#সুপ্ত_অনুভূতি
#পর্ব_১৪
#মেহরাজ_হোসেন_রনি
ফারু আর আমি সামনাসামনি বসে আছি।ওকে দেখে কিছু বুঝা যাচ্ছে না বিষয়টা কি বেশি সিরিয়াস নাকি অল্প।কিছু বলছেও না।তাই বললাম
“ফারু তুমি না বললে কি একটা সমস্যা হয়েছে।তা সেটা কি?”
“নেহাল আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।”
“কি বলছো!কার সাথে?আর কবেই না ঠিক হল।ভাবি তো আমাকে কিছু বলল না।”
“বিয়ে তো আজ ঠিক হয়েছে দুপুরের দিকে।কিন্তু আমি এই বিয়েটা করতে চাচ্ছি না।”
“কার সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে?”
“তোমার ফ্রেন্ড রানার সাথে।”
“কি বলো! রানা তোমাকে বিয়ে করতে চেয়েছে?”
“হ্যা।ওর নাকি আমাকে প্রথম দিন দেখেই ভালো লেগে গেছে।তাই আজ পরিবার নিয়ে এসে আমাকে দেখে বিয়ে ঠিক করে গেছে।তুমি কিছু একটা করো নেহাল।আমি বিয়েটা করতে চাচ্ছি না।”
ফারিয়ার বিয়ের কথা শুনে মনটা অনেক খারাপ হয়ে গেল।তার থেকেও বেশি খারাপ হয়েছে যখন শুনলাম আমার ফ্রেন্ড রানার সাথে ফারিয়ার বিয়ে ঠিক হয়েছে।কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না।আমি এই সব ভাবছি তখন ফারিয়া আবার বলল
“নেহাল তুমি কি কিছু বুঝো না।নাকি বুঝতে চাচ্ছো না।এই নেহাল তুমি কি আমাকে ভালোবাসো না?নাকি সবই আমার মনের ভুল।”
হঠাৎ ফারিয়ার থেকে ভালোবাসার কথা শুনে আমি শক।ফারিয়াও তাহলে আমাকে ভালোবাসে?আমি কিছু বলছি না দেখে ফারিয়া আবার বলল
“এই নেহাল তুমি কি আমাকে ভালোবাসো না নাকি?কি হলো বলো?”
“হ্যা ভালোবাসি।খুব বেশি ভালোবাসি।”
“তাহলে তুমি আমার আব্বুকে বলো যে তুমি আমাকে বিয়ে করতে চাও।”
“তোমার আব্বু কি মানবে?”
“তুমি আগে আব্বুর সাথে আমাদের বিয়ের কথা বলো।যদি আব্বু রাজি না হয় তাহলে আমরা পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করবো।”
ফারিয়ার আইডিয়াটা খারাপ না।আগে গিয়ে ওর আব্বুর সাথে কথা বলি।যদি ওনি রাজি না হয় তাহলে ফারিয়া যেই ভাবে বলে সেইভাবে বিয়ে করে নিবো।ফারিয়া যেহেতু আমাকে ভালোবাসে তাহলে ফারু যা বলছে সেটাই আমাদের জন্য ভালো হবে।তাই এখন ফারিয়ার কথা মত ওর আব্বুর সাথে কথা বলতে ভাবিদের বাসায় গেলাম।ফারিয়ারা এখন ভাবির আব্বুর পরিবারের সাথেই থাকে।
ফারিয়ার আর ভাবির আব্বু দুইজনের সামনে বসি আছি।তারাও কিছু বলছে না আমিও কিছু বলছি না।কেমন জানি একটা নিরবতা কাজ করছে।এবার ভাবির আব্বু বলল
“নেহাল তুমি মনে হয় কিছু বলতে এসেছো?”
“হ্যা।আমি ফারিয়ার আব্বুর সাথে একটা বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাচ্ছিলাম।”
ফারিয়ার আব্বু বললো
“বড় ভাইয়ার সামনেই বলো সমস্যা নেই।”
কিছুটা সাহস নিয়ে বললাম
“আঙ্কেল ফারিয়াকে আমি ভালোবাসি।ফারিয়াও আমাকে ভালোবাসে।তাই আমরা বিয়ে করতে চাচ্ছি।”
কথাটা বলে আমি ওনাদের রিয়েক্টশন দেখার জন্য তাকিয়ে থাকলাম।ফারিয়ার আব্বুর তেমন কোনো চেঞ্জ দেখতে পেলাম না।কিন্তু ভাবির আব্বু কিছুটা গভীরভাব নিয়ে বলল
“নেহাল তোমার থেকে আমি এইটা আশা করি নি।মনে করেছিলাম তুমি তোমার বড় ভাইয়ের মত কিন্তু না।”
“আসলে আমার এইভাবে আশাটা ঠিক হয় নি।কিন্তু ফারিয়ার বিয়ের কথা শুনে আর চুপচাপ বসে থাকতে পারলাম না।তাই আপনাদেরকে এসে কথাটা বললাম।এখন আপনারা যা ভালো মনে করেন।আর আমার কথায় কোনো কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দুঃখিত।”
এবার ফারিয়ার আব্বু বলল
“আরে নেহাল এইখানে আমরা কষ্ট পাবো কেনো?ভাইয়া তো শুধু বলতে চেয়েছে যে বিয়ের কথাটা তুমি একা এসে কেনো বললে।তাই বলল তোমার থেকে এইটা আসা করে নি।ভেবেছিল তোমার ভাইয়ের মত পরিবারসহ তোমার আর ফারিয়ার বিয়ের কথা বলবে।কিন্তু তুমি নিজে এসে বলেছো তাই বলছে।”
“তার মানে আপনাদের কোনো সমস্যা নেই আমাদের বিয়ে নিয়ে।”
“আরে নাহ।সমস্যা হবে কেনো?”
“তাহলে রানার পরিবারকে কি বলবেন?তারাও তো বিয়ে ঠিক করে গেছে?”
“তোমাকে এই কথা কে বলেছে বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে?আর রানার পরিবারকে ফারিয়া নিজেই না করে দিয়েছে।ফারিয়া তো বলেছে তোমাকে ছাড়া কাউকে নাকি বিয়ে করবে না।”
ওনি বলে কি?তাহলে ফারুর বিয়ে ঠিক হয় নি।আমার তো প্রায় জান যায় যায় অবস্থা হয়েছিল।কিন্তু ফারিয়া তাহলে আমাকে মিথ্যা বললো কেন?সব কিছু কেনো জানি এলোমেলো লাগছে।এই সব নিয়ে ভাবছি তখন ফারিয়া এসে বলল
“তোমাদের কথা শেষ এবার।তোমরা কিন্তু বলেছিলে নেহাল যদি নিজে এসে বা ওর পরিবার এসে বিয়ের কথা বলে তাহলেই আমাদের বিয়ে হবে।এখন নেহাল কিন্তু নিজেই এসে বিয়ে কথা বলেছে।বাকিটা তোমরা ওর পরিবারের সাথে কথা বলে ঠিক করো।আমি ওকে নিয়ে যাচ্ছি।এই নেহাল আমার সাথে এসো।”
ফারিয়া আমাকে টানতে টানতে ওর রুমে নিয়ে গেল।আমরা চলে যেতেই নাফিজার আব্বু বলল
“এক দিক দিয়ে কিন্তু ভালোই হয়েছে কি বলিস ছোট?”
“হ্যা সেটা ঠিক বলেছো।এক মেয়েকে দেখতে গেলে।দুই মেয়ের সাথে দেখা করা যাবে।আর ছেলে হিসেবে নিলয় আর নেহাল কিন্তু বেশ ভালো।”
“তারপরে ওদের পরিবারও ভালো।নিলয়ের আব্বুকে তো আমি আগে থেকেই চিনতাম।ওনি শান্ত প্রকৃতির মানুষ।”
“তুমি যাই বলো ফারিয়ার জন্য নেহাল কিন্তু একদম পারফেক্ট।”
তারা দুই ভাই কথা বলছে আর এইদিকে ফারিয়া আমাকে রুমে নিয়ে এসে দরজা বন্ধ করে নাচতে শুরু করে দিয়েছে।ফারিয়ার এমন অদ্ভুত নাচ দেখে মাথা নষ্ট।ফোনটা বের করে ফারুর নাচের ভিডিও করে নিলাম।এবার ফারিয়াকে বললাম
“এই ফারিয়া কি হয়েছে তোমার?এমন করেছো কেনো?”
আমার কথা শুনে ফারিয়া নাচ বন্ধ করে দিয়েছে।কিন্তু এ কি?ফারিয়া আমার দিকে দৌড়ে আসছে কেনো?দৌড়ে এসে আমার উপর ঝাঁপিয়ে পরলো।ভাগ্য ভালো খাটে উপড়ে পড়েছি।না হলে আমি শেষ।ফারিয়া আমার উপড়ে বসে গালে চুমু দিয়ে বলছে
“নেহাল আজ আমি কত খুশি তা তোমাকে বলে বুঝাতে পারবো না।এত দিন পরে আমার স্বপ্ন পূরণ হল।অবশেষে তোমাকে পেয়েই গেলাম।উম্মাহ উম্মাহ।”
“এই ফারু ছাড়ো আমাকে।কেউ আমাদের এইভাবে
দেখলে খারাপ ভাববে।”
“তুমি চুপ থাকো।রুমে কেউ আসবে না।আমি দরজা বন্ধ করে দিয়েছি।”
আমিও কিছু বললাম না।আমারো ভালো লাগছিল কিন্তু একটু পরে সেটা খারাপ হয়ে গেল।দরজা খোলার আওয়াজ পেলাম।দেখলাম ওয়াশরুম থেকে লিজা চুল মুছতে মুছতে বের হচ্ছে।লিজা আমাদের দিকে তাকাতেই ওর চোখ রসগোল্লার মত বড় করে ফেললো।কারন আমার উপর ফারিয়া বসে আছে।
ফারিয়াকে দেখলাম রেগে আগুন হয়ে গেছে।লিজা হয়তো বুঝতে পারে নি আমরা এইখানে এই অবস্থায় থাকবো।লিজা কিছু লজ্জা আর ভয় পেয়ে বলল
“সরি সরি আমি কিছু দেখি নি।”
ফারিয়া আমার উপর থেকে নেমে নাক মুখ লাল করে বলল
“ওই ফাজিল তুই এই রুমে কি করছিস?”
“আপু আমি তো গোসল করতে এসেছিলাম।কিন্তু তোমরা যে রুমে এইসব করছিলে তা আমি বুঝতে পারি নি সরি।”
“ফাজিল মেয়ে চুপ থাক তুই।আমরা কি করছিলাম না করছিলাম সেটা কি তোকে বলে করতে হবে নাকি।যা এইখান থেকে।এখনো দারিয়ে আছে ফাজিল মেয়ে একটা।”
“যাচ্ছি যাচ্ছি এইখানে থাকতে আসেনি।কিন্তু যা দেখলাম আপু পুরাই জোস।”
কথাটা বলে দরজা খুলে লিজা দৌড়ে চলে গেল।ফারিয়া দরজা লাগিয়ে এসে খাটে বসতে বসতে বলল
“লিজার জন্য মুডটাই নষ্ট হয়ে গেল।ফাজিল মেয়ে তোকে সামনে পাই একবার তখন দেখাবো তোর জোস।”
ওদের দুই বোনের কান্ড দেখে আমার সেই লেভেলের হাসি পাচ্ছিল কিন্তু ফারিয়া রেগে ছিলো বলে হাসিটা আটকে রেখেছিলাম।রাগলে যে ফারিয়াকে কিউট লাগে সেটা আজ না দেখলে জানতে পারতাম না।
ফারুকে জড়িয়ে ধরে বসে আছি।ফারিয়া কিছু বলছে না।তাই বললাম
“এই ফারু।”
“হুম বলো।”
“তুমি কবে থেকে আমাকে ভালোবাসো?”
“প্রথম থেকেই।”
“আমাদের ফ্রেন্ডশিপ হওয়ার পর থেকে?”
“নাহ তারও আগে থেকে।তোমাকে যখন প্রথম দেখেছিলাম তখন থেকেই।”
“তাহলে আমাকে বলো নি কেনো?”
“শখ কত!মেয়েদের থেকে ভালোবাসি শুনতে চায়।”
“আগে বলে দিলে আমার এত টেনশন করতে হতো না।”
“ভালো করেছি বলি নি।”
“আচ্ছা তুমি জানলে কিভাবে আমি যে তোমাকে ভালোবাসি?”
“সেটা তোমার চোখ দেখেই বুঝে গিয়েছি।কিন্তু তুমি যে বুদ্ধু সেটা আমার জানা ছিল না।”
“কেনো আমি কি করেছি?”
“আমাকে যে ভালোবাসো সেটা বলো নি কেনো?আমি যদি আজ তোমাকে কিছু না বলতাম তাহলে কি হতো সেটা একবার ভেবে দেখেছো?নিজের অনুভূতি গুলোকে কেনো আটকিয়ে রাখো #সুপ্ত_অনুভূতির মত।”
“কেনো জানি নিজের অনুভূতি গুলোকে সুপ্ত রাখতে ইচ্ছে করে।”
“এখন থেকে এইসব চলবে না।তাহলে কিন্তু মেরে একদম ফাটিয়ে দেবো।”
মাথায় দুষ্টুমি করার চিন্তা আসলো।ফারুকে আরেকটু কাছে নিয়ে আসলাম।আমি কি করতে চাচ্ছি সেটা ফারু বুঝে গেছে।আমাকে আটকিয়ে দিয়ে বলল
“নেহাল এইসব করা কিন্তু ঠিক না।”
দেখলাম ওর মুখে দুষ্টু হাসি।তাই বললাম
“কেনো ভালো লাগে নি।”
“ভালো তো লাগে কিন্তু এখন না।বিয়ের পরে।”
“কিন্তু একটু আগে তো তুমি নিজেই করেছিলে।তখন মনে ছিল না।”
“আমি এখনো করবো পরেও করবো।তুমি কিছু বলবে না।কিন্তু তুমি বিয়ের আগে এইসব কিছু করতে পারবে না।তাই মাথা থেকে এটার চিন্তা ফেলে দাও।”
কিছু না বলে হাসলাম।কিছুসময় পর ফারিয়ার ফোনে কেউ কল দিলো।দেখলাম ভাবি কল দিয়েছে।ফারিয়া কলটা রিসিভ করে লাউডস্পিকার দিয়ে বলল
“হ্যা আপু বলো।”
“ফারিয়া নেহাল কোথায় তুই কি জানিস?”
“নেহালকে জড়িয়ে ধরে বসে আছি।কেনো কি হয়েছে?”
“তুই ফাজলামো বাদ দে।ওকে ফোন দিচ্ছে সবাই কিন্তু ধরছে না।অনেক রাত হয়েছে এখনো বাসায় আসে নি।সবাই খুব চিন্তা করছে।”
“আরে ধুর সত্যি কথা বললে কেউ বিশ্বাস করে না।এই নেও ওর সাথে কথা বলো।”
“হ্যা ভাবি বলো।”
“নেহাল তুমি সত্যিই ফারিয়ার সাথে!আমাদের ফোন কেনো ধরছো না ভাই।আর এত রাতে ওইখানেই বা কি করছো?”
“ভাবি ফোন মনে হয় সাইলেন্ট হয়ে আছে।আর বাকি কথা বাসায় এসে বলছি।”
ফারিয়া ফোনটা নিয়ে বলল
“এবার বিশ্বাস হয়েছে তাহলে।”
“কিরে কেমনে কি হল।নেহাল কি তোকে প্রপোজ করেছে নাকি তুই প্রপোজ করেছিস?”
“এই সব কথা অন্য একদিন বলল আপু এখন রাখছি।ডিস্টার্ব করো না।”
ফোন রেখে দিলো।আরো কিছুসময় থেকে বাসায় চলে আসলাম।আসার সময় ফারিয়ার আব্বু বলেছিল আম্মু আব্বুকে যেনো এইখানে বিয়ের কথা বলার জন্য পাঠিয়ে দেই।
বাসায় এসে আমাকে কিছু বলতে হল না।ভাবিই সবাইকে বলে দিয়েছে।আমাদের বিয়ের বিষয়ে বাসার কারো আপত্তি নেই।
দুই দিন পরের কথা..
আজকে অফিস বন্ধ তাই বাসায় ছিলাম।রুমে বসে ফারুর সাথে ফোনে কথা বলছিলাম।তখন হিয়া রুমে আসলো।ওকে দেখে ফারুকে বললাম একটু পর কল দিচ্ছি।ফোন রেখে হিয়াকে বললাম
“কিরে তুই আজ এইখানে?তাও এতো সকালে?”
“তাহলে তুই ফারিয়াকে বিয়ে করছিস তাই তো?”
“হ্যা তাতে কি হয়েছে।”
“তোর আগে আমি বিয়ে করে দেখিয়ে দেবো।আমিও সুখে আছি।”
কথাটা বলেই কাকে জানি ফোন দিয়ে বেড়িয়ে গেল।মনে হয় রাসেল ভাইকে।তাতে আমার কি?আমি ফারিয়াকে কল দিয়ে আবার কথা বলতে লাগলাম।এই দিকে হিয়া কল দিয়ে রাসেলকে দেখা করতে বলল।
রাসেল আর হিয়া সামনাসামনি বসে আছে।রাসেল বলল
“হ্যা হিয়া বলো কেনো ডেকেছো?”
“আপনি বিয়ের তারিখটা এগিয়ে নিয়ে আসেন?”
“কেনো কি হয়েছে?”
“নেহাল নাকি ফারিয়াকে বিয়ে করবে।ওদের বিয়ে হওয়ার আগে আমরা বিয়ে করবো ব্যাস।এখন আমি এত কিছু বলতে পারবো না।”
#চলবে…