#তৃণশয্যা
#নিয়াজ_মুকিত
#১৩তম_পর্ব
লোকটাকে দেখে ভয়ে ভয়ে আদনানের পিছনে এসে লুকায় চারু।আদনান অবাক হয়ে একবার চারুকে দেখছে আরেকবার লোকটাকে দেখছে।৪০-৫০ হবে লোকটার বয়স।চোখে ভারি লেঞ্চের চশমা।মাথার অধিকাংশ চুল পটল তুলতে গেছে।লোকটাও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে চারু আর আদনানের দিকে।
একপর্যায়ে লোকটা এসে দাঁড়ায় চারুদের সামনে।চারু ভয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়।চোখ বন্ধ করতেই মনে পড়ে ছোটবেলার মাইরের কথা।এখনো দাগ রয়েছে শরিরে।লোকটা আদনানের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে,
—‘ আমি কালাম ‘
আদনান কালাম সাহেবের হাতটা ধরে ঝাকাতে ঝাকাতে বলে,
—‘ আমি আদনান ‘
কালাম সাহেব এবার চারুকে আদনানের পিছন থেকে সামনে নিয়ে আসেন।চারু এখনো ভয়ে চোখ বন্ধ করেই আছে।কালাম সাহেব তাকে চমকে দিয়ে বলে,
—‘ চারু মা,তোর সাথে এভাবে দেখা হবে আমি ভাবতেও পারিনি।সেই কতদিন ধরে দেখা নেই তোর সাথে। ‘
কালাম সাহেবের মিষ্টি মিষ্টি কথা শুনে মনের ভিতর হতে খানিকটা ভয় উধাও হয়ে যায়।চারু আস্তে করে চোখ খুলে নেয়।কালাম সাহেবকে তার বিশ্বাস নাই।এদিকে কালাম সাহেবের পিছনে দাঁড়িয়ে অবাক হয়ে চারুকে দেখছে মেয়েটা।চারু কালাম সাহেবের সাথে কিছুক্ষন কথা বলে মেয়েটার কাছ থেকে মাফ নিয়ে কালাম সাহেবকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়েই আদনানকে টানতে টানতে গাড়িতে তোলে।আদনান বাধ্য করে গাড়ি চালাতে।
আদনান গাড়ি চালিয়ে সেই স্থান ত্যাগ করলে চারু দীর্ঘ একটা নিশ্বাস নেয়।এতক্ষন নিরব দর্শকের মতো চারুর সব কার্যকলাপ দেখছিল আদনান।এবার সে মুখ ফুটিয়ে জিজ্ঞাসা করে,
—‘ এই লোকটা কেরে চারু,যাকে দেখে তুই এত ভয় পেলি।আমাকে টেনে নিয়ে এলি।কাহিনীটা কী? ‘
চারু আদনানের দিকে খানিকক্ষন তাকিয়ে দীর্ঘ একটা শ্বাস নিয়ে এক নিশ্বাসে বলতে শুরু করে,
—‘ আর বলো না,ওই কামাল বেটা খুব পাজি।আমাদের স্কুলের গণিত টিচার ছিল।আমি একদিন একটা অঙ্ক পাইনি দেখে বেটা দুইটা ইয়া বড় বেত আমার পিঠে ভাঙ্গছে।এখনো দাগ আছে মাইরের।দেখবা! ‘
এই বলে চারু নিজের জামা উপরে তুলে আদনানকে পিঠি দেখাতে যায়।আদনান হাত নাড়িয়ে বলে,দরকার নাই।
কিছুক্ষন গাড়ি চালানোর পর আদনান চারুকে উদ্দেশ্য করে বলে,
—‘ তুই কি অঙ্ক করতে পারিস না? ‘
চারু নিজের মাথা নিচে করে বলে,
—‘ এই অঙ্ক জিনিসটা আমার মাথায় ঢুকে না।খুব কঠিন একটা বিষয়।আমি অঙ্ক করতে পারি তবে ততটা ভালো না। ‘
চারু এই কথাটা শোনামাত্র আদনানের মুখে ফুটে উঠে রহস্যময়ী এক হাসি।চারু অবাক হয়ে আদনানকে দেখছে আর বোঝার চেষ্টা করছে হাসির কারন কি?কিন্তু একপর্যায়ে তারা বাসায় পৌছে যায় কিন্তু চারু হাসির কারনটা খুঁজে পায় না।
২১.
‘ বাবা,আমি ঢাকা যাব কালকে।সব ঠিক-ঠাক হয়েছে।আমি কালকেই ঢাকা যাচ্ছি! ‘
এই কথা বলে সোফা থেকে উঠে দাঁড়ায় আদনান।তার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে উপস্থিত আমজনতা।আদনান রওনা দেয় তার রুমের উদ্দেশ্য।রুমের কাছাকাছি যেতেই পিছন থেকে তাকে ডাকে তার বাবা।আদনান বাধ্য হয়ে পিছনে ফিরে এসে আবার আগের জায়গায় বসে পড়ে।আট জোড়া চোখের লক্ষ এখন সে।হালিম সাহেব আদনানের দিকে ঝুকে তাকে জিজ্ঞাসা করে,
—‘ অফিসতো এখন বন্ধ।একমাস বন্ধ থাকবে।এত তারাতারি কেন যাবে তুমি? ‘
হালিম সাহেবের এত বড় একটা প্রশ্নের জবাব কয়েকটা বাক্যের মধ্যে দিয়ে দেয় আদনান।সে সোজা বলে দেয়,
—‘ কয়েকদিন ঘুরবো ‘
হালিম সাহেব সাথে সাথে বলে ওঠে,
—‘ তাহলে চারুও তোমার সাথে যাচ্ছে। ‘
আদনান এক এক করে সবার মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,-‘ নাহ ‘
রাহিনা বেগম ছেলের অবস্থা বুঝতে পারছেন।এই মুহুর্তে ছেলেকে যে একা ছাড়া যাবেনা সেটাও ঢের বুঝতে পারছেন।তাই তিনি খানিকটা কঠোর হয়ে বলেন,
—‘ আদনান চুপ কর।চারু যাবে তোর সাথে।ওখানে অফিসের জন্য যে ফ্লাটটা আছে সেখানে উঠবি তোরা দুইজনেই।আর গাড়ি নিয়ে যাবি এখান থেকে। ‘
হালিম সাহেব স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বলে,
—‘ তুমি পাগল হইছো,এতদুর গাড়িতে করে যাবে! ‘
রাহিনা বেগম নিজের কঠোর ভাব ধরে রেখেই বলে,
—‘ হুম যাবে।তাতে কতদিন লাগে লাগুক।ওরা গাড়িতেই যাবে। ‘
স্ত্রীর কথার উপর কথা বলার সাহস পান না হালিম সাহেব।তিনি চুপ হয়ে বসে থাকেন।বাবাকে এভাবে হারতে দেখে আদনান চুপসে যায়।সে জানে এখানে আর কোনো কথাই কাজ হবে না।চারুকে নিয়ে যেতেই হবে তার সাথে।
আদনান কোনো কথা না বলে চুপ করে উঠে দাঁড়ায়।আদনানের পর উঠে দাঁড়ায় হালিম সাহেব।খানিকক্ষন স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি উপহার দিয়ে চলে যান তিনি।আদনান আর তার বাবা নিজ নিজ লক্ষ্যে পৌঁছার সাথে সাথে রাহিনা বেগমকে জড়িয়ে ধরে চারু।রিমি তাকিয়ে দেখছে আর হাসছে।চারু রাহিনা বেগমকে জড়িয়ে ধরা অবস্তায় বলে,
—‘ খালামনি,আমি ভাবতেও পারি নাই তুমি এত তারাতারি,এত সহজে ওনাকে রাজি করতে পারবে।কালকে উনি বলেছিল,মরে গেলেও আমাকে নিয়ে যাবে না। ‘
চারু কথার কোনো উত্তর না দিয়ে মিষ্টি একটা হাসি দেয় রাহিনা বেগম।তারপর উঠে দাঁড়িয়ে চারুকে উদ্দেশ্য করে বলে,
—‘ সব গুছিয়ে নিস।সব গোছানো হলে একবার আমার রুমে আসিসতো। ‘
এই বলে রাহিনা বেগম সেই স্থান ত্যাগ করে।চারু মাথা ঘুরিয়ে তাকায় রিমির দিকে।দুজনের মধ্যে চোখা-চোখি হয়ে যায়।একপর্যায়ে হেসে ফেলে দুইজনেই।রিমি হাসতে হাসতে বলে,
—‘ তাইলে ভাবিজান,আপনার ঢাকা যাওয়া পাকা।ইস,তোর ভাগ্য কত ভালো দেখ।একই বয়স দুজনের অথচ আমি বন্ধি হয়ে থাকবো আর তুই মজায় মজায় ঘুরে বেড়াবি।আর ইউ লাকি চারু ‘
রিমির কথায় চারু না হেসে পারে না।সে রিমির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নিজের রুমকে লক্ষ করে রওনা দেয়।রুমে প্রবেশ করার সাথে সাথে দরজা লাগিয়ে দেয় কেউ।চারু ঝট করে পিছনে তাকায়।আদনান দাঁড়িয়ে আছে পিছনে।চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে।চোখ গুলো লাল বর্ণ ধারন করেছে।আদনান আস্তে আস্তে চারুর দিকে এগোচ্ছে।
অন্যকেউ হলে এতক্ষনে ভয়ে পিছিয়ে যেত কিন্তু চারু করছে তার উল্টোটা।সে আরো আদনানের দিকে এগোতে থাকে।একপর্যায়ে দুজনেই খুব কাছাকাছি চলে আসে।তাদের দুজনের মধ্যে ফাকা রয়েছে কয়েক ইঞ্চি।
চারুর দৃষ্টি আদনানের মুখের দিকে।আদনান বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে আছে চারুর দিকে।চারু আস্তে আস্তে আদনানের আরো কাছে আসতেছে।আদনানের পারফিউমের গন্ধে পাগল হয়ে যাচ্ছে চারু।সে আদনানের দিকে এগোতে এগোতে একবারে আদনানের শরিরের সাথে লেগে যায়।আদনান বিব্রত হয়ে খানিকটা পিছিয়ে যায়।চারু তার হাতটা দিয়ে আদনানের মুখটা ছুয়ে দেয়।আদনান জলন্ত চোখে তাকায় চারুর দিকে।
তার রাগান্তিত চোখকেও চারু ভয় পায়।এতে ঢের বিরক্ত হয় আদনান।চারু তার তর্জনী আঙ্গুলটা দিয়ে আদনানের ঠোটটা নাড়াচাড়া শুরু করে।আদনান পিছাতে পিছাতে দেয়ালের সাথে লেগে যায়।চারু নিজের মুখখানা আদনানের মুখের কাছাকাছি নিয়ে আসে।চারুর ঘন লাল লিপষ্টিক পাগল করছে আদনানকে।চারুর নিশ্বাশ পড়তে থাকে আদনানের মুখে।চারু নিজের ঠোটদুটো নিয়ে যায় আদনানের ঠোটের সামনে।দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে।
এই মুহুর্তে দরজায় বাড়ি মারে কেউ।সাথে সাথে চারুকে সড়িয়ে দিয়ে ভালো হয়ে দাঁড়ায় আদনান।চারু দরজা খুলতে যেতে যেতে বলে,
—‘ আজকে বাঁচলেও পরবর্তিতে সেই সুযোগ পাবেনা। ‘
চারু দরজা খুলে দেয়।দরজার ওপাশে থাকা আগন্তুক চারুকে সড়িয়ে দিয়ে দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে আদনানকে।চারু মেয়েটাকে দেখে তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠে।আদনানও চারুর দিকে তাকিয়ে জড়িয়ে ধরে মেয়েটাকে..
চলবে..ইনশাআল্লাহ
{কেমন হয়েছে জানাবেন।ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।}
নামাজ কায়েম করুন।আল্লাহ হাফেজ।