তুমিময়_নেশায়_আসক্ত 🖤 #পর্ব- ৩০

0
369

#তুমিময়_নেশায়_আসক্ত 🖤
#পর্ব- ৩০
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
অয়ন দূরত্ব ঘোচাতে চাইলো।ঘনিষ্ট হলো তার সামনে থাকা রমনীর সাথে।কপালে অধর ছুইয়ে দিয়ে নিবেশে কোলে তুলে নিলো তার প্রিয়তমা স্ত্রীকে। কোলে তুলে নিজ কক্ষের দিকে পা বাড়ালো। রিমি ঘাবড়ে গেলো। মনে এসে হানা দিলো অজানা আতন্ক।ভয়ে নিমিয়ে গেলো। গলার শব্দগুলো রিমির সাথে হরতাল শুরু করে দিয়েছে। কিছুতেই বের হতে চাইছে না। রিমির বাজে একটা পরিস্হিতিতে রয়েছে একপ্রকার।সবকিছুই দমবন্ধ মনে হচ্ছে। অয়ন রিমিকে নিয়ে নিজ কক্ষে প্রবেশ করলো। অতঃপর রিমিকে পরম যত্নে সোফায় বসিয়ে দিয়ে দরজা খট করে বন্ধ করে দেয়। রিমি ভরকে যায়। বিস্ময়ে চেয়ে থাকে অয়নের পানে। অয়ন সমস্ত আলো নিভিয়ে দিলো। শার্টের বোতাম খুলে তা সহজেই খুলে ফেললো। রিমি তার বেহায়া আখিজোড়া দিয়ে তার সামনে থাকা বলিষ্ট দেহীর সুদর্শন যুবককে দেখে নিলো। লজ্জা কেমন একটা ঘিড়ে ধরলো তাকে। পরক্ষনেই রিমি চোখ সরিয়ে নিলো।
অয়ন রিমির দিকে ঝুঁকে বাঁকা হেসে বললো,

‘ আই নো! আম সো মাচ হট। তোমারই তো বর। যত ইচ্ছে দেখে নাও। কে মানা করেছে? হটের সাথে একটু নটি টাইপও হতে ইচ্ছে করছে। দেখবে নাকি? সাচ আ হটিনটি বয়। ‘

রিমি শুকনো ঢুগ গিললো। গাল তার টকটকে লাল হয়ে রয়েছে। কান দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে অয়নের লাগামহিন কথাবার্তায়। রিমি পিছিয়ে গেলো। অয়ন তাতে বাঁধা দিলো। রিমিকে পুনরায় কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় গিয়ে শুয়িয়ে দিলো। অতঃপর রিমি গলায় মুখ গুজে শীতল কন্ঠে বললো,

‘ আজকে আমাদের মাঝে সমস্ত দূরত্ব আমি দূর করে দিবো। তোমাকে আপন করে নিবো রিমিপরী। যেন কেউ চাইলেও তোমাকে আমার থেকে কেড়ে নিতে না পারে। ‘

অয়নের অবাধ্য অধরের স্পর্শ নিজের শরীরে টের পেতেই, পুরো শরীর কম্পন সৃষ্টি হলো মুহূর্তেই রিমির। ছটফটে মুরগীর ন্যায় ছটফট করতে লাগলো। সে তো অয়নকে এখনো মন থেকে মেনে নিতে পারেনি, তাহলে কী করে সে অয়নকে আপন করে নিবে? আচ্ছা সে তো অয়নের কাছে সময় চেয়েছিলো কিন্তু সেই সময়টুকু কি অয়ন তাকে দিবে না? রিমির ভাবনার মাঝেই, অয়ন রিমির হাতে নিজের হাতের ভাজে নিয়ে নিলো। অয়নের আখিঁজোড়া আজ শুধু একরাশ ভালোবাসার নেশা হাতছানি দিচ্ছে। যেই নেশার রেশ ধরে রিমি অন্য এক ভালোবাসার সমুদ্রে পদর্পন করবে। রিম হুট করেই সশব্দে কেঁদে উঠে। অয়ন থেমে যায়। হাত নাড়িয়ে রিমির গাল স্পর্শ করে। দ্রুত রিমির থেকে উঠে গিয়ে, রিমির গালে হাত দিয়ে অস্হির হয়ে বলে,

‘ রিমিপরী! তুমি ঠিক আছো? এই পরী কাঁদছো কেন তুমি? ‘

রিমি কান্নায় থামায় না। সময়ের সাথে সাথে তার কান্নার তীব্রতা বেড়ে গেলো দ্বিগুনভাবে। অয়ন উত্তেজিত হয়ে গেলো তার রিমিপরীর কান্নায়। প্রিয়তমার কান্নার শব্দে তার ভিতরটা ছাড়খার হয়ে যাচ্ছে। অয়ন রিমিকে শান্ত করিয়ে বলে,

‘ কেঁদো না পরী। আমার বুকে বড্ড যন্ত্রনা হয়। ছাড়খার ছাড়খার লাগে সবকিছু। আমি তোমাকে ছুঁবো না প্রমিজ। তুমি একটু শান্ত হও। ‘

রিমির তার কান্নার গতি থামালো, কিন্তু ফুপানি কমছে না। সে ফুপিয়েই চলছে। অয়ন রিমিকে তার বুকে টেনে নিলো। রিমিও অয়নের বুকে মাথা গুজে ফুপিয়ে কাঁদতে লাগলো। অয়ন রিমিকে তার বুকে নিয়ে পুনরায় শুয়ে পড়লো। অতঃপর ধীর কন্ঠে বললো,

‘ আমার বুকে শান্তিতে ঘুমিয়ে পড়ো রিমিপরী। কেঁদো না।’

রিমি নিশ্চিন্ত হলো খানিক্টা। অয়নের কথায় লেপ্টে রইলো অয়নের বুকে। একরাশ শান্তির ঘুম এসে মুহুর্তেই তার নেত্রকোনে ধরা দিলো। রিমিও ঘুমিয়ে গেলো। অয়ন রিমির মাথায় হাত বুলিয়ে, রিমির ঘুমন্ত চেহারার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো,

‘ তোমার অনুমতির অপেক্ষায় রইলাম রিমিপরী।
অনুমতি পেলেই তোমাকে গভীরভাবে ছুঁইয়ে দিবো। ‘

কথাটি বলে অয়ন রিমিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে পরম শান্তিতে ঘুমের রাজ্যে পদর্পন করলো।

____________

মেঘ হসপিটাল থেকে এসেছে অনেক্ষন হয়েছে। মনটা কেমন কু ডাকছে তার মনে হচ্ছে এখুনি আমানের বড়সোড় ক্ষতি হয়ে যাবে। মেঘ দুশ্চিন্তা নিয়ে নিজের বিছানায় পড়লো। মেঘের ফোন বেজে উঠলো। মেঘ দ্রুত ফোন হাতড়ে ফোনটা রিসিভ করলো। অতঃপর চিন্তিত গলায় বললো,

‘ ড্রাইভার কাক্কু! কি হয়েছে আপনি এতো রাতে ফোন করেছেন কেন? ‘

‘ মেঘ মা! একটা বিরাট গন্ডগোল হইছে। ‘

মেঘের চিন্তা দ্বিগুনভাবে বেড়ে গেলো। মনে এসে হানা দিলো নানা কুরুচিপূর্ণ চিন্তাধারা। মেঘ উঠে দাঁড়িয়ে আস্তে করে বললো,

‘ মিঃ আমান শিকদার ঠিক আছো তো? ‘

‘ মা! তুমি এতো উত্তেজিত হয়ো না। স্যার একদম ঠিক আছে কিন্তু….’

‘ কিন্তু কি? ‘

‘ অয়ন স্যার জেনে গিয়েছে সব। তিনি জেনে গিয়েছেন আপনি আমানকে স্যারকে নিয়ে পালিয়ে এসে, হসপিটালে ভর্তি করিয়েছেন। ‘

মেঘ ধপ করে বিছানায় বসে পড়ে। মাথা তার কাজ করছে না। তার ভাই জেনে গিয়েছে মানে সে নিশ্চই আমানের ক্ষতি করে ফেলবে কিন্তু অয়ন এখনো কেন শান্ত হয়ে রয়েছে? এতোক্ষন তো তার লংকাকান্ড বাঁধিয়ে ফেলার কথা। সেখানে একদম শান্ত হয়ে আছে। ব্যাপারটা বেশ সন্দেহের লাগলো মেঘের। তবুও তাতে গুরুত্ব না দিয়ে মেঘ চটজলদি বলে উঠলো,

‘ ড্রাইভাদ কাক্কু! আপনি এখুনি গাড়ি বের করেন। ‘

‘ কিন্তু কেন মা? ‘

মেঘ কিছুক্ষন চুপ থেকে গম্ভীর গলায় বললো,

‘ আমি মিঃ আমানকে নিয়ে আমার ফ্রামহাউজে যাবো। যা গত বার্থডেতে গ্রেন্ডমা আমাকে দিয়েছিলো। আশা করি ভাইয়া সেখানে আমাদের খুঁজে পাবে না। ‘

‘ কখন বের হবে? ‘

‘ কালকে সকালের দিকে। বাড়িতে বলে যাবো কয়েকদিনের ট্যাুরে যাচ্ছি। ‘

ড্রাইভার হয়তো আর কিছু বলতে চেয়েছিলেন কিন্তু মেঘের গম্ভীর আদেশে তিনি থেমে গেলেন। মন–মস্তুষ্কে তার নানা চিন্তা এসে জটলা পাঁকাচ্ছে। তিনি বুঝতে পারছেন না মেঘের মতো এইটুকু একটা মেয়ের কেন এতো দুশ্চিন্তা অপরিচিত এক যুবকের জন্যে? কিন্তু ড্রাইভার একটা বিষয় খুব ভালো করেই বুঝতে পারছেন মেঘ আপাতত আগুন নিয়ে খেলছে।

______________
প্রকৃতি খুলেছে তার দখিনা দুয়ার। ফাগুন হাওয়ায় ফুটেছে অশোক-পলাশ; দল মেলেছে নানা রঙের নানা ফুল। ফুলে-ফুলে, ঢলে-ঢলে প্রকৃতিতে ঋতুরাজ বসন্তের আগমন বার্তা। রিমি এবং জয়িতা হসপিটালের পাশের হেটে চলেছে। জয়িতা ভয়ে ভয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। অয়নকে সে যথেষ্ট ভয় পায়। রিমির থেকে সে যথেষ্ট দূরত্ব নিয়ে হেটে চলেছে। যদি আবারোও সেদিনের মতো এসে অয়ন তার দিকে ছুড়ি তাক করে? তখন কি হবে? কথাটি ভেবেই শুকনো ঢুগ গিলে। রিমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে। অয়ন সবার ভিতরে এমন এক আতন্ক সৃষ্টি করে দিয়েছে,যার ফলে সবাই এখন রিমির সাথে তেমন একটা মিশেও না। নিরবতা ভেঙ্গে সর্বপ্রথম জয়িতা মুখ খুললো। রিমির দিকে প্রশ্ন নিক্ষেপ করে বললো,

‘ আচ্ছা রিমি! কালকে তো ভেলেন্টাইন ডে। তোর কি কোন প্ল্যান আছে নাকি সাইকো জিজুর সাথে? মানে
আমার তো মনে সাইকো জিজু তোকে একটা বিরাট বড় বাড়ি গিফ্ট করবে দ্যান বলবে রিমিপরী তোমার বাইরে যাওয়ার দরকার নেই। শুধু শুধু লোকের নজর পড়বে। তার থেকে ভালো তুমি বরং এই বাড়িতেই বন্দী থাকো।’

কথাটি বলেই হু হা করে হেসে দিলো। রিমি বিরক্ত নিয়ে বললো,

‘ খুবই বাজে জোক ছিলো। ‘

‘ তাহলে এর অপরাধে তোর সাইকো জামাই কি আমার হাত কেটে দিবে? ‘

রিমি জয়িতার কথার প্রেক্ষিতে কিছু বলবে তার আগেই থেমে গেলো। ফোনটা বেজে উঠলো তার তৎক্ষনাৎ। ফোন রিসিভ করে শুনতে পেলো অপরপাশ থেকে কেউ বলছে,

‘ ভাবি! অয়ন ভাইকে কেউ গুলি করেছে। ভাইয়ের অবস্হা ভালো না।’

চলবে……

[কেমন হয়েছে জানাবেন কিন্তু🙂। দিলাম অয়নরে গুলি করে মাইরা। অয়নকে তো আপনাদের সহ্য হয়না। তাই মেরে দিছি😒এইবার সবাই খুশি?]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here