#তৃণশয্যা(সিজন ২)
#নিয়াজ_মুকিত
#৬ষ্ট_পর্ব
বেশ মন খারাপ নিয়ে কলেজ থেকে বের হয় চারু।আদনান ও ক্লাসের সবাই অবাক হয়ে চারুর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।চোখের পানি ফেলতে ফেলতে রিকসায় উঠে বসে চারু।রিকসাওয়ালাকে নির্দেশ দেয় রিকসা চালানোর।রিকসাওয়ালা রিকসা চালাতে শুরু করে।
চারু চলে যাওয়ার পর বেশ অমনোযোগ নিয়ে কোন মতে ক্লাসটা শেষ করে আদনান।অনেকটা মন খারাপ নিয়ে বাকি ক্লাস গুলো শেষ করে এক মুহুর্ত অপেক্ষা না করে বাসার পথে রওনা হয় সে।বাসায় পৌঁছে রুমে গিয়ে শাওয়ার নেয় সবার আগে।শাওয়ার নেয়া শেষ হলে সে তার মায়ের কাছে গিয়ে জানতে চায়,চারু এসেছিল কিনা?আদনানের কথায় রাহিনা বেগমের মনে পড়ে আজকে তো চারু আসার কথা ছিল।তিনি উল্টো আদনানকে প্রশ্ন করেন,
–“তোকে না বললাম চারুকে নিয়ে আসতে।নিয়ে আসলি না কেন?”
আদনান মায়ের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে তারপর আস্তে করে বলে,
–“আমার আগেই কলেজ থেকে বের হয়েছে ও।তাই নিয়ে আসতে পারিনি।এখন গিয়ে নিয়ে আসবো।”
এই কথাটাই শোনার অপেক্ষায় ছিলেন রাহিনা বেগম।তিনি সেকেন্ড দেরি না করে আদনানকে বলেন,
–“দাঁড়িয়ে আছিস কেন?যা তারাতারি।মেয়েটার মাও বাসায় নেই।না জানি কি খাচ্ছে দাচ্ছে?বাবা তো সারাদিন বাইরে।শোন কিছু খাবার দিচ্ছি খাবার গুলো তোর খালুর জন্য রেখে চারুকে নিয়ে তুই চলে আসবি।”
এই বলে রাহিনা বেগম যান খাবার রেডি করতে।খাবার নিয়ে চারুর বাসার পথে রওনা হয় আদনান।গাড়ি চালাতে চালাতে সে ভাবতে থাকে অনেক কথা।চারুকে এভাবে বলা ঠিক হয়নি এখন বুঝতে পারছে সে।এখন বন্ধুদের কাছ থেকে নানা বাজে কথা শুনতে হবে চারুকে।আদনান নিজের ভুলটা ঘটা করে বুঝতে পারে।
একপর্যায়ে সে এসে পৌঁছায় চারুদের বাসার সামনে।গাড়ি সাইড করে রেখে কলিংবেল বাজাতে শুরু করে সে।একপর্যায়ে দরজা খুলে দেন চারুর বাবা মানে আদনানের খালু।তিনি আদনানকে ভিতরে আসতে বলে দরজাটা লাগিয়ে দেন।আদনান খেয়াল করে আমজাদ সাহেবের মুখটা কেমন যেন?তাই সে আমজাদ সাহেবকে প্রশ্ন করে,
–“কিছু কি হয়েছে খালু?মনটা মনে হয় খারাপ আপনার।”
আমজাদ সাহেব বেশ সময় নিয়ে তাকান আদনানের দিকে।তারপর ফোস করে একটা নিশ্বাস নিয়ে বলেন,
–“আসলে কলেজ থেকে ফেরার পর থেকে চারু দরজা বন্ধ করে বসে আছে।এত ডাকছি শুনছে না।বেশ চিন্তা হচ্ছে আমার।তুমি একটু ডাকোতো দেখি শোনে কিনা?”
আদনান হাতের খাবারের ব্যাগটা টেবিলের উপর রেখে চারুর রুমের দরজার সামনে এসে দাঁড়ায়।দরজার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের দানবীয় হাত দিয়ে বাড়ি মারে দরজায়।কয়েকবার বাড়ি মারার পর ভিতর থেকে চারু বলে ওঠে,
–“বাবা,ডিষ্টার্ব করিও নাতো।যাও না প্লিজ!”
আদনান বেশ কর্কশ গলায় বলে,
–“মিসেস.চারু।আপনি কিন্তু বেশি বেশি করে ফেলছেন।এর জন্য হাইকোর্ট অফ আদনান এর আদালতের পক্ষ থেকে আপনাকে ভয়ানক থেকে ভয়ানক পর্যায়ের শাস্তি দেয়া হতে পারে।বাঁচতে চাইলে দরজা খু..”
কথাটা শেষ করতে পারে না আদনান।ঝট করে খুলে যায় দরজা।রুমের ভিতর দেখা যায় চারুর মুখ খানা।আদনান সেদিকে তাকিয়ে চোখ ফেরাতে পারে না।চোখের কাজল গুলো পানির সাথে গালে লেপ্টে গেছে।বেশ ভালো দেখা যাচ্ছে চারুকে।আদনান হর হর করে রুমে প্রবেশ করে।কিছুক্ষন পর রুমে প্রবেশ করে আমজাদ সাহেব।আদনান আমজাদ সাহেবকে উদ্দেশ্য করে বলে,
–“খালু,আম্মু চারুকে নিয়ে যেতে বলেছে।আপনার জন্য খাবার দিয়েছে।খেয়ে নিন আপনি নাহলে অসুস্থ হয়ে পড়বেন।”
আমজাদ সাহেব আদনানের কথায় মুচকি হেসে রুম থেকে বের হয়ে যান।চারু অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে বলে,
–“প্রফেসর সাহেব,একটা চোরের বাসা আসতে লজ্জা করেনা আপনার।”
চারুর কথা শুনে কড়া দৃষ্টিতে তার দিকে তাকায় আদনান।চারু কিছু বলার আগেই একটান দিয়ে তাকে কোলে বসিয়ে নেয় আদনান।চারু অবাক হয়ে তাকায় তার দিকে।আদনান চারুর দিকে তাকিয়ে বলে,
–“তুই একটু বেশি কথা বলিস যেটা আমি খুব অপছন্দ করি।বেশি কথা না বলে রেডি হয়ে নে।আম্মু যেতে বলেছে।”
চারু এক লাফে আদনান কোল থেকে উঠে দাঁড়ায়।তারপর বেশ রাগি দৃষ্টিতে আদনানের দিকে তাকিয়ে বলে,
–“আপনি তো দেখি আন্তর্জাতিক মানের লুচ্ছা।বউ হিসেবে মানেন না আবার কোলে বসান।”
আদনান চারুর দিকে তাকিয়ে একটু হেসে বলে,
–“অনেক মেয়েই বসেছিল।এসব নিয়ে কথা বলতে গেলে শেষ হবে না।মনে রাখবি কথায় কথা বাড়ে।যা রেডি হ।”
চারু সেখানে দাঁড়িয়ে থেকে এক চোখ বন্ধ করে আরেক চোখ সরু করে আদনানের দিকে তাকিয়ে বলে,
–“আমি যাব না।একটা চোরকে নিজের বাড়ি নিয়ে যাওয়া ঠিক হবে না।আপনি যান।”
আদনান আর কোনো কথা না বলে চারুকে কোলে তুলে নেয়।চারু অবাক হয়ে আদনানের কান্ডকার্তি দেখছে।পাগল হয়ে গেল নাকি আদনান।এভাবে হঠাৎ করে কেউ কাউকে কোলে তুলে নেয় নাকি।আদনান চারুকে কোলে নিয়ে হাটতে শুরু করে।বাহিরে বের হয়ে আমজাদ সাহেবকে উদ্দেশ্য করে বলে,
–“খালু গেলাম।”
আমজাদ সাহেবও অবাক হয়ে দেখছেন আদনানের কান্ডকীর্তি।আদনান চারুকে নিয়ে এসে বসিয়ে দেয় গাড়ির মধ্যে।তারপর নিজে গাড়িতে উঠে বসে।চারু মুখ ফুলিয়ে গাড়িতে বসে আছে।আদনান মাথা ঘুড়িয়ে তার দিকে তাকায়।তারপর ডান হাত দিয়ে চারুর গালটা টেনে দিয়ে বলে,
–“মুখ ফুলিয়ে রেখে লাভ নাই।তোকে যেতেই হবে।”
চারু মাথা ঘুড়িয়ে তাকায় আদনানের দিকে।কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে পুনরায় সামনে তাকায় সে।আদনান নিজের মত বকবক করেই চলেছে।চারু আদনানের কোনো কথাই কর্ণপাত করছে না।একপর্যায়ে গাড়ি এসে থামে আদনানদের বাড়ির সামনে।চারু গাড়ি থেকে নেমে হরহর করে বাসার ভিতরে প্রবেশ করে।গাড়ি পার্কিং করে বাসার ভিতরে প্রবেশ করে আদনান।বাসার ভিতরে প্রবেশ করে দেখে চারু সোফায় বসে আছে।তার পাশে বসে আছে রাহিনা বেগম।আদনান গিয়ে একেবারে চারুর সামনের সোফায় মুখ বরাবর বসে পড়ে।আদনানকে বসতে দেখে উঠে দাঁড়ায় চারু।সে রাহিনা বেগমের দিকে তাকিয়ে বলে,
–“খালামনি আমি কোন ঘরে থাকবো?”
রাহিনা বেগম উঠে দাঁড়িয়ে রান্নাঘরের দিকে রওনা হতে হতে বলেন,
–“কেন আদনানের পাশের রুমটায়?”
চারু এক মুহুর্ত সেখানে দাঁড়িয়ে না থেকে রওনা হয়ে যায় গন্তব্যের পথে।আদনান অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে তার যাওয়ার দিকে।চারু রুমে পৌঁছে দরজাটা লাগিয়ে দেয়।তারপর ধপ করে শুয়ে পড়ে বিছানায়।
এদিকে আদনান উঠে দাঁড়িয়ে রওনা হয় নিজের রুমের উদ্দেশ্যে।যেতে যেতে সে মনকে বোঝাতে থাকে এত আসক্ত হয়ে পড়া যাবেনা।তাহলে বিপদ হতে পারে।আদনান রুমে পৌঁছার সাথে সাথে মাগরিবের আজান দেয়।সে টুপি নিয়ে রওনা হয় মসজিদের উদ্দেশ্যে।
এদিকে চারু বেশ কৌতুহল নিয়ে প্রবেশ করে আদনানের রুমে।সে সব জিনিস খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে থাকে।এই মুহুর্তে তার চোখে পড়ে একটা অদ্ভুত জিনিস।জিনিসটার আকৃতি কিছুটা বাক্সের মত।চারু কৌতুহল নিয়ে বাক্সটা উন্মোচন করে।বাক্সটার ভিতরের জিনিসগুলো দেখে চিল্লিয়ে পিছিয়ে যায় চারু…
চলবে..ইনশাআল্লাহ
নামাজ কায়েম করুন।আল্লাহ হাফেজ।