তৃণশয্যা #নিয়াজ_মুকিত #৫ম_পর্ব

0
442

#তৃণশয্যা
#নিয়াজ_মুকিত
#৫ম_পর্ব

বাসার সামনে দাঁড়িয়ে রাগে কাঁপতেছে ছেলের বাবা,তাদেরকে বাসায় এনে এভাবে অপমান করা হলো সেটা মানতে পারছে না।এদিকে আদনান সদর দরজাও বন্ধ করে দিয়েছে।ওই অবস্থা নিয়ে তিনজনই হাটতে শুরু করে।কো‌নো রিকসাওয়ালাই তাদের তুলছে না।মোটকথা কোনো ড্রাইভারই তাদের নিজের গাড়িতে তুলছে না।রাগে মাথার তার ছিড়ে যাচ্ছে ছেলের বাবার।

এদিকে নিজের রুমে বসে দরজা বন্ধ করে দিয়ে হাসতেছে রিমি আর চারু।তারা বুঝতে পারছে বিয়ে ভেঙ্গে গেছে যদি তাদের অপমানবোধ থেকে থাকে।অপেক্ষায় আছে কখন ফোন দিয়ে জানিয়ে দিবে যে,বিয়ে ক্যান্সেল।এই মুহুর্তে রুমের ভিতরে প্রবেশ করে আদনান।ধপ করে বসে পড়ে সিঙ্গেল সোফাটাতে।তারপর এক এক করে রিমি আর চারুর দিকে তাকিয়ে খানিকটা গম্ভীর হয়ে বলে,

—‘ পঁচা কুমড়ো ফেলাটা ঠিক করিসনি।লোকগুলো কষ্ট করে হেটে যাচ্ছে।কোনো ড্রাইভারই তাদের গাড়িতে তুলছে না গন্ধের কারনে। ‘

আদনানের মুখে এই কথাটা শুনে ভিষন চমকে ওঠে রিমি আর চারু দুজনেই।রিমি তোতলাতে তোতলাতে বলে,

—‘ তু-তু-মি জা-জা-জান-লে কেমন ক-রে? ‘

আদনান এবার একটা ডেবিল মার্কা হাসি দিয়ে বলে,
—‘ আমাকে চিনলি না তোরা।তোদের এসব কান্ডকারবার আমার মোবাইলে ভিডিও করা আছে।দেখ…’
এই বলে আদনান তাদের সামনে তার মোবাইলটা ধরে।একটা ভিডিও দেখা যাচ্ছে।ভিডিওটাতে রিমি আর চারু পচা কুমড়ো তুলে নিচে ফেলে দেয়।
চারু অবাক হয়ে বলে,

—‘ কিন্তু তুমিতো তখন নিচে ছিলে? ‘

আদনান আবার সেই রমস্যময়ী হাসিটা দিয়ে বলে,
—‘ কিন্তু মোবাইলতো উপরে ছিল।দোলনার এক কোণায়।আচ্ছা বাদদে ভিডিওটা সবাইকে দেখানো দরকার কি বলিস? ‘

এই কথা বলার সাথে সাথে রিমি আর চারু দুজনই আদনানের দুই হাত চেপে ধরে অনুরোধ করতে শুরু করে।আদনান একপর্যায়ে রাজি হয় তবে একটা শর্ত দিয়ে।শর্তটা হলো চারু আর‌ রিমি প্রত্যেকদিন আদনানকে ৩০০করে টাকা দিবে।যেদিন দিতে পারবে না সেদিন ভিডিওটা দেখাবে সে।এই বলে হন হন করে রুম ত্যাগ করে আদনান।চারু আর রিমি তাকিয়ে আছে তার যাবার পথে।

৯.

দুপুর ১২টার দিকে বিছানায় অলস ভাবে শুয়ে আছে রিমি আর চারু।এই মুহুর্তে ভিতরে প্রবেশ করে চারুর বাবা-মা আর রিমির মা।দুইজনেই শোয়া থেকে উঠে বসে।চারু বাবা বসে সিঙ্গেল সোফাটাতে আর চারু মা আর রিমির মা বিছানায়।চারুর বাবা এবার মাথা নিচু করে বলতে শুরু করে,

—‘ আমি কিছুই বুঝলাম না,ওরা এখানে সব কিছু ঠিকঠাক করে বাড়িতে যেতে যেতেই মত পাল্টালো কেন?জিজ্ঞেস করলে বলে কিনা আমরা মানুষকে বাসায় ডেকে এনে অপমান করেছি। ‘

চারু বুঝতে পারে বিয়ে ভেঙ্গে গেছে।তাই কাদোকাদো গলায় তার বাবাকে বলে,
—‘ বাবা,আমার বিয়েটা আবার ভেঙ্গে গেল।আমি শেষ পর্যন্ত তোমাদের কুলক্ষী হলাম। ‘
এই বলে সে বিছানা থেকে উঠে ছাদের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।রিমি তার একটিং দেখে মুচকি মুচকি হাসছে।এদিকে ছাদে প্রবেশ করেই নাচতে শুরু করেছে চারু।কি মজা আকাশে বাতাসে,বিয়ে ভেঙ্গে গেছে!নাচতে শুরু করে দিয়েছে চারু।নাচতে নাচতে সে খেয়াল করে ছাদের এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে আদনান।

চারু চুপিচুপি আদনানের দিকে এগোতে থাকে।সম্পুর্ন নিঃশব্দে সে পৌছে যায় আদনা‌নের ঠিক পিছনে।কানটা এগিয়ে দিয়ে শুনতে চেষ্টা করে আদনান কি বলছে?আদনান ফোনে কথা বলতেছে।চারু অবাক হয় আদনানের চোখের পানি নিচে পড়তে দেখে।চোখের পানি দেখে তার আগ্রহ দ্বিগুন হয়ে যায়।আদনান চোখের পানি ফেলতেছে আর বলছে,

—‘ আমি ভাবতে পারিনি তোমার বাবা এতটা নিষ্ঠুর।তুমি চিন্তা করিওনা আমি কালকেই তোমাকে নিয়ে পালাবো।আমার এতদিনের ভালোবাসা কখনো বি-ফলে যাবে না। ‘
ফোনের ওপাশ থেকে কথা শোনা গেলেও ততটা ভালোভাবে শুনতে পারতেছেনা চারু।তবুও আধো আধো শোনা যাচ্ছে যে,তুমি এসোনা প্লিজ।এনি আমার নিজের বাবা নয় সৎ বাবা।জানো আমাকে না শিকল দিয়ে বেধে রাখছে।একমুহুর্তের জন্য মনে হচ্ছে তোমার বুকটাতে যেন আমার শেষ নিশ্বাস যায়।আমার যাই মনে হোক না কেন তুমি আসিও না?আমাকে যেমন শিকল দিয়ে বেধে রেখেছে তোমাকে দেখলে গুলি করে ফেলবে।তারচেয়ে সেই মদখোর ছেলেটাকে বিয়ে করি।

আদনান ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বলে,
—‘ আমাকে এত তারাতারি ভুলে গেলে।মনে নেই‌ আমরা কি শপথ করেছিলাম।আমি তোমাকে নিয়ে আসবোই ওখান থেকে।প্লিজ তুমি আর একটু কষ্ট করো। ‘

ওপাশ থেকে আবার বলতে শুরু করে,
নাহ তুমি আসবে না।এই বলে কান্না করছে।তারপর শোনা যায় খুব জোরে কান্নার আওয়াজ।আদনান বার বার বলছে কি হয়েছে কিন্তু কোনো জবার আসে না।শুধু সোনা যাচ্ছে কান্না আর মাইরের আওয়াজ।

আদনান পিছনে ঘোরার আগেই চারু সেখান থেকে চলে আসে।তারপর রওনা দেয় নিচের উদ্দেশ্যে।ছাদের মধ্যে দোলনাতে বসে কাঁদছে আদনান।চারু নিচে নামতে নামতে চোখে হাত দিয়ে চমকে ওঠে।তার চোখেও পানি।সত্যি তার জানা ছিল না এমন ভালোবাসাও হয়।চারু কোনো কথা না বলে রিমির রুমে প্রবেশ করে।রিমি বিছানায় ঘুমিয়ে পড়েছে।ঘরে আর কেউ নেই।চারুও গিয়ে নিঃশব্দে রিমির পাশে শুয়ে পড়ে।এখনও তার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।কেউ কতটা পরিমানে ভালোবাসলে শিকলে বাধা থেকেও মনের মানুষটাকে ফোন দেয়।সত্ত্যি চারু অবাক হয়েছে এই কথাগুলো শুনে।চারুর ইচ্ছা করছে আদনানের পাশে দাঁড়াতে কিন্তু কিভাবে?

চারু ঘুমানোর চেষ্টা করলেও তার চোখে ঘুম আসছে না।একপর্যায়ে সে উঠে বসে।তারপর কি ভেবে রওনা দেয় আদনানের ঘর লক্ষ্য করে।আদনানের ঘরে প্রবেশ করেই সে একটা অদ্ভুত গন্ধ পায়।প্রথম যেদিন ঢুকেছিল এই গন্ধটা তার নাকে আসেনি।গন্ধটা যেন চারুকে নিজের দিকে টানছে।চারু গিয়ে বিছানার উপর বসে পড়ে।পাশে টেবিলটাতে তার চোখ আটকে যায়।একটা নীল ডায়েরী।চারু ভাবতে থাকে ডায়েরীটা পড়বে নাকি পড়বে না।না না করতে করতে সে প্রথম পাতাটা উল্টায়।চোখে পড়ে অবাক করা একটা ফটো।একটা ছেলের বুকে শুয়ে আছে মেয়েটা।মেয়েটার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে আর ছেলেটা তার মাথায় হাত বুলাচ্ছে।চারু ছেলেটাকে চিনতে পারে আদনান।তাহলে এইটাই সেই মেয়ে।চারু‌ মনে ম‌নে মেয়েটার কপাল ভেবে খুশি হয়।মেয়েটা সত্ত্যি একটা রাজপুত্র পেয়েছে।

এই মুহুর্তে বাহির থেকে কারো পায়ের শব্দ ভিতরে আসছে।আগন্তুক যে এদিকেই আসছে সেটা চারু বুঝতে পারে।সে তারাতারি ডায়েরীটা রেখে উঠে দাঁড়ায়।ভিতরে প্রবেশ করে আদনান তার মা আর চারুর বাবা-মা।আদনানের চোখটা লাল টকে-টকে রং ধারন করেছে।চারু মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।

এবার চারুর বাবা বলে ওঠে,
—‘ দুজনেই শোন আমরা আদনান আর চারুর বিয়ে ঠিক করেছি‌ এ‌বং সেটা কালকেই। ‘

এই কথাটা শুনে আদনান পর চারু দুজনেই তাকায় আমজাদ সাহেবের দিকে।তারপর চারু আর আদনানের চোখা-চোখি হয়ে যায়।চারু ভাবছে সে কিছুতেই এই বিয়ে করবে না।একজনের পবিত্র ভালোবাসা কিছুতেই নষ্ট করবে না কিন্তু আদনান ভাবছে অন্যকিছু।তার মুখে ফুটে উঠেছে হাসি কিন্তু সেটা কেন?

চলবে…ইনশাআল্লাহ

{ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।কেমন হয়েছে জানাবেন।}
নামাজ কায়েম করুন।আল্লাহ হাফেজ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here