Story – Every Thing Is Fair In Love And War
Writer – Nirjara Neera
. Part – 18……………………
★
অলোক মায়ার হাত ধরে চুপচাপ বসে আছে।। রাজ বৈদ্যরা তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।। প্রথমে মায়া অনেক নড়া চড়া করলেও এখন একদম নিশ্চুপ ভাবে শুয়ে আছে।। গায়ের ফর্সা রংয়ে ফ্যাকাসে ভাব চলে এসেছে।। কিন্তু অলোক এত কিছু ভাবছে না।। সে জানে মায়া সুস্থ হয়ে উঠবেই।। তাকে উঠতেই হবে।।
রাত প্রায় গভীর থেকে গভীরতর।। অনেক টা প্রভাতের কাছাকাছি।। এতটা সময়ে অলোক এক মুহুর্তের জন্য মায়া কে একা ছাড়ে নি, এক মুহুর্তেরর জন্য চোখ বন্ধ করে নি।।
.
ওর শরীর থেকে সমস্ত বিষ বের করে নেয়া হয়েছে।। এখন শুধু অপেক্ষার পালা।। চিকিৎসক রা তাকে গরম সেক দিচ্ছেন যাতে শরীর ঠান্ডা হয়ে না পড়ে।। যাতে মায়া কে বাচাঁনোর একটা সুযোগও হাত ছাড়া না হয়।।
.
ধীরে ধীরে প্রভাতের নরম আলো মহলে প্রবেশ করতে লাগলো।। কিচির মিচির শব্দে চারদিক টা সরব হচ্ছে।। দুনিয়া জাগ্রত হচ্ছে ধীরে ধীরে।।
সারা রাত নির্ঘুম কাটিয়ে ভোরে অলোকের চোখে তন্দ্রা লেগে এসেছে।। মায়ার এক হাত মুটোয় ধরে হাতের উপরে মাথা রেখে অলোক ঝিমাচ্ছে।। আশে পাশে সমস্ত চিকিৎসক রাও ঘুমাচ্ছে মেঝেতে শুয়ে।। মায়ার যতক্ষণ হুশ না আসে তাদের যাওয়া নিষিদ্ধ ছিল।। কিন্তু তাদের বেচারা শরীর কত মানবে?? তাই তারা হার মেনে ঘুমের কোলে ঢলে পড়ল।।
মায়ার যখন চোখ খুলল তখন ও তার গলা মাথায় হালকা ব্যাথা ছিল।। টিপটিপ করে চারদিকে তাকালো সে।। সবকিছুই অন্যরকম লাগছে।। কি হয়েছে?? প্রথমে কিছু মনে পড়লনা মায়ার।। তারপর ধীরে ধীরে গত রাতের কথা মনে পড়ে গেল।। কাল ওই বার্বান সম্রাটের সাথে ফুল শয্যা ছিল।। অসভ্য সেই সম্রাট তাকে জড়িয়ে ধরেছিল।। এরপর কিছু একটা বলছিল।। কিন্তু সেটা মনে আসছেনা।। কি হয়েছিল তার?? সে উঠতে চাইল।। কিন্তু হাতে চাপ অনুভব করল।। কেউ যেন হাত ধরে রেখেছে যার জন্য সে উঠতে পারছেনা।। তাকিয়ে দেখল কালো পাগড়ী পড়া কেউ তার হাতের উপর মাথে রেখে শুয়ে আছে।। মায়া আস্তে আস্তে হাত টা টেনে বের করল।। তারপর মাথা তুলে বসল।। মাথা তুলে বসতেই তার মাথা ঘুরে গেল।। চারদিকে কেমন গন্ধ ভেসে বেড়াচ্ছে।। তার জ্বর হলে তার পিতা রাজা মৈনাক একটা ঔষধ খাওয়াত।। মায়া খেতে চাইত না তিতার কারনে।। গন্ধ টা অনেকটা সেরকম।। মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে মায়া দেখল চারপাশে মেঝে তে কিছু লোক শুয়ে আছে।। দেখতে চিকিৎসক এর মত মনে হচ্ছে।। মায়া আবারো ধপাস করে কোমল বালিশে মাথা রাখল।। চারদিক টা তার ভন ভন করে ঘুরছে।। আবার চোখ টা লেগে এলো।।
.
প্রায় কয়েকটা দিন এক নাগাড়ে সেবা শ্রশ্রুষার পর মায়া খানিকটা সুস্থ হল।। তবে শরীর এখনো দূর্বল।। সে শুনেছে তার সাথে কি হয়েছে।। এও শুনেছে যে রক্ষিতা সিরাতের সাথে কি হয়েছে।। কিন্তু কিছু বলেনি সে।। কেমন যেন চুপ হয়ে আছে।। চুপ চাপ খাচ্ছে, গোসল করছে, ঘুরতে নিয়ে গেলে ঘুরছে।। তবে সে ভোরের পর থেকে ওই বার্বান সম্রাট কে সে আর দেখে নি।। লিয়া আছে তার পাশে পাশে।। চেষ্টা করছে যেন তার মনটা ভালো করার।। কিন্তু মায়া যেন বার বার অন্য মনস্ক হয়ে পড়েছে।।
.
বিকেলে লিয়া মায়ার কালো চুল আচড়িয়ে পরিপাটি করে দিচ্ছিল।। আর মায়া চুপচাপ বসে বসে কি যেন ভাবছিল।। সে বেখেয়ালে মাথা তুলে দর্পণের দিকে তাকালো।। তারপর আবারো মাথা নিচু করল।। তারপর মনে হল দর্পণে সে লিয়ার মুখ দেখে নি।। ঝট করে মাথা তুলে দর্পণে তাকালো।। দেখেই চমকে উঠলো।। কারন ওই বার্বান সম্রাটই তার চুল পরিপাটি করে দিচ্ছে।। মায়া তাড়াতাড়ি উঠে দাড়ালো।। তারপর অলোকের দিকে ফিরল।। লিয়া কে আশে পাশে দেখা যাচ্ছে না।। কোথায় গেল সে তাকে ফেলে?? অলোকই প্রথম কথা বলল
.
—- কেমন আছো মায়া??
.
—- ভা-ভালো!! লি-লিয়া কোথায়??
.
—- ওকে বাইরে পাঠিয়ে দিয়েছি!!
.
—- কে-কেন??
.
—- সম্রাট আর সম্রাজ্ঞীর একান্ত সময়ে খাস কামরায় থাকার অনুমতি তো কারো থাকার কথা না?? ঈরানভা তে দেয় নাকি এমন অনুমতি??
.
মায়া কোনো কথা বলল না।। চুপ দেখে সে কথা শুরু করল।।
.
—- ঘুরতে যাবো বিকেলে।। তুমিও যাবে আমার সাথে।।
.
—- আমি যাবো না।।
.
—- আমি তোমার অনুমতি চাই নি।। জানিয়েছি মাত্র যে তুমি যাচ্ছো।।
.
—- না।। আমি যাবো না ঘুরতে!! অাপনি কথা রাখেন নি।।
.
ভ্রু কুচকে অলোক বলল
.
—- কোন কথা??
.
—- আপনি বীর কে ছেড়ে দেন নি!!
.
—- ওহ হো।। এত দিন বীর কেমন আছে সেটা ভাবতেছো!!! আমি কেমন আছি সেটা একবারও জিজ্ঞেস করলেনা?? কেমন সম্রাজ্ঞী তুমি?? যে নিজের সম্রাটের খেয়াল রাখে না??
.
মায়া তীক্ষ্ণ চোখে অলোকের দিকে তাকালো।। অলোক কি বলতে চাইছে সে বুঝতে পারছেনা।। অলোক আরো কয়েক কদম কাছে এসে মায়ার হাত ধরল।। তারপর কাধের একপাশে নেমে আসা চুল গুলো কে পিছনে সরিয়ে দিল।। তারপর ফিসফিস করে কানের কাছে এসে বলল
.
—- ছেড়ে দিলে আমার সাথে যাবে??
.
সন্দিগ্ন দৃষ্টিতে মায়া বলল
.
—- সত্যি ছেড়ে দেবেন??
.
—- অবশ্যই!!
.
—- ঠিক আছে যাব।।
.
—- তাহলে তৈরি থেকো।। বিকেলে একসাথে বেরুবো।।
.
এই বলে পিছন ফিরে চলে যেতে লাগল।। কিন্তু আবার কি মনে করে ফিরে আসলো।। মায়ার কাছে এসে ফিস ফিস করে বলল
.
—– বীর কে ছেড়ে দিলে কি পাবো??
চোখ বড় বড় করে মায়া বলল
.
—- মা-মানে??
.
—- আমি কথা শুনছি তোমার।। তার বদলে কিছু ইনাম দিবে না?? এত টাই অযোগ্য আমি??
.
—- কি-কি চান??
.
—- আমি চাই””””
.
অলোক আরেকটু এগিয়ে এলো।। তার পুরো নিশ্বাস মায়ার মুখের উপর পড়ছে।। মায়া যথা সম্ভব দৃষ্টি সরিয়ে নিঃশ্বাস বন্ধ করে রাখার চেষ্টা করছে।। কিন্তু পারছে না।। ওই বার্বান সম্রাটের গায়ের গন্ধটা তার নাকে লাগছে।। চেষ্টা করল আরো পিছিয়ে যাবার।। কিন্তু পারছেনা।।
অলোক আরো এগিয়ে এসে মায়ার ঠোট বরাবর দৃষ্টি দিল।। নরম মিষ্টির মত গোল ঠোট।। একটানে খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে তার।। কিন্তু খেয়ে ফেললে তো আর এই ঠোট পাবে না।। তাই সে অনেক ভেবে চিন্তে মায়া বুঝবার আগেই ঠোটে চুমু দিতে লাগল।। ছোট্ট চুমু দিয়ে ছেড়ে দেয়ার কথা থাকলেও অলোক ছাড়লো না।। বরং দু হাতে মায়ার মুখ টা ধরে নিজের সুবিধা করে নিল।। মায়া বড় বড় চোখে অলোকের দিকে তাকিয়ে আছে।। বাধা দিতে পারছেনা।। ভয়ে বুক টা তার ঢিপ ঢিপ করছে।। সে তার পিতার এত সাহসী কন্যা।। অথচ এখন কিছুই বলতে পারছেনা।।
অলোক চুমু দিয়েই মায়ার কপালের সাথে নিজের মাথা ঠেস দিল।। তারপর আস্তে করে বলল
.
—– মায়া!!
.
মায়া ভয়ে কাঠ হয়ে দাড়িয়ে আছে।। কিছু বলার সাহস হচ্ছে না।। অলোক আবারো বলল
.
—– মায়া তোমার সম্রাট তোমাকে ভালোবাসে।। খুব বেশি ভালোবাসে।। তাকে দূরে ঠেলে দিও না।। সে অনেক দিনের উপোস।। তোমার ভালোবাসার ক্ষুদার্থ সে।। কিছুটা ভালোবাসা তাকে দিও।। অতটা তড়পিয়ো না তাকে।। বাচতে পারবেনা সে।।
.
এই বলে অলোক মায়ার ঠোটে আরো একটা চুমু দিল তারপর বেড়িয়ে গেল।।
.
(চলবে)
Home “ধারাবাহিক গল্প” Every Thing Is Fair In Love And War Story – Every Thing Is Fair In Love And War Writer –...