বসন্তের_ফুল 🌺 #তারিন_জান্নাত #পার্ট১৯

0
680

🌺#বসন্তের_ফুল 🌺
#তারিন_জান্নাত
#পার্ট১৯

ক্রোধের গতি-বেগ এবার বেশ প্রকড়। তীব্র ঘুমে বিভোর প্রেমার।কিন্তু নিজের ক্রোধ ঘুমের মধ্যেও উপলব্ধি করতে সক্ষম সে। রীতিমতো যুদ্ধ শুরু করে দেয় ঘুমের সাথে। কারন একটায়।তার চুল কেউ টানছে।কে সে একবার আঁখি মেলে দেখবেই।

সফল হয় অবশেষে। ঘুম ভাঙতেই চোখ মেলে তাকায়।তখনো চুলে টান অনুভব করছে।হাতিয়ে চুলে হাত রাখতেই একটা কিছুর সাথে স্পর্শিত হয় প্রেমার হাত।এটা যে হাত সেটা মস্তিষ্ক সাথে সাথে বুঝিয়ে দেয় তাকে। প্রেমার হাতের স্পর্শ পেয়ে অপর হাতটি দ্রুত গতিতে সরিয়ে ফেলার চেষ্টা চালাতে গিয়ে ব্যার্থ হয়।কারন প্রেমার তার নখের সহায়তায় সেই হাতটি খামছে ধরে।

বলিষ্ট হাতে প্রেমার হাত সরিয়ে দ্রুত পায়ে রুম প্রস্থান করে অভ্র। শ্বাস ছাড়ে বেলকনি টপকে নিচে নামতেই। আরেকটুর জন্য বাঁচা গেলো।

“এভাবে আর কতোদিন। তোমার সম্মুখীন তো আমাকে হতে হবেই। ব্যাপার না।তখন তোমাকে আমি সামলে নিবো। অবশ্যই” (অভ্র)

কথাগুলো একদমে বলে ফেলে অভ্র।কিন্তু মনে মনে।লাল ঠোঁট জোড়া হালকা বাঁকিয়ে হাসে। যার অর্থ আমি প্রস্তুত।প্রেমার মুখোমুখি হতে।নিজের রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ে অভ্র।

একজোড়া চোখ একদলা প্রশ্ন মনে নিয়ে এতক্ষণ অভ্রের দিকে তাকিয়ে ছিলো।অভ্র যাওয়ার পর একবার বেলকনির দিকে তাকায়। কে থাকে সেই রুমে? কাল অবদি অপেক্ষা না করলে জানা যাবে না।তাই মনের মধ্যে সব গেঁথে রেখে সে ও চলে যায়।ঘুমোতে।

প্রেমা চেয়েও নির্ঘুম থাকতে পারেনি। ভাবনার কূল কিনারা না খুঁজে ঘুমের রাজ্যে ডুব দেয় আবারও।

অভ্রের চোখের ঘুম সহজে নামে না।মধ্যরাত অবদি বিনা কারনে জেগে থাকা তার অভ্যাস।আজ ও তার ব্যাতিক্রম ঘটেনি। মনে মনে একটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হয়।

অভ্র প্রেমার হাসিমাখা একটা ছবির দিকে তাকিয়ে আছে। আচমকা একটা ইচ্ছে জাগে মনের মধ্যে। চোখ আটকায় প্রেমার সরু হালকা উঁচু নাকের দিকে।

” কি কিউট নাকটা?? (বলেই হালকা হাসে)

নিজের ইচ্ছেটা জাহির করেই ফেলে। নিজের নাকটা প্রেমার ছবির নাকের সাথে আলতো করে স্পর্শ করে। এটা যদি বাস্তবে হতো।তাহলে প্রেমার রিয়েকশন টা কি হতো সেটাই অভ্র কল্পনায় দেখে নিচ্ছে।

নিজের কান্ডে নিজেই হাসছে অভ্র। কবে তারা একান্তে থাকবে।নিজের করে পাবে। ছোট্ট একটা ঘরে সংসার পাতাবে। আদরে-ছাদরে জড়াবে একে অপরে। সেই দিনগুলো কতো সুন্দর এবং পরিপূর্ণ হবে।এসব ভাবনার মধ্যে অভ্রের শরীরে শীতল অনুভূতি খেল যায়। কল্পনাতে এতো সুখ। তারা যখন একে-অপরের হয়ে যাবে সম্পূর্ণ রুপে। তখন তো সুখের সাগরে তলিয়ে যাবে দু’জনে।

” ভালোবাসা চায় না। শুধু পাশে চায়।কাছে চায়। শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করা অবদি।ভালোবাসা নামক শব্দটা আসতেই দিবো না আমাদের মাঝে। শুধু থাকবে আসক্তি। পাশে পাওয়ার প্রবল আকাঙ্খা। (অভ্র)

হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আয়েশে চোখে বুজে ফেলে অভ্র।ঠোঁটের কোণায় তৃপ্তিদায়ক হাসি।হাতে নখের আঘাতে ছিড়ে যাওয়া জায়গার ব্যাথার খেয়াল যেনো নেই তার।

||

মানুষের হৈচৈ এ ঘুম ভাঙে প্রেমার। ঘুমের রেশটা কাটিয়ে তুলতে পারছে না। তাই আবারও চোখ বন্ধ করে ফেলে। কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ রেখে আবারও খুলে।মন মেজাজ স্বাভাবিক।রাতের কথা কিচ্ছুটি মনে নেই।এমনই হয় প্রেমার। ঘুমের ঘোরে কারো মার খেলেও সে সকাল অবদি তা মনে রাখতে পারে না। ফোনটা হাতে নিয়ে সময় দেখে নেয়।চমকে লাফ দিয়ে শুয়া থেকে উঠে বাসে যায়।সময় বেলা বারোটা বাজে। কেউ ডাকতেও আসেনি।আজব!

ওয়াসরুমে যাওয়ার আগে চিরুনিটা খুঁজে নেয়।চুল আঁচড়ানোর জন্য। এটা রোজকার অভ্যাস।মুখ ধুয়ার আগে চুল আঁচড়াবে। জানালা খুলে বিছানায় বসে চিরুনি নিয়ে। চুল হাতে নিয়ে সামনে আনতেই সচসিকত হয়। রাতে শুয়ার আগে চুল মেলে দিয়েছিলো স্পষ্ট মনে আছে।তাহলে বিনি করে দিলো কে?

আবার খেয়াল করে লম্বা চুলের ফিতার সাথে ছোট্ট একটা কাপড়ের ব্যাগ ঝুলানো ।এটা ব্যাগ নাকি চুলের ফিতার স্টাইল তা নিয়ে সন্দিহান প্রেমা। কী আজব কারবার।

ফিতাটা খুলার সময় ঝুমঝুম শব্দ দিচ্ছিলো।ব্যাস্ত হাতে ফিতা খুলার চেষ্টায় লেগে পড়ে।ব্যাগটা খুলতেই আরো দ্বিগুন বিস্ফুরিত হয়। কি হচ্ছে এসব তার সাথে? এবারতো নিজেকে পাগল পাগল লাগছিলো প্রেমার।

এসব সমাধান করার মতো মেজাজ নেই প্রেমার।দ্রুত ফ্রেস হয়ে ছুট লাগায় অভ্রের কাছে ওই সব সমাধান দিবে।

সবখানে অভ্রকে খুঁজে না পেয়ে এবার ছাদের দিকে যায়। এ ছেলেটা সবসময় ছাদে কি করে ভেবে পায় না প্রেমা। ঘন পায়ে হেঁটে অভ্রের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। প্রেমা আসতেই অভ্র প্রেমার দিকে ফিরে তাকায়।কিছু বলতে যাবে, তার আগেই,

প্রেমা ছেনছেন গলায় বলে উঠে,

কোন হারামজাদা,আমার সাথে মশকারি
করছে আল্লায় জানে। (চোখ মুখ খিঁচিয়ে বলে)

প্রেমার কথায় অভ্রের কাশি উঠে যায়। বিরতিহীন ভাবে কাশতে লাগে।এক মিনিট পর থেমে বলে,

“ছিঃ প্রেমা! এভাবে গালি দিচ্ছো কেন?(অভ্র)

“গালি দিবো না তো সালাম দিবো।(রেগে)

“এসব শিখলেন কিভাবে ফাল্তু ভাষা।(হালকা রেগে)

” তুমি চুপ করবা। ধ্যাত,
বলেই চলে যেতে নিলে অভ্র ডাক দেয়।

” আচ্ছা বলো কি হয়েছে।হাইপার হচ্ছো কেন?(অভ্র)
অভ্রের কথায় প্রেমা একটু শান্ত হয়।রাগের মাথায় আবুল তাবুল বলে ফেলছিলো।যা এখন বুঝতে পারছে।

” তোমাকে বলছিলাম না? কাল একটা ভুত আমাকে জড়িয়ে ধরেছিলো। সত্যিই ভুত আছে।আমি রাতে শুয়ার আগে চুল মেলে দিয়েছিলাম।ঘুম থেকে উঠে দেখি চুলে বিনি করা। শুধু তাই নয়। চুলের ফিতার সাথে নুপুর ও একজোড়া। এই দেখো।(নুপুর এগিয়ে দিয়ে)

প্রেমার কথায় একবার প্রেমার দিকে একবার নুপুরের দিকে তাকায়। আচমকা অভ্র হাসতে শুরু করে দেয়।হাসার মাঝে একটু থেমে তারপর রসিকতার স্বরে গেয়ে উঠে,

গরম লাগে আমার দুপুরে,
শিহরিত তোমার নুপুরে,

প্রেমার দিকে তাকিয়ে দেখে প্রেমা চোখ মুখ খিঁচে ওর দিকেই তাকিয়ে রয়েছে।

” সরি। আসলে একটু বেশি হয়েছে তাই না? বাদ দাও এখন বলো এগুলা কে দিয়েছে??ভুত??(অভ্র)

“জানি না, (ঠোঁট বাঁকিয়ে)

” কি জানো,

“কাল ওই আইডি থেকে আমার আরো একটা ছবি আসছে।বুঝতে পারছি না কে এসব করছে।সামনে আসে না কেন??

” সামনে আসলে কী করবে??(অভ্র)

” গিলে খেয়ে ফেলবো,

অভ্র মনে মনে কিছু একটা ভাবে।এরপর বলে,
” আমি যদি তোমার সামনে এসে বলি। যে এতোদিন ধরে তোমাকে ফুল দেওয়া,ফলো করা, ছবি দেওয়া, জড়িয়ে ধরা,এবং নুপুর দেওয়া, সব আমি করেছি তাহলে কী করবে??

” ধুর! তুমি কেন এসব করতে যাবে? (প্রেমা)

” যদি করে থাকি,

” ইহা একটি অবিশ্বাস্য কথা।

” বিশ্বাস করতে পারো।

“উহু! বিশ্বাস করার প্রশ্নই আসে না।কারন তুমি এসব করোনি।’পাগল’।তাই আমার সাথে মজা করে আমার মনোযোগ ঘুরানোট চেষ্টা এখন বন্ধ করো।(পেমা)

” হু “(ছোট করে শ্বাস ফেলে)

” আচ্ছা আমি যায়।পরে আলোচনা করবো।ক্ষৃদা পেয়েছে খুব।

“নুপুর?? কী করবে??

” রেখে দিবো। কে না কে দিয়েছে?? (প্রেমা)

” নুপুরগুলা পায়ে পড়তে পারো।ভালো দেখাবে।

” দরকার নেই,

” আমি কিন্তু, তোমার বসন্ত পথিককে খুঁজে দিতে পারবো।যদি নুপুর পায়ে পড়ো তাহলে।(একটু থেমে কথাটা বলল)

অভ্রের কথায় চোখ ছোটছোট করে তাকায়।

” তোমার এতো মাথা ঘামানি কেন??

” কেন আর,নুপুরগুলোর জন্য মায়া হচ্ছে,একটা গার্লফ্রন্ড থাকতো তাকে দিয়ে দিতাম।এককাজ করো? আমাকে দিয়ে দাও, আমি একটা গার্লফ্রেন্ড খুঁজে তাকে পড়িয়ে দিবো।কি বলো??

অভ্রের কথায় প্রেমা কিছু একটা ভাবে, তারপর নুপুর পায়ে পড়তে পড়তে বলতে লাগে,

“দরকার নেই,আমাকে দিয়েছে আমিই পড়বো,(প্রেমা)

কথাটা বলেই চলে যায়।
তারপর অভ্র হাত দিয়ে নিজের চুল ঝাঁকানি দিয়ে শব্দহীন একটা হাসি দেয়।

” বলেই তো দিলাম,বিশ্বাস করলে না। এতো বিশ্বাস। (অভ্র)

কথাটা বলে আবারও চুল ঝাঁকানি দেয়।

(চলবে)

Tarin Jannat

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here