Story – Every Thing Is Fair In Love And War Writer – Nirjara Neera . Part – 17

0
532

Story – Every Thing Is Fair In Love And War
Writer – Nirjara Neera
. Part – 17……………………

মুহুর্তের মধ্যে অলোকের গর্জনে মহল গম গম করতে লাগল।। এই গভীর রাতেও দাস দাসীরা এদিক সেদিক দৌড়াতে লাগল।। রাজ বৈদ্যরা নানা পথ্য নিয়ে এক বার আসছেন একবার যাচ্ছেন।। কেউ ঔষুধি লতা, কেউ মূল্যবান শেখর বাকড় নিয়ে আসছেন।।
মায়া অলোকের রাজকীয় বিছানায় নিষ্প্রাণ ভাবে শুয়ে আছে এক হাত পেটের উপর অপর হাত টা লতার মত অন্য দিকে ঝুলে আছে।। একটু পর পর নড়ে উঠছে।। যেন কোনো কিছুর জন্য তড়পাচ্ছে।। রাজ বৈদ্যরা তার আশে পাশে তাদের চিকিৎসা চালাচ্ছে।। অলোক একটু দূরেই দাড়িয়ে ছিল।। সে হাত দুটো পিছনে দিয়ে চোখ মুদে আছে।। সে এই দৃশ্য একদম সহ্য করতে পারছেনা।। মায়া তড়পাচ্ছে।। মুখ দিয়ে গল গল করে সাদা ফেনা বেড়ুচ্ছে।। মাঝে মাঝে আধ খোলা চোখ দিয়ে অলোক কে শূন্য হীন দৃষ্টিতে দেখছে।। অসহ্যকর একটা দৃশ্য।। অলোকের মনে হচ্ছে তার সবুজ চোখা রাজকুমারী তাকে ডাকছে।। তার কষ্ট সহ্য হচ্ছে না।। যেন অনুরোধ করছে কষ্ট টা কমিয়ে দিতে।। হাত পা ঘেমে আসছে অলোকের।। বুঝতে পারছে না কি হয়েছে??
.
একজন চিকিৎসক মাথা নুয়ে অলোকের সামনে দাড়ালো।। চোখ বন্ধ অবস্থায় অলোক জিজ্ঞেস করল
.
—- বল কি হয়েছে মায়ার??
.
—- সম্রাট মাফ করবেন।। রাণী মায়া কে খাবারের সাথে বিষ দেয়া হয়েছে।।
.
ঝট করে চোখ খুলে ফেলল অলোক।। রাগে চেহারা টা ফুসে উঠছে।। পুরো মুখো মন্ডল লাল বর্ণ ধারন করেছে।। রাজ চিকিৎসকের সাহস হচ্ছে না সেই লোহিত বর্ণের চেহেরার দিকে মুখ তুলে তাকাতে।। কিছুটা ভয়ে কাপতে কাপতে চিকিৎসক বলল
.
—- সম্রাট আমরা রাণী মায়া কে বাচানোর যথা সম্ভব চেষ্টা করছি।। কিন্তু যে বিষ তাকে দেয়া হয়েছে সেটা অতি দূর্লভ বিষাক্ত ফুল সম্রাট।। সেটা আমাদের রাজ্যে পাওয়া যায় না।।
.
—- তাহলে কোথায় পাওয়া যায়??
.
—- সম্রাট আমাদের পাশের রাজ্য অম্ভুদ নগরীতে ফোটে।। এবং সেটা শুধু মাত্র বিশ বছরে একবার ফোটে।। যখন ফোটে তখন সংগ্রহ করে শুকিয়ে গুড়া করে এই বিষ তৈরি হয়।।
.
—– চেষ্টা নয়!! মায়া কে সুস্থ কর।। সূর্য ওটার আগে আমি ওকে সুস্থ দেখতে চাই।। আর ও যদি সুস্থ না হয় তাহলে সেই ফুল খাইয়ে তোমাদেরও একি হাল হবে।।
.
—– দয়া করুন সম্রাট।। আমাদের মাফ করেন!!
.
অলোক জবাব দিল না। গট গট করে বেড়িয়ে গেল।। পরিবেশ টাই বিষাক্ত হয়ে গেছে।।
.
অলোকের খাস দাসী দারাহ ছোটা ছুটি করছে কয়েক ঘন্টা ধরে।। উদ্দেশ্য আসল অপরাধী কে ধরা।। কিন্তু রাণী মায়ার সবকিছু বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা হয়।। খাবারের ব্যাপারে ও তাই।। যাদের উপর রাণী মায়ার খাবার দাবার রান্না ও পরিবেশন করা ন্যস্ত তারা খুবই বিশ্বস্থ।। ওই দাসীদের সাথে কথা বলে দারাহ বুঝতে পারল তারা সাধারন দাসী।। যে করেছে তার নিশ্চয় ক্ষমতা আছে।। অলোক কে জানানোর পর অলোক দারাহ কে একজন বিশেষ মানুষ সম্পর্কে খোজ খবর নিতে বললেন।। দারাহ এখন তাতেই ব্যস্ত।। দূত পাঠাচ্ছেন বিভিন্ন জায়গায়, বিভিন্ন বৈদ্যর সাথে কথা বলছেন।। তারপর মহলের বিভিন্ন দাসীর সাথে কথা বলবেন।।
.
অবশেষে কিছু প্রমান হাতে অলোকের কাছে উপস্থিত হলেন।। অলোক তখন মহলের বাইরের বাগানে দাড়িয়ে আছেন।। এই বাগান টা বিশেষ ভাবে সে মায়ার জন্য তৈরি করেছিলেন।। আজ তাদের প্রথম রাত ছিল।। পূর্ণিমা চাঁদের দিকে তাকিয়ে চোখ মুদল অলোক।।
.
—– সম্রাট??

পিছন থেকে দারাহ ডাকল।। দারাহ এর দিকে না ফিরে অলোক বলল
.
—-যদি এই বলতে আস যে কোনো খোজ পাওনি তাহলে চলে যাও।।
.
—- সম্রাট আমি খোজ নিয়ে এসেছি।।
.
ঝট করে অলোক দারাহের দিকে ফিরল।। দারাহ এখনো মাথা নুইয়ে দাড়িয়ে।।
.
—- বল কি পেয়েছো??
.
—- সম্রাট আপনার ধারনা সত্য।। এই বিষ অম্বুদ থেকে আনা।। এবং তিনিই এনেছেন।।
.
—– যা বলছো দারাহ সত্যি তো??
.
—- জি সম্রাট!! আমি সাক্ষী নিয়ে এসেছি।।
.
একজন বৃদ্ধ মানুষ কে ডাকল দারাহ।। বৃদ্ধ চিকিৎসক জানালো সে অম্বুদের একজন চিকিৎসক।। এই ফুলের চাষ একমাত্র তিনি এবং তার পিতা করেন।। বিষ তৈরির জন্য।। এই বিষ অপরাধী দের শাস্তি দিতে ব্যবহার করা হয়।। তার বিষ তিনি বিভিন্ন মহলে চালান দিতেন।। এবং তার কাছ থেকে এই বিষ একজনই অতি চওড়া মুল্যে কিনে নিয়ে গিয়েছিলেন!!!
.
অলোকের আর কিছু জানার রইল না।। সরাসরি অন্দর মহলে প্রবেশ করল।। সেখানে সবাই লাইনে দাড়িয়ে আছে।। বিভিন্ন গনমান্য ব্যাক্তি এমনকি রাণী ইরাভ তার কন্যা ও রক্ষিতা সিরাত ও আছেন।। রাণী ইরাভ অনেক টা বিস্ময়ের সাথে অলোক কে জিজ্ঞেস করলেন
.
—– অলোক!! তোমার আমার উপর ও সন্দেহ?? নিজের মাতার উপর??
.
অলোক জবাব দিবার প্রয়োজন বোধ করলনা।। স্থির চোখে সবার দিকে তাকিয়ে রইলেন।। তারপর সবার দিকে এক নজর তাকিয়ে কিছু একটা খুজতে লাগলেন।। এরপর সিরাতের দিকে তার দৃষ্টি নিবদ্ধ হল।।
.
—– আমি জানি এখানের মধ্যে একজন মায়া কে বিষ দিয়েছে।। যার জন্মস্থান অম্বুদ।। আর আমি দ্বিতীয় বার বলতে চাই না।। সামনে এসে অপরাধ স্বীকার কর।।
পিন পতন নিরবতা বিস্তার করছে চারদিকে।। কেউ স্বীকার করছেনা অপরাধ।। অলোক আরো একবার সামনে তাকালো।। নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করছে সে।। এবার থমথমে গলায় বলল
.
—– অপরাধ স্বীকার করলে মাফ পাবে।। কিন্তু যদি স্বীকার না করে তাহলে নিজের হাতে মৃত্যু দন্ড দিব।।
.
এবারো কয়েক সেকেন্ডের নিরবতা।। তারপর দেখা গেল কেউ একজন ধীর পায়ে দু কদম আগে এসে দাড়ালো।। সবাই অবাক হয়ে দেখলো সিরাত মাথা নিচু করে অলোকের সামনে দাড়িয়ে আছে।। অলোক দৃষ্টি না সরিয়ে বলল
.
—- আমি জানতাম এটা তুমি।। কিন্তু অপরাধ স্বীকার করার জন্য একটা সুযোগ দিলাম এটা।।
.
সিরাত অপরাধীরর মত কাচুমাচু হয়ে বলল
.
—- সম্রাট আমাকে মাফ করুন।। আমার ভুল হয়ে গেছে।। দয়া করুন সম্রাট।।
.
অলোকের ঠোটের কোনে একটা ভয়ঙ্কর হাসি ফুটে উঠল।। সেই হাসি নিয়ে বলল
.
—- তুমি বেচে থাকলেই তো তোমাকে মাফ করব!!
.
—- হহ!!
.
বড় বড় চোখে সিরাত অলোকের দিকে তাকালো।। তারপর কিছু একটা বলতে চেয়েও পারলো না।। তার আগে অলোকের তলোয়ার টা খাপ থেকে বেড়িয়ে এলো।। এবং সেটা যেন আপনা আপনিই সিরাতের দিকে এগিয়ে এলো।। একটা সরু অার্তনাদ বেড়িয়ে আসল সিরাতের মুখ থেকে।। তারপর মাথা টা নিচে পড়ে একপাশে রক্তে রঞ্জিত হয়ে ঘুরতে লাগল।। আর শরীর টা একই জায়গায় তড়পাতে লাগল।। তড়পানো শেষ হলে শরীর টা আপনা আপনি নিশ্চুপ হয়ে গেল।। এই দৃশ্য দেখে উপস্থিত সবাই বাকরুদ্ধ হয়ে গেল।। কেউ টু শব্দ টি করার সাহস পেল না।। যেন শব্দ করলে তাদেরও একই অবস্থা হবে।। অলোকের যেমন শান্ত ছিল ঠিক তার চাইতেও বেশি শান্ত হয়ে আছে।। যেন সিরাতের ধড় আলাদা করে পরিতৃপ্তি পেয়েছে।। সিরাতের রক্তে অলোকের চোখ চক চক করছে।। তারপর সেই রক্ত রঞ্জিত তলোয়ার টা সিরাতের শরীরে মুছতে সবার উদ্দেশ্যে শান্ত অথচ ভয়ঙ্কর ভাবে বলতে লাগল
.
—- এরপর যদি কেউ আমার মায়ার এতটুকু ক্ষতি করার চেষ্টা করে বা তাকে কষ্ট দিতে চাই তারা যেন আজকের এই ঘটনার কথা মনে রাখে।। শুভ রাত্রি সবাই কে।।
.
এই বলে অলোক অন্দর মহল থেকে বেড়িয়ে এলো।। এক রকম ঘোরের মধ্যে আছে সে।। এই মুহুর্তে দারাহ কে দরকার।। সে বলতে পারবে অলোকের কি প্রয়োজন।। কিন্তু দারাহ কোথায়??
.
—- দারাহ দারাহ
.
হন্ত দন্ত হয়ে দৌড়াতে দারাহ প্রবেশ
.
—- মায়া কেমন আছে??
.
—- সম্রাট এখনো বলা যাচ্ছে না।।
.
—- তাহলে এতগুলো রাজ বৈদ্য ওখানে কি করছে??
.
—- ওরা চেষ্টা করছে।। আমার মনে হয় রাণী মায়া শীঘ্র ই সুস্থ হয়ে উঠবেন।। আপনি একদম চিন্তা করবেন না।।
.
—- দারাহ ওর নিষ্প্রাণ শরীর দেখে আমার ভয় লাগে।। আমি কি করবো দারাহ??
.
—- সম্রাট আপনি রাণী মায়া কে হারানোর ভয় করছেন।। আপনার দরকার রাণী মায়ার পাশে একটু করে বসার।।
.
—- কিন্তু দারাহ”””””
.
—- সম্রাট আপনি শান্তি পাবেন তার পাশে বসলে।। আর তিনি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠবেন।। কেননা তিনি জানেন আপনি তাকে খুব ভালোবাসেন এবং তাকে ফেরত আসতেই হবে।।
.
—- ঠিক বলেছো দারাহ!! মায়া কে ফিরে আসতেই হবে।। অবশ্যই আসতে হবে!!
.
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here