তুমিময়_নেশায়_আসক্ত 🖤 #পর্ব-৩১

0
532

#তুমিময়_নেশায়_আসক্ত 🖤
#পর্ব-৩১
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
রিমি একমুহুর্তের জন্যে থমকে গেলো। অয়নকে কেউ গুলি করেছে কথাটি কানে আসতেই তার হিতাহিতজ্ঞান শূন্যের কৌঠায় পৌঁছে গিয়েছে। রিমিকে অস্হির হতে দেখে জয়িতার ললাটের মাঝ বরাবর বলিরেখায় ধারণ করে বেশ চিন্তার ভাঁজ। জয়িতা রিমির দিকে এগিয়ে যায়। রিমি এখনো হাতে ফোন নিয়ে কান পেতে রয়েছে স্হীর হয়ে। জয়িতা রিমিকে ঝাঁকিয়ে বলে,
‘ এইভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেন তুই?
জয়িতার ডাকে রিমির হুশ ফিরে। কম্পিত গলায় মিনমিন করে বলে উঠে,

‘ উনাকে কেউ গুলি করেছে। ‘

‘ মানে! কি বলছিস তুই? কে ফোন করেছিলো তোকে?’

জয়িতার প্রশ্নে রিমি কিছুক্ষন চুপ থেকে পুনরায় উত্তেজিত হয়ে বলতে থাকে,

‘ উনাকে কেউ গুলি করেছে। আমাকে এখুনি যেতে হবে। জয়িতা আমার মাথা কাজ করছে না। উনি ঠিক আছেন তো? ‘

জয়িতা অবাক নয়নে রিমির পানে তাকিয়ে আছে। রিমির নেত্রকোণে স্পষ্ট জল চকচক করছে মুক্তার ন্যায়। রিমির কন্ঠে আজ ভয়। নিজের কাছের মানুষকে হারানোর ভয়। তবে কি অয়নও রিমির জীবনের কাছের মানুষে রুপান্তরিত হয়ে গেলো রিমির অজান্তেই? রিমি আবারোও সেই ডায়ালকৃত নাম্বারে ফোন দিলো যেই নাম্বার থেকে তাকে ফোন করা হয়েছিলো। সাদেক একটি চেয়ারে বসে ছিলো। ফোনের স্ক্রিনে ‘ Vabi ‘ নামখানা জ্বলজ্বল করে ভেঁসে উঠতেই দ্রুত গতিতে সাদেক ফোনটা রিসিভ করলো। অনুনয়ের সুরে বললো,

‘ ভাবি বলুন। ‘

রিমির অস্হির হয়ে জিজ্ঞাসা করে, ‘ আপনি তো কিছুক্ষন আগে আমাকে ফোন করে জানালেন, ডক্টর এয়ারসিকে কেউ নাকি গুলি করেছে। এখন উনি কোথায়? উনি ঠিক আছেন তো? কি হলো বলছেন না কেন?’

রিমির এতো প্রশ্ন একসাথে করায় হতভম্ব হয়ে গেলে সাদেক। সে কোনটার প্রশ্ন আগে দিবে তা নিয়ে বেশ দ্বিধায় পড়ে গেলো। সাদেক গলা খাকড়ি দিয়ে বললো,

‘ ভাবি আপনি বরং আমার মেসেজ ঠিকানা দেওয়ার জায়গাটি চলে আসুন। সেখানেই ভাই আছে। আপনার সব প্রশ্নের উত্তর এখানে আসলেই পেয়ে যাবেন। ‘

রিমি কিছু বলতে পারলো না। তার আগেই সাদেক ফোনটা কেটে দিলো। রিমি সাদেকের মেসেজ করা ঠিকানার উদ্দেশ্য রওনা দিলো। সাদেক ফোনটা কেটে পকেটে ঢুকিয়ে তার সামনে থাকা অয়নের দিকে তাকালো। স্লিভ কটনের সাদা শার্ট পড়ে আছে অয়ন। ফর্সা দেহে তা বেশ ভালোই খাপ খায়িয়ে গিয়েছে। বেশ সুদর্শন লাগছে অয়নকে। অয়নের বাম হাতের বাহুতে ব্যান্ডিজ করা। গুলিটা বের করে তাতে ব্যান্ডিজ করা হয়েছে। অয়ন সুবিশাল রুমের খাটে হেলান দিয়ে শুয়ে আছে। তারই বিপরীত চেয়ারে সাদেক গম্ভীর মুখে কিছুটা ভয় নিয়ে বসে আছে। ভয়টা হচ্ছে রিমি যখন অয়নের কথা জানতে পারবে তখন কি হবে তার প্রতিক্রিয়া? ভেবেই তরতর করে ঘামছে কিন্তু অয়ন! তার কি আদোও তা নিয়ে চিন্তা আছে? উহু একদমি নয়। তাইতো দিব্যি নিজের মনে হেঁসে চলেছে প্রতিনিয়ত। নিরবতা ভেঙ্গে সাদেক অয়নের দিকে প্রশ্ন নিক্ষেপ করে বলো,

‘ ভাই! ভাবি যদি জানে? ‘

‘ জানি রিমিপরী কষ্ট পাবে কিন্তু আমার বেশ ভালো লাগছে। হ্যা এই প্র‍থম রিমিপরীর কষ্টে, রিমিপরীর অস্হিরতা আমাকে তৃপ্তি দিচ্ছে। আনন্দিত করে তুলছে প্রতিনিয়ত। কেননা সেই কষ্টের কেন্দ্রবিন্দু আমি। রিমিপরীর জীবনের সব কষ্ট সব সুখ সব ভালোবাসা শুধু এই অয়ন চৌধুরীর। ‘

কথাটি বলেই আরেকপলক হাঁসলো অয়ন। সাদেক ভরকে গেলো। লোক ঠিকই বলে রিমির ভালোবাসায় অয়ন এক বদ্ধ উম্মাদে পরিনত হয়েছে। একজন লোক কতটা পাগল হলে নিজেকে গুলি করতে দুইবার ভাবেনা। কিছুক্ষন আগের কথা মাথায় চওড়া দিয়ে উঠতেই ভয়ে কেঁপে উঠে। সাদেক অফিসের কিছু কাগজ নিয়ে অয়নের সাথে দেখা করতে, অয়নের ফার্ম হাউজে এসেছিলো। অয়ন প্রায় অনেকটাসময় তার ফার্ম হাউজে সময় কাটায়। আজকেও হসপিটাল থেকে এসে সোজা নিজের ফার্ম হাউজে চলে এসেছিলো অয়ন। তাই সাদেকও অয়নের সাথে দেখা করতে ফার্ম হাউজে আসে। এসেই দেখতে পায় অয়ন তার ওয়াইনের গ্লাস একটার পর একটা ভেঙ্গে চুড়মার করে ফেলছে এবং প্রচন্ড তেজি গলায় বিড়বিড় করে বলছে,

‘ কেন! কেন রিমিপরী আমাকে ভালোবাসে না? আমি কি খুব খারাপ?যেই আখিতে আমি নিজের জন্যে অশ্রু দেখতে চেয়েছিলাম। সেই আখি আজ অন্যের অশ্রুে পরিপূর্ন। কেন রিমিপরী তুমি আমাকে ভালোবাসো না? ‘

অয়নের কষ্টেও সাদেকের ভিতরেও চিনচিনে ব্যাথা করে। সে অয়নকে খুব ভালো করেই জানে। মানুষটা খারাপ নয়, তাকে কেউ খারাপ বানিয়ে তুলছে প্রতিনিয়ত। সাদেক এগিয়ে এসে বলে,

‘ ভাই আপনি হয়তো ভুল বুঝছেন ভাবিকে। ভাবিও আপনাকে অনেক ভালোবাসে। দেখবেন কালকে যদি আপনার কিছু হয়, তাহলে ভাবিই সর্বপ্রথম কাঁদতে কাঁদতে আপনার কাছে দৌড়ে চলে আসবে। ‘

সাদেকের কথাটি কানে আসতেই, অয়ন পিছনে ঘুড়ে সাদেকের বাহু চেপে ধরে উৎফল্ল হয়ে বলে,

‘, কি বললে সাদেক? আজ যদি আমার কিছু হয় তাহলে রিমিপরী কষ্ট পাবে তাইনা? আর মানুষ তো তখনি কষ্ট পায় যখন তার প্রিয় কারোর ক্ষতি হয়। তার মানে রিমিপরী যদি আমার জন্যে কষ্ট পায়,তাহলে প্রমান হয়ে যাবে রিমিপরীও আমাকে ভালোবাসে। অনেক ভালোবাসে। ‘

কথাটি বলেই অয়ন নিজের পকেট থেকে নিজের বন্দুকটা বের করে,নিজের হাতের বাহু বরাবর গুলি করে। চমকে উঠে সাদেক। চিৎকার করে বলে,

‘ ভাই……’

অয়ন উচ্চসুরে হেঁসে উঠে। হাত থেকে অনবরত রক্ত গড়িয়ে পড়ছে।অয়নের ডাকে অতীত থেকে ফিরে আসে সাদেক। অয়ন হাই তুলতে তুলতে বলে,

‘ রিমিপরী এলে আমার রুমে পাঠিয়ে দিবি। ‘

সাদেক মাথা নাড়িয়ে বেড়িয়ে যায়।

______________

মেঘ আমানের ঘুমন্ত মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে আছে। মানুষটা বড্ড সরল এবং গম্ভীর প্রকৃতির। মুখে কেমন একটা নিষ্পাপ এবং সরলতা লেপ্টে রয়েছে। মেঘ আমানের চুলগুলো হাত নাড়িয়ে ছুঁইয়ে দেয়। সামান্য নরে উঠে আমান। অপাশ হয়ে শুয়ে পড়ে। মুচকি হাঁসি দেয় মেঘ। মেঘ আমানের দিকে তাকিয়ে গালে হাত দিয়ে বললো,

‘ ওহে যুবক শুনছেন? আমার মনখানা পাচ্ছি না। বোধহয় চুরি হয়ে গিয়েছে। আপনার সরলতায় ভরপুর মুখস্রী আমার মন চুরি করে ফেলেছে। এখন কি আপনাম নামে আমার থানায় মামলা করা উচিৎ?’

অপাশ থেকে জবাব এলো না। আসবে কি করে? আমান তো ঘুমে রয়েছে। যাকে বলে গভীর ঘুম। ঘুমের ওষুধ দেওয়া হয়েছে আমানকে। আগামীকাল সকালের আগে আমানের ঘুম ভাঙ্গবে না। আমানকে ঘুমের ইঞ্জেকশন দিয়েই, হসপিটাল থেকে ড্রাইভারের সাহায্যে নিজের ফার্ম হাউজে নিয়ে এসেছে মেঘ,কিন্তু কালকে যখন আমানের ঘুম ভাঙ্গবে তখন কিরকম হবে তার প্রতিক্রিয়া? সে তো আদোও জানেনা সে এখন মেঘের ফার্ম হাউজে।

_______________

রিমি সাদেকের দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী পৌঁছে যায় অয়নের ফার্ম হাউজে। গোটা রাস্তায় সে কতটা দুশ্চিন্তা পার করেছে তা তার টলমল করে নেত্রজোড়া এবং চিন্তিত মুখস্রীর দিকে তাঁকালেই বুঝা যায়। সাদেক রিমিকে দেখেই উঠে দাঁড়িয়ে মাথা নিচু করে বলে,

‘ ভাবি! ভাই উপরে আছেন। ‘

‘ উনি ঠিক আছেন তো?’

রিমির প্রশ্নে সাদেক পূর্বের ন্যায় মাথা নিচু করেই জবাব দেয়, ‘ উপরে গেলেই বুঝতে পারবেন। ‘

রিমি এক মুহুর্তের জন্যে অপেক্ষা করেনা। দ্রুত এগিয়ে যায় অয়নের রুমের দিকে। অয়ন বারান্দায় দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছিলো আপনমনে। রিমির ডাকে দ্রুত সিগারেট ফেলে দেয়। রিমি হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসে একপ্রকার। হাক ছেড়ে ডাকে,

‘ ডক্টর এয়ারসি আপনি ঠিক আছেন তো? ‘

অয়ন পিছে ঘুড়ে তাঁকায়। তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে
তার কাঙ্ক্ষিত রমনী তার প্রিয় মানুষটি। যার জন্যে হাসতে হাসতে মরে যেতেও প্রস্তুত অয়ন। অয়নের বাম হাতে ব্যান্ডিজ দেখে তড়িৎ গতিতে এগিয়ে এসে,অয়ন হাত ধরে বলে,

‘ কে গুলি করলো আপনাকে? কীভাবে গুলি লাগলো আপনার হাতে? নিজের একটু খেয়ালও কি রাখতে পারেন না আপনি? ‘

অয়ন স্পষ্ট দেখতে পারছে তার রিমিপরীর চোখে অশ্রু। কন্ঠে তীব্র ভয়। যা শুধুমাত্র অয়নের জন্যে। অয়ন রিমির ললাটে অধর ছুঁইয়ে বলে,

‘ শান্ত হয়ে চুপটি করে বসো তো রিমিপরী। তোমাকে খানিক্ষন দেখে চক্ষের তৃষ্ণা নিবারণ করি। ‘

চলবে…..কী?

[ প্লিয আমারে কেউ ধুইয়েন না🙂। অয়ন সাইকো সব করছে। ওরে বকেন😑।অয়নকে কেউ গুলি করবে এমন সাহস কারো হয়নাই🤧। আপনারা বললেন তাই সাইকোটারে বাচাইয়া দিলাম। নাহলে গুলি করে মেরে দিতাম হু😒]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here