নিঃশ্বাস অবধি আমি তোমাকে আগলে রাখবো মেঘবাবু…!!
–
আলো মেঘের পাশে থেকে উঠতেই কলিংবেল বেজে ওঠে!আলো ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত ১২ঃ০৯ বাজে!আলো ধীর পায়ে নিচে যায়!রোদের আব্বু আম্মু ঘুমিয়ে পড়ছে!আলো দরজা সামনে গিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় জিজ্ঞাসা করে…
–
আলোঃ ক ক ক কে???
রোদঃ ভূত! দরজা খুলবে নাকি বাইরেই দাড়িয়ে থাকবো???
আলোঃ ওহহ র র রোদ ভাইয়া আপনি।(দরজা খুলে)
রোদঃ কেন অন্য কাউকে আশা করেছিলে নাকি?এই এই ওয়েট ওয়েট এখন কারো আসার কথা ছিলো নাকি। (ভ্রু কুচকে)
আলোঃ….(আলো কিছু না বলে চলে যাচ্ছিলো)
রোদঃ আমার খুব খুধা লাগছে!তারাতারি খাবার বাড়ো! আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি…
আলোঃ জ জ জি
রোদঃ ছোট বেলায় তোমার বাবা মা কি তোমাকে সব পোলিও বা সব টিকা দিয়েছিলো??
আলোঃ হুমম!এ এ কথা জিজ্ঞাসা করছেন কেন??
রোদঃ সব কথাতে তোতলাও এজন্য জিজ্ঞাসা করলাম।যাই হোক এসে যেন সব খাবার রেডি পাই।
–
রোদ কথাটা বলে হনহন করতে করতে চলে গেল!আলো রোদকে মনে মনে কয়েক দফা গালি দিলো।আর মনে মনে গালি দেওয়া ছাড়া আর কি বা করবে?কারন রোদের সামনে গেলেই আলো তোতলাতে থাকে! তাই মনে মনে গালি দিয়ে মনটাকে শান্ত করে..
.
আলোঃ এই পোলা ডা এত অসভ্য ক্যারে!শালা আমার সাথে ভালো করে কথা কইলে কি তোর লেজ গজাবে নাকি ডায়রিয়া হবে।সব সময় ধমকায়।কেন রে আমি তোর কোন গমের ক্ষেতে মই দিসি! যে সব সময় আমার সাথে এমন ভাবে কথা কইস তুই।দেখিস তোর বিয়ার পর তোর বউ পরকিয়া করবে… (মনে মনে)
–
আলো খাবার গরম করে ডায়নিং টেবিলে সাজিয়ে দেয়!রোদ খেতে আসে! তখন আলো চলে যাবে তখন রোদ আলোকে ডেকে বলে…
রোদঃ পানি টা কে ঢালবে?খেতে দেওয়াও তো জানো না…!!
আলোঃ আপনার হাতের কাছেই তো সব রাখছি।তাই ঢেলে দেই নি।
রোদঃ তুমি কি আমাকে পানি ঢেলে দিবা নাকি আমি তোমার মাথায় সব পানি ঢালবো।কোনটা..
আলোঃ না আমি এখনই পানি ঢেলে দিচ্ছি…
রোদঃ আমার যতক্ষণ খাওয়া না হবে ততক্ষন এখানেই দাড়িয়ে থাকবে!আর একটা টু শব্দ করলো বাড়ির বাইরে দাড় করিয়ে রাখবো।
আলোঃ…..
(গিল সারাজীবনে খাওন একেবারেই গিল তুই!আল্লাহ এ কোন জল্লাদের বাসায় আমাকে পাঠাইলা।মন থেকে মুই দোয়া করতাছি তোর ভীষম লাগুক, কামড় লাগুক,গলায় খাবার আটকায় যাক।লাগ ভেলকি লাগ এই খাটাশের ভীষম লাগ…)
রোদঃ শকুনের মত আমার দিকে তাকিয়ে আছো কেন?আমি জানি আমি সুদর্শন! তাই বলে এভাবে তাকিয়ে থাকবে!ওহহ আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম তোমার আবার লজ্জা কম!বাই দ্যা ওয়ে আমার দিকে এভাবে তাকাবে না আমি আনইজি ফিল করি।
আলোঃ….
–
রোদ ধীর গতিতে খাচ্ছে! আর আলো না পারছে কিছু বলতে আর না পারছে কিছু করতে।রোদ যে ওকে ইচ্ছে করে দাড় করিয়ে রাখছে! এটা আলোরও বুঝতে বাকি নেয়!রোদ যা খায় সীমিত খায় কিন্তু আলোকে শাস্তি দিবে বলে ওর সীমিত খাওয়া ১ঃ৩০ মিঃ ধরে খাচ্ছে। রোদ মুখে খাবার দিয়ে ফোনের দিকেই হা করে তাকিয়ে আছে!আলো অধৈর্য হয়ে বললো…
আলোঃরোদ ভাইয়া আমাকে কালকে কলেজে যেতে হবে!এখন রাত ১ টা বাজে! যদি আমাকে এখন রুমে যেতে দিতেন…!!তাহলে কালকে সকালে তারাতারি উঠতে পারতাম।
রোদঃ এত পড়াশোনা করে কি হবে?যে কারো গলায় ঝুলে পড়লেই তো হয়!শুধু শুধু পড়াশোনা…
আলোঃ…
রোদঃ তবে যে চুলোয় ইচ্ছে হয় যাও!আই ডোন্ট কেয়ার।বাট মাথায় হিজাব,ওড়না আর কামিজের হাত হবে ফুল হাতা,এই তিনটার যদি একটাও এদিক ওদিক হয়! আর আমার চোখে যদি পড়ে তখনই তোমাকে মেরে পুঁতে দিবো।আর তখনই বুঝবে রোদ মেহবুব আসলে কি??আর কথাটা গুলো ভালো করে মাথায় ঢুকিয়ে নাও….!!
To be continue….
(মন ভাল করার মত কমেন্ট করো তো আজকে…দেখি কেমন পারো তোমরা।)