লীলাবালি🌺 #পর্ব_৫৬ আফনান লারা .

0
634

#লীলাবালি🌺
#পর্ব_৫৬
আফনান লারা
.
অর্ণবের মায়ের বড়ই ইচ্ছে হলো ছাদে বসে সেমাই খাওয়ার।বিয়ে করে যখন নতুন নতুন তিনি এসেছিলেন শ্বশুরবাড়িতে,তখন সময় পেলেই অর্ণবের বাবার সাথে ছাদে এসে বাদাম,বুট,চানাচুর কত কি খেতেন।আগের দিনগুলো খুব বেশি করে মনে পড়ে আজকাল। ছেলেগুলোকে বিয়ে দিয়ে তারা নিজেরা তাদেরকার সময়ের সেই স্মৃতি আঁকড়ে ধরে পুনরায়।বাটি দুটো হাতে নিয়ে কুসুম,অর্ণবের চোখ এড়িয়ে তিনি ছাদের দিকে গেছেন।ওদের জানাননি কারণ মনে মনে লজ্জা লাগলো।যাবার পথে অর্ণবের বাবাকে একবার ডেকে গেছেন।
অর্ণব তার রুমে সেমাই খেতে খেতে খবরের কাগজ পড়ছিল।দোকান থেকে ফেরার পথে কিনেছিল এটা।অবশ্য এটা কালকের খবরের কাগজ।আজকেরটা দোকানদার দেয়নি, সে নাকি কাগজে কিসের কাটিং করবে।কুসুম সেমাই এক চামচের বেশি খেতে পারছেনা।মনে হয় গলা অবধি সব খাবার এসে আটকে আছে।যেকোনো সময়ে বমি এসে যাবে।বাটিটা ঢাকনা দিয়ে ঢেকে সে অর্ণবের কাছে এসে জিজ্ঞেস করলো মাকে দেখেছে কিনা।অর্ণব বলেছে দেখেনি।
এরপর দুজনে কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে হঠাৎ একসাথে দুজন মিলে নিচ তলার দিকে ছুটলো।সেখানে গিয়ে জানতে পারে বাবা মা সেখানে নেই।
এবার তারা নিশ্চিত হয় বাবা মা ছাদে গেছেন।অর্ণব সাত পাঁচ না ভেবে দৌড়ে ছাদের দিকে চলে গেলো।কুসুম ও ধীরে ধীরে ওদিকে যাচ্ছিল।ভয়ের কারণে জোরে ছোটেনি।
চিলেকোঠার দরজা খোলার পর তারা দেখতে পেলো বাবা মা এক কোণায় বসে আড্ডা দিচ্ছেন আর সেমাই খাচ্ছেন।অর্ণব বুকে হাত রেখে ছাদটা দেখতে দেখতে এগোলো সামনে।বুকের ভেতরে ডিপডিপ করে।কোথাও শেয়াল দুটো নেই দেখে তারা দুজন অবাক হয়ে আছে।সুলতান শাহ ও এসেছিলেন ওদের দৌড় দেখে।এসে বললেন শেয়াল সন্ধ্যা হলে চলে আসে, বিকেলে আসেনা।
দুজনে এবার হাঁপ ছেড়ে বাঁচলো।বাবা মাকে কিছু বুঝতে না দিয়ে তারা বাসায় ফিরে এসেছে।বাটিতে রাখা বাকি সেমাইটা গোগ্রাসে গিলছে অর্ণব।কুসুম পাশে বসে ওর খাওয়া দেখছিল।অর্ণব খুব সুন্দর করে খেতে জানে।এমন ভাবে খায় যেন সে অমৃত খাচ্ছে।শুধু সেমাই না,সব খাবারই তৃপ্তি সহকারে খেতে দেখে ওকে।
—-
আর কটাদিন পর জুথি চলে যাবে।এতদিন স্বাভাবিক ভাবে কেটে গেলেও যতই তারিখের নাম্বারে ক্রস পড়ছে ততই খারাপ লাগছে।
‘দুটো কথা ছোটাছুটি করে আপন মনে।একটা কথা হলো যেন না যাই আর আরেকটি কথা হলো যেন যাই।
এখানে থাকলে মৃদুল ভাইয়ার সাথে নির্ঘাত একটা সম্পর্ক তৈরি হয়ে যাবে যেটা আমি চাইনা।এতদিন অর্ণবের স্মৃতি ভুলতে দূরে যেতে চাইতাম আর এখন মৃদুল ভাইয়ার সাথে যেন কোনো বন্ধন না তৈরি হয় সে ভয়ে পালাচ্ছি।
আমি এতদিন কঠোর থাকতে পারলেও কটাদিন পর কঠোর থাকা সম্ভব হবেনা আমার পক্ষে।যার কারণে বাধ্য হয়ে যেতে হচ্ছে আমায়।মৃদুল ভাইয়াকে বড় আঘাত দিতে চাইনা।এমনিতেও তিনি আঘাত পেয়েছিলেন ক’বছর আগে।পুরোনো ক্ষতে নতুনত্ব সৃষ্টি করতে চাইনা।’

ব্যাগের চেইন লাগিয়ে ওড়না খুঁজছে সে এবার।বাবার কাছে গিয়ে বলবে বাবা যেন মন খারাপ না করে।কয়েক বছর পর সে আবার ফিরে আসবে।ওড়নাটা খুঁজতে গিয়ে নজর গেলো বারান্দার দিকে।বিকেলের সেই হলুদ ফুলটা পড়ে আছে ওখানে।আচমকা ফুলটা ওখানে দেখে সে ছুটে এসে ওটা হাতে নিয়ে নিচে তাকালো।রোড সম্পূর্ণ ফাঁকা
তবে এই ফুলটা আসলো কই থেকে?
খোলা চুল গুলোকে কানের পেছনে গুজে দিয়ে জুথি ফুলটা নিয়ে পেছনে ফিরতেই মৃদুলের সাথে ধাক্কা খেয়ে গেলো।কিন্তু ঐদিনের মতন চিৎকার করলোনা।শুধু ভয় পেয়ে চোখ বড় করে রেখেছে।

‘ফুল যখন দিলে লাল দিতে।গোলাপকে লাল রঙে মানায়।লাল গোলাপে গোলাপের আসল সৌন্দর্য্য ফুটে ওঠে যার কারণে মানুষ সাদা,হলুদ গোলাপ একটা কিনে আর লাল গোলাপ একশোটা কিনে।তুমি আমায় গোলাপ দিলে তো দিলে শেষে কিনা হলুদ গোলাপ দিলে?
কাউকে হলুদ গোলাপ দেওয়ার মানে জানো?তবে শুনো।হলুদ গোলাপ দেওয়া মানে ভাই বোন।আমার ব্যাক্তিগত মতামত।
প্রেমিকার একান্তই হলুদ রঙ পছন্দ হলে কখনওই কোনো প্রেমিক ভুলেও হলুদ গোলাপ দেবেনা তাকে।যদি দেয় তবে প্রেমিকার হলুদ রঙ পছন্দ হলে দেয়।
আমার হলুদ রঙ পছন্দ নয়।কেন দিলে তবে?’

কথাটা বলতে বলতে মৃদুল জুথির কাছে এগিয়ে গেলো।
জুথি ফুলটা সামনে ধরে বললো,’ঐ বাবুটার কাছে অন্য রঙের গোলাপ ছিলনা।আর সবসময় লালের দাপট চলবে তা তো হয়না।অন্য রঙ কম কিসের?’

‘কম না সেটা জানি।তবে আমার হলুদ পছন্দ না’

‘তো ফেলে দিতেন।এত টেম্পার হাই করে বসে আছেন কেন?ফুল দিয়ে মনে হয় অপরাধ করে ফেলেছি আমি’

মৃদুল জুথির গলা টিপতে গিয়ে নিজেকে সংযত করে বললো,’অনামিকা হলে গলা টিপে ধরতাম’

কথাটা বলে সে অন্যদিকে ফিরে গেছে।জুথি দুহাত ভাঁজ করে বললো,’তারপর সে কি করতো?’

মৃদুল মুখটা আরেকটুখানি ঘুরিয়ে বললো,’বলতো “লাগছে” ‘

জুথি হেসে বললো,’ন্যাকা ছিল?’

‘প্রচুর’

‘আমি ন্যাকা না?’

‘তোমার মাঝে ন্যাকার “ন’ ও নেই।আর আমি কোনোদিন তোমার গলা টিপেও ধরবোনা।’

‘ধরে দেখেন, আমি কি বলি শুনেন একটু’

মৃদুল পেছনে ফিরে বললো,’তুমি মজা করতেছো?আমি এসেছি হলুদ ফুল দেওয়ার ইতিহাস জানতে আর সেখানে তুমি ফান করে যাচ্ছো’

‘ওকে সরি।নিতে হবেনা ফুল।রেখে দিলাম আমার কাছে’

‘এটা তোমার দেওয়াটা না।তোমার দেওয়া ফুলটা আমি মেসে আমার ব্যাগের ভেতর রেখে এসেছি।এটা আরেকটা ফুল, যেটা আমি কিনেছি’

‘এত কিছু করার কারণ? ‘

‘কারণ তোমার দেওয়া প্রথম উপহারটি আমি তুলে রাখতে চাই।আর ফুল নিয়ে তোমার সাথে কথা ছিল বলে অন্য একটা নিয়ে আসলাম স্যাম্পল হিসেবে।।।।সিম্পল! ‘

জুথি তার রুমে চলে এসেছে ফুলটা নিয়ে।দরজা বন্ধ ছিল ভেতর থেকে।নাহলে এতক্ষণ এত কথা বলা যেতোনা।পাশের রুমে বাবা।
মৃদুল রেলিং ধরে বললো,”ওড়না খাটের নিচে পড়ে আছে।বাই’

জুথি চোখ কপালে তুলে জলদি করে ওড়নাটা তুলে পরে নিয়েছে।তার মনেই ছিলনা সে এতক্ষণ ওড়না খুঁজছিল।জিভে কামড় দিয়ে বারান্দায় ফিরে এসে নিচে তাকিয়ে দেখলো মৃদুল দাঁত কেলিয়ে চেয়ে আছে ওর দিকে।
ওমন করে চেয়ে থেকে সে বললো,’জানো জুথি?আমার চোখজোড়া প্রচণ্ড ক্যারেক্টার লেস।এতটাই ক্যারেক্টারলেস যে, সে আগে ঠোঁট দেখছিল।ঠোঁটের মায়ায় বাকি সব দামি মনে হয়নি ।শুধু ঠোঁটটাই দামি লাগে তার কাছে।বুঝলে?’

জুথি রেগে- মেগে বললো,’স্টুপিড! ‘
—–
বাবা মা ছাদ থেকে সুলতান শাহর বাসায় গেছে।তিনি নাকি সন্ধ্যার আড্ডায় ডেকেছিল।
যাই হোক,তবে অর্ণব আর কুসুমকে ডাকেননি।অর্ণব রেসাল্ট পেয়ে মহাখুশি।সিজিপিএ ভালো এসেছে বলে খুশিতে ইচ্ছে করছে কনফারেন্স ডেকে সবাইকে জানিয়ে দিতে।মেসে থেকে এতবছর পড়াশুনা চালিয়ে গিয়ে তার কষ্ট সফলতা পেলো।
কুসুম ওকে ওমন হাসতে দেখে জানতে চাইলো।অর্ণব এতটাই আনন্দিত ছিল যে হুট করে ওর হাতটা ধরে বললো,’জানো! আমার রেসাল্ট অনেক ভাল হয়েছে’

কুসুম হা করে তাকিয়েছিল।অর্ণব ওর হাতটা ঝাঁকিয়ে আবার বললো,’চাকরি পেতে বেশি কষ্ট পোহাতে হবেনা।খুব ভাল চাকরি পাবো দেখো’

কুসুম এবার বুঝতে পেরে হাসিমুখে তাকিয়েছে।এতক্ষণ হাত ধরার কারণে অন্যদিকে মননিবেশ করতে পারছিলনা ঠিক।
আর এখন খুশির সংবাদে হাত ধরার কথাটাই ভুলে গেছে সে।এদিকে অর্ণব যখন বুঝেছে ভুলবশত সে কুসুমের হাত চেপে ছিল তখন হাত ছেড়ে দূরে সরে গেলো।

তখন রুম থেকে চলে যাবার সময় কুসুম কি ভেবে যেন থমকে গেছে।পেছনে না তাকিয়েই দরজার ফটকে হাত রেখে বললো,’জিজ্ঞেস করেছিলেন না?হাত ধরলে কি করবো?
হাত ধরলে কিছুই করতাম না।বরং আপনি করতেন।হাতের পশম দাঁড়িয়ে যেতো আপনার,ভাবমূর্তি!’

অর্ণব নিজের হাতে চেয়ে দেখলো সত্যিই তাই।কুসুমের থেকে জানতে চাইতো হাত ধরলে কি হবে।অথচ হাত ধরলে তার নিজের মাঝেই বদল শুরু হয়,কুুসুম তো স্বাভাবিক।
ভীতি তবে কার মাঝে!’

কুসুম চলে গেছে ওখান থেকে।প্রশ্নের উত্তর বের করতে গিয়ে বারবার উত্তরটা তার দিকেই তাক হয়।তার মানে কাছে গেলে সে ভয় পাবে,কুসুম পাবেনা।ঐ স্বপ্নটা??
এরকম সত্যি হচ্ছে কেনো।সেখানেও আমি ভয় পেয়েছিলাম আর আজও আমি!
চলবে♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here