Story – Every Thing Is Fair In Love And War Writer – Nirjara Neera . Part – 14

0
542

Story – Every Thing Is Fair In Love And War
Writer – Nirjara Neera
.
Part – 14…………………….

দাসী লিয়া মায়ার পাশেই আছে।। সে যেন এক মুহুর্তের জন্য তাকে চোখের আড়াল করছে না।। হয়ত সেটা ও তার সম্রাটের নির্দেশ।। তার দিকে তাকিয়ে মায়া তাকে পানি দিতে বলল।। মাথা নাড়িয়ে লিয়া পানির পাত্র থেকে পানি ঢেলে দেবে ঠিক সেই মুহুর্তে ভারী দরজা টা ঠেলে কেউ ভিতরে আসল।। ভিতরে ঢুকলো একজন দাসী।। মাথা নত করে অভিবাদন জানিয়ে বলল যে সে তাকে এ মুহুর্তে নিয়ে যেতে এসেছে।। শুনে মায়ার ধুক ফুকানি কিছুটা বেড়ে গেল।। শুকনা ভাবে হেসে সম্মতি জানালো।। তারপর লিয়া পানির পাত্র এগিয়ে দিলে মায়া পানি না খেয়ে লিয়া কে বলল
.
—– ওকে চলে যেতে বল।। তুমি গেলে হবে আমার সাথে।।
.
—- কিন্তু রাজকুমারী সম্রাট তো “””””
.
—- যা বলছি তাই কর!!!
.
মায়া ধমকে উঠল।। ধমক খেয়ে লিয়া কাচুমাচু হয়ে ওই দাসী কে বিদায় করতে চাইল।। কিন্তু ওই দাসী মায়া কে ছেড়ে যেতে নারাজ।। তখন ওই লিয়াও ঐ দাসী কে ধমক দিল।। ধমক খেয়ে গাই গুই করতে করতে ওই দাসী চলে গেল।।
.
.
মায়া মহলের মাঝ বরাবর রাস্তা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।। পিছে পিছে চলছে লিয়া।। সে পথ দেখিয়ে দিচ্ছে।। পাতলা ঘোমটার ভিতর থেকেও মায়া ইতি উতি তাকিয়ে বীর কে খুজছে।। কিন্তু কোথাও পাচ্ছে না।। পানির তৃষ্ণা পাওয়ার পরও পানি না খাওয়ায় তার গলা ফেটে যাচ্ছে।। কিন্তু ভ্রুক্ষেপ করল না।।
কিছুক্ষন পর মায়া লক্ষ করল যে আশে পাশে যেসব সৈন্য থাকার কথা সেগুলা দেখা যাচ্ছেনা।। মহল খালি রেখে কোথায় গেল?? এমন টাই ভাবছিল সে।। ঠিক সে সময় সামনে থেকে এক ঘোমটা পরিহিত মহিলা ডালা হাতে ধীর গতিতে এগিয়ে আসছে।। দেখেই মায়া বুঝে গেল যে এটা বীর।। খুশি হতে লাগল আর সে সাথে ভয় হতে লাগল।। যদি পালাতে না পারে??
.
যতই বীর এগিয়ে আসছিল ততই মায়া অস্থির হয়ে পড়ছিল।। ভয় বেড়ে যাচ্ছিল।। বীর পাশ কাটিয়ে যেতেই মায়া চোখ বন্ধ করে ফেলল, চলা থামিয়ে ফেলল।। চোখ খুলল লিয়ার ডাকে।।
.
—- রাজকুমারী!!!
.
পিছনে ফিরল মায়া।। ফিরেই তার রক্ত জমে গেল।। কারন লিয়ার পিছনে বীর দাড়িয়ে।। কিন্তু লিয়া তাকে দেখেনি।। মায়া ওখানে দাড়িয়ে একটা ঢোক গিলল।। তারপর সে দেখল যে বীর তার খঞ্জর টা বের করছে।। মায়া চোখ বন্ধ করে ফেলল।। সে আর রক্ত দেখতে চাই না।। চাই না কোনো নিরপরাধের জীবন যাক।। তাই ঝট করে আবার চোখ খুলে ফেলল।। বীর লিয়ার গলায় পোছ মারার আগেই মায়া বীরের হাত ধরে ফেলল।। যেমন চমকে উঠল বীর ঠিক তেমনি লিয়া।। মায়ার ব্যবহারে বীর হতবাক।। তথাপি সে সময় নষ্ট করতে রাজি না।। তাই অপর হাতের শক্ত ডালা দিয়ে লিয়ার ঘাড়ে একটা বাড়ি দিয়ে দিল।। লিয়া চোখ বড় বড় করে ফেলল।। তারপর একটু কেপে উঠেই ধপাস করে নিচে পড়ে গেল।। মায়া তাড়াতাড়ি বলে উঠল
.
—- বীর!! কি করলে এটা??
.
—- রাজকুমারী ওর কিছু হয় নি!! সামান্য বেহুশ হয়েছে।। চলেন তাড়াতাড়ড়ি।।
.
এই বলে মায়া কে আর কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে তার হাত ধরে জোরে টান দিল।। কিছুটা ব্যাথা পেলেও মায়া বীরের সাথে দৌড়াতে লাগল।।
.
বেশ কিছুক্ষন হয়ে যাচ্ছে।। কিন্তু মায়া এখনো আসছেনা।। যতই সময় গড়াচ্ছে ততই অলোকের দুশ্চিন্তা বেড়ে যাচ্ছে।। এত সময় নিচ্ছে কেন মায়া?? শেষে অধৈর্য্য হয়ে ওই দাসী কে জিজ্ঞেস করল
.
—– মায়া কোথায়?? ও এখনো আসে নি কেন??
.
দাসী টি নত মুখে জবাব দিল
.
—– সম্রাট আমি আনতে গিয়েছিলাম।। কিন্তু ঈরানভা রাজকুমারী বলেছিল সে নাকি আমার সাথে আসবেনা।। উনি দাসী লিয়ার সাথে আসবেন।।
.
অলোক চিন্তায় পড়ে গেল।। তাই আবার ওই দাসী কে দেখার জন্য পাঠালো।। কিন্তু পাঠানোর কিছুক্ষন পরেই দাসী টি হন্ত দন্ত হয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে চলে এল।। হাপাতে হাপাতে বলল
.
—- স-সম্রাট!!
.
—- কি হয়েছে!!!

—- স-সম্রাট ও ও খানে??
.
দাসী টি থেমে গেল।। কিন্তু অলোকের ধৈর্য্য হচ্ছিল না শোনার জন্য।। সে ধমকে উঠল
.
—- বল কি হয়েছে??
.
—- সম্রাট দাসী লিয়া ওখানে পড়ে আছে আর ঈরানভা রাজকুমারী আশে পাশে নাই।।
.
কথা শুনে অলোক ধপ করে জ্বলে উঠল।। চুপচাপ তারপর দাড়িয়ে গেল।। তারপর একটা চিৎকার দিয়ে সামনে বেদীর উপর রাখা সমস্ত কিছু লাথি দিয়ে ফেলে দিল।। সন্ন্যাস ধরনের বৃদ্ধ গুলো লাফিয়ে নিচে নেমে গেল।। কারন এই মুহুর্তে অলোকের কাছাকাছি থাকা বিপদ জনক। কখন কার প্রাণ যায় বলা যায় না।
.
তারপর ক্রুদ্ধ অলোক চিৎকার করে রাজ্যের দ্বার, মহলের দ্বার সব কিছু বন্ধ করে দেয়ার জন্য ঘোষনা দিল।। এরপর চোখ বন্ধ করে বড় করে একটা নিঃশ্বাস টেনে নিয়ে মনে মনে বলল
.
—– মায়া তুমি ভালো করলে না।। একদম না।। এতদিন অামার ভালো রুপ দেখেছো।। এবার দেখবে বার্বান সম্রাটের ভয়ঙ্কর রুপ কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে!!!
.
.
মায়া আর বীর ঘোড়ায় করে ছুটে চলেছে।। যত দ্রুত সম্ভব বার্বান রাজ্যের সীমানা পেরিয়ে যেতে হবে।। তার আগে তারা নিরাপদ নয়।। বীর তার বেশ পরিবর্তন করে তার ছদ্মবেশ ধারন করেছে।। মায়াও তার কাপড়ের উপরে বড় মোটা ওড়না পেচিয়ে নিয়েছে।। ছুটতে ছুটতে তারা ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল।। কিন্তু থামল না।। মায়া পানির তৃষ্ণা টা আর সহ্য করতে পারলো না।। একটা স্বচ্ছ পানির জলা দেখে ঘোড়া থামিয়ে দিল।। তার দেখা দেখি বীর ও নেমে এলো।।
.
—– রাজকুমারী কি হয়েছে?? থেমেছেন কেন?? আমাদের দ্রুত এখান থেকে বেরুতে হবে।। না হলে ওদের হাতে ধরা পড়বো।।
.
—– বীর আমার তৃষ্ণা পেয়েছে।। আমি আর পারছি না।।
.
এই বলে মায়া নামতে চাইলে বীর বাধা দিল।। তারপর নিজে গিয়ে কচু পাতায় করে তার জন্য পানি এলো।। বীর কচু পাতায় পানি এনেছে এটা নিয়ে মায়া ভাবলো না।। বরঞ্চ তার পানিটা অনেক মিষ্টি বলে মনে হল।। ঢক ঢক করে সমস্ত পানি একটানে পান করল।। পানি গুলো থেকে হালকা গন্ধ আসছিল।। কিন্তু মায়া ভ্রুক্ষেপ করল না।। বরঞ্চ তৃপ্তিকর ঢেকুর তুলল।। ক্লান্ত হয়ে পড়েছে সে।। শরীর টা বিশ্রাম চাইছে।। চোখ দুটো ভারী হয়ে আসছে।। তাই সে বীর কে বলল
.
—– আমার খুব ক্লান্তি লাগছে।। একটু ঘুমিয়ে নিই?? অনেক দূরে এসেছি।। এদিকে খুজতে ওরা আসবে না।।
.
—– না রাজকুমারী!! সেটা সম্ভব না।। কারন ওরা গুপ্তচর লাগিয়ে দিয়েছে চারদিকে।। কখন কে দেখে ফেলে ঠিক নেই।।
.
—– কিন্তু বীর আমার খুব ঘুম পাচ্ছে।।
.
.
বীর কে শেষ পর্যন্ত মায়ার কথায় হার মানতে হল।। ঠিক হল একটু আড়ালে আছে এমন স্থানে কিছুক্ষন ঘুমাবে।। আর বীর পাহারা দেবে।। যেমন কথা তেমন কাজ।। বীর তার পাগড়ি খুলে বিছিয়ে দিল।। আর মায়া সেখানে শুয়ে পড়ল।। চোখে নেমে পড়ল রাজ্যের ঘুম।। বীর ও ক্লান্ত ছিল।। তাই ঠান্ডা ফুরফুরে বাতাসে সে ঘুমে হারিয়ে গেল।।
.
ধীরে ধীরে বিকেল নেমে এলো।। বার্বান সৈন্যরা চারদিকে ছিটিয়ে আছে।। রাজ্যের দ্বার বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।। রাজ্যের বাইরে তেমন কেউ বের হয় নি প্রমান পেয়ে রাজ্যের ভিতরে তল্লাশী চালাতে লাগল।। বার্বান রাজ্য থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার বিভিন্ন গুপ্ত পথে হানা দিচ্ছে।। মায়া আর বীরও তেমন চোরা রাস্তায় যাওয়ার পথিমধ্যে শুয়ে ঘুমাচ্ছিল।। তারা জানত না তাদের উপর কি নেমে আসছে।। কি ধরনের বিপদ ঘনিয়ে আসছে!!
.
সন্ধার অাগ মুহুর্তে একটা পোকার কামড়ে বীরের কিছুটা নড়ে চড়ে উঠল।। কিছুটা হুশ এলো।। কিন্তু ঘরে ঘুমাচ্ছে ভেবে সে পাত্তা দিল না।। তারপর কানে ঘোড়ার খুড়ের শব্দ কানে উঠল।। সাথে সাথে বীরের কান বিড়ালের কানের মত খাড়া হয়ে গেল।। সত্যি শব্দ টা ঘোড়ার খুরের।। তড়াক করে লাফিয়ে উঠল। উঠেই আড়াল থেকে চারপাশে তাকিয়ে দেখল।। দেখেই নিজের বেকুবির জন্য কপাল চাপড়াতে লাগল।। কারন চারপাশে বার্বান সৈন্য ছড়িয়ে পড়েছে।। তাদের কিছু দূরেও বার্বান সৈন্যরা আসা যাওয়া করছে।। হয়ত মায়া কে খুজছে।। মায়া!!! মায়া কোথায়?? পিছন ফিরে বীর দেখল মায়া এখনো অঘোর ঘুমে।। যেন অনেক দিনের ক্লান্তি এক সাথে চেপে এসেছে।। বীর আর দেরী করল না।। মায়া কে টেনে তুলল।। তুলেই ঘোড়ার ধরে ঘোড়ার পিঠে তুলে দিল।। আচমকা ঘুম ভাঙাই মায়া চমকে উঠল।। টাল মাটাল ভাবে পড়ে যেতে লাগল।। কিন্তু বীর ধরে ফেলল।।
.
—– রাজকুমারী!!! চোখ খুলুন!! আমাদের চার পাশে বার্বান রা।।
.
—- কি??

বার্বান নাম শুনতেই মায়ার চোখ থেকে ঘুম পালিয়ে গেল।। চারদিকে তাকিয়ে আফসোস হতে লাগল।। কি করল সে?? বীর তাকে তাড়া দিল।। যদি এই সময় যাওয়া না যায় তাহলে নির্ঘাত তাদের কপালে মৃত্যু লিখা আছে।।
সুতরাং আবারো ছোটা শুরু হল।। আর এবার বেশি দূর এগোতে পারলো না।। ধরা পড়ে গেল বার্বান সৈন্য দের হাত।। চারদিকে বার্বান সৈন্যরা ঘিরে ফেলেছে তাদের।। বিপদ টের পেল বীর।। তাই সে মায়া কে বলল
—- রাজকুমারী বার্বান রা ঘিরে ফেলছে।। আপনি এই দিকে দিয়ে চলে যান।। আমি ওদের আটকাচ্ছি।। এদিকে সোজা চলে যাবেন।। যেতে যেতে শেষ সীমানার কাছে পৌছাবেন।। ওখানে আপনার জন্য একজন লোক অপেক্ষা করবে।। বাকিটা ওই লোকটা দেখিয়ে দিবে।।
মায়া বুঝতে না পেরে বলল
.
—- তাহলে তু-তমিই কোথায় যাবে?? তোমাকে পেলে তো ওরা মেরে ফেলবে তোমাকে??
.
—- রাজকুমারী ওরা আমাকে চিনেনা।। তাই সমস্যা হবে না।। আপনি যান।। ওরা আপনাকে খুজতেছে।।
.
—- কিন্তু””””””
.
—- কোনো কিন্তু নই রাজকুমারী!! আপনি যান!!
.
মায়া আর কিছু ভাবল না।। অন্ধ ভাবে ছুটতে লাগল।। ছুটতে লাগল কোথায় সে জানে না।। শুধু জানে সোজা দৌড়াতে হবে ততক্ষণ পর্যন্ত যতক্ষণ না একজন লোকের দেখা পাই।। যে তার জন্য অপেক্ষা করছে।। এভাবে অনেক ক্ষন ছোটার পর হঠাৎ তার ঘোড়া ভয়ংকর ভাবে হোচট খেল।। হোচটে ঘোড়া টা লাফিয়ে উঠল।। লাফিয়ে উঠার সাথে মায়ার গায়ের মোটা ওড়না টা উড়ে গেল।। ঘোড়া নিজেকে সামলাতে পারলেও মায়া টাল সামলাতে পারলো না।। ঘোড়ার উপর থেকে ধপ করে মায়া নিচে পড়ে গেল।। উপুর হয়ে পড়ায় কিছুটা ধুলা তার নাকেও প্রবেশ করল।। নিচের মাটি গুলো পাথুরে মাটি হওয়ায় মায়া বেশ ব্যাথা পেল।। হাত পা ছিলে গেল।। ব্যাথা পাওয়ার পরও মায়া উঠতে চেষ্টা করল।। কিন্তু হাতে ব্যাথা পাওয়ায় জোর পাচ্ছিল না।। অনেক কষ্টে হাতের তালুতে ভর দিয়ে যখন একটু মাথা তুলল তখন এক জোড়া পা তার নজরে এল।। পা দেখে মায়া খুশী হয়ে গেল।। হয়ত এই লোকটাই তার জন্য অপেক্ষা করছে।। তাই খুশি মনে আরেকটু মাথা তুলে দেখতেই তার হাসি মিলিয়ে গেল।। চোখ মুখ শুকনা হয়ে গেল।। চার দিক টা কেমন নিশ্চুপ হয়ে এলো।। তাকিয়ে দেখল কোনো লোক দাড়িয়ে নেই।। দাড়িয়ে আছে বার্বান নিষ্টুর শাসক…
.
সম্রাট অলোক কুঞ্জ!!!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here