অতিথি
পর্ব:১০
লেখা : মিশু মনি
.
মিশুর রান্নার কথা শুনে সকলে অবাক হয়ে গেল।
মর্ম রীতিমত ক্ষেপাতে শুরু করল,মিশুর হাতের রান্না খাওয়া যাবে বলে মনে হয়না।
কিন্তু খাওয়ার পর প্রশংসা করতেই হলো।মিশু অনেক ভালো রাধতে পারে।
মর্ম’র বাবা বললেন,মিশু মা, তুমি তো অনেক সুন্দর রান্না জানো।
মিশু লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে রইলো।
.
খাওয়া শেষে মিশু ও মাত্রা বসে আডডা দিচ্ছিল।
মর্ম এসে পাশে বসে মিশুকে উদ্দেশ্য করে বলল,একটা প্রশ্নের উত্তর দিবা?
– বলো।
– তুমি রাতে কখন এসেছিলা আমার ঘরে?
মিশু মাত্রার দিকে তাকালো।
মাত্রা চোখ বড় বড় করে বলল,কি বললি ভাইয়া? তোমরা দুজন রাতে একসাথে ঘুমিয়েছ?
মর্ম চেঁচিয়ে উঠল, এই আস্তে।আমরা একসাথে ঘুমাই নি।মিশু ভোরবেলা আমার মোবাইল এর চার্জার নিতে এসেছিল আমার রুমে।
– ওহ আচ্ছা।
মাত্রা স্কুলে যাবার জন্য তৈরি হতে চলে গেল।
মিশু বলল,আমি নাকি অবুঝ? আপনি তো বুঝদার ছেলে,মাত্রার সামনে এই কথা টা এভাবে বলতে হয়?
– সরি।মাত্রা ছিল এটা এত টা খেয়ালে আসেনি।
– যাই হোক আমাকে ফেসবুকিং শেখাবেন না?
– ওয়েট। বাথরুম থেকে আসছি।
.
মর্ম বাথরুম থেকে এসে বলল,হুম বলো এখন। ফেসবুকিং শিখবা?
– জ্বি।আগে বলুন তো আপনি এত ওয়াশরুমে দৌরান কেন? বহুমুত্র রোগ আছে নাকি?
– আরে না।কি যে বলো।বাথরুম চাপ দিলে যেতে হবে না?
– বাথরুম কিভাবে চাপ দেয়? বাথরুম মানে তো গোসলখানা।
– এক ই কথা।
– এক ই কথা নয়।তুমি বলতে পারতে পায়খানা চাপ দেয়।
মর্ম রেগে বলল,এক ই হলো তো।
– উহু।এগুলা আলাদা শব্দ।বাথরুম, ওয়াশরুম আর গোসলখানা এক ই কথা।এগুলা তো চাপ দেয় নে।যে চাপ দেয় তার নাম হচ্ছে পায়খানা।
মর্ম রেগে গেল- তুমি এমন ক্যান?
– তুমি ভুল শব্দ বলবা ক্যান?
– তাহলে কি বলবো?
– বলবা পায়খানা করবো, হাগু করবো,প্রস্রাব করবো।
– চুপ করো।পচা মেয়ে।
– ভালো কথা বললে পচা মেয়ে? তুমি ভুল শব্দ বলবা ক্যান?
– আচ্ছা বাবা সরি।কিন্তু এই গুলা শুনতে খারাপ লাগে।ভালো শব্দ বলো।
– তুমি বলতে পারো প্রক্ষালন কক্ষে যাবো।
– কিহ! এটা আবার কি?
– প্রক্ষালন কক্ষ হচ্ছে পায়খানা।অর্থাৎ টয়লেট, হাগাঘর।
মর্ম হেসে উঠল – মিশু তুমি খুব দুষ্টু।
– সেটা আমি জানি।মিশু হচ্ছে পাজির পা ঝাড়া।
– হা হা হা।আচ্ছা আসো এদিকে।ফেসবুকিং শেখাই।
.
মিশু ফোনের দিকে ঝুকে আসল।মর্ম বলল,তোমার নাম্বারে একটা কোড নাম্বার যাবে ওটা দাও।
– আচ্ছা।
এরপর মর্ম মিশুর প্রোফাইল সম্পুর্ন করে দিয়ে বলল,এই যে দেখো আইডি রেডি।এবার লগ ইন করো তো দেখি।
মিশু লগ ইন করেই খুশিতে লাফিয়ে উঠল।ফেসবুকে কিভাবে কি করতে হয় সব শিখে নিলো।
তারপর বলল,এক হাজার টা ফ্রেন্ড বানিয়ে দাও।
– এত ফ্রেন্ড দিয়ে কি হবে?
– দিতে বলছি দাও।আমার লাগবে।
মর্ম মিশুর কথা মত অসখ্য ছেলের আইডি তে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠিয়ে দিলো।
মিশু খুশি হয়ে মর্মকে ধন্যবাদ জানিয়ে নিজের রুমে আসল।
.
ফেসবুকে ঢুকে একটা কবিতা লিখে পোস্ট করতেই অনেকেই কমেন্ট করে প্রশংসা করল।মিশুর আনন্দ যেন আর ধরেই না।
.
দশ মিনিটে ত্রিশ টা আইডি থেকে মেসেজ পেয়ে মিশুর প্রচণ্ড রাগ উঠে গেল।
ও এক ছুটে মর্ম’র রুমে ঢুকে বলল,এই এই মর্ম।
– কি?
– ত্রিশ টা মেসেজ এসেছে।প্লিজ ওদের মেসেজ আসা বন্ধ করে দাও।
মর্ম হেসে বলল,এক হাজার তাং ফ্রেন্ড লাগবে না?
– না লাগবে না।প্লিজ ব্যবস্থা করে দাও।ওরা যেন মেসেজ করতে না পারে।খুব বিরক্ত লাগছে গো।
– আচ্ছা দাও।সবাইকে আন ফ্রেন্ড করে দিচ্ছি।
মিশু ফোনটা মর্ম’র হাতে দিয়ে রান্না ঘরের দিকে আসল।
মর্ম’র মা রান্নায় ব্যস্ত।মিশু জিজ্ঞেস করল,আনটি কি রাঁধছেন?
– এখনো কিছু রাধিনি।বলো কি খাবা?
– আমি হেল্প করি?
– পাগলী মেয়ে,
– করিনা প্লিজ,
– আচ্ছা করো।বলো কি খাবা?
মিশু একটু ভেবে বলল,আনটি আজ ভর্তা বানাই?
– কি ভর্তা?
– কয়েক প্রকারের ভর্তা।খাবেন?
আনটি হেসে বললেন,আমার ভালো লাগে।কিন্তু ভর্তা ভালো বানাতে পারিনা।
– আমি পারি।আমি আপনাকে শিখিয়ে দিই?
– আচ্ছা।কিন্তু কি ভর্তা?
মিশু ভেবে বলল,আলু ভর্তা,বাদাম ভর্তা,ডিম ভর্তা,তিল ভর্তা,তিসি ভর্তা, বেগুন ভর্তা,কচুপাতা ভর্তা,কলা ভর্তা,গাজর ভর্তা, কালোজিরা ভর্তা,মাছ ভর্তা,শুটকি ভর্তা,টমেটো চাটনি।
আনটি অবাক হয়ে বললেন, এত্ত গুলা!
– হুম।আপনি বাজার করতে পাঠিয়ে দিন।আজ লাঞ্চ হবে চিকন চালের ভাতের সাথে কয়েকপ্রকার ভর্তা।
– বেশ হবে।আমি বাজারে পাঠাচ্ছি।তুমি হিমুকে নিয়ে সব মশলা তৈরি করে নাও।
.
এরপর মিশু লেগে পড়ল ভর্তা বানাতে।কয়েকপ্রকার ভর্তা।আনটি খুব হাসছেন।হিমু খুব খুশি,ও অনেক মজা পাচ্ছে।
মিশু বলল,আনটি মরিচ ভর্তা করতে হবে।
– কি বলো? আমার ছেলেরা ঝাল কম খায়।
– মরিচ ভর্তাও হবে।আজ আমাদের ভর্তা উতসব।
.
মিশু অনেক প্রকার ভর্তা বানিয়ে দুপুরের খাবার তৈরি করে দিলো।
সাথে আছে সালাদ আর লেবু।
.
খাবার টেবিলের সাজসজ্জা দেখে সকলেই অভিভূত!
কারো মুখে কথা আসছে না।
মর্ম’র বাবা খুশি হয়ে বললেন, এসব কি! আজ অন্যরকম খাওয়া হবে।উফফ জিভে জল এসে গেল।
কথা টা শুনেই মিশু জবাব দিলো, আংকেল জিভে পানি এসেছে?
– হ্যা মা।
– তাহলে আর.এফ.এল পাইপ লাগান।জিভ থেকে পানি উত্তোলন করা হবে।ঢাকা শহরে পানির যা দাম!
মর্ম ও মৈত্রী ভ্যাবাচ্যাকা গেল।একদিকে এত প্রকার ভর্তা দেখে সকলের চোখ ছানাবড়া! তার উপর মিশুর দুষ্টুমি ভরা কথা।
.
আংকেল বললেন,দুষ্টু মেয়ে।আগে খেয়ে নেই।পরে পানি উত্তোলন করবো।
.
একেক ভর্তার একেক রকম স্বাদ! কেউ কোনো কথা বলছে না।চুপচাপ খেয়ে যাচ্ছে।সকলের চোখে মুখে তৃপ্তির ছাপ দেখে মিশুর ভালো লাগছে।
মৈত্রী বলল,মাছ ভর্তা টা এত ভালো হয়েছে কি বলবো!
মাত্রা বলে উঠল, আরে ডিম আর বাদাম টা খেয়েই দেখো না।
মর্ম বলল,চাটনি টা বেশি ভালো হয়েছে!
এমন প্রশংসা সুচক বাক্য শুনে মিশু লজ্জায় লাল হয়ে উঠছে।
হঠাত ই বলে উঠল, বিয়ের পর প্রতিদিন আমিই রান্না করবো কিন্তু।
সকলেই থ!
মর্ম বলল,কথা টা কাকে বললা?
– সবাইকে।তোমার আর আমার বিয়ের পর আমিই রাঁধবো।তোমার আম্মু বসে বসে খাবে।
সবাই একে অপরের দিকে মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে লাগল।
মর্ম মাথা নিচু করে ভাবতে লাগল,আব্বু যে কি ভাবছে! হয়ত ভাবছে মিশুর সাথে আমার রিলেশন আছে।
মৈত্রী খুব মজা পাচ্ছে। ও কখনো বাবা মায়ের দিকে আবার কখনো মর্ম’র দিকে তাকাচ্ছে।
আংকেল বললেন,মিশু তুমি মর্মকে বিয়ে করতে চাও?
– আমি করতে চাইনা।আপনারা দিতে চাইবেন তাই রাজি হয়ে যাবো। আমি তো বাধ্য মেয়ে।
মৈত্রী মুখ টিপে হাসছে।
আংকেল বললেন, মর্মর সাথে তোমার বিয়ে দিতে চাই কে বলল?
– আমি বুঝে নিয়েছি।
মর্ম বলল,তুমি সবসময় বেশি বুঝো।
ওর বাবা ওকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, তুমি চুপ থাকো।মিশু বলো?
মিশু মর্ম’র দিকে তাকালো।মর্ম ভয়ানক রেগে গেছে।মিশু কিছু না বলে চুপ করে রইলো।
আংকেল বললেন, মিশু তুমি আমাদের কে পছন্দ করো?
– হ্যা খুউউব।নয়ত কি আপনারা চলে আসাতে এমনি এমনি কাদি?
– হুম বুঝলাম।কিন্তু তুমি তো ছোট মানুষ, এখন তো তোমাকে বিয়ে দেয়া যাবে না।
– আমি বড় হবো তারপর বিয়ে হবে।
– কার সাথে হবে?
– আপনারা যার সাথে দিবেন।
কেউ খাবার মুখে দিচ্ছে না।সকলে একবার মিশুর দিকে তাকাচ্ছে আরেকবার বাবার দিকে তাকাচ্ছে।
হিমু দূরে দাড়িয়ে খিলখিল করে হাসছে আর মনে মনে বলছে,খালুজান যেন মিশু আফারে পছন্দ কইরা ফালায়।আমি খুব খুশি হমু।মিশু আফারে আমি খুব ভালা পাই।
.
আংকেল বললেন, আচ্ছা ঠিক আছে।মৈত্রীর সাথে তোমার বিয়ে দিবো। ইন্টার পরীক্ষা দাও,তারপর।
মৈত্রী হা করে তাকালো! বাবা কি বলছে এসব!
মর্ম হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারছে না।
মাত্রা হাসছে,ভাইয়ার সাথে মিশু আপুর বিয়ে হলে খুব মজা হবে!
হিমু ও খুব খুশি!
মাত্রার মা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছেন!
মিশু লজ্জায় লাল হয়ে ছুটে রুমে চলে আসল।
বাবা ছাড়া সকলেই মাত্রাতিরিক্ত অবাক হয়ে গেছে,এ কেমন মেয়ে! নিজের বিয়ে নিজেই ঠিক করে ফেলল!
( চলবে….)