#হলিডে
#পর্ব_২৮_ও_২৯
#পর্ব_২৮
নাফিসা বেরিয়ে যেতেই নীরা তাড়াতাড়ি উঠে পড়লো৷
—হ্যালো… শুনছেন? হ্যালো….
নীরা তামিমের মুখের খুব কাছে গিয়ে একবার চেক করলো। তামিম ঘুমিয়ে পড়েছে। ভারী নিঃশ্বাস পড়ছে তাঁর। নীরা কম্বলটা ভালো করে গায়ে টেনে দিলো।
একটা মানুষ তাঁর উপর দিব্যি শুয়েছিলো। তা নিয়েও উনি ভালোভাবে ঘুমিয়ে পড়েছেন। এও কি সম্ভব?
এমন তো নয় নীরা হালকা পাতলা একটা মেয়ে! তার ওজন ৫০কেজি। একটা পঞ্চাশ কেজির মানুষ তাঁর উপর ফ্লাট হয়ে শুয়েছিলো, তার মাঝে ঘুম?
নীরার হঠাৎ করে একটা অপরাধ করতে ইচ্ছে করলো। তামিমকে খালি গায়ে দেখতে ইচ্ছে করলো।ঘুমিয়ে থাকার এডভানটেজ নেওয়া যাক। সে কম্বল সরিয়ে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকালো। বুকের উপর হাত রেখে আলতো করে ছুঁয়ে দিলো। আচ্ছা, বুকের মাঝখানে একটা চুমু খেলে কেমন হয়? খেতেই তো পারে… তামিম তো অসংখ্যবার তাকে চুমু খেয়েছে। সে তো মানা করেনি।
নীরা তামিমের বুকের উপর মাথা রাখলো। ফিসফিস করে বলল,
—হে আল্লাহ, আমার এই অপরাধটার জন্য আমি লজ্জিত! প্লিজ ক্ষমা করো আমায়।
চুমুতে তামিম যেন হালকা নড়ে উঠলো। টের পেয়ে গেল কি?
নীরা একছুটে বেরিয়ে এলো। হলুদের স্টেজের কাছাকাছি এসে নিঃশব্দে দাঁড়ালো। উত্তেজনা আর শিহরণে সমস্ত শরীর কাঁপছে তার! মাথাপাগলটা টের পেয়ে যায়নি তো? নড়লো কেনো তাহলে? নীরা চারদিকে চোখ বুলালো, সে যে এমন ছুটে এলো কেউ কি দেখেছে?
নাফিসা বসা থেকে উঠে এসে নীরার পাশে দাঁড়ালো। নীরার কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,
—মিস নীরা, আপনার শাড়ি খুলে গেছে পেছন থেকে। ব্যাকসাইডে ব্লাউজের টপ হুকটাও খুলে আছে। ঠিক করুন।
নীরা পেছনে হাত দিলো এবং আবার ছুটলো ঘরের দিকে। উফ্ কি লজ্জা! কি লজ্জা! আজ তার হলোটা কি? এত পাগল পাগল কেন লাগছে?
হলুদের স্টেজে লাবণী গোমড়া মুখ করে বসে আছে। তাঁর ভীষণ মেজাজ খারাপ লাগছে। এই পৃথিবীতে সেই প্রথম বিয়ের কনে, যার বিয়ের হলুদ সে নিজের শ্বশুরবাড়ির লোক নিয়ে করছে। একজনকে যাও ভাই বানিয়ে এনেছিলো, কিছুক্ষণ যাবৎ তাকেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আশ্চর্য দুনিয়া! এখানে আসলেই কেউ কারো আপন নয়। তার পাশেই হাসি হাসি মুখ করে রনি বসে। রনির পেট খারাপ কমেছে। সে একটু পরপর লাবণীর কাছে কিভাবে তার পেট খারাপ হয়েছিল, তার ব্যাখ্যা দিচ্ছে।
—বুঝলেন লাবণী ভাবী ইতু রিতু দুইটা তো দেখতে এক; তার উপর আবার জামাও পরে এক। তো প্রথমে একজন এসে বললো, ভাইয়া রসমলাই খাও, আমি খেলাম। পরে আরেকজন এসে বললো, ভাইয়া নাও রসমলাই! আমি আবারও খেলাম৷ আসলে কে দিচ্ছে, রিতু না ইতু? কার কথা মানা করে ফেলি; আবার কে মনখারাপ করে, বিরাট বিভ্রান্তি! বুঝলেন ভাবী বিয়ের পর আপনাকে নিয়ে ওবাড়িতে গেলে দেখবেন, দুই যমজ বোনে মিলে খাইয়ে খাইয়ে আপনারও পেট খারাপ করে দিয়েছে। হে হে….
লাবণী কঠিন গলায় বললো,
—আর একবার যদি ভাবী বলো, আমি তোমার গলা চেপে ধরবো। আমি তোমার ভাবী হই? আর তোমার ভাই কে? বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ?
রনি মুখ অন্ধকার করে চুপ করে গেল। ভাবী বলে বলে অভ্যাস হয়ে গেছে। অভ্যাস বদলাতে সময় লাগবে। অভ্যাস বড় ছেঁচড়া জিনিস! লাবণী ভাবী কেন যে এমন রাগ করে?
সেলিনা এসে ঘোষণা দিলেন, আগে রনির হলুদ হবে। যেহেতু কনের ভাই মানে উনার পুত্র তামিম এখন অনুপস্থিত, তাহলে আরেকটু অপেক্ষা করা যাক। দেখা যাক, কনের ভাই ততক্ষণে আসে কিনা? এরমাঝে রনিকে হলুদ ছোঁয়ানো হোক। নাফিসা হাত তুলে বললো,
—ম্যাম, যেহেতু কনের ভাই তাকে প্রথম হলুদ ছোঁয়াবে, সো ক্রস করে বরের বোন হিসেবে আমি যদি তাকে প্রথম হলুদ দিই কেমন হয়?
সেলিনা কিছু বলার আগে রিতু চিৎকার দিয়ে বললো,
—একদম….. সেটাই হোক।
রনির বন্ধু বান্ধবদের মাঝে একটা চাপা গুঞ্জন শুনা গেল।
“রনির কপাল দেখছিস, সাতকুলে কেউ নেই অথচ প্রাইম মিনিস্টারের মেয়ে তার বোন হয়ে গেল! ভাবা যায়?”
নাফিসা উঠে এসে রনির পাশে বসলো। রনির চোখ ছলছল করছে। নাফিসা হলুদ ছোঁয়াতেই, চোখের পানি গাল গড়িয়ে পড়লো।
নাফিসা হেসে বললো,
—ছেলেরা কি কাঁদে রনি সাহেব?
লাবণীও কাঁদছে। সে ভেজা গলায় বললো,
—এইটা তো একটা গাধা ছেলে, নাফিসা ম্যাম! হবু বউকে কথায় কথায় ভাবী ডাকে! সে কাঁদবে না তো কে কাঁদবে? এই দেখো, আবার মিষ্টি খাবার জন্য হা করেছে। এই তোমার না পেট খারাপ!
নাফিসা হাত বাড়িয়ে বললো,
—তাহলে আপনি হা করুন। আপনার উড বি’র হয়ে আপনি মিষ্টি খান।
লাবণী লজ্জিত ভঙ্গিতে হা করলো।
পারভীন আরা চিন্তিতভাবে লাবণীর কাছে ছুটে এলেন।
গলার স্বর নামিয়ে বললেন,
—বউমা, আমি তো বিরাট সমস্যার মাঝে পড়েছি। ওই যে যমজ দুই বোন আছে না, এদেরকে নিয়ে। এরা একেকজন একেকবার যাচ্ছে, এটা ওটা চাচ্ছে। আমি ঠিকঠাক মিলিয়ে দিতে পারছি না। দুইটাই দুনিয়ার ত্যাঁদড়৷ একবার একটা গিয়ে বলছে, আন্টি মাছ ভাজা করুন। মাছ ভেজে আনলাম, এখন বলে আমি নই রিতু বলেছে। অন্যটার ধারে গেলাম, সে বলে আমি তো চিকেন ফ্রাই বলেছি। এটা হয়তো ইতু চেয়েছে। এর মাঝে নীরা এসে নাফিসার জন্য খিচুড়ি করে রেখে গেল। এখন বুয়া বলছে, হারুন বলে কেউ একজন এসে সেটা খেয়ে নিয়েছে। কি করি বলো তো?
তুমি কি একটু আসবে বউমা?
লাবণী কাঁদো কাঁদো মুখ করে বললো,
—মা আমার এখন গায়ে হলুদ চলছে। দ্বিতীয় বিয়ে বলে কি এই বিয়ের কোনো দাম নেই? আমি কিভাবে যাই বলুন? এমনিতেই আবার আমার ভাইকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আমি সেই টেনশানে মরছি। আপনি নীরাকে বলুন মা। সে কোথায়?
—নীরাকেও তো পাচ্ছি না। অনেকক্ষণ ধরেই দেখছি না। কোথায় গেল বলো তো?
রনি আগ্রহীভাবে উঠে দাঁড়ালো,
—আমি আসছি আন্টি, আমি সাহায্য করবো। আমার হলুদ প্রায় শেষ।
লাবণীর চরম মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। এই হাঁদাকে নিয়ে তাকে সংসার করতে হবে? গায়ে হলুদের স্টেজ থেকে সে রান্নাঘর সামলাতে যাবে বলছে।
লাবণী কঠিন গলায় বললো,
—চুপ করে বসো রনি। কাল তোমার বিয়ে। এখন তুমি বিয়ের বর। হুটহাট রান্নাঘরে যাওয়া বন্ধ।
রনি সুবোধ বালকের মতো বসে পড়লো।
—স্যরি আন্টি আমি যেতে পারছি না। লাবণী ভাবী মানা করছে।
পারভীন আরা নীরা নীরা বলে চেঁচাতে লাগলেন। যমজ দুই বোন আবার এদিকে আসছে, কি চায় কে জানে?
নাফিসার হঠাৎ করেই একটু মন খারাপ লাগলো। মি. শফিককে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। কোথায় তিনি? কি করছেন?
হারুন এসে এনাউন্সমেন্টের মত করে বললো,
—কনের গায়ে হলুদ এক্ষুণি শুরু হবে। তামিম স্যারকে পাওয়া গেছে। তিনি আসছেন। তিনি আসলে একটু ঘুমিয়ে পড়েছিলেন।
হারুনের কথার মাঝেই তামিম এসে হাজির হলো।
লাবণী ব্যস্ত হয়ে ওঠলো।
—আসুন, ভাই আসুন। আপনার জন্য হলুদ শুরুই হয়নি আমার। আমার তো পেটের ভেতর সেই কখন থেকে ঘুটঘুট করছে, কোথায় ছিলেন বলুন তো?
তামিম হাসিমুখে লাবণীর পাশে এসে বসলো,
—কি করতে হবে? এই এখান থেকে হলুদ নিয়ে ছোঁয়ানো; তারপর মিষ্টি, তাই না?
লাবণী মাথা নাড়লো।
সেলিনা রাগে গরগর করছেন। ঘুমাচ্ছিলো না ছাই! এতক্ষণ নিশ্চয় ওই ভিক্ষাবতীর কোলে বসে ছিল।
তিনি এগিয়ে এসে বললেন,
—কিরে, তোর বউয়ের কি খবর? কি বললো? বিয়েতে আসবে তো?
—-দারুণ খবর মা। তোমার পুত্রবধু বিয়েতে আসছে।
সেলিনা কিছু বললেন না। ছেলে বলেছিলো এই বিয়ে নিয়ে সে কনফিউজ ছিল, এখনের কথা শুনে তো একেবারে ডিটারমাইন্ড মনে হচ্ছে। সেলিনা ভালো করে ছেলের দিকে তাকালেন। সে হাসিমুখে লাবণীর হাত থেকে মিষ্টি খাচ্ছে। মেরুন পাঞ্জাবিতে তামিমকে দেখতে প্রিন্সের মতো লাগছে। কি সুন্দর গাঢ় দুটো বাচ্চা বাচ্চা আর বুদ্ধিদীপ্ত চোখ। মুখের উপর যেন অন্যরকম আলোর ঝলকানি। ছেলেটাকে দেখে সুখী মনে হচ্ছে বেশ। ছোটবেলায় তামিমের এই জোড়া ভ্রু দেখে সবাই বলেছিলো, মা ভক্ত হবে খুব! মা ভক্তের এই নমুনা! ফাঁক পেলেই বউয়ের কাছে ছুটছে… হুহ…
সেলিনার বুকের ভেতরটা খাঁ খাঁ করে উঠলো।
তামিমের বাবাটা যে কোথায়? একটু গিয়ে পাশে বসা দরকার৷ এই মুহূর্তে সেলিনার দুঃখ একমাত্র তিনিই বুঝবেন।
#পর্ব_২৯
শফিক খুবই আড়স্ট বোধ করছে। আড়স্টতার কারণ
সে মিস নাফিসার দেওয়া টিশার্ট পরেছে। কিন্তু এই টিশার্টে রুম থেকে বের হওয়া ঠিক হবে কিনা বুঝতে পারছে না। নেভিব্লু টিশার্টের বুকে হোয়াইট পেইন্টে বড় করে লিখা,
“তোমার কিসের এত তাড়া?
রাস্তা পার হবে সাবধানে”।
শফিক কখনোই তাড়াহুড়ো করে রাস্তা পার হয়নি। তবে মিস নাফিসা কি এর মধ্য দিয়ে অন্য কিছু ইঙ্গিত করছেন? সেই অন্যকিছুটা কি? শফিক এক ঘন্টা ধরে ভেবেও কিছু বের করতে পারছে না। অথচ এই এক কথা তার মাথা হ্যাং করে দিয়েছে। এর আগে তো এমন হয়নি। বিয়ে উপলক্ষে এমনিতেই পড়াশোনায় ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে, এখন আবার মিস নাফিসা জট পাকিয়ে দিয়েছেন।
নাফিসা দরজায় নক করছে, শফিক কেঁপে উঠলো।
—মি. শফিক আপনি কি আছেন?
শফিক একটানে টিশার্ট খুলে ফেললো।
দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো।
—মি. শফিক আপনি কি শুনতে পাচ্ছেন?
শফিক খালি গায়ে দ্রুত কিছু খুঁজছে পরার জন্য।
—জি জি… দাঁড়ান দরজা খুলছি।
নাফিসা শব্দ করে হাসলো। দরজার ওপাশ থেকেও তাঁর হাসির শব্দ স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে। কেন হাসছে? ঘরের ভেতরে থেকেও শফিক লজ্জায় লাল হতে থাকলো। উফ্ হাতের কাছে কিছুই নেই গায়ে পরবার মতো।
—-মি. শফিক, আপনাকে দরজা খুলতে হবে না। আমি জানি আপনি খালি গায়ে আছেন। এবং এই মুহূর্তে আমার দেয়া টিশার্ট ছাড়া আপনার কাছে পরার মতোও কিছু নেই।
শফিক দাঁড়ানো থেকে বসে পড়লো।
—আমি কি ঠিক বললাম মি. শফিক?
শফিক ঘরের ভেতরে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লো। ওপাশে নাফিসাও চুপ।
কিছুক্ষণ পর নাফিসা আবার কথা বললো,
—আপনার জন্য একটা ভালো খবর আছে, আপনার এক্স শ্বশুরমশাইকে দুদক ভালো করে ধরেছে। জেলা প্রশাসক হবার পর সাত বছরে উনার অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ দশগুণ কি করে হলো, সেটা নিয়ে।
শফিক মিনমিনে গলায় বললো,
—ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে কি এসব করা ঠিক হচ্ছে?
—মোটেও ব্যক্তিগত আক্রোশ নয়। সারাদেশের সব জেলা প্রশাসককে নিয়ে ইন্সপেকশন কমিটি কাজ করেছে, এর মধ্য ৩৬জনকে গিল্টি পাওয়া গেছে। গভর্ণমেন্টকে এরা কিভাবে ঠকাচ্ছে বুঝতে পারছেন?মি. শফিক আপনার প্রেমের ব্যর্থতা কিন্তু পরোক্ষভাবে দেশের উপকারই করলো।
—ওটা মোটেও প্রেম ছিল না, ওটা অন্য কিছু ছিল। হয়তো আমার অসুস্থতা। প্রেম ট্রেম বলে কিছু হয় না ম্যাম। আমরা ভেবে নিই প্রেম!
—মি. শফিক এই যে আমি এসে থেকেও আপনাকে একবারও দেখিনি, তারপরও জানি আপনি আমার দেওয়া ট্যাগলাইন নিয়ে চিন্তিত। এতই চিন্তিত যে, আপনার মাথা জ্যাম হয়ে আছে। আর এটা ভেবে আমার খুব স্যাড লাগছে। এই স্যাডনেসের আরেকটা নাম আছে। সেটা কি আপনি জানেন?
শফিক খুব জোর গলায় বললো,
—জানি না, একদম জানি না আমি। ক্ষমা করুন আমাকে…. প্লিজ!
নাফিসা হাসলো,
—আমি জানি আপনি জানেন, বলতে চাইছেন না। তাও আমি আপনার মাথার জ্যাম ছাড়িয়ে দিচ্ছি।
এটা আমার খুব প্রিয় একটা গানের লাইন। আমি টিশার্টটা ডিজাইন করবার সময় এই গানটা শুনছিলাম, তাই লিখে দিয়েছি! কি হলো, জ্যাম খুলেছে?
শফিক আনন্দের সাথে টিশার্টটা পরলো আবার। হাসিমুখে দরজা খুলে বললো,
—মিস নাফিসা, আপনাকে শাড়িতে একদম প্রজাপতির মতো লাগছে। বসন্ত কালের হলুদ প্রজাপতির মতো। মনে হচ্ছে আপনি এক্ষুণি উড়ে যাবেন।
নাফিসা মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। একজন পুরুষ মানুষের হাসি এত চমৎকার হয় কি করে? আশ্চর্য… এই হাসিটার একটা নাম দেওয়া যাক।
“মন ভালো করবার ঔষধ। ”
নীরা ভয়ে ভয়ে তাকিয়ে তামিমের বাবার কর্মকান্ড দেখছে। ভদ্রলোক একটু আগে ডিনার সেরেছেন। তবে একা নয়, নীরাকেও জোর করে সাথে বসিয়েছেন। নীরা অবশ্য ঠিকঠাক কিছু খেতে পারেনি। ভয় করছিলো তার। অথচ ভদ্রলোক বেশ আন্তরিক হয়েই কথা বলছেন। ভদ্রলোকের কথাবার্তাও বেশ ইন্টারেস্টিং, এই যেমন ভাত খাবার সময় তিনি অনেক মজার মজার তথ্যমূলক গল্প শুনিয়েছেন। এর মাঝে একটা গল্পে তিনি তাঁর ছাত্রজীবনের আর্থিক দুরবস্থার কথা তুলে ধরেছেন।তাঁর কথা শুনে জীবনে বড় কিছু করার সাহস আর অনুপ্রেরণা পাওয়া যায় যেন! আরেকটা মজার ব্যাপার, তিনি পড়াশোনা করেছেন বোটানিতে। দেড় দু’হাজারের মতো গাছের নাম মুখস্থ করে শেষমেশ তিনি কিনা ব্যবসায়ী হলেন! এই বিজনেস লাইনে একটা গাছের নামও উনার কাজে লাগেনি। কি আশ্চর্য জীবন আমাদের! আমরা যেটা দরকারি ভেবে শিখি, সেটাই জীবনে অনেকসময় সবথেকে অদরকারী জিনিসে পরিণত হয়।
আহারে…
এখন তিনি একটা ব্যাগ থেকে বিভিন্ন সাইজের কয়েকটা বোতল বের করছেন। নিশ্চয়ই দামী মদ! নীরা শুকনো একটা ঢোঁক গিললো। উৎসাহে তার চোখ চকচক করছে।
মেজবাউর সাহেব আবার বললেন,
—প্লিজ সিট ইয়াং লেডী! ইউ ক্যান হ্যাপিলি জয়েন মি। এইসব জিনিস বুঝলে শেয়ার না করে খাওয়া যায় না। একা একা বোরিং লাগে। হার্ডলি নিড এ পার্টনার। বাড়িতে আমি প্রায়ই তামিমকে অফার করি, সে খায় না। ইন্টেলিজেন্সে জব করে তো, অনেক বাইন্ডিং আছে ওদের। একটা ছোট্ট প্যাগ কি নেবে তুমি? এই স্কচটা আমার রাশিয়ান কালেকশনের। একটা মোল্ড হুইস্কিও আছে সাথে। খাওয়ার পর মনে হবে তোমার ভেতর শুদ্ধ হয়ে গেছে।সব ধরনের স্ট্রেস ফ্রি মনে হবে নিজেকে।
নীরা খুবই জড়সড় হয়ে বসলো,
—স্যার, কিছু মনে না করলে একটা প্রশ্ন করি?
—ইয়েস, অফকোর্স। এন্ড ওয়ান মোর থিং, উড ইউ প্লিজ স্টপ কলিং মি স্যার? ইট সাউন্ডস অড।
নীরা লজ্জিতভাবে হাসলো।
—এর দাম কত আংকেল?
—কোনটা?
—এই যে ব্ল্যাক বোতল। সোনায় মোড়ানো যেটা মনে হচ্ছে…. সাদা মতো পাথরগুলো কি হীরে?
মেজবাউর সাহেব দাম না বলে হাসলেন।
—তুমি কি এটা টেস্ট করে দেখবে একটু?
মেজবাউর সাহেব নীরার জন্য একটা গ্লাসে পেগ বানিয়ে এগিয়ে ধরলেন।
নীরা গ্লাসটা খুব সংকোচে হাতে নিলো।
—আমি কখনো খাইনি আংকেল৷ কোনো রিয়েকশান যদি করে?
—কোয়াইট নট। অল্প অল্প করে চুমুক দেবে। একটা সিপের পর মিনিমাম ফাইভ মিনিটসের একটা গ্যাপ দিয়ে নেবে।
নীরা হাতের গ্লাসটা নিয়ে তার দিকে ভালো করে তাকালো। গাঢ় খয়েরি রংয়ের ঝকঝকে তরল পদার্থ। সে কি সত্যিই খাবে? কেন খাবে না? আজ তার মন এলোমেলো হয়ে আছে। তার জীবনে কি ঘটছে, সে বুঝতে পারছে না। একটু আগেই সে একজনকে বিছানায় চুমু খেয়েছে অথচ এটা তার করার দরকার ছিল না। এই অপরাধের ঘোরে মাথা ভনভন করছে, মাথার জট ছাড়ানো যাক। বিয়ে বিষয়ে কি হয় কে জানে? এখন মদ খেয়ে আরেকটা অপরাধ করা যাক। আজ তার অপরাধ করার দিন!
মেজবাউর সাহেব তাঁর গ্লাসটা উঁচু করে ধরে টোস্ট করলেন,
“আজ এ বাড়িতে আমার চমৎকার আতিথেয়তার প্রতি”
নীরাও গ্লাসটা উঁচিয়ে ধরলো।
কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,
“জীবনের সবথেকে বড় সমস্যার প্রতি”
মেজবাউর সাহেব হালকা করে গ্লাসে চুমুক দিলেন।
কিন্তু নীরা করলো উল্টোটা, সে এক চুমুকে পুরো গ্লাস খালি করে দিলো। দিয়েই খানিকক্ষণ চোখ বন্ধ করে থাকলো। তারপর গ্লাস বাড়িয়ে বললো,
—আরেকটু দিন আংকেল৷ টেস্টটা বুঝিনি ঠিক। আসলে ঝোঁকের মাথায় তো!
মেজবাউর সাহেব মহানন্দে নীরার হাতের গ্লাস ভর্তি করে দিলেন। আজ মনের মতো একজন পার্টনার পেয়েছেন তিনি… আহা…..
সেলিনা খুবই চিন্তিত হয়ে ছুটে এলেন। তাঁর মন ভারাক্রান্ত হয়ে আছে। তাঁর এত ভালো ছেলে শেষ পর্যন্ত কিনা সত্যি সত্যিই পর হয়ে গেল।
তিনি ঘরে এসে কান্নাজড়িত গলায় বললেন,
—ইতুর বাবা গো.. আমার বুঝি সব শেষ হয়ে গেল। ছেলের আশা আর নেই….. আমি কি করি বলো তো? তাঁর দু দুটো বোনকে নিয়েও সে ভাবলো না!
নীরার চোখ ঝাপসা ঝাপসা লাগছে, সে মিসেস সেলিনাকে ঝাপসা দেখছে। তবে তাঁর কণ্ঠ শুনছে স্পষ্ট। সে মিসেস সেলিনার জন্য খুব দুঃখবোধ করলো হঠাৎ।
গ্লাস বাড়িয়ে বললো,
—ছেলের জন্য একদম মন খারাপ করবেন না আন্টি। আপনি বরং এটা খান। রিলাক্স পাবেন, এই দেখুন আমিও খাচ্ছি।
—-ইয়েস, তুমি বরং একটা ড্রিংক নাও সেলিনা। ফরগেট এবাউট সান। লেট হিম ফ্রি। ছেলেটা যখন পছন্দ করে কাজটা করেই নিয়েছে, মেনে নেওয়াই ভালো হবে।
—তুমি বলছো, আমি মেনে নেবো?
—হু.. দ্যট উইল বি দ্য বেস্ট ফর অল।
—মদ হাতে তুমি পাগল হয়ে গেছ। দেখেছো নীরা মা, আমি নাকি সব মেনে নেবো! আমার সহজ সরল বোকা ছেলে, একটা ভিক্ষাবতী পটিয়ে পাটিয়ে নষ্ট করে দেবে; আর আমি কিনা সেটা মেনে নেবো!
সেলিনার কণ্ঠে প্রবল ক্রোধ।
নীরা খিলখিল করে হেসে উঠলো,
—আপনি ড্রিঙ্ক নিন আন্টি। দেখবেন সব টেনশন ফুড়ুৎ…. আমি তো এখন পাখি হয়ে গেছি। আমি পাখি হয়ে আকাশে উড়ে উড়ে মাথাপাগলার মাথায় বিষ্ঠাত্যাগ করবো।
নীরা হাত দিয়ে উড়ার মতো ভঙ্গি করলো। তার নিজেকে খুব হালকা লাগছে। মেজবাউর সাহেব চিন্তিত বোধ করছেন। নীরার নেশা হয়ে গেছে কিন্তু সেটা কি পরিমানে এখনো বোঝা যাচ্ছে না।
সেলিনা বিষাদগ্রস্ত ভাবে বললেন,
—তুমি দেখি এই মেয়েকে মদ খাইয়ে সর্বনাশ করে দিয়েছো। এখন একে সামলাবে কে?
—আরে ঠিক হয়ে যাবে। তুমি বরং এটা নাও।
নীরা হাত নারিয়ে নারিয়ে সারা ঘরময় ছুটছে। একটু পরপর এসে আবার গ্লাসে চুমুক দিচ্ছে। সাথে গুণগুণ করে গানও গাইছে, আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে!
সেলিনা অবাক হয়ে সেটা কিছুক্ষণ দেখলেন। মদ খেলে কি সত্যিই এমন আনন্দ হয়? তাঁরও কি খাওয়া দরকার? তামিমের বাবাও তো কেমন নিশ্চিন্তে ঝিমুচ্ছেন। জীবনে আর আছেইবা কি?
সেলিনা অত্যন্ত দুঃখিতভাবে হাত বাড়িয়ে বোতলটা নিলেন এবং ঢকঢক করে সেটা নিমিষেই খালি করে দিলেন।
ঘর থেকে বেরিয়ে সিঁড়ি পর্যন্ত এসে সেলিনার মনে হলো, তিনি সব জিনিস দুটো দুটো দেখছেন। সিঁড়ি দুটো, সিঁড়ির রেলিং দুটো। কোনটা আসল? তিনি ভয়ে ভয়ে সিঁড়ি ধরে আস্তে আস্তে নামলেন। ড্রয়িং রুমের সোফাও দুটো। না না আসলে এটা সোফা নয়, সেলিনার হঠাৎ মনে হলো এটা সিংহাসন। আর তিনি হলেন কুইন এলিজাবেথ। এই তো সামনে তাঁর সাজানো দরবার। মজলিশে সবাই কেমন তৈরি! তিনি কি আজ রাজ দরবারে আসতে দেরি করেছেন? ওই তো শাহী স্টেজে মহামন্ত্রী সাহেব বসে আছেন। তাকে এত খুশি কেন লাগছে? পাশে এটা কে? মহামন্ত্রীর বেগম?? মহামন্ত্রীর বেগমের কি হয়েছে? তাঁর গালে কপালে এমন হলুদ কেন? আর বাকি সবাই তো শাহী বিরিয়ানী তাকে ফেলেই খাওয়া শুরু করে দিয়েছে। একি কান্ড! হায়হায়….
সেলিনা আবার সোফার দিকে ভালো করে তাকালেন। দুটো সিংহাসন! কোনটায় বসবেন তিনি?আচ্ছা সিংহাসনটা এত উঁচু কেন দেখাচ্ছে? ওহো..
সেলিনা আয়েশ করে সোফায় বসলেন। সোফায় কাঁথা মুড়িয়ে হারুন শুয়ে ছিল, সে বাবাগো বলে চিৎকার দিয়ে উঠলো। সেলিনা সেই চিৎকার শুনে আরও আনন্দিত বোধ করলেন। বাহ্ তাঁর সিংহাসনের প্রাণ আছে। এও দেখি কথাও বলে.. অহো…. কেমন নড়ছেও তো!
তিনি ডানহাত উঁচু করে বললেন,
—ওহে সিংহাসন…. এক প্লেট শাহী বিরিয়ানী হাজির করো।
হারুন গোঙাতে গোঙাতে বললো,
—ম্যাডাম আমি সিংহাসন না, আমি হারুন।
সেলিনার আনন্দ এবার দ্বিগুণ হলো।
তিনি পায়ের উপর পা তুলে নিয়ে বসলেন।
—সিংহাসন, অতি শীঘ্রই শাহী বিরিয়ানী হাজির করো সাথে এলাহী সালাদ। নাহলে গর্দান যাবে তোমার!
হারুন ব্যাপার কিছুই বুঝতে পারছে না। সেলিনা ম্যাম এমন আচরণ কেন করছেন? তার উপর বসে তাকে গেলে দেওয়ার কারণ কি?
সেলিনা আবারও হাত উঁচু করলেন,
—সিংহাসন, পেয়াদাদের বলো আজকেই সকল দন্ডিতদের রাজবন্দী করা হবে। আগে তো বিরিয়ানী খেয়ে নিই!
হারুন কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। তাঁর দম বন্ধ হয়ে আসছে। সে কি ঝারা দিয়ে উঠে পড়বে? নাকি টেকনিক খাটাবে?
সে কোনোরকম অস্পষ্ট গলায় বললো,
—আপনি একটু উঠুন মহারানীমা, আমি এক্ষুণি আপনার জন্য শাহী বিরিয়ানী আনছি।
সেলিনা হালকা রাগী গলায় বললেন,
—তোমার এতবড় সাহস সিংহাসন! তুমি আমায় উঠতে বলো!
সেলিনা একটু উঠে দাঁড়ালেন, হারুন চোখের পলকেই উঠে দৌড় মারলো। এ বাড়িতে তাঁর একফোঁটাও শান্তি নেই। ঘুমুতে গেলেই কেউ লুঙ্গি নিয়ে নিচ্ছে, কেউ উপরে বসে সিংহাসন বানিয়ে দিচ্ছে। ব্যাপারটা কি?
সে পিছন ফিরে তাকালো এবং দেখলো সেলিনাও তার পেছন পেছন দৌড়াচ্ছেন। হারুন “ইয়া আল্লাহ” বলে রান্নাঘরে ঢুকে পড়লো।
পারভীন আরা চিকেন ফ্রাই করছিলেন, তিনি ভয় পেয়ে গেলেন।
তিনি ভীত গলায় বললেন,
—কে তুমি? কি চাও?
হারুন হাত জোর করে ইশারায় কিছু বলল তাকে। তিনি সেটা বুঝতে পারলেন না। ততক্ষণে সেলিনা এসে রান্নাঘরের দরজায় দাঁড়িয়েছেন। তাঁর হাতে একটি লম্বা চামচ। তিনি চামচ উঁচু করে বললেন,
—কই হে? কই হে পলায়ন করেছো? এক্ষুণি যদি ধরা না দাও, এই তরোয়ালে গর্দান নেবো তোমার!
পারভীন আরা আরও ভয় পেয়ে গেলেন। তিনি কাঁদো কাঁদো গলায় বললেন,
—আপনি কি কিছু খুঁজছেন?
—আজ্ঞে হ্যাঁ…. আমার সিংহাসন খুঁজছি। সে কি এখানে এসেছে? হে আমার শাহী গদি, শীঘ্রই বাইরে আগমন করো।
পারভীন আরা কিছু বুঝতে না পেরে বেসিনের নিচে হারুনের দিকে তাকালেন। হারুন হাত জোড় করে
ইশারায় আবারও তাকে কিছু বললো। পারভীন আরা কি ঘটছে কিছুই বুঝতে পারছেন না। তিনি মনে মনে দোয়া পড়তে লাগলেন।
সেলিনা চিৎকার দিলেন এবার,
—ওহে. বাঁদী… জবাব দাও…. আমার সিংহাসন কই? অতি সত্তর বলো নাহলে গর্দান নেবো তোমার!
শূলে চড়ানো হবে তোমাকে!
পারভীন আরা কেঁপে উঠলেন। কাঁদো কাঁদো গলায় বললেন,
—আমি জানি না, আল্লাহর কসম আমি আপনার সিংহাসন নিই নি? এই যে, চিকেন ফ্রাই করেছি। খাবেন?
তিনি চিকেন ফ্রাই’র প্লেটটা সেলিনার সামনে এগিয়ে ধরলেন। তাঁর হাত ঠকঠক করে কাঁপছে।
তিনি একাধারে বিড়বিড় করতে লাগলেন, আমি আপনার সিংহাসন নিইনি… আমি আপনার সিংহাসন নিইনি…. সিংহাসন দিয়ে আমি করবোটা কি? সিংহাসনে বসার আমার কি দরকার! আমি দুই টাকার গরিব মানুষ!
চিকেন ফ্রাই দেখে সেলিনার রাগ যেন আরো বেড়ে গেল। তিনি হুংকার করে উঠলেন,
—বাদী তোমার তো সাহস কম না, তুমি সারা দুনিয়ার রাণীকে এত ছোট ছোট পিসের চিকেন ফ্রাই দেখাও। এক্ষুনি তোমায় রাজবন্দী শালায় বন্দী করা হবে! পেয়াদা পেয়াদা…..
সেলিনা খপ করে পারভীন আরার হাত চেপে ধরলেন।
পারভীন আরার হাত থেকে এবার প্লেট মেঝেতে পড়ে গেল। তিনি কাঁদতে লাগলেন,
—আমায় ছেড়ে দিন…. আমায় ছেড়ে দিন…. ক্ষমা করুন।
—বাঁচতে যদি চাও এক্ষুণি আস্ত মুরগী রান্না করে শাহী থালায় পরিবেশন করো। যাও…৷
পারভীন আরা দিচ্ছি দিচ্ছি বলে মাটিতে বসে পড়লেন। এসব কি হচ্ছে? এরা মা মেয়ে সবগুলোই তো মহা ঝামেলার!
সেলিনা মহামন্ত্রী, মহামন্ত্রী বলে ড্রয়িংরুমের দিকে ছুটলেন।
রনির কাছে এসে তাঁর কাঁধে হাত রেখে বললেন,
—মহামন্ত্রী উঠুন। এই ভরা রাজসভা থেকে আমার সিংহাসন হারিয়ে গেছে আর আপনি এখানে বসে আয়েশ করে মিষ্টি খাচ্ছেন! উঠুন…
রনি বসা ছিল, দাঁড়িয়ে গেল। সে কিছুই বুঝতে পারছে না।
হারুন এসে হাঁপাতে হাঁপাতে তামিমের পাশে বসলো,
—স্যার, আমার জীবন শেষ। সব শেষ। আপনার মা আমায় সিংহাসন ভেবে নিয়ে তাড়া করছেন। উনার হয়েছেটা কি?
—মা আপনাকে তাড়া করছেন?
—জি স্যার, আমায় সিংহাসন বলে ডাকছেন। সিংহাসন না পেলে গর্দান নেবেন বলছেন।
তামিম বিস্মিত চোখে তাকিয়ে আছে। হারুন সাহেবের কথা সে কিছুই বুঝতে পারছে না।
—স্যার আমি গেলাম, তিনি আমায় পেলে খবর আছে। আপনি কি ব্যাপারটা একটু দেখবেন? ওহো… কোথায় যে লুকোই?
তামিম সেলিনার কাছে আসতেই তিনি তামিমকে খপ করে ধরে ফেললেন,
—এই তো আমার রাজকুমার। বাবা রাজকুমার, আমি তোমাকে রাজকুমারীর সাথে বিয়ে দেবো। আর তোমার ভিখারী স্ত্রীর চুল কামিয়ে এই রাজ্য থেকে তাড়াবো। মহামন্ত্রী সভাসদদের বলুন, সভা প্রস্তুত করা হোক। আমি এক্ষুণি এই ভরা দরবারে রাজকুমারের ভিখারিনী স্ত্রীর মাথা কামাবো! ঘোষণা করে দিন মহামন্ত্রী….
রনি অসহায় চোখে তাকিয়ে আছে। ঘটনার আকস্মিকতায় সে স্তব্ধ হয়ে গেছে।
—তবে হে আমার রাজকুমার পুত্র, তার আগে আমার সিংহাসন খুঁজে বের করা হোক। এক্ষুণি রাজ্যে ঢোল পিটিয়ে দাও, আমার সিংহাসন যে খুঁজে দেবে তাকে এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা দেওয়া হবে। এক হাজার…
সেলিনা হাত উঁচু করে চামচ নাড়লেন।
সবাই মহাউৎসাহে তাঁর দিকে তাকিয়ে। সবার চোখে আনন্দ। ঘটনায় সবাই বেশ মজা পেয়ে গুজুর গুজুর করছে। তামিম দীর্ঘশ্বাস ফেললো। সর্বনাশ! মা ড্রিঙ্ক নিয়েছেন। এখন একমাত্র বাবাই পারবে মাকে নিয়ন্ত্রণ করতে৷
তামিম উপরের ঘরের দিকে ছুটলো। বাবাকে দরকার।
উফ্!
—রিতু….. রিতু…. তুই মাকে একটু দ্যাখ…. আমি বাবাকে ডাকছি।
উপরের ঘরে এসে তামিমের চোখ আরো ছানাবড়া হয়ে গেল। নীরা টেবিলের উপর উঠে দাঁড়িয়ে হাত নাড়ছে। তার শরীর টলছে। যেকোনো সময় সে পা ফসকে পড়ে যেতে পারে। পাশেই মেজবাউর সাহেব চেয়ারে বসে নিশ্চিন্তে ঝিমুচ্ছেন।
তামিম মৃদু গলায় ডাকলো,
—নীরা… নীরা……
নীরা শুনলো না। তামিম এগিয়ে গেলো,
—নীরা… কি করছো তুমি নীরা?
নীরা তামিমের দিকে তাকালো এবং চিৎকার করে বললো,
—গোলাম কি বাচ্চে, তুনে ফির আয়া….. মে তুঝে মার ডালুঙ্গি… জান সে মার দুঙ্গি…. সালা…..
তামিম নীরার পা দুটো জড়িয়ে ধরলো,
—প্লিজ নীরা.. পড়ে যাবে তুমি। সাবধানে নিচে নামো।
নীরা উবু হয়ে তামিমের মাথায় কিল বসিয়ে দিলো।
—তেরি মা নে মুঝে কেয়া কাহা? ও মুঝে খুনতিসে দাগ কার দেয়গি… আরে ওয়ো কিয়া মুঝে দাগ দেগি… মে সবকো বাতা দুঙ্গি তুনে মুঝে জবরদস্তি সাদী কিয়া… জবরদস্তি কিস ভি কিয়া…. মেরি ইধার ভি হাত লাগায়া….
—নীরা প্লিজ কথা বলো না… প্লিজ। বেশি কথা বললে এক্ষুণি বমি হয়ে যাবে।
তামিমের কথাও শেষ হলো না, এর মাঝেই নীরা তামিমের মাথায় গলগল করে বমি করে দিলো।
(চলবে)
#তৃধা_আনিকা