#এলোকেশী_কন্যা২__
#written_by_Nurzahan_akter_Allo
#part_22
🍁🍁
রোদঃ তিলোকন্যা তোমাকে বোকা বানাতে পারলে যে আমার কি ভালো লাগে তা বলে বোঝাতে পারবো না।তোমার নরম হাতে পরম যত্নে আমার চুল টেনে দিচ্ছো কি যে ভালো লাগছে আপাতত সেটা ভাষার প্রকাশ করতে পারছিনা আমি!এত যত্নে চুল টেনে দিচ্ছো যে আমার এখন ঘুমের দেশে পাড়ি জমাতে মন চাচ্ছে আমার
তিলো কন্যা….!!
রোদ ঘুমাচ্ছে আর আলো পরম যত্নে মুখে প্রশান্তির হাসি ঝুলিয়ে রোদের চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। আলো রোদকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে আর হাসছে।আলো খুব আস্তে করে ওর হিজাবটা খুলে নিলো কারন চুলটা ভেজা থাকায় খোঁপা করছে আর ভেজা চুলে হিজাব ভিজে যাচ্ছে! আলো হিজাব খুলে চুল ছেড়ে দিল! মেঘ গুটি গুটি পায়ে উঠে রোদের আনা খাবারের প্যাকেট গুলো হাতাড়াতে শুরু করলো!মেঘ একটা প্যাকেট খুলে দেখলো চিকেন স্যান্ডুইচ আছে তাতে!মেঘ খাবারের প্যাকেট নিয়ে আলোর সামনে দাঁড়ালো! আলো মেঘকে ইশারায় বলে খেয়ে নিতে কিন্তু মেঘ আগে স্যান্ডুইচ বের করে আলোর মুখের সামনে ধরে!আর ইশারায় বলে তারাতারি খেয়ে নিতে!আলো এক কামড় নিলে মেঘও সেইটা থেকেই এক কামড় দেই!তারপর দুজন মিলে স্যান্ডুইচ শেষ করে!তারপর দুইজনে খেয়ে পানি খেয়ে বসে রইলো…..মেঘ পাশে দাড়িয়ে আলোর চুল হাতে পেঁচাচ্ছে আর আলোর কানে কানে বলছে….!!
মেঘঃ বউমনি দাভাইকে কাতুকুতু দিবো।(ফিসফিস করে)
আলোঃ না না একমই না(ফিসফিস করে)
মেঘঃ এত ঘুমিয়ে কি হবে শুনি??
আলোঃ এখন তোমার দাভাইয়ের ঘুম ভাঙালে আমাদের দুজনকে মেরে গাল লাল করে দিবে।
মেঘঃ আমি কাতুকুতু দিয়ে পাশে লুকিয়ে যাবো আর তুমি ঘুমানোর মত অভিনয় করবা।
আলোঃ না মেঘবাবু!আমরা ধরে পড়ে যাবো।
মেঘ আলোর কথা না শুনে গুটি গুটি পায়ে রোদের পায়ের কাছে গেল! তারপর রোদের পায়ের তালুতে সুড়সুড়ি দিচ্ছে।রোদ একবার নড়ে চড়ে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়লো আর চোখ বন্ধ করেই বললো…
রোদঃ মেঘ আমার ঘুমের ডিস্টার্ব করবি না!আবার সেইম কাজ করলে তোরে কিক দিয়ে ট্রেন থেকে ফেলে দিবো…..(চোখ বন্ধ করে)
আলো রোদের কথা শুনে চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর ভান করলো আর মেঘ আলোর দেখে দাড়িয়ে দাড়িয়ে ঘুমানোর ভান করলো!তারপর আর কি মেঘ চোখ বন্ধ করে হেঁটে হেঁটে পাশের বেডে শুয়ে পড়লো আর গেম খেলাতে মনযোগ দিলো!আলোও একটা সময় তাকিয়ে থাকতে থাকতে নিন্দ্রার কোলে ঢলে পড়ে!মেঘ খেলতে খেলতে আলো দিকে তাকিয়ে দেখে আলো ঘুমিয়ে গেছে! তাই মেঘ গুটি গুটি পায়ে হেটে কেবিনের বাইরে চলে গেল…!!
রোদের নাকে সুড়সুড় লাগার কারনে রোদ বিরক্ত হয়ে ভ্রু কুচকে তাকালো!আর তাকিয়ে রোদের চোখ বড় বড় হয়ে গেল!আলো ঘুমের ঘোরেই রোদের দিকে হেলে পড়ে যাচ্ছিলো!রোদ তারাতরি আলোকে ধরে ফেলে!আলোর চুল ছাড়া তাই সব চুল আলোর মুখের সামনে এসে পড়ছে!রোদ অপলক চোখে তাকিয়ে বিশ্বজয় করা একটা হাসি দিলো!রোদ উঠে আলো বেডে শুইয়ে দেয় আর রোদ মনে মনে বলে উঠে….
রোদঃ আমি আমার স্বপ্নের এলোকেশীকে পেয়ে গেছি!আমার এলোকেশী এখন আমার কাছেই আছে!সেই এলোমেলো চুলের এই নিষ্পাপ সিগ্ধ চেহারা! এতদিন আমাকে ধরা না দিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলে কেন তিলোকন্যা? এবার আর কোথাও পালাতে পারবে না।এতদিন আমার স্বপ্নে এসে ধরা না দিয়েও আমাকে খুব জ্বালিয়েছো দুষ্টু মেয়ে! এবার আমি তোমাকে স্বঙ্গানে কেমন জ্বালায় দেখো….(মনে মনে)
রোদ আলোকে বেডে শুইয়ে দিলো!রোদ মেঘকে কেবিনে দেখতে পেলো না তাই কেবিনের বাইরে গেল মেঘকে খুঁজতে! আলো শান্তির একটা ঘুম দিচ্ছে! রোদ কেবিনের দরজাটা ভালো করে আটকে সামনে এগোতেই দেখে মেঘ আর একটা বাচ্চা মেয়ে ট্রেনের মেঝেতে বসেই গল্প করছে!মেঘ কি কি বলছে আর বাচ্চা মেয়েটি খিলখিল করে হাসছে!রোদ ওদের সামনে গিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে বাচ্চা মেয়েটির গাল টেনে দিলো…!!
রোদঃ এই বাবু তোমার নাম কি??(গাল টেনে)
মেয়েটিঃ আমাল নাম ইত্তে
রোদঃ এটা আবার কেমন নাম??
মেঘঃ দাভাই ওর নাম ইচ্ছে!ও খুব কিউট তাই না দাভাই..!!
রোদঃ মেঘ চল একটা কাজ করি!আমাদের তো বোন নাই ইচ্ছে কে আমাদের বোন বানিয়ে নেই..!!
মেঘঃনাআআআআআ!এত কষ্ট করে ওরে পটালাম আর তুমি ওরে বোন বানানোর কথা বলছো দাভাই।আমি ওকে তোমার ভাবি বানাবো…
রোদঃ গাধা ছোট ভাইয়ের বউ কখনও বড় ভাইয়ের ভাবি হয় নাকি রে ফাজিল??(মেঘের মাথায় চাট্টি মেরে)
মেঘঃহওয়ালেই হয়! তুমি একদম চুপ থাকো! তা না হলে বউমনির কাছে তোমাকে কেস খাওয়াবো বলে দিলাম।
রোদঃ এই ইচ্ছে তুমি আমার ভাবি হবে..!!
ইচ্ছেঃ (লজ্জা পাচ্ছে)
রোদঃ হা হা হা ওরে বাবা এতে দেখি লজ্জা পাচ্ছে।
মেঘঃ দাভাই তুমি কিছু একটা করো না।
রোদঃ আমি আবার কি করবো?(ভ্রু কুচকে)
মেঘঃ আমার আর ইচ্ছের বিয়ে দিয়ে দাও!
রোদঃ আমি নিজেই তো এখনো বিয়ে করতে পারলাম না! আর কোন সুখে আমি এখন তোর বিয়ের কথা ভাববো শুনি…!!
মেঘঃ বউমনি আছে তো তোমার জন্য…
রোদঃ ইচ্ছে কে কি পরীর কথা বলে দিবো (ফিসফিস করে)
মেঘঃ না দাভাই!এই ইচ্ছে তুমি এখন যাও।আমরা পরে আবার বিয়ে বিয়ে খেলবো কেমন।
ইচ্ছেঃআল এতটু খেনি(খেলি)না মেদ(মেঘ)
মেঘঃ না আর একটুও খেলবো না।তুমি যাও আর যাওয়ার আগে আমাকে চকলেট দিয়ে যাও।
ইচ্ছেঃ না তোমাকে তককেট দিবো না!এতা এথন আমাল..!!
মেঘ চকলেট নিয়ে নিবে ভেবে ইচ্ছে মুখের মধ্যে চকলেট ঢুকিয়ে দেই!মেঘ রেগে গিয়ে ইচ্ছের একটা ঝুঁটি খুলে দেয় আর ইচ্ছের গালে জোরে একটা চিমটি দিয়ে আলোর কেবিনের দিকে দৌড় দেয়।আর ইচ্ছে গগন ফাটানো চিৎকুর দিয়া উঠে!রোদ হাবলার মত হা করে তাকিয়ে আছে!ফাজিল রোদের জন্য ওরা বর বউ খেলাটাও শান্তি মত খেলতেও পারলো না।রোদ ইচ্ছেকে কোলে নিয়ে থামানো চেষ্টা করছে বাট ইচ্ছে কিছুতেই থামছেনা এই মেয়ে…!!তখন ইচ্ছের বাবা মা ইচ্ছেকে কোলে নিয়ে চলে যায়।রোদ কেবিনে গিয়ে দেখে আলো আর মেঘ শুয়ে গল্প করছে!রোদ ওর আম্মুর কেবিনে গিয়ে উনাকে ঘুম থেকে তুলে এই কেবিনে আনে।তারপর চারজন মিলে খেয়ে নেয়…..!!
রাত ১১ টার দিকে ওর সুবর্ণপুর পৌঁছায়!রোদের মামা নিজে এসেছে ওদের স্টেশন থেকে নিতে।তারপর সবাই রোদের মামার বাসায় যাওয়া জন্য গাড়িতে উঠে বসে! গ্রামের মধ্যে তাদের বাসা তবে রোদের নানু একটা সময় ছিলো জমিদার!রোদের মামারা জমিদার বাড়ির পাশেই আবার নতুন করে ফ্ল্যাট বানিয়েছে তারা সেখানেই থাকে!গ্রামের রাস্তাটায় লাইট না থাকায় ঘুটঘুটে অন্ধকার হয়ে আছে গা ছমছম করা একটা পরিবে মনে হচ্ছে! মেঘ তো রোদের বুকের সাথে মিশে চোখ বন্ধ করে আছে!ওরা বড় মামার বাসায় পৌঁছে গাড়ি থেকে নেমে বাসায় ঢুকে! তারপর সবাই আলোকে দেখে জিজ্ঞাসা করে এটা কে?রোদের আম্মু সরাসরি বলে দেয় এটা রোদের বউ!
রোদের আম্মুঃ এটা আমার রোদের বউ!ওদের বিয়ে ঠিক করা আছে শুধু অনুষ্ঠান করলেই হবে..!!
বড় মামীঃ বেশ মিষ্টি মেয়ে তো!আমাদের রোদের সাথে খুব মানিয়েছে।
রোদের আম্মুঃ বড় ভাবি আম্মা কই
বড় মামীঃ মা ঘুমিয়ে পড়ছে!আমরাই এত রাত পযন্ত মাকে জাগতে দেয় নি।
মেজ মামাঃ মামনী তোমার নাম কি??(আলোর কাছে এসে)
আলোঃআসসালামু আলাইকুম!জি আমার নাম
আতকিয়া ইবনাত আলো!
আলো সবাইকে সালাম দিয়েই আর সবার সাথে কথা বলে!তারপর ওরা রুমে গিয়ে যে যার মত ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া করে নেয়! আর কিছুসময় গল্প করে যে যার মত ঘুমানোর জন্য রুমে চলে যায়……!!
আলো আর মেঘ এক রুমে আর রোদ ওদের পাশের রুমে!আলো যে রুমে আছে সেটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে!রুমটা খুব সুন্দর করে সাজানো। মেঘ বকবক করছে আর আলো বসে বসে ওর চুলে চিরুনী করছে আর মেঘের সাথে কথা বলছে!মেঘ ফট করে বলে উঠলো….!!
মেঘঃ বউমনি তুমি দাভাইকে তারাতারি বিয়ে করে নাও
তে..!!
আলোঃ কেন??
মেঘঃ দাভাইয়ের বিয়ে না হলে আমার বিয়েও দাভাই হতে দিবে না
আলোঃ হা হা হা! তুমি এখন বিয়ে করবে নাকি মেঘবাবু।
মেঘঃ হুমম করবো তো!আমি তো এখন বড় হয়ে গেছি বউমনি (বেডের উপর দাড়িয়ে কোমরে হাত রেখে)
আলোঃভাল ছেলেরা কখনো মুখে বলে না বিয়ে করবে বিয়ে করবো!আগে পড়াশোনা করতে হবে তারপর নিজের পায়ে দাড়াতে হবে।তারপর বিয়ে…!!
মেঘঃ আমি তো নিজের পায়েই দাড়িয়ে আছে বউমনি..!!
আলোঃ হা হা হা!এখন বুঝবে না আর একটু বড় হও তখন বুঝবে। নিজের পায়ে দাঁড়ানো কাকে বলে…!!
মেঘ আর আলো গল্প করছে হাসাহাসি করছে!বাট সবার চোখের আড়ালে কারো তীক্ষ্ণ নজর আলোর দিকে পড়েছে!আলো এখানে বেড়াতে তো আসলো! বাট এখানে আসার পর সব ঠিক থাকবে তো!এখানে আসাটা আলোর জন্য আবার কাল হয়ে না দাড়ায়…..!!!
To be continue…..
(এর থেকে বড় করে দেওয়া সম্ভব না……)