এলোকেশী_কন্যা২__ #written_by_Nurzahan_akter_Allo #part_25 🍁🍁

0
911

#এলোকেশী_কন্যা২__
#written_by_Nurzahan_akter_Allo
#part_25
🍁🍁

________রোদ কোন রকম ওর হাসি থামিয়ে চেয়ারে উঠে বসে আর গিটার হাতে নেয়!মেঘ মাঠের মাঝখানে দাড়িয়ে আছে! এখন মেঘ ডান্স করে দেখাবে!মেঘের এমন করার কারন বিকাল থেকে আলোর মন ভালো নেই তাই আলোকে হাসানোর জন্য! রোদ মেঘের দিকে তাকালেই ওর খুব হাসি পাচ্ছে! রোদের আম্মু ভিডিও কলে ওদের আব্বুকে মেঘকে দেখিয়েছি।উনি ৪ মিঃ হা করে মেঘের দিকে তাকিয়ে গগন ফাটানো মত হাসতে শুরু করছেন!উপস্থিত অনেকে মাঠের চারপাশে গোল হয়ে দাড়িয়ে আছে!মেঘ রোদকে টেনে মাঠের মাঝখানে চেয়ারে বসতে বললো!রোদ মাঠের মাঝখানে বসে গান গাইতে শুরু করলো….!!

চালে জাব তু লাটাক মাটাক..
লওনডো কে দিল পাটাক পাটাক..
সাসে যায়ে আটাক আটাক..
আতা মাজি সাটাক সাটাক….
বাম তেরা গোতে খায়..
কামার পে তেরি বাটার ফ্রাই…
বডি তেরি মাখান জেসি..
খানে মে বাস তু বাটার খায়…
বড় লোকের বিটি লো লম্বা লম্বা চুল…
এমন মাথায় বেঁধে দেবো লাল গেন্দা ফুল…

মেঘ গানের তালে তালে ওর কোমর দুলাচ্ছে আর ধুমাইয়া নাচতে শুরু করছে!রোদ তো অনেক কষ্টে হাসি আটকে রেখে নিচে তাকিয়ে গান গাইছে!মেঘের কোমল দুলানো দেখে আলো হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে..!!

বড় লোকের বিটি লো লম্বা লম্বা চুল…
এমন মাথায় বেঁধে দেবো লাল গেন্দা ফুল…

এই লাইন রোদ যখন গাইছে মেঘ তখন গালে হাত দিয়ে লজ্জা পাওয়ার মত মুখটা করছে!মেঘের ডান্স দেখে উপস্থিত সবাই পেটে হাত দিয়ে হাসতে হাসতে লুটোপুটি খাচ্ছে!তারপর রোদ গান শেষ করে আর মেঘ নাচ শেষ করে! বেচারা মেঘ আলোর মন ভাল করতে যে ডান্স দেখালো!এখন তো মেঘের ঘেমে পুরো একাকার অবস্থা! মেঘ গিয়ে আলোর কোলে ঠাস করে বসে পড়লো আর আলোর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলো…!!

মেঘঃ বউমনি আবার ডান্স তোমার কেমন লাগলো??

আলোঃ অনেক অনেক অনেক ভালো!তুমি এত
সুন্দর ভাবে কোমর দুলাতে পারো আমি তো অবাক।

মেঘঃ বউমনি আমি বেলি ডান্সও দিতে পারি..!!

আলোঃ বাব্বাহ আমার মেঘবাবু এত কিছু পারে!আমাকে শিখাবে…!!(মেঘের গাল টেনে)

রোদঃ থাক তোমাকে এসব শিখতে হবে না!বেলি ডান্স আর কোমর দুলানো শিখতে গিয়ে আবার তোমার কোমর খুলে পড়ে গেলে আরেক সমস্যা..! এখানে আবার হসপিটাল একটু দুরে…!! (আলোর পাশের চেয়ারে বসে)

আলোঃ…….
সব সময় আমারে না খোঁচালে মনে হয় উনি শান্তিই পায় না!ভালো কথা কইলেও ঘুরাইয়া ফিরাইয়া প্যাচ লাগাইয়া আমারেই বাঁশ দেয়!আর আমারে বাঁশ দেওয়াই উনার একমাএ কাজ মনে হয়।কেন রে ভাও আমি তোর কোন সুখের কাজে বাম হা ঢুকাইয়া দিসিছিলাম যে আমারে যখন তখন এমন কইরা বাঁশ দিস!(মনে মনে)

রোদঃ দিয়েছো দিয়েছো ভাল করে মনে করো..!!

রোদের কথা শুনে আলো টাসকি খেয়ে মাথা নিচু করে বসে থাকলো!মেঘ হাত মুখ ধুয়ে ড্রেস বদলে এক প্লেট খাবার এনে আলোকে বললো মেঘকে খাইয়ে দিতে!ডান্স করে মেঘের পেট ফাঁকা হয়ে গেছে। আলো হাত ধুয়ে মেঘকে খাওয়াতে যাবে তখন রোদ ধমক দিয়ে দুজনকে রুমে পাঠালো!রোদ এই ফাঁকে ওর আম্মুকেও ওর আর আলোর খাবারটা দিয়ে দিতে বললো!রোদ আলোর রুমে গিয়ে দেখে আলো বেডে বসেই মেঘকে খাইয়ে দিচ্ছে!রোদ গিয়ে আলোর পাশেই ঠাস করে শুয়ে পড়লো।আলো একবার আড়চোখে রোদের দিকে তাকিয়ে মেঘকে আবার খাওয়াতে মনোযোগ দিলো!মায়া এসে রোদের আর আলোর খাবার দিয়ে গেল!রোদ ফোনের দিকে তাকিয়েই মেঘকে উদ্দেশ্য করে বললো…!!

রোদঃ বুঝলি মেঘ আমার অনেক আপসোস হচ্ছে! আর এত কষ্ট আর সহ্য হচ্ছে না আমার..!!

মেঘঃ কেন দাভাই?তোমার আবার এত কষ্ট আসলো কই থেকে..!!

রোদঃ আরে ভাই বহুত কষ্ট আছে রে আমার!কেউ দেখে না আমার কষ্ট…!! (মন খারাপ করে)

মেঘঃ দাভাই কি হয়েছে??

রোদঃ আমার খুব খুধা লাগছে বাট নিজের হাতে খেতে ইচ্ছে করছে না!এত পরিমান খুধা লাগছে যে মাথা ঘোরা শুরু করছে!তোর তো বউমনি আছে তাই তোকে খাইয়ে দিচ্ছে আমার তো আর বউমনি নাই…!!

মেঘঃ আচ্ছা দাভাই তাহলে আমার বউমনিকে আপাতত তুমি ধার নাও!পরে আবার দিয়ে দিও…!!

রোদঃ ওকে!বাট তুই তো ধার দিলি বাট তোর বউমনি কি আর আমাকে খাইয়ে দিতে রাজি হবে।আমার কি আর সেই সুখ কপালে আছে রে ভাই (মন খারাপ করে)

আলোঃ………..
আমি জানতাম এই বড় গাধাটা নিশ্চয়ই কোন ঘোট পাকিয়েই এখানে এসেছে। আর ছোট গাধাকে দেখো বড় গাধাটার ফাঁদে পা দিলো।মন চাচ্ছো দুটোকে তুলে আছাড় দেই! কিন্তু ওর মত দামড়া একখান পোলারে তো আমি তুলতেই তো পারবো না।এই বড় গাধাটা ওর কথার জালে ফাঁসিয়ে সব সময় আমাকে দিয়ে ওর কাজ করিয়ে নেই! (মনে মনে)

মেঘঃ বউমনি দাভাইকেও একটু খাইয়ে দাও তো! আমাদের দুই ভাইকে একসাথেই খাইয়ে দাও।

রোদঃ হুমম! হুমম!রাইট..!!

আলো রাগে দাঁত কিড়মিড় করে রোদের দিকে একবার তাকিয়ে মেঘের মুখে খাবার দিলো!রোদ মুচকি মুচকি হাসছে শুধু ওর ফোনের দিকে তাকিয়ে! আলো কাঁপা কাঁপা হাতে রোদের দিকে খাবার বাড়িয়ে দিলো!রোদ তখন মেঘকে বললো….!!

রোদঃ থাক রে মেঘ! কেউ মন থেকে আমাকে খাইয়ে দিতে না চাইলে আমি খাবো না!শুধু শুধু কারো মনের বিরুদ্ধে কাজ করানো উচিত না।

মেঘঃ কেন দাভাই??বউমনি তো তোমাকে খাইয়ে দিচ্ছে! তাহলে এত ফকফক করছো কেন?(গেম খেলতে খেলতে)

রোদঃ তুই আমার দিকে তাকিয়ে তো দেখ! তাহলেই বুঝবি!

মেঘ ফোনের দিক থেকে চোখ সরিয়ে রোদের দিকে তাকাতেই মেঘ খিলখিল করে হাসতে থাকে!আলো অন্য দিকে তাকিয়ে রোদের দিকে খাবার ধরে আছে!আলো ভ্রু কুচকে রোদের দিকে তাকিয়ে দেখে আলো রোদের মুখে না কপাল বরাবর খাবার ধরে আছে!আলো এটা দেখে মুচকি হেসে ওর জিহ্বাতে কামড় দেয়!তারপর রোদের মুখে খাবার দেয় রোদ মুখে খাবার নিয়ে খেতে থাকে! আলো খাবার নিয়ে একবার রোদকে দিচ্ছে তো একবার মেঘকে দিচ্ছে! দুজনেই খাচ্ছে আর ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে! আলো ওদের মুখে খাবার দেওয়া পর দুজনেই কি সুন্দর করে খাচ্ছে! খুব সুখের একটা মুহূর্ত এটা!
আলো ওদের দুজনের দিকে তাকিয়ে সেটা দেখছে!রোদও বাচ্চাদের মত করেই খাচ্ছে ….!!

মেঘের খাওয়া হয়ে গেছে!আলো এখন শুধু রোদকে খাওয়াতে আছে! হাস্যকর কথা হলো রোদের খাবার শেষ হওয়ার পরেও রোদ হা করে আছে! তাই আলো ওর খাবারটাও রোদকে খাওয়াতে থাকে!মেঘ কিছু বলতে গেলে আলো ইশারায় মেঘতে চুপ থাকতে বলে!আলো খুব যত্ন করে রোদকে খাওয়াতে থাকে আর মনে মনে ভাবে…!!

আলোঃ এত সুখ আমার কাছে এসে ধরা দিবে আমি ভাবতে পারিনি!আল্লাহ তোমার কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া!আর এই ছেলেটার কত রুপ আমাকে দেখতে হবে কে জানে?এক সময় বকা দেয় তো অন্য সময় এসে বুদ্ধি খাঁটিয়ে আমাকে দিয়ে ওর কাজগুলো করিয়ে নেয়। সত্যি অদ্ভুত.. (মনে মনে)

রোদ দুই প্লেট খবার খেয়েও হা করে!আলো খাবার দিচ্ছে না দেখে রোদ ভ্রু কুচকে তাকিয়ে দেখে সব খাবার ও খেয়ে ফেলছে!রোদ খেয়াল করে আলোর খাবারটাও রোদ খেয়ে বসে আছে!রোদ উঠে আরো এক প্লেটে খাবার নিয়ে এসে বলে যাতে আলো নিজেও খায় রোদকেও খাইয়ে দেয়!আলোর হাতে খেয়ে রোদ পেট ভরলেও মন ভরছে না!এজন্য রোদের এত ছলাকলা…..!

আলো নিজেও খেলো রোদকেও খাইয়ে দিলো!আজকে বাসায় অনেক মেহমান তাই রোদের রুম অনেক আগেই বুক হয়ে গেছে! রোদের আম্মু আলোর রুমে এসে বলে রোদ যাতে আলোর রুমের সোফাতে ঘুমিয়ে পড়ে আর মেঘ আর আলো যাতে বেডে ঘুমায়!রোদ একটু রাগ দেখালো বাট মনে মনে খুশিই হলো!যেহেতু এটা গ্রাম তাই ১০ মানে এখানে অনেক রাত তাই গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শেষ করে যে যার মত ঘুমানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে!দীদান এসে রোদকে বলে গেল আলোর দিকে খেয়াল রাখতে! আর কোন সমস্যা হলে রোদ যেন পন্ডিতি না করে দীদানকে ডাক দেয়।

বাইরে যে যেখানে পেরেছে শুয়ে পড়ছে!রোদের আম্মু আর দীদান কিছু নিয়ে আলোচনা করতে বসলো!রোদ আলোর রুমে থাকবে শুনে আলো খুব অস্বস্তি লাগছে! কারন সে ঘুমালে হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে ঘুমায়!একবার ঘুমালে তার কোন হুশই থাকে না!আলো আর মেঘ ব্রাশ করে এসে শুয়ে পড়লো!রোদও ব্রাশ করে সোফাতে শুয়ে পড়লো!মেঘ রোদের কাছে গল্প শুনবে তাই মেঘ উঠে রোদকে টানতে টানতে বেডে এনে বললো শুয়ে পড়তে!আলো একপাশে মাঝখানে মেঘ আর অন্য পাশে রোদ!রোদ কোন কথা না বাড়িয়ে শুয়ে পড়লো আর ঠোঁটের কোনে দুষ্টু হাসির রেখা টেনে বানিয়ে বানিয়ে হরর গল্প বলতে শুরু করলো!

মেঘ আলোকে বললো মেঘকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে!আলোকে মেঘকে জড়িয়ে ধরলো আর মেঘ রোদের দিকে একটু একটু করে এগোতে এগোতে রোদের বুকে সাথে লেপ্টে গেল!মেঘ রোদের দিকে যাচ্ছে আলোর হাত ধরেও টানছে!রোদ এমন ভাবে গল্পটা বলছে যাতে দুজনেই ভয় পায় আর রোদকে জড়িয়ে ধরে….!!আলোর ভীতু মুখ দেখে রোদের খুব পাচ্ছে! মেঘ রোদের বুকের সাথে লেপ্টে গেছে আর রোদের বুকেই মেঘ মুখ লুকিয়ে রাখছে!বেচারা আলোও ভয় পেয়ে মেঘের সাথেই লেপ্টে আছে!রোদ হাত বাড়িয়ে দুজনকেই নিজের বাহুডোরে রাখে…..!!

রোদের চালাকি অবশেষে সফল হয়…!!রোদ গল্প বলতে বলতে খেয়াল করে দু’জনেই ভয়ে চোখ বন্ধ করে থাকতে থাকতে দুজনেই ঘুমিয়ে পড়ছে!রোদ আস্তে করে উঠে আলো ভাল করে শুইয়ে দেয় তারপর মেঘকেও মাঝখানে ভাল করে শুইয়ে দিয়ে নিজেও কাত হয়ে শুয়ে পড়ে!আর এক হাতের উপর ভর দিয়ে রোদ ওর তিলোকন্যা কে দেখতে থাকে…!!

To be continue….

(গল্পতে ভয়ংকর কিছু আসবে না তোমরা ভয় পেও না! কারন আমি নিজেই তো খুব ভীতু…!! আমার প্রতিটা গল্পে আমি যেমন সচেতনতা মূলক কিছু তুলে ধরি!তেমনি এবারেও তাই করবো…!!শুধু তোমরা একটু ধৈর্য ধরে পড়ো…!!)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here