অনুভবে আজো তুমি🍁🍁 পর্ব-১১

0
1470

#অনুভবে_আজো_তুমি🍁🍁
পর্ব-১১
ফাবিহা নওশীন

ফায়াজ এবার ফোন রেখে সানগ্লাস খোলে ধমক দিয়ে বললো,

–বসতে বলেছি শুনো নি?নাকি চাইছো হাত ধরে টেনে নিয়ে বসাই?
মেহের কিছু না বলে কিছুটা দূরত্ব রেখে ফায়াজের পাশে বসে পড়লো।তবে তখনো মাথা নিচু করে আছে,ফায়াজের দিকে একবারও চায়নি।

ফায়াজ মেহেরকে পর্যবেক্ষণ করে ঠান্ডা গলায় বললো,
–তোমাকে তখন ডাকলাম এভয়ড করে চলে গেলে কেন?

মেহের মনে মনে বলছে,
–আপনি ডাকবেন আর আমি দেমাক দেখিয়ে চলে যাবো এতবড় দুঃসাহস কি আমার আছে?আপনার সাথে কথা বললে যে আমাকে কত ঝামেলা পোহাতে হয় তা কি আপনি জানেন?আপনার জানার কি দরকার?কে আপনার জন্য বিপদে পড়লো তাতে আপনার কি?

ফায়াজ আবার ধমক দিয়ে বললো,
–মনে মনে বিরবির করছো কেন?জোরে বলো।
মেহের তাড়াহুড়ো করে বললো,
–বিরক্ত লাগে তাই।
ফায়াজ অবাক হয়ে বললো,
–বিরক্ত?আমার সাথে কথা বলতে তোমার বিরক্ত লাগে?
মেহের মুখ চেপে ধরলো তারপর ঢুক গিলে বললো,
–না আমি সেটা বলতে চাইনি।আসলে আপনার সাথে কথা বললে মেয়েরা আমায় অনেক বিরক্ত করে।সবাই আমাকে ঘিরে ধরে।নানান প্রশ্ন করে।আপনি কে হোন আমার?কিভাবে চিনি?আত্নীয় কিনা?আপনার নাম্বার আছে কিনা ইত্যাদি ইত্যাদি। উফফ।
এক নাগাড়ে বলে ফেলল।

ফায়াজ গালে হাত দিয়ে বিজ্ঞমানুষের মতো করে বললো,
–ওহহ,,আচ্ছা।
মেহের সুযোগ পেয়ে বললো,
–তাহলে আমি যাই?
ফায়াজ ভ্রু কুচকে বললো,
–কেন?আমি তোমাকে যেতে বলেছি?
মেহের মাথা নাড়িয়ে বললো,
–না।
আমি এখানে বসে বসে কি করবো?
–উমম।গাই গাইতে পারো।সেদিন তো গাওনি।
মেহের এবার চোখ তুলে ফায়াজের দিকে চাইলো।ফায়াজ গালে হাত দিয়ে এক দৃষ্টিতে মেহেরের দিকে তাকিয়ে আছে।মেহেরের খুব অস্বস্তি লাগছে।চোখ নামিয়ে চুপ করে রইলো।
তারপর ফায়াজ হেসে দিলো।

–আরে আমি তোমার সাথে মজা করেছি।আচ্ছা তোমার কি আমার নাম জানতে ইচ্ছে হয়না?
মেহের মাথা নাড়িয়ে বললো,
–না।
ফায়াজ অবাক হয়ে বললো,
–কেন?
–কারণ আমি জানি।
–কিভাবে?
–যেখানে যাই সেখানেই মেয়েরা আপনার গুনগান করতে থাকে।আপনি এমন,আপনি ওমন।এটা সেটা।কান পচে গেছে।
–হাহা,,আমার এতো মেয়ে ফ্যান আছে জানতাম না তো।তা আমার নাম কি বলোতো?
মেহের মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললো,
–আপনার যেই বিশাল নাম,আমি তো ভুলে গেছি।শর্টকাট ফায়াজ।রাইট??
–হু।ফারদিন নওয়াজ খান।শর্টকাট ফায়াজ।তোমার ডিপার্টমেন্ট ফাইনাল ইয়ার।
–ওহ।
–এখন যাও।আর কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলে পাত্তা দিবেনা।তাহলে আর বিরক্ত করবেনা।
ফায়াজের বলতে দেরি মেহের উঠে দৌড় দিতে এক সেকেন্ড ও দেরি করলো না।

মেহের কিছুদূর গিয়ে দাড়িয়ে পড়লো।ফায়াজের সামনে ওর যেন নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিলো।
–ব্যাটা ফাজিল।এসব খুশগল্প করার জন্য হুমকি দেয় কেউ।আল্লাহ যাক বড় বাচা বেচে গেছি।কেউ হয়তো দেখেনি।

ফায়াজ মেহেরের কথা ভেবে মুচকি মুচকি হাসছে। মেহের যাওয়ার পর ফায়াজের বন্ধুরা ওকে ঘিরে ধরে।
জিসান বলে,
–কিরে বন্ধু?কি ব্যাপার?
ফায়াজ বললো,
–কি ব্যাপার?
ইমরুল বললো,
–ওই মেয়েটার সাথে কি চলছে?
ফায়াজ বলল,
–ওই কি চলছে মানে কি?ওর সাথে আমার কি চলবে?
জিসান আবারো বললো,
–কিছু না চললে মেয়েটাকে এভাবে জ্বালাচ্ছিস কেন?
ফায়াজ হেসে বললো,
–মজা লাগছে তাই।মেয়েটা একটু অন্যরকম।সবার চেয়ে আলাদা।কিছু একটা আছে ওর ভিতর।ওর সাথে কথা বললেই হাসি পায়।এমন সব কথা বলে।ভালোই লাগে।
শিশির অবাক হয়ে বললো,
–ওই এই ভার্সিটিতে মেয়ের অভাব?এত মেয়ে থাকতে তোর ওর সাথে কথা বলতে ভালো লাগে?কই এর আগে তো কোনো মেয়ের সাথে একা কথা বলতে দেখিনি।
ফায়াজ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,
–জানি না।তবে ওর সাথে কথা বলতে ভালো লাগে।
শিশির বললো,
–দোস্ত লক্ষন তো ভালো না।ভালো টালো বেসে ফেলিস নি তো?
ফায়াজ শিশিরের কথায় চমকে গেল।তারপর ওর দিকে অবাক চাহনি ছুড়ে দিলো।
–কি বলছিস?আমি আর ভালোবাসা?আরে না।

শিশির হাল ছাড়লো না।সবটা ওর জানতেই হবে।শিশির প্রেম করে তাই বন্ধুরা সব সময় ওর পিছনে পড়ে থাকে।তাই ও এই চান্স মিস করতে চায়না।
–ঠিক আছে,আমার কিছু প্রশ্নের উত্তর দে।
তাহলেই বুঝতে পারবে।
ফায়াজের ও খুব জানতে ইচ্ছে করছে ও প্রেমে পরেছে কিনা।
–বল।

–ওকে দেখলে তোর ভিতর কোনো ফিলিংস হয়?অদ্ভুৎ কোনো ফিলিংস?বুকের ভিতর ধুকধুক করে?হার্টবিট বেড়ে যায়?

–হুম।ওকে প্রথম দেখাই আমার হৃদ স্পন্দন বেড়ে গিয়েছিলো।আর সে ধুকধুকানি বেড়েই চলেছে।যখনি ওকে দেখি আমার হার্টবিট বেড়ে যায়।আর কেমন অদ্ভুৎ ভালোলাগা কাজ করে।

–উম,তুই ওকে বড়জোর কয়দিন না দেখে থাকতে পারবি?

–একদিন ও না।

— চোখ বন্ধ কর।

–কেন?

–করলেই বুঝতে পারবি।আমি প্রেম বিশেষজ্ঞ।আমার কথা মেনে চললে সমাধান পাবি।

ফায়াজ চোখ বন্ধ করে নিলো।
–কোনো একজন মেয়ের নাম বল?
–মেহের।
— চোখ বন্ধ করে কারো চেহারা মনে কর।কাকে দেখতে পাস?
ফায়াজ মৃদু হেসে বললো, মেহের।

–কল্পনা কর,মেহের অন্য একটা ছেলের হাত ধরে হেসে হেসে কথা বলছে।
ফায়াজ চোখ খোলে কিছুটা জোরে বললো,
–নো,,
তারপর দ্রুত শ্বাস নিতে নিতে বললো,
–নো,,ওর লাইফে কোনো ছেলে থাকতে পারে না।

শিশির হালকা হেসে বললো,
–ম্যান,তু তো গায়া,,ফিনিশড।ইউ আর ইন লাভ।মেহেরের নাম নিলেই তোমার মুখে হাসি ফুটে উঠে।তুমি হাসতেই থাকো।অদ্ভুৎ সে হাসি।যে হাসি প্রেমিকেরাই হাসে।

জিসান বললো,
–ওই শিশির তোর এই ফালতু কথা বন্ধ কর।ফায়াজ ওর কথায় কান দিসনা।ও বাজে বকছে।কি আছে ওই মেয়ের মধ্যে??মানলাম দেখতে সুন্দরী।এই ভার্সিটিতে আরোও সুন্দরী মেয়ে আছে।মেহেরের চেয়ে সুন্দরী,হট,স্টাইলিশ মেয়ের অভাব নেই।তাদের দেখেই ফায়াজের কোনো ফিলিংস হয়নি।আর মেহের,,,হুর।

শিশির এবার কিছুটা খেপে যায়।তারপর বলে,
–ফায়াজ যদি কিছুদিনের মধ্যে নিজের মুখে না বলে যে ও প্রেমে পরেছে তাহলে আমিও বলছি আমি আমার রেনুর সাথে ব্রেকাপ করে দিবো।প্রমিস।

শিশিরের এমন কথায় সবাই ভড়কে যায়।শিশির ওর জিএফকে ছেড়ে দিবে??এও সম্ভব??
ফায়াজ পড়েছে বিপদে বন্ধুদের নিয়ে।কি করবে ও নিজেও জানেনা।মেহেরকে কি ও সত্যিই ভালোবাসে?
ফায়াজ বন্ধুদের ছেড়ে উঠে গেলো।সে তার ভাবনার রাজ্যে বিচরণ করেছে।
–মেহের,মেহের,,মেহের,,পাগল করেই ছাড়বে তুমি আমাকে?এই প্রশ্নের জবাব কে দেবে আমায়?আমি কি প্রেমে পড়েছি?নাহ,,দূর কি ভাবছি?কিসের প্রেম?কিসের ভালোবাসা?

মেহের ভার্সিটি ছুটির পর বাইরে দাড়িয়ে আছে।কিন্তু কোনো রিকশা,সিএনজি পাচ্ছে না।দুপুরে রোদে ঘেমে নেয়ে যাচ্ছে।কেন যে গাড়ি নিয়ে এলো না।আফসোস করছে খুব।উফফ।
তখনি ফায়াজ মেহেরের সামনে গাড়ি থামালো।মেহের নিজের সামনে গাড়ি থামতে দেখে চমকে দূরে সরে দাড়ায়।ফায়াজ গাড়ির কাচ খোলে মেহেরকে বললো,
–মেহের,উঠে এসো।আমি তোমাকে বাসায় পৌছে দেবো।
–আমি আপনার সাথে কেন যাবো?
–আমি তোমার সিনিয়র।আর সিনিয়র হিসেবে জুনিয়রকে হেল্প করছি।লিফট দিচ্ছি।
–ধন্যবাদ।আমি যাবোনা।
ফায়াজ বাকা হেসে বললো,
–ভালো মেয়ের মতো উঠে এসো।নয়তো সবার সামনে কোলে করে নিয়ে আসবো।
মেহের চারদিকে চেয়ে দেখলো অনেক মানুষ।এর মধ্যে যদি ফায়াজ সিনক্রিয়েট করে?
মেহের একরাশ বিরক্তি নিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো।
ফায়াজ সামনের দিকে চেয়ে বললো,
–কোথায় যাবে?এড্রেস বলো।
মেহের এড্রেস বলে চুপ করে বসে আছে।
ফায়াজ মেহেরকে এভাবে মুখ কালো করে বসে থাকতে দেখে বললো,
–এই মেয়ে এভাবে গাল ফুলিয়ে বসে আছো কেন?আমি কি তোমাকে কিডন্যাপ করে নিয়ে যাচ্ছি?
মেহের আমতা আমতা করে বলল,
–দেখুন,আমি আপনার সাথে যেতে চাইনা।আপনি যদি সিনক্রিয়েট করেন তাই আমি আপনার গাড়িতে উঠেছি।অপরিচিত কারো গাড়ি চেপে বাসায় ফিরার শিক্ষা আমি পাইনি।
ফায়াজ রেগে গিয়ে গাড়ি থামিয়ে দিলো।তারপর চোয়াল শক্ত করে বললো,
–আমি অপরিচিত? আমাকে তুমি চিনোনা।
মেহের ফায়াজের এমন চেহেরা দেখে ভয় পেয়ে গেলো।তারপর ভয়ে ভয়ে বললো,
–আসলে আমার বাসার কেউ যদি দেখে বা জানে আমি একটা ছেলের সাথে তার গাড়িতে করে বাসায় ফিরছি তবে অনেক সমস্যা হয়ে যাবে।আব্বু খুব রাগ করবে।
ফায়াজ এবার শান্ত হলো।নিজের ভুলটাও বুঝতে পারলো।হ্যা,এটা তো ঠিকি।একটা ছেলের গাড়িতে করে বাসায় ফিরবে এটা কোনো ফ্যামিলি মেনে নিবে কেন।তারপর বললো,
–আমি তোমাকে তোমার বাসার কিছুটা আগেই নামিয়ে দেবো।
মেহের মাথা নেড়ে সম্মতি দিলো।
–তোমার বাবা কি প্রচন্ড রাগী?
–হুম।অনেক।
–তোমার বাসায় কে কে আছে?
–আম্মু,আব্বু আর ছোট বোন মিহু।
–তোমার ছোট বোন ও আছে?
–হু।
ফায়াজ আর কিছু বললো না।
কিছুক্ষণ পর মেহের বললো,
–আপনার বাসায় কে কে আছে?
–আমি একা থাকি।
–আপনার ফ্যামিলি?
–লন্ডনে থাকে।তোমার বয়সী আমার একটা বোন আছে ফাইজা।ও ডাক্তারি পড়তে লন্ডন গিয়েছে।আব্বু আগেই থাকতো।বোন আমার মমকে ছাড়া থাকতে পারছেনা।তাই মমকেও জোর করে ফাউজার কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি
–ওও,,
তারপর আর কেউ কারো সাথে কোনো কথা বলেনি।মেহেরকে ওর বাসা থেকে কিছুটা দুরত্বে ছেড়ে দিয়ে গেলো।বাকি রাস্তাটা মেহের হেটেই চলে গেলো।মেহের হাফ ছেড়ে বাচলো।ওর কেন জানি ফায়াজের সামনে থাকলেই দম বন্ধ হয়ে আসে।বুক ধকধক করে।কেন এমন লাগে নিজেই জানেনা।

এর পর থেকে ফায়াজ সবসময় মেহেরকে চোখে চোখে রাখে।প্রতিদিন কয়েকবার মেহেরের সাথে চোখাচোখি হয়।মেহের যেখানে যায় সেখানেই ফায়াজকে দেখতে পায়।ফায়াজের সাথে চোখাচোখি হলে ফায়াজ চোখ সরায় না বরং ছোট্ট করে একটা হাসি উপহার দেয়।মেহের ভেবে পায়না এই ছেলে এমন কেন করে।এভাবেই আরো ২মাস পার হয়ে যায়।

ফায়াজ গুনগুন করে গান গাইছে।ওর ৪-৫জন বন্ধু গালে হাত দিয়ে ওকে পর্যবেক্ষণ করছে।ফায়াজ শিশিরকে টেনে নিজের পাশে বসিয়ে কাধে হাত দিয়ে বললো,
–তোর প্রেমটা বেচে গেলো ব্রেকাপের হাত থেকে।
শিশির মাথা চুলকিয়ে বললো,
–মানে?
ফায়াজ মুচকি হেসে বললো,
–তুই চ্যালেঞ্জ জিতে গেছিস।আই এম ইন লাভ।ম্যাডলি লাভ ইউথ মেহের।
সবাই ফায়াজের কথা শুনে তব্দা খেয়ে গেলো।সবার কান ঝিম ঝিম করছে।সবাই কানে হাত ঘুরিয়ে একে অপরের মুখের দিকে চেয়ে বললো আমি যা শুনেছি তোরাও কি তাই শুনেছিস?

ফায়াজ বললো,
–তোরা সবাই ঠিকই শুনেছিস।সোজা কথায় আমি মেহেরকে ভালোবাসি।আমি ওকে চাই।ও আজ থেকে তোদের ভাবি।শুধু তোদের না পুরো পৃথিবীতে যত ছেলে আছে সবার ভাবি আমি ছাড়া।ওর দিকে নজর রাখিস।ওর আশেপাশে যেন কোনো ছেলে ঘেষতে না পারে।কেউ উল্টো পাল্টা কিছু করলে হাত-পা ভেঙে ফেলে রাখবি।আমাকে জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন মনে করবিনা।সি ইজ অনলি মাইন।কেউ ওর দিকে হাত বাড়ালে আমি তাকে জ্যান্ত পুতে দেবো।ফায়াজ নিজের জিনিস শেয়ার করতে পছন্দ করে না।আই মিন ইট।
ফায়াজ কথাটা বলেই হাটা ধরলো।বন্ধুরা বুঝতে পারলো ফায়াজ সত্যি সত্যিই প্রেমে পরেছে।তাই ফায়াজের কথা মতোই সব করার সিদ্ধান্ত নিলো।ফায়াজের কথার নড়চড় হলে রক্ষে নেই।

কয়েকজন ছেলে মারামারি করছে।যা ফায়াজের চোখে পড়লো।ফায়াজ এগিয়ে গিয়ে জানতে পারলো ভার্সিটি পড়ুয়া একটা ছেলের বোনকে অন্য একটা ছেলে অনেক বিরক্ত করে।মেয়েটি ভাইকে জানায়।তার ভাই এই ছেলেটিকে শাসিয়েছে যাতে তার বোনকে আর বিরক্ত না করে।আর এতেই ওই ছেলেটি রেগে বন্ধুদের নিয়ে মারতে শুরু করে।
ফায়াজ বখাটে ছেলেটির সামনে গিয়ে দাড়ালো তারপর আচমকা গাল বরাবর থাপ্পড় বসালো।তারপর কলার ধরে বললো,
–ওর বোনকে বিরক্ত করছিস।তার উপর দলবেঁধে মারধোর করছিস?মাস্তানি করছিস?ভবিষ্যৎ লিডার হবি?
বলেই ছেলেটিকে এলোপাতাড়ি থাপ্পড় মারতে থাকে।কেউ ভয়ে ছাড়াতে আসছেনা।
ফায়াজ মারা শেষ করে বললো,
–আর যদি কখনো দেখেছি ক্যাম্পাসে মারামারি করেছিস তবে হাত-পা আর সাথে থাকবেনা।যা।
ফায়াজ হাটা ধরলো।ওর মেজাজটাই খারাপ করে দিলো।

মেহের দূর থেকে ফায়াজকে মারামারি করতে দেখেছে।ফায়াজকে এভাবে মারতে দেখে খুব ভয় পেয়ে গেছে।ও ভাবেনি ফায়াজ মারামারি করতে পারেনি।ওর চোখ ছলছল করছে।সামিরাকে গিয়ে সবটা জানালো।সামিরা ওর কথা শুনে হেসে কুটিকুটি।মেহের সামিরার হাসি দেখে রাগ,বিরক্ত,অবাক তিনটাই হচ্ছে।তবে বুঝতে পারছেনা সামিরা কেন এভাবে হাসছে?এখানে হাসার মতো কি বলেছে।
মেহেরের প্রচন্ড রাগ হচ্ছে।রাগী রাগী চোখে সামিরাকে বললো,

–এভাবে হাসছিস কেন?আমি কি তোকে কোনো জোক বলেছি?আমি একটা কথা বলেছি তার বিপরীতে কিছু বললে বলবি নয়তো চুপ করে থাকবি হাসছিস কেন?এখন হাসি থামিয়ে হাসির কারণ বলবি নয়তো তোর ডান গাল বরাবর থাপ্পড় মারবো।

সামিরা হাসি থামিয়ে দেয়।কেননা এর আগে কখনো মেহেরকে এতো রাগতে দেখে নি।যে মেয়েটা সবসময় ঠান্ডা গলায় কথা বলে আর আজকে,,,
–সরি,মেহের।আসলে তুই যেভাবে বললি যেন অনেক বড় কিছু করে ফেলেছে ফায়াজ ভাইয়া

মেহের অবাক হয়ে বললো,
–এটা বড় কিছু নয়?

–শোন মেহের,আমি এই ভার্সিটি সংলগ্ন কলেজে পড়াশোনা করেছি তাই জানি আর নিজের চোখেও দেখেছি।এর আগে এর চেয়ে বড় কিছু হয়েছে।এমন ও হয়েছে ফায়াজ ভাইয়া মেরে হাড়গোড় ভেঙ্গে ফেলেছে।কাউকে মেরে ফাটিয়ে রক্তাক্ত করে ফেলেছে।ফলে তাদের ২-১মাস হসপিটালে কাটাতে হয়েছে।পুলিশি হয়েছে,মামলা হয়েছে কিন্তু ফায়াজ ভাইয়া কিংবা ওনার বন্ধুদের চুলও কেউ বাকা করতে পারেনি।ওনার বাবা এ শহরের নামকরা শিল্পপতি।আর রাজনৈতিকবিদ ও।বড়ো বড়ো লোকের সাথে হাত আছে।তাই এসব করে ছাড় পেয়ে যায়।আর সেখানে তুই সামান্য থাপ্পড়ের কথা বলছিস।বল যে ছেলেটার কপাল ভালো তেমন কিছুই বলেনি।হয়তো মুড ভালো আছে।নয়তো ওনার যেই রাগ।হিংস্র বাঘ।

মেহের ওয়াশরুমের বাহানা দিয়ে উঠে চলে গেলো।ওর আর এসব শুনতে ভালো লাগছেনা।এসব মারামারি কাটাকাটি ও অনেক ভয় পায়।আর যারা এসব মারামারি কাটাকাটি করে তাদেরকেও ভয় পায়।ফায়াজকে আগে থেকে ভয় পেলেও এখন আরো বেশি ভয় লাগছে।তবে এটা ভেবেও খুব খারাপ লাগছে ফায়াজ এমন একটা ছেলে।গুন্ডামি করে।মেহের এটা ভাবতেও পারে নি।কেন যেন একটা চাপা ব্যথা অনুভব করছে।তারপর সিদ্ধান্ত নিলো ফায়াজের কাছ থেকে দূরে দূরে থাকবে।এমন একটা ভয়ংকর লোকের আশেপাশে থাকা উচিত না।

মেহের এখন ফায়াজকে দেখেও সব সময় না দেখার ভান করে।যেখানে ফায়াজ যায় সেখান থেকে সরে যায়।ভুলেও ফায়াজের দিকে তাকায়না।এখন আর মেহের এদিক সেদিক ঘুরাঘুরি করে না।সোজা ক্লাস রুমে যায় আর ক্লাস শেষে সোজা বাসায় যায়।ফায়াজকে আড়চোখেও দেখে না।ফায়াজ কয়েকদিন যাবত বিষয়টি লক্ষ্য করলো।আগে মেহেরকে ফলো করলে কয়েকবার চোখাচোখি হতো।আর এখন ও যে আছে সেটাই বুঝে না।ফুল্লি এভয়েড করে।
বিষয়টি ফায়াজকে শুধু ভাবাচ্ছেই না কষ্ট ও দিচ্ছে প্রচুর।
তাই ফায়াজ সিদ্ধান্ত নিলো মেহেরের সঙ্গে সরাসরি কথা বলবে।
–মেহের যদি ভালো কথায় রাজি না হও তবে আমাকে বাকা পথ ধরতে হবে।আমার কিছু করার নেই।কিন্তু তোমাকে আমার করেই ছাড়বো।আমি যে আর পারছিনা।

মেহের সামিরার জোরাজুরিতে ক্যানটিনে গেলো।মেহের সামিরা আর দুজন ফ্রেন্ড একসাথে বসে বার্গার আর ফুচকা অর্ডার দিয়ে গল্প করছে।হটাৎ ই ফায়াজ হুড়মুড় করে ওদের সামনে আসলো।তারপর টেবিলে টোকা দিয়ে ওদেরকে চোখের ইশারায় যেতে বললো।ওরা একবার মেহেরের দিকে চেয়ে উঠে চলে গেলো।মেহের ভয়ে কাপছে।ওর হাত-পা বরফের মতো জমে যাচ্ছে।মুখ শুকিয়ে ফ্যাকাসে হয়ে গেছে।মেহের মাথা নিচু করেই রেখেছে।ভয়ে ফায়াজের দিকে তাকাতে পাছেনা।ফায়াজ কেন এসেছে তাও বুঝতে পারছেনা।ফায়াজ মেহেরের বরাবর চেয়ার টেনে বসে পড়ল।
ফায়াজের মেহেরের কাপাকাপি দেখে প্রচন্ড রাগ হচ্ছে।ধমক দিয়ে বললো,
–এই মেয়ে কাপাকাপি বন্ধ করো।আমি বাঘ না যে তোমাকে খেয়ে ফেলব।কাপাকাপি শেষ হলে আমি তোমাকে কিছু কথা বলবো।

চলবে,,,

(যারা বলতেছেন এখনো অতীত কেন?বর্তমানে আসেন।গল্পটা তো অতীতের উপর ভিত্তি করেই তাইনা।যখন বর্তমানে ছিলাম তখন সবাই অতীত দেন অতীত দেন বলেছেন।আর আমি তখন বলেছি অতীতে যখন যাবো অতীত থেকে ফিরে আসতে সময় লাগবে।ফায়াজ-মেহেরের অতীতে গভীর একটা ভালোবাসার সম্পর্ক ছিলো।এই সম্পর্ক নিশ্চয়ই একদিনে হয়নি।ভালোভাবে তুলে ধরতে হলে অবশ্যই সময় লাগবে।তাই ধীরে ধীরে আগাচ্ছি।ধন্যবাদ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here