#তোমার_আমার_প্রণয়
#israt_jahan_arina
#part_21
সূর্যের তীব্রতা কমে যখন পৃথিবীর বুকে অন্ধকার নেমে আসে তখন ঢাকা শহরের চিত্র অনেকটা বদলে যায়। চাঞ্চল্যকর ঢাকা শহর যেন আরো বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়ে। রাজশাহীতে কিন্তু ঠিক এমনটা হয় না। সন্ধ্যার পরে সেখানে কর্ম ব্যস্ততা কমে যায় আর নীরবতা ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। দৃশ্যর ছোট মামা রাজশাহী থেকে ঢাকায় শিফট করেছেন পাঁচ বছর আগে। মূলত চাকরির সুবাদে এখানে আসা। দৃশ্য এ পাঁচ বছরে দুবার এসেছিল মামার বাসায়। ঢাকা শহরের পরিবেশ দৃশ্যর মোটেও পছন্দ হয় না। সবকিছু কেমন যান্ত্রিকভাবে চলে।অথচ রাজশাহীতে এলাকার মানুষজন কতটা আন্তরিকতার সাথে মিলেমিশে থাকে।
তবে এবার ঢাকায় আসার জন্য সে ভীষণ এক্সাইটেড ছিল। কারণ সে জানতো লাবিবা আপু ঢাকা ইউনিভার্সিটি’তে পড়ছে। তার মানে কোন ভাবে মাহাদের সাথে দেখা করার একটা সুযোগ আছে।
দৃশ্য,লাবিবা আপু এবং মাহাদ রেস্টুরেন্টে বসেছে। লাবিবা এখনো অনেকটা শকের মধ্যে আছে।
সে যেই প্রধান আকর্ষণ দেখিয়ে দৃশ্যকে আকর্ষিত করতে চেয়েছিল তা কিনা আগে থেকেই দৃশ্যর মাঝে ডুবে আছে।লাবিবার দিকে তাকিয়ে মাহাদ বললো
-“আপু কি খাবেন বলুন?”
লাবিবা বেচারি আরো একবার শক খেলো। মাহাদ আর সে সেম ব্যাচ কিন্তু ডিপার্টমেন্ট আলাদা।তাহলে এই ছেলে কোন আক্কেলে তাকে আপু বলছে? তাই সে ব্যাস্ত ভঙ্গিতে বললো
-“না কিছু খাবো না।আর আমরা কিন্তু সেম ব্যাচ।”
মাহাদ মুচকি হেসে বললো
-“সেটা ঠিক।কিন্তু সম্পর্কের দিক থেকে আপনি দৃশ্যর আপু।তাই আমারও আপু।”
এই কথা শুনে লাবিবা ভীষণ অবাক হলো।সে ভাবছে মাহাদ কি তাহলে তার আর দৃশ্যর বিষয়টা নিয়ে সিরিয়াস? তার মন চাইছে লজ্জায় রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে যেতে।যেই ছেলেকে দেখে ভার্সিটির প্রথম দিন ক্রাশ খেলো সে কিনা তাকে আপু ডাকছে।তুমি করে কি বলা যেতো না?
হঠাৎ তার ফোনে কল আসলো আরিফের। আরিফের সাথে তার সম্পর্ক তিন বছর ধরে। তাই সে বাইরে বেরিয়ে গেলো কথা বলতে।
মাহাদ একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে দৃশ্যের দিকে। দুজনেরই চোখাচোখি হতেই মাহাদ মুচকি হাসে। আচ্ছা এই ছেলেটা কি জানেনা তার এই হাসিতে হাজারো মেয়ের হার্ট এবনরমাল হয়ে যেতে পারে। কেমন প্রাণনাশী হাসি।গাল জুড়ে খোঁচা খোঁচা দাড়ির জন্য সাদাটে মুখখানা যেন আরো উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। হঠাৎ করেই দৃশ্যর মনে হচ্ছে তার দেখা সুদর্শন যুবকটি ভীষণ আকর্ষণীয় যুবক হয়ে উঠছে। মাহাদের পৃথিবীটা অনেক বড় মনে হচ্ছে দৃশ্যের কাছে।যে পৃথিবীতে দৃশ্য নামক মেয়েটি ভীষণ বেমানান।
দৃশ্য কে এভাবে ভাবনায় হারিয়ে যেতে দেখে মাহাদ গলা ঝেড়ে বললো
-“আমি কোনো স্বপ্ন দেখছি নাতো? মানে তুমি সত্যি আমার সামনে আমি বিশ্বাস করতে পারছি না।”
দৃশ্যর মনে এক অজানা অভিমান জমা হয়ে আছে। সে গম্ভীরভাবে বললো
-“বিশ্বাস না হলে আর কি করার আমি চলে যাই।”
মাহাদ বুঝতে পারলো তার পিচ্চি পাখিটার কোন কারণে মন খারাপ। তাই বললো
-“হ্যাঁ চলে যাও আর আমি এখানে হার্ট অ্যাটাক করে মরে যাই।”
-“তুমি হার্ট অ্যাটাক করে কেনো মরবে, তোমার হার্টবিট আবারো সঞ্চালন করার জন্য হাজারো রমণী রয়েছে।”
-“ইসস!! কেমন পোড়া পোড়া গন্ধ আসতেছে।”
-“হে তোমার শুভাকাঙ্ক্ষীদের থেকে আসছে।”
-“এটা অবশ্য ভালো বলেছ। সুন্দরী সুন্দরী মেয়ে গুলা চোখের সামনে দিয়ে চলাফেরা করে মাথা খারাপ করে দিচ্ছে।”
দৃশ্যর ভেতরটা কেমন ধুক ধুক করছে। এই ছেলেটা কি তাকে প্রণয় দহনে মেরে ফেলতে চাইছে?দৃশ্যর মন চাইছে সামনে থাকা পুরুষটিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলতে তুমি আমার ব্যক্তিগত সম্পত্তি। যেখানে আমি অন্য কারো দখলদারি তো দূরে থাক নজরদারিও সহ্য করব না। কিন্তু মাহাদের কথা শুনে তার ভীষণ রাগ হচ্ছে।তাই সে গম্ভীরভাবে বললো
-“তাহলে থাকো মাথা খারাপ সুন্দরীদের কাছে আমিতো আর মানা করিনি।”
কথাটা বলেই দৃশ্য চেয়ার থেকে দাঁড়িয়ে গেল। মাহাদ সাথে সাথেই আবার টেনে চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে ওর কোমর চেপে নিজের কাছে মিশিয়ে নিলো।আর ফিসফিসিয়ে বলল
-“এই মাহাদের সামনে হাজারো রমণী থাকলেও তার চোখ শুধুই দৃশ্য পাখির উপরে আটকে থাকবে। মাহাদ যদি অন্য রমণীর চিন্তা করতো তবে এই জনবহুল প্লেসে এই ছোট্ট পাখিকে দেখে উন্মাদ হয়ে বুকে জড়িয়ে নিতো না।”
দৃশ্যর এবার লজ্জা লাগছে ভীষণ লজ্জা। সত্যিই তো তখন এই মানুষটা চারপাশ ভুলে কিভাবে তাকে বুকে জড়িয়ে নিয়েছিলো।আর সকলে কেমন অদ্ভুত নজরে তাকিয়ে ছিল। আজ নিজেকে ভীষণ স্পেশাল মনে হচ্ছে।
________________
দৃশ্য আর মাহাদ বসে আছে একটা অফিসের কেবিনে। দৃশ্য মাঝে মাঝে মাহাদের দিকে করুন চোখে তাকিয়ে আছে। আর মাহাদ মুচকি মুচকি হাসছে। দৃশ্য এবার মাথা নিচু করে ফেললো। লজ্জা আর ভয়ে সে কিছুতেই মাথা তুলে তাকাতে পারছে না। মাহাদ এভাবে তার বাবার সামনে তাকে উপস্থিত করবে সেটা চিন্তা করতে পারেনি।গতকাল বলেছিলো বউ বউ ভাব নিয়ে চলে আসতে।আর আমিও গাধার মত শাড়ী পরে চলে এসেছি।মন চাইছে মাহাদের ঘন সিল্কি চুল টেনে ছিড়ে হতে ধরিয়ে দেই।আমজাদ রহমান হেসে দৃশ্যকে উদ্দেশ্য করে বললেন
-“তোমার নাম কি মা?”
দৃশ্য কাঁপা কাঁপা গলায় জবাব দিলো
-“নুরপা জাহান দৃশ্য।”
-“মাশাআল্লাহ ভীষণ সুন্দর নাম। তুমি তো আমাদের রাজশাহীর মেয়ে তাইনা?”
-“জি।”
-“তো বাবার নাম কি?”
দৃশ্য কিছু বলতে যাবে তখনি মাহাদ বললো
-“বাবা তুমি কি ওর ইন্টারভিউ নিচ্ছ? বৌমা পছন্দ হয়েছে কিনা সেটা বল।”
-“এমন মিষ্টি একটা বউ মা আবার পছন্দ না হয় কি করে?”
-“দেখলে তো তোমার ছেলের চয়েজ।”
দুই বাবা ছেলের কথায় দৃশ্য ভীষণ লজ্জা পাচ্ছে। বারবার শাড়ির আঁচল টেনে ঘোমটা ঠিক করছে। এখানে আসার আগে মাহাদ নিজ হাতে তার মাথায় নতুন বউদের মত ঘোমটা তুলে দিয়েছে।
কাল রেস্টুরেন্ট থেকে বের হওয়ার আগে মাহাদ বলেছিল আজ তারা সারাদিন বাইরে ঘুরবে। লাবিবা কে ও ম্যানেজ করে ফেলেছে মাহাদ। আজ প্রথম কোনো ভয়-ভীতি ছাড়া সে মামাদের সাথে বাইরে ঘুরতে বেরিয়েছে।কিন্তু এই ছেলে আমায় এমন লজ্জায় ফেলবে আগে বুঝিনি।
আমজাদ রহমার মুচকি হেসে বললেন
-“আমার বাঁদর ছেলেটা তোমাকে কিভাবে পটালো বলতো? আমাদের জন্য এত মিষ্টি একটা বউ আনবে আমি তো ভাবতেই পারিনি।”
মাহাদ কলার উঁচু করে ভাব নিয়ে বললো
-“তোমার ছেলের কোয়ালিটি নিয়ে তোমার এখনো ধারণা নেই বাবা।”
-“ফাজিল মুখ বন্ধ কর।বৌমার সাথে কথা বলতে দে।”
বৌমা ডাকটা শুনে দৃশ্য ভীষণ লজ্জা সাথে এক অন্যরকম ভাললাগা কাজ করছে। সামনের মানুষটাকে তার ভীষণ পছন্দ হয়েছে। বাবারা কখনো এতটা ফ্রি হতে পারে তার জানাই ছিল না।তার নিজের বাবার সাথে সে কোনোদিন মন খুলে কথা বলতে পারেনি ভয়ে।
আমজাদ রহমান আবার দৃশ্য কে উদ্দেশ্য করে বললেন
-“কি ভয় পাচ্ছো মা? আমার কিন্তু কোন মেয়ে নেই তাই তোমাকে কিন্তু আমার মেয়ে হতে হবে?”
আমজাদ রহমানের কথা শুনে দৃশ্যর দু চোখ ভিজে উঠলো। সে আসলে এতটাও আসা করেনি। একটু আগে তার মনে যত শঙ্কা ছিল তা মুহূর্তেই দূর হয়ে গেল। এই মানুষটার প্রতি মুহুর্তেই সম্মান কয়েকগুণ বেড়ে গেল।দৃশ্য কাঁপা গলায় বললো
-“অবশ্যই বাবা দোয়া করবেন আমি যেন আপনার যোগ্য মেয়ে হয়ে উঠতে পারি।”
-“অনেক দোয়া রইল তোমাদের জন্য।”
আমজাদ রহমান মাহাদকে উদ্দেশ্য করে বললেন
-“এইযে আব্বাজান আমারতো এখনি বিয়ের প্রস্তাব পাঠাতে ইচ্ছে করতেছে। এত মিষ্টি একটা মেয়েকে আর এক মিনিটের জন্যও দূরে রাখতে ইচ্ছে করছে না।”
-“ধৈর্য ধর বাবা তোমার বৌমা আর একটু বড় হোক। না হলে আমাকে সামলাবে কি করে?”
দৃশ্যের এবার মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে।এই ছেলে কি ভুলে গেছে সে তার বাবার সাথে কথা বলছে। অসভ্য, পাখাবিহীন তেলাপোকা। এই ছেলে ভবিষ্যতে তাকে আরো কত লজ্জায় ফেলবে একমাত্র আল্লাই জানে।
বাবার অফিস থেকে বেরিয়ে মাহাদ বেশ কিছুক্ষণ দৃশ্য কে নিয়ে রিকশায় করে ঘুরলো। এই প্রথম তারা দুজন পাশাপাশি রিকশায় বসেছে। দৃশ্য প্রথমে একটু দূরত্ব নিয়ে বসেছিল।কিন্তু মাহাদ যখন তার কোমর ধরে তার দিকে টেনে নিয়ে আসলো, দৃশ্য মনে হচ্ছিল বুকের বা’পাশ থেকে হার্টটা মনে হয় বেরিয়ে হাতে চলে আসবে। রাস্তার মাঝে মাহাদ রিকশা থামিয়ে দৃশ্যর জন্য একটা ফ্লাওয়ার বুকে কিনলো। সেটা দৃশ্যর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো
-“বুঝলে ফুল টা কিনলাম এটা দেখার জন্য এই ফুলের সুবাস বেশি না আমার পাখিটার। কারন সেই কখন থেকেই তো আমি তীব্র সুভাষ নাকে পাচ্ছি। আমার নাকটা ঠিক আছে কিনা সেটা দেখার জন্য এটা কিনে নিয়ে আসলাম। কিন্তু এই ফুলের কোনো সুভাষ পাচ্ছিনা।”
দৃশ্য লজ্জায় মুখ ঘুরিয়ে নিলো। ছেলেটা দিন দিন লাগামহীন কথাবাত্রা বলছে।এক গোছা চুল দৃশ্যর মুখটা ঢেকে ফেলেছে। মাহাদ নিজ হাতে সেই চুলগুলো দৃশ্যর কানে গুজে দিলো।আর দৃশ্য শীতল দৃষ্টিতে মাহাদকে দেখে যাচ্ছিলো।আকাশ আজ দুপুর থেকেই মেঘলা।রিকশা ধানমন্ডির কাছাকাছি আসতেই ঝড় হাওয়ার বেগে বৃষ্টি শুরু হলো।মাহাদ আর এই ঝড়ের মাঝে রবীন্দ্র সরোবরে যাওয়ার কথা চিন্তা করলো না।মাহাদ দশ মিনিট পর একটা বাড়ির সামনে রিকশা থামালো।দৃশ্য দেখলো এটি বহুতল ভবন।একবার সে এটা কয়তলা বাড়ি তা গুনতে চাইলো।কিন্তু বৃষ্টির জন্য সুবিধা করতে পারলো না। মাহাদ দৃশ্যর হাত ধরে বাড়ির ভিতরে ঢুকে পড়লো।এতটুকু সময়েই দুজন বৃষ্টির পানিতে অনেকটা ভিজে গেলো। মাহাদ দৃশ্যকে নিয়ে লিফটে উঠে পড়লো।সেখানে ছয় লেখাতে চাপ দিলো।দৃশ্য লিফটে উঠে বুঝতে পারলো এই ভবনটি দশ তলা।দৃশ্যকে নিয়ে মাহাদ একটা ফ্ল্যাটে ঢুকে পড়লো।
বারান্দায় দাড়িয়ে দৃশ্য বৃষ্টির শব্দ ও শুনছে।বিকেলের এই বৃষ্টিটা আজ সম্পূর্ণ অন্যরকম লাগছে।কারণ এমন শীতল পরিবেশে আজ তার ভালোবাসার মানুষটি পাশে আছে।তবে তার কেমন যেন অস্থির লাগছে। এই প্রথম সে মাহাদের সাথে নির্জনে চার দেয়ালের মাঝে আছে।
এখানে এসেই মাহাদ একটা তোয়ালে দৃশ্যকে এগিয়ে দিয়ে মাথা মুছে নিতে বললো।আর সে নিজে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো ফ্রেশ হতে।
দৃশ্য একবার ঘুরে এসেছে পুরো ফ্ল্যাটে।মাঝারি আকারের একটা ফ্ল্যাট।তিনটি বেডরুম আছে যার একটিতে মাহাদ থাকে ও অন্যটিতে আমজাদ রহমান।আরেকটি রুমে আছে অনেক ধরনের মিউজিক ইন্সট্রুমেন্ট। নিশ্চয় সেখানে মাহাদ গানের প্র্যাকটিস করে। একটা বিশাল লিভিং রুম ও কিচেন আছে। প্রত্যেকটি রুমের সাথেই একটা করে বারান্দা রয়েছে। দৃশ্য আর একবার চোখ বোলালো মাহাদের রুমটিতে। বেশ পরিপাটি ও গোছানো রুম। দৃশ্যত প্রথমে ফ্ল্যাটে ঢুকে এটা বিশ্বাসই করতে পারছিল না এখানে দুজন পুরুষ থাকে। সব কিছু গোছানো ও মার্জিত। অথচ দৃশ্য নিজে ভীষণ অগোছালো। তার রুম সবসময়ই অগোছালো হয়ে পড়ে থাকে যার জন্য মায়ের কাছে ভীষণ বকা শুনতে হয়। কিন্তু মাহাদের সবকিছু কতটা পরিপাটি।
হালকা শব্দ পেয়ে দৃশ্য পেছনে ঘুরে তাকাতেই তার কান শিরশির করে উঠলো। মাহাদ ওয়াশরুম থেকে তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে আসছে।গায়ে একটা ব্ল্যাক টি শার্ট । উজ্জল শরীরটাতে কালো টি শার্ট ভীষণভাবে মানিয়েছে। মাহাদের কালো চুল থেকে বিন্দু বিন্দু ঝরে পরা জল তার গলা ভিজিয়ে দিচ্ছে। হঠাৎই দৃশ্যর মনে হলো সে ভীষণ তৃষ্ণার্ত।
মাহাদ বারান্দায় এসে দৃশ্যকে দেখে কয়েক মুহূর্তও চুপ থেকে দৃশ্যর হাত ধরে রুমে নিয়ে আসলো।আর নিজের হাতে থাকা তোয়ালে দিয়ে দৃশ্যর মাথা মুছতে মুছতে বলতে লাগলো
-“তুমি একদমই নিজের কেয়ার করো না। সেই কখন তোয়ালে দিয়ে গেলাম মাথা মুছনি কেনো? ঠান্ডা লাগে কিন্তু খবর আছে। কেয়ারলেস মেয়ে একটা। এমন করলে তুমি সংসার কিভাবে করবে বলতো। নিজেকে সামলাবে না আমাকে সামলাবে?”
দৃশ্য হঠাৎ পেছন ঘুরে মাহাদকে জড়িয়ে ধরে তার বুকে মাথা রাখলো। টি-শার্টের উপরে ঠিক বুকের মাঝখানটায় পরপর কয়েকটা চুমু খেলো। কয়েক মুহুর্তের জন্য মাহাদ থমকে গেছে। মুহূর্তেই নিজেকে সামলে দৃশ্যের মাথায় কয়েকটা চুমু খেয়ে হাত বুলিয়ে বললো
-“কি পিচ্চি মন খারাপ?”
দৃশ্য কিছুই বললো না বরং হাতের বাঁধনটা আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। দৃশ্য নীরবে মাহাদের বুকের ধক ধক শব্দ শুনতে লাগলো।সেই শব্দের তীব্রতা ধীরে ধীরে বাড়তে লাগলো। মাহাদ কয়েকবার দৃশ্যকে ছাড়ানোর চেষ্টা করল। কিন্তু দৃশ্যর বাঁধন আরো শক্ত হতে লাগলো। সে কিছুতেই মাহাদকে ছাড়তে রাজি না।মাহাদ চোখ বন্ধ করে কয়েকটা দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে বললো
-“পিচ্চি প্লিজ ছাড়ো।”
দৃশ্য মাথা নাড়িয়ে না জানালো। মাহাদ আরো কয়েকবার ছাড়ানোর চেষ্টা করে ঘনঘন নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল
-“অর্ধ ভেজা নীল শাড়িতে তোমাকে কেমন মারাত্মক লাগছে সেটা কি জানো? এই শাড়ির প্রতিটা ভাজে ভাজে আমার অনুভূতি গুলো হারিয়ে যাচ্ছে।আমি বেসামাল হয়ে পড়ছি।”
দৃশ্য এবার মুখ তুলে মাহাদের দিকে তাকালো। ধূসর চোখ জোড়ার দিকে তাকিয়ে নিজেকে কেমন মাতাল মাতাল অনুভব করছে সে। বিশ্বের নামিদামি অ্যালকোহল গুলো এতটা নেশা ধরাতে পারে না যতটা নেশা এ দু’চোখ জুড়ে আছে। মাহাদের চুল গুলো সারিবদ্ধ ভাবে ফর্সা কপালে ঠাই নিয়ে পড়ে আছে। চুলের শেষ প্রান্ত থেকে পানিগুলো টুপ টুপ করে গড়িয়ে পরছে। সেটা আবার তার টিশার্ট কে ভিজিয়ে দিচ্ছে। তার লাল ঠোট জোড়া বৃষ্টির পানিতে আরো লালচে হয়ে আছে। দৃশ্য আর কিছু না ভেবে ঠোঁটে টুপ করে চুমু খেয়ে নিলো।
মুহূর্তেই মাহাদ দৃশ্যর কোমরে দুই হাত ঝাপটে উচু করে ধরলো। দৃশ্য কে এনে খাটে শুইয়ে তার ওপরে শরীরের ভর ছেড়ে দিল। দৃশ্য নেশাক্ত চোখে মাহাদের দিকে তাকিয়ে আছে। মাহাদ তার লালচে ওষ্ঠ জোড়া দৃশ্য ভেজা কপালে ছুয়ে দিল। মাহাদের একটা হাত দৃশ্যর উন্মুক্ত ফর্সা কোমল পেটে ছুঁতেই মুহূর্তে দৃশ্যর পুরো শরীর কেঁপে উঠলো। পিঠের শিরদাঁড়া বেয়ে যেন বিদ্যুৎ চমকে উঠল। দুচোখ আপনা-আপনি বন্ধ হয়ে গেল। মাহাদ ধীরে ধীরে তার ওষ্ঠ জোড়া দৃশ্যর চোখে, চিবুকে, গলায় ছুঁতে লাগলো। দৃশ্যর নিঃশ্বাস ঘন হতে শুরু করল। মাহাদের প্রতিটা ছোঁয়া তাকে পাগল করে তুলছে। জীবনের প্রথম এই অনুভূতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ভীষণ যন্ত্রণাদায়ক সুখময় অনুভূতি।
মাহাদ মাথা তুলে দৃশ্যের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। দু চোখে খিচে বন্ধ করে রেখেছে দৃশ্য। ঘনঘন নিশ্বাস নেওয়ার ফলে অস্বাভাবিক ভাবে বুক ওঠানামা করছে। মাহাদ দৃষ্টি ফিরিয়ে উঠে যেতে নিলে দৃশ্য মাহাদের টি-শার্ট খামচে আরও কাছে টেনে নিল। মাহাদ দৃশ্যর অবস্থা বুঝতে পেরে কানে ফিসফিসিয়ে বললো
-“এভাবে নিঃশ্বাস নিয়ে আমাকে পাগল করে তুলছ কেনো? আমি আর এক মিনিট এভাবে থাকলে কন্ট্রোল লেস হয়ে পড়বো। তখন তুমি চাইলেও আমাকে আটকাতে পারবেনা।”
মাহাদের টি-শার্টে রাখা দৃশ্যের হাত কিছুটা নরম হয়ে আসলো। মাহাদ উঠে বসতেই দৃশ্যও উঠে বসে মাহাদকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। মাহাদ জোরে কয়েকবার নিঃশ্বাস নিয়ে হাতের উপর হাত রেখে বলতে শুরু করলো
-“এমন পাগলামি করছ কেনো দৃশ্য? আমি নিজেকে সামলাতে পারছিনা।আমার ইচ্ছে করছে তোমার ওই গোলাপি ঠোঁট জোড়ায় ডুবে যেতে। তোমার শরীরের প্রতিটা ভাঁজে ভাজে হারিয়ে যেতে।কিন্তু পারছিনা।তোমার গায়ে কোনো দাগ আঁকতে পারবো না আমি। তবে প্রমিস বিয়ের পর আমি তোমার কোনো বাঁধা শুনবো না। আজকে যে পাগলামি গুলো করছো তার জন্য চরম শাস্তি দিব। আমার মনে অনুভূতির তাণ্ডব চালানোর শাস্তি।”
______________
পরেরদিন ফাহিম এসে দৃশ্যকে আবার রাজশাহীতে নিয়ে গেল। সেদিনের পর দৃশ্য টানা দুই দিন মাহাদের কোন কল রিসিভ করেনি। সে ভেবে পায়না কেমন করে এত নির্লজ্জ হয়ে গেছিল। ওই সময়টাতে সে নিজের মধ্যে ছিল না। শুধু মনে হচ্ছিলো মাহাদ কে নিজের সাথে মিশিয়ে ফেলতে না পারলে তার জীবনটাই বৃথা। মাহাদ তাকে না আটকালে হয়তো সে নিজেকে সেদিন তার কাছে সমর্পণ করে দিতে এক মিনিটও ভাবতো না।
আর মাহাদ সেদিন বহু কষ্টে নিজেকে সামলে নিয়েছিলো। প্রিয়তমার আহ্বান কে বহুকষ্টে নাখোচ করেছিল। সে চায় তার প্রিয়তমার শরীরে তার প্রত্যেকটি স্পর্শ হোক পবিত্র।