এলোকেশী_কন্যা২__ #written_by_Nurzahan_akter_Allo #part_40

0
712

#এলোকেশী_কন্যা২__
#written_by_Nurzahan_akter_Allo
#part_40
🍁🍁

ওদের কথা বলতে বলতেই রোদ নিচে নেমে এলো।রোদ ইউনিভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য একেবারে রেডি হয়ে নিচে নামে!আলো উঠে রোদকে খেতে দিলো!মেঘ উঠে এসে রোদের পাশে ধপাস করে বসলো পড়লো!রোদের ওর প্লেট থেকে খাবার নিয়ে মেঘের মুখের দিলো!আর মেঘ কাঠবিড়ালি মত কুট কুট করে খাচ্ছে আর ফোনে গেম খেলছে!তারপর দুইভাই ওদের খাওয়া শেষ করে উঠে পড়লো…!!

ওইদিকে_____!!

ঐশী কলেজে রোদ আর আলোর নামে খারাপ খারাপ কথা বলে বেড়াচ্ছে! আবির রোদকে এই কথাটা জানানোর জন্য এখনই কলেজের জারুল গাছটার পাশে দেখা করতে বলেছে। রোদও আজকের এর শেষ দেখেই ছাড়বে বলে রেগে কলেজে যাওয়ার জন্য বের হয়েছে। এই ঐশীর একটা ফাইনাল বন্দোবস্ত না করলে হচ্ছে না। কারো যদি অহংকার বেশি হয়ে যায় তখন তার পাখাটা ঝেটে দেওয়াই শ্রেয় বলে মনে হয় রোদের কাছে।
রোদ ঐশীকে ভালো হওয়ার একটা সুযোগ দিয়েছিলো!বাট ঐশী শুধরানোর মত মেয়ে না! রোদ তাড়াতাড়ি করে ব্রেকফাস্ট সেরেই বাইক নিয়ে বেরিয়ে গেছে। আলো আর মেঘ ওরা ওদের মতো আবার দুষ্টুমি! আর সাথে আর কথার ফুলঝুরি নিয়ে বসে পড়লো।

সূর্বণপুরে আদিলের রিসিপশনে সবাই অনেক মজা করছে! রোদের আম্মু, দিদান ,সবাই যে যার মতো ব্যস্ত আছে! রোদে রা চলে যাওয়াতে বাসাটা কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে! রোদের আম্মু সকাল থেকে এ পর্যন্ত আলোকে কে সাত বার ফোন করে কথাও বলছে! সকাল ১০ঃ৩০ টার দিকে আলো মেঘকে গোসল করিয়ে দিয়ে নিজেও গোসল সেরে নিল!জার্নি করে এসেছে এজন্য আজকে তারাতারি করে গোসলটা সেরে ফেললো।তারপর দুপুরের রান্না করার জন্য রান্নাঘরের দিকে এগোলো! মেঘ রান্নাঘরের ডেক্স এর ওপর দুই হাটু মুড়ে মটরশুটির খোসা ছাড়াচ্ছে ঠিকই কিন্তু বাটিতে না রেখে পেটে চালান করছে বেশি !মেঘের এমন কান্ড দেখে আলো মেঘের গাল টেনে দেয়!মেঘ আলোর দিকে তাকিয়ে ফট করে বলে উঠলো….!!

মেঘ: বউ মনি আজকে কি রান্না করবে?(মটরশুঁটি খেতে খেতে)

আলো: মেঘবাবু তুমি কি খাবে বলো?তুমি যা বলবে তাই রান্না করবো আমি আজকে (মুচকি হেসে)

মেঘ: আমি ডিম ভুনা আর আলুর ভাজি দিয়ে ভাত খাবো ( অনেক ভেবে চিন্তে)

আলো: দুটোই তো তাহলে শুকনো তরকারি হয়ে গেল মেঘ বাবু..!!

মেঘ:শুকনা তো কি হলো??

আলোঃ তোমার দাভাই তো শুকনা তরকারি দিয়ে ভাত খেতে পারে না।

মেঘঃ ওহহ!তাহলে দাভাই যখন ভাত খাবে তখন দাভাই ভাতের মধ্যে পানি ঢেলে নিতে বলবে তাহলেই ভাত ভিজে গেল।তখন না হয় দাভাই খাবে…(চিন্তিত হয়ে)

আলোঃ হা হা হা ফাজিল একটা! সব সময় মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি ঘুরে তাই না (গাল টেনে)

আলো মেঘের গাল টেনে দেয় আর মেঘ খিলখিল করে হাসতে থাকে!মেঘের গুলুমলু গাল টেনে দিতে আলোর খুব ভালো লাগে!মেঘ যখন হাসে ঠোঁটে দুই কোণে মারাত্মক ভাবে টোল পড়ে!আর তখন মেঘের হাসি দেখলে সবারই মনটা এমনিতেই ভালো হয়ে যায়!আলোর দেখা মেঘই হচ্ছে সবচেয়ে সুন্দর একটা বাচ্চা যার মধ্যে সৌন্দর্যে সব গুন ফুটে ওঠে মেঘের মধ্যে। মেঘ এখন সাদা সেন্ডো গেন্জী আর মেরুন কালার থ্রী কোয়াটার পড়ে আছে!এতেই মেঘকে দারুন লাগছে! আর মেঘ হচ্ছে লাল ফর্সা এজন্য বেশি হাসলেও মেঘের গাল লাল হয়ে যায়!এখনই যে কিলার লুক বড় হলে না জানি কত মেয়েকে ঘায়েল করে তার ঠিক নেই!
(রিডারস্ আমারও একটা মেঘ আছে!একদম গল্পের মেঘের মত অনেক দুষ্টু! )
আলো মেঘের কপালে একটা আদর দিয়ে রান্না করতে শুরু করলো..!!

আলো ওর চুল গুলোকে পেছনে ছোট একটা কাঁকড়া দিয়ে আটকে নিলো!তারপর রান্নাতে মন দিলো…!!শিউলি আলোকে কেটে কুটে দিচ্ছে আর আলো রান্না করছে!আর মেঘ পাশে থেকে পকপক করতে আছে!মেঘের প্রধান কাজ শিউলিকে রাগিয়ে দেওয়া…!! মেঘের কান্ড দেখে আলোও শুধু হাসে।

রোদ, আবির,আকাশ সরাসরি আলোর কলেজে গিয়ে প্রফেসরের কেবিনের দিকে গেল! তারপর ওরা নক করে পারমিশন নিয়ে প্রফেরের কেবিনে ঢুকলো…!!

রোদঃ আসসালামু আলাইকুম স্যার!আসতে পারি??

প্রফেসরঃ আরে রোদ যে!কি মনে করে?? তারপর বলো কেমন আছো??বসো বসো

রোদঃ আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি!আপনি কেমন আছেন??(মুচকি হেসে)

প্রফেসরঃ জ্বি আমি অনেক ভালো আছি!আবির আর আকাশ তোমাদের কি খবর??

আবির আর আকাশঃ ভালো স্যার..!!

রোদঃ স্যার আমি জরুরী কিছু কথা বলার জন্যই এখানে এসেছি।(মুচকি হেসে)

প্রফেসরঃ পারসোনালি তোমাকে আমি যতটুকু চিনি তুমি সিরিয়াস ম্যাটার ছাড়া এখানে আসতে না!বলো কি ব্যাপারে কথা বলবে..??(কপালে চিন্তার ভাজ ফেলে)

রোদঃ আপনি তো ঐশীকে চেনেন মনে হয়! যার বাবা রাজনীতি করে! আর উনি এখন বড় মাপের একজন নেতা।

প্রফেসরঃহুম! হুম! চিনি তুমি বলো..??

রোদঃ ঐশী আমার নামে কলেজে বাজে কিছু কথা ছড়াচ্ছে! যেটা আমি মেনে নিতে পারছি না।আমি চাইলে ওরে ফিনিস করে দিতে পারতাম! বাট আপনার কলেজে কি কি হয় সেটা আপনাকে জানানো উচিত বলেই আমি মনে করি!তাই আমি এখানে এসেছি! আর ঐশীর বলা এসব লেইম কথা গুলো আমি কানে তুলতাম না!আর যে মেয়েকে নিয়ে বাজে কথা গুলো বলছে যদি না সে আমার ওয়াইফ হতো! আমি আপনাকে জানালাম তারও কারন আছে!এই পেনড্রাইভে কিছু ভিডিও আছে! আমি আপনার ছাএ হয়েও আপনাকে এসব দিতে হচ্ছে ভেবে আমি নিজেও লজ্জিত। আমি এখান থেকে যাওয়ার পর আপনি এগুলো চেক করে নিবেন….!! তারপর আপনি যা ডিশিসন নিবেন আমি সেটাই মেনে নিবো…!!কারন আমি জানি আপনি অন্যায়কে প্রশ্চয় দেন না। (ঠান্ডা সুরে)

প্রফেসরঃওকে..!!( চিন্তিত হয়ে)

রোদঃ আপনিও চাইলে খোঁজ নিয়েও পরখ করে নিতে পারেন।(মুচকি হেসে)

আকাশঃ ঐশীর আরো কিছু গুন আছে স্যার!আপনি খোঁজ নিলেই জানতে পারবেন।

রোদঃ আজ তাহলে আসি স্যার!আসসালামু আলাইকুম..!!

প্রফেসরঃ ওয়ালাইকুম সালাম!!

তারপর রোদ মুখে শয়তানি হাসির রেখা টেনে জারুল গাছের নিচে এসে আবার বসে পড়লো!আশা, আবৃতি, রোদ, আকাশ আর আবির ছাড়া আগের মত কেউ আড্ডা দেয় না!এখন যে যার মত পড়া নিয়ে বিজি থাকে!আকাশ রোদের মুখের দিকে তাকিয়ে উঠলো…!!

আকাশঃ আমি যতদুর জানি রোদ তুই এত সহজে ঐশীকে ছেড়ে দেওয়া মত ছেলে না।কি হলো কিছুই তো বুঝলাম না।(ভ্রু কুচকে)

রোদঃ আমি আর কি করবো? এখন যা করার স্যারই করবো..!! (শয়তানি হাসি দিয়ে)

আবিরঃ আসল কাহিনী কি বলবি তো??

রোদঃআজ সকালে ঐশীর বাবার নেতা পদ হারালো!এবার ঐশী কলেজ ছাড়া হবে। এই আর কি..!এছাড়া আমি আর কিছু করিনি।(শয়তানি হাসি দিয়ে)

আকাশঃ মানে?(অবাক হয়ে)

রোদঃ মানে এই যে,ঐশীর বাবাকে আজকে সকালে ১০ঃ৩০ টার মধ্যে রাজনীতির বড় নেতার পদ ত্যাগ করতে হয়েছে!যদিও এই মহৎ কাজের পেছনে আমারই হাত আছে!আর ঐশীর যেমন ক্যারেক্টারের মেয়ে সেটাই আমি স্যারের কাছেই তুলে ধরলাম।ঐশীর কিছু লেইম কাজের ভিডিও সেটা প্রমান সহ স্যারের হাতেই হস্তক্ষেপ করে আসলাম।এই যেমন ধর,,,বাবা নেতা বলে অহংকার করে যার তার গায়ে হাত তোলা,বাজে ভাবে কাউকে রেগিং করা,ছেলেদের সাথে বেড শেয়ার সবই ভিডিওতে আছে..!! দেখা যাক এবার স্যার কি করে?? (শয়তানি হেসে)

আকাশঃ আবে শালা! এত বুদ্ধি রাখিস কই তুই (রোদের কাঁধ চাপড়ে)

রোদঃ অন্যকে বাঁশ খাওয়াতে গেলে আগে ঠান্ডা মাথায় ভাবতে হয়! কিভাবে তাকে বাঁশ খাওয়ালে সে অকেজো হয়ে পড়বে।আর আমি শুধু এটাই করছি…!!আমি সেদিন ওর বাসায় গিয়েও ওরে ওয়ানিং দিয়ে এসেছি তাও ও শুধরাতে পারলো না।এখন যা হচ্ছে এজন্য আমি না বরং ওরাই দায়ী..!!

আবিরঃ হুমম!তা ঠিক…!!

আকাশঃএগুলো বাদ দে! যা হবে দেখা যাবে..!!এক সপ্তাহ পর আমাদের তো পরীক্ষা! যদিও রোদ তোর তো কোন সমস্যা নেই! সমস্যা তো আমাদের রে ভাই..!(মুখ ফুলিয়ে)

রোদঃ কেন তোদের কি সমস্যা?? (ভ্রু কুচকে)

আবিরঃ আরে শোন না ভাই! এক কাজ সবার করার দরকার নেই!রোদ তুই ভাল করে পড়াশোনা কর পরীক্ষা সময় আমাদের দিকে একটু তাকাস তাহলেই হলো। শুধু আমরা পড়াশোনা করে ব্রেণকে এত চাপ দিতে যাবো কেন হুদাই বল তো!কি বলিস আকাশ? (রোদের কাঁধ চাপড়ে)

আকাশঃ হুমম ওই আর কি..!!(দাঁত বের করে)

রোদঃ তোরা এমন ভাব করছিস মনে হচ্ছে তোরা লাস্ট বেঞ্চের স্টুডেন্ট!

আকাশঃ তোর থেকে পয়েন্ট আমাদের কমই থাকে ইয়ার।আমাদের মাথায় একটু হাত রাখ ভাই..!!

আকাশঃ এই জ্বালা আর প্রাণে সহে না।মনু রে এ এ এ (গলা ফাটিয়ে)

রোদঃ থাক আর ড্রামা করতে হবে। আচ্ছা শোন আমি এখন বাসায় গেলাম!আলো আর মেঘ বাসায় একা আছে!আম্মুরা ফেরেনি..!!

আবিরঃ শুভ কাজটা সেরে নিলেই তো পারিস বন্ধু।আমরা জানি তো তুমি অনেক বড় হয়ে গেছো!সব পরীক্ষা দিতে পারবে এখন তুমি…!! (রোদের দিকে তাকিয়ে!দাঁত বের করে হেসে)

আকাশঃ আবির তোর সাথে আমিও একমত…!!(হেসে)

রোদঃ শুভ কাজ তো অনেক আগেই সেরে ফেলছি বন্ধু !এখন তোমরা চাচ্চু হওয়ার জন্য প্রস্তুত হও…!!(দুষ্টু হেসে)

রোদের কথা শুনে আবির আর আকাশ চোখ বড় বড় করে রোদের দিকে তাকিয়ে আছে!আর রোদ ঠোঁটের কোণে দুষ্টু হাসি রেখা টেনে গান ধরলো…!!

আমি ফাইসা গেছি!
আমি ফাইসা গেছি মাইনকার চিপায়
আমারও দিলে চোটও বোঝে না রে
কোন হালায়..!!

রোদ গান গাইতে গাইতে বাইক নিয়ে চলে গেল!আর আবির আর আকাশ হাবলার মত হা করে রোদের চলে যাওয়া দেখলো!ওরা রোদের বলা এই কথাটা হজম করতে পারছে না!রোদ বাসায় এসে কলিংবেল বাজাতেই আলো এসে দরজা খুলে দিলো!রোদ মুচকি হেসে আলোর দুই গাল টেনে দিয়ে হাসতে হাসতে উপরে চলে গেল!কারন আজকে রোদের মনটা এখন খুব ভালো!আলো রোদের এমন কাজে দরজা না আটকে চোখ বড় বড় করে রোদের দিকে তাকিয়ে চলে যাওয়া দেখছে।আলো দরজা আটকে সোফায় বসে ..!!

আলোঃ এই দুপুর বেলা উনাকে কোন জ্বিনে চুম্মালো নাকি কে জানে?এর আগে তো এমনডা করে নি।যাই হোক এই পোলা যে যথেষ্ট উচ্চ মানে লুচু সেটা আমি বুঝে গেছি।অসভ্য একটা (মুখ ভেংচি দিয়ে)

রোদ ফ্রেশ হয়ে বেডে বসতেই! মেঘ আর রকি রোদের রুমে হামলা করলো!রোদ টাওয়াল দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে মেঘকে ভ্রুু নাচিয়ে জিজ্ঞাসা করলো কি হয়েছে?মেঘ কিছু বললো না..!!

রোদঃ কি হয়েছে মহারাজ?আপনার কি কোন কারনে মন খারাপ? কি হয়েছে আমাকে বলুন..??(মেঘের দিকে তাকিয়ে)

মেঘঃ আমি এসেছি আপনাকে কুস্তাকুস্তির আহবান করতে রোদ মেহবুব!আপনি এখন আমার সাথে কুস্তাকুস্তি করবেন।(রকির গায়ে হাত বুলিয়ে)

মেঘের এই কথা শুনে রোদ কিছু বলার আগেই মেঘ রোদের উপর হামলে পড়লো!দুই ভাই বেডের উপর শুরু করে দিলো নাম না জানা যুদ্ধ! রোদের মন টা ভালো আছে তাই রোদও মেঘের দুষ্টুমির সাথে তাল মিলালো!দুই জনই সমান তালে চিৎকার করছে আর যুদ্ধ করছে!ওদের চিৎকার শুনে আলো এক দৌড়ে রোদের রুমে এসে চোখ বড় বড় করে দুই ভাইয়ের কান্ড দেখছে!ছোট টা আগে থেকেই বিচ্ছু সবাই জানে বাট বড়টাও কি এখন দুষ্টুমির খাতায় নাম লিখালো…!!এটা নিয়ে আলো আপাতত অনেক কনফিউজড..!! হঠাৎ মেঘ চিৎকুর করে…!!

মেঘঃ ওইই ঢিশকুম (রোদে পিঠে কিল বসিয়ে)

রোদঃ আহহ্!আর মারিস না ভাই আমি মরে গেছি (চোখ বন্ধ করে)

To be continue…!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here