#সিঁদুরশুদ্ধি #নাফিসামুনতাহাপরী #পর্বঃ১৮
.
“তুমি দিন দিন বড্ড চোর হয়ে যাচ্ছো বিদ্যা! এমন চোর কে তো শাস্তি দিতেই হয়।”
অভির এমন সুখময় অভিযোগে বিদ্যার চিবুক কেঁপে উঠলো। ধরা পড়ে গেছে বিদ্যা। একটা কাজও নিখুত ভাবে করতে পারিনা। বিদ্যা চট করে কফির কাপ টিনের চালে ধরে পানি দিয়ে কাপ পূর্ন করে অভির সামনে রেখে বলল,
-” কই আমি তোমার কফি পান করলাম! কোন প্রমান আছে! কাপটা বরং আগের থেকে একটু বেশিই পরিপূর্ন। আর আমি চোর না বুঝছো, আমি ভেবেছি তুমি কফি পান করবেনা তাই কফিটা পান করেছি। এতে কি সমস্যা হয়েছে হুম! তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে, আমি মহা পাপ করেছি। কিন্তু আমার মনে হচ্ছেনা তো, আমি এতটা পাপ করে ফেলেছি।”
অভি কিছু বলতে যাবে এমন সময় অভির কথা কেড়ে নিয়ে আয়ান বলল,
-” অভিদা একটা গান হয়ে যাক? তোমার কন্ঠে ইংলিশ গানগুলো খুব জোস্ লাগে। শুনাও না একটা গান।”
অভি একটা বেগুনি মুখে নিয়ে কামড় বসাল। একটু খেয়ে বলল,
-” বাঙ্গালি খাবার যখন প্রথম খেয়েছিলাম সেদিন খুব একটা ভালো লাগেনি। কিন্তু দিনকে দিন এই খাবার গুলোতে প্রচন্ড নেশা লেগে যাচ্ছে। যানিনা দেশে ফিরে এই খাবার গুলো কি ভাবে পাব। এগুলো খুব মিস করবো।”
রিভা পিয়াজু চাবানো বন্ধ করে অস্পষ্ট স্বরে বলে উঠলো,
-” আপনি চলে যাবেন অভিদা? আপনি এখানে সারা জিবনের জন্য থেকে যাননা!”
তমাল রিভার মাথায় একটা চাট্টি মেরে বলল,
-” খাবার খতম কর আগে। যে সব শব্দগুলো মুখ দিয়ে আউরাচ্ছিস তা আমরা কেউই বুঝতে পারছিনা। কেন এত এনার্জি নষ্ট করছিস?”
রিভার বিষম উঠে গেল। কাশি দিতে দিতে ওর দু’চোখ দিয়ে জল পড়তে লাগল। জেসি জল এগিয়ে দিয়ে বলল,
-” জল খাও রিভা। মনে হয় তোমার কেউ নাম করছে। কেউ কারো নাম করে তাকে স্মরন করলে তার এভাবে বিষম ওঠে।”
রিভা জল পান করার পরও আরও দু’বার কাশি দিয়ে থেমে গেল। টুম্পা এর মধ্য ফস করে বলে উঠলো,
-” তোকে এসব কথা কে বলে বলতো! এটা শরীরের একটা নিয়মিত নিয়ম। বিষমটা মানুষের যেকোন সময়ে উঠতে পারে। গলার মধ্য খাবারের চলাচলে বিন্দু মাত্র অনিয়ম হলেই এই সমস্যা হয়। তুই আজও সেকালের রয়ে গেলি।”
টুম্পার কথা শুনেই জেসি চোখ বড় বড় করে বলল,
-” তুই সব সময় আমার ভূল ধরিস। এগুলো আমাদের গুরুজনের কথা। আর আমি গুরুজনদের শ্রদ্ধা করতেই ভালোবাসি। তাদের কথা মানলে কেউ সেকালের হয়।”
এই তোরা থামবি? অভিদা একটা গান শুরু করেন তো! আপনার কাঁপা আর সুরেলা কন্ঠে ইংলিশ গানগুলো অস্যাম লাগে। শুরু করেন তো?(রিয়া)
রিতু চট করে দাড়িয়ে সবার উদ্দেশ্য বলল,
-” সাইলেন্ট প্লিজ, আমরা এখন আমাদের প্রিয় মানুষটার কন্ঠে গান শুনতে চাই। তাই সবাই চুপ……”
অভি মুচকি হেঁসে চানাচুরের বাটিটা বিদ্যার দিকে এগিয়ে দিল। কারন বিদ্যা এই চানাচুর গুলো খুব পছন্দ করতো। তারপর অভি এই বৃষ্টি স্নাত বর্ষা লগনে গিটারের সুর তুলল। অভি এবার বিদ্যার দিকে একপলক চেয়ে তারপর মাথা নিচু করে বলে উঠলো,
” আমার সারাদিন, মেঘলা আকাশ, বৃষ্টি _ তোমাকে দিলাম
শুধু শ্রাবন সন্ধ্যাটুকু তোমার কাছে চেয়ে নিলাম,
হৃদয়ের জানালায় চোখ মেলে রাখি
বাতাসের বাঁশিতে কান পেতে থাকি
তাকেই কাছে ডেকে মনের আঙিনা থেকে
বৃষ্টি তোমায় তবু ফিরিয়ে দিলাম।”
অভির মুখে বাংলা এই বর্ষার গান বিদ্যার মনে কম্পন সৃষ্টি করলো। এ এত সুন্দর করে বাংলা গান গাইতে পারে! বিদ্যা যেন এক মুহুত্ত্বে ওর শৈশবকালে ফিরে গেল।
কলকাতা যাওয়ার ১ মাস আগে হবে,
সেদিন এরকমই বর্ষনমূখর দিন ছিল। বৃষ্টিতে ভেজার প্রবল আকর্ষন জীবনে প্রথমবারের মত মিটিয়েছিল সেই ৬ বছর বয়সে। বাইরে প্রবল বর্ষন আর ঘরে বিদ্যা এবং ওর ছোটদাদা ছটফট করছে বৃষ্টিতে ভেজার জন্য। মা ঘুমুচ্ছে এটাই ছিল ওদের মোক্ষম সময় কিন্তু বাধ সাধল বেরসিক উচু দরজার ছিটকিনি। যা চেয়ারের উপর দাঁড়িয়েও ওদের দৈর্ঘকে হার মানালো। শেষ পর্যন্ত ছোট বোনকে ঘাড়ে তুলে চেয়ারের উপর দাড়িয়ে দরজা খুলে এক দৌঁড়ে ছাদে। কতক্ষন ওরা ভিজেছিল সেটা মনে নেই কারন সেদিন বাইরের বর্ষনের সাথে ওদের দু’ভাইবোনের পিঠেও মায়ের দীর্ঘ বর্ষন ঝড়েছিল অবিরত। তবে বৃষ্টির যে অদ্ভুদ স্বাদ ওরা পেয়েছিল সেই নেশা আজও কাটিয়ে উঠতে পারেনি।
অভি ওর হাত দিয়ে তুড়ি মারতেই বিদ্যার ধ্যান ভাঙ্গল। বিদ্যা, তোমাকে নিচে পা নামাতে নিষেধ করিনি। কেন আবার পা নামিয়েছ! বর্ষার দিনে ঝোপে-ঝাড়ে সাপ থাকতে পারে। পা উঠাও!
অভির চোখ রাঙ্গানি বকুনি খেয়ে বিদ্যা পা দু’টি উপরে তুলে আসন পেতে বসল। তারপর অভির কাছে গিয়ে বলল,
-” আমি কাজটা পেয়ে গেছি। এখন বল, আমার কাছ থেকে তুমি কি চাও?”
অভি কিছুক্ষন মাথা চুলকিয়ে বলল,
-“আজ তোর সাথে এক সন্ধি করেছি
অভি নামক জেলখানাতে তোকে বন্ধি করেছি।
আর কখনো দেবনা যেতে এই বৃষ্টি দিনের আজ
তোর দু’পায়ে জলনুপুর আজ করছে বড়ই নাজেহাল।”
বিদ্যা অভির মুখের দিকে চেয়ে কিছু বোঝার চেষ্টা করছে। কিন্তু অভির মনের ভাষা পড়তে পারছেনা। ও কি চায় আমার কাছে। বিদ্যা কিছুই বুঝতে পারছেনা। শেষে বিদ্যার চোখ দু’টো ব্যার্থ হয়ে নিচে চাইল। তারপর মনে প্রমোদ গুনে বলল,
-” এসব বলার মানে কি?”
অভি বিদ্যার কথার কোন জবাব দিলনা। অন্য দিকে চেয়ে গম্ভীর হয়ে গেল।
কাবির এতক্ষনে মুখ খুলল,
-” অভি, তুই এত সুন্দর করে বাংলা গান গাইতে পারিস আগে বলিসনি তো! এতদিন তোর সাথে থাকলাম কিন্তু এমন গান আমি শুনলামনা। দারুন হয়েছে দোস্ত।”
বৃষ্টি প্রায় থেমে গেছে। তাই অভি বলল,
-” দুপুর হয়ে গেছে। সাওয়ার নিব, আমি চললাম।”
অভি উঠতেই একে একে সবাই উঠে গেল। এত জলদি আড্ডা শেষ হয়ে গেল? আর একটু থাকলে কি হত কাবিরদা।
জেসির কথায় কাবির হাতটা প্রসারিত করে শরীরটা মোচড় দিয়ে বলল,
-” অনেক হয়েছে আমার মিষ্টি শালীকা। প্রতিটা জিনিসের একটা মাত্রারিক্ত আছে। অতিরিক্ত কোন কিছুই ভাল নয়।”
♥♥
সবাই উঠে যে যার মত চলে গেছে। বিদ্যা শুধু বসে আছে। বিদ্যার মাথায় অনেক চিন্তুা। তবে কি অপু দাদার পূর্নজন্ম হয়েছে। গড আমাকে পথ দেখাও। আমি যে কিছুই বুঝতে পারছিনা। অভির যদি পূর্নজন্ম হয় তাহলে আমার থেকে কেউ খুশি হবেনা। আর যদি ও অন্য কেউ হয়, তাহলে আমি ওর অবস্থা কি করবো সেটা নিজেও জানিনা। বিদ্যা অভির অর্ধেক খাওযা রেখে যাওযা সিঙ্গারাগুলো মুখে পুরে দিল। অভি সিঙ্গারার ভিতরের পুর গুলো খেয়েছে আর বাঁকিটা পিরিচে রেখে দিছে। অভির জানার কথা না, বিদ্যা সিঙ্গারার ভিরতের পুরগুলো খেতে পারেনা। কিন্তু অভি দিব্যি সেগুলো খেয়ে বাঁকিগুলো বিদ্যার নামে রেখেছে।
বিদ্যা অভির রাখা ২টা সিঙ্গারা খতম করে উঠে দাড়ালো।
সিড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে স্লিপ কেটে পড়ে যায় বিদ্যা। একদম পানিতে পরে পুরো জামা-কাপড় ভিজে গেল। হাতের কনুই সহ অনেক জায়গায় কাঁদায় ভরে গেছে।
পায়ে প্রচন্ড আঘাত পেয়েছে। কোন মতে উঠে ধীরে ধীরে হাটতে লাগলো। একটু হেটে বাসায় ঢুকতে যাবে এমন সময় দেখল বাসার বাহিরে সামনের মাঠে ওরা সবাই দাড়িয়ে আছে। বিদ্যা আর সেদিকে নজর না দিয়ে ভিতরে যাওযার জন্য পা বাড়াতেই মিতু ডেকে উঠলো,
-” ও বিদ্যা দিদি দাড়াওনা।”
বিদ্যা পিছন ফিরে দাড়িয়ে রইলো। হাত দিয়ে ইশারা করে বলল,
-” কিছু বলবে?”
মিতু দৌড়ে এসে বিদ্যার পাশে দাড়ালো। একি দিদি তুমি পড়ে গেছ নাকি! তোমার গায়ে কাঁদা কেন?
-” আমি পড়েই গেছি মিতু। কিছু বলবে?”
বিদ্যার কথার জবাব না দিয়ে মিতু বিদ্যার হাত ধরে টেনে ওদের কাছে নিয়ে গেল।
♥♥
বিদ্যা গিয়ে দেখল, আরও ৩ জন ছেলে এসেছে। তারা আয়ান আর তমালের ফ্রেন্ড। আয়ান কোদাল দিয়ে মাটি খুড়ে একটা লম্বা রেখা টানছে। অভি অবাক হয়ে ওদের কাজ করা দেখছে।
বিদ্যা বিরক্তি সুরে বলল,
-” এখানে কি হচ্ছে?”
আরে দিদি দাড়াওনা। আমরা আজ বৌ-সি খেলব। ওরা সাত জন আমরা সাত জন। অনেক দিন পর খেলা হবে। কি যে মজা লাগছেনা। তুমিও আমাদের দলে।
-” আমি এগুলো খেলবনা। এমনি দুপুর একটা বেজে গেছে। আমায় বিকেলে অফিস যেতে হবে। তোমরা খেল।”
সব মেয়েরা এসে বিদ্যাকে এবার চেঁপে ধরলো। না তোমাকে খেলতেই হবে। একটা ম্যান কমে যাওয়া মানে হারার সম্ভবনা এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া। না কিছু শোনবোনা। তোমাকে আজ আমাদের দলে হয়ে খেলতেই হবে।
বিদ্যাও আর এদের থেকে পালিয়ে যাওয়ার উপায় পেলনা। তাই বাধ্য হয়ে ওদের সাথে খেলতে রাজি হয়ে গেল।
সব ছেলেরা মিলে অভিকে খেলাটা বুঝিয়ে দিচ্ছে। আর অভি মনযোগ সহকারে খেলাটা বুঝে নিচ্ছে। সব কিছু শুনে অভি ওর প্যান্ট ফোল্ড করে হাটুর কাছে এনে থামালো। কাঁদার উপর দাড়িয়ে থাকা সাদা ধবধবে দু’টি পা। বৃষ্টির পানিতে নুয়ে পড়া সোনালি লোম সেই সৌন্দর্যকে হাজার গুনে বাড়িয়ে দিছে। রিতু এক নজরে সে দিকে চেয়ে আছে।
রিতুর ওমন চাহোনি দেখে জেসি মিতুকে বলেই ফেললো,
-” এই মিতু, তোমাদের পরিবারের সবার কি এমন নজর খারাপ! তোমার মায়ের প্লাস তোমার দিদি, দু’জনেরই দেখছি অভিদার উপর চোখ। তোমার দিদির দেখছি নজর একদমই খারাপ।”
-” কি বলছো জেসি দিদি! আমার দিদি কখন চাইলো?”
ওরে বাছা, এখনো মুভি শেষ হয়নি। পুরো দমে মুভি চলছে বলেই জেসি মিতুর ঘাড়টা ঘুরিয়ে রিতুর দিকে করলো। এবার দেখছো! আহা কি রোমান্টিক মুভি চলছে।
মিতু সত্যিই দেখল, রিতু অভির দিকে চেয়ে আছে আর মুচকি হাঁসছে। আমি মার কাছে রির্পোট দিবনি দিদি।
-” আরে বোকা মেয়ে তুইও মরবি আমাকেও মারবি। একদম এই কথা বলবেনা তোমার মাকে। তাহলে একটা মাইরও মিস যাবেনা।”
ওদের কথা চলার মাঝে কাবির ঘোষনা দিল, এখন টস হবে। দলের ক্যাপ্টেন, কাবির আর বিদ্যা। বিদ্যার হাতে একটা কয়েন দিয়ে কাবির বলল,
-” তুমি টস করো।”
বিদ্যা কয়েনটা হাতে নিয়ে উপরে শূন্যর দিকে ছুড়ে মারলো। কয়েনটা যখল ঘাসের উপর পড়লো তখন দেখা গেল, শাপলা পড়েছে। তার মানে বিদ্যারা জয়ী। সাথে সাথে বিদ্যা লাফিয়ে উঠে বলল,
-” ইয়াহু, আমাদের দান আগে।”
বিদ্যার সাথে সাথে বাঁকি মেয়েরাও আনন্দ করতে লাগলো। তারপর রিতুকে বউ বানিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হল লম্বা রেখার ঠিক ওপর প্রান্তে।
এবার ছেলেদের মধ্য চারজন লাইনে দাড়ালো আর বাঁকি তিন জন ইচ্ছামত নিজেদের জায়গা করে দাড়িয়ে পড়ল।
বিদ্যা প্রথমে রিভাকে গুডু দিতে বললো। বিদ্যার কথা মত রিভা, কিত কিত কিত বলে গুডু দিল। রিভা গুডু দিয়েই অভির পিছনে দৌড় দিল অভিকে ছুতে। কিন্তু অভি এক দৌড়ে এলাকা ছেড়ে চলে গেল। রিভার দম শেষ হতেই আয়ান এসে রিভাকে ছুয়ে ফেলল। রিভা খেলা থেকে বাদ হয়ে গেল।
বিদ্যা এবার জেসিকে পাঠালো। জেসিও রিভার মত অভির পিছে দৌড় দিল। অভি দৌড়াইতে দৌড়াইতে বলল,
-‘ এই তোমাদের মেয়েদের সমস্যা কি বলতো! এত মানুষ থাকতে তোমরা আমাকে দৌড়ানি দিচ্ছ কেন? আর যতই চাপাচাপি করো কোনই লাভ হবেনা। অভিকে ধরা এত সহজ নয়।”
দম শেষ হয়ে যাচ্ছে বলে জেসি ঘরে ফিরে এল। বিদ্যা এবার সবাইকে ধমক দিয়ে বলল,
-” আর যদি দেখছি কেউ অভির পিছে দৌড়াইছো তাহলে খেলা থেকে ঘাড় ধরে বের করে দিব।”
সবাই মন খারাপ করে বলল, আচ্ছা।
খেলা জমে উঠেছে। আসে-পাশের বাসার অনেকে খেলা দেখতে রাস্তার পাশে ভির জমিয়েছে। এমন কি বিদ্যাদের বাসা থেকেও অনেকে এসেছে খেলা দেখতে। ৯ টা গুডু দিতে হবে। এর ভিতর বউকে ঘরে আনতে হবে। ইতিমধ্য ৪ টা গুডু শেষ। এবার বিদ্যা কোমড়ে ওড়নাটা শক্ত করে গুজে গুডু দিতে লাগলো। আয়ান কে ছুয়ে ফেলল। তারপর বিদ্যা আবার ঘরে আসল। আর ৪টা গুডু আছে। বিদ্যা বড় একটা দম নিয়ে এবার কাবিরের পিছে ছুটলো। বিদ্যার বিদ্যুতের গতিতে দৌড় অভি সহ সবাই হতবাক হয়ে গেল। মেয়ে মানুষ এত জোড়ে দৌড়াতে পারে!
বিদ্যার ভয়ে কাবির দিল এক ভো দৌড় কিন্তু বিশেষ একটা লাভ হলনা। বিদ্যা কাবিরের পিঠে থপাশ করে একটা থাবা বসাল। কাবির এবার থামল। হাপাঁতে হাপাঁতে বলল,
-” বাড়ির জামাইকে কেউ এভাবে বেইজ্জতি করে বিদ্যা।”
কাবিরের পিঠে এমন একটা তাল পড়া দেখে অভিই থতমত হয়ে গেল। এটা কিরে বাবা। অভি তুই কাকে পছন্দ করলি! একে মেয়ে বলা যাবে!
বিদ্যার দম ফুরে আসছে তাই ঘরে চলে এল। তার পর জোর গলায় বলল,
-” খেলতে নেমেছ আর জামাই আদর চাচ্ছো! এটা খেলা, কোন জামাই ষষ্ঠী নয়?”
এই আমি একটু রেষ্ট নেই বলে ঐ ভেজা ঘাসের উপরই বসে পড়ল বিদ্যা। টুম্পা এবার গুডু দিল। কিন্তু বাঁধ সাধলো রিতু। পাশে অভিকে দেখে যেন ওর দরদ উথলে উঠলো। ইচ্ছা করে ঘর থেকে একটু বের হয়ে দৌড় দিতে লাগল যাতে অভি ওকে ছোয়। কিন্তু রিতুর অংক কষা ভুল ছিল। কোথা থেকে তমাল এসে রিতুকে ছুয়ে ফেলল। সমস্ত খেলা মাটি করে দিল রিতু। বিদ্যা সহ সবাই ব্যাপারটা বুঝতে পারলো। বিদ্যাতো রেগে গিয়ে বলল,
-” এই তোমার খেলার দরকার নেই। রিভা বাসায় গিয়ে আলতাকে ডেকে আনতো! রিতুর খেলার কোন যোগ্যতাই নেই। ও আউট খেলা থেকে।”
বিদ্যার কথার উপর কেউ কথা বললোনা। বরং খুশিই হল। রিভা গিয়ে আলতাকে ডেকে আনলো। আর রিতু গিয়ে থমথম করে রাস্তায় দাড়ালো।
এবার কাবিরদের পালা গুডু দেওয়ার। অভি প্রথমেই বলল,
-” আমি যদি গুডু দিতে শুরু করি তাহলে এক গুডুতেই এরা সবাই মারা পড়বে। আমি এত মেয়েদের মনে কষ্ট দিতে চাইনা। তার থেকে আমি বউয়ের ঘরে গেলাম। তোমরা আনতে না পারলেও আমি পালিয়েই আসতে পারবো। তাছাড়া আমি যদি মেয়েদের গায়ে হাত দেই তাহলে আমার বউ আবার রাগ করবে।
অভির কথা শুনে জেসি বলে উঠলো,
-” অভিদা আবার নাটক করছেন? আপনার বউ কিভাবে এসব দেখবে!”
আরে আমার বউ সব দেখে বলে অভি বিদ্যার দিকে তাকালো। তারপর দৌড়ে বৌয়ের ঘরে চলে গেল।
কাবির প্রথমে গুডু দিল। রিয়াকে দৌড়েই ছুয়ে ফেলল। কিন্তু রিয়া বলে উঠলো সে তাকে ছোয়নি। কাবিরতো রেগে গিয়ে বলল,
-” এই মিথ্যা কথা বলছো কেন? আমি তোমাকে ছুইনি বলো! আমি স্পষ্ট তোমাকে ছুয়েছি আর তুমি মিথ্যা বলছো?”
কাবিরের রেগে যাওয়া দেখে রিয়া বলল,
-” তুমি যে আমাকে ছুয়েছ তার কোন প্রমান আছে? কি ছোয়া ছুইলে যে শব্দ হলোনা! এই তোমরা কেউ শব্দ শুনতে পেয়েছ!”
রিয়ার কথা শুনে এবার আয়ান রেগে গেল। রিয়াদি তুমি কিন্তু চিটিং করছো। কিসের শব্দ? আয়ানের কথা কেড়ে নিয়ে কাবির বলল,
-” এই এখুনি তুমি খেলা থেকে বের হয়ে যাবা। কোন কথা শুনতে চাইনা।”
অভি বৌয়ের ঘর থেকে চিৎকার দিয়ে বলল,
-” কাবির ঝগড়া করিসনা। ওরা শব্দ চাইছে তো! বেশ, এবার শব্দ করেই খেলা হবে।”
অভির কথা কারো বুঝতে বাঁকি রইলোনা। অভি কি বলতে চাচ্ছে। কাবির একটা ভিলেনি মার্কা হাঁসি দিয়ে বলল,
-” দোস্ত তোর এত উপস্থিত বুদ্ধি! এই জন্য তোকে এত ভালোবাসি।”
কাবির হাতে কয়েকটা কিস করে অভির দিকে ছুড়ে মারলো। অভিও সাথে সাথে হাত বাড়িয়ে হাত মুঠ করে ধরার অভিনয় করে পকেটে ভরলো।
এবার জমবে মজা। কার পিঠ কত সয়। আঁকাশ আবার মেঘে ছেয়ে গেল। তুমুল হারে বৃষ্টি পড়তে শুরু করলো। মনে হচ্ছে বৃষ্টির ফোঁটা শরীরে ফুটে যাবে।
এবার আয়ান গুডু ধরলো। আয়ান এক গুডুতেই রিভার পিঠে একটা থাবা বসালো। রিভারতো আধা কান্নার মত অবস্থা। রিভা বাদ পড়ে গেল। এবার কাবির রিয়াকে টার্গেট করেই গুডু ধরলো। রিয়া এমন দৌড়ানি কোন দিনও দেয়নি। কারন কাবির গুডু দেওয়ার প্রথমেই হাতের বাম দিকে দিয়ে যাবে এমন সময় পা বদলিয়েই ডান দিকে ছুটলো। এতে লাইন ছত্রভঙ্গ হয়ে গেল। দুইজন মারা পড়ল। আর রিয়া প্রানপনে মাঠ ছেড়ে দৌড়াতে লাগলো। কাবিরও মনে মনে পণ নিয়েছে সে আজ মরবে মরবে রিয়াকে নিয়েই মরবে। এমনি ৩জন বাদ পড়লে দল দুর্বল হয়ে পড়বে ওদের। রিয়া আর বেশি দৌড়াতে পারলোনা। একটু স্লো হতেই পিঠে যেন একটা তাল এসে পড়লো। এত জোড়ে পিয়ে হাতে দিয়ে থাবা বসালো কাবির, যে এর শব্দ সবার কানে গিয়ে পৌছালো। সাথে সাথে অভি বলল,
-” এবার খেলা জমে গেল। এদের নাকি শব্দ চাই। এই তোমরা সবাই শব্দ শুনতে পেয়েছ তো?”
বৃষ্টিভেজা শরীরে এমন আঘাত পড়াতে রিয়া কেঁদেই উঠলো সবার সামনে। আমি আর খেলবনা বলে অনেকগুলো বকা দিল কাবিরকে।
-” কেন, তোমারনা শব্দ চাই। তাইতো সবাইকে শব্দ শোনালাম।”
-” তাই বলে এত জোড়ে। তোমাকে আমি আর বিয়েই করবোনা।”
রিয়ার কান্না দেখে বিদ্যা গিয়ে ওকে বলল,
-” কেন বলতে গিয়েছিলে তোমার শব্দ চাই? বুদ্ধির এত অভাব পড়ে গিয়েছিল? মাথা মোটা মেয়ে কোথাকার।”
রিয়া আর কথা না বলে মাঠ ছেড়ে উঠে গেল। এবার অভি প্রায় হাটতে হাটতে ঘরে চলে গেল। এভাবে সাত সাতটা খান লাগালো অভিরা। বারবারই বিদ্যারা হেরে যাচ্ছে। কিন্তু লাষ্টের বার কাবির দৌড় দিতেই ওর পা একটা কাঁচের উপর পরল। সাথে সাথে কাঁচটা গেঁথে গেল কাবিরের পায়ে।
অভি খেলা ভঙ্গ করে এসে কাবিরকে ধরলো। পায়ের অবস্থা খুবই খারাপ। অভি কাবিরকে কোলে নিয়ে বাসার ভিতর চলে গেল। সমস্ত খেলা মাটি হয়ে গেল। মেয়েরা হেরে গেছে অনেক আগেই।
♥♥
অভি কাবিরের পা থেকে কাঁচটা তুলে ড্রেসিং করে বান্ডেজ করে দিল। তারপর ওকে রেষ্ট করতে বলে রুম থেকে বের হতেই দেখলো, দুরে রিয়া দাড়িয়ে কাঁদছে। অভি ইশারা করতেই রিয়া অভির কাছে এসে দাড়ালো।
অভি গম্ভীর মুখে বলল,
-” বরকে কখনো ওভাবে বকা দেয়! কখনো আর এমন কাজ করবেনা।”
অভি কথাগুলো বলে ওর রুমে চলে গেল। আর রিয়া কাবিরের কাছে গেল। স্যরি কাবির বলেই কাঁদতে লাগলো রিয়া।
কাবির বালিশের সাথে হেলান দিয়ে বলল,
-” অভি কিছু বলেছে?”
রিয়া শুধু মাথা নিচু করে বলল,-“হুম।”
কাবির হেঁসে বলল,
-” ও যাদের ভালোবাসে তাদের ও খুব ভাল করে যত্নে রাখে। তাদের কোন কষ্ট বা ক্ষতি ও সহ্য করতে পারেনা। আমি ওর মত এমন স্বভাবের মানুষ কোনদিনও দেখি নাই। ভালোর উপর আর কোন ভালো হতে পারেনা। আর সেই ভালোই হচ্ছে অভি।”
কাবির আর রিয়ার মধ্য খুনশুটি চলতেই বিদ্যা আড়াল থেকে চলে গেল। এতক্ষন ধরে ওদের কথা শুনছিল বিদ্যা।
♥♥
অভি ওর ভেজা ট্রী শার্টটা খুলে ওয়াসরুমে চলে গেল। অনেক্ষন ধরে সাওয়ার নিয়ে টাওয়াল পড়ে বের হয়ে এল। চুলগুলো হাত দিয়ে জোড়ে নাড়তেই চুল থেকে বৃষ্টির ফোঁটার মত পানি ঝড়ে পড়ল।
বিদ্যা দরজার আড়াল থেকে অভিকে চুপি চুপি দেখছে। বিদ্যা অভিকে দেখে আবিভূত হয়ে গেল। পিঠের পানির ফোঁটাগুলোর দিকে এক নজরে চেয়ে আছে। পিছন দিক থেকে মনে হচ্ছে একদম অপুদা দাড়িয়ে আছে। ইদানিং বিদ্যার মস্তিষ্ক থেকে অপুর অনেক স্মৃতি মুছে দিয়েছে অভির ভাবনা গুলো। মস্তিষ্ক, হৃদয়, শরীর সহ সবকিছু অভির মায়াজালে আবদ্ধ হয়ে গেছে বিদ্যা। সেখান থেকে বিদ্যার ফিরা আর সম্ভব নয়।
বিদ্যা এসব ভাবতেই দেখলো, ওর সামনে অভি নেই। অভি কোথায় গেল। বিদ্যা একপা -দু’পা করে সামনে এগুতেই কেউ পিছন দিক থেকে হাত দিয়ে টোকা দিল। বিদ্যা অভিকে খুজতে খুজতে এতটাই বিভোর হয়ে গিয়েছিল যে, পিছনে থেকে কে ডাকলো তার সেই ভাবনাই নেই। আবার পিছন থেকে টোকা দিতেই বিদ্যা না দেখেই ঐ হাত সরিয়ে দিল। এবার বিদ্যার টনক নড়ল। আমি কার হাত সরিয়ে দিলাম বলে পিছন ফিরতেই দেখল, অভি দাড়িয়ে আছে।
বিদ্যা একদম স্তব্ধ হয়ে গেল। এ আমি কাকে দেখলাম। ও এখানে কিভাবে।
-” বিদ্যা, তুমি কি লুকিয়ে লুকিয়ে অভিকে দেখছিলে?”
অভির কথা শুনে বিদ্যা তোতলাতে লাগলো। – না মানে না…….
-“কি তখন থেকে না মানে না বলছো? তুমি তো অভিকে দেখার জন্যই এখানে আসছো।”
-“কখনো না। আমিতো এখানে একটা কাজে এসেছিলাম।”
-” তুমি কাজ করতে এসেছ! তাও এই ভিজা গায়ে?”
-” হুম, আমিতো কাজেই এসেছিলাম।”
ওকে, কর তোমার কাজ বলেই অভি ভিতরে ঢুকেই পিছন ফিরে বিদ্যার হাত ধরে এক ঝটকানে ওকে রুমের ভিতর নিয়ে এসেই দরজা বন্ধ করে দিল।
অভি বিদ্যাকে ওর সামনে দাড় করিয়েই বলল,
-” এমন করে আমার দিকে নজর দিওনা বিদ্যা
আমি যদি একবার পাগল হই তাহলে পরে কিন্তু হাজার চেষ্টা করেও পিছু ছাড়াতে পারবেনা। এমন করে বার বার আমাকে পাগল করলে কিন্তু আমিও ছাড়বোনা তোমায়। তাই আমার এত কাছে ঘেষনা।”
[] চলবে…..[]
বিদ্রঃ রিভাইজ দিতে পারিনি। দয়াকরে কষ্ট করে পড়ে নিবেন সবাই। কাল গল্প দিতে পারবো কিনা জানিনা।
………………………………..
লেখিকা,
নাফিসা মুনতাহা পরী
———————————
© কপিরাইট: উক্ত কন্টেন্টটি লেখিকার সম্পদ। লেখিকার নাম এবং পেজ এর ঠিকানা না দিয়ে কপি করে নিজের নামে চালিয়ে অন্য কোথাও পোষ্ট করা আইনত দন্ডনীয়।
———————————-
আমার ব্যক্তিগত ফেইসবুক একাউন্ট: https://www.facebook.com/nafisa.muntaha