#বসন্তের_ফুল🌺
#তারিন_জান্নাত
#পার্ট_৪৬
প্রেমা অভ্রের বুকে থাকা অবস্থায় অনুভব করতে পারে অভ্রের উদাম শরীর। আগের চাইতে কিছুটা শীতল হয়েছে। তবে হালকা উষ্ণ স্পর্শ পাচ্ছে।
মন-মস্তিষ্ক যখন প্রেমার মাথায় করাঘাত করে জানিয়ে দেয় যে,’এভাবে আর কতক্ষণ? লজ্জা করে না?
দ্রুত সরে আসে অভ্রের বুক থেকে। অভ্রের অদ্ভুদ ঘোলাটে দৃষ্টিতে প্রেমা বিষণ আতংকিত,এবং শিরাই-উপশিরাই বঁয়ে যাচ্ছে অস্তিরতা।
প্রেমাকে কাঁপতে দেখে অভ্র একটা হাসি দেয়। যে হাসি প্রেমা আগে দেখেনি।মৃদু,মুচকি,বা শব্দ করে হেসেছিলো তবে এভাবে হাসেনি। সব দাঁত দেখিয়ে হাসিটা দেখে এমন কঠিন মুহুর্তে প্রেমা ভ্যাবাচ্যাকা খায়। অভ্র একবার প্রেমার হাতের দিকে তাকাল।ছেড়া ছবিটি নিয়ে এপিট-অপিট করে তাকাল।
এরপর নিজের পেটের পাশে কাটা দাগটির দিকে
নজর দিলো।
ছবিটা টেবিলে রেখে,অভ্র প্রেমার উদ্দেশ্যে বলে,
‘মহিলাটির পুরো ছবি দেখবে?
প্রেমা কুঁচকিত কপালের ভাঁজ নিয়ে দ্রুত মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়।অভ্র আবছা হেসে বলে, ‘ তুমি বিষণ অধৈর্য!
প্রেমা করুন চোখে তাকিয়ে থাকে,সে তো আসলোই অধৈর্য। নিজেকে সংযত রাখতে পারে না।
উঁচু আলমারি উপরে অভ্র নিমিষেই হাত চালান করে।এবং একটা ব্যাগ বের করে। ছোট ব্যাগটা চিমটি কেটে ধরে।যেনো ব্যাগটিতে থাকা জিনিস গুলো ধরলে তার হাত ময়লা হয়ে যাবে।
ব্যগটা নিয়ে অভ্র মেঝে ফেলে দিয়ে প্রেমাকে বলে,’ব্যাগটা খোলে দেখে নাও।
প্রেমা সচকিত অবস্থায় অভ্রের কথায় মেঝে থেকে ব্যগটা উঠিয়ে টেবিলে রাখে। কাঁপা হাতে ব্যাগটা খোলে শুধুমাত্র একটা ছবি আছে।সেটা বের করতেই দু’জন মানুষের ছবি বেসে উঠে। প্রেমা ছবিটির দিকে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করে এরা কারা। মহিলাটিকে চেনা চেনা মনে হচ্ছে খুব।কিছু একটা মস্তিষ্ক জানান দেয় প্রেমা।দ্রুত ব্যস্ত চোখো অভ্রের দিকে তাকাল প্রেমা।বিস্ময় পাহাড়ের তুঙ্গে পৌঁছায়।
মহিলাটির চেহেরা হুবহু অভ্রের মতন।কোন অমিল নেই। মিল হওয়ার কারণটা এখনো অস্পষ্ট প্রেমার।
অভ্র আলমারির সাথে ঠেসে দাঁড়িয়ে প্রেমার আচরণ দেখছে।ছবি দেখে নিশ্চয় সে শান্ত থাকতে পারবেনা।আরো একদল কৌতূহল মাথায় এসে চেপে ধরবে।
তাতে কী? সেও আর এই চাপা কষ্টটা নিতে পারছেনা।অন্তত মানসিক শান্তির জন্য হলেও আজ সব ঝাড়বে।
এমনিতেই প্রেমাকে অভ্র নিজের থেকে আলাদা কেউ ভাবেনা।তার ভাস্যমতো মন আর অনুভূতির মিল অনেক আগেই হয়েছে প্রেমার সাথে।
মনে মনে অভ্র একটা বাক্য উচ্চারণ করে,
“শরীরের মিল সবাই ঘটাতে পারে,মন-মস্তিস্ক,অনুভূতির মিল কয়জন ঘটাতে পারে?’
প্রেমা ছবিটার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে অভ্রের দিকে তাকাল।অভ্রের দৃষ্টি ওর দিকেই স্থির দেখে প্রেমা বিব্রতবোধ করে। প্রেমা অভ্র সামনে এসে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ে মারে অভ্রের উদ্দেশ্যে।
‘এই মহিলাটির চেহারা তোমার সাথে মিল কেন? যেখানে তোমার মায়ের সাথে তোমাদের চেহারার মিল নেই।কীভাবে অভ্র?
ম্নান হাসি দেওয়ার চেষ্টা করে অভ্র,অতঃপর চোখ বন্ধ করে। বড়সড় নিঃশ্বাা ত্যাগ করে, প্রেমার হাতের সর্বশেষ ছবিটি নিয়ে ছিঁড়ে টুকরো করে মেঝেতে ছুঁড়ে মারে।তীক্ষ্ণ চাহনি ছুঁড়ে টুকরো গুলোর দিকে।
মাথা তুলতে তুলতে সেই তীক্ষ্ণ চাহনি শিথিল হয়ে আসে। ‘এখান থেকে চলো,আমার গরম লাগছে। ‘
অভ্র এতটুক বলে প্রেমার হাত ধরে ওই রুম থেকে বের হয়ে যায়।দরজাটা আগের ন্যায়ায়ে তালাবদ্ধ করে দেয়।
রুমে এসে আবারও জোরে শ্বাস নিতে শুরু করে অভ্র।যেনো দৌড় প্রতিযোগিতা হয়েছিলো,হাঁপিয়ে গেছে।
প্রেমার হাত ধরা অবস্থায় সোফায় বসে,প্রেমার কিছুটা দূরত্ব রেখে বসে অভ্র।
‘একটা অনুরোধ?
নীরব চাহনি ছুঁড়ে প্রেমা,এবং বলার হন্য অভ্রকে ইঙ্গিত দেয়। অভ্র বলে,’ আমি এখন তোমাকে যা-ই বলি।তা যেনো অভ্র জানতে না পারে।মানে আমি চাই সব ওর অজানা থাকুক,সব!
প্রেমা চকিত কন্ঠে বলে,কী?
অভ্র হালকা রাগ মিশ্রিত গলায় বলে,
‘ওই ছবির মানুষ দু’টির সম্পর্কে।
“উনারা কে অভ্র?
-‘উনারা আমার বায়োলজিক্যাল মা-বাবা।’
প্রেমা বিস্ফোরিত কন্ঠে বলে, ‘মানে?
প্রেমার মানে জানতে চাওয়াই অভ্র বিষণ অসন্তুষ্ট হয়।তবুও প্রেমাকে বুঝতে না দিয়ে সোফায় গা এলিয়ে দেয় এবং,তীক্ষ্ণ স্বরে বলে, ‘মানে জন্ম দিয়েছেন,এই যা। আর কিছুই না। উনাদের সাথে আমার সম্পর্ক এতোটুক। ‘
প্রেমা উদ্ধিগ্ন হয়ে বলে, ‘প্লিজ অভ্র এলোমেলো কথা না বলে আমাকে আসল কথাটা বলো? সব বলো। উনারা তোমার মা-বাবা হলে বর্তমানে যারা আছেন উনারা কে?
অভ্র আঁড়চোখে প্রেমার দিকে তাকাল,চোখ সরিয়ে বলে, উনারা আমাকে জন্ম দিয়েছেন,লিভ ইন রিলেশনশীফে থেকে, মানে আমি উনাদের অ..বৈ..ধ
সন্তান ছিলাম।
এতটুক বলে অভ্র প্রেমার দিকে তাকাল, প্রেমার হাত দু’টো নিয়ে নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বলে,’এখন নিশ্চয় আমার প্রতি তোমার ঘৃণা হচ্ছে,এটাই স্বাভাবিক! তাই বলতে চাই নি। এখন যদি তুমি আমাকে….
অভ্রের একনাগাড়ে বলা কথার সমাপ্তি ঘটানোর জন্য অভ্রের মুখ চেপে ধরে। চোখে বাঁধভাঙা অস্রু। অভ্রের কথার আসল মানে সে বুঝতে পেরেছে।সেদিন অভ্রের দেওয়া ছোট্ট উদাহরণে,যেটা সেদিন বুঝতে পারেনি। তবে আজ বুঝতে পেরেছে। এতোদিনের ধুম্রজালের অবসান আজ ঘটেছে।
কান্না জড়িত কন্ঠে বলে, ‘আমি আর কিছু জানতে চাই না অভ্র। তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে না?
মুখ থেকে হাত সরিয়ে অভ্র বলে, ‘ আমাকে বিষ খাইয়ে দিয়েছিলো,যাতে আমি মারা যায়। কিন্তু মণিমা মানে আমার বর্তমান মা বাঁচিয়েছিলো।
প্রেমার মাথায় যন্ত্রণা শুরু হয়ে যায়।যেনো শ্বাস আঁটকে যাবে। এমন ভয়ংকর অনুভূতি আজ অবধি হয়নি।
-” কতো খারাপ!
-‘ বিষণ খারাপ উনারা প্রেমা। তাদের মিস্টেক করার সময় হুস ছিলোনা।অথচ আমার জন্মের পর সব জ্বালা। মণিমাকে আমি আদ্রের সামনে মা ডাকি যাতে ওর সন্দেহ না হয়। যাতে কোনদিন সে জানতে না পারে তার ভাই কতোটা কষ্টে থেকেছিলো।
-‘ নাহ আমিও চাই না আদ্র এসব না জানুক।কিন্তু আদ্রের…?
প্রেমার মুখ থেকে বাকি উচ্চারিত কথা অভ্র বলে উঠে,’আদ্রের যখন জন্ম হয় তখন আমার বয়স নয় ছিলো। আদ্রের জন্মের আগে অবশ্যই উনারা বিয়ে নামক কাজটি করেছিলেন,যেটা আমার সময়ে করলেও পারতেন।
প্রেমা বুঝতে পারছেনা অভ্রের কথার পরবর্তী উত্তর কী দিবে? তবে সে এসবের জন্য বিষণ কষ্ট পাচ্ছে।
তার মধ্যেই অভ্র বলে, ‘ তুমি,আর মণিমা দু’জন ব্যক্তিই হয়তো আমার পরিচয় জেনে ঘৃণা হচ্ছেনা। তবে আমাকে যারা জন্ম দিয়েছিলো তারাই নাক ছিঁটকে ছিলো। আমি ভাবি আমার জন্মের পর আমার শরীরে কোন রকম ট্যাগ ছিলো যে আমি….
তারপরেও কেন আমাকে সহ্য করতে পারতো না।আমিই একজন মানুষ যার সব থেকেও ভালোবাসা নামক অদৃশ্য সম্পর্কের ছিটেফোঁটাও নি।
‘-উনারা কোথায় থাকেন তুমি যানো? একসাথে আছেন?তাহলে আদ্র কেন?
প্রেমার প্রশ্নে অভ্র হাসে।অদ্ভুদ ভাবে। এ হাসির অর্থ উদ্ধারে প্রেমা অক্ষম।
‘ভালোবাসা এতো জোড় ছিলো যে আদ্র জন্ম হওয়ার পর তাদের মনে হলো তারা একে-অপরের জন্য ফার্পেক্ট নয়।কী জগন্য চিন্তা।
পরে আলাদা হয়ে যায়।ডিভোর্স করে।আমার কথা বাদ দিলাম আমার ছোট শিশু ভাইটির চিন্তাও করেনি।
সম্পর্কে ভেঙে দেয়।একজন বয়ফ্রেন্ডের সাথে চলে যায়।আর অন্যজনও হয়তো নিজের মতোই ঘুছিয়ে নিয়েছে তবে আমি জানিনা। জানতে চাইও না।
মাঝে মাঝে ওই অভিশপ্ত বাড়িটির সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। হাজারো প্রশ্ন করি। কেন হলো এমনটা আমার সাথে? কেন?
প্রেমার চোখের পানি থামার নাম নেই,অথচ অভ্রের এতো কষ্টের মাঝে মন পাথরে পরিণত হয়েছে।কাঁদতে দেয় না তাকে। একটু থেমে অভ্র আবার বলে,
-‘ সেদিন রাতে আমার পিঁছু নিয়ে যেখানে গিয়েছিলে? সে বাড়িটাতেই আমার জন্ম হয়েছিলো। আমি সব দোষ ওই বাড়িটাকেই দিয়ে এসেছি। প্রতি জন্মদিনের রাত বারোটায় আমি সেখানে যেতাম।ইচ্ছেমতো অবশিষ্ট সব জিনিস ভেঙে ফেলতাম।রাগে ক্ষোভে।
তবে সেদিন পারিনি,তোমার জন্যে,তাতে আমার আফসোস নেই। আমি পণ করেছি আর ওই বাড়িতে যাবোনা।যদি তুমি সাথে থাকো তো।
প্রেমার দিকে তাকাল অভ্র,নিজ হাত দ্বারা প্রেমার গাল স্পর্শ করে।চোখের পানি মুছে দেয় অভ্র,
‘ প্লিজ কান্না থামাও,
‘আমার খুব কষ্ট হচ্ছে অভ্র,তোমার সাথে তখন দেখা হয়নি কেন? সত্যিই আমি তোমাকে কষ্ট পেতে দিতাম না।
প্রেমার কথায় অভ্র হাসে।
‘মণিামা আর আমাকে জন্ম দেওয়া মহিলাটি,দু’জনে বোন। অথচ তাদের মধ্যে আকাশ পাতাল সমান। মণিমা আমাকে আর আদ্রকে ছাড়া বিয়েও করতে রাজি হয়নি। বাবাও চাইনি আমরা আলাদা হই,উনিও চেয়েছেন মণি মায়ের থাকি। তাই আমাদের নিয়ে যায় উনাদের সাথে।
সমস্যা বাঁধে আরিয়ানের মা মানে বড় মা,আমাকে আর আদ্রকে উনি সবসময় বাইরের মানুষ বলতেন।আমরা যেনো উনার চোখের বিষ।
একদিন উনার হাত থেকে আমাকে বাঁচানোর জন্য মণিমা বাঁধা হয়েছিলন। পরে সিঁড়ি থেকে পড়ে উনার মিসক্যারেজ হয়ে যায়। মণিমার প্রথম বেবিটি চলে যায়। যার জন্য মা আজো নিসন্তান। শুধু আমার জন্য হয়েছে।
তবে কী জানো? আমার মাকে কষ্ট দিয়েছে, সে কষ্ট আমিও দিবো।উনিও পাবেন!
প্রেমা কাঁপা স্বরে জিজ্ঞেস করে,’কীভাবে?
অভ্র বাঁকা হাসি দিয়ে বলে, ‘সেটা তোমার অজানা থাক।
প্রেমাও চুপ হয়ে যায়। অভ্রের পেটে হাত রাখতেই,অভ্র প্রেমার দিকে তাকাল।নিচু স্বরে প্রেমা জিজ্ঞেস করলো,’এটা কীভাবে কেটেছে?
অভ্র হেসে বলে, ওই মহিলাটি ধাক্কা দিয়েছিলো, যার ফলে পেটে ভাঙা কাঁচ ঢোকে গিয়েছিলো। ভাগ্য ভালো ছিলো মারা যায়নি। অনেক কষ্ট হয়েছিলো। এই ইনজুরির কারণে,তাই আমার হুটহাট জ্বর উঠে।তখন বিষণ ভয় হয়।সেই কষ্টটা মনে পড়ে যায় আবারও তবে জ্বর নিজে নিজে সেরে যায় এখন।
প্রেমা কান্না থামছে না দেখে অভ্রের এবার মেজাজ খারাপ হয়ে যায়।সে তো এখন আর কষ্ট পায় না।তাহলে প্রেমা কেন কাঁদবে।
অভ্র প্রেমাকে হ্যাঁচকা টেনে নিজের সাথে মেশায়। এবং ঘাঁড়ে মুখ ডুবিয়ে দৃঢ় কন্ঠে বলে ‘তুমি তোমার কান্না থামাও,নাহলে আমি আর থামবোনা’
অভ্রের কথায় প্রেমা জমে বরফ হয়ে যায়। অজানা অনুভুতি এসে মনের দরজায় করাঘাত করে। প্রেমাকে থামতে দেখে অভ্র সরে যায়। প্রেমার ডান হাতটা নিয়ে আলতো করে ঠোঁট বুলায়।
তাতেও যেনো প্রেমা ধম বন্ধ হয়ে যাওয়ার জোগাড়।
-‘অভ্র আমি যাই,ঘুমাবো।
অভ্র মিটিমিটি হেসে বলে,’ আমি তো আগেই বলেছিলাম চলে যেতে,তুমি যাওনি।তার মানে কী? তুমিও……
অভ্রের কথায় প্রেমা ‘ধ্যাত ‘বলে উঠে চলে যায়।আর অভ্র প্রেমার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে প্রশান্তির শ্বাস ছাড়ে। সত্যিই আজ তার নিজেকে হালকা অনুভব হচ্ছে।
(চলবে)
রিভিশন দেয়নি,কেমন হয়েছে জানাবেন একটু, Tarin Jannat