#নয়নতারা
পর্ব ২৪
Suvhan Årag (ছদ্মনাম)
Suvhan Arag’s Storys
তানহার কথা শুনে নাফিজের কপালে ভাঁজ পড়েছে।বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে কপালে।নাফিজ তো বিশ্বাস ই করতে পারছে না সত্যি সত্যি কি তবে মিষ্টিকে সে অবশেষে ফিরে পেলো।
—-ক্যাপ্টেন নাফিজ আপনি কি শুনছেন আমার কথা?
—-শুনছি।
—-আমিই আপনার সেই মিষ্টি নাফিজ।
—-সত্যি আপনি ই মিষ্টি!
—-হ্যাঁ আমিই মিষ্টি।
তানহার দিকে ভালো করে লক্ষ্য করলো নাফিজ।না তেমন তো বোধ হচ্ছে না।হচ্ছে না কোনো অনুভূতি।তার বেবি সিনড্রেইলা যে চরম সুন্দরী ছিল তার তো এখন আরো সুন্দর কোনো পরী হওয়ার কথা।মিলছে না তো।
—-আমি সেদিন ওরিয়েন্টেশনে আপনার কথা শুনে খুব অবাক হয়েছিলাম।আমি তো এটাই ভেবেছিলাম সত্যি সত্যি কি এতো অপেক্ষার পর আমি আমার নাফিজ ভাইয়া কে পাব।আমি এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না।
—-সব মিথ্যা ও একটা সত্যি থাকে।আপনি কি জানেন ক্যাপ্টেন তানহা?মিথ্যার পরিচয় দিতে গিয়ে আমরা কখন নিজেরাই যে সেই মিথ্যার সত্যি টা কে সামনা সামনি প্রকাশ করে নেই আমরা নিজেরা ও বুঝতে পারিনা।একে বলা যায় একদম সাদামাটা গ্রাম্য ভাষায় গানজাখুরে কথা।তাও যে সে গানজা না ভুনা করা লাল রঙের মাঝে আকাশি শ্যাডো দেওয়া পিংক কালারের গানজা।কোল্ড ড্রিঙ্কসের সাথে খেলে হয়তো আরো জমবে কি বলেন ক্যাপ্টেন তানহা।
তানহার দিকে তাকিয়ে নাফিজ এক রহস্যময়ী হাসি দিল।
;;;;;
—-আফা আপনে খাইবেন না?
—-খাব।এখন ইচ্ছে করছে না।
—-আফা হেই কথা বলেন না।ম্যাডাম জানলে আমাকে আস্তো রাখবে না।একদম নুন তেল ছাড়া কাচা ভুনা করে খাইবে।
—-হা হা গাসু কি যে বলো না তুমি।
—-ওষুধ খাইবেন কেমনে?
—-একটু পরে খাই গাসু।
—-আইচ্ছা।
গাসু খাবারটা টেবিলের ওপর রেখে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রেখে নিচে চলে গেল।
তারা জানালার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে আছে।বিকেলের আংশিক রোদ জানালা ভেদ করে বাকা হয়ে ঘরে ঢুকেছে ।তারার দৃষ্টি বাড়ির সামনের বাগানের দিকে।তাও ঠিক নয় তার থেকে একটু দূরে কোনাকুনি ঐ গাছটার দিকে।মোটাসোটা মেহগনি গাছ।বেশ ঝাপটানো।অনেক লম্বা।দেখেই বোঝা যাচ্ছে অনেকদিন গাছের বয়স।গাছটার পাশে আরো অনেক গাছ ই রয়েছে।কিন্তু তারার দৃষ্টি একমাত্র ঐ গাছটার দিকে।নিচের দিকে ঢালু হয়ে যাওয়া ঘাসের দিকে।
—-সে কি আজ ও এসেছিল?অপেক্ষা করেছিল কি?কিন্তু কেন আসে সে এখানে?কিসের অপেক্ষা তার?কার জন্য?
;;;;;
নাফিজের কথা শুনে তানহা নিজেই এবার ঘেমে যাচ্ছে।গলা শুকিয়ে যাচ্ছে তানহার। ঢোক গিলছে সে বারবার।
—-আপনি এতো ঘামছেন কেন ক্যাপ্টেন তানহা?
—-কই না তো।
—-তানহা আপনি চাকরি তে আমার সেম ব্যাচেই ছিলেন ট্রেনিং এ তাই না।
—-হ্যাঁ।
—-যতদূর জানি আমার বয়স ২৯ বছর।আপনি সর্বোচ্চ গেলে আমার থেকে দু তিন বছরের ই ছোট হতে পারেন তাই না?
—-হ্যাঁ কেন?
—-এটাই তো আপনার মিথ্যার সত্যি ক্যাপ্টেন তানহা?
—-মানে!
—-আমার মিষ্টির যখন পাঁচ বছর বয়স আমি তখন নবম শ্রেনীতে পড়ি।আমার আর ওর বয়সের পার্থক্য অনেক।দশ বছরের।আর এখন যদি আমার বয়স ২৯ হয় তো ওর বয়স ও ১৯ হবে।বুঝতে পারছেন তো?
তানহা আরো ঘেমে যাচ্ছে নাফিজের কথা শুনে।
—-এখন ওর যতদূর ধারনা করি এইচএসসি লেভেল আই মিন কলেজে পড়া উচিত।তো আমার মিষ্টি কলেজে না পড়ে রাতা রাতি কি এতোটাই বড় হয়ে যাবে যে ট্রেনিং শেষ করে আরো কয়েক বছর চাকরি করে প্রমোশন পেয়ে সে একদম ক্যাপ্টেন হয়ে যাবে!কি হলো কথা বলুন।
তানহা মাথা নিচু করে বসে আছে।তানহাকে চুপ থাকতে দেখে নাফিজ টেবিলে জোরে বাড়ি দিল।তানহা কেঁপে উঠলো।
—-এখানে এসে ধরেই দেখছি আপনি শুধু আমার কেবিনের সামনে দিয়ে ঘুর ঘুর করেন।আর এই নিয়ে দুদিন হলো একদম কথা বলতে চলে এসেছেন।ভদ্রতার খাতিরে এতোদিন কিছু বলিনি তার মানে এই না যে কিছু বলব না।আপনার সাহস কি করে হয় আমার মিষ্টিকে নিয়ে মিথ্যা কথা বলার?
—-আমি,,,,,
—-আপনার কোনো কথা শুনতে চাই না আমি।কেন এসব করছেন বলুন?
—-আপনি বললেন না সব মিথ্যার পেছনে ও একটা সত্যি থাকে।এর ও একটা সত্যি আছে ক্যাপ্টেন নাফিজ।
—-কি সত্যি?
—-এটা সত্যি যে আমি ঐ মিষ্টি না।কিন্তু আমার অতীত টি মিষ্টির থেকে কম না।জানেন আমি যখন ক্লাস টু তে পড়ি আমার মা মারা যায় আমার ছোট বোনকে জন্ম দিতে গিয়ে।জানেন যেদিন আমার মা মারা যায় তার পরের দিন ই আমার বাবা নতুন বিয়ে করে আনে।আমি ভেবেছিলাম হয়তো নতুন মা ও আমাদের মায়ের মতো আদর করবে।কিন্তু না তার উল্টো হলো।দিন দিন নতুন মায়ের অত্যাচার বাড়তেই লাগলো।কৌটোর দুধ শেষ হলে বাবা দুধ ও এনে দিত না আমার বোনের জন্য।ওকে কতো ভাতের মাড়, চিনির পানি এসব খাইয়েছি।বাবা যেন আমাদের ভুলেই গেছিল।এরকম করতে করতে আর সহ্য করতে পারি নি।আমার মামা এসে আমাদের নিয়ে যায়।সেখানে কদিন যেতে না যেতেই মামীর অত্যাচার।মামী মারতো না কিন্তু প্রচুর খাটাতো।আধপেটা হয়ে কতো থেকেছি।অনেক কষ্টে এইচএসসি পরীক্ষার র পর অফিসার পদের পরীক্ষা তে অংশগ্রহণ করি।টিকে যাই।আর তারপর,,,,,,জানেন ঐ যে বাবার কাছ থেকে এসেছি এরপরেও আজ অবধি একদিন ও বাবা খোঁজ নেয়নি আমাদের বেচে আছি নাকি মরে গেছি।
তানহা কেঁদেই দিয়েছে নাফিজের সামনে।নাফিজের ও বড্ড খারাপ লাগছে তানহার কথা শুনে।
—-এজন্য প্রথম দিন আপনার কথা শুনে মনে হয়েছিল আমি যেন অনেকটা আমার প্রতিচ্ছবি ই দেখছি।
—-আপনার অতীত শুনে খারাপ লাগল ক্যাপ্টেন তানহা।কিন্তু আপনি যেটা করেছেন সেটা আমি ক্ষমা করবো না।এটাই শেষ সুযোগ।এরপর যদি আপনি এমন কিছু করেন আমি ওপর মহলে জানাতে বাধ্য হব।
—-আপনি এমন করবেন না।এই চাকরি টা করে আমি আর আমার বোন সুখের মুখ দেখেছি।
—-তাহলে আর কোন কথা না ।বেরিয়ে যান।
তানহা আর কিছু না বলে বেরিয়ে গেল।নাফিজ বসে বসে আরেক চিন্তা করছে।
—-সত্যি তো।তানহাকে তো না হয় আমি লক্ষ্য করেছি।এরকম তো যে কেউ এসে আমার কাছে নিজেকে মিষ্টি বলে দাবি করতে পারে।
নাফিজের মনে হঠাৎ অন্য চিন্তা জাগলো।
—-তারা কেমন আছে এখন?
;;;;;
রাত পেরিয়ে গেছে।সূর্য উঁকি দিচ্ছে।আজ বেশ ঠান্ডা পড়েছে।নাফিজ তো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাঁপছে।দু হাতের তালু বার বার ঘষে তার ভেতর ফু দিচ্ছে গরম করার জন্য।
শুক্রবার।তবুও সকালে না ঘুমিয়ে নাফিজ ছুটে চলে এসেছে এক নজর দেখে তার তৃষ্ণা মেটানোর জন্য।
নাফিজের দৃষ্টি তারাদের বাড়ির দরজার দিকে।
—-আজ ও কি আসবেন না তারা।উনি কি এখনো সুস্থ হন নি?
ভাবতেই নাফিজের মুখে একরাশ বিষন্নতার ছাপ ফুটে উঠলো।
—-আর্মি তে ট্রেনিং এর সময় অনেক কিছু ই সেখানো হয়।দড়ি বেয়ে ও পরে ওঠা থেকে উঁচু দেয়াল থেকে ঝাঁপ দিয়ে নামা অনেক কিছু।কিন্তু আর্মি তে অফিসার্স ট্রেনিং এ যে কারোর বাড়ির সামনে উঁকি দেওয়া শেখানো হয় সেটা সত্যি আমি জানতাম না ক্যাপ্টেন।
চলবে———–
(তানহার ক্যারেকটার টা শুধু কাহিনির মধ্যে একটু অন্যরকম কিছুর ছোঁয়া আনবো বলেই দিয়েছিলাম।আর এটা তো সত্যি নাফিজের প্রতি ভালো লাগা থেকে তানহা কেন যে কেউ এই সুযোগ নিতে পারে)