Story – Every Thing Is Fair In Love And War Writer – Nirjara Neera Part – 15.

0
541

Story – Every Thing Is Fair In Love And War
Writer – Nirjara Neera
Part – 15……………………

অনেক কষ্টে হাতের উপর ভর দিয়ে একটু উচু হলেও অলোক কে দেখে মাত্র আবারো ধপাস করে পড়ে গেল মায়া।। চেহেরা ধূলায় মন্ডিত হয়ে গেল।। তারপর আবারো অনেক কষ্টে উঠে দাড়ালো।। অলোকের চেহেরার দিকে তাকিয়েই ঢোক গিলল মায়া।। তার শরীরে মধ্যে কে দেখে শিরশিরে অনুভব হচ্ছে।। পিঠের মেরুদণ্ড বেয়ে এটা শীতল স্রোত বয়ে যাচ্ছে।। ভয়ে মুখ খানা পাংশু হয়ে যাচ্ছে।। কিন্তু অলোক নির্বিকার ভাবে ওর দিকে তাকিয়ে আছে অনুভুতি হীন দৃষ্টিতে।।
মায়ার মনে হচ্ছে এখান থেকে দৌড়ে পালানো দরকার।। কারন সে ধরা পড়তে চাই না, তাকে বিয়ে করতে চাই না।। সে তার রাজ্যে ফিরে যেতে চাই।। তাই কিছু না ভেবে এক পা পিছিয়ে দৌড় মারল।। দৌড়াতে গিয়ে পিছনে একটু তাকিয়ে দেখল অলোক আসছে কিনা।। নাহ!! ও আসছে না।। এখনো সেখানে দাড়িয়ে আছে।। আর এক দৃষ্টিতে ওকে দেখছে।। একটু প্রশান্তি এলো মায়ার মনে।। কিন্তু বেশিক্ষণ এর জন্য না।। হঠাৎ সাই করে একটা তলোয়ার মাথার উপর দিয়ে উড়ে এলো।। তারপর সেটা মায়ার কিছু দুরের সামনে মাটিতে গেথে গেল।। সেটা নিজের সামনে দেখেই মায়া থেমে গেল।। তারপর ঝট করে পিছন ফিরল।। দেখল অলোক অনেক দূরে দাড়িয়ে আছে।। হাতে তলোয়ারেরর খাপটা।। এক পাও মায়ার পিছে পিছে আসেনি।। কিন্তু তলোয়ার টা ছুড়ে মেরেছে।। আর সেটা মায়ার সামনে এসে গেথে গেছে।। যেন মায়াকে সতর্ক করছে।। আবার সামনে ফিরে তলোয়ার টার দিকে তাকালো মায়া।। সামান্য তলোয়ার টা যেন তার পথ রোধ করে আছে।। সে যেন সামনে আর দৌড়াতেই পারছেনা।। পা যেন আটকে গিয়েছে।। এরপর মায়া সামনে কিছু লোকের শোরগোল শুনতে পেল।। যেন কোনো কিছু নিয়ে অনেক জন লোক উল্লাস করছে।। শোরগোল শুনে মায়া পিছে হঠতে লাগল।। দু এক কদম পিছে হঠতেই তার পিঠ টা একটা গাছের সাথে ঠেকে গেল।। পিঠ ঠেকতেই চমকে উঠেই পিছনে তাকালো।। দেখল কোনো গাছের সাথে পিঠ ঠেকেনি।। অলোকের বুকের সাথে মায়ার পিঠ ঠেকে গিয়েছে।।
মায়া খুবই অসহায় বোধ করতে লাগল।। তার পিতা কে ভীষন মনে পড়তে লাগল।। মনে পড়তে লাগল প্রাসাদের সে মধুর সময় গুলি।। যখন সে তন্ময় হয়ে বীণা বাজাত আর সবাই মুগ্ধের মত তার সুর শুনত।। কি এমন পাপ করেছিল যার জন্য আজকে তাকে এই পরিস্থিতি তে পড়তে হচ্ছে।। একটা বুক ফাটা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এলো।। চোখ ফেটে জল আসতে চাইছিল।। মায়া কি করবে বুঝতেই পারছেনা।। এ সময় কালক থাকলে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলত
.
ওগো সবুজ নয়না রাজকুমারী
কি হয়েছে তোমার??
সবুজ সবুজ ডাগর চোখে
মুখটি কেন ভার!!
.
এই বলে একটা দিল খোলা হাসি দিত আর সে হাসিটা দেখেই মায়া সব দুঃখ ভুলে যেত।। মুখে হাসি ফুটে উঠত।।
ঠিক এখনো কালক এর কথা ভাবতেই চারদিকের কথা ভুলে গেল।। আপন মনেই মুখে হাসি ফুটে উঠল।। কিন্তু পরক্ষনেই আশে পাশের আওয়াজে হাসিটা মিলিয়ে গেল।। তাকিয়ে দেখল এক দল বার্বান সৈন্য তার আশে পাশে দাড়িয়ে।। মনে হল এতক্ষন তাদের উল্লাসই কানে আসছিল।। এরপর আরো ভয়ংকর অবস্থা দেখল মায়া।। বার্বান সৈন্যদের হাতে বীর আধা মরা অবস্থায় বসে আছে।। মায়ার প্রাণ টা কেপে উঠল বীর কে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখে।। বীর তাকেই উদ্ধার করতে এসেছিল।। কিন্তু তাকে উদ্ধার করতে এসেই তার এই অবস্থা।। নিজের উপর প্রচুন্ড ঘৃণা হতে লাগল।।
দৌড়ে বীরের কাছে চলে গেল মায়া। তারপর হাটু গেড়ে বসে দুহাতে ওর মুখটা ধরল
—– বী-বীর!!
বীর জবাব দিল না। তার চোখ দিয়ে গড় গড়িয়ে পানি ঝড়তে লাগল। কিন্তু এ সময় কেউ একজন পিছন থেকে তার হাতটা ধরে এক হেচকা টানে উপরে তুলে ফেলল।। মায়া তাকিয়ে দেখল এটা অলোক।। তার দিকে ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।। এরপর একজন সৈন্য অলোকের হাতে তার তলোয়ার টা তুলে দিল।। অলোক এক হাতে মায়া কে ধরে অপর হাতে তলোয়ার টা বীরে গলায় ধরল।। তা দেখে মায়ার রক্ত শীতল হয়ে এলো।। অলোক কি বীর কে হত্যা করতে যাচ্ছে?? কিন্তু মায়া তা কখনো চাই না।। অলোক বীর কে মারার জন্য তলোয়ার উপরে তুলল আর মায়া সাথে সাখে অলোক কে ঝাপটিয়ে ধরল চিৎকার করে কান্না করতে করতে বলল
—- আ-আমি আর ক-কখনো পালিয়ে যাব না, কোনো কিছু ভাঙবো না, যা বলবেন সব শু-শুনবো!! শুধু বী-বীর কে ছেড়ে দিন।। ও-ও নির্দোষ।। ও কিছু করে নি!!
এবার অলোক মায়ার দিকে তাকালো।। সবুজ চোখ থেকে অবিরাম পানি ঝড়ে চলেছে।। ওই সবুজ চোখের মধ্যে নিজের প্রতিবিম্ব দেখতে পেল।। তারপর প্রথম বারের মত কথা বলল
.
—– ওকে মরতেও হবে তোমাকে আমার কথাও শুনতে হবে মায়া।। শাস্তি পেতে হবে সবকিছুর।।
.
এই বলে অলোক আবারো তলোয়ার তুললে মায়া ঘাবড়ে গেল।। তাড়াতাড়ি তলোয়ার টা ধরে অলোক পায়ে পড়ল
.
—- সম্রাট ওকে ছেড়ে দেন।। আমি সারা জীবন আপনার দাসী হয়ে থাকব।।
.
—- দাসী না।। তোমাকে আমার রাণী বানাতে চেয়েছিলাম।। কিন্তু তুমি তার অমর্যাদা করেছো।। পালিয়েছো!!
.
মায়া চোখ মুছে বলল
—– আর কখনো পালাবো না।। কখনোই না।।
.
—– তোমাকে বিশ্বাস করি না।।
.
তারপর সৈন্যদের দিকে তাকিয়ে ইশারা করে বললেন
.
—– নিয়ে যাও একে।
অলোক তলোয়ার টা খাপে ঢুকালো।। তারপর এক হাতে মায়াকে সরিয়ে দিয়ে বীর কে ধাক্কা দিয়ে নিজ সৈন্যদের হাতে তুলে দিল।। মায়া হা করে তাকিয়ে দেখল।। হয়ত তাকে মেরে ফেলার জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।। ডুকরে কেদে উঠে মায়া যখন বীর কে ধরতে চাইলে অলোক সে সুযোগ দিল না।।
ঝট করে মায়া কে কাধে তুলে নিল।। তারপর বিপরীতে নিয়ে যেতে লাগল।। মায়া চাপড়াতে চাপড়াতে কাদতে লাগল।। তারা তার দোষে বীর কে নিয়ে যাচ্ছিল।। অথচ সে নির্দোষ।। মায়া নিজেকে ছাড়াননোর জন্য আপ্রান চেষ্টা করছে।। কিন্তু অলোক এক হাতে তার কোমড় কে সাপের মত পেচিয়ে ধরেছে।। অসহায়ের মত কান্না করকে লাগল মায়া।। জীবন টাকে তার ব্যর্থ বলে মেনে হচ্ছে।। না মরতে পারছে না জীবিত থাকতে পারছে।।
.
অলোক মায়া কে প্রাসাদে নিয়ে এলো।। এরপর তাকে বেদীর উপর দাড় করিয়ে দিল।। সবাই চুপচাপ চারপাশে দেখছে।। কিন্তু কেউ কথা বলার সাহস পাচ্ছে না।। এমন কি রাণী ইরাভ, রাজকুমারী অধরা আর রক্ষিতা সিরাত ও।। হাত নিশ পিশ করছে সিরাতের।। সে বুঝতে পারছে কি হতে চলেছে।। তথাপি কিছুই করতে পারছে না।। তারপর দরাজ গলায় কাউকে অলোক ডাকল
.
—- অনক্য কোথায়??
.
নিজের নাম শুনে বৃদ্ধ অনক্য গুটি সুটি পায়ে এগিয়ে এল।। তারপর অলোকের সামনে দাড়ালে অলোক বলল
.
—- বিয়ে পড়াও আমাদের!!
.
—- যথা আদেশ সম্রাট!!
.
এক হুকুম, এক নির্দেশ।। কোনো নড়চড় হওয়ার উপায় নেই।।
মায়া চুপচাপ অলোকের পাশে বসে ছিল।। অনক্য তাদের বিয়ে পড়াচ্ছে।। কিন্তু তাতে মায়ার কোনো অনুভুতি হচ্ছে না।।
ধীরে ধীরে মন্ত্রের উচ্চারন বাড়তে লাগল।। সুর গুলো দেয়ালে প্রতিধ্বনিত হয়ে ফিরে আসছিল।। মনে হচ্ছে না কোনো বিয়ে হচ্ছে।। মনে হচ্ছে কোনো মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং এখানে তার শোক পালন হচ্ছে।। সত্যিই এখানে মৃত্যু ঘটছে।। আর সেটা মায়ার আত্মার।। তিলে তিলে মৃত্যু বরন করছে।।
.
এরপর অলোক তার হাত কেটে কয়েক ফোটা রক্ত আগুনে দিল।। এই রক্তের ফোটার সাথে মায়াকে নিজের রক্তের রন্ধে রন্ধে মিশিয়ে ফেলল।। যেখানে থেকে মায়া নিজে কে কখনো ছাড়াতে পারবেনা।। অনক্যর দেয়া তাগা অলোক মায়া কে বেধে দিল।। এরপর আরো কিছু নিয়ম রীতির মাধ্যমে বিবাহ সম্পন্ন হয়ে গেল।। অনক্য ঘোষনা দিল এখন থেকে ঈরানভা রাজকুমারী পরিচিত হবে বার্বান সম্রাটের রাণী হিসেবে।। সবাই তাকে রাণী মায়া বলে জানবে।। এখন থেকে তার পরিচয় বার্বান রাণী হিসেবে।। অন্যথায় এর বিরুদ্ধাচার যদি কেউ করে তাহলে তাকে শাস্তি পেতে হবে।।
.
পুরো রাজ্যে জুড়ে খুশির রোল বয়ে গেল।। তারা নতুন রাণী কে পেয়েছেন।। মহলের সবাই খুশি হয়ে গেলেন।। চারদিকে শুধু মনি মানিক্য বিতরন চলছে।। শুধু খুশি নেই মায়া।। ওহ্ রাণী মায়া!! বিয়ের পরই তাকে সম্রাটের কক্ষে আনা হয়েছে।। আর দাসী দের সংখ্যা বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে।। রাণী মায়া যেন এক মুহুর্তের জন্য চোখের আড়াল না হয়।।
সবাই তার গোসলের ব্যবস্থা করছে।। কেননা ধূলায় মন্ডিত অবস্থায় অলোক তাকে বিয়ে করেছে।। বিয়ে করার পর তার প্রথম নির্দেশ ছিল তাকে রাজকীয় গোসল খানায় যেন গোসল করানো হয়।। শুনে মায়া কিছু বলেনি।। চুপচাপ যা বলেছে তাই করেছে।। দাসী লিয়াও মায়ার আশে পাশে ছিল।। কিন্তু করুন একটা দৃষ্টি নিক্ষেপ করা ছাড়া লিয়ার আর কোনো কিছু করার ছিল না।। সে যথা সম্ভব চেষ্টা করছে তার মনটা ভালো করার জন্য।। কিন্তু রাণী মায়া কিছুতেই তার দিকে ফিরেও তাকাচ্ছে না।।
.
(চলছে)
.
জানি ছোট হয়েছে।। আমি দুঃখিত তার জন্য।।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here