#অপূর্ণ_প্রেমগাঁথা
#The_Mysterious_Love
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ৩
চোখ খুলে মাধুর্য নিজেকে কুয়োর কাছে দেখতে পায়। অবাক হয়ে তাকায় যে। আকাশের দিকে তাকায়। এখন তো দিন। সূর্য গাছের ওপর দিয়ে চিকচিক করছে। মাথা থেকে হাত সরায় মাধুর্য। ও কি এতোক্ষণ স্বপ্ন দেখছিল? নাহ! ও সব কিছু অনুভব করেছে। গলায় হাত দেয় মাধুর্য। গলায় ওড়না না পেয়ে চকিতে তাকায় সে। ওড়না নেই? আশেপাশে খুঁজেও যখন ওড়না পায় না তখন মনে পড়ে ওর রাজমহল থেকে দৌড়ে বেরিয়ে আসার কথা। তাহলে সবটা কি সত্যি ছিল? ও সত্যিই অন্য দুনিয়ায় চলে গিয়েছিল? কীসের দুনিয়া ছিল সেটা? জানা হলো না মাধুর্যের। গাছের দিকে তাকাতেই দেখে ঠকঠক করে কাঁপছে কেউ গাছের আড়ালে। এগিয়ে গিয়ে কবিতার কাঁধে হাত রাখতেই চমকে চিল্লিয়ে সরে যায় কবিতা। মাধুর্য বিরক্ত হয়ে বলে ওঠে….
–“আরে আমি। মাধুর্য।”
স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে কবিতা। মাধুর্য গভীর চিন্তায় মগ্ন। কি হয়েছিল ওর সাথে সে নিজেও জানে না। কাঁধে ব্যাগ তুলে নেয় সে। কবিতা মাধুর্যের গালে হাত রেখে বলে….
–“তুই না কুয়োতে পড়ে গেছিলি? বের হলি কি করে? তাও একেবারে শুকনো অবস্থায়? তোকে পড়তে দেখে ছোট খাটো হার্ট অ্যাটাক হয়ে গেছিল। আমি তোকে বলেছিলাম এসব জায়গায় আসিস না।’
–“ঠিকই বোধহয় বলেছিস। চল এখন তাড়াতাড়ি। ক্লাসে যেতে হবে।”
কুয়োর দিকে আনমনে তাকিয়ে কথাটা আওড়ায় মাধুর্য। কবিতা চোখ বড় বড় করে বলে ওঠে….
–“তোর ওড়না কোথায়?”
অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে মাধুর্য। আমতা আমতা করে বলে….
–“জানি না। কুয়োতে পড়ে গেছে মনে হয়। সমস্যা হবে না। কটি পড়ে আছি তো। কিছু হবে না। চল।”
দ্রুত পায়ে হেঁটে চলে যায় মাধুর্য ও কবিতা। মাধুর্য যাওয়ার সময় বার বার ফিরে তাকায় কুয়োর দিকে। কিছু আছে ওই কুয়োতে। যা ওকে বার বার টানছে। কিন্তু ও যা যা দেখল সব কল্পনা নাকি বাস্তব তা মেলাতে পারছে না মাধুর্য।
মাধুর্য ও কবিতা ইউভার্সিটিতে পৌঁছাতে পৌঁছাতে একটা ক্লাস শেষ হয়ে যায় প্রায়। তখন দলে দলে সব ক্লাস থেকে বেরিয়েছে সবাই। ইউনিভার্সিটি লাইফ মানে মজার জীবন সবার কাছে। ইচ্ছেমতো চলাফেরা করতে পারে সবাই। দোতালার নিজের ক্লাসরুম থেকে বের হয় অরুণ সহ তার বন্ধুবান্ধব। সবাই হাসাহাসিতে মগ্ন। হাসতে হাসতে একে ওপরের গায়ের ওপর পড়ছে। কিন্তু অরুণ আছে অন্য চিন্তায়। ওর কপালে কুঞ্চিত! মাধুর্যকে ইউনিভার্সিটিতে দেখতে পায়নি আজ সে। তার ধারণা কাল ওই অসভ্যতামো করায় মাধুর্য রেগেই আসেনি। নিচে চোখ পড়তেই দাঁড়িয়ে যায় অরুণ। মাধুর্য এসেছে। গার্ডেন পেরিয়ে হেঁটে আসছে।
–“আরে অরুণ, তোর কি হয়েছে বল তো? আজ কোনো মজা করছিস না। চুপচাপ আছিস। নতুন মুরগী বলি দেওয়ার জন্য খুঁজছিস নাকি?”
অরুণের এক বন্ধু প্রশ্ন করেও এটার উত্তর সে পায় না। সবাই ফিসফিস করে অরুণের এসব রহস্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা চালাতে থাকে। তৎক্ষনাৎ অরুণ বলে ওঠে….
–“তোরা থাক। আমি আসছি।”
একপ্রকার হম্বিতম্বি হয়ে চলে যায় অরুণ। তার বন্ধুরা বোকা বনে যায়। তখন তারা তাকায় মাধুর্যের দিকে। তারপর একে ওপরের দিকে দাঁত কেলিয়ে চিল্লিয়ে বলে ওঠে….
–“ওহ হো! এই ব্যাপার।”
সবাই হাসাহাসি করে। কেউ কেউ সিটি বাজায়। ওরাও যায় অরুণের পেছন পেছন।
গার্ডেন পেরিয়ে মূল বিল্ডিংয়ে প্রবেশ করতেই একজন মানুষকে হুট করে সামনে দেখে চমকে যায় মাধুর্য এবং কবিতা। মাধুর্য এমনিতেই চিন্তিত ছিল। তাই বেশি চমকায় সে। এভাবে অরুণের আগমন পছন্দ করেনি সে।
–“সমস্যা কি আপনার? আচমকা মেয়েদের রাস্তা আটকান কেন? আজও কি কালকের মতো অসম্মান করবার সাধ জেগেছে?”
সানগ্লাস খুলে টিশার্টের গলায় সানগ্লাস ঝুলিয়ে দেয় অরুণ। নিজের ব্রাউন কালার করা চুল এপাশ-ওপাশ নাড়াতে নাড়াতে বলে….
–“মিস. মাধুর্য, আপনার কি মনে হয় না আপনার নামের সঙ্গে যেমন চেহারার মিল রয়েছে তেমনই কথাবার্তাতেও মিল থাকা উচিত?”
–“সরি! আই ডোন্ট আন্ডারস্ট্যান্ড?” (ভ্রু কুঁচকে)
অরুণ হালকা ঘাড় নিচু করে ঝুঁকে পড়ে মাধুর্যের দিকে। অস্বস্তিতে সরে যায় মাধুর্য।
–“আই মিন, তোমার কথাতে একটু মাধুর্য মেশানো যায় না?”
–“না যায় না। আপনি যেমন আমি ঠিক তেমন ব্যবহার করছি আপনার সাথে। আর আপনি যদি ভেবে থাকেন আমাকে সরি বলে বা বুঝিয়ে-সুঝিয়ে আমাকে কনভিন্স করে আপনার এসব রাগিং এর ব্যাপারে হেড অফিসে কমপ্লেন দেওয়া থেকে বিরত রাখবেন। তাহলে আপনি ভুল করছেন অরুণ হোসাইন। নাউ সাইড প্লিজ!”
অরুণ সাইড হওয়ার আগেই মাধুর্য হনহন করে চলে গেল তার পাশ কাটিয়ে। কবিতা হাবাগোবার মতো তাকিয়ে ছিল এতোক্ষণ। সব যেন মাথার ওপর দিয়ে গেল ওর। মাধুর্য যেতেই ও নিজেও হাঁটতে শুরু করল। মাধুর্যকে পেছন থেকে পর্যবেক্ষণ করে দুই হাত মাথার পেছনে রেখে অরুণ বলে….
–“যাহ বাবা। আমার নামে কমপ্লেন করবে। তাতে যদি মিস. মাধুর্য খুশি হয় হক!”
মাধুর্যের চলা পর্যবেক্ষণ করতে থাকে সে। অরুণ বিরবির করে বলে ওঠে….
–“জাস্ট একবার পেছনে তাকাও। তাকাও তাকাও।”
মাধুর্য হাঁটতেই থাকে।
–“একবার পেছনে তাকাও।”
মাধুর্য তাকায় না। অবশেষে সিঁড়ি দিয়ে ওঠার আগে ঘাড় ফিরিয়ে পেছনে তাকায় মাধুর্য। তবে ওর চোখে বেশ রাগ। সেটা স্পষ্ট। তাতে কি? অরুণের ইচ্ছে পূর্ণ হয়েছে। সে হাত মুঠো করে বলে….
–“ইয়েস! ইয়েস!”
মাধুর্য একনজর তাকিয়ে বিরবির করে বলে…..
–“জাস্ট ইম্পসিবল অ্যান্ড বাস্টার্ড বয়।”
সেদিনের অদ্ভুত ঘটনার কেটে যায় প্রায় ১ মাস। অবশেষে ভুলতে বসেছে এসব ঘটনা মাধুর্য। নিজের দৈনন্দিন জীবন নিয়ে ব্যস্ত থাকে সে। ভুলেও কোনোদিন আর সেই রাস্তায় পা বাড়ায়নি। কিন্তু কোথাও একটা ইচ্ছে রয়ে গেছে সেইখানে যাবার। মন যেন বলে ওই জায়গায় সঙ্গে কোনো টান আছে। তবুও যায় মাধুর্য। একপ্রকার জোর করেই বিষয়গুলো ভুলে গিয়েছে সে।
অন্যদিকে অরুণ বিভিন্ন ভাবে ইম্প্রেস করবার চেষ্টায় রয়েছে মাধুর্যকে। কিন্তু মাধুর্যের মনে যত ঘৃণা অরুণের মতো ছেলেদের প্রতি সেই ঘৃণা যেন কখনোই কাটিয়ে উঠবার নয়। এই ১ মাসে মাধুর্য নিজে থেকে কখনই অরুণের সঙ্গে কথা বলেনি। শুধুমাত্র দুই থেকে তিনটে বাক্য উচ্চারণ করেছে অরুণের সামনে। সেটা হলো, ‘সামনে থেকে সরুন, আমি ক্লাসে যাব, আমার সামনে আসবেন না।’
এই কয়টা বাক্য শুনতে শুনতে ক্লান্ত অরুণ। ওর মতো একজন সুদর্শন যুবককে কি করে মাধুর্য উপেক্ষা করছে সেটাই ভেবে পায় না অরুণ।
–“মাধুর্য, যা তো গিয়ে ছাদে কাপড় গুলো শুকাতে দে। আর হ্যাঁ বালিশগুলোও নিয়ে যাস। রোদে দিতে হবে।”
ইউনিভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছিল মাধুর্য। রেনুকার এমন আদেশে থেমে যায় সে। খানিকটা জোরে বলে….
–“মামি মা, বলছিলাম যে আমি তো রেডি হচ্ছি। আর রোদ বাইরে তো…..”
কথাটা শেষ করবার আগেই রেনুকা তড়িঘড়ি করে ছুটে আসেন। পেছন পেছন আসে সানিয়া। ধমক দিয়ে রেনুকা বলে ওঠেন….
–“তুই যাবি না তো কে যাবে? সামিহা? নাকি সানিয়াকে যেতে বলছিস? আমার মেয়ের স্কিন কালো হয়ে গেলে তখন কি হবে? খালি সবসময় কাজ না করার ছুতো খুঁজিস তাই না? যা ছাঁদে।”
মাধুর্য আর কিছু বলতে পারে না। রেনুকা ভেংচি কাটেন। হাতভর্তি বালিশ সহ কাপড় নিয়ে ওপরে ওঠে।
কড়া রোদে কাপড় শুকাতে দিতে থাকে মাধুর্য। তাকাতেই পারছে না সে। চোখ যেন ঝলসে যাবে। বালিশ রাখতে গিয়ে ওর চোখ পড়ে তার হাতের দিকে। হাত লাল হয়ে যাচ্ছে। হাত নাড়তে থাকে মাধুর্য। থাকা যাচ্ছে না আর। মুখও পুড়ে যাচ্ছে মনে হচ্ছে। দ্রুত পায়ে নিচে নেমে যায় সে।
ঘরে এসে আয়নায় সামনে দাঁড়িয়ে নিজের লাল মুখ আর হাত দেখতে থাকে মাধুর্য। তখনই ওয়াশরুম থেকে শাওয়ার নিয়ে বের হয় সামিহা। মাধুর্যকে এখনো বাড়িতে দেখে বলে ওঠে….
–“মাধুর্য, এখনো ইউনিভার্সিটিতে যাস….”
কথা শেষ না হতেই ওর চোখ পড়ে মাধুর্যের লাল চোখমুখের দিকে। দ্রুত পায়ে এগিয়ে এসে মাধুর্যের গালে মুখে হাত দেয় সামিহা।
–“এই অবস্থা কেন তোর? কি করে হলো?”
সামিহার কন্ঠে অস্থিরতা। মাধুর্য নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে তাড়াহুড়ো করে বলে….
–“এমনি। বাইরে রোদে ছাঁদে গিয়েছিলাম আপু তাই। আমি আসছি। অলরেডি অনেক লেট হয়ে গেছে রে। এবার ক্লাস শুরু হয়ে যাবে।”
তাড়াহুড়ো করে বের হতে নিতেই সামিহা মাধুর্যের হাতে ছাতা ধরিয়ে দেয়।
–“বাইরে রোদ তাহলে ছাতা নিয়ে যা। আবার সমস্যা হবে।”
মাধুর্য মিষ্টি হেসে ছাতা নিয়ে বেরিয়ে যায়। সামিহা মাথার চুল মুছতে মুছতে বেডে বসে পড়ে। মাধুর্যকে নিয়ে চিন্তা হয় ওর। সামিহার মা ওকে যেভাবে অশান্তি দেয়। একমুহূর্ত বসে দম ফেলতে দেয় না। এসব নিয়ে চিন্তা হয় ওর। সামিহা কতো আটকাবে নিজের মাকে? মাধুর্যকে অপমান করার ছুতো খুঁজতে থাকেন রেনুকা। কিছু একটা করা দরকার মাধুর্যের জন্য। দীর্ঘ নিশ্বাস ছাড়ে সামিহা।
আজ মেইন রাস্তায় গাড়ি না পাওয়ায় খানিকটা বিব্রত হয় মাধুর্য। মেইন রাস্তা যেন খাঁ খাঁ করছে। মেইন রাস্তায় গাড়ি না থাকা অস্বাভাবিক বিষয়। তার মধ্যে ওর বাড়ির রাস্তার দুপাশে খানিকটা জঙ্গলের মতো। মাথার ওপর ছাতা ধরে হাঁটছে মাধুর্য। বারে বারে হাতের ঘড়ি দেখছে সে। কবিতা আগেই চলে গিয়েছে আজ। তাই ওকে একা একা হাঁটতে হচ্ছে। মনে মনে গাড়িওয়ালা গুলোর গুষ্টি উদ্ধার করে ফেলছে মাধুর্য।
———————————-
–“আজ ও আবার বেরিয়েছে? তাও রোদের ভেতরে? ওকে বার বার বলে রেখেছি কয়েকমাস বাড়িতে থাকতে। রোদের মাঝে তো আমাদের সমস্যা হয়। শক্তি কমে আসে। তার ওপর এতে বছর জ্ঞান না থাকায় ওর শক্তি অনেক খানি কমে এসেছে। ওর বাইরে না বের হওয়ায় ভালো। তুমি আটকাতে পারলে না রায়মা?”
প্রলয় কড়া গলায় কথাগুলো বলেন। রায়মা শান্ত গলায় বলে….
–“সে ছেলে কি কারো কথা শোনে? ও হন্নি হয়ে খুঁজে বেরাচ্ছে সেই মেয়েটাকে। যে ওকে অভিশাপ মুক্ত করেছিল।”
–“এতো বছর পর নিজের ছেলেকে পেয়ে আবার হারাতে না হয়! আমরা ভ্যাম্পায়ার। কোনো সাধারণ মানুষ নয়। আমরা নিশাচর প্রাণী। সেটা তো ওকে বুঝতে হবে।”
থমথমে কন্ঠে কথাটা বলে টেবিলে ঘুষি মারেন প্রলয়। হ্যাঁ, প্রলয় সহ প্রলয়ের পুরো পরিবার ভ্যাম্পায়ার। প্রলয় সিনহা ভ্যাম্পায়ার রাজ্যের রাজা ছিলেন। এক রহস্যময় ঘটনাতে রাজ্যসহ তার ছেলে রাজকুমারের ওপর অভিশাপ পড়ে। সেই অভিশাপ কাটাতেই ৪৯ বছর লেগে যায়। আজও তাদের মনে পড়ে সেই রহস্যময় রাতের কথা! সেই ঘটনা ভোলায় নয়।
রাস্তায়…..
–“সবাই উপস্থিত আছে। অনুভব কোথায়? একটু পরেই রেস শুরু হবে।”
চিন্তিত সুরে কথাটা বলে রিহান। আশেপাশে সবার কপালে ভাঁজ। সবার পক্ষ থেকে কার রেসিং এ অংশগ্রহণ করবে অনুভব সিনহা। প্রলয় সিনহার একমাত্র ছেলে অনুভব সিনহা। যে নিজেও একজন ভ্যাম্পায়ার। তার বন্ধুরাও ভ্যাম্পায়ার। তাদের মাঝে একজন বন্ধু জোহান বলে ওঠে….
–“আরো ২ মিনিট বাকি আছে। আর অনুভবের তো অভ্যেস রাইট টাইমে উপস্থিত হওয়া। চিন্তা করিস না এসে যাবে।”
কথাটা বললেও চিন্তার ভাঁজ যায় না ওদের কপালের ওপর থেকে। অপরপক্ষের একজন রিহানকে বলে ওঠে….
–“কোথায় তোমাদের অনুভব? আমাদের কার রেডি আছে। আর ১ মিনিট। রেস তো শুরু হয়ে যাবে। এই রেসের জন্য আমরা এই মেইন রোড খালি করিয়েছি। সে আসছে তো নাকি ভয় পেয়েছে?”
কথাটা বলে হু হা করে হেসে ওঠে অপরপক্ষের লোকজন। রিহান রেগে কিছু বলবার আগেই একটা স্পোর্টস কারের আগমন ঘটে। ব্ল্যাক রঙের স্পোর্টস কার দ্রুত ধেয়ে আসছে। রিহান সহ সবার মুখে হাসি ফুটে ওঠে। সে এসেছে। জোহান ঘড়ি দেখে বলে….
–“রাইট টাইম।”
গাড়িটা এসে থামে রেড লাইনের দাগের একেবারে সামনে। গাড়ির জানালার কাঁচ আস্তে আস্তে খুলে যায়। ভেতরে দেখা যায় এক সুদর্শন যুবক কে। যার ঠোঁটে কিলার স্মাইল লেগে আছে। সানগ্লাস চোখ থেকে খুলতেই ভেসে ওঠে নীল চোখজোড়া। এই সুন্দর পুরুষটি হলো অনুভব সিনহা। রিহান দ্রুত বলে ওঠে….
–“অনুভব, তুই এমন কেন বল তো? আমরা তো ভেবেছিলাম তুই আসবি না। লাস্ট টাইমে এন্ট্রি দেখে জানে পানি এলো ইয়ার।”
অনুভবের হাসি প্রশস্ত হয়। বাম পাশের দাঁতগুলো চকচক করে ওঠে।
–“লাস্ট টাইমে এন্টি! দিস ইজ স্টাইল ওফ অনুভব সিনহা। কারণ অনুভব অপেক্ষা করতে নয়, অপেক্ষা করাতে পছন্দ করে। আমি শুধু একজনের অপেক্ষা করি। সে আসবেই আমার সামনে। টেনেহিঁচড়ে নিয়ে আসব। বাই দ্যা ওয়ে, ক্যাম ইউ স্টার্ট দ্যা কম্পিটিশন?”
সবাই মাথা নাড়ায়। জানালার কাঁচ তুলে দেয় অনুভব। ওর মুখে নেই কোনো চিন্তার ভাব। আছে ভর্তি কনফিডেন্স। বিকজ ও রেস জিতবে। সানগ্লাস পড়ে নেয় অনুভব। পতাকা নাড়ানোর সাথে সাথে ফুল স্পীডে গাড়ি স্টার্ট দেয় অনুভব। বেশ মনোযোগ দিয়ে গাড়ি ড্রাইভ করতে থাকে সে। একবার তার বিপক্ষের গাড়ি এগিয়ে যাচ্ছে একবার সে। আস্তে আস্তে বেশ এগিয়ে আসে অনুভব। বাঁকা হাসে সে। কিন্তু বিপত্তি ঘটে একটা মেয়েকে দেখে। চোখ বড় বড় করে তাকায় অনুভব। গাড়ির স্পীড ফুল। গাড়ি থামাতে গেলে রেসে হারতে হবে ওকে। আর মেয়েটাও মাঝপথ দিয়ে হাঁটছে। মেয়েটার মুখ ছাতা দিয়ে ঢাকা।
–“ওহ শিট!”
প্রচন্ড রাগ নিয়ে গাড়ির ব্রেক জোরে কষে অনুভব।
গাড়ি না থাকায় রাস্তার মাঝ দিয়েই হাঁটছিল মাধুর্য। হঠাৎ গাড়ি দেখে পা থেমে যায় ওর। ভয়ে ছাতা শক্ত করে ধরে সে। দ্রুত গতিতে সরবে তাও যেন পারছে না। এই সিচুয়েশনে ব্রেন বা কোনো অঙ্গ চলতে চায় না। কিছু বুঝে ওঠবার আগেই গাড়িটা ওর একদম সামনে এসে থেমে যায়। গাড়ির সঙ্গে আসা বাতাস উড়িয়ে দেয় তার হাতে থাকা ছাতা এবং গলায় থাকা ওড়না। ওড়না গিয়ে পড়ে মাধুর্যের মুখে। কালো ওড়না ঢেকে দেয় তার মিষ্টি মুখ।
অনুভবের বিপক্ষের গাড়ি এগিয়ে চলে যায়। অনুভব মাত্রাতিরিক্ত রেগে একাকার হয়ে যায়। দাঁতে দাঁত চেপে গাড়ির দরজা খুলে বেরিয়ে আসে সে। বাইরে এসে মাধুর্যের সামনে দাঁড়ায় অনুভব। মাধুর্য ওড়না মুখের ওপর থেকে সরিয়ে নিতেই সামনে থাকা অনুভবের সঙ্গে চোখাচোখি হয়ে যায়। অনুভব রেগে আঙ্গুল উঁচিয়ে কিছু বলতে নিলেও থেমে যায়। আঙ্গুল গুটিয়ে যায়। মেয়েটার ডাগর ডাগর আঁখিজোড়া! মুখ থেকে কোনো শব্দ বেরিয়ে আসতে পারে না। এমন চোখজোড়া আগেও কোথাও দেখেছে অনুভব। বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ে সে।
চলবে…..🍀🍀
বি.দ্র. গল্পটি সম্পূর্ণ কল্পনার ভিত্তিতে নির্মিত। বাস্তবের সঙ্গে তুলনা করবেন না। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।