Story – Every Thing Is Fair In Love And War Writer – Nirjara Neera Part – 31

0
667

Story – Every Thing Is Fair In Love And War
Writer – Nirjara Neera
Part – 31…………………..

মায়া সকালে ঘুম থেকে উঠেই নিজেকে অবিন্যস্ত অবস্থায় বিছানায় পেল।। কাপড় চোপড় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।। ঘাঘরা টা মেঝেতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।। বুকের জামাটা বিছানার কোনায় পড়ে আছে।। শুধু মাত্র অন্তর্বাস গায়ে শুয়ে অাছে সে।। কি হয়েছে বুঝতে পেরে বিছানা থেকে আর মাথা তুললো না।। শুয়ে থাকলো ও ভাবেই।। গায়ের উপর পাতলা কম্বল টা আরেকটু শক্ত করে টেনে ধরলো।। নিজেকে প্রচুন্ড অপরাধী বলে মনে হচ্ছে।। কি করল সে এটা?? কেন করল?? হাত পা কাপছে তার।। কোনো ভুল করছে না তো?? কালক হয়ত তাকে দেখছে, তাকে ঘৃনা করছে।। চোখ থেকে দু বিন্দু জল গড়িয়ে পড়লো।।
.
অনেকক্ষণ পর বিছানা থেকে নামার সাহস করল মায়া।। বিছানা থেকে নামতেই দর্পনে নিজের প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠল।। সামনে এগিয়ে গেল মায়া।। খোলা চুল গুলো এলোমেলো হয়ে আছে।। গলায়, ঘাড়ে, বুকে খাবলা খাবলা লাল রংয়ের চিহ্ন হয়ে আছে।। ফর্সা শরীর হওয়ায় টকটকে লাল হয়ে আছে।। যেন কেউ কামড় দিয়ে খাবলা খাবলা মাংস তুলে নিয়েছে।। লাল হয়ে যাওয়া চিহ্ন গুলোর দিকে মায়া একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষন।। যেন কিছুই হয়নি।। এরপর ধীরে ধীরে হাত বুলিয়ে দেখতে লাগল।।
.
—– রাণী মায়া!!
.
লিয়া ডাকতেই চমকে উঠল মায়া।। পিছন ফিরে দেখলো লিয়া মুচকি মুচকি হাসি দৃষ্টি নত করে দাড়িয়ে আছে।। তারপর সেভাবে লজ্জা মিশ্রিত কন্ঠে বলল
.
—- আ-আপনার গোসল খানা তৈরি করা হয়েছে।।
.
—-হহ??
.
মায়া হা করে তাকালো লিয়ার লজ্জা মিশ্রিত চেহারার দিকে।। তারপর আবার তাকালো দর্পনে…. নিজের দিকে, নিজের শরীরের দিকে।।
.
—– রানী মায়া!! আপনি কি শুনছেন??
.
—- ঠিক আছে লিয়া।। আ-আমি আসছি।।
.
দাসীরা সবাই মায়াকে গোসলে সাহায্য করতে লাগলো।। ঝর্ণার উষ্ণ পানি সুদূর পাহাড়ী ঝর্ণা থেকে আনা হয়েছে।। সেই সাথে গোলাপ জল, দুধ, কাচা হলুদ, মেহেদি, মুলতানি মাটি, চন্দন ইত্যাদি নানা রকমের সৌন্দর্য্যের উপকরনে ভরপুর সবকিছু।। চারদিকে মোমবাতির উজ্জল আলোয় ছিটানো গোলাপের পাপড়ি গুলো মায়ার উজ্জল ত্বক দেখে যেন হিংসায় জ্বলে পুড়ে মরছে । সুগন্ধে ভরপুর এমন স্বর্গীয় গোসল খানাও মায়ার কাছে নরকের গোসল খানার মত বিষাক্ত মনে হচ্ছে।। যা মায়া কে ধীরে ধীরে নষ্ট করে দিচ্ছে।।
চুপচাপ বসে রইল সে।। জড় পুতুলের মত।। যেন এত সব আয়োজন তাকে আকর্ষিত করছে না।।
গোসল খানা থেকে বেড়িয়ে দাসীরা তাকে সাজিয়ে দিচ্ছিল।। বুক ছিড়ে বেড়িয়ে এল একটা দীর্ঘ হাহাকার।।
.
মায়ার কাছে আবারো এলো বেনামী পত্র।। আর এই পত্রের জন্য সে গতদিন থেকে অপেক্ষা করছে।। পত্র টি পুরো শেষ করার পর যেন বুকের উপর থেকে বিরাট একটা পাথর নেমে গেল।। এবার আর কোনো দুঃসংবাদ নয়, সুসংবাদ পেয়েছে মায়া।। দ্রুত তারা তাদের রাজ্য ফিরে পাবে।। এবং সে অনুযায়ী মায়ার নির্দেশে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।।
মন টা খানিকটা হলেও ভালো হয়ে গেল মায়ার।। পত্র আনয়ন কারী দাসী কে নিজের দামী মুক্তার হার উপহার দিয়ে বসল।। দামী মুক্তার হার দেখে দাসীটির চোখ চক চক করে উঠল।।
.
দিনের পর দিন পার হয়ে যায়।। মায়া গোপনে তার কাজ চালিয়ে যেতে থাকে।। অন্দর মহলে নিজের আয়ত্বে এনে রাজ্যের কাজেও অল্প বিস্তর হস্তক্ষেপ করতে লাগল।। কেউ যদি সম্রাট অলোকের কাছে এসে নিরাশ হয় তারা শেষ ভরসা হিসাবে রাণী মায়ার কাছে চলে আসে।। কারন তারা জানে কেউ সাহায্য করতে না পারলেও রানী মায়া অবশ্যই সাহায্য করতে পারবে।। তাই পুরো রাজ্যে ধীরে ধীরে মায়ার জন প্রিয়তা বাড়তে লাগল।। আর সেই সাথে বাড়তে লাগলো গোপন শত্রু।।
.
আর সম্রাট অলোক যত দিন যাচ্ছে ততই তার রাণীতে মুগ্ধ হচ্ছে।। মায়ার কোনো আবদার অপূর্ণ রাখছেনা।। বলতে না বলতেই পায়ের নিচে সব হাজির হয়ে যাচ্ছে।। এই তো সেদিন মায়ার ঈরানভা ঘুরে আসার ইচ্ছা হলে সম্রাট অলোক নিজ হাতে তার ব্যবস্থা করে।। মনে হচ্ছে তার দিন গুলো স্বপ্নের মত পার হচ্ছে।।
কিন্তু ততই তার জটিলতা বৃদ্ধি পাচ্ছিল।। বেশ কয়েক বার তার বিরাট বিরাট অস্ত্র বহর গুলো লুন্ঠিত হয়েছে।। জায়গায় জায়গায় থেকে কিছু বিদ্রোহী তার রাজ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছে।। তাদের দমন করার জন্য অলোক কয়েক বার সৈন্য প্রেরন করেছিল। লাভ হয়নি।। মনে হচ্ছিল তারা যথেষ্ট দক্ষ আর শক্তিশালী।।
এছাড়া তার দাপ্তরিক কাজেও কিছু জটিলতা দেখা দিয়েছে।। সব কিছু মিলে খুবই নাজুক বলে মনে হচ্ছে তার রাজ্যকে।।
দুশ্চিন্তায় চোখ বুজে এলো তার।। পাঠাগারে বসে ছিল এতক্ষন।। বিভিন্ন রাজ্য থেকে পাঠানো প্রতিবেদন গুলো নিরীক্ষণ করছিল।। কিন্তু দুশ্চিন্তায় ক্লান্তি ছেয়ে এলো।। মনে হচ্ছে কোথাও কোনো ভুল হচ্ছে ।। কপালে হাতের ভর রেখে মাথা খানিকটা নিচু করল সে।। ভাবতে লাগল অনেক কিছু।।
বেশ কিছুক্ষন পর নাকে হালকা রজনীগন্ধা ফুলের সুবাস পেল।। সাথে নুপুরের হালকা রিনি ঝিনি শব্দ।। এই শব্দে মুহুর্তে অলোকের মন ভালো হয়ে গেল।। প্রশান্তি ছেয়ে গেলো মনে প্রাণে।। তার মুখে মিষ্টি হাসি ফুটে উঠল।। মাথা উপরে তুলে তাকিয়ে দেখলো তার মায়া তার সম্রাজ্ঞী তারই দিকে আসছে।।
মায়া কাছে এসে অলোকের দিকে তাকিয়ে এক টুকরো হাসি দিল।।
.
—– সম্রাট??
.
—- মায়া…….. আমার সম্রাজ্ঞী!!!
.
বলতেই বলতেই অলোক মায়ার একটা হাত ধরে চুমু খেয়ে মুখ গুজে রইল।।
মায়া একটু হেসে অপর হাতে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল
.
—– কি হয়েছে সম্রাট!!!
.
—- আপনাকে অনেক চিন্তিত বলে মনে হচ্ছে!!
.
—– এতক্ষন চিন্তিত ছিলাম মায়া।। খুব বেশিই ছিলাম।। কিন্তু এখন তুমি এসেছে।। তাই সব চিন্তা দূর হয়ে গেছে।।

.
এই বলে অলোক মায়া কে টেনে তার কোলে বসালো।। তারপর মায়ার কাধে মাথা রেখে তাকে জড়িয়ে ধরলো।। তার মিষ্টি রজনীগন্ধার সুবাস নিতে লাগল।। আর
মায়া অলোকের হাতে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল
.
—- কিসের এত চিন্তা সম্রাট?? এত বড় রাজ্য, অনুগত সব প্রজা, ভরা রাজকোষ, আপনাকে সবাই বাঘের মত ভয় পাই সম্রাট!! তাহলে কার এত বড় সাহস যে আপনাকে দুশ্চিন্তায় রাখে??
.
অলোক গভীর ভাবে মায়ার ঘাড়ে নাক ডুবিয়ে নিঃশ্বাস নিল।। তারপর ধীরে ধীরে বলল
.
—– আছে মায়া আছে।। এত বড় দুঃসাহস কারো না কারো আছে।।
.
—– কার আছে??
.
—- তোমার!!!
.
—- হুহ!!!!!
.
চমকে উঠল মায়া।। কি বলছে এসব অলোক??
মায়ার অবস্থা দেখে অলোক সাথে সাথে হেসে দিল
.
—– তেমন কিছু না মায়া!!! অনেক দিন ধরে কিছু বিদ্রোহী বার্বান সাম্রাজ্যে অরাজকতা সৃষ্টির প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।। আমার অস্ত্র বহর লুটপাট করছে!! দুই বার খাজনা আদায় কৃত বহরে হামলা করেছে, এছাড়া সীমান্ত এলাকা গুলো প্রায় আমার হাত ছাড়া হয়ে আছে।। তারা এত শক্তিশালি হয়ে আছে যে আমার অনেক সৈন্য ওদের হাতে পরাজিত হয়ে আসছে।। আমার দাপ্তরিক বিভিন্ন কাজের খবর তাদের কানে পৌছে যাচ্ছে।। কখন কোন সময় কি কাজ বার্বান সাম্রাজ্যে হচ্ছে তা ওদের কানে পৌছে যাচ্ছে।। মনে হচ্ছে কেউ একজন ওদের হয়ে এখানে কাজ করছে।। এখানে একজন বিশ্বাস ঘাতক আছে মায়া!!! একজন বিশ্বাস ঘাতক আছে।। যে আমার অজান্তে আমার পিঠে ছুরি চালাচ্ছে।।
.
মায়া কাপা কাপা চোখে অলোকের দিকে তাকালো।। বুকটা দুরু দুরু করে শব্দ করতে লাগল।। তারপর অলোকের দিকে তাকিয়ে মায়া জিজ্ঞেস করল
.
—- আ-আপনি কি জানতে পেরেছেন কে সে বিশ্বাস ঘাতক??
.
—- নাহ্!! তবে জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছি।। খুব দ্রুত তার গলায় আমার তলোয়ার হবে।। খুজে বের করবো তাকে।
.
মায়া ঢোক গিলল।। তারপর দুর্বল ভাবে একটা হাসি দিয়ে বলল
.
—– আ-আপনার খাওয়ার সম্রাট হয়েছে সম্রাট।। চলুন।। দেরী হয়ে যাচ্ছে।।
.
এই বলে মায়া উঠতে চেষ্টা করল।। কিন্তু পারলো না।। অলোক তাকে ছাড়ছে না।।
.
—– স-সম্রাট!!!
.
—- মায়া!!
.
—- হুম??
.
—- আজ রাতে সৈন্য পাঠাবো!! শেরার নেতৃত্বে।। গোপন হামলা চালাবো।। বিদ্রোহী দের উপর।।
.
—– কিন্তু আপনি তো জানেন তারা কোথায় লুকিয়ে আছে??
.
বিদ্রুপের হাসি হাসলো অলোক।। তারপর বলল
.
—– আমার শরীরে কোন অঙ্গে ব্যাথা সেটা আমি জানবো না তা কি করে হয় মায়া???
.
শিউরে উঠল মায়া!!
.
—- কি করবেন আপনি??
.
—- তেমন কিছু না মায়া।। শুধু কালকের সূর্যটা দেখতে দিবো না।।
.
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here