তৃণশয্যা(সিজন ২) #নিয়াজ_মুকিত #অন্তিম_পর্ব

0
627

#তৃণশয্যা(সিজন ২)
#নিয়াজ_মুকিত
#অন্তিম_পর্ব

বেশ রেগে বাসার ভিতরে পুনরায় প্রবেশ করে বাবুল গ্যাং।তাদের দেখে খানিকটা চমকে ওঠে উপস্থিত সবাই।রাহিনা বেগম সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতে ধরলে বাবুল মিয়া চিল্লিয়ে বলেন,
–“পুলিশকে ফোন করতে যাচ্ছেন তাই না।থাক আপনাকে কষ্ট করতে হবে না।আমিই একটু পড়ে ফোনটা করে নেব।আপনি চুপ করে নিচে নেমে আসুন।না হলে একেবারে উপরে পাঠিয়ে দেব!”

বেয়াদপ এমপি বাবুল মিয়ার কথা শুনে বেশ ভয় পেয়ে যান রাহিনা বেগম।তিনি আস্তে করে নেমে আসেন।চারু মাথা ঘুড়িয়ে তার দিকে তাকায়।চারুর সাথে আদনানও তাকায় তার মায়ের দিকে।নিত্তিয়া এবার চারুর দিকে পিস্তল তাক করে।এই দৃশ্য দেখে চারুর থেকে আদনানই বেশি ভয় পেয়ে যায়।

বাবুল মিয়া এলোমেলো পা ফেলে সোফায় গিয়ে বসে পড়েন।এক পা তুলে আরেক পায়ের উপর রেখে পকেট থেকে সিগারেট বের করেন তিনি।সিগারেট মুখে দিতেই একজন এসে আগুন ধরিয়ে দেয় তাতে।সিগারেটের ধোয়া ঢেকে নেয় বাবুল মিয়ার মুখটা।

বাবুল মিয়া খানিকটা বিরক্তি নিয়ে ধোয়া গুলো সড়াতে সড়াতে চারুর দিকে তাকিয়ে বলেন,
–“তুমি অনেক চালাক।অনেক বলতে অনেকের চেয়েও বেশি।কিন্তু তোমার মনে হয় জানা নেই চালাকি করারও জায়গা লাগে।সব জায়গায় চালাকি করা যায় না।স্থান,কাল,পাত্র ভেদে চালাকি করতে হয়।”
এই টুকু বলে থামেন বাবুল মিয়া।সিগারেটে আরেকটা টান দিয়ে হাতের ইশারায় নিত্তিয়াকে পিস্তলটা নামাতে বলেন।বাবার হুকুম পেয়ে পিস্তলটা নিচে নামায় নিত্তিয়া।চারু আর আদনান তাকিয়ে আছে বাবুল মিয়ার দিকে।

বাবুল মিয়া আবার বলতে শুরু করেন,
–“কি যেন বলছিলাম?ওহ,তুমি চালাকিটা ভুল জায়গায় করে ফেলেছো।আচ্ছা যাই হোক এখন তোমাকে এমন একটা জায়গায় পাঠিয়ে দেব সেখানে চারদিকে শুধু পটল আর পটল।সেখানে গিয়ে পটল তুলতে হবে তোমাকে।যদি চালাকি করে কাজ থেকে বাঁচতে পারো তাহলে তোমার লাভ।রেডি হও..আচ্ছা তোমার শেষ ইচ্ছা কি?”

বাবুল‌ মিয়ার কথায় সামান্য হাসি ফোটে চারুর মুখে।তার দিকে অবাক হয়ে তাকায় আদনান।পাগল হয়ে গেল নাকি চারু।

চারু ঠোটের কোণে রহস্যময়ী হাসিটা ধরে রেখে বলে,
–“আমার শেষ ইচ্ছা হলো,আমি আদনানের সাথে সংসার করবো।আপনার ক্ষমতা থাকলে এই ইচ্ছাটা পুরন করে দেখান দেখি।আমি‌ জানি‌ আপনার দৌড় কেমন?একটা ছাগলের সাথেই আপনি‌ দৌড়াতে পারবেন না আর পুরন করবেন শেষ ইচ্ছে।বাদ দিন পারবেন না আপনি।”

চারুর কথা শুনে এক লাফে সোফা থেকে উঠে দাঁড়ায় বাবুল মিয়া।রাগে কটমট করতে করতে বলে,
–“এই মেয়ে তোমার এত সাহস,আমার ক্ষমতা সম্পর্কে কথা বলো।যাও আমি পারবো না তোমার ইচ্ছা পুরন করতে।তবে তোমার কথা অনুযায়ী এই বাড়িতে বিয়ের অনুষ্টান হবে।তবে সেটা তোমার নয়,আমার মেয়ে আর আদনানের।তুমি ওদের বিয়েটা দেখে তারপর মরবে।”

চারু দেখে তার জালে পা দিল না বাবুল‌ মিয়া।বেশ চিন্তিত হয়ে পড়ে চারু।এদিকে বাবুল মিয়া একের পর এক হুকুম দিয়েই চলেছেন।তার কথা আজকে সন্ধ্যায় মেয়ের বিয়ে দেব।

বাবুল মিয়ার কথামতো আদনানকে রেখে আসে তার ঘরে দরজা বন্ধ করে।তারপাশের ঘরেই চারুকে বন্ধ করে রাখা হয়।দুইজন পাশাপাশি দুই ঘরে।নিত্তিয়া গেছে পার্লারে।

আদনান বিছানার উপর শুয়ে আছে।মাথায় কিছুই ঢুকছে না তার।সে নিত্তিয়াকে বিয়ে করতে চায় না এটা কাকে বলবে?সে যে চারুকে ভালোবেসে ফেলেছে এটা তার জানা ছিল না আগে।এখন বুঝতে পারছে চারুকে না পেলে তার জীবন বৃথা।

আদনান এবার উঠে বসে।মনে মনে সিদ্ধান্ত নেয় চারুকে তার মনের কথাটা জানাবে।কিন্তু চারুর কাছে যাবে কেমন করে?হঠাৎ একটা বুদ্ধি এসে বাসা বুনে আদনানের মাথায়।সে দৌড়ে বেলকনিতে যায়।ব্যালকনিতে গিয়ে তাকায় চারুর ব্যালকনির দিকে।আদনান নিজ ব্যালকনি থেকে একটা শিষ দেয়।

এদিকে আদনানের শিষ শুনে দৌড়ে ব্যালকনিতে যায় চারু।দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষন।তারপর চারু খানিকটা আস্তে করে বলে,
–“কি বলবেন বলেন?”

চারু দেখতে পায় আদনান দৌড়ে ঘরে যায়।কিছুক্ষন পর ঘর থেকে বের হয়ে আসে।হাতের মধ্যে দরি আর‌ কিছু জিনিস রয়েছে।চারু শুধু দরিটাই দেখতে পায়।আদনান দরির এক কোণা নিজের হাতে রেখে আরেকোণা ছুড়ে মারে চারুর দিকে।চারু ধরে ফেলে অপর কোণা টা।আদনান এবার দরিতে একটা আংটি ঢুকিয়ে দেয়।আংটিটা গড়িয়ে গড়িয়ে চলে যায় একেবারে চারুর হাতে।

চারু অবাক হয়ে তাকায় আদনানের দিকে।আদনান এবার একটা কাগজ পাঠিয়ে দেয় চারুর দিকে।চারু কাগজটা খুলে দেখে বড় বড় করে লেখা আছে,
-‘চারু,তোকে ছাড়া এই আদনান বাঁচার কথা ভাবতেই পারেনা।প্লিজ তুই কিছু কর!”

আদনানের চিঠিটা পরে চারু কান্না করতে শুরু করে।আজকে সে অনেক বড় একটা জিনিস পেল।এটাই তার জীবনের অনেক বড় একটা চাওয়া ছিল।

এমন সময় পটকরে খুলে যায় চারুর ঘরের দরজা।চারু পিছনে তাকিয়ে যে মানুষটাকে আবিষ্কার করে তাকে এখানে আশা করাটাও বোকামি।কেননা ৩বছর আগেই পড়াশুনার জন্য বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে সে।হ্যা চারু দেখতে পাচ্ছে রিমিকে।আদনানের বোন রিমি যে ৩বছর আগে বিদেশে গিয়েছিল পড়াশুনার জন্য।

রিমি দৌড়ে এসে বেষ্টু বলে জড়িয়ে ধরে চারুকে।চারু এখনো বিশ্বাস করতে পারছে না রিমি এসেছে।রিমি চারুকে কোনো বলার সুযোগ না দিয়ে বলে,
–“তোর ব্যাগ রেডি সাথে ভাইয়ারও।তোরা এখনি পালাবি।রেডি হ”
এই বলে রিমি চারুকে নিয়ে আদনানের রুমের দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করে।সে আদনানকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বলে,
–“ভাইয়া,তারাতারি পালা।যা তারাতারি!জানালা দিয়ে নাম।আমি গাড়িটা এগিয়ে দিচ্ছি চুপ করে।আর এই নে টাকা।৪০০০হাজার আছে।অন্তত ৩মাস বাড়িমুখো হবি না।”

রিমির কথামতো বাসার জানালা দিয়ে নিচে নামে আদনান ও চারু।রিমি চুপ করে সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে গাড়িটা নিয়ে এগিয়ে দেয় আদনানকে।আদনান গাড়িতে উঠে একমুহুর্ত দেরি না করে চালাতে শুরু করে।চারু তার পাশে বসে আছে।রিমি পিছন থেকে হাত নেড়ে টাটা জানাচ্ছে।

একপর্যায়ে তারা এসে পৌছায় অনেকদুরের একটা রেষ্টুয়েন্টে।প্রচুর ক্ষুধা লাগার কারনে তারা খেতে বসে যায়।আদনান ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ১২টা বেজে গেছে রাত।খাওয়া-দাওয়া করে হোটেলের একটা রুম বুক করে আদনান।চারুকে নিয়ে রুমে প্রবেশ করে সে।

চারু ব্যালকনিতে চলে যায়।আদনান চারুর পিছন পিছন গিয়ে জড়িয়ে ধরে চারুকে।চারু আদনানের উপস্তিতি টের পেয়ে বলে,
–“মন থেকে কাউকে ভালোবাসলে বেশিরভাগ সময়ই তাকে নিজের করে পাওয়া যায়।কিন্তু ছলনা করে ভালোবাসলে কখনো‌ নিজের করে পাওয়া যায় না।”

আদনান চারুকে নিজের দিকে ঘুড়িয়ে নেয়।চারুর ঠোটে ঠোট রাখতে হালকা কেঁপে ওঠে চারু।তারপর একটু হেসে বলে,
–“সরি,এক্সপেরিয়েন্স নেই।”
চারুর কথা শুনে একটু হাসি পায় আদনানের।সে কিছু বলার আগেই তার ঠোট দুটো নিজের দখলে করে নেয় চারু।আদনানও চারুর সাথে তাল মিলিয়ে যায়…শেষ পর্যন্ত পুর্নতা পায় আদনান-চারু নামক দুজন প্রেমিক-প্রেমিকার ভালোবাসা।

সমাপ্ত..

নামাজ কায়েম করুন।আল্লাহ হাফেজ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here