#তিমিরে_ফোটা_গোলাপ
পর্ব–৬৫
Writer তানিয়া শেখ
কবি হোরেস বলেছিলেন, “যে লোভী সে সর্বদা অভাবী থাকে।” নোভার মনে হচ্ছে রিচার্ড ঠিক তেমনই একজন লোভী ব্যক্তি। ক্ষমতার লোভ যাকে নীচ করে ছেড়েছে। এই অভাব পূরণে আশপাশের সবটা গ্রাস করতে শুরু করেছেন তিনি। ক্ষমতার লোভে একদিন পিশাচ হতে বাধেনি। শুধু নিজে নয় আপন পরিবারকেও সেই পথে টেনেছেন। স্বার্থের কাছে সম্পর্ক যেন তুচ্ছ তাঁর কাছে।
“আপনার মধ্যে সন্তানবাৎসল্যের ন্যূনতম ছিটেফোঁটাও কি অবশিষ্ট নেই, বাবা? কী করে পারলেন এমনটা করতে?”
“কী করে পারলাম?” রিচার্ড মেয়ের দিকে রেগে তাকান। তারপর বলেন,
“নিকোলাস যেভাবে আমাকে সিংহাসনচ্যুত করতে পেরেছে সেভাবে পেরেছি। আন্দ্রেই যেভাবে আমাকে অমান্য করে বার-বার অসম্মান করেছে সেভাবে করেছি, এবং বেশ করেছি করে।”
“ওহ! তবে এসব আপনার প্রতিশোধ?”
“প্রতিশোধ!” রিচার্ডের ক্রূর হাসি নোভার দৃষ্টি এড়াল না। ভুরু কুঁচকাতে রিচার্ড গম্ভীর মুখে প্রসঙ্গ এড়িয়ে গেলেন,
“আমার অনেক কাজ রয়েছে। যাও এখন। তোমার মতো অপদার্থের সাথে কথা বলে আমার মূল্যবান সময়টুকু নষ্ট করতে চাই না।”
“অপদার্থ! হ্যাঁ তাই তো আমি। তবুও তো ভালো এই অপদার্থ আপনজনের পিঠে ছুরিকাঘাত করার কথা ভাবে না। আপনার কাছে ভালো ব্যবহার কখনো আশা করি না। জানি সবার দ্বারা সব হয় না।”
“নোভা! তুমি ভুলে যাচ্ছ আমি তোমার পিতা।”
“আর আপনি মনে রেখেছেন? লজ্জা করে না? বিবেকে বাধে না সন্তানের ক্ষতির চিন্তা করেন পিতা হয়ে? ক্ষমতার লোভে নিকোলাসকে পশু করে ছেড়েছেন। আন্দ্রেই ভুল করেছে। পিতা হিসেবে ভুল শুধরে দেওয়া উচিত আপনার। তা না করে কী করলেন? নিকোলাসকে রিগা পাঠিয়েছেন আন্দ্রেইকে ওর চোখে খারাপ করতে। ভাইয়ে ভাইয়ে শত্রুতার সূত্রপাত করে নিজের স্বার্থ উদ্ধার করতে চান? আমি থাকতে তা কোনোদিন হবে না।”
“কী করবে? এতক্ষণে হয়তো সব জেনেও গেছে নিকোলাস। আন্দ্রেইর কঠিন শাস্তি দেখা এখন সময়ের অপেক্ষামাত্র। জানো তো, প্রতারকদের কতটা ঘৃণা করে নিকোলাস।” ঠাট্টার সুরে হাসলেন রিচার্ড। নোভা পিতার দিকে ঘৃণিত চোখে চেয়ে বলল,
“নিজেকে আপনার মেয়ে ভাবতে লজ্জা হয় আমার।”
“তাহলে ভেবো না। এখন যাও আমার সামনে থেকে, যাও বলছি।”
চেঁচিয়ে ওঠেন রিচার্ড। নোভা রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে পিতার রুম থেকে অদৃশ্য হয়ে গেল। রিচার্ড নিজের স্টাডি টেবিলের সামনের চেয়ারটাতে গিয়ে বসলেন। ড্রয়ার খুলে নতুন একটা চিঠি বের করলেন। খামের ওপরে শুকনো গোলাপের চিত্র আঁকা। খামটার মুখ খুলে বের করে আনলেন চিঠি। পড়া শেষ করে মুচকি হাসেন। নোভালির কণ্ঠ নকল করে বলেন,
“আমি থাকতে তা কোনোদিন হবে না।” নিজ কণ্ঠে বলেন,
“বেচারী বোকা মেয়ে আমার, তুমি থাকলে তো? আমাকে বাবা বলতে আর তোমার লজ্জা হবে না। কারণ নরকে তুমি একাই যাবে।” উঠে দাঁড়িয়ে অদৃশ্য হয়ে যান। একটুপর তাঁকে দেখা যায় নিকোলাসের কক্ষের ভেতর, ওর বড়ো পোট্রের্টের সামনে। ছবির নিকোলাসের পরনে রাজকীয় পোশাক, কোমরে তলোয়ার। চোখ-মুখে রাজা সুলভ দম্ভ। এই সাজ একদিন রিচার্ডের ছিল। রিচার্ডের ঘাড় উঁচু হয় ওর মুখের দিকে তাকাতে। নিকোলাসের ঠোঁটের কোণে রহস্যময় ক্ষীণ হাসি। এই হাসি ওর ক্রূরতার চিহ্ন। এই হাসিতে ও বুঝায় ওকে হারানো নিছক বোকার কল্পনা। নিকোলাসের এই অহং ভেঙে দিতে চায় রিচার্ড। ওর ছবির দিকে তাকিয়ে অস্বাভাবিক হয়ে ওঠে তাঁর মুখ। দাঁতে দাঁত পিষে বলেন,
“নিকো, মাই ডিয়ার সান। হ্যাঁ, তুমি আমারই ছেলে। বহু আগেই তা প্রমাণ করেছ। মনে আছে না সেদিনের কথা? আহা! তোমার কোমল, পবিত্র হাতে ম্যাক্সের সন্তান এবং সন্তানের মায়ের রক্ত লেগে যায়। আমি কিন্তু আশা করেছিলাম ম্যাক্সকেও তুমি মারবে। মারলে না। আমি তোমার পিতা কিন্তু ভালোবাসলে, পিতৃত্বের স্বীকৃতি দিলে কি না ওই নেকড়েটাকে? তোমার মা আর তুমি অন্যায় করেছিলে আমার সাথে। তোমরা আমার। ম্যাক্সকে কী করে তোমাদের অধিকার করতে দিই, হুম? ওকে আমি ঘৃণা করি। আর তোমরা কি না আমাকে ত্যাগ করে ওকে গ্রহণ করলে? তোমার মা তোমাকে ভীতু বানিয়ে রেখেছিল। আমার কারণে নিজের আসল স্বত্ত্বাকে খুঁজে পেয়েছিলে। কত কী দিয়েছিলাম তোমাকে, ধন-দৌলত, আরাম-আয়েশ আর নারী। অথচ, তুমি আমার সাথে বেঈমানী করলে। আমার এত ত্যাগ, স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করতে তোমার হাত কাঁপল না। একশ বছর কারাগারে বন্দি রেখেছিলে। একশ বছর! আমি তোমাকে ছাড়ব না নিকোলাস। আমার সবকিছু আমি ফিরিয়ে নেবো। ফিরিয়ে দেবো ওই একশ বছরের যন্ত্রণাময় দিন। অপেক্ষা করো মাই ডিয়ার সান, অপেক্ষা করো।”
নোভা দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে পিতার সব কথা শুনলো। ওর মন বলছে রিচার্ড আবারও খারাপ কিছু ঘটাতে চলেছে। যেমনটি সে ঘটিয়েছিল বহু’শ বছর পূর্বে। নিকোলাস প্রথম থেকে এমন নির্দয়, নিষ্ঠুর ছিল না। পিতার লোভে ওর এমন পরিণতি। স্বার্থের কাছে সন্তানও তুচ্ছ রিচার্ডের কাছে। মহাক্ষমতারধর হতে চেয়েছিলেন। আত্মা সঁপে দিয়েছিলেন শয়তানকে। শয়তান এবার পবিত্র আত্মা চাইল। রিচার্ডের কুনজর গেল নিকোলাসের ওপর। কিশোর নিকোলাসকে ম্যানুপুলেট করতে খুব বেশি কষ্ট হয়নি তাঁর। আগাথা এবং ম্যাক্স ছিল নিকোলাসের দুর্বলতা। সেই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে সুচতুরভাবে নিকোলাসকে বশ করেন তিনি। ওর পবিত্র হাতে রক্তের দাগ লাগে রিচার্ডের ষড়যন্ত্রে। ওকে সম্পূর্ণভাবে চাচ্ছিলেন। সেদিন পেয়ে গেলেন। পাপের অনুশোচনায় দগ্ধ ওর আত্মাকে সুকৌশলে শয়তানকে উৎসর্গ করলেন। নিকোলাস যে একেবারে কিছু বোঝেনি তা নয়। মানুষের জীবনে এমন একটা সময় আসে যখন সে ভালো-মন্দের পার্থক্য বুঝতে পেরেও মন্দকে বেছে নেয়। শয়তানের প্রভাবটা তখন খুব বেশি থাকে।আর থাকে তার অতীত কর্মের পাপের ভার। এই ভারটাই দুর্বল করে দেয়। ধৈর্য হারায়। ডুবে যায় অন্ধকারে। নিকোলাস সেদিন দুর্বল, অসহায় ও অবুঝ ছিল। ওপরে উঠতে ওকে দিয়ে সকল নীচকর্মই করিয়েছেন রিচার্ড। সন্তান নয় প্রভুভক্ত কুকুর বানিয়ে ফেলেছিলেন। রিচার্ডের সকল আদেশ বিনাবাক্যে মানতো নিকোলাস। রিচার্ডের লোভের সাথে বাড়ল ওর নিষ্ঠুরতা, পৈশাচিকতা। এদিকে দাসবৃত্তি অসহ্য হয়ে উঠল নিকোলাসের কাছে। পিতাকে এত দিয়েও মন ভরাতে পারেনি। প্রাপ্ত সম্মান তো দূরের কথা সন্তান হিসেবে মূল্য পর্যন্ত দেয়নি রিচার্ড। রিচার্ডের ওপর কমিউনিটির অনেকে নাখোশ ছিল। তারাও নিকোলাসকে গোপনে গোপনে পিতার বিরুদ্ধে করে তুললো। নিকোলাস তখন দুর্বল নয় বরং শক্তি, বুদ্ধিতে অনন্য। কমিউনিটির রাজা হওয়ার জন্য রিচার্ডের চেয়ে যোগ্যতা ওর বেশিই ছিল। তবে কেন ও দুর্বল রাজার দাসবৃত্তি করবে? অহংকারে লাগল এবার। শক্তির জোরে খুব সহজে পিতাকে হটিয়ে সিংহাসন দখল করে নিলো৷ রিচার্ড নিক্ষিপ্ত হয় কারাগারে। তাঁর কিছু করার ছিল না তখন। নিকোলাস সবদিক থেকে কোনঠাসা করে রাখে। এত বছরে রিচার্ডের দুর্বলতা ওর জানা হয়ে গিয়েছিল। তাছাড়া নিকোলাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার মতো লোকবল এবং শক্তি কোনোটাই তখন তাঁর ছিল না। নিকোলাসের পরে কমিউনিটিতে যদি কেউ শক্তি, বুদ্ধিতে শ্রেষ্ঠ হয় তবে সে আন্দ্রেই। ছোটো ছেলেকে বশে আনার সব রকমের পন্থা অবলম্বন করেও ব্যর্থ হন। তাঁর আঙুলের ইশারায় চলা সোফিয়াও ছেলেকে নিকোলাসের বিপক্ষে করতে অসমর্থ হয়েছিলেন। সেদিনই রিচার্ড পণ করেছিলেন ভাই ভাইয়ের এই জোড় তিনি ভাঙবেন। বিশ্বাসঘাতকতার কঠিন শাস্তি দেবেন নিকোলাসকে। তাঁকে অমান্য করার উচিত শিক্ষা পাবে আন্দ্রেই। নিকোলাসের কাছে বহুভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করে অবশেষে মুক্তি মেলে। সেই থেকে একটু একটু করে নিকোলাসের বিরুদ্ধে জয়ী হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ইসাবেলা নিকোলাসের সম্পর্কের ব্যাপারে বেশ খবর রাখেন রিচার্ড। একবার যে ভুল করেছিলেন এবার আর করবেন না। প্রতিপক্ষের প্রতি পদক্ষেপের খবর তিনি নখদর্পনে রাখেন এখন। শক্তিতে না পারেন অন্য যেকোনো ভাবেই হোক সিংহাসন তাঁর ফেরত চায়। নিকোলাসকে রিগা পাঠানো তাঁর পরিকল্পনার অংশ। এক ঢিলে দুই পাখি মারবেন তিনি এবার।
ড্যামিয়ান রিগাতে নেই। এবারো ভুল খবর দেওয়া হয়েছে নিকোলাসকে। এত সহজে রিচার্ডের কথা মেনে এখানে আসা উচিত হয়নি। উচিত হয়নি? এখানে না এলে ইসাবেলাকে পেত কী করে? রিচার্ডের ওপর রাগটা পড়ে যায়। ইসাবেলার মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠতে শুধু ড্যামিয়ান কেন পৃথিবীর সব যেন ভুলে যায়।
” আমি তোমাকে ভালোবাসি নিকোলাস। খুব ভালোবাসি।”
ইসাবেলার সেদিনের সেই ভালোবাসা প্রকাশ আজও নিকোলাসকে রোমাঞ্চিত করে। দীর্ঘ হাসি দেখা দেয় ঠোঁটে। নিকোলাস এখনও নিজের মনের কথা ওকে বলেনি। না, আজ আর দ্বিধাদ্বন্দ্ব নেই মনে। ইসাবেলাকে ভালোবাসে সেকথা বলতেও সংকোচ নেই৷ উপযুক্ত সুযোগটা পায়নি ভালোবাসি বলার। মাত্র কয়েক মিনিটের জন্য সেদিন রাতে দেখা হয়েছিল ওর সাথে। একে অপরকে বাহুবন্ধনে জড়িয়ে দীর্ঘ বিরহের যাতনা ভুলতে ব্যস্ত ছিল যখন তখনই ইসাবেলার কাজিনের গলা শুনে আলাদা হয়ে যায়। না চাইতেও ইসাবেলাকে নিকোলাসের কাছ থেকে বিদায় নিতে হয়েছিল সেই রাতে। মুখটা বিষণ্ণ হয়ে ওঠে ইসাবেলার। চোখ ছলছল করছিল। ভীষণ খারাপ লাগছিল নিকোলাসের। ইসাবেলাকে নিজের থেকে আলাদা করতে চাইছিল না একমুহূর্তের জন্য। কিন্তু উপায়ও তো ছিল না। ওদের সম্পর্কের স্বীকৃতি কেউ দেবে না। কারো স্বীকৃতির ধার ধারে না অবশ্য নিকোলাস। ভয়টা ইসাবেলাকে নিয়ে। জানাজানি হলে ইসাবেলার বিপদ হতে পারে। আগে নিকোলাস নিজেকে নিয়ে ভাবত। আজকাল ওর সকল ভাবনার কেন্দ্রবিন্দু ইসাবেলা। সেদিন বিদায়কালে কথা দিয়েছিল শীঘ্রই দেখা করবে ওর সাথে। মাঝখানে কিছুদিন কেটে গেল ড্যামিয়ানকে খুঁজতে। ওকে না পেলেও কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে। নিকোলাস চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। এই মুহূর্তে ইসাবেলার সান্নিধ্য ওর প্রয়োজন। ওকে ছাড়া এক মুহূর্ত দীর্ঘ, অর্থহীন মনে হয়। কী করে যে কেটেছে এই ক’টা দিন তা শুধু ওই ই জানে।
হাওয়ায় অদৃশ্য হয়ে ইসাবেলার রুমে প্রবেশ করলো। বিছানায় গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ইসাবেলা। নিকোলাস নিঃশব্দে ওর শিওরে গিয়ে বসল। মুখ নামিয়ে আনল ওর গলার কাছে। জোরে শ্বাস টানে। কী মিষ্টি সুবাস! লাল গোলাপের ঘ্রাণের মতোই যেন। এই সুবাস ধরে এই রুম পর্যন্ত আসতে ওর খুব বেশি বেগ পেতে হয়নি। ইসাবেলার ঘুমন্ত মুখের দিকে তন্ময় হয়ে তাকিয়ে ছিল। হঠাৎ ওর ঠোঁটে দৃষ্টি স্থির হয়। মনে পড়ে সেদিন একটা চুমো আবদার করেছিল। ওর কাজিনরা ওভাবে হা করে তাকিয়ে না থাকলে নিকোলাস কি না করত? কখনো না। নিকোলাস ধীরে ধীরে মুখটা নামিয়ে আনে ইসাবেলার ঠোঁটের দিকে। ঠোঁট ছোঁয়াতেই যাবে ওমনি চোখ মেলে তাকায় ইসাবেলা। ঠোঁট দুটো ঠেলে মুখের ভেতর নিয়ে মাথা দুদিকে নাড়ে। নিকোলাস ভুরু কুঁচকে বলে,
“চুমু দেবো না?”
ইসাবেলা আবার মাথা নাড়ায়। যার অর্থ না।
“কেন?” নিকোলাস জানতে চায়। ইসাবেলা এবার ঠোঁটের ওপর হাত রেখে বলে,
“আমি ব্রাশ করে ঘুমায়নি।”
“তো?”
“বাসি মুখে চুমো খাবে ঘিন্না করবে না তোমার?”
“না, এবার হাত সরাও।”
ইসাবেলা হাত সরায় না।
“বেলা!”
“না, সবসময়ই তোমার কথাতে হবে না কি? সেদিন আমি চেয়েছিলাম তুমি দাওনি। আজ আমিও দেবো না। শোধবোধ। শীঘ্রই আসব বলে পুরো তিনদিন পরে এসে আবার ঘুমিয়ে থাকার সুযোগে চুমো খেতে চাওয়া? এত সহজ?” শেষ দুটো বাক্য বিড়বিড় করে বললেও নিকোলাস বুঝতে পারে। ওর অভিমানী গাল ফুলানো মুখটার দিকে মুচকি হেসে হাতদুটো মাথা কাছে চেপে ধরে।
ইসাবেলা ভড়কে যায়। আমতা আমতা করে বলে,
” কী করছো? ছাড়ো বলছি।”
“না। আগে যা চাই তা দাও।”
“এটা কিন্তু রীতিমতো স্বেচ্ছাচারিতা।”
“তাই বুঝি?” নিকোলাস ওর দিকে আবার ঝুঁকে আসতে ইসাবেলা চোখ বন্ধ করে ফেলে। ও সত্যি এই মুহূর্তের জন্য প্রস্তুত নয় এখন। অনেকক্ষণ পরেও যখন ঠোঁটে কিছু টের পেল না চোখ মেলে তাকাল। নিকোলাস সোজা হয়ে বসে আছে শিওরে। ঠোঁটে মুচকি হাসি। তাড়াতাড়ি উঠে বসল ইসাবেলা। নাইটির রোবটা সরে গিয়ে বুকের অনেকখানি দেখা যাচ্ছিল। নিকোলাস গলা ঝেড়ে অন্যদিকে মুখ করে বসল। লজ্জায় জড়োসড়ো হয়ে দ্রুত রোবটা ঠিক করে নিলো ইসাবেলা। দুজনই চুপচাপ বসে রইল কিছুক্ষণ। দেওয়াল ঘড়িতে টিকটিক বেজে চলছে সেকেন্ডের কাঁটা। মধ্যরাত। নীরবতা ভেঙে একসময় ইসাবেলা বলে উঠল,
“তুমি রাগ করলে?”
“আমাকে দেখে মনে হচ্ছে আমি রাগ করেছি?” ইসাবেলার দিকে ঘুরে বসল নিকোলাস। ওর হাতটা মুঠোর মধ্যে নিয়ে বলল,
“আমি ভীষণ অসভ্য, ইতর। যা চাই তা নিজের করে ছাড়ি। আমি তোমার জন্য সভ্য ও মনুষ্যত্ববান হতে চাইছি বেলা।”
ইসাবেলা স্মিত হাসল। নিকোলাসের গালের একপাশে হাত রেখে বলল,
“আমি তোমাকে তোমার মতোই ভালোবাসি নিকোলাস। সে তুমি যেমনই হও না কেন।”
“এভাবে বলতে থাকলে আবার কিন্তু চুমো খেতে চাইব, বেলা। শিট! কন্ট্রোল নিকোলাস, কন্ট্রোল।”
ইসাবেলা খিলখিল করে হেসে ওর গলা জড়িয়ে ধরে। তারপর গালে চুমো দিয়ে বলে,
“ওয়েট, আমি ব্রাশ করে আসছি।”
দু মিনিট পরে ব্রাশ করে ফিরে এলো ইসাবেলা। নিকোলাস বিছানায় আধশোয়া হয়ে ছিল।ইসাবেলাকে দেখতে হাত বাড়িয়ে ডাকল,
“কাছে এসো, বেলা।”
ইসাবেলা কাছে যেতে ঠোঁটে গাঢ় চুম্বন দিলো। তারপর কপালে কপালে রেখে বলল,
“আর দূরে যাবে না।”
“তুমি গেলে?”
“আমার সকল পথের গন্তব্য তোমার কাছে এসেই শেষ হবে, বেলা, তোমার কাছেই। তুমি আমার ঘর। আমার ভালোবাসা। বড্ড ভালোবাসি তোমায় আমি।”
চলবে,,