Story – Every Thing Is Fair In Love And War Writer – Nirjara Neera . Part – 16.

0
536

Story – Every Thing Is Fair In Love And War
Writer – Nirjara Neera
. Part – 16……………………

বেশ কিছুক্ষন পরেই রাতের রাজকীয় খাবার মায়ার সামনে উপস্থিত হল।। দাসীরা চারদিকে ঘিরে আছে।। কিন্তু মায়া মন মরা হয়ে বসে আছে।। সমস্ত সাধ আহ্লাদ যেন মাটিতে মিশে গেছে।। খাবারের দিকে অনীহা দেখে লিয়া মায়ার অবস্থা কিছুটা বুঝতে চেষ্টা করল।। তাই লিয়া সমস্ত দাসী কে সামনে থেকে সরিয়ে বিভিন্ন কাজে লাগিয়ে দিল।। তারপর কিছুটা ইতস্থত করে বলল
.
—– রাণী মায়া আপনি””””
.
ঝট করে ওর দিকে তাকিয়ে মায়া বলল
.
—– আমি কারো রাণী নই।। আমি রাজকুমারী মায়া!!
.
—– রা-রাজকুমারী দয়া করে কিছুটা খেয়ে নিন।।
.
মায়া জবাব দিল না।। লিয়া আবারো অনুরোধ করল

—– রাজকুমারী আমি জানি আপনি খুব কষ্টে আছেন।। হয়ত আপনার কষ্ট আমি অনুভব করতে পারছিনা।। কিন্তু এভাবে না খেয়ে থাকলে আপনার কষ্ট বিন্দু মাত্র ও কমবে না।। বরং বাড়বে।। তাছাড়া সম্রাট এটা বিন্দু মাত্র পছন্দ করবে না।
.
মায়া তাকালো লিয়ার দিকে।। তারপর বলল
.
—– তুমি দাসীই তোমার সম্রাটের!! আমার তো না।।
.
—– এমন বলবেন না রাজকুমারী।। আমি আপনার দাসী।। আপনার জন্য সমস্ত কাজ করতে প্রস্তুত।।
.
—- সত্যিই কি তাই!!
.
—- অবশ্যই রাজকুমারী!!
.
—- তাহলে একটা মানুষের খবর এনে দাও।।
.
—- কার রাজকুমারী??
.
—- নাম হচ্ছে বীর!! আজকেই তাকে বন্দি করে আনা হয়েছে।। মেরে ফেলেছে কিনা সেটাই জানতে চাই।। যদি খবর নিয়ে আসতে পারো তাহলে খাবার গুলো খাবো।।
.
—- রাজকুমারী এটা””””””
.
—- আমি জানতাম তুমি পারবেনা।।
.
—- না নাহ!! তেমন না।। আমি এক্ষুনি যাচ্ছি।
.
এই বলে লিয়া বেড়ায়ে গেল।। তাকে যে করেই হোক বীর নামক লোকটার খোজ এনে দিতে হবে।। তাই সে বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করতেও কুন্ঠিত হবে না।। মহল টাই এরকম।। প্রতিটা ইটের ভাজে কত রহস্য লুকিয়ে আছে সেটা এই মহল সাক্ষী।। লিয়ার সাথে মহলের কোনো বান্ধবীর সখ্যতা আছে।। গল্পের ছলে কোনো একদিন জানতে পেরেছিল যে কারাগারেরর কোনো রক্ষীর সাথে তার সম্পর্ক আছে।। লিয়া সেটাই কাজে লাগল।। গোপনে কয়েকটা স্বর্ণ মুদ্রার বিনিময়ে ওই রক্ষীর খবর নেওয়ার জন্য অনুরোধ করল।। এবং বেশ কিছুক্ষনেরর মধ্যে খবর পেয়েও গেল।।
খবর নিয়ে দ্রুত লিয়া মায়ার কাছে হাজির হল।। লিয়া এসে দেখল মায়া এখনো মুখ ফিরিয়ে আছে।। খাবার একদম ছোয় নি।। এবারো আশে পাশে দাসী সরিয়ে দিল।। তারপর মায়ার কানের কাছে গিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল
.
—– রাজকুমারী খবর এনেছি!!
.
মায়া চোখ বড় বড় করে জিজ্ঞেস করল
.
—- কি খবর এনেছো লিয়া?? জলদি বল!! ও বেচে আছে??
.
—– শসসসহ!!
.
লিয়া ঠোটের উপর আঙ্গুল তুলে মায়া কে চুপ হতে বলল
.
—– রাজকুমারী ধীরে!! এখানে দেয়ালের ও কান কাছে।।
.
—– আচ্ছা ঠিক আছে।। এবার বল।।
.
—- রাজকুমারী আজ সন্ধায় বীর নামক একজন লোক কে আধা মরা অবস্থায় আনা হয়েছে।। সে এখনো জীবিত আছে রাজকুমারী!! কিন্তু তার কাছে যাওয়া একদম নিষিদ্ধ।।
.
—- সত্যি বলছো তো??
.
—- হ্যা রাজকুমারী সত্যিই বলছি।।
.
—- তাহলে লিয়া ওকে এখান থেকে পালিয়ে যেতে সাহায্য কর।। ওরা ওকে মেরে ফেলবে।।
.
—- রাজকুমারী আপনি””””””
.
—- লিয়া আমি তোমার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকব।। আমার এতটুকু কাজ করে দাও।।
.
—- রাজকুমারী আপনি শান্ত হোন খেয়ে নেন।। পরে যা হবে তা পরে দেখা যাবে।।
.
অগত্য মায়া লিয়ার কথা শুনে চুপচাপ খেয়ে নিল।। খাবার শেষ করতেই তার বুক জ্বলতে লাগল খানিক টা কিন্তু সে পাত্তা দিল না।। খাওয়া শেষে সবাই তাকে সুন্দর করে সাজিয়ে দিতে লাগল।। তার কক্ষকে বিভিন্ন ঝালর বাতি তে আলোকিত হতে লাগল।। এত সাজসজ্জা দেখে কৌতুহলী হয়ে মায়া লিয়া কে জিজ্ঞেস করল
.
—- এগুলো কিসের জন্য করা হচ্ছে??
.
—- রাজকুমারী আজ আপনার””””””
.
—- বল!!
.
—- আ-আজ আ-আপপনার ফু-ফুলশয্যা।
.
চমকে উঠল।। তাইতো!! আজ ওই বার্বান সম্রাটের সাথে তার ফুল শয্যা।। এই কথা তো তার এতক্ষন মাথায় আসে নি।। এখন কি হবে?? সপে দিবে কি নিজেকে?? নাকি কেড়ে নিবে তার সবকিছু জোর করে।। কেপে উঠল মায়া।। বুকের মধ্যে জ্বলুনি টা বেড়ে যাচ্ছে।। ধীরে ধীরে গলাতেও জ্বলুনি টা হচ্ছে।। জ্বলন সইতে না পেরে পানি খেয়ে ফেলল ঢক ঢক করে।। আজ তার ফুল শয্যা!! একজন খুনীর সাথে!! তার পিতা মাতার খুনীর সাথে!! তার প্রিয় বিভীষার খুনির সাথে।। ভাবতেই চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ল।। অথচ এই দিনটার স্বপ্ন সে অনেক আগে থেকে দেখে আসছে।। এমন সুন্দর স্বপ্ন টা কালক এর সাথে সাজাবে বলে ঠিক করে রেখেছিল।। দুজনে মিলে কত রঙ্গীন স্বপ্ন বুনেছে।। ঠিক করেছিল পূর্নিমায় তাদের মিলন হবে।। সেদিন সারা রাত না ঘুমিয়ে অন্ধরী নদীতে রাজ বোটে ভেসে বেড়াবে।। কালক দাড় বাইবে আর মায়া পানি নিয়ে খেলবে।। মাঝে মাঝে কালক এর গায়ে দুষ্টুমি করে পানি ছুড়ে মারবে।। তারপর মন ভরে চাদের অালো উপভোগ করবে।। কিন্তু এইসব এখন মাত্র স্মৃতি।। যেটা তাকে সারা জীবন তাড়িয়ে বেড়াবে।।
.
—– রাজকুমারী আপনি কাদঁছেন??
.
লিয়ার কথায় মায়ার হুশ এলো।।
.
—- তেমন কিছু না।।
.
—- রাজকুমারী আপনি চিন্তা করবেন না।। সম্রাট আপনাকে ভীষন ভালোবাসবে।
.
লিয়া দিকে তাকিয়ে মায়া বলল
.
—- লিয়া তুমি কি কখনো কাউকে ভালোবেসেছো??
.
—- রাজকুমারী “”””
.
—- বলো লিয়া!!
.
—- জি রাজকুমারী!!
.
—- তুমি তার সাথে স্বপ্ন দেখ না।।
.
—- দেখি রাজকুমারী!!
.
—- তাহলে তোমার সেই সাধনার পুরুষ কে হত্যা করে যদি অন্য কারো সাথে তোমার বিয়ে হয়, তার সাথে স্বপ্ন দেখতে বলা হয় তাহলে তুমি কি পারবে??
.
—– রাজকুমারী!!!!!
.
তারপর ধীরে ধীরে লিয়া বলল
.
—- আ-আমি পারবোনা রাজকুমারী!!!
.
—- তাহলে লিয়া আমি কিভাবে পারি?? আমিও তো রক্ত মানুষ।। আমার ও কষ্ট আছে, আমারও ব্যাথা হয়!!!
.
—- আমি দুঃখিত রাজকুমারী।।
****
রাত গভীর হতে চলেছে।। কিন্তু অলোকের দেখা নেই।। মায়া একা একা বসে আছে বুকের আর গলার জ্বলন টা বেড়ে গেছে।। ঘুমের জন্য তার চোখ ভেঙে আসতে চাইছে।। অথচ সে ভয়ে ঘুমাতে পারছেনা।। যদি ওই বার্বান সম্রাট উল্টা পাল্টা করে তার সাথে??
ভাবতে ভাবতে শুধু দীর্ঘ শ্বাস বেড়িয়ে আসছে।। জানালা গলে আসছে চাদের আলো।। মায়া বিছানা ছেড়ে নিচে নেমে এলো।। তারপর জানালার ধারে।। পূর্নিমা।। সাদা গোল হীরের টুকরার মত চাঁদ উঠেছে।। তার নরম স্নিগ্ধ আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে সবখানে।। এমন একটা পূর্নিমা রাতে কালক এর সাথে স্বপ্ন দেখেছিল মায়া।। যেটা অন্য কারো হাতে নষ্ট হতে যাচ্ছে।।
.
কতক্ষণ ধরে মায়া চাঁদ কে দেখছে তার মনে নেই।। হঠাৎ কোমড়ে কারো হাতের স্পর্শ পেতেই মায়া চমকে উঠল।। তড়িগড়ি করে দেখতে চেয়েও পারলো না।। কারন হাত দুটো তাকে পিছন থেকে শক্ত করে ধরে আছে।। তার পেটে হাত বুলাচ্ছে।। অসস্থি হতে লাগল মায়ার।। তথাপি সে বুঝে গেল কে হতে পারে।। কার সাহস আছে এখানে প্রবেশ করার।।
.
অলোক ফিস ফিস করে তার কানে বলল
.
—– আমার মায়া!!
.
মায়া খানিকটা ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করল
.
—– কে-কে এ??
.
—- তোমার সম্রাট!!

—- ছা-ছাড়ুন আমাকে!!

—- কখনোই না!!
.
এই বলে অলোক মায়ার মাথার উপর থেকে ফিন ফিনে ওড়না টা নিয়ে ফেলল।। ওড়না টা নিতেই মায়ার বুকটা ধক ধক করতে লাগল।। অলোক কি এখন তার উপর ঝাপিয়ে পড়বে??
.
—- আ-আমাকে ছেড়ে দিন দয়া করে!!
.
মায়ার চুল খুলে তার মিষ্টি সুঘ্রাণ নিতে নিতে বলল
.
—– মায়া তোমার কথায় আমি ওই ছেলে টাকে শাস্তি দিই নি।। তার জন্য আমি কি অল্প ইনামেরও যোগ্য না??
.
—– আ-আপনি ও-ওকে ছেড়ে তো দেন নি।। ও তো নির্দোষ ছিল সম্রাট।।
.
মায়ার গলায় চুমু খেল অলোক।। এই প্রথম বার অলোকের স্পর্শে তাকে শিউরে উঠতে হচ্ছে।। কাপুনি উঠছে বুকে।।
.
—- কেন ছেড়ে দিব?? আমার মায়া কে নিয়ে যাওয়ার জন্য?? কখনো না!!
.
মায়া অলোকের দিকে ফিরল।। তার চোখে পানি টল টল করছে।। যে কোনো মুহুর্তে গড়িয়ে পড়তে সময় লাগবেনা।।
মায়া সামনে ফিরলে অলোক দু হাতে মায়ার মুখ খানা ধরে চুমু খেতে চাইল।। কিন্তু তার আগে মায়া মুখ ফিরিয়ে নিল।। আর সেটা অলোকের পছন্দ হল না।। ক্রুদ্ধ হয়ে সে দুই আঙ্গুলে মায়ার মুখ চেপে ধরে নিজের কাছাকাছি আনল।।
.
—– কেন এত প্রেম বীরের জন্য?? তার ছিটে ফোটা কি আমি পেতে পারি না?? তুমি জান আমি কখন থেকে তোমার অপেক্ষা করেছি?? যেদিন প্রথম দেখেছিলাম সেদিন থেকে।। যেদিন তুমি শিকারে গিয়েছিলে সেদিন থেকে।। একটা রাত ঠিক মত ঘুমাতে পারি নি।। শুধু জেগে জেগে তোমার স্বপ্ন দেখেছি।। প্রস্থাব পাঠিয়েছি তোমার পিতা রাজা মৈনাক কে।। প্রতিবারই তিনি নাকচ করেছেন।। আমি অনুরোধ জানিয়েছি।। কিন্তু আমার অনুরোধ রাখেন নি।। এরপর ক্রিষ্টার রাজা কালক এর সাথে তোমার বিয়ে দিতে রাজি হন।। কত বড় সাহস তার?? আমার মায়া কে অন্য কারো সাথে বিয়ে দিতে চান?? অন্য কেউ আমার মায়া কে স্পর্শ করবে ভাবতেই আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি লাম।। কোনো উপায় না দেখে যুদ্ধ ঘোষণা করলাম।। শুধু তোমাকে পাওয়ার জন্য।। যদি এর জন্য আরো লাখোর প্রাণ নিতে হয় তাহলে কার্পন্য করব না।। বীর সেখানে কি ই বা করবে???
.
এত টুকু বলে অলোক মায়ার দিকে তাকালো।। কিন্তু মায়া চোখ বন্ধ করে আছে।।
.
—- মায়া!!
.
গালে হাত দিয়ে মায়া কে ডাকল।। কিন্তু মায়া সাড়া দিল না।। ঢলে পড়ল অলোকের বুকে।। তবে মায়ার মুখ বেয়ে ফেনা গড়িয়ে পড়তে লাগল।।
.
(চলবে).
.
কেমন লাগল জানাবেন??

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here