#ইচ্ছের_উল্টোপিঠ
#পর্ব_৪২( বোনাস পার্ট),৪৩
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
৪২
অনল চোখে রোদচশমা লাগিয়ে শার্টের সামনের দুটো বোতাম খুলে দিল। চুলগুলো হাত দিয়ে ঠিকঠাক করে এগিয়ে গেলো বাংলোর গেটের দিকে।
— ” এক্সকিউজ মি? ”
বাংলোর সামনে দাঁড়িয়ে থাকা এক লোককে উদ্দেশ্য করে বললো অনল। লোকটা অনলকে দেখে ভ্রু কুচকে ফেললো। অনলকে আগাগোড়া নিরীক্ষণ করে মুখ বাঁকিয়ে বললো,
— ” কি চাই? ”
অনল মোবাইলে একটা লোকেশন বের করে লোককে দেখিয়ে বললো,
— ” আই অ্যাম এ ইন্ডিয়ান। আই ক্যান্ট ফাইন্ড দিস লোকেশন। ক্যান ইউ প্লিজ টেল মি দা ওয়ে অফ দিস প্লেস?”
কালো রঙের লোক ফ্যালফ্যাল করে তাকালো অনলের দিকে। তারপর মুখে থাকা পানের পিক পাশে ফেলে দিয়ে বললো,
— ” কি কইতাছো কিছুই বুঝবার পারছি না। বাংলায় কও। ”
অনল অসহায় হওয়ার ভান করলো। মহাফ্যাসাদে পড়েছে মুখের অভিব্যাক্তি যেনো এরূপ। কালো লোক বন্দুক একপাশে রেখে পাশে দাড়িয়ে থাকা এক স্মার্ট গার্ডকে ডাক দিলো। গার্ড অনলের দিকে এগিয়ে এলে জুভান সেই ফাঁকে চুপিসারি গেটের ভিতর ঢুকে যায়। কালো লোকটা সেই গার্ডকে বললো,
— ” দেখ তো বেটা কি চায়? ”
গার্ড অনলের দিকে তাকালে অনল পুনরায় একই কথা রিপিট করে। গার্ড অনলকে বুঝিয়ে দেয় লোকেশন। অনল খুব খুশি হওয়ার ভান করে গার্ডকে জড়িয়ে ধরে। জুভান ভিতর থেকে বুড়ো আঙ্গুল উচু করে ” হয়ে গেছে” বললে অনল গার্ডকে ছেড়ে দিয়ে বাইকে চড়ে বসে।
জুভান গুটিগুটি পায়ে ভিতরে প্রবেশ করে। এই জায়গার সব মানুষ বন্ধুকে ধারণকারি। তাই তাদের সাথে পাল্লা দেওয়া খুব কঠিন কাজ। জুভানের হাতেও লাইসেন্সকৃত বন্দুক আছে। কিন্তু জুভানের হাতের অস্ত্রও কম না। কিন্তু অযথা নিজের শক্তি খরচ করা জুভানের পছন্দ না। তাই জুভান খুব সন্তর্পনে পা ফেলছে। এখন খোঁজ নেওয়া দরকার ঐশী কই?
— ” মেয়েটা খাইছে? ”
মধ্যবয়স্ক সেই লোক হাঁটতে হাঁটতে বললো। সম্পর্কে সে মহেন্দ্রলালের বাবা রামলাল। রামলালকে আসতে দেখে জুভান এক গাছের আড়ালে হারিয়ে যায়। রামলাল গেটের দিকে এগিয়ে গেলে জুভান হুট করে গাছের আড়াল থেকে বেরিয়ে এসে রামলালকে একহাত দিয়ে চেপে ধরে। রামলাল ভয় পেয়ে জড়োসড়ো হয়ে যায়। চোখ বড়বড় করে তাকায় জুভানের দিকে। সবাই জুভানকে রামলালের সাথে দেখে তাড়াহুড়ো করে ওর দিকে বন্দুক তাক করলে জুভান ওর বন্দুক রামলালের কপালে তাক করে বলে,
— ” একটা গুলি কোনো বন্দুক থেকে বের হবে, তো এই মানুষটা এখানেই মারা পড়বে। ”
সবাই কিছু বলার আগেই রামলাল কাপা গলায় বললো,
— ” এই সবাই বন্দুক নামাও। নামাও কইতাছি। ”
রামলালের কথায় সবাই বন্দুক নামিয়ে ফেলে। জুভান এবার বলে,
— ” সবাই একজায়গায় জড়ো হও। কুইক। ”
রামলাল ইশারা করলে সবাই একজায়গায় এসে জড়ো হয়। রামলাল ভয়ে রীতিমত কাপছে। নিজে মানুষ খুন করলেও সবসময় ছেলে মহেন্দ্রলালের ইশারায় করেছে। ছেলে থাকায় কখনো জানের পরোয়া করেনি। কিন্তু আজ ছেলে নাই। কিন্তু ফোন করা যাবে তো? রামলাল ফোনের ইশারা করার আগেই জুভান বলে উঠে,
— ” সবার ইলেকট্রিক ডিভাইস আমার সামনে মাটিতে রাখো। মোবাইল, ঘড়ি, ল্যাপটপ, ব্লুটুথ সব। কারো কাছে যদি কোনও ইলেকট্রিক ডিভাইস দেখি তবে এই লোক আর জ্যান্ত থাকবে না। রাখো বলছি। ”
রামলাল এবার কান্না করে দেওয়ার উপক্রম।এই ছেলে অনেক ডেঞ্জারাস। এখন কি উপায়? এবার তো সাক্ষাৎ নরকে গিয়ে পড়বে।
— ” কি হলো রাখ? নাকি এরে মেরে ফেলবো। ”
জুভান চিৎকার করে বললো। হাত দিয়ে গুলি চালানোর ভান করলে রামলাল চিৎকার দিয়ে বলে,
— “আরে। রাখ। রাখ। যা আছে সব এরে রাইখা দে। ”
সবাই একে একে সব ইলেকট্রিক ডিভাইস মাটিতে রাখে। জুভান এবার রামলালকে জিজ্ঞেস করে,
— ” ঐশী কই? ”
রামলাল আমতা আমতা করলে জুভান গুলি করে দেওয়ার কথা বললে রামলাল সজোরে বলে উঠে,
— ” ওই ঘরের ভিত্রে। ”
আঙ্গুল দিয়ে একটা কালো রঙের ঘর দেখায় রামলাল। জুভান এবার নিজের কানে লাগানো ব্লুটুথ দিয়ে অনলকে বাড়ীর ভিতরে আসতে বলে।
একটু পর অনল খুব রয়ে সয়ে হাসিমুখে ভিতরে প্রবেশ করে। দুনো হাত জিন্সের পকেটে গুজে রাখা, বুক ফুলিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলো। এমন ভাব যেন সে বিশ্ব জয় করে ফেলেছে। অনল জুভানের পাশে এসে দাঁড়ালে জুভান রামলালকে খুব সাবধানে অনলের হাতে তুলে দেয়। এবার অনল রামলালের মাথায় গুলি ঠেকিয়ে দেয়। জুভান সবার দিকে আঙ্গুল উচিয়ে বলে,
— ” কেউ কোনো চালাকি করবে তো আজ এই লোককে এখানেই মেরে গেড়ে দিবো। মাইন্ড ইট। ”
রামলালের চোখে নিদারুণ অসহায়ত্ব। মনে মনে অনবরত ছেলের নাম জপ করছে সে। ছেলে একবার আসুক , তাকে একবার বাঁচাক। ঈশ্বরের নামে শপথ করছে আর জীবনেও কাউরে খুন করবে না। ছেলের কথাতেও না।
জুভান আরেকটা বন্দুক ধরে চারপাশে তাকিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে লাগলো সেই ঘরের দিকে। বুকের ভিতরটা তার ধুকধুক করছে।মনে হচ্ছে কত জনম পররে ঐশীর মুখ দেখবে।
জুভান ঠাস করে দরজা খুলে ফেলে। সঙ্গেসঙ্গে সে থমকে যায়। ঐশীর এমন করুন অবস্থা দেখে তার বুকে মোচড় দেয়। স্থির দাড়িয়ে থেকে কাপা কণ্ঠে ডাক দেয় সে,
— ” ঐ-ঐশী”
হঠাৎ চিরচেনা কারো গলার কাছে আওয়াজ শুনে ঐশীর চোখ উজ্জ্বল হয়ে যায়। সঙ্গেসঙ্গে খুব কষ্ট করে ঘাড় উচুঁ করে সামনে তাকায়। ঐশী থমকে যায়। সে কি ঠিক দেখছে। ঐশীর বুকে এতদিন ধরে জমে থাকা জল হুহু করে চোখ উপচে বেরিয়ে আসে। জুভান এসেছে! তাকে এই নরক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিতে জুভান এসেছে। ঐশীর বিশ্বাস হচ্ছে না। ঐশী ঠোঁট ফাটা। কথা বলতেই জ্বলে উঠে। তাও ঐশী খুব কষ্ট করে বললো,
— ” জু-জু-জুভান। ”
জুভান ঐশীর অবস্থা দেখে সম্বিত ফিরে পায়। তাড়াহুড়ো করে না ঐশীর পাশে এসে বসে সে। পাগলের মতন ঐশীর সমস্ত শরীর হাতড়াতে থাকে। একই অবস্থা হয়েছে তার মেঘবালিকার। জুভানের এসব সহ্য হচ্ছে না আর। বন্ধ করুন কেউ এই দুঃস্বপ্ন। জুভান জলদি ঐশীর সমস্ত বাঁধন খুলে দেয়। হাতে দাগ, পায়ে দাগ ,মুখে থাপ্পড় দেওয়ার অজস্র চিন্হ। জুভানের এসব দেখে কান্না এসে যাচ্ছে। কিন্তু সে দুর্বল হবে না। ঐশী আরো কথা বলবে তার আগেই জুভান ঐশীর ঠোঁটে আঙুল দিয়ে ওকে চুপ করিয়ে দেয়। হুট করে ঐশীকে পাজকোলা করে কোলে তুলে নেয়। ঐশী জুভানের গলা জড়িয়ে ধরতে চায় কিন্তু শক্তিতে কুলায় না। ঐশী হাত নিচে নামিয়ে দেয়।
জুভান ঐশীকে কোলে করে বাইরে আসে। অনলকে দেখে ঐশীর চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়। জুভান কি সব জেনে গেছে? অনল ওর সাথে কেনো? কিন্তু এসব ভাবার আগেই ঐশী অত্যাধিক শারীরিক এবং মানসিক চাপে জুভানের কোলেই জ্ঞান হারায়। জুভান দেখে কিন্তু কিছু বলে না।
জুভান ঐশীকে নিয়ে পিছন সিটে বসে। ঐশী জুভানের বুকে লেপ্টে অজ্ঞান হয়ে আছে। অনল জুভানের ইশারায় রামলালের কপালে বন্দুক ঠেকিয়ে তাকে নিয়ে গাড়িতে উঠে। জুভান ঐশীকে নিয়ে পিছনে বসে। রামলালকে ড্রাইভিং সিটের পাশে বসিরে দিয়ে বন্দুকটা জুভানের হাতে দিয়ে দেয়। এবার জুভান পিছন সিট থেকে রামলালের মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে বসে থাকে।
গাড়ি চলছে ঢাকার উদ্দেশ্যে। গাড়ি যখন সিলেট পেরিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আসে তখন অনল রামলালকে গাড়ি থেকে নামিয়ে রাস্তার মাঝখানে রেখে দেয়। রামলাল অবাক চোখে গাড়ির দিকে তাকিয়ে আছে। জুভান জানালা থেকে আঙ্গুল উচিয়ে বললো,
— ” খুব শীগ্রই দেখা হচ্ছে। বলে দিস তাকে। ”
গাড়ি চলে যায়। জুভান এবার ঐশীর দিকে তাকায়। ঐশীর মুখের এই অবস্থা দেখে তার বুকটা ফেটে যাচ্ছে। জুভান নিজেকে সামলাতে না পেরে দুহাত দিয়ে ঐশীর গাল ধরে ওর সম্পূর্ণ মুখে পাগলের মতন চুমু দিতে থাকে। যেনো এতদিনের তৃষ্ণা মেটাচ্ছে সে। কিছুসময় পর তার বুকের ভিতরটা শান্ত হলে ঐশীকে আবারও বুকে জড়িয়ে ধরে চোখ বুজে সে। এতক্ষণে মনের মধ্যে থাকা তুফানটা বন্ধ হলো। তার মেঘবালিকা এখন তার বুকের মাঝেই, তার কাছেই। একদম কাছে।
#চলবে
#ইচ্ছের_উল্টোপিঠ
#পর্ব_৪৩( স্পেশাল পর্ব)
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
ভোর হলো প্রায় অনেকক্ষণ। ঐশী জুভানের বাহুডোরে বেঘোরে ঘুমে মগ্ন। আর একটু পর ঐশীর জ্ঞান ফিরবে। কিন্তু জুভানের মনে ঘুরছে অন্য চিন্তা।সে চায়না ঐশী ঘুম থেকে উঠে জেগে ওকে দেখুক।আর আজ যা করেছে তার জন্যে ত একটু হলেও শাস্তি প্রাপ্য ওর। তাই জুভান খুব সাবধানে ঐশীকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে নিজে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
ঐশী পিটপিট করে চোখ খুলে। বেশ কিছুক্ষণ লাগলো ওর সম্ভিত ফিরে পেতে। আড়মোড়া ভাঙ্গতেই লক্ষ্য করলো,ঘাড়টা এখনও অসম্ভব ব্যাথা করছে। কিন্তু ঠোঁটের জ্বালা আগের থেকে অনেক কম। ঐশী অঙ্গুল্ড ইয়ে ঠোঁট ছুলে ঠোঁটের মধ্যে নরম কিছুর অস্থিত্ব পায়। মলম মনে হয়। ঐশী এবার হাত নাড়াতেই হাতে টান খায়। ” আহ্” বলে মৃদ চিৎকার করে ঐশী হাতের দিকে তাকায়। হাতে সেলাইন পুষ করা। ঐশী এসব দেখে ছোট্ট করে এক নিঃশ্বাস ফেলে বলে,
— ” আবারও বন্দী। ধুর! ”
প্রায় আধা ঘন্টা এমন সং সেজে বসে থাকার পর একটা মেয়ে সার্ভেন্ট রুমে ঢুকলো। দরজা খোলার আওয়াজ শুনে ঐশী ভাবলো হয়তো জুভান এসেছে। কিন্তু ঐশীকে ভুল প্রমাণিত করে মেয়র সার্ভেন্ট বাটিতে সুপ নিয়ে রুমে প্রবেশ করলো। ঐশী আবারও এক দীর্ঘশ্বাস ফেললো। জুভান যে তাকে নিজ থেকে দেখা দিচ্ছে না সেটা খুব ভালোই আন্দাজ করতে পারছে ও।
— ” ম্যাম, সুপটা খেয়ে নিন প্লিজ। ”
ঐশী সুপের দিকে একনজর তাকালো। তারপরই মুখ ঘুরিয়ে বললো,
— ” এখন খাওয়ার ইচ্ছে নেই। ”
সার্ভেন্ট পড়লো মহাফ্যাসাদে। ঐশীকে আকুতি মিনতি করেই লাভ হলো না। শেষ পর্যন্ত হাল ছেড়ে বললো,
–” ম্যাম, আপনি খাননি জানলে স্যার অনেক রেগে যাবেন। আর স্যারের রাগ যা ভয়ংকর। প্লিজ ম্যাম খেয়ে নিন। ”
ঐশী এবার মুখ ঘুরে তাকালো মেয়েটার দিকে। সোজাসাপ্টা বললো,
— ” তাহলে তোমার স্যারকেই এসে খাওয়াতে বলো। ”
— ” ম্যাম, স্যার এই রুমে আসতে চাচ্ছেন না। ”
— ” তো আমিও এখন খেতে চাচ্ছি না। ”
মেয়েটার মুখে এবার নিদারুণ অসহায়ত্ব ফুটে উঠলো। আচ্ছা মুসিবতে পড়া গেছে। এবার তো আর কোনো উপায় নেই। সার্ভেন্ট শেষ পর্যন্ত সুপ টেবিলের উপর রেখে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
একটু পর হনহন কর জুভান রুমে প্রবেশ করে। চোখে মুখে আগুনের ফুলকি ঝরছে। প্রথমে খুশি হলেও এখন ঐশী জুভানের রাগ দেখে খানিক ভয় পায়। না জানি এখন ওর কি হাল করে এই বদটা। জুভান রুমে এসেই কোনো ভনিতা না করে সুপার বাটি হাতে নেয়। এক চামচ সুপ ঐশীর দিকে এগিয়ে দিয়ে থমথমে গলায় বলে,
— ” খাও। ”
ঐশী খায় না। বরং ঠোঁট মুখের ভিতরে নিয়ে যায়। জুভান এবার রাগে ঐশীর গাল ধরে জোর করে হা করিয়ে সুপ খাইয়ে দেয়। ঐশী না চাইতেও সুপ গিলে ফেলে। গালে হাত ঘষে করুন গলায় বললো,
— ” আপনি আমায় ব্যাথা দিচ্ছেন। ”
জুভান হা না কিছুই বললো না। আরো এক চামচ সুপ ঐশীর মুখের সামনে ধরলো। ঐশী এবার রাগ দেখিয়ে বললো,
— ‘ কি হয়েছে আপনার? আমার সাথে কথা বলছেন না কেনো? ”
জুভান এবার ঐশীর চোখে চোখ রাখলো। কঠোর কণ্ঠে বললো,
— ” ইচ্ছে করছে না তাই। আর কিছু? ”
জুভানের কথা শুনে ঐশীর চোখ ভিজে এলো। কান্নাভেজা গলায় বললো,
— ” এমন করে বলছেন কেনো? ”
— ” কেমন করে বলছি? ”
জুভানের ত্যাড়া উত্তর শুনে ঐশী দমে এলো না। বললো,
— ” আপনি খুব ভালো করে জানেন আমি কিসের কথা বলছি। ”
জুভান উত্তর দিলো না। ঐশীর মুখের দিকে আরও এক চামচ্ সুপ এগিয়ে দিলে ঐশী এবার এক অবিশ্বাস্য কাজ করে বসে। হাত ঝটকা দিয়ে জুভানের হাত থেকে চামচ্ নিচে ফেলে দেয়। জুভান এতে হতবাক হলে ঐশীর মুখের তাকিয়ে নিভে যায়। ঐশীর চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ে। ভেজা গলায় বললো ও,
— “থামুন এবার। আমি আপনার এই রূপ সহ্য করতে পারছি না। প্লিজ বন্ধ করুন এসব। আমি আর নিতে পারছি না। ”
জুভান ঐশীর অবস্থা দেখে চোখ বুজে নিঃশ্বাস নিলো। তারপর রেগে ঐশীর দু বাহু খামচে ধরলো। হড়হড় করে বললো,
— ” আমার সামান্য একটু অবহেলা তুমি পাঁচ মিনিটের জন্যে সহ্য করতে পারো নি। কিন্তু এই তুমি? দিনের পর দিন আমায় অবহেলা করে এসেছো।তখন? তখন আমার মধ্যে কি গেছে তার কি কোনো খেয়াল ছিলো তোমার? উত্তর দাও। ”
ঐশী ভেজা চোখে জুভানের দিকে তাকালো। বললো,
— ” আমি আপনাকে অবহেলা করেছি কখন? ”
— ” করেছো তুমি। একবার না বরং হাজারবার। তুমি একবারও তোমার প্রতিশোধের কথা আমায় জানিয়েছো? না জানাও নি। কারণ তুমি কখনোই আমায় আপন ভাবতে পারো নি। আমাদের মনের মিল হয়েছে ঠিকই কিন্তু তুমি সবসময় আমাকে আপন ভাবো নি। ভাবলে একা একা এত বড় রিস্ক নিতে পারতে না। ”
— ” আমি ভয় পাচ্ছিলাম জুভান। আমি চাইনি তুমি এসবের জন্য আমাকে ছেড়ে দাও। ”
ঐশীর চোখের জল কোনো বাঁধ মানছে না। জুভান অবাক হয়ে বললো,
— ” ভয়! আমকে নিয়ে? ”
— ” হ্যাঁ জুভান। ভয়! আমি তোমাকে এক মুহূর্তের জন্যে ছাড়তে পারবো না। ”
জুভান এবার ঐশীকে ছেড়ে দিলো। রাগ এবার তার হুহু করে বেড়ে যাচ্ছে। জুভান এবার শীতল গলায় বললো,
— ” আজ একটুর জন্যে আমি আমার জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান কিছু হারাতে বসেছিলাম, ঐশী। তোমার জন্যে আমার জীবন আবার আঁধারে ঢেঁকে যাচ্ছিলো। আর আমার জীবনে তোমার থেকে মূল্যবান আর কিছুই নেই, ঐশী। আজ যদি তোমার কিছু হয়ে যেত! ”
জুভান ভাবতেই ভয়ে কেপে উঠলো। ঐশী অবাক হয়ে জুভানের দিকে তাকিয়ে আছে। জুভান এবার কপাল চুলকালো। তারপর ঐশীর দিকে আঙুল উচিয়ে বললো,
— ” এর জন্যে আমি তোমাকে কখনোই ক্ষমা করবো না ,ঐশী। ”
জুভান চলে যেতে নিলে ঐশী জুভানের ডান হাত ধরে ফেলে। জুভান সামনে তাকিয়েই চোখ বুজে। ঐশী করুন গলায় বললো,
— ” আই অ্যাম সরি। আর হবে না এরকম। ”
জুভান এক ঝটকা দিয়ে ঐশীর থেকে হাত ছাড়িয়ে বেরিয়ে যায় রুম থেকে। ঐশী সেখানেই হাঁটু গেড়ে বসে কান্না করতে থাকে। তার জীবনটা এরকম না হলেও পারতো!
____________________
ঐশী আজ এক অবিশ্বাস্য কাজ করার সময় সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জুভানের রাগ ভাঙ্গানোর এর থেকে ভালো উপায় আর তার মাথায় আসেনি। ঐশী আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। পরনে সাদা জর্জেট শাড়ি। যা শরীরে জড়ানোর ফলে পেট, নাভি প্রায় সব দৃশ্যমান। চুলগুলো পিঠ অব্দি ছড়ানো। চোখে মোটা করে কাজল, ঠোঁটে একটা নুড লিপস্টিক। মুখে হালকা ব্লাশঅন। ঐশী আয়নায় নিজেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। কোনো কমতি তো নেই?
অনেক রাত হয়েছে। ঐশী ঘুমিয়েছে কিনা জানতে জুভান খুব সাবধানে রুমের দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করতেই থমকে যায়। ঐশী জুভানের ঠিক সামনে দাঁড়িয়ে আছে। জুভান ঐশীকে আগাগোড়া নিরক্ষ্ন করতেই তার গলা শুকিয়ে আসে। প্রচন্ড তৃষ্ণায় খা খা করতে থাকে তার বুক। জুভান এক প্রেম ঘোরে আচ্ছন্ন হয়ে যায়। ঐশী ধীর পায়ে এগিয়ে আসে জুভানের দিকে। আলতো করে জুভানের গলা জড়িয়ে ধরতেই জুভান সম্বিত ফিরে পায়। চটজলদি ঐশীকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে উদ্যত হয়।
সঙ্গেসঙ্গে ঐশী জুভানকে জড়িয়ে ধরে। জুভান থমকে যায়। ঐশী জুভানের বুকে নাক ঘষে কান্নাভেজা গলায় বললো,
— ” ঐশী সরি। একবার দুবার, হাজারবার সরি বলছে তার জেদী বরটাকে। আর কক্ষণো সে এমন করবে না। ”
ঐশী জুভানের বুক থেকে মুখ তুলে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে শীতল গলায় বলে,
— ” এই ঐশী আর কখনো নিজেকে তার জেদী বর থেকে আলাদা করবে না। কথা দিচ্ছি সে। ”
জুভান ঐশীর এমন করে কথা বলা দেখে না চাইতেও হেসে ফেললো। ঐশী এমন একটা মেয়ে, যার উপর সে কখনোই রেগে থাকতে পারে না। মনে হয়না জীবনেও পারবে। জুভান ঐশীর কোমর জড়িয়ে ধরে ওকে নিজের সাথে মেশালো। নিজের চোখ বন্ধ করে কপালে খুব সময় নিয়ে অধর ছুঁইয়ে দেয়। ঐশী আবেশে চোখ বন্ধ করে ফেলে। জুভান কপাল থেকে মুখ তুলে ঐশীর ঠোঁটের দিকে তাকায়। ঘোরমাখা গলায় বললো,
–” আজকে কাছে আসাটা কি কিস পর্যন্ত সীমাবদ্ধ? নাকি এর থেকেও বেশি কিছু? ”
ঐশী এত এত লজ্জা পায়। লজ্জায় চলে যেতে নিলে জুভান হুট করে ঐশীকে পাজকোলা করে কোলে তুলে নেয়। ঐশী ভয় পেয়ে জুভানের গলা জড়িয়ে ধরে। জুভান টিপ্পনী কেটে বলে,
–” আজকে পালাতে দিচ্ছি না, সুন্দরী। ”
ঐশী লজ্জায় জুভানের বুকে মুখ লুকায়।
জুভান ঐশীকে বিছানায় শুইয়ে দেয়। ঐশীর চোখের দিকে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে। মেয়েটা লজ্জায় একেবারে নেতিয়ে যাচ্ছে। জুভান ঐশীর কপপালে চুমু দিয়ে ঐশীর দিকে তাকায়। হঠাৎ তার কি একটা মনে পড়ায় বললো,
— ” তুমি অসুস্থ ঐশী। আমাদের এগুনো কি ঠিক হবে? ”
ঐশী আঁতকে উঠে। জুভান কি তবে থেমে যাবে। ঐশী জুভানের কলার ধরে ওকে নিজের দিকে ঝুঁকে আনে। জুভানের চোখে চোখ রেখে বলে,
— ” আপনিই আমার সকল রোগের সুস্থতা, জুভান। ”
জুভান মুচকি হেসে ঐশীর শাড়ির আঁচল সরিয়ে ওর গলায় মুখ ডুবিয়ে দেয়। জুভানের একেকটা স্পর্শ ঐশীর মনে শিহরণ জাগিয়ে তুলে। এক বিরামহীন সুখের সাগরে সাঁতার কাটতেই ঐশীর চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ে। ইশ! কি জুভান ওকে কি সুখটাই না দিচ্ছে। ও তো সুখের কারনে মরে যাচ্ছে! ঠিক তখন জুভান ঐশীর বয়স কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে,
— ” আজ আমার ভালোবাসার তোমার মৃত্যু নিশ্চিত,ঐশী।”.
ঐশী চোখ বুজে মুচকি হাসে। জুভান যখন ফিসফিসিয়ে কথা বলে ঐশী তখন এই ঘোরে চলে যায়। জুভান ওকে এত ভালবাসে কেনো? কি সৌভাগ্য ওর!
#চলবে