এলোকেশী_কন্যা২__ #written_by_Nurzahan_akter_Allo #part_45 🍁🍁

0
859

#এলোকেশী_কন্যা২__
#written_by_Nurzahan_akter_Allo
#part_45
🍁🍁

মেঘ স্বযত্নে ফুল গুলো তুলে ওর টুপিতে রাখছে! মেঘের এই ভাবে ফুল কুড়ানোর প্রধান কারন মেঘ আলোকে ফুল গুলো উপহার হিসেবে দিবে তাই।আর এটা আলোর কাছে পবিএ একটা মনের,পবিএ একটা বন্ধনের, পবিএ ভালবাসায় মুড়ানো একটা উপহার হিসেবে অখ্যায়িত হয়ে রইবে…..!!

তারপর মেঘ আর রোদ মসজিদ থেকে বাসায় ফিরে গেল!আলো নামাজ পড়ে কুরআন পড়ে! আর ওদের আব্বু আম্মুর জন্য কেঁদে কেঁদে মোনাজাতে দোয়া করলো।তারপর আলো রান্না ঘরে গিয়ে দেখে শিউলি মন মরা হয়ে বসে আছে!আলো রান্না ঘরে গিয়ে চুলার উপরে পাতিল বসিয়ে ডিম সিদ্ধ করতে দিলো!পাশে থেকে শিউলি বলে উঠলো……!!

শিউলিঃ আম্মা নাই দেইখা বাসা কেমন খালি খালি লাগতাছে! এতদিন ধইরা এই বাসায় আছি বাসার এত খারাপ পরিস্থিতি এর আগে আসে নাইক্কা।আম্মা ছাড়া কিছু ভালো লাগতাছে না..(চোখ মুছে)

আলোঃ শিউলি আন্টি মেঘের সামনে এসব কিছু বলো না!তাহলে ওকে সামলানো যাবো না(চোখ মুছে)

শিউলিঃ মেঘ বাবার জন্য মেলা কষ্ট হইতাছে। এই টুকু পোলা মা ছাড়া কিছু বোঝে না এহন কেমন কইরা থাকবে।ভাবিমনি তুমি ছাড়া ওদের আর কেউ নাই গো ভাবিমনি…!!

আলোঃ হুমম! (ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে)

শিউলিঃ কাইনন্দেন না ভাবিমনি! আল্লাহ যা করে ভালোর লাইগাই করে।এইহানেও হয়তো ভালা কিছু আছে…!!

আলোঃ হুমমম…!!

মেঘঃ বউমনি! বউমনি! কই তুমি??দেখো আমি তোমার জন্য কি নিয়ে এসেছি??(দৌড়ে বাসায় এসে চিৎকার করে)

আলোঃ কি হয়েছে মেঘবাবু??(রান্না ঘর থেকে ছুটে এসে)

মেঘঃ এই দেখে আমি তোমার জন্য দোয়া আর আমার ভালবাসা এনেছি..(অনেক খুশি হয়ে)

আলোঃকই দেখি???

তারপর মেঘ আগে ওর বুকে হাত বুলিয়ে আলোর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো ইমামের কথা অনুযায়ী! আলো বোঝার চেষ্টা করছে মেঘ কি করছে?তারপর মেঘ ওর হাতে থাকা টুপিটা আলোকে দিলো।

মেঘঃ এই নাও আমার ভালবাসা(মুচকি হেসে)

আলোঃ এগুলো আমারর! অনেক পবিএ তো মেঘবাবু তোমার ভালবাসা।আমি অনেক খুশি হয়েছি সোনা!তোমাকেও অনেক অনেক ভালবাসা।রোদ এসে ড্রয়িং রুমে সোফায় বসলো।মেঘের মুখে হাসি দেখে আলোর প্রান জুড়িয়ে গেল!মেঘের পুরো মুখে আলো আদর দিয়ে ভরিয়ে দিলো।এর মধ্যে রকি এসে টুপির মধ্যে কি আছে দেখার জন্য লাফাতে শুরু করলো!আলো টুপিটা নিয়ে ওর রুমের দিকে দৌড় দিলো আর রকি আলোর পেছন পেছন দৌড় দিলো।আলো আর রকির দৌড় দেওয়া দেখে মেঘ খিলখিল করে হাসতে হাসতে আলোর রুমে চলে গেল।রোদ সোফায় বসে এতক্ষণ সব কিছু পর্যবেক্ষণ করছিলো!তারপর উঠে ওর আম্মুর রুমে চলে গেল….!!

মেঘ আলোর রুমে গিয়ে দেখে আলো মেঘের দেওয়া ফুল গুলো একটা ডায়রীর ভাঁজে রেখে দিলো।এখানে রোদ আর মেঘের প্রোপোজ করা চালতার ফুল গুলোও আলো যত্ন করে রেখে দিয়েছে।এই সব ফুল গুলো শুকিয়ে যাবে! কিন্তু ভালোবাসার স্মৃতি হয়ে থাকুক না কিছু জিনিস! এই ফুল গুলো ওদের ভালবাসা বিনিময় করার অমূল্য একটি প্রমান।তারপর আলো আর মেঘ নিচে নেমে আসলো। আলো মেঘকে নিয়ে রান্না ঘরে গিয়ে ঝটপট পরোটা আর মুরগির মাংস রান্না করে ফেললো।আলো আর শিউলি এত এত কথা বলে মেঘকে হাসিয়ে যাচ্ছে….!!

রোদ ওর আম্মুর রুমে এসে ওর আম্মু আর আব্বু প্রতিটা জিনিস ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখছে!রোদের চোখ থেকে ঝরে যাচ্ছে কষ্টের নোনা জলের স্রোতের ধারা।রোদ আলমারি খুলে ওর আব্বু একটা পান্জাবী আর ওর আম্মু একটা শাড়ি নিয়ে বুকের সাথে জড়িয়ে রাখলো।আলো ইশারায় শিউলিকে বললো মেঘের দিকে খেয়াল রাখতে তারপর আলো রোদের রুমে গেল।কিন্তু রোদকে না পেয়ে আলো বাকি সব রুমে,ছাদে,বাগানে খুঁজলো বাট রোদকে আলো কোথাও খুজে পেলো না।আলো রোদের আম্মু রুমে দেখে মেঘ বেডের এক কোণায় বসে বুকের সাথে কিছু একটা জড়িয়ে নিয়ে বসে আছে থম মেরে!আলো রোদের কাঁধে হাত রাখলো কিন্তু রোদ কোন সাড়াশব্দ না করে ওই ভাবেই বসে রইলো!আলো রোদের দুই গালে হাত রেখে, রোদের চোখে চোখ রেখে বললো…!!

আলোঃ আমরা সবাই মরণশীল!কেউ সারাজীবন বেঁচে থাকে না!নিজেকে সামলে নিতে শিখুন।আপনি এমন করলে আমি মেঘকে কিভাবে সামলাবো বলতে পারেন।কেন এভাবে ভেঙে পড়ছেন? মেঘের জন্য হলেও নিজেকে সামলাতে শিখুন..?? (ছলছল চোখে)

এর মধ্যে রোদের ফোনে ফোন আসলো!ড্রয়িং রুমে ফোন ছিলো তাই শব্দ টা এখান থেকেই শোনা যাচ্ছিলো।রোদ চোখ মুখ মুছে কাপড় গুলো আলমারিতে রেখে ড্রয়িংরুমের দিকে পা বাড়ালো।রোদ ফোন হাতে নিয়ে দেখলো ওদের অফিসের ম্য্যানেজার ফোন করছে!রোদ ফোনটা রিসিভ করলো…!!

রোদঃ ম্যানেজার আংকেল আসসালামু আলাইকুম

ম্যানেজারঃওয়ালাইকুম সালাম!রোদ বাবা একটু

অফিসে আসতে পারবে।জুরুরী এজন্য ফোন দিলাম..!!

রোদঃ জি আমি আসছি…!!

ম্যানেজারঃ আচ্ছা বাবা

তারপর সবাই মিলে ব্রেকফাস্ট করে নিলো।রোদ আলো আর মেঘকে সাবধানে থাকতে বলে রোদ গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেল।আবির, আকাশ, রোদ অনেক চেষ্টা করেও ওদের বাবা মায়ের মৃত লাশের খোঁজ করতে পারেনি।পাহাড় থেকে পড়ে থেতলে যাওয়া শরীর!যদি নদীতে ভেসে যায় তাহলে সেই লাশ তো পাওয়ারও কথা না।রোদ অফিসে গিয়ে ম্যানেজারের সাথে কথা বলে জানতে পারলো কিছু ফাইল সাইন করা অত্যন্ত জুরুরী। রোদ এর আগেও ওর বাবা কাজে সাহায্য করতো তাই রোদের বাবা রোদকে এই অফিসের সাইড এমডি করেই রেখেছিলো।আজকে থেকে সাইড এমডি না আজকে থেকে সবকিছুর লিগ্যাল মালিক রোদ।এখন থেকে সব ওর একা হাতে দেখা শোনা করতে হবে ভেবে রোদ একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।তারপর রোদ ম্যানেজারের দিকে তাকিয়ে বললো…..!!

রোদঃ আংকেল কিছুদিনের জন্য অফিসটা সামলে নিতে পারবেন।(মন খারাপ করে)

ম্যানেজারঃ আমি চেষ্টা করবো বাবা।তুমি টেনশন করো না সব ঠিক হয়ে যাবে।

রোদঃ হুমম..!!

তারপর রোদ অফিস থেকে বাসায় চলে আসলো।মেঘ মন খারাপ করে ছিলো আলো বোঝানোর পর এখন মেঘ রকির সাথে খেলছে।রোদ ওর রুমে গিয়ে বালিশের উপর ভর দিয়ে উপুর হয়ে শুয়ে পড়লো।রোদকে বিষন্ন মুখে দেখে আলো সিঁড়ি বেয়ে রোদের রুমে এসে দেখলো রোদ শুয়ে আছে!আলো গুটিশুটি পায়ে এগিয়ে এসে রোদের পাশে বসলো আর রোদের ঘাড়ে হাত রাখলো।রোদ তারাতারি করে চোখ মুছে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে আলো….!!রোদ আলোকে দেখে উঠে বসলো! আলো কিছু বলছেনা শুধু নিষ্পাপ এক দৃষ্টিতে রোদের দিকে তাকিয়ে আছে।রোদ আলোকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বললো….!!

রোদঃ কিছু বলবে??

আলোঃ আপনার তো পরীক্ষা আছে সামনে, তাহলে পড়তে বসছেন না কেন??

রোদঃ আমি পরীক্ষা দিবো না।

আলোঃ কেন??(জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে)

রোদঃ এমনি

আলোঃ আপনি কি চাচ্ছেন মেঘ আর আমি মারা যায়।

রোদঃ আলোওও (গম্ভীর হয়ে)

আলোঃ আপনি এমন করলে আমি মেঘকে কি বুঝ দিবো বলতে পারেন।আপনার কি একার কষ্ট হচ্ছে আমাদের কষ্ট হচ্ছে না।আমাদের কষ্টে বুক ফেটে যাচ্ছে না।আব্বু আম্মু চলে গেছে না ফেরার দেশে এখন কি চাচ্ছেন আমি আর মেঘও মারা যায়।

রোদঃ আলোওও চুপ করো (দাঁতে দাঁত চেপে)

আলোঃ না চুপ করবো না আমি!কেন ভেঙে পড়ছেন এভাবে? আমার আর মেঘের জন্য কি নতুন করা সব শুরু করা যায় না।আমাদের জন্য কি আপনি সব কষ্ট ভুলতে পারবেন না।যদি না পারেন তো বলে দেন।আমি আগে বিষ খাবো তারপর মেঘকে বিষ খাইয়ে মরে যাবো।আপনি থাকেন একা একা (কেঁদে কেঁদে)

রোদঃ ঠাসসসস্!তোমার সাহস কি করে হয় মরে যাওয়ার কথা বলা।তোমরা আমাকে কি পেয়েছে যার যা ইচ্ছে তোমরা তাই করবে।তোমরা সবাই কেন আমার ইমোশন নিয়ে খেলছে বলতে পারো।যাদের ভালবাসি তারাই কেন আমাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার প্ল্যান করছো তোমরা।আমার কি কষ্ট হয় না নাকি আমাকে তোমাদের মানুষ বলে মনে হয় না সেটা আগে আমাকে বলো(আলোর দুই বাহু ঝাঁকিয়ে)

যাক আলোর আইডিটা কাজে দিলো।আলোর উদেশ্য ছিলো রোদের মনের ক্ষোভটা বের করে আনা।কারন রোদ একেবারে চুপচাপ হয়ে গিযেছিলো।আলো চাইছিলো রোদকে একটা আঘাত করে রোদের মনের কথা গুলো জানতে।আলো রোদের হাতে থাপ্পড় খেয়ে চুপচাপ দাড়িয়ে আছে রোদের দিকে মায়াবি দৃষ্টিতে তাকিয়ে। রোদ এগিয়ে এসে আলোর দিকে ছলছল করে তাকিয়ে সরি বললো! তারপর শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।মারা যাওয়ার কথা শুনে রোদ রেগে গিয়েই থাপ্পড়টা মেরেছে ঠিকই! তাতে আলোর কোন অভিযোগ নেই। একটা থাপ্পড় খেয়ে যদি রোদ নিজেকে একটু সামলে নিতে পারে তাহলে এতে ক্ষতি কি….!!

রোদ আর আলোর কথা শুনে মেঘ রোদের রুমের দরজাতে এসে দাড়ায়!আলো মেঘকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে মেঘকে টেনে বেডের উপর বসিয়ে দেয়।তারপর আলো রোদেরও হাত ধরে টেনে মেঘের পাশে বসিয়ে দিলো।রোদ আর মেঘ আলোর দিকে তাকিয়ে আছে। আলো রোদ আর মেঘের দিকে তাকিয়ে ওদের দুই ভাইয়ের দুই হাত ওর মাথায় রাখলো তারপর বলতে শুরু করলো….!!

আলোঃ আমার কসম রইলো তোমাদের। তোমরা যদি কষ্ট পেয়ে নিজেকে গুটিয়ে রাখো। তাহলে আমিও তোমাদের ছেড়ে চলে যাবো। তোমরা দুইজন হলে আমার কাছে আম্মুর দেওয়া শেষ আমানত। আম্মু আমাকে দায়িত্ব দিয়েছে তোমাদের ভাল রাখার। এখন তোমরা যদি এভাবে কষ্ট পাও আর নিজেকে গুটিয়ে নাও! তাহলে আম্মুর আমানত আমার কাছে খেয়ানত হয় যাবে।আর আমি এভাবে বেঁচে থাকতে পারবো না।এখন তোমরা বলো তোমরা নিজেকে স্বাভাবিক করবে নাকি আমিও চলে যাবো তোমাদের থেকে অনেক দুরে।আব্বু আম্মু কারোই বেঁচে থাকে না তারমানে এই না যে জীবন থমকে গেছে।জীবনটা তার নিজ গতিতে চলতে থাকে।তোমরা কান্না কাটি, মন খারাপ করলে আম্মু আব্বুর কিছু হবে না।তোমরা নামাজ পড়ে তাদের জন্য দোয়া করো। আর তোমাদের এমন দেখলে আব্বু আম্মুর আত্মা কষ্ট পাবে।এবার তোমরা বলো তো! আমরা তিনজন কি নতুন করে ভাল থাকার চেষ্টা করতে পারিনা??(কেঁদে দিয়ে)

মেঘঃ বউমনি তুমি কেঁদো না।তুমি যা বলবে তাই
হবে..!!(আলোর চোখের পানি মুছে দিয়ে)

রোদঃ হুমম! তুমি আর মেঘ যেমনটা চাইবে তেমনটাই হবে।এবার বলো আমার কি করতে হবে???(চোখের পানি মুছে ফেলে)

আলোঃ আপনি আপনার পরীক্ষাটা দিন!আব্বুর কষ্ট করে গড়ে তোলা বিজনেসটার হাল ধরুন।আপনারা বাবা মায়ের সব স্বপ্ন পূরণ করুন।যাতে কেউ আঙ্গুল তুলে বলতে না পারে আমাদের আব্বু আম্মু আমাদের সাথে নেই তাই আমরা খারাপ পথে পা দিয়েছি।নিজেদের এমন ভাবে তৈরী করুন যাতে আপনাদের নাম দিয়ে আব্বু আম্মুকে সবাই চিনতে পারে নতুন করে।আর কে বলছে বাবা মা মারা গেলে সন্তানের সাথে থাকে না।আপনাদের শরীরে আপনাদের বাবা মায়ের রক্ত আছে! আপনাদের বুকে বাবা মায়ের জন্য অসীম ভালবাসা রয়েছে। তাহলে কেন মনে করছেন তারা আর নেই।বাবা মা পাশে নেই ঠিকই! কিন্তু আপনাদের বুকে ভালবাসা নিয়েই তারা বেঁচে আছে!আর সারাজীবন এভাবেই বেঁচে থাকবে।আপনি মনে হয়ে এই কথাটা জানেন যে…..!!

” ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা!সব শিশুরই ”
অন্তরে…..!!!

আলোর কথা শুনে রোদ মেঘ দুজনে বেঁচে থাকার নতুন শক্তি খুঁজে পেয়েছে।এবার ওদের জীবনে নতুন পথ চলার জন্য নতুন এক সকালের আর্বিভাব হবে।এবারে ওরা নতুন করে ভাল থাকার জন্য আশার আলো খুঁজে পেয়েছে!এবার ওদের মনে থাকবে একসাথে পথচলা আর তিনজন তিনজনের প্রান হয়ে একে অপরের পাশে থাকার শপথ।

৫দিন পর……!!!

To be continue……!!
(এই পার্ট টা পড়ে কেমন লাগালো জানালে খুশি হবো…!!)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here