Story – Every Thing Is Fair In Love And War
Writer – Nirjara Neera
35 & last part …………………..
★
পুরো অন্দরমহল শূন্য হয়ে আছে। সবাই কোথায়? দেখা যাচ্ছে না কেন কাউকে?
ধীর পায়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে মায়া সাবধানে এগিয়ে চলল। আরো একটু এগিয়ে যেতেই কারো পায়ের শব্দ শুনে নিজেকে বিরাট থামের আড়ালে লুকিয়ে ফেলল। তারপর দেখল একজন বার্বান সৈন্য দৌড়ে কোথাও যেন যাচ্ছে।
.
বহু কষ্টে গা বাচিয়ে মায়া নিজের কক্ষের দিকে এগুলো। সেখানে অলোকের দেয়া তলোয়ার টা আছে। কক্ষ থেকে তলোযার টা নিয়ে বেড়িয়ে গেল মায়া। তাকে ও লড়তে হবে ডে। তার বিদ্রোহীরা এখন যেটা করছে সেটা অন্যায়। তাদের উচিত হয়নি এখানে আক্রমন করার।
তলোযার নিয়ে মায়া বেড়িয়ে গেল। অন্দর মহলের বাইরে এসে দেখলো এখানে কয়েক জন বার্বান সৈন্য একদল বিদ্রোহীর সাথে প্রাণ পন লড়ে যাচ্ছে। কিন্তু সংখ্যায় কম হওয়ায় পেরে উঠছিল না। মায়া তাদের মধ্য ঢুকে গেল। ঝন ঝনাং শব্দ করে উঠল মায়ার তলোযার। কিছু ক্ষনের মধ্যেই হারিয়ে দিল বিদ্রোহী দের। অতঃপর ঘমার্ক্ত শরীরে সামনে এগিয়ে গেল। কিন্তু তার পথ রোধ করে দাড়ালো বার্বান সেনা প্রধান শেরা। মায়া তাকে দেখে খুশি হল বটে তবে তাকে দেখে শেরা খুশি হল বলে মনে হল না। যেন একরাশ ঘৃনার আগুন জ্বলছে চোখে। মায়া সামনে দাড়িয়ে অথচ সে কুর্নিশ ও করল না। মায়া এগিয়ে যেতেই মায়াকে শেরা আক্রমন করে বসল। অতর্কিত আত্রমনে মায়া ভ্যাবাচাকা খেলেও সাহস হারালো না। সেনা প্রধান শেরার সাথে অনেক ক্ষন লড়াই হল। লড়ায়ে ক্লান্ত হয়ে মায়া হেরে গেল। বন্দি হল শেরার হাতে।
.
এদিকে লড়াই থেমে গেছে অনেক আগে। মহল থেকে বিদ্রোহী দের বিতারিত করা হয়েছে। ক্রোধান্বিত অলোক দু হাতে সমান তলোয়াড় চালিয়ে লড়াই জিতে নিল। যে দল সৈন্য আসার কথা ছিল সে দলকে লড়াই শেষে উপস্থিত হলে তাদের কে দায়িত্ব দিল রাজধানী তে লুকিয়ে থাকা সমস্ত বিদ্রোহী দের খুজে খুজে হত্যা করার।
এমন সময় বন্দিনী মায়া কে নিয়ে শেরার আগমন ঘটে। মায়া কে অলোকের সামনে হাজির করেই শেরা অলোক কে কুর্নিশ করে জানালো
—– দেশ দ্রোহী বিশ্বাস ঘাতকের এক মাত্র শাস্তি মৃত্যু দন্ড। সে যে হোক না কেন। সম্রাটের কাছে সুবিচার আশা করি।
শেরার দিকে তাকালো না অলোক। মায়ার দিকে নিষ্পলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। আর মায়া নিচু দৃষ্টিতে মাটির দিকে। তার দিকে এক পা এগিয়ে এসে অলোক দাড়ালো। তারপর বলল
—- ঈরান ভা স্বাধীন হয়েছে। তোমার মনোবাসনা পূরন হয়েছে তাই না সম্রাজ্ঞী মায়া?
মায়া খানিকটা কেপে উঠলো। অলোক কখনো তার সাথে এভাবে কথা বলে না। কিন্তু আজ এভাবে বলছে। তার মানে তার মৃত্যু নিশ্চিত।
কাঁপা কাঁপা চোখে অপরাধীর মত তাকালো মায়া অলোকের দিকে।
—- বার বার আমার অস্ত্র বহর লুট হওয়া, আমার দপ্তরের খবর বিদ্রোহী দের কানে পৌছা, আক্রমনের খবর আগাম বলতে পারা, বার বার সীমান্তে আঘাত হানা সর্ব শেষ ঈরানভা দখল করে নেয়া। সবকিছু তো জাদুর ছড়ি ঘুরিয়েছো। মানতে হবে বেশ। মহলে ও তোমার গুপ্তচর আছে দেখছি অনেক। আর সেই শুভাকাংখী? মনে করেছো সে বেচে যাবে? কখনো না।
তারপর অলোক এক সৈন্য কে নির্দেশ দিল কাউকে নিয়ে আসার জন্য। কিছুক্ষন পর সৈন্যটি একজন লোক কে ধরে নিয়ে এল। অনেকটা রক্তাক্ত অবস্থায়। মায়া তাকালো তার শুভাকাংখীর দিকে। যাকে সে এতদিন পত্র পাঠিয়েছে। যে এত বড় অসাধ্য সাধন করেছে। চেনা চেনা লাগলো মায়ার। মুখে রক্তের কারনে একটু কষ্ট হলেও মায়া ঠিকই চিনতে পারলো। এ হচ্ছে বিরান। বীরের ছোট ভাই। না হলে এত বড় অসাধ্য সাধন করা কারো পক্ষে সম্ভব ছিল না। মায়া করুন চোখে অলোকের দিকে তাকালো। তারপর তোতলাতে তোতলাতে বলল
—– স-সম্রাট ও-ওকে ছেড়ে দিন! ও আ-আমার নির্দেশে সব করেছে।
ধপ করে জ্বলে উঠল অলোক। দ্রুত পায়ে এগিয়ে এসে মায়ার টুটি চেপে ধরল। তারপর দাঁত কিড়মিড় করে বলল
—- তাই নাকি! এত দরদ ওর জন্যে!
মায়া নিঃশ্বাস ফেলতে পারছিলো না। অনেক কষ্টে অলোক কে ডাকলো
—- স-সম্রাট! আ-আমি,,,,
মায়ার সবুজ চোখ বেড়িয়ে আসার উপক্রম হল। আর তাতেই অলোকের হুশ হল। সে মায়া কে ছেড়ে দিল।
মায়া গলা ধরে কাশতে কাশতে বসে গেল। বড্ড পানি পিপাসা পেয়েছে। ওদিকে অলোক তলোযার কোষ মুক্ত করে বিরান কে মারতে উদ্যত ঠিক তখনি মায়া অলোকের পা ধরে ফেলল।
—– দোহাই সম্রাট। ও যা করেছে সব আমার নির্দেশে। ওকে ছেড়ে দিন। আমি আপনার দোষী। আমাকে সাজা দিন।
অলোক জোর করে পা ছাড়িয়ে নিল। তারপর হুকুম দিল
—– কাল সকালে সম্রাজ্ঞী মায়ার বিচার হবে। পুরো বার্বান সাম্রাজ্যের সামনে।
এই বলে সেখান থেকে চলে গেল। আর মায়া কে বন্দি করে নিয়ে যাওয়া হল।
ডুকরে ডুকরে কান্না করলেও মায়ার মনে কষ্ট ছিল না এই ভেবে যে ঈরানভা স্বাধীন হয়েছে। হয়ত দেশ দ্র্রোহিতার কারনে তাকে মৃত্যু দন্ড হতে পারে। হতে পারে এরপর থেকে আর সূর্যের আলো দেখতে পাবে না। কিন্তু সে ঈরানভা কে দেয়া ওয়াদা রক্ষা করেছে। ঈরানভার প্রজারা এখন স্বাধীন।
চোখ বন্ধ করে দীর্ঘ শ্বাস ফেলল মায়া। তারপরেও তার মনে এত টুকু শান্তি নেই। কেমন যেন ছটফট করছে পুরো বুক জুড়ে। ভারী হয়ে আসছে নিঃশ্বাস প্রশ্বাস।
এমন সময় ভারী লোহার কপাট খোলার শব্দ হল। চোখ খুলে সেদিকে তাকালো মায়া। এক পলক তাকিয়েই মাথা নত করে ফেলল। অলোক এসেছে। তার পিছন পিছন একজন দাসী ঢুকলো থালা হাতে। সেটা মায়ার সামনে রেখে বেড়িয়ে গেল। অলোক ধীরে ধীরে মায়ার সামনে পায়ের পাতার উপর ভর দিয়ে বসলো। অলোক কে এভাবে বসতে দেখে মায়া কুকড়িয়ে পিছে হটে গেল।
—- কিভাবে করতে পারলে এসব?
মায়া নিশ্চুপ।
—- একবারও চিন্তা করলে না এর পরিণতি কি হবে? একবার চিন্তা করলে আমার কি হবে? কি ভাবে ছুরি মারতে পারলে আমার পিঠে? এই বুঝি তোমার ভালোবাসা? এই ভাবে বুঝি দাম দিলে? কি হবে আমাদের অনাগত সন্তানের? বার্বান উত্তরাধিকারীর?
মায়ার চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। জবাব বেড়ুচ্ছে না তার মুখ দিয়ে। সে জানত যে সে যা করছে তা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। কিন্তু সে এও জানে প্রেম আর যুদ্ধে সব জায়েজ। নিজের মাতৃভূমির জন্য সব কোরবানি জায়েজ।
হঠাৎ অলোক ঝাপটিয়ে মায়া কে জড়িয়ে ধরল। মায়া চমকে উঠেছিল প্রথমে। বুঝতে পারলো না অলোকের হাব ভাব। অলোক মায়া কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। তারপর সারা চোখে মুখে গালে চুমুতে ভরিয়ে দিল। মায়ার বুকে তা কাঁপন ধরিয়ে দিলেও নিজেকে সামলে নিল। এসব ক্ষনিকের মায়া। যে মায়া কাটানো বড়ই মুশকিল।
ক্ষান্ত হয়ে থামলো অলোক। মায়া তখনো চুপচাপ বসে। আর মুখ খানা এখনো অলোকের হাতের মুটোয়। বেশ কিছুক্ষন পলক না ফেলে তাকিয়ে ছিল মায়ার দিকে। তারপর ঝট করে উঠে চলে গেল। তাকালো না আর পিছন ফিরে।
কিছুক্ষন চোখ মুদে থাকতে থাকতে তন্দ্রা লেগে এলো। কিন্তু খিদের চোটে তার চোখ ছুটে গেলো। সকাল থেকেই উপোস। সইতে না পেরে অলোকের আনিত খাবার গুলো মায়া খেয়ে নিল। নিজের জন্য না হলেও তার গর্ভের সন্তানের কথা ভেবে খেয়ে নিল। তারপর আবারো ঘুম।
.
পর দিন প্রাসাদের সামনে বিশাল ময়দানে লোকারন্য হয়ে আছে। তিল ধারনের ঠাই নেই। সৈন্যরা তাদের সামলাতে হিমসিম খাচ্ছে। সবাই এসেছে সম্রাজ্ঞী মায়ার বিচার দেখতে। সম্রাট কেমন কঠিন বিচার করে তার। তবে এর মাঝে কিছু প্রজা এমনো আসলো যারা শুধু মায়ার জন্য চোখের জল ফেলছিল। কেননা ইতোমধ্যে মায়া প্রজা হিতৈষী সম্রাজ্ঞী হিসেবে জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। কেউ তার কাছে এসে খালি হাতে ফিরে নি।
বিশাল প্রাসাদের ছাদে মায়া কে নিয়ে আসা হল। নিচ থেকে সবাই তাকে দেখছে। মায়া কে নিয়ে আসা হলে মায়া হাত জোড় করে বার্বান প্রজাদের সামনে চুপ করে দাড়িয়ে রইল। যেন এমন যে মায়া সবার কাছে মাফ চাইছে।
মৃদঙ্গ আর ডঙ্কার কঠিন সুর বেজে উঠলো মুহুর্তে। আওয়াজ শুনে মনে হল যেন এই মুহুর্তে কোনো কাল প্রলয়ী আসছে। কিছুক্ষনের মধ্যে রাজকীয় বেশে সম্রাটের প্রবেশ। উপস্থিত সবাই মাথা কুর্নিশ করে সম্মান জানালো।
তারপর আগ্রহ ভরে দেখতে লাগল যে নিষ্টুর সম্রাট কিভাবে তার সম্রাজ্ঞীর বিচার করে।
অলোক উপস্থিত সকলের উদ্দেশ্য বলতে শুরু করল
—- বার্বান আইন অনুযায়ী দেশ দ্রোহিতার একমাত্র শাস্তি মৃত্যু দন্ড। সে যে হোক। তার শাস্তি কার্যকর করা হবে।
এ বলে অলোক তলোযার বের করে মায়ার দিকে এগিয়ে গেল। অলোক কে সামনে আসতে দেখে মায়া চোখ বন্ধ করে ফেলল। গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়লো এক ফোট অশ্রু।
অলোক তলোযার টা উপড়ে তুলল মায়া কে কোপ মারার জন্য। কিন্তু তলোয়াড় টা মায়ার দিকে গেলো না। সেটি সাই করে মাথার উপর ঘুরে অলোক নিজের মুকুট ফেলে দিল। হা করে তাকিয়ে থাকলো সবাই সম্রাটের এই অদ্ভুদ কান্ডে। বুঝতে পারলো না। এত বড় অসম্মানের কাজ তাদের সম্রাট কেন করল? মাথা থেকে মুকুট ফেলে দেয়া মৃত্যুর চেয়ে অপমান জনক। এরচেয়ে মৃত্যুও বহু সম্মানের।
মায়ার বুক ধক ধক করছিল। কিন্তু কিছু হল না দেখে চোখ খুলে সামনে তাকালো। তাতেই তার মাথা ঘুরে যাওয়ার মত অবস্থা হল। সে দেখলো মুকুট বিহীন অলোক দু হাতে মুকুট টা ধরে হাটু গেড়ে বসে আছে। মাথা নিচু করে যেন অনেক কিছু বলে দিচ্ছে। মায়া দু চোখ ফেটে জল আসতে চাইলো। এর মানে সে বোঝে। শুধু মাত্র তার কারনে অলোক মুকুট স্বহস্তে নিয়ে নিয়েছে। সে মায়ার মৃত্যু দন্ডের বদৌলতে স্বেচ্ছায় তার সিংহাসন ছেড়ে দিচ্ছে। মাফ চেয়ে নিচ্ছে সবার কাছ থেকে।
মৃদু গুঞ্জন উঠলো প্রজাদের মাঝে। সে সময় প্রচুন্ড শব্দে আকাশে বাজ পড়ল। অসময়ে দেখা দিল ঘন কালো মেঘ। মেঘ দেখে প্রজারা সেখান থেকে যে যেদিকে পারলো বেড়িয়ে গেলো। হু হু করা বাতাস যেন কোনো বিষাদ কেও উড়িয়ে নিতে পারছে না। পারছেনা এক মুটো শান্তি এনে দিতে।
.
সমাপ্ত
.
পরিশেষ : এক মাস পর______
.
বার্বান সাম্রাজ্যের নতুন সম্রাট শেরার রাজ্যভিষেক চলছে। সবাই হাসি মুখে তাদের নতুন সম্রাট কে গ্রহন করে নিচ্ছে।
বার্বান সাম্রাজ্য থেকে ঠিক এক মাস পথ দুরত্বে এক ছোট্ট নগরী…. মায়া। অলোকই এ নগরীর নাম রেখেছে মায়ার নামে। এক নামে সবাই চেনে মায়া নগরী হিসেবে। সে মায়া নগরীতে নেই কোনো যুদ্ধ, নেই কোনো হানাহানি, মারামরি। সুখে বাস করে সবাই। যেখানে অলোক সমস্ত সাম্রাজ্য কে ছুড়ে ফেলে দিয়ে ভালোবাসার হাতে নিজেকে সমর্পন করেছে।
আর চলে এসেছে তার একমাত্র ভালো বাসা মায়ার কাছে।
_______________________♥____________________
.
প্রথমের পর্ব গুলো ভালো হলেও শেষের পর্ব গুলো তেমন ভালো হয়নি। তারপরও কেমন লাগল জানাবেন। ভালো থাকবেন সবাই। আল্লাহ হাফেজ।
Home “ধারাবাহিক গল্প” Every Thing Is Fair In Love And War Story – Every Thing Is Fair In Love And War Writer –...