#সিঁদুর শুদ্ধি
#নাফিসা মুনতাহা পরী
#পর্বঃ৩৩
.
রাত বাড়ছে, রাত্রির নিঃস্তব্ধতার সাথে বিয়ের হৈচৈ বেড়েই চলছে। চারদিকে আবছা কুয়াশার চাদর দিয়ে ঢেকে রয়েছে প্রকৃতি। ঠান্ডা বাতাস বইছে। ছাদে রং বে-রঙ্গের বাতি জ্বলছে আর নিভছে। দারুন একটা ভুতুরে পরিবেশ।
বিদ্যা অভির ঘাড়ে মাথা রেখে বিরবির করেই চলছে।
বাঁকি কথাগুলো আর বুঝা গেলোনা। বিদ্যা দুলতে দুলতে অভির ঘাড় থেকে পড়ে যেতেই অভি ওকে খপ করে ধরে ফেললো। তারপর অভি বিদ্যাকে কোলে তুলে নিয়ে দোলনাতে গিয়ে বসলো। এমন সময় বিদ্যা আধা আধা অস্পষ্ট স্বরে বলল,
—” অভি, তুমি কি সত্যি এসেছে?”
অভি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তারপর বলল,
—” যেটা খেলে নিজের ভারসাম্যই ঠিক রাখতে পারোনা সেটা খাও কেন?”
আমার গা গুলাচ্ছে, আমার মনে হয় কিছু হবে বলেই বিদ্যা ওঠার চেষ্টা করলো। কিন্তু উঠতে পারলোনা। শেষে অভি চট করে ওকে ধরে ছাদের কিনারে নিয়ে গেল। তারপর বিদ্যাকে সামনের দিকে ঝুকিয়ে অভি বিদ্যার পেটে চাপ প্রয়োগ করতেই বিদ্যা ভিতরের সবকিছু উগলে বের করে দিল। বিদ্যা অস্থির হয়ে বড় বড় নিঃশ্বাস ফেলতে লাগলো। তারপর দ্রুত বলে উঠলো,
—” জল, জল দাও আমায়।”
না আর একটু ট্রাই করো, তাহলে সব বের হয়ে যাবে বলেই অভি ওকে আর একটু চাপ দিতেই আবার গলগল করে বমি করতে লাগলো। এবার অভি রুমাল বের করে ওর মুখ মুছে দিয়ে রুমাল নিচে ফেলে দিল। কিন্তু কি আশ্চর্য, রুমাল গিয়ে মাটিতে পরার সাথে সাথে বিদ্যার মুখ থেকে বের হওয়া সবকিছু অদৃশ্য হয়ে গেল। এবার অভি ওকে জলের বোতল দিয়ে বলল,
—” বিদ্যা, তুমি কি সকাল থেকে কিছুই খাওনি?”
বিদ্যার চোখ দিয়ে জল পড়ছে। মুখমণ্ডল নীলচে হয়ে গেছে। অভি বোতলের মুখ খুলে দিয়ে বিদ্যার মুখে একটু জল দিতেই ও জল ফেলে দিয়ে অভির শেরওয়ানী খামচে ধরে চুপ হয়ে রইলো। অভি অনেকটা জোর করেই বিদ্যাকে জল খাওয়ালো। হয়ত কিছুক্ষণ পর ও স্বাভাবিক হয়ে যাবে। অভি ওকে নিয়ে আবার দোলনাতে বসলো। তারপর বলল,
—” আমাকে ছেড়ে যখন থাকতেই পারবেনা, তাহলে আমার সাথে এত জেদ করো কেন? তুমি কি জানোনা, আমি তোমাকে কতটা চাই?”
তুমি আমাকে না জানিয়ে কোথায় চলে গিয়েছিলে! কোথাও দেখছো, হাবি তার ওয়াইফ কে ছেড়ে এভাবে চলে যায়? পাগলের মত তোমাকে খুজেছি আমি। কিন্তু কোথায়ও পাইনি তোমাকে। আমি যদি এত স্ট্রেস না নিতে পারতাম! যদি আমি পাগল হয়ে যেতাম, এত সব দুঃশ্চিন্তা করতে করতে! কেটে কেটে বলে উঠলো বিদ্যা।
অভি বিদ্যার গলায় মুখ ডুবিয়ে কিছুক্ষন চুপ হয়ে রইলো। তারপর বিদ্যার কানে আদুরে গলায় ফিসফিসিয়ে বলল,
—” কি আর হবে! একটা পাগলির সাথে সংসার করতে হত। ওকে যা বলতাম ও আমার সব কথা শুনতো। তোমার থেকে হয়তো সেই পাগলিটাই ভালো হত।”
অভির কথা শুনে বিদ্যা দোলনা থেকে উঠতেই অভি ওকে ধরে ফেলল। বিদ্যা, তোমার নেশার রেশ এখনো কাটেনি। বস এখানে।
বিদ্যা অভির কথা না শুনে ওর হাত ঝিটকানি মেরে সরিয়ে দিয়ে টলতে টলতে অভির কাছে এসে নিজের বুকের ওড়না সরিয়ে দিয়ে অভিকে ওর বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বলল,
—” আমি ঐ পাগলির থেকেও তোমায় অনেক অনেক অনেক বেশি ভালোবাসি অভি?”
কতটা ভালোবাস সেটাতো তোমার ব্যবহারেই দেখতে পাচ্ছি। কথাগুলো বলেই অভি আস্তে আস্তে ওর দু’হাত বিদ্যার কোমড়ে রেখেই জোড়ে একটা টান দিল। এতে বিদ্যা একদম অভির সাথে মিশে গেলো। বিদ্যাকে নিজের সাথে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে অভি। অভির নিঃশ্বাসের পাল্লা বেশ ভারি হয়ে আসছে। সেই পাল্লাকে আরো ভারি করে অভি ছোট বাচ্চাদের মত বলে উঠলো,
—” বিদ্যা, তোমার অপুদা কি তোমায় খুব ভালোবাসতো! আমার থেকেও কি বেশি ভালোবাসতো তোমায়?”
বিদ্যা দু’হাতে অভির মাথার চুলগুলো শক্ত করে মুঠোয় নিয়ে পিছন দিকে টেনে ধরল। তারপর অভির মুখের কাছে ঝুকে গিয়ে প্রান ভরে আদর করে বলল,
—” তোমার গা থেকে অপুদা, অপুদা তো গন্ধ আসে কিন্তু তুমি এখনো অপুদা হয়ে উঠতে পারোনি অভি। আমি সেই অপুদাকে খুব মিস করি।”
অভি বিদ্যার কথা শুনে চুপ হয়ে রইলো। অভি সব কিছু জানেনা নিজের অতীত সম্পর্কে। আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। তারপর সে সব কিছু জানতে পারবে।
বিদ্যা অভিকে ছেড়ে দিয়ে কিছুটা দুরে গিয়ে বলল,
—” অপুদা তার অবাধ্য বিদ্যাকে খু্ব সুন্দর করে নিজের কন্ট্রোলে রাখতো। এতটাই কন্ট্রোলে রাখতো যে, সেই ৬ বছর বয়সী বিদ্যা তার ব্যবহারে মুগ্ধ হয় সেই সময় তাকে বিয়ের প্রপোজ করে। কারন তার কাছে সেই মানুষটাই শ্রেষ্ট একটা মানুষ ছিল।”
বিদ্যা কথাগুলো বলে হাসতে লাগলো। কতোটা পাগল ছিলাম আমি। ঐ বয়সেই তাকে বিয়ের প্রপোজাল করেছিলাম। আমি নিজেও তখন বুঝতামনা, বিয়ে জিনিসটাই কাকে বলে? শুধু মাত্র তার কাছে থাকার জন্য ওমন কথা তাকে বলছিলাম।
বিদ্যার কথা বলার মাঝখানে অভির ফোনটা বেজে উঠলো। অভি ফোন বের করে দেখলো, কাবিরের কল। অভি রিসিভ করে বলল,
—” হ্যাঁ কাবির বল।”
অভি কল রিসিভ করতেই কনক কাবিরকে ইশারা করে বলল, সে কল রিসিভ করেছে?
কাবির মাথা নাড়িয়ে উৎসুক কন্ঠে বলে উঠলো,
—” অভি তুই কোথায় বলতো? তোকে সবাই খুঁজতে খুঁজতে হয়রান হয়ে গেছে। এখুনি এখানে আয়।”
ওকে যাচ্ছি বলেই অভি কল কেটে দিয়ে বিদ্যাকে বলল,
—” বিদ্যা নিচে চল।”
বিদ্যা কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে গেছে। কতদিন পর সে তার কাছে এল আর এখন বলছে চলে যাবে! আমার কাছে তার একমুহুত্ত্বও সময় নেই। কেমন ভালোবাসে সে! যে আমাকে বুঝার চেষ্টা করেনা! বিদ্যা আবার জেদ ধরে বলল,
—” আমি যাবোনা। তোমার যাওয়ার ইচ্ছা হলে তুমি যাও। আমার জন্য কি কারো সময় আছে নাকি! মনে তো হচ্ছে আমি তার কাছে বানের জলের মত ভেসেঁ এসেছি। আমার কারোর দরকার নেই সহানুভূতি দেখা।”
বিদ্যার এমন জেদ আর অহেতুক কথা শুনার একদম সময় নেই অভির কাছে। হাতে কিছু কাজ আছে, সেগুলো শেষ করে দ্রুত আবার ব্যাক করতে হবে। অভি কোন কথা না বলে দ্রুত চলে গেল।
বিদ্যা পিছন থেকে কয়েকবার ডাকলো কিন্তু অভি আর না দাড়িয়ে চলে গেল। অগত্যা বিদ্যা ফোনটা হাতে নিয়েই অভির পিছনে ছুটলো। একটা ছেলে ড্রিংকস সার্ভ করছিল। যার যার দরকার তাকেই শুধু দেওয়া হচ্ছে। বিদ্যার সামনে ছেলেটি পড়তেই ছেলেটিকে দাড়াতে বলে বিদ্যা এক পেগ মারলো। মনে ভিতর যেন ময়ূর ডান্স করতে লাগলো। পুরো শরীর আবার ঝিম ধরে গেল। ট্রেতে যতগুলো গ্লাসে ড্রিংক ছিল সব কটা পান করলো। তারপর আবার অভির পিছন ছুটলো। মনের ভিতর ভালোবাসার লাড্ডু ফুটতে শুরু করছে বিদ্যার। হঠাৎ অভি পিছন ফিরতেই দেখলো বিদ্যা ড্রিংক করছে। অভি চোখ বড় বড় করে ইশারা করলো ওগুলো না খেতে।
বিদ্যাও অভিকে দেখে দাড়িয়ে ভ্রু নাচিয়ে আরো এক পেগ মারলো। অভি দ্রুত পায়ে বিদ্যার দিকে আসতেই বিদ্যা আরও একবার ট্রাই করলো। অভি সাথে সাথে এসে বিদ্যার হাত ধরলো। ড্রিংক সার্ভ করা ছেলেটিকে ধমক দিয়ে বলল,
—” একটা মেয়ে মানুষকে কিভাবে এত ড্রিংক পান করাচ্ছো! তোমার মাথা কি পাগল হয়েছে?”
ছেলেটি মাথা নিচু করে বলল,
—” ম্যাডাম যে বলল, তার নাকি আরো চাই।”
অভির শরীর রাগে হিরহির করতে লাগলো। মন চাচ্ছে এক থাপ্পরে গাল ফাটিয়ে দিতে। অভি উচ্চস্বরে বলল,
—” ম্যাডাম তোমাকে এখুনি মরতে বলছে। এখন যাও তার কথামত রশিতে লটকে পড়ো। দেখি তুমি কেমন ম্যাডামের বাধ্য কাজের মানুষ।”
ছেলেটি এবার মুখ ফুটে বলল,
—” স্যরি স্যার, আমার ভুল হয়ে গেছে। আমি এখুনি লেবু জল আনছি। জাষ্ট একটু ওয়েট করুন স্যার।”
ছেলেটি চলে যেতেই বিদ্যা ওর ট্রে থেকে আরও একটা গ্লাস তুলে নিল। এবার অভিকে পায় কে? চোখমুখ শক্ত করে বলল,
—” তুমি আবার ড্রিংক করেছ! একটু আগে তোমার কি অবস্থা হয়েছিল, সব ভুলে গেছ?”
বিদ্যা ড্রিংকের গ্লাস পিছনে লুকিয়েই জ্বীভে কামড় মেরে খিলখিলিয়ে হেসে মাথা নাড়িয়েই চুপ হয়ে দাড়িয়ে রইলো।
অহ্ গড, আমি কাকে কথাগুলো বলছি বলতেই বিদ্যা আরও এক পেগ নিল। অভির এবার ধৈর্য্যর বাঁধ ভেঙ্গে গেল। বিদ্যার হাত ধরে টেনে আড়ালে নিয়ে গিয়ে একটা ওয়ালের সাথে চেপে ধরে রাগী কন্ঠে বলে উঠলো,
—” একে তো তুই আজ সাদা ড্রেস পড়েছিস তার উপর এমন তান্ডপ চালাচ্ছিস? কেন সাদা ড্রেস পড়তে গেলি হুম! আমি কি মরে গেছি, তাই বিধবা সাজার শখ জেগেছে? না তোর ড্রেসের অভাব ছিল বলে এই ড্রেস পড়েছিস? তোর কি কোন ড্রেস ছিলোনা? কল গার্ল হয়েছিস? পুরুষ পটানোর জন্য মাঠে নেমেছিস? আমাকে চিনতে তোর এখনো অনেক দেরি আছে। একদম হাত-পা ভেঙ্গে রুমে বসিয়ে রাখবো।”
অভি কথাগুলো শেষ করতে পারেনা। তার আগেই বিদ্যা মুখ থেকে শাম্পিং এর ফোয়ারা ছুটলো অভির চোখে মুখে।
অভি সাথে সাথে চোখ মুখ বন্ধ করলো। বিদ্যার মুখের সব শাম্পিং অভির মুখে ছুড়ে মারা খতম করে বিদ্যা বলল,
—” আমার জানটা, এমন করে আমায় দেখনা। আমি কিন্তু তোমাকে চুরি করে এই বুকের ভিরত রেখে দিব। তখন তুমি কোথাও যেতে পারবেনা।”
অভির পুরো চোখ-মুখ ভিজে গেছে। অভির রাগ তখন আকাশ ছুই ছুই অবস্থায়। কখন যে সেটা বাষ্ট হবে তার কোন ঠিকানা নেই। অভির কোন রেসপন্স না পেয়ে নিজের ওড়না দিয়ে অভির মুখ মুছে দিতে লাগলো বিদ্যা। তারপর বলল,
—-” তুমি আমার সামনে আসলেই আমার বুকের ভিতরের হৃদস্পন্দন বড্ড বাড়াবাড়ি ভাবে নড়তে শুরু করে। সেই প্রথম দিন থেকে আজ অবদি এর কোন পরিবর্তনই হচ্ছেনা।”
অভি অনেক কষ্টে নিজেকে ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করলো। আজ যদি বিয়ে বাসা না হত, তাহলে এতক্ষনে বিদ্যার খবর হয়ে যেত। তাছাড়া অভি সিনক্রিয়েট করা একদম পছন্দ করেনা। বউকে শাসন করার জন্য রুমই যথেষ্ট। অভি দীর্ঘ একটা শ্বাস ফেলে বলল,
—” আর যদি এমন করছো, তাহলে কিন্তু আমি সারা জিবনের জন্য তোমার কাছ থেকে চলে যাব। সব সময় মনে রাখবে, এসব আমার একদম পছন্দ না।”
অভি বিদ্যাকে ছেড়ে দিয়ে হন হন করে চলে গেল। অভির চলে যাওয়া দেখে বিদ্যা চোখ পিটপিট করে বলল,
—” এটা কি হল! বর মশাইতো আমার উপর ভিষন রেগে গেছে। আমি আবার কি করলাম।”
ওয়েটার ছেলেটি বিদ্যাকে এদিক ওদিক খুঁজতে খুঁজতে শেষে দেখতে পেল। ছেলেটি আধা দৌড়ে বিদ্যার কাছে এসে বলল,
— ” ম্যাডাম, স্যার এটা খেতে বলেছে।”
বিদ্যা মুখটা বাউন্স করে বলল,
— ” স্যার বলেছে? উমম স্যারের কথাতো শুনতে হয়। দাও……।”
জ্বী ধরেন বলে ছেলেটি বিদ্যাকে লেবু জল দিয়ে দাড়িয়ে রইল।
বিদ্যা লেবু জল মুখে দিয়েই চোখ মুখ বিষিয়ে তুলল। এ্যা ছিহ্, এটা কোন খাওয়ার জিনিস হল! খাওয়ার জিনিস তো ঐ গুলো বলে লোভনীয় চোখে দুরের ড্রিংকসের বোতলের দিকে আঙ্গুল তুলে দেখিয়ে দিল।
ছেলেটি মহা বিপদে পড়ে গেল বিদ্যাকে নিয়ে। অনুরোধ সুরে ছেলেটি বলল,
—” ম্যাডাম, আপনার উপর আমার চাকরিটা নির্ভর করছে। স্যার আমাকে একদম জবটা থেকে আউট করে দিবে। প্লিজ, জলটা খান।”
বিদ্যা ঢুলতে ঢুলতে ফিক করে হেসে বলল,
—” স্যার বলেছে তাইনা! স্যার বলেছে…..। স্যারের কথাতো শুনতে হয়। এই দেখ, আমি এখুনি খতম করছি। এই ওয়েট ওয়েট, আমি এটা খাব কিন্তু স্যারের কাছে আমাকে নিয়ে যাবে তো?”
মা, আপনি যাহা বলিবেন তাহা শুনবো। দয়া করে জলটা খেয়ে নেন। আর আমাকে বাঁচান।
বিদ্যা আর দেরি না করে ঢকঢক করে সব জল খেয়ে বাম হাতে মুখ মুছে বলল,
—” আহ্, সব শেষ করে ফেলেছি। এবার আমি স্যার যাব।”
জ্বী ম্যাডাম জ্বী, আসুন আমার সাথে বলে বিদ্যাকে নিয়ে গেল। কিন্তু মাঝপথে তমালের বাবা বিদ্যাকে দেখতে পেয়ে ওর কাছে এসে বলল,
—” কিরে, তোর কি হয়েছে! এমন ঢুলেঢুলে হাটছিস কেন?”
বিদ্যা ওর দাদার দিকে চেয়ে খুব তীক্ষ্ণ নজরে পরখ করে বলল,
—” তুমিতো আমার দাদা। কিন্তু কোন দাদা!”
বিদ্যার কথা শুনে তমালের বাবা তাজ্জব বনে গেল। তারপর ওয়েটারকে বলল,
—” ওতো মনে হয় ড্রিংক করেছে। ওকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছো।”
ওদের কথা কেড়ে নিয়ে বিদ্যা ওর দাদার দিকে ঝুকে পড়লো। তারপর হাত দিয়ে দাদার শেরওয়ানী পরখ করে বলল,
—” তোমায় বেশ মানিয়েছে দাদা। বৌদি তোমাকে দেখে আজ ইমপ্রেস হয়ে যাবে।”
তমালের বাবা যে এমন বিব্রত অবস্থায় পড়বে, সেটা তিনি ভাবতেও পারেননি। নিজের ছোট বোনের কাছ থেকে এমন কথা শুনতে হল!
বিদ্যা,,,,! অনেক হয়েছে। এগুলো কেন খেয়েছিস?
এদিকে বিদ্যা বিরবির করে বলেই চলছে, তুমি কত নাম্বার যেন আমার দাদা হও! উম্ বলে হাত উচু করে গুনতে শুরু করলো, এক, দুই, তিন, চার, পাঁচ। পেয়ে গেছি বলে উল্লাসিত কন্ঠে ছোটখাটো চিৎকার দিল বিদ্যা। তারপর ওর দাদার কানের কাছে মুখ এনে বলল,
—” তুমি আমার সবচেয়ে ছোট দাদা তাইনা?”
এ আর সম্মান রাখবেনা বলে তমালের বাবা ছেলেটিকে চলে যেতে বলে বিদ্যা ধরে রুমে পথে পা বাড়ালো। বিদ্যা হঠাৎ সামনে দেখতে পেল অভি ছাতনা তলায় দাড়িয়ে আছে। স্যার বলেই বিদ্যা ওর দাদার হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে অভির দিকে দৌড় দিল। দৌড় তো দিল, কিন্তু শেষে গিয়ে তাকে শর্মিষ্ঠার সাথেই ধাক্কা খেতে হল। শর্মিষ্ঠা পড়তে পড়তে আর পরেনি। পড়ে গেল কি হত? কেলেংকারী হয়ে যেত। শর্মিষ্ঠা রেগে গিয়ে বিদ্যাকে অসভ্য মেয়ে বলে একটা গালী দিল।
শর্মিষ্ঠার গালি শুনে বিদ্যা একদম ৬ বছর বয়সে ফিরে গেল। শর্মিষ্ঠার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়েই মুখ ছুটালো। হিংসুটে মহিলা কোথাকার, সবসময় আমার বিরুদ্ধে মায়ের কাছে কথা লাগাতেই থাকে। মায়ের কি তুমি কর্মচারী হয়েছ? কত টাকা স্যালারী দেয় মা তোমায় হুম! সবসময় আমার পিছে পড়েই থাকে। আর ইদানিং দেখি আমার স্যারের পিছনে পিছনেও ঘোরে। আর একদিন যদি দেখছি স্যারকে বিরক্ত করা, তাহলে একদম চোখে গুলি করে দিব বলে বিদ্যা শর্মিষ্ঠাকে হাত দিয়ে ইশারা করে দেখিয়ে দিল, সে কিভাবে তাকে গুলি করবে।
দুর থেকে বিদ্যার ছোট দাদা এসে বলল,
—” কাকি, ওকে কে যেন ইচ্ছা করে ড্রিংকস করাইছে। ওর কথা কিছু মনে করেন না।”
তোমার বোনের ব্যবহার আজ সহ্য সীমানা পার করে দিয়েছে। ওকে থামাও বলতেই বিদ্যা শর্মিষ্ঠাকে একটা ধমক দিয়ে বলল,
—” দাদা, এই বাজে মহিলার কথা শুনবানা। ইদানিং সে স্যারের পিছে লেগেছে। মনে হচ্ছে কাকাইকে ডির্ভোস দিয়ে স্যারের কাছে যাবে।”
কথাগুলো বলেই বিদ্যা অভির কাছে দৌড় দিয়েই বলল,
—” স্যার, আমি আসছি।”
তমালের বাবাও বিদ্যার পিছু পিছু গেল।
শর্মিষ্ঠা তো রেগেমেগে আগুন।এত অপমান! এর সব শোধ তোলবো । দাড়াও বিয়েটার ঝামেলা শেষ হোকনা।
♥
অভির পাশে এসে বিদ্যা চুপ করে দাড়িয়েই নিজের শরীর দিয়ে অভিকে একটা ধাক্কা দিতেই অভি ওর দিকে চেয়ে চোখ গরম করে তাকালো। অভির এমন শাসনে বিদ্যা মুখ লুকিয়ে হেঁসে তারপর মুখে আঙ্গুল পুরে দাড়িয়ে রইল।
বিদ্যার ছোট দাদা এসে বিদ্যাকে ধরেই বলল,
—” অভি, ওতো তোমায় আবার কিছু বলেনিতো! সবাইকে যা ইচ্ছা তাই বলে যাচ্ছে। মুখ লাগামহীন ভাবে বকবক করেই চলছে।”
মি. সতীশ, ওকে আমি সামলিয়ে নিব। এখনতো রিয়াকে আনতে হবে। আপনি বরং ও দিকটাই দেখেন।
ওকে অভি, ওকে একটু দেখে রেখ বলে সতীশ চলে গেলে। আর এদিকে বিদ্যা অভির গা ঘেষে এসে দাড়ালো। অভি শুধু একবার বিদ্যার দিকে চাইলো। তারপর কিছু না বলে কাবিরের সাথে কথায় মশগুল হয়ে গেল।
কাবিরতো বিদ্যাকে দেখেই হেসে উঠলো। তারপর বলল,
—” অভি থাকা শর্তেও পিনিক লাগাইছো বিদ্যা! ও কি তোমায় এমনি এমনি ছেড়ে দিল?”
বিদ্যা শুধু হেসে মাথা নাড়িয়ে সায় দিয়ে অভির দিকে তাকালো। তারপর অভিকে ফিসফিসিয়ে বলল,
—” স্যার পিনিক মানে কি!”
এমন সময় সবাই উলু দিয়ে উঠলো। রিয়াকে পিড়িতে করে নিয়ে আশা হল। রিয়া পানপাতা দিয়ে মুখ ঢেকে আছে। তারপর রিয়াকে পিঁড়িতে করে কাবিরের চারপাশে সাতপাক ঘোরানো হয়।
এরপর শুভদৃষ্টির পালা। বিবাহের মন্ডপে জনসমক্ষে বর ও কন্যা একে অপরের দিকে চেয়ে দেখল। বিদ্যা রিয়াকে পানপাতা সরানো দেখেই চেঁচিয়ে বলল,
—” রিয়া, তোকে ফাটাফাটি দেখাচ্ছে।”
রিয়াও সাথে সাথে বিদ্যার দিকে চেয়ে বলল,
—” পিসি, তোমাকে আরও ভালো দেখাচ্ছে। হোল’স স্কয়ার ফাটাফাটি।”
বিদ্যা দু’হাত ঘুড়িয়ে বলল,
—” নজর যেন না লাগে।”
মন্ডপে কাবিরের বাবা কিছু বলতে যাবেন এমন সময় কাবির নিষেধ করলো কিছু না বলতে। তাই কাবিরের বাবা চুপ হয়ে রইলেন।
সাতপাঁকে বাধার সময় সবার হাতে কিছু ফুল দিয়ে গেল একটা মেয়ে। সবাই বর-কনেকে ফুল ছিটিয়ে দিচ্ছে। আর বিদ্যা অভির গায়ে ফুল ছিটিয়ে দিচ্ছে। অভি কিছু বলতে গিয়ে বললোনা। এতে বিদ্যার সাহস বেড়ে গেল। অভি যখন ফুল ছিটিয়ে দিচ্ছিলো তখন বিদ্যা এসে অভির সামনে দাড়ালো। অভি বাধ্য হয়ে বিদ্যাকে পাশে টেনে এনে ওর গায়ে ফুলের পাপড়ী ছিটিয়ে বলল,
—” এবার খুঁশি!”
বিদ্যা অভির হাত ধরে বলল,
—” খুব খুঁশি। ”
অভি আর এমুহুত্বও দেরী না করে বিদ্যাকে টেনে নিয়ে গেল ওখান থেকে। মান-সম্মান যা বাঁকি ছিল সেটাও আজ শেষ করবে। বিদ্যাকে নিয়ে ওর রুমে যেতেই দেখলো, বেডে বিভিন্ন জিনিসপত্র ছড়ানো-ছিটানো। অভি সেগুলো পরিষ্কার করতে এগিয়ে যেতেই বিদ্যা দরজা বন্ধ করে দিল। তারপর দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে অভির দিকে মুগ্ধ নয়নে চেয়ে রইলো। আজ তোমায় ছাড়ছিনা অভি। আজ বিদ্যার অভিকে খুব খুব খুব প্রয়োজন।
[] চলবে…….[]
বিদ্রঃ ♥জল সমাধি♥ উপন্যাসটি বই আকারে একুশে বই মেলার আগেই এবছরে প্রকাশিত হতে যাচ্ছে। সবার কাছে দোয়াপ্রার্থী। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন। বই ব্যাপারে পরবর্তীতে সব কিছু জানানো হবে।
সরাসরি ওয়েবসাইট এ পড়ুন: https://nafisarkolom.com/2020/10/sidur-suddhi-20/
আমার ব্যক্তিগত ফেইসবুক একাউন্ট: https://www.facebook.com/nafisa.muntaha
চাইলে আমার গ্রুপে জয়েন করতে পারেন: https://www.facebook.com/groups/nafisarkolom