এলোকেশী_কন্যা২__ #written_by_Nurzahan_akter_Allo #part_41 🍁🍁

0
907

#এলোকেশী_কন্যা২__
#written_by_Nurzahan_akter_Allo
#part_41
🍁🍁

ওদের চিৎকার শুনে আলো এক দৌড়ে রোদের রুমে এসে চোখ বড় বড় করে দুই ভাইয়ের কান্ড দেখছে!ছোট টা আগে থেকেই বিচ্ছু সবাই জানে বাট বড়টাও কি এখন দুষ্টুমির খাতায় নাম লিখালো…!!এটা নিয়ে আলো আপাতত একটু বেশিই কনফিউজড..!!

মেঘঃওই ঢিশকুম (রোদের পিঠে কিল বসিয়ে)

রোদঃ আহহ্!আর মারিস না ভাই আমি মরে গেছি (চোখ বন্ধ করে)

আলো আর কিছু না বলে রুম থেকে চলে গেল!
মারামারি এক পর্যায়ে রোদ জিহ্বা বের করে চোখ বন্ধ করে নড়াচড়া না করে শুয়ে পড়লো।মেঘ মারামারি থামিয়ে দিয়ে রোদকে ডাকতে শুরু করলো!রোদ কিছু বলছে না শুধু ঘাপটি মেরে শুয়ে আছে। মেঘ রোদের চোখের পাতা তুলে দেখলো! রোদ দুষ্টুমি করে চোখের মনি একবার একদিক ওদিক করছে!মেঘ রোদের চোখের পাতা থেকে হাত সরাতেই রোদ চোখ আবার বন্ধ হয়ে গেল!মেঘ কান্না ভেজা কন্ঠে রোদকে আরো কয়েকবার ডাকলো কিনতু রোদ সাড়াশব্দ না করে ঘাপটি মেরে থাকলো।মেঘ দৌড়ে আলোকে কাছে চলে গেল।

আলো এসে দেখে রোদ চার হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে আছে চোখ বন্ধ করে!মেঘ এবার কান্না করেই দিলো..!!

মেঘঃ দাভাই! দাভাই! তুমি মারা যেও না দাভাই।আমি তোমাকে আর মারবো না!(রোদের গালে হামি দিয়ে)

আলোঃ মেঘ কান্না করে না!তোমার দাভাই মারা গেছে ভালো হয়েছে।তোমাকে আমি আর একটা নতুন দাভাই এনে দিবো আমি (মেঘের চোখ মুছে)

মেঘঃ আমি আমার দাভাইকেই আমি অনেক ভালুপাশি বউমনি। দাভাইকে তুমি ঠিক করে দাও… (কান্না করে)

আলোঃ না! তোমার দাভাই মারা যাক আমি আরেকটা বিয়ে করতে পারবো ভালো হবে তো(রোদে পায়ের তালুতে কাতুকুতু দিয়ে)

রোদ এতক্ষণ ঘাপটি মেরে থাকলেও রোদের পায়ের তালুতে কাতুকুতু দেওয়ার সাথে সাথে রোদ লাফিয়ে উঠে বসে পড়ে!মেঘ ছলছল চোখে রোদের দিকে তাকিয়ে! মেঘ রোদের বুকে ঝাপিয়ে পড়ে আর হাউমাউ করে কেঁদে দেয়!আলো দাড়িয়ে দাড়িয়ে দুই ভাইয়ের ভালবাসার খুনশুটি দেখতে থাকে!রোদ মেঘের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে মেঘকে কান্না থামাতে বলে…!!

রোদঃ মেঘ সোনা কাঁদে না!আমি তো দুষ্টুমি করছিলাম।আমার কিছু হয়নি তো..!! (আদুরে গলায়)

মেঘঃ দ দ দাভাই (কেঁদে কেঁদে)

রোদঃ সরি বাবু!আমি আর এমন করবো না! এই যে কান ধরছি! আর এমন হবে না আর কান্না করে না…!!
(মেঘের চোখ মুছে আর এক হাতে নিজের কান ধরে)

মেঘঃ তুমি পঁচা দাভাই(রোদের র্টি শার্টে নাক মুছে)

রোদঃইয়াক!মেঘ এমন করে না।

মেঘঃ করবো তো (আবার নাক মুছে)

রোদঃ এ্যা! এ্যা ইয়াক! ইয়াক!

রোদের এমন করা দেখে মেঘ খিলখিল করে হাসতে থাকে!তখন রোদ মেঘের সাথে দুষ্টুমি করছিলো বাট মেঘ সিরিয়াস হয়ে গিয়েছিলো! আর ভয়ে তখন কান্না করে দিয়েছিলো!প্রতিটা বড় বোনের ভেতর যেমন একটা মা মা ব্যাপার থাকে! তেমনি প্রতিটা বড় ভাইয়ের মাঝেও বাবার একটা ছায়া থাকে!আর রোদ মেঘ খুব ভালবাসে! মুখে যত যাই বলুক রোদের কলিজা মেঘ! আর মেঘ যেমন বাচ্চা ওকে ভালো না বেসে থাকা যায় না।মেঘের চোখে পানি দেখে রোদও কষ্ট খুব পায়..!!

রোদ মেঘের কপালে আদর দিয়ে দিলো!মেঘও রোদের গলা জড়িয়ে ধরে আর রোদের বাম গালে আদর দিয়ে দেয়!তারপর দুই ভাই ওর আম্মুর সাথে ফোন কথা বলতে শুরু করে দিলো! কথা বলা শেষ করে উঠতেই মেঘ রোদের ডান গালে একটা কামড় বসিয়ে দৌড় দেয়!আর রোদ ওর গালে হাত বুলাতে বুলাতে মেঘকে দৌড়ানি দেয়!আলো ডায়নিং টেবিলে খাবার রেডি করছিলো।মেঘ দৌড়ে এসে আলোর পেছনে লুকিয়ে পড়ে!রোদ এসে মেঘকে ধরার চেষ্টা করে!এক পর্যাযে মেঘ আলোকে ধাক্কা দিয়ে রোদের দিকে ঠেলে আর রোদ আলোকে ধরে নেয়!এর মধ্যে রোদ কুটুর করে আলোকে একটা হামি দিয়ে দেয়! আর আলো চোখ বড় বড় করে রোদের দিকে তাকিয়ে থাকে!তারপর আলো আর কথা না বাড়িয়ে দুই ভাইয়ের দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে দুইজনকে একটা ধমক দিয়ে খেতে বসতে বলে! আর দুইজনেই ভদ্র হয়ে খেতে বসে পড়ে!

আলো ওদের খাবার বেড়ে ও নিজের বসে পড়লো!আলো দুই ভাইয়ের প্লেটে মুরগির দুইটা রান তুলে দিলো!রোদের আর মেঘের ডিম ভুনা,মুরগির রান,গরুর মাংস বেশি পছন্দ! মেঘের কথা অনুযায়ী আলো তখন আলু ভাজি,ডিম ভুনা আর মুরগির মাংস রান্না করেছিলো!এখন খেতে বসে রোদ যখনই ওর মুরগির রানটা মুখে তুলতে যাবে! তখনই মেঘ বলে উঠলো…!!

মেঘঃবউমনি তুমি আজকে যে মুরগিটাকে রান্না করছো! এই মুরগিটাকে আমি আগে থেকে চিনি।

আলোঃ কিভাবে চিনলে(অবাক হয়ে)

রোদঃ…

মেঘঃ এই মুরগিটাকে তো আমি সকালে আমাদের বাগানে দেখছি।(খেতে খেতে)

আলোঃ বাগানে মুরগি আসলো কই থেকে??(অবাক হয়ে)

মেঘঃ হুমম! আমি এই মুরগিটাকে আজকে বাগানে কেঁচো খেতে দেখছি(মুরগির রানে কামড় দিয়ে)

আলোঃ…..

রোদঃ….(খাওয়া থামিয়ে দিয়েছে)

মেঘঃ একদিন আব্বু আম্মুকে একটা কথা বলছিলো জানো বউমনি!সেই কথাটা আমার এখনো মনে আছে..!!

আলোঃকি কথা??(জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে)

মেঘঃযেমন ধরো!! দাভাই মুরগি খাই, আর মুরগি কেঁচো খায়, তার মানে হচ্ছে দাভাইও কেঁচো খায়।

এই কথা শুনে রোদ ইয়াক ইয়াক করতে উঠে চলে গেল বেসিনের সামনে!আর মেঘ রোদের ভাগের মুরগির রানটার উপর হামলা করলো!বেচারা রোদের আর খাওয়ার মত রুচি নাই তাই উঠে চলে গেল।আলো মেঘের দিকে তাকিয়ে দেখে! মেঘ চেয়ারের উপর দুই পা তুলে বাবু হয়ে বসে! দুই হাতে দুটো রান তুলে নিয়ে মনের সুখে মুরগির রান খাচ্ছে! মেঘের পুরো মুখে ঝোল লেগে আছে। মেঘ ভাত তো মুখে দেয় নি রান খেতে গিয়েই ওর গেন্জীতে , আর মুখে ঝোলে মাখামাখি করে ফেলছে!আলো মেঘের প্লেট টেনে আলো মেঘকে খাওয়াতে থাকে!মেঘ আলোর কুটুর কুটুর করে তাকিয়ে বললো…!!

মেঘঃ বউমনি তুমি কি আমার উপর রাগ করেছো??

আলোঃ রাগ করবো কেন মেঘবাবু (খাইয়ে দিতে দিতে)

মেঘঃদাভাই মুরগির রানটা নিয়েছি তাই
(মাথা নিচু করে)

আলোঃ একদম না!কারন বড় ভাইয়ের জিনিসের উপর ছোট ভাইদের অধিকার বেশি আছে।তুমি একদম ঠিক করছো..!! দরকার পড়লে আরো নিবে! আমি তোমাকে নিতে সাহায্য করবো (মুচকি হেসে)

মেঘঃসত্যি.. (খুশি হয়ে)

আলোঃ একদম…!! (হেসে)

মেঘ খুশিতে ওর ঝোল ওয়ালা মুখেই আলোর গালে হামি দিয়ে দিলো!আর আলো অভিনয় করে এ্য
এ্য করে কাঁদতে শুরু করলো!আর মেঘ আলোর কান্না দেখে হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে! আলো মেঘকে খাইয়ে মেঘের মুখ মুছে দিয়ে নিজেও খেয়ে নিলো।ওইদিকে রোদ পড়ার টেবিলে পড়তে বসেছে!রোদ গুন গুন করে পড়ছে ঠিক সেই সময় মেঘ রোদের পেছনে দাড়িয়ে রোদের পিঠে বন্দুক ঠেকিয়ে বললো…!!

মেঘঃ এরেস্ট ভীম..!!

আলোঃ মেঘবাবু কথাটা হবে এরেস্ট হিম (কোন রকম হাসি থামিয়ে)

মেঘঃ ওহহ হ্যা একটু ভুলে গিয়েছিলাম(ভাব নিয়ে)

রোদঃ আমি এখন পড়বো! আপনারা এখন আসতে পারেন! কারন আমি পড়তে বসলে! কেউ আমাকে বিরক্ত করলে আমার খুব রাগ হয়।

মেঘঃ এরেস্ট করছি আপনাকে রোদ মেহবুব। আপনি উপরের দিকে দুই হাত তুলুন!না হলে দুম করে আপনাকে গুলি করে দিবো (রাগী ভাবে)

রোদঃ স্যার! যে আমার মুরগির রানের উপর হামলা করছে তাকে আগে ধরুন।

মেঘঃ সে তো ছোট বাচ্চা ! আপনি মুরগির রানের আশা ছেড়ে দিয়ে এখন খাবার খেয়ে নিন।কারন আপনার ভাগের মুরগির রান ইন দা ভো গো মা..(খিলখিল করে হেসে)

রোদঃ আমি খাবো না..!

মেঘঃ ওকে..!!

মেঘ হনহন করতে করতে আলোর রুমে চলে গেল!তারপর আলোর একটা ওড়না নিয়ে পেছন থেকে রোদ হাত বাঁধতে শুরু করলো!মেঘ রোদের হাত বাঁধা শেষ করে মেঘ আলোকে বললো রোদকে খাইয়ে দিলো!আলো রোদের মুখের সামনে খাবার ধরতেই রোদ মুখ ঘুরিয়ে নিলো!এবার আলোরও রাগ উঠে গেলো! তাই আলো রোদের গাল চেপে মুখের মধ্যে খাবার ঢুকিয়ে দিলো!রোদ চোখ বড় বড় করে আলোর দিকে তাকিয়ে আছে!রোদ মুখে খাবার নিয়েই কিছু একটা বলার চেষ্টা করছে! বাট কি বলছে বোঝা যাচ্ছে না।তাই আলো রোদের নাকও চেপে ধরে যার ফলাফল রোদের শ্বাস রোধ হয়! আর রোদ মুখের খাবারটা শেষ করে অতি শ্রীঘই গিলে ফেলে।এবার রোদ হাঁপাতে হাঁপাতে বলে উঠে…!!

রোদঃ আম্মু গো দেখে যাও! এই দুই বিচ্ছু আমার জীবনডা ন্যাতা ন্যাতা করে দিলো!আমার মত নিরীহ বাচ্চা উপর এই দুই ফাজিল কেমন নিষ্ঠুর ভাবে অত্যাচার করছে..(অসহায় মুখ করে)

মেঘঃ আম্মু আসার আগে আমি আর বউমনি মিলে তোমার জীবনের উপর ট্রাক্টার চালাবো দাভাই!তখন তোমার জীবন দেখবা গীবন হয়ে যাবে! হু হা হা (বাংলা সিনেমার ভিলেনের মত করে হেসে)

রোদঃ তোদের উপর ঠাডা পড়বে দেখিস (দাঁতে দাঁত চেপে)

আলোঃ হুমম! আপনিও তো এই বাসাতেই থাকেন।তো ঠাডা পড়লে এই বাসার সাথে আমি আর মেঘ আমরা দুইজন তো উড়ে যাবো!বাট ঠাডা টা এখনই পড়লে ভালোই হবে আপনিও বাসাতেই আছেন সো তিনজন একসাথে উঠবো।দুজন উড়ে মজা পাওয়া যাবে না…!! (দুষ্টু হেসে)

মেঘঃ ওহহ্!জখাম কথা বলছো তো বউমিন…পুরাই জিও..! (দাঁত বের করে)

রোদঃআরে ব্যস্!এখন দেখি আমার বিড়াল আমাকেই বলে ম্যাউ…(চোখ বড় বড় করে আলোর দিকে তাকিয়ে)

To be continue…!!
(সাইলেন্ট রিডার বেশি হয়ে গেছে! চুপে চাপে আনফ্রেড করার মিশন শুরু করছি তাই গল্প দিতে দেরী হচ্ছে..!!)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here