সুপ্ত_অনুভূতি #পর্ব_১৩ #মেহরাজ_হোসেন_রনি

0
315

#সুপ্ত_অনুভূতি
#পর্ব_১৩
#মেহরাজ_হোসেন_রনি

তাদের দুই ভাইয়ের সাথে অনেকক্ষণ কথা বললাম।তারা দুজনই তাদের ছোট বেলার কথা বলছিল।তাদের পরিবারের বিষয়ে বলল।আমরা কথা বলছিলাম তখন ফারিয়া এসে বলল

“আরে তোমরা সেই কখন থেকে ওর সাথে কথা বলছো।ফ্রেন্ড হল আমার।গল্প করার কথা আমার সেই জায়গা তোমরা দুজন ওর সাথে গল্প করছো সেটা কি ঠিক।এই নেহাল ভিতরে চলো।এখন আমার সাথে আড্ডা দিবে।”

আমার হাত ধরে ফারিয়া ভিতরে নিয়ে গেল।আর ওনারা ফারিয়ার কান্ড দেখে হাসছে।ফারিয়া আমাকে ওর রুমে নিয়ে গেল।সেইখানে গিয়ে দেখি তানহা আর লিজা বসে আছে।আমাকে দেখে লিজা বলল

“এই তানহা চল।এইখানে থেকে আমাকে কাজ নেই।”

তানহা আর লিজা চলে গেল।রুমে আমি আর ফারিয়া।ফারু আমাকে ওর পাশে বসিয়ে বলল

“তুমি যে এখন আসবে সেটা আমাকে আগে বলো নি কেনো?”

“ভেবেছিলাম আঙ্কেল কোনো দরকারে ডেকেছে তাই কিছু বলেই চলে আসলাম।আর পরের থেকে তোমাকে বলে তারপর আসবো।”

“হুম কথাটা জেনো মনে থাকে।আপু বলল গতকাল নাকি হিয়াকে দেখতে এসেছিল।”

“হ্যা।আমার ফ্রেন্ড এর বড় ভাই হিয়াকে দেখতে এসেছিল।ছেলে খুব ভালো।”

“ভালো হলেই ভালো।তা বিয়ে কবে ওদের।”

“সেটা এখনো ভালো ভাবে ঠিক করা হয় নি।আচ্ছা তোমার থেকে একটা বিষয় জানার আছে।”

“হ্যা বলো কি জানতে চাও।”

“তোমার আব্বু আর ভাবির আব্বুর মধ্যে কি কোনো সমস্যা আছে?মানে কোনো কিছু হয়েছিল নাকি?”

“ওহ এই কথা।সেটা তো নাফিজা আপুকে বললেই আপু বলে দিতো।আচ্ছা আমিই বলছি শুনো।”

“হুম বলো।”

“আসলে বড় আব্বুর সাথে আমার আব্বুর একদিন একটা কথা নিয়ে রাগারাগি হয়।পরে বিষয়টা অনেক জটিল হয়ে যায়।তারপর থেকে তারা একজন আরেকজনের সাথে কথা বলে না।বড় আব্বু আমাদের সবাইকে বিয়েতে যেতে বলেছিল কিন্তু আব্বুকে কল দিয়ে বলেনি।তার কারনে আব্বু নাফিজা আপুর বিয়েতেও আসে নি।কিন্তু সেই দিন বড় আব্বুর এক্সিডেন্টের কথা শুনে আব্বু কিছু না ভেবে আম্মুকে নিয়ে ফ্লাইট দিয়ে এইখানে এসে পরে।বড় আব্বুর ওই অবস্থা দেখে আব্বু বড় আব্বুর কাছে সব কিছুর জন্য ক্ষমা চায়।বড় আব্বুও ক্ষমা করে দেয় এখন সব ঠিক।”

“ভাবির আব্বু এক্সিডেন্ট হয়ে ভালোই হয়েছে।এখন তাদের দুই ভাইয়ের সব কিছু ঠিক হয়ে গেছে।”

“হ্যা সেটা ঠিক।”

এইদিকে নেহাল ফারিয়ার সাথে কথা বলছে অন্য দিকে হিয়া রাসেলের হাসপাতাল গেল।একজন নার্সকে বলল

“আচ্ছা এখন ড. রাসেলকে কোথায় পাওয়া যাবে?”

“রাসেল স্যার তো এখন তার ক্যাবিনেই আছে।”

“ওনার ক্যাবিনে কোথায়?”

“দ্বিতীয় ফ্লোরের তিন নাম্বার ক্যাবিন।”

হিয়া গিয়ে দেখে রাসেল ক্যাবিনেই আছে।রাসেলের ভাবনা ছিল হিয়া হাসপাতালে আসবে আর সেটাই হল।হিয়াকে দেখে বলল

“আরে আপনি!বাইরে কেনো ভিতরে আসুন।”

হিয়া ভিতরে গিয়ে বসতে বসতে বলল

“আপনার কি মাথায় সমস্যা আছে?আপনাকে আমি কি বলেছিলাম আর আপনি কি করলেন?”

“আমার কাছে যা ভালো মনে হয়েছে তাই করেছি।আর তার থেকেও বড় কথা আপনি যাকে পছন্দ করেন সে কি আপনাকে পছন্দ করে?সেটা কিন্তু না।

“হ্যা আপনি তো সব জানেন তাই না।”

“নেহাল নিজেই আমাকে বলেছে আপনার প্রতি ওর তেমন অনুভূতি নেই।”

“নেহাল তো একটা শয়তান।আর ও কি বলেছে না বলেছে সেটা আপনি বিশ্বাস করে নিলেন?”

“এইখানে বিশ্বাস অবিশ্বাস এর কথা না।নেহালের যদি আপনার প্রতি কোনো অনুভূতি থাকতো তাহলে অবশ্যই বিয়েটা আটকানো চেষ্টা করতো।আর একটা কথা আপনি কিন্তু নেহালকে পছন্দ করেন শুধু।আমি আপনাকে ভালোবাসি।এখন বাকিটা আপনার বিষয়।”

“ধুর আমি আপনার সাথে কথা বলতেই বা কেনো এসেছি মেন্টাল একটা।”

হিয়া রাগে হনহন করে হাসপাতাল থেকে বেড়িয়ে গেল।এইদিকে নেহাল ওই বাসায় আড্ডা দিয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে বিকালে বাসায় আসলো।রুমে এসে দেখলো হিয়া নেহালের রুমে বসে আছে।হিয়াকে দেখে বললাম

“কিরে তুই আমার রুমে কি করিস?”

হিয়া শান্তভাবে বলল
“আমার পাশে এসে বস।তোর সাথে কথা আছে।”

ভাবলাম হয়তো কোনো দরকারি কথা বলবে তাই এসেছে।আমি ওর পাশে বসতেই আমার একাহাত শক্ত করে ধরে মারতে শুরু করলো।জেতেও পারছি না।হাত ধরে রেখেছে।মারতে মারতে বলছে

“তোকে কে বলতে বলেছিল যে তুই আমাকে পছন্দ করিস না।ফাজিল ছেলে তোর জন্য আমার এই অবস্থা।সব কিছু জন্য তুই দায়ী।”

“ভালো করেছি।বেশি করলে মামাকে বলে বিয়ের তারিখ এগিয়ে নিয়ে আসবো।”

কথাটা মনে হয় কাজে দিয়েছে হিয়া মারা বন্ধ দিয়ে কি জানি ভাবছে।হিয়া বলল

“শুন না নেহাল।তুই না আমার ভালো বন্ধু।আমার বিয়েটা কিছু একটা করে আটকা প্লিজ।”

“আচ্ছা তোর এই বিয়েটা করতে সমস্যাটা কোথায়?তুই তো আমাকে পছন্দ করিস শুধু ভালো তো আর বাসিস না।রাসেল ভাই তোকে ভালোবাসে তাই বিয়ে করতে চাচ্ছে।আর রাসেল ভাই কিন্তু দেখতে খারাপ না।তাকে দেখে যেকোনো সুন্দরি মেয়ে বিয়ে করতে চাইবে।তার মধ্যে আবার সে একজন ডাক্তার।”

হিয়া অদ্ভুত ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।ওকে দেখে মনে হচ্ছে আমি কোনো অবাস্তব কথা বলে ফেলেছি যা বাস্তব জীবনে হওয়া সম্ভব না।হিয়া কিছু আর বলল না চলে গেল।
কয়েকমাস পরের কথা।
অনার্স ফাইনাল ইয়ারের রেজাল্ট বের হয়ে গেছে।এখন কোনো টেনশন নেই।শুধু একটা ভালো জব পেলেই হবে।অনেকগুলো ইন্টার্ভিউ দিলাম তাও খুব ভালো ভাবেই।আশা করছি কোনো একটাতে জব হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।

দুপুরে রুমে শুয়ে দেখছিলাম আর কোনো ভালো জবের নিউজ আছে কি না।তাহলে সেই গুলোতেও ইন্টার্ভিউ দিয়ে আসবো।তখন রহিমা খালা রুমে এসে বলল আমার জন্য নাকি একটা চিঠি এসেছে।
গিয়ে দেখলাম মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানি থেকে আমার জন্য জব অফার এসেছে।এইটাতেও অ্যাপ্লাই করেছিলাম কিন্তু ভাবি নি এত বড় কোম্পানিতে জব পাবো।বেতন টাও বেশ ভালো দিচ্ছে।খেয়াল করে দেখলাম পরশু দিন থেকে জয়েনিং।
আম্মু আব্বুর রুমে গিয়ে আব্বুকে চিঠিটা দেখালাম।আব্বু বেশ খুশি।আম্মু বলল

“নেহাল এইটা কিসের চিঠি?”

আব্বু বলল
“তোমার ছেলে জব পেয়েছে।তাও আবার মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানিতে।”

কথাটা শুনে আম্মুর চেহারা কেমন পালটে গেল।আম্মু অবস্থা দেখে আব্বু বলল

“তুমি খুশি হও নি?”

“আমাদের কোম্পানি থাকতে নেহাল কেনো অন্য জায়গা জব করবে।”

“তুমিই তো সেদিন বলেছিলে নেহালকে।ওর যোগ্যতার বিষয়ে।দেখো আজ নেহাল ওর যোগ্যতা দিয়ে জব পেয়েছে।”

“আমি কি মন থেকে ওই সব কথা বলেছিলাম।”

“আচ্ছা আম্মু বাদ দেও তো আগের কথা।আর আমি আব্বুর ব্যবসার কিছুই বুঝি না।তাই জব করছি বুঝেছো।”

আম্মু আর কিছু বলল না।ভাইয়া ভাবিকেও জবের বিষয়টা বললাম।দেখলাম ভাইয়ার থেকে ভাবি বেশি খুশি হয়েছে।ভাবি বেশি খুশি হওয়ার কারনটা বুঝলাম না।মামা মামিকেও বলেছি জবের কথা।

আজ এক সপ্তাহের বেশি হবে আমি জয়েন করেছি।অফিসের কাজ শেষ করে বের হবো তখনি ফোনটা বেজে উঠলো।ফোন বের করে দেখি ফারু কল দিয়েছে।তাই কিছু না ভেবেই রিসিভ করলাম।

“হ্যালো নেহাল একটা সমস্যা হয়ে গেছে।তুমি একটু আর্জেন্ট আমার সাথে দেখা করতে পারবে?”

“আমি তো এখন অফিস থেকে বের হবো।তুমি তাহলে এখন বের হও।”

“আচ্ছা পার্কের পাশে যে রেস্টুরেন্ট আছে ওইটাতে আসো।রাখছি এখন।”

ফারু আর আমি সামনাসামনি বসে আছি।ওকে দেখে কিছু বুঝা যাচ্ছে না বিষয়টা কি বেশি সিরিয়াস নাকি অল্প।কিছু বলছেও না।তাই বললাম

“ফারু তুমি না বললে কি একটা সমস্যা হয়েছে।তা সেটা কি?”

“নেহাল আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।”

“কি বলছো!কার সাথে?আর কবেই না ঠিক হল।ভাবি তো আমাকে কিছু বলল না।”

“বিয়ে তো আজ ঠিক হয়েছে দুপুরের দিকে।কিন্তু আমি এই বিয়েটা করতে চাচ্ছি না।”

“কার সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে?”

“তোমার ফ্রেন্ড রানার সাথে।”

#চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here